বৃহস্পতিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৩

বিষণ্ণ

বিষণ্ণ
- যাযাবর জীবন

বিষণ্ণ তুমি আর বিষণ্ণ পৃথিবী
বিষণ্ণ দুপুরের বিষণ্ণ প্রকৃতি
বিষণ্ণতায় দুপুরের সূর্য লাল হয়ে আছে ছেয়ে
বিষণ্ণতায় ভরা মন বিষণ্ণ সুরে গেয়ে
এরই মাঝে বেঁচে আছি আমি হয়ে বিষণ্ণ
বোধহীন অনুভূতির ছুরিগুলো বড্ড তীক্ষ্ণ

সোমবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৩

অনুভব

অনুভব
- যাযাবর জীবন

তোমার চোখ দেখছে আমায়
অনুভবে বুঝি
তোমার ঠোঁট আমার ঠোঁটে
অনুভবে অনুরাগে
তোমার নিঃশ্বাস আমার প্রশ্বাসে
অনুভব করি
তোমার হৃদয় আমার হৃদয় ছুঁয়ে আছে
গভীর অনুভবে
তোমার মন আমার মনে
দুজনে দুজনে
তোমার হাত আমার হাতে
চির বন্ধনে
তোমার শরীর জড়িয়ে রেখেছে আমাকে
দৃঢ় প্রত্যয়ে
তবু ধরে রাখতে পারিনি,
তোমাকে
ব্যর্থতার দায়ভার সব;
আমারই............

রবিবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১৩

সম্পর্কের প্রতিদান

সম্পর্কের প্রতিদান

- যাযাবর জীবন



আজকালকার দিনের সম্পর্কের সংজ্ঞাই মনে হয় বদলে গেছে

আজকালকার দিনের মধুর সম্পর্কের প্রতিদানগুলোও ভিন্ন হয়ে গেছে

তবু সত্যিকার বন্ধুত্বের প্রতিদান, দুঃসময়ের পাশের মানুষ

আর ভার্চুয়াল বন্ধুত্বের প্রতিদান, স্বপ্ন দেখে ওড়ায় ফানুস

তবু সন্তানের প্রতিদান, বাবা মায়ের একপেশে ভালোবাসা ছাড়া আর কিছু না

আর পিতৃত্ব আর মাতৃত্বের প্রতিদান, ওল্ড-হোমের ঠিকানা

ভাই বোনের সম্পর্কগুলো বড়ই তিতা, যদি থাকে স্বার্থের টোকা

স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কগুলো আজকাল বড়ই কেমন জানি, আমি বুঝি না

আজকাল ছলনার প্রতিদান, নিত্য নতুন টাকার চালুনিতে সঙ্গী চালা

ইদানীং ভালোবাসার প্রতিদান, প্রতিদিন বয়ে চলা আংরা জ্বালা।

শুক্রবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৩

বিবর্ণ

বিবর্ণ
- যাযাবর জীবন

পাতাঝরা দিনের পড়ে থাকা
হলুদ বিবর্ণ ঝরা পাতাগুলো দেখেছিস কি?
সবুজ সতেজ পাতাগুলো গাছে খেলছিল
এইতো মাত্র কয়েকদিন আগে
আজ মাটিতে অবহেলায় আছে পড়ে
বিবর্ণ শুকনো হয়ে
ঠিক আমার মত করে।

বছর গড়ালে আবার হয়তো
সতেজ সবুজ হয়ে উঠবে
ওই গাছের ফাঁকে ফাঁকে
আমার আর ফেরা হবে না
বিবর্ণ হৃদয়ে সবুজের আভা খেলে না
মনটা গেলে মরে।

বুধবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৩

আবার দেখা হয়েছিল কোন একদিন

আবার দেখা হয়েছিল কোন একদিন
- যাযাবর জীবন


কোন একদিন, সেই অনেক অনেককাল আগের কথা
মনে আছে এখনো
তুই ধীর পায়ে হেঁটে হেঁটে দাঁড়ালি আমার সামনে এসে
ইতস্তত, ক্লান্ত, একটু বিধ্বস্ত যেন মনে হলো
তবুও আমার আঙিনা সৌরভে ভরে গেল
মাতাল করা অন্যভূবনের সুর জেগে উঠলো মনে
আমি মনে মনে প্রমাদ গুনলাম, তোকে দেখে
মনে হলো যেন একটা পূর্ণ কবিতা এসে দাঁড়াল
আমার দুয়ারে এসে।

তারপর অনেক দিন পার হয়ে গেছে
চোখাচোখি থেকে একটু ছোঁয়াছুঁয়ি একটু স্পর্শ হাতের
আরেকটু এগিয়ে এসে অনুভব ধ্বক ধ্বক হৃদয়ের
ঠোঁটে ঠোঁটে কখন ভালোবাসায় ডুবে নিবিড়
ভালোলাগার অনুভূতিগুলো তীব্র ছিল আবির
প্রেম ছিল, কথা ছিল
আশা নিরাশার দোদুল্যমান স্বপ্নগুলো চোখে ছিল
বুঝতে পারিনি আমি বুঝতে পারিসনি তুইও হয়তো
শুধু ভালোবাসার অনুভব আর কিছু নয়তো
তারপর????
কাঁচের ঝনঝন শব্দ শুনি
নদী পাড় ভাঙ্গনের শব্দ বুকের গভীরে
ছিটকে দুজন গেলাম দুদিকে সরে
কেন আজো জানা হলো না
হারিয়ে গেলি তুই আর ফিরে এলি না।

তারও অনেকদিন পর আবার দেখা তোর সাথে
কোথায় জানি হেঁটে চলেছিলি একা পথে
আমায় দেখে থমকে দাঁড়ালি, আমিও দাঁড়ালাম চমকে
গলা কি আমার একটু কেঁপে উঠলো?
মনের আড় ভেঙে দিয়ে শুধিলাম
কবিতা!! এত বিধ্বস্ত লাগছে কেন রে তোরে?

মলিন হেসে ক্লান্ত স্বর যেন এলো অনেক দূর থেকে ভেসে ভেসে
অবনমিত চোখ মাটিতে রেখে বললি আমায় –
বড্ড কষ্টরে - জীবন!!

মানুষের বেশে চারিদিকে লোভী মাকড়সা কিছু
লোভী আমিও হয়ে তাঁদের নিয়েছিলেম পিছু
নিজের হাতে নিজেকে শেষ করেছি
তোর ভালবাসার অবমাননার প্রতিদান পেয়েছি
জ্বলছি এখন প্রতিদিন হৃদয়ের দহন
কেটে যাচ্ছে কোনমতে তোর কবিতার দ্রৌপদী জীবন
এহাত ওহাত ঘুরে লোভের ঘরগুলো ডিঙিয়ে
আজ তোর কথা বড্ড মনে হয় রে - জীবন।

তারপর তোর নুয়ে পরা শরীরটাকে
টানতে টানতে চললি আবার পথের বাঁকে
যাবার আগে শেষ কথা বলে গেলি আমায় -
সেদিন সত্যি বুঝি নি রে তোর ভালোবাসার টান
শুনি নি তোর কথা, সামনে ছিল বড় স্বপ্নের দান
বুঝিনিরে সেদিন তোর ভালোবাসার গভীরতা
কিংবা হয়তো বুঝেও পায়ে দলেছিলেম সেদিন হায়
অনুভবে আসে নি কতোটা ভালবাসলে একটা শরীর
তোর কাছে জীবন্ত কবিতা হয়ে যায়!

বলে পথ হেঁটে হারিয়ে গেলি পথের বাঁকে
কত খুঁজে চলেছি তোরে এরপর থেকে
যে ইচ্ছে করে হারিয়ে যেতে চায়
তাকে কি খুঁজে পাওয়া যায়?


মঙ্গলবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৩

নস্টালজিয়া

নস্টালজিয়া

- যাযাবর জীবন



সারাটা সকাল তোর অপেক্ষায়

তন্দ্রা ভাঙ্গা ভোর

ক্ষণে ক্ষণে জাগরণ রাতের প্রহর

এপাশ ওপাশ আচ্ছন্ন স্বপ্নে বিভোর

কাটিয়েছি অনুক্ষণ প্রতীক্ষার প্রহর

তোর পদধ্বনি শুনব বলে

তাকিয়ে আছি দোর গোরে।



বিষণ্ণ দুপুর তোর অপেক্ষায়

সূর্য আড়াল কুয়াশার ধোঁয়ায়

মেঘের আনাগোনা মনের ভেলায়

অস্থির দুপুর একা কেটে যায়

প্রতীক্ষার দুপুর মুহূর্তে কাটে

সূর্য হেলে যায় পশ্চিম আকাশে

ক্ষরণের লালে রাঙা লাল হয়ে

ফেরা হয় না তোর আমার দোরে।



সন্ধ্যে গড়ায় তোর অপেক্ষায়

কুয়াশার চাদরে চারিদিক অন্ধকার

এখানে ওখানে ব্যস্ততা বাড়ি ফেরার

প্রহর আমার কাটে একলা

ইতিউতি চারিদিক চেয়ে

ঘন কুয়াশায় মন থাকে ছেয়ে

তাড়া নেই আমার কোনো বাড়ি ফেরার

প্রতীক্ষায় চেয়ে নেই কেও আমার ঘরে।



বড্ড কেমন জানি হয়ে গেছে আমাদের সম্পর্ক

তোর আর আমার

ঠিক ওই ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘের মত

ধোঁয়া ধোঁয়া ধুসর কুয়াশার মত

বালিয়াড়িতে চিকচিকে মরীচিকার মত

এখন কেমন যেন থমকে গেছে আমার সময়

জানি না তোর মনে আছে নাকি কোনো প্রণয়

আমার জন্য এতটুকু

সেই আগের মত

তোর মনের ঘরে।



ইদানীং বড্ড নস্টালজিয়া ভর করে

মনের অনেক অনেক গভীরে

প্রতীক্ষার প্রহর গুনে

সেই সব দিনগুলোর কথা মনে করে

মাঝে মাঝে কেমন যেন মনের মাঝে

পাগল পাগল ছন্নছাড়া

তীব্র দাবদাহে তোর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে

পেতে ইচ্ছে করে

এক পশলা বৃষ্টির শান্তির ধারা।

কালের অন্তরালে প্রতীক্ষার প্রহর

কালের অন্তরালে প্রতীক্ষার প্রহর

- যাযাবর জীবন



অনেক বেশী করতে চেয়েছিলি ঘৃণা

পারলি কি?

নাকি দহনের যাতনায় পুড়ে মরছিস আজকাল

জানা হলো না।



অনেক ভালোবেসেছিলাম তোকে

বুঝেছিলি কি?

নাকি অভিমানের উত্তাল সাগরে এখনো হাল ধরে আছিস

জানা হবে না।



যান্ত্রিক জীবন অসহনীয় লাগে কেমন জানি

সভ্যতার বড়াই একটা ভাব

তার চেয়ে নদী আমার অনেক আপন মনে হয়

যদিও সর্বস্ব কেড়ে নেয় ঠিক তোরই মতন।



ল্যাম্পপোস্টের আলো বড্ড চোখে লাগে আজকাল

বড্ড তীব্র মনে হয়ে

তার চেয়ে জ্যোৎস্নার কোমল আলো অনেক আপন করে নেয়

ঠিক আমার স্বপ্নের মতন।



ঘড়ি পড়া ছেড়ে দিয়েছি অনেক কাল হয়ে গেছে

সেকেন্ডের কাঁটাটাও এখন নিশ্চুপ হয়ে গেছে ব্যাটারির অভাবে

তবুও জীবন কাঁটার ঘূর্ণন থামে নি আমার

চলছে দম না দেওয়া ঘড়ির মতন, ধুঁকে ধুঁকে;

এখন আর দিন ক্ষণ সময়ের পরোয়া নেই কোনো

তোর ফিরে আসার প্রতীক্ষায় দিন গুনি না আর

পোড়ায় না চোখ এখন আর তৃষ্ণায়, তোকে দেখার আশায়

শুকিয়ে গেছে আজ হৃদয়ের সকল জলাধার।



প্রতীক্ষার সীমারেখা পার করে দিয়েছিস অনেক আগেই

কালের অন্তরালে হারিয়ে গিয়েছে অপেক্ষার প্রহরগুলো

অনেক যাতনায় সয়ে গিয়েছিলেম অনেক মোহ নিয়ে

বাস্তবতার নিষ্ঠুর হাল ধরতেই হয় কোন একটা সময়ে

ডুবে যাবার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য অনেকগুলো জীবনকে

অথৈ সাগরে ভেসে যাওয়ার আগেই দরিয়ার নাবিককে।

সোমবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৩

জীবন

জীবন
- যাযাবর জীবন

জীবন থেমে থাকে না কারো জন্য
থমকে যায় জীবন হয়তো কিছু সময়ের জন্য
খুব প্রিয়জনকে হারিয়ে
বেদনার লাল রঙ মাড়িয়ে
হয়তো খুঁড়িয়ে চলতে হয়ে কিছুদূর পথ একা একা
তারপর আবার জীবন চলে জীবনের মত করে ছকে আঁকা
আগের সেই আনন্দ সুর হয়তো বাজে না
হয়তো বেজে যায় করুণ সানাইয়ের কান্নার ধ্বনি
আগের সেই ছন্দবদ্ধ লয় হয়তো থাকে না
ধিমা লয়ে ছন্দপতন বারে বারে কান পেতে শুনি
তবুও জীবন বয়ে চলে বাস্তবতার পঙ্কিল কর্দমাক্ত পথ ধরে
জীবন কেটে যায় ক্যাকটাসের কাঁটা ঘেরা পথ বেয়ে
জীবনটা আসলে এমনই
থেমে থাকে না কারো জন্য
শুধু খুঁড়িয়ে চলা জীবন যুদ্ধে।



শুক্রবার, ১১ জানুয়ারী, ২০১৩

মানুষের সংজ্ঞা

মানুষের সংজ্ঞা
- যাযাবর জীবন


চামড়ার পোশাকে ঢাকা হাড় মাংস কিছু
মানুষ নাকি এদের বলে, সত্যি নাকি?
ওই শকুনির গায়ে, ওই হায়েনার গায়ে ওই কুকুরের গায়ে
কিংবা হাজারো প্রাণীকুল আরো আছে ছড়িয়ে
চামড়ার পোশাকে হাড় মাংস ঢাকা তাদেরও সারা গায়ে জড়িয়ে
তবে তারাও কি মানুষ? সংজ্ঞায় কি বলে?

হৃদয় আছে প্রাণীকুলের সবারই
ধ্বক ধ্বক করে
ধমনী, শিরা, উপশিরা বেয়ে রক্ত দৌড়ে চলে
নখুন, দন্ত আর শ্বাপদের চক্ষু আছে কিছু প্রাণীকুলে
লোভী তারাও নখ দন্ত বসায়, খাদ্যের প্রয়োজনে
ঠিক মানুষ নামক প্রাণীর মতন, লোভের ছোবলে
তবে তারাও কি মানুষ? সংজ্ঞায় কি বলে?

চামড়ার নিচে শুধু কিছু হাড়গোড় আর মাংসের শ্লেষ্মা
প্রাণীকুলের একেক নাম একেক চরিত্র ঘেঁষা
আসলে কেও কারো চেয়ে আলাদা কিছু নয়
আলাদা নাম যদি কিছু হয়ে তবে সে শুধুই কাজে
“মনুষ্যত্বেই” সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ নামে পরিচয়।

হাড় চামড়ার নিচে সৃষ্টির সেরা জীবের বিবেক বোধ আছে
রক্ত মাংসের সাথে মিশে আছে প্রেম ভালোবাসা
মায়া মমতা আর কিছু মূল্যবোধের আশা
তবুও যখন বিবেক কথা না কয়
মনুষ্যত্ব মুখ ফিরিয়ে রয়
বড্ড কষ্ট হয়।

মাঝে মাঝে বড় অসহায় লাগে
যখন দেখি মানুষের মাঝে পশু রিপু
মনুষ্যত্বের খোলসে পশুত্ব কিছু
হাজারো এমন প্রশ্ন মনে জাগে
ঠিক তখনই ভাবতে ইচ্ছে করে -
চামড়ার পোশাকে ঢাকা হাড় মাংস কিছু
মানুষ নাকি এদের বলে, সত্যি নাকি?
সংজ্ঞায় কি বলে?

বৃহস্পতিবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৩

বিবেকে শৈত্য প্রবাহের অনুভব

বিবেকে শৈত্য প্রবাহের অনুভব
- যাযাবর জীবন

মনে করে নাও তোমরা লেপের তলায় শুয়ে আছ
প্রিয়জনের ওম বুকে ধরে
শরীরটারে আরেকটু গরম করে;
এবার ওদিক তাকাও -
দেখো বাইরে শৈত্য প্রবাহ চলে
উলঙ্গ তুমি শুয়ে আছ ছাঁদের পরে
সত্যি না হলেও একবার ভাব অনুভবে
শুধুই একবার।

না হয় একবারের জন্য হলেও ঘুরে এসো রাজপথ ধরে
না হয় আজকের একটু বেশী খাওয়াটুকু হজম করে দিতে
বের হয়ে এসো হিটারের ওম দেওয়া ঘর থেকে
তবেই বুঝবে শীত কাকে বলে
হাড় কাঁপানো...............

না হয় গায়ে ভারি উলের সুয়েটার জড়িয়ে
তার ওপর মোটা জ্যাকেট একটা পড়ে নিও
হাতে পায়ে মোটা উলের মোজা
না হয় কানটাও ভালুক চামড়ার কান-টুপিতে ঢাকা থাক
গরম উলেন অন্তর্বাসের ওপরে
মোটা জিন্সের প্যান্টটাও না হয় পড়ে নিও
তবুও অনুরোধ
আজ এই শৈত্য প্রবাহের রাতে
একবার হেঁটে এসো রাজপথ ধরে
তবেই বুঝবে শীত কাকে বলে
হাড় কাঁপানো.....................

আমি একদিন এভাবেই হেঁটে গিয়েছিলেম কোন এক গলি পথ ধরে
এমনই এক শৈত্য প্রবাহের রাতে খুব প্রয়োজনে
থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম খুব হঠাৎ করেই
রাস্তার পাশের মানুষগুলোর হাড় কাঁপা হি হি দাঁত ঘষা শব্দে
বিবেকের চাবুক যেন ফিরিয়ে এনেছিল আমায় মর্তে
চোরের মতন মুখ লুকিয়ে পালিয়ে এসেছিলেম কেন জানি
আগাপাছতলা গরম উলের জামা গায়ে দিয়ে
মুখটা লজ্জায় ঢেকে ফেলেছিলেম মাফলারে আমি............

বুধবার, ৯ জানুয়ারী, ২০১৩

অপেক্ষায়

অপেক্ষায়
- যাযাবর জীবন

অন্ধকারের রাত বড্ড প্রলম্বিত মনে হয়
ক্ষরণ জাগায় হৃদয়ে, রক্ত ঝরায় কিছু মনে
প্রতীক্ষার অবাঞ্ছিত প্রহর দীর্ঘায়িত হয়ে রয়
বড্ড ধীরে কাটছে আজকাল অপেক্ষার সময়।

টিক টিক টিক টিক বয়ে যাওয়া সময় ঘড়ির কাঁটা
থামে না এক মুহূর্ত যেন
খসে পড়ে না একবারও প্রতিদিন বেড়ে ওঠা টিক টিক করা
ঐ টিকটিকির ল্যাজের মত
মূল্যবান জীবন খসে পড়ে প্রতিদিন নানা কৌশলে
ওত পেতে থাকা মৃত্যুফাঁদে
অপলক চেয়ে দেখি নিশ্চুপ আমি
দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা অশরীরী ছায়া
যেন প্রতীক্ষায় তাকিয়ে থাকে আমারই চোখদুটি
তবুও করে না দয়া
অরুচি যমের কেন এত বেশি শুধু আমাতেই?

আর কতকাল দীর্ঘায়িত প্রহর গোনা টিক টিক করে
অতলে তলিয়ে যাই ভাবলেশহীন এক গভীর অন্ধকারে..................

মঙ্গলবার, ৮ জানুয়ারী, ২০১৩

দূর গগনে

দূর গগনে
- যাযাবর জীবন

যদি হারিয়ে যাই গোপন কোনো জায়গায়
যেথায় খুঁজে পাবে না কেও আমায়
শুধুই স্মৃতি হয়ে রব হয়তো
কারো মনের সোনালী ভাবনায়;
যদি হারিয়ে যাই সন্ধ্যের ধোঁয়া ধোঁয়া ধুসর কুয়াশায়
পথ খুঁজে খুঁজে হারিয়ে যেতে পথের ধুলোয়
হয়তো শুধুই রয়ে যাব
কিছু মানুষের স্মৃতির ভাবনায়;
কিংবা যদি জলে ভেসে ভেসে অনেক দূরে চলে যাই কোথাও
যেথায় দহনের জ্বালাগুলো সাগরের লোনা জল কুড়ে কুড়ে খায়
ভালোবাসাগুলো কি ঢেউ জাগাবে তোলপাড়ে
না পাওয়ার বেদনায়?

পোকা মাকড়ের বাস যখন দেহের ভেতর কিংবা মনে
ব্যাকটেরিয়া আর ভাইরাসের কিংবা ভালোবাসার দহনে
কুড়ে কুড়ে খায় দেহ মন আর হৃদয়
তখন হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে অন্য কোথাও, অন্য ভুবনে
ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায়।

একদিন হয়তো ধুসর রং ধরবে ওয়াটার কালারের আঁকা ছবিগুলোতে
একদিন হয়তো ধুলো জমবে মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা ভালোবাসাতে
একদিন হয়তো স্মৃতিগুলো ঢাকা পড়ে যাবে বিস্মৃতির অতলেতে
একদিন হয়তো সূর্য ঢেকে রবে ঘন মেঘের অন্ধকারে
একদিন হয়তো আমিও চলে যাব ভুবনের ওপারে
ইচ্ছে হয় না যেতে তবু মানুষ হারিয়ে যায়
ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায়।



বৃহস্পতিবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১৩

বিধাতার বিধান

বিধাতার বিধান
-যাযাবর জীবন


কি যে এলো এক দিনকাল
টাকার মূল্যে ভালোবাসা নাকি বিকোয় আজকাল
নর কিংবা নারী
প্রেমের ক্ষেত্রে দেখে অপর পক্ষের পকেট কতটা ভারী
হায় কি যে পড়েছে এক দিনকাল
প্রেমের মূল্য ধার্য হয় কাগজের টাকাতে আজকাল
অমর প্রেম পড়েছি যত না কাব্য কথায়
সেসব প্রেমের অনুভবগুলো কোথা গেল আজ হায়!

কি যে হলো আজকের দিনকাল
প্রেমের মূল্যে নাকি দেহ বিকোয় আজকাল
নর কিংবা নারী
পিছিয়ে নেই কেও কাওকে ছাড়ি
বিয়ের আগেই শারীরিক ভালোবাসাবাসি
যেন একে অপরকে ভাল করে পরখ করি
প্রেমের মূল্যের যোগ্যতা আজকাল রমণে
একটু এদিক ওদিক তো দুজনে দুদিক
পুরনো প্রেমের কথা কে রাখে আজ স্মরণে?

ভাবি না আজকাল একবার হায়
সুখ কেনা যায় না কাগজের টাকায়
করি না পরকালের একবার ভয়
দেহ সুখ পেলেই আজকাল যেন হয়
টাকার মূল্যে আজ ভালোবাসা বিকোয়
রমণের সুখে যেন প্রেম গভীর হয়
কি দেখি চারিদিকে আজকাল
হায় কি যে এলো এ যুগের দিনকাল।

টাকারে দেবতা মেনে যে প্রেমের শুভ সূচনা
এ দেবতা বড়ই আনচান কখনো ভাবি না
আজকে পকেট ভারী তো কালকে খালি
আজকের রাজা সে কালকের প্রজা
ওপর ওয়ালার খেলা বোঝা দায়
বোকা নার নারী বোঝে না কি হায়!

শারীরিক ভালোবাসাবাসির সমাপ্তি হবে একদিন
সত্যিকারের প্রেম রয়ে যাবে হৃদয়ে চিরদিন
দেহ বুড়িয়ে যাবে কালের স্রোতে
শুধুই মনটা রয়ে যাবে হৃদয়ে গেঁথে
প্রাণ পাখি উড়ে যাবে, দেহ পড়ে রবে শূন্য মাকান
বোঝে না বোকা নর নারী, এটাই বিধাতার বিধান।



বুধবার, ২ জানুয়ারী, ২০১৩

যাযাবরের গন্তব্য

যাযাবরের গন্তব্য
-যাযাবর জীবন

সকালের সূর্যোদয় রাঙ্গা প্রভাতে, নতুন দিনে সাজে পৃথিবী
মনুষ্যের দল ছুটে চলে যে যার পথে কর্ম সংস্থানে
পশু পাখির দল ছোটে খাদ্য অন্বেষণে
আমি তখন গভীর ঘুমে।

দিনের প্রহর গুলো কেটে যায় নিমিষেই যেন কেমন করে
মনুষ্য সমাজ সারাদিন কর্ম ব্যস্ততার মাঝে দিন কাটায়
গরিবের দুমুঠো ভাতের চাহিদা
মধ্যবিত্তের সংসারের লাঙ্গল টানা
আর উচ্চবিত্তের আরো টাকার পেছনে ছোঁটা
আমার আলসে দিন কাটে খুব ধীরে ধীরে
হয়তো ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিছানায় গড়িয়ে
কোনো দিন হয়তো ব্যস্ত নগরীর দিকে তাকিয়ে
আর খুব মাঝে মাঝে, নাহ ঠিক বললাম না
খুব প্রায়ঃশই দিন কাটে ভালোবাসার অনুরাগে
পথের দিকে চেয়ে, কারো ফিরে আসার প্রতীক্ষায়
যে পথ ধরে সে গিয়েছিল চলে।

পৃথিবী ঘুরতে থাকে তার অক্ষের ওপর
দিন শেষে সন্ধ্যে ঘনিয়ে আসে
রবি বিদায় নেয় পৃথিবী থেকে
মসজিদগুলো থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসে
মন্দিরগুলোতে কাঁসার ঘণ্টা বাজে
পাখপাখালির দলের ঘরে ফেরার সময়
মনুষ্য সমাজের কর্ম ব্যস্ততা শেষ হয়
ঘরে ফেরার পালা তাঁদেরও
কেও পায়ে হেঁটে
কেও বাসে ঝুলে ঝুলে
আর কেওবা এসি গাড়ির কালো গ্লাসটা উঠিয়ে দিয়ে
গন্তব্যহীন আমি হেঁটে চলি অলিগলি রাস্তার পথে
কখনো রেললাইনের স্লিপার গুনে গুনে একমনে
কর্ম ব্যস্ততা আমার সয় না।

রাতের শুরুতে স্তব্ধতা নেমে আসে ধরাচর জুড়ে
সারাদিনের ক্লান্তি শেষে মানুষ চলে যায় ঘুমের দেশে
পশু পাখিগুলোও যার যার ঘরে নিদ্রায় ঢলে পড়ে
নিস্তব্ধ রাত নেমে আসে পৃথিবীর বুকে
আমার চোখে ঘুম নেই কার কথা মনে করে
কি জানি?
এখন আর ভাবালু মনে আকাশের দিকে চাই না
এখন আর ভরা জ্যোৎস্নায় নিজেকে হারাই না
শুধু চেয়ে থাকি অন্ধকারের দিকে
কি জানি কি ভেবে?

আমার সকাল কাটে গভীর ঘুমে
দুপুর কাটে হয়তো কারো পথ চেয়ে
বিকেল বেলায় আলসে অবসরে
আমি সন্ধ্যের আধো অন্ধকার দেখি নির্লিপ্ত চোখে
রাতের আকাশে তারা গুলো আর গুনতে ইচ্ছে হয় না
প্রহরগুলো কেটে যাচ্ছে ঘোরের মাঝে
মনের বিচরণ আলুথালু বেশে স্বপ্নের দেশে
আমার কাছে সবাই আপন
আবার সবাই কেমন জানি পর
গন্তব্যহীন এক জীবন বেছে নিয়েছি
কারণ আমি এক যাযাবর।

যাযাবরের কোন নির্দিষ্ট গন্তব্য থাকতে নেই
থাকতে নেই কোনো লক্ষ্য, কোনো চাহিদা
তার মনে স্থান নেই কোনো ভালোবাসার
অপেক্ষায় বসে নেই কেও তার জন্য
তাই তাড়া নেই তার কোথাও যাবার
পিছুটান নেই কোনো আপন জনার
তাই তাড়া নেই তার কোথাও ফেরার।

মঙ্গলবার, ১ জানুয়ারী, ২০১৩

তোর কাছে লেখা খোলা চিঠি

তোর কাছে লেখা খোলা চিঠি
- যাযাবর জীবন

কতদিন হয়ে গেছে তোর কাছে চিঠি লিখি না
ভুলেই গেছি দিনক্ষণ এখন আর মনেই থাকে না
তবুও তোর কথা অনেক বেশি করে মনে পড়ে ইদানীং
আসলে কেমন যেন মনের মধ্যে একটা ভাপ ওঠে প্রতিদিন
তোর কথা মনে হলেই কেন যেন ভিজে ওঠে চোখ লবণ জলে
আসলে কান্নাগুলো গুমরে মরে মনের ভেতর, অশ্রু আসে চোখের পাতায়
নিজেও বুঝি না ঠিক কান্নার স্বরূপ, কেন যে এত চোখ মোছায়
সুখের স্মৃতিগুলো মনে হলে মনে মনে উদাস লাগে, চোখ ভিজে ওঠে জলে
অভিমান, অপমান আর দুঃখ কষ্টগুলোর কথা মনে করতে চাই না
তবুও আপনা থেকেই ভেসে ওঠে মনের চিলেকোঠায়
দেখ, তখনো কিন্তু মনের অনুভূতিগুলোকে বাঁধ দেয়া যায় না
আপনা আপনি চোখ বেয়ে নামে লবণ জল, আমায় যেন ভাসিয়ে দিতে।

তোকে দেখি না সেই কতকাল হয়ে গেছে, চিঠিও দেয়া হয়নি অনেকদিন
তবুও কিন্তু আমার মনের অনেক গভীরে রয়ে গেছে তোর অনুভব
সেই সব পুরনো দিনের কথা মনে হলে আজো নস্টালজিয়ায় ছেয়ে যায় মন
সেই সব সুখ দুঃখ আনন্দ বেদনার কথাগুলো মনে হয় রোজ
তোর চুপ করে বসে থাকা আমার সামনে মুখোমুখি
প্রশ্নবোধক চিহ্ন নিয়ে তাকিয়ে থাকতাম তোর দিকে ভ্রু কুঁচকে
না বলা কথায় তোর মনের ভাব জানতে
কিছুই বুঝতে দিতি না তুই, শুধু কেমন এক চোখ করে তাকিয়ে থাকতি
পলক না ফেলে, কিছু জিজ্ঞাসা করলেই বলে উঠতি তুই তোর কাজ কর
আমি তোকে দেখি।
যখনি জিজ্ঞাসা করতাম নতুন করে কত আর দেখবি?
তুই হেসে উত্তর দিতে তুই বুঝবি নারে গাধা
আমিও মুচকি হেসে উত্তর দিতেম ঠিক আছে রে গারু;
আসলেও আমি বুঝি নি তোর ভেতরের ভালোবাসা
কতটুকু ছিল রে তোর মনে? আজো জানা হলো না
নাকি তুই জানতে দিলি না, তাও ঠিক বুঝি না
শুধু না বলা কথায় চেয়ে থাকা ভালোলাগা কিংবা ভালোবাসার চোখে
তবু মাঝে মাঝে সেখানেও কেন দেখতাম লবণ জল ভেসে ওঠে।

আজ আমরা দুজন দুই ভুবনের বাসিন্দা
তোর আর আমার আর কোনদিন দেখা হবে নাকি জানি না
তবে সেদিন চেয়ে থাকার বদলে যদি আমার বুকে হাত দিয়ে দেখতি একবার
কিংবা হৃদয় স্পর্শ করার চেষ্টা করতি, তবে বুঝতি ভালোবাসা কাকে বলে
তাইতো এখনো তোর কথা মনে হলে চোখ দুটি ভরে যায় লবণ জলে।

বছর ঘুরে নতুন বছর শুরু হয়ে গেছে
তোকে শুভেচ্ছা জানানো হয় নি অন্যান্য বারের মতন
তবে আমার ঠিক মনে আছে তোর কথা
যদিও অনেক আশা ছিল মনের কোণে একটি এস এম এস
কিংবা তোর লেখা একটি চিঠি পাব নতুন বছরে নতুন করে
হায় কেন ভুলে যাই বার বার যে তুই হারিয়ে গেছিস কোনো এক
অজানার দেশে, আমায় একাকী ফেলে।

আজ অনেক দিন পর তোকে চিঠি লিখলাম
হয়তো কিছু গদ্যে হয়তো কিছু পদ্যে
পোষ্ট করে দিলাম তোর না জানা ঠিকানায়
তুই যাবার আগে তো আমাকে ঠিকানা দিয়ে যাসনিরে
তাই খোলা চিঠি উড়িয়ে দিলাম আকাশের গায়ে বাতাসে ভাসিয়ে
শীতের কুয়াশায় যদি ভিজে যাস কখনো বারান্দার কোনায় বসে
তবে ঠিক বুঝে নেব, ঠিকানা-বিহীন চিঠি পৌঁছে গেছে অজানার দেশে
যদি চাঁদনি রাতে জ্যোৎস্না আলো এসে পড়ে তোর বিছানার কোল ঘেঁসে
ঠিক বুঝে নিস আমি অনেক ভালোবাসায় চুমু দিয়ে গেলাম তোর চোখে এসে।