বৃহস্পতিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

লজ্জা

লজ্জা
- যাযাবর জীবন

অশনি এক ঘূর্ণি আবর্তে
তুই, আমি আর আমাদের ভালোবাসা
খুলে খুলে বিচ্ছিন্ন হতে চাচ্ছে
প্রেমের সমাধির ইট কাঠ আর বাঁশের দঙ্গল সকল;

তবুও কোথায় যেন পেঁচিয়ে আছে তোর অঙ্গে
ওই ছেড়া শাড়ীটার মত
কিংবা আমার দেহে
ওই ছেড়া গামছার মত;

হয়তো আমাদের মধ্যকার ভালোবাসাটুকুও
বিচ্ছেদের লজ্জা বিসর্জন দিতে পারছে না
ঠিক যেমন ভুলতে পারছি না
আমি তোকে.....................
কিংবা তুই আমাকে............

চাঁদের টুকরা

চাঁদের টুকরা
- যাযাবর জীবন

মাতাল করে রেখে গিয়েছিল এক চাঁদের টুকরা আমায়
হন্যে হয়ে তারে আজো খুঁজি তায়
পাগল করেছিলি আমায়, তোর প্রেমের জালে জড়িয়ে
রাখতে পারিনি ধরে আমারই ভুলে, তোরে দু বাহু বাড়িয়ে;

খামতি ছিল বোধহয় আমারই যেন কোথায়
নইলে কেন গিয়েছিলি চলে একা ফেলে আমায়।



বুধবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

প্রেমের সন্ন্যাস রোগ
- যাযাবর জীবন

দুদিনের সন্ন্যাস রোগ মনেতে বাসা বাঁধায়
প্রেম জ্বরে মরে যায় প্রিয়া বিনে হায়
ভালোবাসার মানুষ এসে কোনোমতে বাঁচায়
শরীরে শরীর কথা বলে, কামের বড়ি খাওয়ায়।

প্রেম জ্বর ছেড়ে গেলে ভাইরাস পাখা মেলে
নতুন অঙ্গের লাগি অঙ্গ আবার হাহাকার ফেলে
নতুন করে সন্ন্যাস ভাইরাস গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে
নতুন প্রেমিকের লাগি সন্ন্যাস রোগ ফোটে।

খেলা বদলের খেলায় খেলারাম খেলে যা
শারীরিক কামের খেলায় সন্ন্যাস সেরে যা।


ফিরে আসা - শাহবাগ চত্বরের টানে

ফিরে আসা - শাহবাগ চত্বরের টানে
প্রস্তুত ফাঁসির মঞ্চ

- যাযাবর জীবন

হঠাৎ করে, খুব বেশী হঠাৎ করেই অনেক দিন যাবত চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী জীবন কাটালাম। কোনো প্রস্তুতি ছিল না, ছিল না আগে থেকে কোনো সন্দেশা, তবুও কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে কেটে গেল কতগুলো দিন। কোথা দিয়ে দিন এসেছে, কখন রাত নেমেছে কিছুই টের পাই নি। সব কেমন যেন ধোঁয় ধোঁয়া। শুধু একটু একটু মনে পড়ে হাসপাতালের সাদা চাদর, ফিনাইলের গন্ধ, নার্সদের আনাগোনা আর গম্ভীর চেহারার ভারিক্কী কিছু ডাক্তারের চিন্তিত মুখ। ইদানীং আর কিছু মনেও থাকে না আর সে দিনগুলোর কথা আর মনে করতেও চাই না। ফেরার কথা ছিল না তবুও অন্যভুবন থেকে কেন জানি এবারের জন্য ফেরত পাঠানো হল। অনেক অনেক দিন পরে ঘরে ফিরে টিভির সামনে বসলাম।

ও মা !!! এ কি দেখছি? শাহবাগের এ কি অবস্থা? স্লোগানে স্লোগানে আকাশ বাতাস মুখরিত, ফাঁসি মঞ্চ তৈরি। তবে কি ৪২ বছর পর আমাদের স্বপ্ন সত্যি হতে যাচ্ছে? আমি কি স্বপ্ন দেখছি না তো? গত কয়েকদিনের খবরের কাগজ যোগার করলাম, গোগ্রাসে গিললাম আমার অনুপস্থিতিকালের ঘটনাবলি গুলো। আমার দেশের সোনার ছেলেমেয়েরা এ কি করেছে? আমি গর্বিত, অহংবোধে আমার বুক ফুলে উঠেছে। আমার প্রজন্ম পারে নি কিন্তু আমার পরবর্তী প্রজন্ম দেশের ঋণ শোধের যে প্রত্যয় যে প্রতিজ্ঞা নিয়ে আজ শাহবাগে একত্রিত হয়েছে তা দেখে যেন রক্তে দামামা বেজে উঠছে।
আমি অসহায়ের মত টিভির পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকি, হসপিটালের চার দেয়াল থেকে মুক্তি পেলেও বাড়ির চার দেয়াল থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় নেই এখন আর আমার, তবু খুব খুব ইচ্ছে করে একবারের জন্য হলেও এ প্রজন্মের সন্তানদের সাথে সুর মেলাতে - “রাজাকারের ফাঁসি চাই” - কলুষিত এ মানুষগুলোর একমাত্র বিচার ফাঁসির রায় কার্যকর করা। আমার মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে যখন তারা ধরে নিয়ে গিয়ে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মেরেছিল তখন শুধুই চোখের জলের বান ডেকেছিল আর হৃদয়ে এ হায়েনাদের প্রতি তীব্র এক ঘৃণা বাসা বেঁধে রয়েছিস। সেদিন আমি অসহায় ছিলাম, আমার বাবা, মা, দাদি, দাদা, ফুপু আর চাচারা অসহায়ের মত কেঁদেছিল। তারপর থেকে নদীতে কত জল গড়িয়েছে, দেশের রাজনীতি কত খেলা দেখিয়েছে - আর এই রাজাকার আল বদরগুলো আমার দেশের জাতীয় পতাকা বাহী গাড়িতে করে ঘুরে বেড়িয়েছে। কোথাও কোনো প্রতিকার ছিল না, শুধুমাত্র আমার মতন কিছু মানুষের মনে এক বুক ঘৃণা ছাড়া। সেই ঘৃণা সেই আগুন যেন আজকের নতুন যুব সমাজের প্রতিটি ছেলে মেয়ে, আমাদের আজকের সন্তানদের চোখে মুখে - ওই শাহবাগ চত্বরে। আমিও তোমাদের সুরে সুর মিলিয়ে বলি এদের ফাঁসিতে ঝোলাও, বাংলা মায়ের বুক থেকে এ সব কুলাঙ্গারদের নিশ্চিহ্ন করে দাও। এখন বুঝতে পারছি অন্যভুবন থেকে ফেরত পাঠানোর কারণ - হয়তো আজকের এই বহ্নিশিখা দর্শন কিংবা তোমাদের দেখে আবার নতুন করে বাঁচার ইচ্ছা, কিংবা হয়তোবা চলে যাব আবার সেই ভুবনে ঐ রাজাকারদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলন্ত দেখতে দেখতে - এই শাহবাগ চত্বরে।



শাহবাগ চত্বর
দামামার আগুন
ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ ওই দামাল সন্তানদের চোখে মুখে
আগুনের ফুলকি চোখে মুখে
নতুন স্লোগানের অভাব হয়নি আমাদের কোনোদিনও
উগরে দিতে মনের সকল ঘৃণার আগুন;
আজ আমরা সমবেত শাহবাগ চত্বরে
ছেলে, মেয়ে, আবাল, বৃদ্ধ বণিতা সকলে মিলে
মুখরিত স্লোগানে স্লোগানে -
“রাজাকারের ফাঁসি চাই
এর কোনো অন্যথা নাই”।

ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত
প্রস্তুত তোদের ফাঁসিতে ঝোলাব বলে
ঘরে ফিরব সেদিন
যেদিন ফাঁসির দড়িতে ঝুলন্ত ঐ রাজাকারের দল
নয়ত; শাহবাগ চত্বর আমাদের বসতবাড়ি।

রবিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

অপেক্ষা
- যাযাবর জীবন

কিভাবে দিন কাটছে জানি না
কিভাবে রাত যাচ্ছে বুঝি না
বেঁচে থাকাটাই বড্ড যেন যন্ত্রণার হয়ে যাচ্ছে আজ কাল
জীবনে আজ আর কোনো সুখ নেই
নেই কোনো দুঃখ
নেই আনন্দ বেদনার কোনো কাব্য
হাসি কান্না সেও তো ভুলে গিয়েছি সেই কবেই
যেদিন থেকে জীবন আর মৃত্যুর মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে রয়েছি
এখন আর কোনো কিছুতেই কিছু যায় আসে না
এখন আর কাওকে খুঁজি না
জীবনের কাছে আর নেই কোনো চাওয়া পাওয়া
শুধু অসহায় দিন কাটা আর নির্ঘুম রাত জাগা
ও ভুবনে কি অপেক্ষা করছে জানি না
তবু তীর্থের কাকের মত ওপারের ডাকের অপেক্ষা।

শুক্রবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

ভালোবাসার অনুভব

ভালোবাসার অনুভব
- যাযাবর জীবন

আমি প্রশ্ন করেছিলাম তোকে – ভালোবাসা কি?
তুই জড়িয়ে ধরে বলেছিলি – এই যে, যখন ইচ্ছে তোকে ধরা,
তোর শরীর ছোঁয়া, তোর বুকের গন্ধ শোঁকা।
আর?
আর যখন ইচ্ছে তোর সাথে কথা বলা, তোর সাথে পথ চলা।
পথ চলা কি?
এই যে আমরা দুজন রাস্তার ধার ঘেঁসে এতদূর হেঁটে এসেছি।
আর?
আর আর আর কিছু নয়।
আমি হেসেছিলাম সেদিন, কিছু বলি নি তোকে – মনে পড়ে?

তুই কি ভালবেসেছিলি না ছুঁয়েছিলি আমায়?
শরীরে শরীর ছোঁয়া, সে তো আর ভালোবাসা নয়
পথ চলতে কত বন্ধুর সাথে হাত ধরাধরি, হাসি কান্না গল্পের ছোড়াছুড়ি
মাইলের পর মেইল পথ চলা কত হেসে, সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যে কত দিন শেষে
একে কি ভালোবাসা বলে?
নিজেকে দেখে কতবার ছুঁয়েছি আমার শরীর, আয়নায় হাত রেখে;
তবু চামড়ায় মোড়া মাটির ওই দেহকে আমি নিজেই
ভালোবাসতে পারি নি আজো,
তবু তোর সাধ্য ছিল শুধু ওই শরীরটাকে ভালোবাসার
কিংবা হয়তো শুধুই স্পর্শ এক টুকরা মাটির ঢেলার।

তারপর কতদিন পার হয়ে গেছে!
অনুরাগে অনুযোগে, অভিমানের সাগরে
আমায় একা ফেলে তুই গেলি চলে
অথচ সেদিনও বুঝিস নি আমার চুপ করে থাকা
নষ্ট কিছু ভালোবাসার কষ্টের বুকে দিয়েছিলাম পাথর চাপা।
আমাদের সেই চলার পথ আজ বদলে গেছে
– রাস্তা তেমনই আছে পড়ে
আমাদের সেই শরীর কিন্তু আর ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা খেলে না
– আমার শরীর হয়তো একটু শুকিয়েছে অনাহারে
তবুও আমার মন তোর মত যায় নি এখনো মরে;
ওহ, তুই তো আবার মন বুঝিস না, বুঝিস শুধুই শরীর।

না কি এখন ভালোবাসার মানে বুঝতে পারিস?
এখনো না পারলেও একদিন পারবি নিশ্চয় এটা আমার বিশ্বাস;
খুঁজবি আমায় এদিক ওদিক হাত গুটিয়ে মন বাড়িয়ে
ঠিক আমার মতন করে
অনুভবে হৃদয়ের স্পর্শের সন্ধানে।

আমি তোকে না ছুঁয়েই স্পর্শ করেছিলাম তোর হৃদয়
তাইতো আজো রাত জেগে বসে থাকিস বুকে নিয়ে ক্ষত
এখনো তোকে আমি না ছুঁয়েই অনুভব করি আমার মত
ভালোবাসার গভীর অনুভব;
আজ কি বুঝতে পারছিস?
ভালোবাসা স্পর্শে নয় রে, শুধুই হৃদয় অনুভবে।