বুধবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১২

যেদিকেই তাকাই চারিধারে তুই

যেদিকেই তাকাই চারিধারে তুই

- যাযাবর জীবন


কখনো কি ভেবেছিলো আমার অবাক এ মন
ভুলে যাবি তুই আমাকে যখন তখন?

অথচ তোর স্পর্শ আমার পুরো আঙিনা জুড়ে
এখনো যেন ছোঁয়া খোঁজে তুই কেন দূরে?
ওই যে দেখা যায় বুড়ো কাঁঠাল গাছটার নিচে
ডালপালা যেথা শুকিয়ে আছে ঠিক তার পিছে
কিংবা হাসনাহেনার নতুন গজানো পাতায় পাতায়
উড়িয়ে আঁচল সেথায় সেথায়
টবের ক্যাকটাসে নতুন ফুল ফুটেছে
ছুঁয়ে দিয়ে গিয়েছিলি কাঁটার ডালে
শিউলি গাছটা আজ মরে গেছে
ছেয়ে ছিল ফুলে
কোন বিষের যাতনায় কে দেবে বলে
ঠিক যেন আমার মতন করে
শুকনো ডালে উঠোন গেছে ভরে
যেমন শুকিয়ে গিয়েছে মনটা আমার।

তোর স্পর্শ আমার পুরো বারান্দা জুড়ে
এখনো যেন ভেবে পায় না তুই কেন দূরে?
ওই যে দেখা যায় বুড়ো কাঠের চেয়ার
আমার মতই অপেক্ষায় গিয়েছে বুড়িয়ে
কিংবা লেখার টেবিলটা পড়ে আছে একা হয়ে
বসে থাকতিস যার উপর পদ্মাসন হয়ে
টেবিলের ওপরের কাগজ গুলো এখন যত্রতত্র
অনেক যত্নে তোর গুছিয়ে যাওয়া
যেন প্রশ্ন করে আমায় কেন তুই হাওয়া?
এখন আর তোকে নিয়ে কবিতা লেখা হয় না আগের মতন
তাই হয়তো কলমটার কালি শুকিয়ে গেছে
কলমদানিটাও পড়ে আছে একা, কালি শূন্য হয়ে
ছবি আঁকা হয় না অনেক দিন হয়ে গেছে
ধুলো বালি জমে রয়
পড়ে থাকা ক্যানভাসে
রংতুলিগুলো কেমন কাটখোট্টা হয়ে গেছে শুকিয়ে
রঙ কেনা হয় না অনেক দিন ধরে
তুই নেই বলে
কার ছবি আঁকব ভেবে পাই না
তুই নেই বলে কার কথা লিখব কবিতার ছলে
ভেবে পাই না
আমিও ওই বুড়ো চেয়ারটার মতন জবুথুবু বসে রই
অপেক্ষা কিংবা প্রতীক্ষায়
পাশে খোলা পড়ে থাকে না পড়া কিছু বই।

তোর স্পর্শ আমার পুরো ঘরটা জুড়ে
এখনো যেন তাদের মন মানে না তুই কেন দূরে?
ওই যে দেখা ঘসা কাঁচের আয়না
আজ তোকে চায় আমাকে চায় না
ওখানে প্রতিদিন মুখ দেখতিস তুই
গাড় লাল করে লিপস্টিক লাগাতিস
আর আয়নার সাথে কত কথা
আমি কিছু বলতে গেলেই ধমকে উঠতি
তুই কি বুঝিস বুড়ো ভাম বেটা
আমি চুপ করে দেখতাম তোর সাজ
একা একা;
তোর চুড়ির আলনাটা
এখনো ঠিক তেমনি সাজানো আছে
লাল, নীল, হলুদ, কালো আরো কত রঙের চুড়িতে
আমি মাঝে মাঝে তাতে হাত বুলোই আর টুং টাং শব্দ শুনি
যেন তোর ফিরে আসার প্রতীক্ষায় প্রহর গুনি
তোর কিনে দেয়া বিছানাটা পড়ে আছে আজো তেমনি
একা একা শোব বলে বিছানাতো কিনি নি!!
থাকনা আরো কিছু দিন পড়ে
ঘুণে খেয়ে শেষ হয়ে যাবে আস্তে আস্তে করে
আমার মতন, হৃদয় কুড়ে কুড়ে।

এখন বেলায় বেলায় সময় গড়িয়েছে অনেক
বিদায়ের ঘণ্টা ধ্বনি শুনি যেন কানে
তবু যেন কান পেতে রই কোন সুদূর পানে
প্রতীক্ষার প্রহর গুনে গুনে
তোর ফিরে আসার অপেক্ষা
স্মৃতি বিস্মৃতির দেয়াল ডিঙিয়ে
ভ্রান্ত ভ্রমের কুয়াশার আবরণ সরিয়ে
স্তব্ধ রাতের প্রহর পেরিয়ে
গোধূলির আলো ছায়া মাড়িয়ে
হলদেটে কোন এক জ্যোৎস্না রাতে
কিংবা অমাবস্যার কালো অন্ধকারে
ফিরে আসিস একবার তোরই ঘরে;
ওই বারান্দা
ওই চৌকাঠ
ওই আঙিনা
তোর চুড়ির আলনা
তোর বিছানার ভাঁজ
তোর রেখে যাওয়া সাজানো ঘর
ঠিক তেমনি আছে
যেমন রেখে গিয়েছিলি যাবার কালে;
শুধু আমিই বদলে গিয়েছি
বদলে গিয়েছে সময়
বদলে গিয়েছে কাল
চুলেগুলো হয়তো একটু সাদা রঙ ধরেছে
যৌবনে ভাটা পড়েছে
ক্ষয়িষ্ণু কালের কাছে কে না পরাজিত হয়
এখন দেহ আর মনের সাথে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা
বেঁচে থাকার তাগিদে
একসময় যৌবন পরাজিত হয়
ক্রমবর্ধমান বার্ধক্যের কাছে
যেন গোধূলির কাছাকাছি এক সূর্যাস্তের বিকাল;
শুধু তুই আমার চোখে
ঠিক সেদিনের মতই আছিস এখনো
উদ্ভিন্ন চির যৌবনা এক সবুজ সকাল।










মঙ্গলবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১২

হলুদ বেদনা

হলুদ ওই চাঁদ দেখেছিস কখনো?
বেদনার রঙে বিবর্ণ রাঙানো
নীল বেদনার রঙ দেখেছে সকলে
হলুদ বেদনার কান্না শুধুই আমার দখলে।




মনের মাঝে জ্যোৎস্নার খেলা

মনের মাঝে জ্যোৎস্নার খেলা

- যাযাবর জীবন



মনের গহীনে বাসা বেঁধে থাকা সব অভিমান
গলে গলে পড়ে চাঁদের রাত্রিতে জ্যোৎস্নার অবদান
চোখের ভেতর জমে থাকা সব টুকরো বেদনা
পূর্ণিমা হয়ে ঝরে পড়ে জ্যোৎস্নার কান্না।

হামাগুড়ি দিতে থাকা চাঁদ সন্ধ্যের পর হতে
মধ্য রাতে যেন আলো ঝলমলে সূর্য হয়ে ওঠে
লম্বা হয়ে পড়া তির্যক ছায়ারা ধীরে ধীরে খাটো হয়
মাথার ওপরে চাঁদ মধ্য গগনে কি যেন সব কথা কয়
আকাশে বাতাসে ফিসফিস করে কি যেন সব কথা হয়
কানাকানি করে আমায় বলে যায় জন্মেছি আমি এক ভুল সময়।

বুকের মাঝে যত যাতনার বীজ করেছি বপন
ভুলতে চাই সব করে মন-মুগ্ধ চাঁদের সাথে রাত্রিযাপন
ল্যাম্পপোস্টের আলোগুলো নতজানু চাঁদের কাছে
বন্য এক চাঁদ যখনি আকাশেতে বিশাল হয়ে ওঠে
মনের মাঝেতে কিছু নোনা কান্নার ঢেউ জাগে বুকে
জ্যোৎস্নার মাঝে হাত বাড়িয়ে যখনি পাই না তোকে ছুঁতে।

টুকরো সব হাজার স্মৃতি মনে হামাগুড়ি আসে
চাঁদের লগ্নে তারা যেন সব বসে এসে পাশে
নদী পারে বালু চরে জল জোছনা
ভেসে যায় নদী জলে নোনা কান্না।


সোমবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১২

অন্ধকারের উল্লাস

অন্ধকারের উল্লাস

-যাযাবর জীবন

অথৈ জ্যোৎস্নার ওপারে ঘন অন্ধকার
চাঁদের এক পিঠ দেখা যায়
নক্ষত্রের ওপারে তিমির আঁধার
আলোর কিরণ কোথায়?
বন্য ভালোবাসার ওপারে শব্দহীন উল্লাস হো হো করে
চোখ ঝলসানো অন্ধকার একা একা কেঁদে মরে।




খেলা খেলা

খেলা খেলা

- যাযাবর জীবন

খেলায় আমি হারতে চাই না
তাইতো আমি খেলতে যাই না
মানুষ আমায় ভুল বুঝে;

ভালোবাসা হারাতে চাই না
প্রেমে তাই বাঁধতে চাই না
মানুষ আমায় ভুল বুঝে;

যতটা তোরে ভালোবেসেছিলাম
কতটা তার প্রতিদান চেয়েছিলাম?
একবার মনে করে দেখতো!!!

কোজাগরী পূর্ণিমা ভালোবাসা ছড়ায়
প্রেমের বাতাস হৃদয় নাড়ায়
বুঝে নিতে অনুভবে একা;

মিথ্যা আমি বলতে পারি না
সত্যি আমি বলতে চাই না
ভালোবাসায় ছলনার কথা;

বড্ড কষ্ট ভালোবাসা হারানো
তাই এখন কারো ভালোবাসা চাই না
তুই আমায় ভুল বুঝিস না।



শনিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১২

বিবর্ণ ডালে নীল পাতাগুলো

বিবর্ণ ডালে নীল পাতাগুলো

- যাযাবর জীবন

পাতাগুলো একসময় সবুজ ছিল
ভালোবাসার দিনগুলোতে
তোর আর আমার দুজনার দুই গাছে
ধীরে ধীরে বিবর্ণ রঙ ধরেছিল
সবুজ সতেজ পাতাগুলোতে
তোর ভালোবাসার মত করে
শুধু আমি বুঝি নি আগে
প্রেম তোর মরে গেছে
একটু একটু করে।

এখন আর পাতাগুলো বিবর্ণ নয়
ঝরে পড়েছে টুপ করে গাছের তলে
ঠিক তুই যেমন ডুব দিয়েছিস
না বলে চোখের আড়ালে।

আবার হয়তো বৃষ্টি নামবে তোর গাছের ডালে
মনের বাগানে ফুল ফুটবে রঙিন স্বপ্ন নিয়ে
পাতাগুলোতে সবুজ রঙ ধরবে
তোর নতুন ভালোবাসায় রাঙা হয়ে।

তখন একবার বসে যাস
আমার গাছের বিবর্ণ ডালে
দেখে নিস ভালো করে
চোখ মেলে মেলে
নতুন সাথীকে সঙ্গে করে
উড়ে উড়ে এসে
পাতাহীন বিবর্ণ ডালগুলো
কেমন রঙ ধরেছে নীলে
তোরই মনের যত উগরে দেয়া বিষে।




শুক্রবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১২

কোরবানি ও অলিক কিছু চিন্তা

কোরবানি ও অলিক কিছু চিন্তা

-যাযাবর জীবন

“ক্যামেরার টপ শট
ঈদের আগের দিন বিকেল বেলা
বড় বাড়ির উঠোন
৪ টি বড় বড় গরু
২টি দাঁড়িয়ে বাকি দুটো বসে
তার একটু পাশে ৪ টি বিশাল আকারের খাসি
১টি দাঁড়িয়ে বাকিগুলো বসে
কোরবানির জন্য কেনা
৪টি ফ্যামিলির ছোট ছোট বাচ্চা ছেলেরা গরুগুলোকে ঘিরে
কতগুলো ফুটফুটে বাচ্চা মেয়েরা একটু দূরে
যেন ভয় পাচ্ছে গরুগুলোর কাছে যেতে
ওরা খাসি বা ছাগল গুলোকে কাঁঠাল পাতা খাওয়াচ্ছে।

ক্যামেরা ক্লোজ শটে
একটি শিশু বাচ্চা ছেলের মুখ
হাসিতে দাঁত বের হয়ে আছে
দেখেছ? আমাদের লাল গরুটা সবচেয়ে বড়
দেখতে কি সুন্দর নাদুস নুদুস।

ক্যামেরা ঘুরে ক্লোজ শটে
আরেকটি শিশু বাচ্চা ছেলে
আরে নাহ আমার সাদা গরুটা দেখ
ওটাই সবচেয়ে বড়
উঁচু লম্বা সব গরুগুলোর চেয়ে।

ক্যামেরা আবার ঘুরে ক্লোজ শটে
আরেকটি শিশু বাচ্চা ছেলের মুখ
হাসিতে সবগুলো দাঁত বের হয়ে পড়েছে
ধুর তোমরা সবাই বোকা
দেখ না আমার কালো গরুটা
দুই লাখ টাকা দিয়ে কিনে এনেছি বাবা আর আমি
ষাঁড় গরু এটা, হাটের সবচেয়ে গাঁট্টাগোট্টা
এখানকার সবগুলো গরুর মধ্যে সবচেয়ে দামি।

এবার ক্যামেরা ঘুরে ক্লোজ শটে
চতুর্থ শিশু বাচ্চা ছেলের মুখে
চিন্তিত একটু যেন এই ছেলে
চারটি গরুর মধ্যে সবচেয়ে ছোট গরুটি তার
তবু মুখে কি এক প্রশান্তির হাসি
সাদা কালো ছোট গরুটির গায়ে হাত বুলায়
পরম মমতায়
একটু খানি কে যেন ভাবে
বাকি সবাইকে বলে
নিয়তে বরকত, কোরবানির ভাবনায়
গরুর দামে কি আসে যায়?
কোরবানির এই গরুটি কেনা
আমার বাবার অনেক কষ্টের পয়সায়।

ক্যামেরা প্যান করে টপ শটে
চার রঙা চারটি গরু
চারটি গরুর গা ঘেঁসে চারটি বাচ্চা শিশু
একটু দূরে দাঁড়িয়ে চারটি শিশু মেয়ে
মুখে কোন কথা নেই তাদের
খাসি বা ছাগলকে কাঁঠাল পাতা খাওয়াচ্ছে।

চতুর্থ শিশুটির কথা শুনে
ক্যামেরা জ্যুম করে বাকি তিনটি শিশুর মুখে
এক এক জনের এক এক রকম এক্সপ্রেশন
কারো তাচ্ছিল্য কিংবা কারো যেন বুঝদার হাসি।

ক্যামেরা এগিয়ে গিয়ে জ্যুম করে
বড়ির উঠোনের লোহার শিকের গেটে
গেট বন্ধ তালা মারা
দারোয়ান দাঁড়িয়ে গেটে
পাশের বাড়ির কয়েকটি বাচ্চা ছেলের মুখ
যাদের বাবার সামর্থ্য হয়নি কোরবানির গরু কিংবা ছাগল কেনার
করুণ চোখে তাকিয়ে দেখতে থাকে
বড় বাড়ির কোরবানির পশুগুলোকে
মলিন মুখে, কি এক অসহায় চোখে
ক্যামেরার ফোকাস তাদের মলিন মুখ
ডি ফোকাস বড় বাড়ির শিশুগুলোর মুখ
ক্যামেরার ডি ফোকাস তাদের মলিন মুখ
ক্যামেরা ফোকাস বড় বাড়ির শিশুগুলোর হাসিখুশি মুখ।

ঈদের দিন দুপুরবেলা
ক্যামেরার লং শট
বড় বাড়ির খাবার টেবিল,
সবাই মিলে খাচ্ছে
কোরবানির মাংস, বড় ছোট সবাই
গল্পে মশগুল
সকলের মুখে হাসি
ক্যামেরা ফোকাস আউট।

ক্যামেরা ফোকাস ইন
পাশের বাড়ির খাবার ঘর
মাটিতে আসন পেতে বাবা মা আর দুটি সন্তান
জ্যুম শটে সাদা ভাতের গামলা
একটি বাটিতে আলু ভর্তা
একটি বাটিতে ডাল
আর ঈদ উপলক্ষে মায়ের রান্না
একটি মুরগীর মাংসের বাটি
মাদুরে খেতে বসা সবাই
ক্যামেরা ফোকাস আউট
এন্ড কাট”।

কেন এমন হয়?
কোরবানির অর্থ কি?
আমরা কি পারি না আমাদের কোরবানির মাংসের ভাগ দিতে
পাশের বাড়ির ওই প্রতিবেশীকে?
এটাই তো হওয়া উচিত কোরবানির প্রকৃত অর্থে।
তবে কেন আমরা ভুলে যাই প্রতিবেশীকে?
এই আমাদের ত্যাগের শিক্ষা?
এই আমাদের কোরবানির দীক্ষা?
কেন বড় বাড়ির গেটে ফকিরের ভীর লেগে থাকে দু টুকরো মাংসের আশায়
আর বড় বাড়ির কর্তা গিন্নী মুখ ঝামটে ঝামটে মাংস বিলিয়ে যায়
ফকিরদের মাঝে, যেন এটাই তাদের কোরবানির আসল মানে
কতটুকু বিলালো তার কি হিসেব রাখে
নাকি হিসেব কষে তার ডিপ ফ্রিজে কত বেশি মাংস আঁটে?
বাকি যা থাকে ছুড়ে ছিটিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা ভিক্ষুকের পানে।
আজকের সমাজে গরীব প্রতিবেশীর খবর নেওয়ার সময় কোথায়
কিংবা মানসিকতা?
আমরা কি দিনে দিনে মনুষ্যত্ব হারাচ্ছি
নাকি অনেক টাকায় কেনা কোরবানির গরু নিয়ে গর্ব করে
সম সোসাইটির বাকি সবাইকে বলে বেড়াচ্ছি
ভাবী জানেন? আমার কর্তা এবার গরু কিনেছে এক লক্ষ টাকায়
কিংবা আরেকজনের তাচ্ছিল্য ভরা মুখে শোনে
মাত্র একলক্ষ টাকা? আমার কর্তা এবার হাটের সবচেয়ে দামী গরুটি কিনে এনেছে
আট লক্ষ বা দশ লক্ষ টাকায়।
যেন টাকাটা হাতের ময়লা, ঠিক যেমন পাশের বাসার অভুক্ত প্রতিবেশী।
এরই নাম কি কোরবানি???
ত্যাগের শিক্ষায় কবে আর আমরা কোরবানির শিক্ষা নেব?
কোরবানির মাধ্যমে কবে ত্যাগের দীক্ষায় দীক্ষিত হব?
মনুষ্যত্বহীন বিবেক কথা কয়
মানুষ যেন বুঝেও মুখ ফিরিয়ে রয়।

বৃহস্পতিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১২

স্মৃতিগুলো সযতনে

স্মৃতিগুলো সযতনে

-যাযাবর জীবন


আজকে চল আমরা কথা বলি নিজেদের সঙ্গে
তুই আর আমি
আর কিছু প্রশ্ন
তখন, এখন আর অনেকগুলো কেন।

মনে কর বেশ কিছুদিন আগের কথা
মনে কর যখন আমাদের দেখা হয়েছিল দুজনার
মনে কর প্রথম চোখাচোখি আর বসে থাকা মুখোমুখি
হাঠাৎ আবেগ দুজনের মনে একসাথে
কিছু না বলা কথা বুঝে নেয়া দুজনে দুজনার একসাথে
হঠাৎ করেই কাছে আসা, একটু হাত ধরাধরি
তাও যেন দুজনে মিলে একসাথে
একে অপরের বাড়ানো হাতে
কি জানি হয়তো ওপরওয়ালার কোনো চালে
তোর মুখে কি জানি এক লজ্জার মুচকি হাসি
হয়তোবা ধরা পড়ে গিয়ে প্রেমের বেড়াজালে;
কি যে পাগলামি ভর করেছিল দুজনার
একটু ছোঁয়াছুঁয়ি
তারপর আবিষ্কার অধরে ওষ্ঠ
অনেক ভাবাবেগে আবিষ্ট
দুজনে মিলে একসাথে;
কিছু প্রতিশ্রুতি ভালোবাসার
ঘরের এককোণে বসে দুজনে দুজনার
তারপর রিক্সা, উদার আকাশের নীচে
হাত ধরাধরি করে
কোন কারণ ছাড়াই একসাথে বসে থাকা
হাতে হাত রেখে রিক্সার হুড তুলে দিয়ে
পেঁজা মেঘ তুলোর মত নেমে আসে মর্তে
ভিজিয়ে দিতে দুজনকে একসাথে;
কারণ ছাড়াই এ দোকান সে দোকান, শপিং মলগুলো
ছোটাছুটি শুধুই, বাহানা কিছু সময় কাটানো
দুজনার একসাথে
তারপর?

এবার তুই ই না হয় একটু বল!!
কি হলো? বলবি না? লজ্জা পাচ্ছিস?
আরে ভালোবাসায় আবার কিসের লজ্জা?
পেতেছিলেম দুজনে বাসর শয্যা
তোর ঘরে আমার ঘরে
আকাশ আর পাতাল তলে
রোদে আর বৃষ্টিতে ভিজে
আলো আর অন্ধকারে
দুজনে দুজনে মিলে।
এই যাহ, দিলেম তো বলে!
এবার আড়াল তোল তোর ঘোমটার
দেখা মুখখানি ভালো করে চাঁদের আলোতে
দেখি না কার রূপ কথা বলে আমার বুকের পরেতে!
সেদিনের সেই কথাগুলো, আজো কি তোর মনে আছে?

তারপর কি যে হলো তোর?
জানা হলো না আজো।
মসৃণ জীবনে নেমে এলো কালো।
দুজনে দু ভুবনে বসবাস
সেও তো অনেক দিন হয়ে গেল।

কেমন আছিস তুই আজকাল?
তোর নতুন সংসার কেমন চলছে?
জানি না তোর সম্পর্কে কিছু আজকাল
শুধু স্মৃতিগুলো কথা কয় আমার সাথে
বাড়ে বাড়ে স্বপ্ন হয়ে চোখে লেগে থাকে
দুজনার সেই সব সুখের দিনগুলো।
কি জানি রে! হয়তো আমারই কোন ভুল ছিল
কিংবা তোর হৃদয়ের দাবিদার অন্যকেও ছিল
ভবিতব্যকে কে খণ্ডাতে পারে
তাই তো মেনে নিয়ে সরে গিয়েছি
ধরা ছোঁয়ার ওপাড়ে।

অনেক যত্ন করে মনের অনেক গভীরে
এখনো ধরে রেখেছি অমূল্য সেই সব দিনের স্মৃতিগুলো
সুখের দিনের তোরই দেয়া
দুঃখের বেদনা, তাও কিন্তু তোরই দেয়া
আমি সব স্মৃতিগুলোকে মনের একটি একটি ভাঁজে
রেখে দিয়েছি সযতনে
শুধু তোর কথা যখনি মনে হয়
দিনে কিংবা রাতে
আলো কিংবা আঁধারে
রোদে কিংবা বাদলে
মনের গোপন ঘরে সযতনে লালিত
সেইসব স্মৃতিগুলো
একটু একটু করে খুলে দেখি
চুপিচুপি
বসবাস আজকে আমার
এক অভিনব পরা-বাস্তব জগতে
তুই হীনা
তোকে ছাড়া।

বুধবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১২

তুই আর তুই এ মাখামাখি

তুই আর তুই এ মাখামাখি

- যাযাবর জীবন


আমার প্রতিটি নিঃশ্বাসে শুনি তোর বিশ্বাস ভঙ্গের আহাজারি
আমার প্রতিটি প্রশ্বাসে তবু তোকেই স্মরণ করি
দিনের কিংবা রাতের প্রতিটি প্রহর পলে
আমার হৃদয় ধ্বক ধ্বক করে
কান পেতে ভালো করে শুনে দেখ
সেথায় শুধু তোরই কথা বলে
আমার প্রতিটা স্বপ্ন শুধুই তোরই রূপ দেখে
প্রতিটা কল্পনায় শুধু তোরই ছবি আঁকে
হায় আমার একমাত্র স্বপ্নগুলো! শুধুই তোকে দেখে
হায় আমার একটি হারানো হৃদয়!শুধু তোরই চিন্তায় ছেয়ে থাকে
আমাতে আমি রই না স্বপ্নে বা জাগরণে
মন আমার তোরে নিয়েই বিভোর হয়ে থাকে।
এখন আমার হাতে অফুরন্ত সময়
এখন আমার দিন কাটে অয়োময়
রাতের প্রত্যেক প্রহরে একা পরে থাকি
নিজেতে নিজে হারিয়ে ভুলের সন্ধান খুঁজি
মনে মনে হয়তো তোর বেদনা বুঝি
দিনের প্রত্যেক প্রহরে একা পথ চলি
মনের কোনেতে পথের সন্ধান খুঁজি
আপনাতে আপনি একা একা ঝুঝি।
সময় বয়ে যায় সময়ের হাত ধরে
থেমে থাকে না কারো পথ চেয়ে
সমীরণ বয়ে চলে কানের পাশ ঘেঁসে
যেন তোর কথার ঝাপটা এসে লাগে
মেঘেরা পথ চলে আকাশের গাঁয়ে ভেসে
বারিধারা নেমে আসে ধরাতলে এসে
মাটির সোঁদা গন্ধ যেন ভাসে বাতাসেতে
তোর গায়ের গন্ধ যেন পাই মোর নাকেতে
ভ্রমের ঘোরে পথ চলতে চলতে
তুই পাশে রয়ে যাস ঠিক হৃদয়ের কাছ ঘেঁসে
প্রতিটি সময় দিনে কিংবা রাতে
ভ্রমের ঘোরে রয়ে যাস কাছে।

প্রতিটি সূর্যোদয়ের কালে
প্রতিটি সূর্যাস্তের কালে
প্রতিটি জ্যোৎস্না রাতের আলোর মাঝে
প্রতিটি অমাবস্যার ঘন অন্ধকারে
প্রতিটি দিন
প্রতিটি রাত
প্রতিটি প্রহর
প্রতিটি সময়
প্রতিটি ঘণ্টা
প্রতিটি মিনিট
প্রতিটি সেকেন্ড ...........
তোর উপস্থিতি আমার হৃদয়ের খুব কাছে
তোর পদধ্বনি আমার কানে এসে বাজে
তোর গাঁয়ের গন্ধ নাকে এসে লাগে
তুই আর তুই তে মাখামাখি হয়ে
প্রতিটি সময়
প্রতিটি সময়
প্রতিটি সময়
বলতে পারিস কেন এমন হয়?..........
.







ক্ষয়িষ্ণু মানবতা

ক্ষয়িষ্ণু মানবতা


-যাযাবর জীবন



কি দেখতে পাই আমরা আজ দু-চোখ মেলে?

নষ্ট হয়ে যাওয়া মানবসমাজ!!
ক্ষুধায় কাঁতর কিছু শিশু মুখ!!
মায়ের আহাজারি একটু ভাতের ফ্যানের জন্য!!
বিবেকহীন মনুষ্যত্ব!!
স্বৈরাচারের রাজনীতি, কালোবাজারি আর মজুতদারি!
এখানে ওখানে যুদ্ধ!
ঘৃণা উপেক্ষা আর অবহেলা!
কিংবা এখানে ওখানে পরে থাকা লাশের রাজত্ব!!!



ভয় নেই যেন আজ তোদের প্রতিপালককে
ভয় নেই যে তোদের একই আত্মা হতে সৃষ্টি করেছেন
শোকর নেই তোদের মাঝে যিনি অন্ন দিয়েছেন
তোদের প্রত্যেককে একটি করে সঙ্গিনী দিয়েছেন
জীবন চলার পথে জীবনের জন্য; রমণের প্রয়োজনে
অথচ, আজ তোরা বহু-গমনের পথে চলেছিস
এক নারীতে তৃপ্তি হয়নি তোদের
তাইতো পরকীয়া ভাইরাস আজ অণু পরমাণুতে
আজকাল তোদের নারীতেও দেহ-বাসনা মেটে না
আড়ালে আবডালে করে যাচ্ছিস সমকামিতার নোংরা খেলা
আজ তোরা কিছু ভালোবাসার নামে দেহপসারিনি
যৌবনের অতৃপ্ত ক্ষুধায়
অথচ ওদিকে তাকিয়ে দেখ একবার ভালো করে চোখ মেলে
ঠিক তোরই মতন আরেকটি মা দেহ বেচে
সন্তানের মুখে অন্ন তুলে দিতে উপায়হীন হয়ে
আজ তোরা বেশ্যার দালাল দুটো টাকার জন্য
তোরই মা বোন বেচা পয়সায় তুলে দিস
তোরই সন্তানের মুখে অন্ন
তোরা মানব নামের দানব
ধিক তোদের আজ।

আজ তোরা মাতৃগর্ভকে বুড়ো আঙ্গুল দেখাস
বৌ এর আচলের তলায় মুখ লুকিয়ে
আজ তোরা জন্মদাতা পিতাকে ফেলে আসিস
ওল্ডহ্যামের কারাগারে বন্দী করে
আজ ভাইয়ে ভাইয়ে যুদ্ধ, ভাই বোনের হাতাহাতি লড়াই
বাবার রেখে যাওয়া কিছু সম্পত্তির জন্য
অথচ বাবার শব পড়ে আছে দাফনের অপেক্ষায়
কাফন বাঁধা হয়ে কাঁদে যেন লজ্জায়
সাড়ে তিন হাত মাটির তলায় সেঁধিয়ে যেতে চায় ।

আজ তোরা ভূমি দস্যু যেখানে যেটুকু পাস
ছলনা আর চাতুরীতে করিস গরীবের সর্বনাশ
আজ তোরা পিতৃহীন এতিম শিশুকে কোলে তুলে নিস
তার যুবতী মাতার দেহের লোভে, ছলনায় ফেলে ধর্ষণ করিস
ভালোবাসার ছলনায় কিংবা তার স্বামীর রেখে যাওয়া
একটুকরো ভিটেমাটির সম্পত্তির লোভে
নামেই তোরা মানুষ, কোথায় মনুষ্যত্বের বাস?
মানুষের রূপে কিছু পশুর পদচারণ আজ মানুষেরই জঙ্গলে
অথচ জল-জঙ্গলের কাব্য লিখে যাস তোরা
ভালোবাসার অনুভূতি নিয়ে
গভীর মমতায় কাগজে আর কলমে।






মঙ্গলবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১২

ভালোবাসার উপহার


ভালোবাসার উপহার

-যাযাবর জীবন


এক একটি পুরুষ মানুষ এক এক রকম হয়
এক একটি পুরুষ মানুষ এক এক ভাবে তার ভালোবাসার কথা কয়
কখনো ঢাক ঢোল পিটিয়ে, কখনো বা খুব সঙ্গোপনে
কখনো তার স্ত্রীকে নিয়ে কখনো বা তার প্রেমিকাকে ঘিরে।

কখনো স্ত্রী কিংবা প্রেমিকার জন্মদিন মনে আসে,
কখনো ভালোবাসার মানুষটির সাথে কাটানো খুব খুব গোপন
কোন একটি দিনের কথা খুব প্রায়ঃশই মনে পড়ে;
ভালোবাসার ছলনা কিংবা জীবনের সাথে প্রতারণায়
আজ তার স্ত্রী হয়তো অনেক দূরে কোথাও
নতুন সংসার পেতেছে, মেতেছে অন্য পুরুষে;
কিংবা তার প্রেয়সী আজ হয়তো অন্য কোন পুরুষের বাহুডোরে
নতুন এক স্বপ্নে বিভোর হয়ে
ছেলেমানুষি প্রেম পিছু ফেলে
বাস্তবতাকে আঁকড়ে ধরে।
কঠিন বাস্তবতা, মহামূল্যবান টাকার বাঁধনে গাঁথা।

তবু যেন প্রেমিকের হৃদয়ে সত্যিকারের ভালোবাসা
মনের অনেক অনেক গভীরে বাসা বেঁধে থাকে
হঠাৎ করেই বিশেষ বিশেষ দিনগুলিতে
প্রিয়ার মুখ বড্ড বেশি মনে পড়ে
তার জন্যে কিছু করতে ইচ্ছে করে
তাকে কিছু উপহার দিতে ইচ্ছে করে।

কোথায় আছে সে?
কেমন আছে আজকের এই বিশেষ দিনটিতে?
খুব গোপন, একান্ত সঙ্গোপন, শুধুই দুজনে দুজনার
গভীর প্রণয়ের মাঝে
দুজনে মিলেমিশে একসাথে হয়ে
আজকের এই দিনে;
এই বিশেষ দিনটির কথা; তার কি মনে আছে?
কবির ভাবনায় কত কথা মনে ভাসে;
থাকুক না তার প্রেমিকা কিংবা স্ত্রী
অনেক অনেক দূরের কোন দেশে
কিংবা হয়ে অন্য কারো, না হয় অন্য কোন বেশে।

তবুও কবি যেন পরা-বাস্তব এক যুগে বাস করে
– স্বপ্নালু চোখে দেখে আর মনে মনে ভাবে
কি দেওয়া যায় তার প্রেমিকাকে!
আজকের দুজনার একান্ত ভালবাসা-বাসির বিশেষ এই দিনে
কি পেলে খুশি হবে সে?
ভাবতে ভাবতেই যেন সময় বয়ে যায় চোখের নিমিষে।

–একটি গোলাপ টকটকে লাল!
কিংবা প্রিয়ার অনেক পছন্দের একগুচ্ছ হলুদ গোলাপের ডালি!!
নাহ, গোলাপ নয় – “কাঁটা বিধতে পারে তার কোমল হাতে”।

- একগুচ্ছ রজনীগন্ধা!
কিংবা অসময়ের বেলি ফুলের মালা
ইচ্ছে করে বাগান তুলে নিয়ে আসতে তার জন্য,
নিজ হাতে মালা গেঁথে পড়াতে ইচ্ছে করে তার খোঁপায়
কিংবা তার গলায়
পড়িয়েছিল যেভাবে আগের সেই দিনগুলোতে।
নাহ – “কোথাও যদি মধু-পিঁপড়ে রয়ে যায়”!
বেলি ফুলের গোপন কোনো ভাজে?
আমার প্রিয়ার কোমল ত্বক সইতে পারবে না
“লাল পিঁপড়ের কামড়ের যন্ত্রণা”
কবি বসে ভাবে।

- তার থেকে একটি কবিতা না হয় উপহার হয়ে থাক আজ তার তরে
মনের সকল কথাগুলো, কলমের আঁচরেতে ভরে
হয়তো কখনো সে পড়বে কোন এক পত্রিকার পাতার ভাজে
কিংবা কখনো সময় পেলে নেট এ ঢুকে পড়বে কোন এক ব্লগে।

- হয়তো কোন এক “ভরাট কন্ঠের আবৃতিকার”
গমগমে কন্ঠে আবৃতি করে যাবে আনজান কোন পাগল কবির
বিশেষ কোন দিনে প্রেমিকাকে লেখা
ভালোবাসার উপহারের কবিতাখানি –

“জন্মদিনের উপহার – তোর যৌবনের রূপ”

***************************************
“বয়স তোর কত হল আজ ?
ছত্রিশ বা সাঁইত্রিশ কিংবা ছেচল্লিশ বা সাতচল্লিশ
সাল মাস এখন আর তেমন করে মনে থাকে না
বুড়ো হয়ে গিয়েছি আমি
স্মৃতিশক্তি পেয়েছে লোপ
তবু আজকের দিনটির কথা মনে আছে আমার
কিভাবে যেন!
“হয়তো জন্মদিন বলে তোর”।

অথচ সামনে থেকে দেখলে, কে বলবে তোর বয়স হয়েছে?
তোকে দেখায় এখনো তেইশ কিংবা চব্বিশ
কোন প্রকার মেকআপ ছাড়াই।
তা আমার থেকে ভালো কে জানে?
মেয়েরা তোকে দেখলে এখনো ঈর্ষে করে
কিভাবে ধরে রেখেছিস বয়সটারে
যৌবনের বেড়াজালে আটকে দিয়ে?
মনে তাদের অনেক প্রশ্ন জেগে ওঠে
নানা কথার ছলনায় জানতে চেষ্টা করে।

খবরদার কোন মেয়ে যেন তোকে কখনো
খোলা শরীরের দেখে না ফেলে;
তাহলে হিংসেয় তাঁরা জ্বলে পুড়ে মরবে
তোর শরীরের গাঁথুনি দেখে;
কে না বলবে শরীরের বাঁধুনিতে
তোর বয়স এখনো
আঠারো কিংবা উনিশ?”

***********************************


- প্রিয়ার কানে হয়তো এই কবিতার কিছু শব্দমালা ঢুকবে
একটু হয়তো চমকে ভাববে, থমকে তাকাবে
ভরাট কন্ঠের কবিতা আবৃতি শুনে।

- মনে মনে হয়তো বলবে - “কি অসভ্য লেখকরে বাবা”
প্রিয়ার যত গোপন কথা কবিতার ভাষায় দিয়েছে বলে
– ছিঃ, বেটা “মানব না দানব” বলে মুখ ফেরাবে।

- একবারের তরেও ভাববে না
“কবিতাটি লেখা হয়েছিল শুধুমাত্র তাকেই ঘিরে
কবি বাতাসে উড়িয়ে দিয়েছিল তার জন্মদিনের উপহার স্বরূপ
কবিতার কথার ছলে”।

সমগ্র পৃথিবী জুড়ে লাখো প্রেমের কবিতারা বাতাসে উড়ে চলে
প্রেমিকাকে মনে করে;
তাতে কি এসে যায় প্রেমিকাদের?
আজকের কঠিন বাস্তবতার বাহুডোরে বাঁধা পড়া দিনগুলোতে
পাগল সে সব আনজান প্রেমিকের কথা কে মনে করে?

সে আজ বড্ড ব্যস্ত তার বিশাল বড়লোক স্বামীর আমন্ত্রণে
আগত অতিথিদের আপ্যায়নে;
কোন এক ফাইভ স্টার হোটেলের পার্টিতে
নাচে গানে বিভোর হয়ে।
স্মরণ কালের শ্রেষ্ঠ পার্টি শেষ হয় রাত অনেক গভীর হলে
শরাবের নেশায় বুঁদ হয়ে স্বামী-স্ত্রী ঘরে ফেরে
বিছানায় এলিয়ে পড়ে স্বামীর বাহুডোরে সোহাগে আদরে
আনজান এক প্রেমিকের কথাগুলো
কখনো তার কানে আসে না ভেসে
হাওয়ায় ভেসে বেড়ায় কথামালাগুলো
লাখো প্রেমিকের হাহাকার হয়ে।

সব জেনেশুনেও প্রেমিক সকল
বাতাসেই উড়িয়ে দেয় এলোমেলো কিছু কথা
তার প্রিয়ার কথা মনে করে হৃদয়ের কিছু ব্যথা
কবিতার ছলে।

পাগল এক আনজান কবি
বিশেষ কোন দিনের কথা মনে করে
মনে মনে চলে যায় প্রেমিকার ঘরে
হৃদয়ের বাঁধানো খাতাটি কল্পনায় হাতে ধরে
তার প্রেমিকার জন্মদিন উপলক্ষে লেখা
একটি কবিতা উপহার নিয়ে।

প্রেমিকা সারাদিনের পার্টির আনন্দ ধকল শেষে গভীর আনন্দে
পড়ে থাকে তার বড়লোক স্বামীর লোমশ বুকের পরে
শরীরের শরীরে কথা বলে
প্রেমের অভিনয় চলে
(যেমন একদা চলেছিল তার পুরনো প্রেমিকের সাথে)
কিংবা বাসনার তৃপ্তিতে ঢলে পড়ে
নিদের দেশে হারিয়ে যায়, ঘুম নেমে আসে চোখে।

নির্ঘুম চোখে আনজান কবি হৃদয়ে সকল ব্যথা ধরে
প্রহর গোনে রাতের সাথে সাথে
বিশেষ এই আজকের দিনটিকে মনে করে।





বুধবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১২

প্রেমের ভাইরাস

প্রেমের ভাইরাস

প্রেমের ভাইরাস কাটিতেছে হায়
কুড়কুড় করে মনের গোড়ায়
প্রেমিক প্রেমিকা খোঁজে মধু।

কষ্ট বোধের নষ্ট জীবন
নষ্ট প্রেমের আলগা বাঁধন
কষ্ট পাওয়া শুধু।

পষ্ট কথায় নষ্ট প্রেম
মনের মাঝে ঝরে হেম
প্রেমেতে আছে কি যে মধু !!

তবুও ভোমরা সব ফুলো বনে
ঘুরে বেড়ায় আপন মনে
মধুতে আছে কি যাদু !!

গড়ালে বেলা ফুল যে শুকোয়
তবু ভোমরা উড়িতে না পায়
গুনগুনিয়ে খেতে চায় মধু ।

প্রেমেতে মজিলে ভোলা না যায়
উড়ে বেড়ায় সব পিপীলিকায়
প্রেমের ডানায় আগুন লাগায়
ঝাঁকে ঝাঁকে শেষ হয় মরে
তবুও প্রেমের আগুনে ডানা মেলে
প্রেমিক প্রেমিকা সব ঝাঁপিয়ে পোড়ে।

নষ্ট প্রেমের কষ্ট ফুরায়
তবু কোথায় যেন হৃদয় হারায়
প্রেমিক প্রেমিকা ঝাঁকে ঝাঁকে হায়
পোড়ে প্রেম বনে, অজান্তেই নিজ মনে
নষ্ট কষ্টের আগুন জ্বেলে
প্রেমের ভাইরাসের দাবানলে!!!

মঙ্গলবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১২

প্রহসন

প্রহসন

ঘুম যেন হয়ে আছে আজ চোখের দুশমন
টিক টিক করে ঘড়ির কাঁটার শব্দ, করে যায় প্রহসন
আমার নিদ্রার সাথে;
সারারাত চেয়ে থাকি নিদ যেন নেয় ছুটি
চোখ বুজলেই শুধু দেখি, ভালোবাসায় দিয়েছিস খুঁটি
প্রহসনগুলো আমার জীবনের সাথে।

রাতের সাথে সাথে ভাবনারা ধেয়ে চলে, কিছু ঠিক বা বেঠিক
নিদ্রাহীন আমি কাঁটাই রাতের প্রহরগুলো উদ্ভ্রান্ত, হারা হয়ে দিক
নিদের প্রহসন দেখি চোখের ওপর;
নির্ঘুম চোখে স্বপ্ন দেখে দেখে জীবন কাটে, প্রেম যেন কথা কয়
পরা-বাস্তব এক জীবন কাঁটাই, ভালোবাসার নির্মম পরিণয়
ভালোবাসার রূপ দেখি প্রহসনে ভাঙ্গা ঘর।







সোমবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১২

“আলেয়া” আর “সালেহা” - জন্ম-পর্ব

“আলেয়া” আর “সালেহা”

জন্ম-পর্ব

“মা”
মা’ রে...

কি হইছে রে মানিক আমার?

আইচ্ছা মা,
একটা কতা জিগাই তরে?

কি কতা রে সোনা?

বস্তির বেবাকতের বাপ আছে, আমার নাই কেইল্লাইজ্ঞা?
আমার বাপে কই গেছে মা?

কিশোরী মাতা “সালেহা”
কেমন যেন হয়ে চমকে ওঠে এই প্রশ্নতে
হঠাৎ করে জল নেমে আসে চোখে
কিভাবে জবাব দেবে এই প্রশ্নের বুঝতে পারে না
চার বছরের “আলেয়া”র মা “সালেহা”।

বয়সে সে এখন উনিশ বছরের যুবতী
মেয়ে জন্ম দিয়েছিল কিশোরীতে পনর বছর বয়সে
সে শিশু জন্মের কথা মনে হলে চোখে জল আসে,
সে তো মা হতে চায় নি.........
মা কিভাবে হয় তার তো জানা ছিল না চৌদ্দ বছর বয়সে
গাঁয়ের অভাব সইতে না পেরে চলে এসেছিল শহরের আশে
একটু শহুরে জীবনের কল্পনার ডাকে
নতুন স্বপ্ন দেখার আশায়, হঠাৎ করেই যেন খেয়ালের বসে
ট্রেনে চেপে বসেছিল ছোট্ট মেয়ে সালেহা কোন এক সকালের ট্রেনে
সেও কত দিন হয়ে গেছে
তবু আজো চোখে ভাসে।

হঠাৎ করেই খেয়ালের বসে চড়ে বসেছিল
কু ঝিক ঝিক ট্রেনের ইঞ্জিনে উঠে
একা সেই গ্রামের ছোট্ট ইস্টিশন থেকে
নাহ আসলে একা না, আরো অনেক মানুষ উঠে বসেছিল তাতে
ট্রেনের ইঞ্জিন বোঝাই ছিল সেদিন মানুষের ঢলে;
এ গাঁ ও গাঁ, এ শহর ও শহর ঘুরে চলে এসেছিল
আলো ঝলমল রাজধানীর বুকে
মনেতে অনেক স্বপ্ন নিয়ে, কল্পনার জগতে ভেসে,
রাজধানী শহর, কি না জানি সব কিছু আছে সেখানে
বাবার মুখে শোনা, মায়ের ঘুমপাড়ানী গানের শহর
আর তার স্বপ্নের শহর, রাজধানী ঢাকা শহর।

সারা দিন ট্রেন চেপে সন্ধ্যায় ঢাকা শহরে এসে নেমেছিল
ছোট্ট চৌদ্দ বছরের মেয়ে সালেহা, যেন অনেকটা খেলার ছলে
কিছু না বুঝেই
সন্ধ্যার আলো ঝলমলে ঢাকা শহর দেখে মুগ্ধ চেয়ে ছিল সেদিন
স্বপ্ন টুটেছিল দুদিন প্রায় অনাহারে থেকে
কে কাকে ভাত দেয় আজকের পৃথিবীতে?
অবুঝ শিশুটি ঢাকার অলিতে গলিতে ছোটে
খাবারের সন্ধানে
গাঁয়ের মেয়ে ভিক্ষে করতে জানত না সেদিন
তাই ভুখোপেটা হয়ে পড়েছিল দুদিন
ক্ষিদের জ্বালা সইতে না পেরে
খাবার কুড়িয়েছিল ডাস্টবিনের ময়লার পরে
রাস্তার কিছু কুকুর আর বেড়ালের সাথে মিলে
হায় ক্ষিদে, মানুষকে কোথায় নিয়ে যায়?
গ্রামে বড় হওয়া ছোট্ট শিশুটি সেদিন বুঝতেও পারে নি
প্রকৃতির নির্মম খেলা,
তার জানা ছিল না অন্নের অন্বেষণ বলে কারে
কিংবা ক্ষুধার জ্বালা কেন এত জঠরে?

ঘুরে বেরিয়েছিল পুরো দুইদিন ঢাকা শহরের কোণে কোণে
রাতে শুয়ে থাকত সে রেলস্টেশনের এক কোণে
ক্ষুদা পেটে নিয়ে
একদা হঠাৎ জীবনটা যেন গেল ওলোট-পালট হয়ে
রেলস্টেশনের এক বুড়ো ভাম তাকে লক্ষ্য করছিল যেন দুদিন ধরে
তৃতীয় রাত্রিতে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল দুমুঠো ভাতের আশা দিয়ে
খাইয়েছিল তাকে সে রাতে পেট ভরে
তারপর কথার ছলনায় তাকে নিয়ে গিয়েছিল বস্তির এক ঘরে
তার সাথে থাকার কথা বলে;
ছোট্ট মেয়ে বুঝতে পারে নি সেদিন পড়েছে সে কোন হায়েনার মুখে
হঠাৎ মমতা পেয়ে যেন তার বাবার কথা মনে আসে
অসীম ভরসায় গিয়েছিল সেদিন বুড়ো ভামের সাথে
দেখেছিল বুড়ো ভামটাকে বাবার ছদ্মবেশে;
হায় কপাল, রাতে ঘুমের ঘোরে জেগে ওঠে দেখে
বুড়ো ভামটা চড়ে বসেছে তার গায়ের ওপর উঠে
ছোট্ট মেয়ে সালেহা বুঝে নি প্রথমে
কি করেন চাচা বলে উঠে বসে
চাচা তোর মায়ের, আমি তোর ভাতার
বলে বুড়ো গালি দিয়ে ওঠে
তারপর চলে সারারাত ধরে পৈশাচিক বাসনা
বুড়ো ভামের রাতে জেগে উঠেছিল কামনা
মুখে কাপড় গুঁজে চলেছিল রাতভর ধর্ষণ
প্রথমে গোঙ্গানীর মত কিছু শব্দ বেড়িয়েছিল তার মুখ থেকে
তারপর আর কিছু মনে ছিল না ছোট্ট মেয়ে সালেহার;
বুড়ো ভাম দিয়ে গিয়েছিল সারারাত ভরে কামনার নির্যাতন
করেছিল নোংরা শিশ্নের বীর্য বপন
সে রাতে
সারারাত ধরে, সালেহার শরীরের গভীরে।

সকাল বেলা নিজেকে আবিস্কার করে সালেহা
রেললাইনের বস্তির এক কোণে
সারা গায়ে ব্যাথা, নড়তে চড়তে পারে না
শুধু গোঙ্গানী এসেছিল তার মুখে
বস্তির এক খালা মতন মানুষ দেখেছিল তাকে
ভেবেছিল ট্রেনে কাঁটা পড়া কোন লাশ পড়ে আছে
কাছে এসে দেখে তখনো শ্বাস বইছে
বুকে করে নিয়ে এসেছিল তার ঘরে
তারও যে একটি মেয়ে ছিল ছোট্ট এ মেয়েটির মতন
কাঁটা পড়েছিল ট্রেনের নীচে খেলতে গিয়ে,
হয়তো তারই কথা ভেবে, কিংবা অন্যকিছু
জানা হয়নি সালেহার;
গরীবের ছেলে মেয়েরা আবার মানুষ নাকি?
এরা জন্মায় বিষে, আর মরে যে কিসে
তাতে কার কি যায় আসে
আজকের পৃথিবীতে?

ধীরে ধীরে “সালেহা” ভালো হয়ে ওঠে
মা রূপ অচেনা খালার যত্ন পেয়ে
তার জীবনের কথা শোনা হয় খালার
আর মরণের কথা সে রাতের লজ্জার
সময় কেটে যাচ্ছিল খালার বস্তিতে এসে
টুকটাক কাজ করে যাচ্ছিল খালার সাথে মিশে
কিছুদিন পরেই শরীর যেন কেমন কেমন
প্রবল বমি ভাব আর অচেনা এক অনুভব
বোঝেনি সেদিন “সালেহা” কি পাপ দেহে দিয়েছিল একরাতের দানব!!

তবু কাজ থেমে থাকে নি এর ওর বাসার
খালার সাথে সাথে পেট চলছিল কোনমতে তার
একদিন খালার চোখে আবিষ্কৃত নতুন সালেহা
মা হতে চলেছে যে কপাল পোড়া অভাগী
পেটে নিয়ে একরাতের ধর্ষণের নোংরা বীর্যের বীজ
খালা করে যান, তার সাধ্যমত ফকীরি তাবিজ;
লাভ হয়নি কোনো সেদিন
তারই ফলস্রুতি আজ এই আজকের অভাগীর বেটি “আলেয়া”
কিভাবে এ শিশুটিকে বাবার পরিচয় দেবে
বুঝতে পারে না “সালেহা”।

অনেক্ষণ চুপ করে থাকে
ভাবের ঘোরে যেন স্মৃতিগুলো ভেসে ওঠে
কথা বের হয় না মুখ দিয়ে –

ও মা
মা’রে
কইলি না মা?
আমার বাবা কই?
বেবাকতের বাবা আছে আমার বাবা কই গেছে?

এ কথার কোন জবাব নেই সালেহার মুখে
এ লজ্জার কথা মুখ ফুটে বলার সাহস আছে কার বুকে?

“সালেহা” অনেক্ষণ চুপ থেকে বলে

মা’ রে!!
তোর বাবা মইরা গেছে অনেক দিন আগে।
আমিই তোর বাবা আমিই তোর “মা”
আর কখনো বাবার কথা আমারে জিগাইস না।

রবিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১২

তুই আর যন্ত্রণার দিন-রাত্রির পর্ব গুলো - সন্ধ্যা আর রাতের পর্ব

তুই আর যন্ত্রণার দিন-রাত্রির পর্ব গুলো

সন্ধ্যা আর রাতের পর্ব –


সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে
ধরাচর জুড়ে
সূর্য যায় হেলে
পশ্চিম আকাশের কোলে
আকাশে রক্তিম লালিমা ছড়িয়ে
পাখ-পাখালির দল সব ফিরছে নীরে
ডানা মেলে উড়ে উড়ে
বিষণ্ণ বিকেলের সমাপ্তি নেমে আসে
ধুসর কুয়াশায় ভর করে
প্রকৃতির মাঝে
দুরের ওই মেঠোপথ মিলিয়ে যায়
আধো অন্ধকারের ছেয়ে গিয়ে
দিনের চক্র সাঙ্গ হয়
সৌরজগতের নিয়মের মাঝে
তোরে মনে পড়ে সন্ধ্যার আকাশে
তোরে আসলে তখন বড্ড বেশি মনে পড়ে।

সন্ধ্যে নামার সাথে সাথে কি যেন এক
অপার্থিব ভীতি নেমে আসে সারা মন জুড়ে
যেন অশুভ কোন কিছুতে ধাক্কার মত বাজে
তোরে ছাড়া মন পুড়ে আর মন পুড়ে;
সুদীর্ঘ অপেক্ষার রাত কাটানোর চিন্তা
কেমন যেন অবসন্ন হয়ে আসে মনটা;
একা একা রাত কাটানোর তোরে ছাড়া
একা একা অন্ধকারে তারা গোনা তোরে ছাড়া
একা একা ভাবনার সাগরে হারিয়ে স্বপ্নে তোরে পাওয়া
একা একা কল্পনার সব রাক্ষসপুরীতে মন হারিয়ে যাওয়া
একা একা তোর জন্য প্রতীক্ষার প্রহর গোনা
একা একা রাতের প্রহরগুলির ঢং ঢং ঘণ্টা ধ্বনি শোনা
একা একা কেমন জানি, বড্ড অস্থির একা একা
তোরে ছাড়া তোরে ছাড়া
রাতগুলো এত দীর্ঘ হয় কেন বলতে পারিস?

রাতের প্রহর গুলোতে একা একা তোর কথা ভাবি
কোন এক অচিনপুরের তুই যেন এক নৈশ মানবী
চোখে ভেসে ওঠে সেইসব দিনগুলোর ভালোবাসা ছবি
ভালোবাসায় কোথায় কমতি ছিল? যে তুই এভাবে হারাবি।

আজকাল শহুরে জীবনে আর শিয়ালের ডাক শুনি না
প্রহর কোথা দিয়ে আসে যায় তা বুঝি না
আজকাল শহুরে রাতে আর আকাশ খুঁজে পাই না
দৈত্যাকার সব দালান কোঠা বেধেছে আড়াল
আজকাল শহুরে জীবন রাত যেন রঙ্গিন
আজকাল শহুরে জীবন, কে বসে থাকে প্রতীক্ষায় প্রতিদিন?
ভালোবাসার জন্য কিংবা আমার মত করে তোর জন্য।


আজকাল ভালোবাসা নাকি টাকাতে বিকোয়
আজকাল প্রেম এক খেলা ছলনা
আজকাল ভালোবাসায় প্রেম লাগে না
আজকালকার ভালোবাসা টাকা চেনে শুধু
বুঝি না তাতে মানুষ কি পায় এত মধু
প্রেম কি এতটাই ফেলনা
নাকি ভালোবাসা শুধুই দেহ ভিত্তিক এক খেলনা
আমার বোধগম্য হয় না
আজকালকার ভালোবাসা নাকি রাতের ফানুশ
বাসনার সমাপ্তিতে মন থেকে উড়িয়ে দেয় মানুষ;
অথচ আমি শুধু বুঝি মনের ভেতর থেকে
আমার যত ভালোবাসা সব, তোতেই আছে থেমে
স্থির, অবিচল, পাহাড়ের মত নিশ্চল
সমুদ্রের গভীরতা নিয়ে
প্রতিদিন ভালোবেসে যাই তোকে।

আজকালকার রাতের শহরে কত ঘুরে বেড়ায় নিশিকন্যা
কটা টাকার বিনিময়ে ক্ষণিকের জন্য বিলোয় ভালোবাসার বন্যা
সে কি ভালোবাসা নাকি শুধুই ক্ষণিকের কামনা আর বাসনা
তাহলে কি ভালোবাসা এরেই কয়? আসলে আমি কিছুই বুঝি না।

ভালোবাসা বলতে আমি বুঝি তোকে
মনের দুয়ার খুলে ডেকেছিলেম যাকে
ভালোবাসা বলতে আমি বুঝি -
তোর আইলেনার লাগানো বড় বড় চোখ
আর বড় বড় চোখে আমাকে দেখা,
তোর রাগে লাল হওয়া ঘর্মাক্ত নাক
আর আমার বুকে নাক ঘসা,
তোর কানের ঝুমকো জোড়া
আমার হাতের খেলনা,
তোর চিবুকের লাল তিলটা
যেটার স্পর্শে কেমন এক শিহরণে ভরা আমার প্রাণটা
তোর অভিমানে বেঁকে থাকা ঠোঁট জোড়া
যেখানে চুমু না খেলে কাটত না আমার দিনটা
তোর গলা বেয়ে উঠে আসা উমম শব্দটা
কেমন যেন আবেশে ভরিয়ে দিত আমার মনটা।
তোর চুল, নখ আর মুখ
তোর হাসি, কান্না আর সুখ
আসলে আমার ভালোবাসা বলতে পুরোটাই তুই
শুধুই তুই, তুই আর তুই।

তবে কেন আমাকে কাটাতে হয় দীর্ঘ দিবস আর দীর্ঘ রজনী?
প্রতীক্ষার প্রহর গুনে আর অপেক্ষা ভরা মনে
আমি আসলে হয়তো মানুষ নই অন্য কিছু
আমি আসলে হয়তো মানুষের ছায়া মাত্র
কোন অপভ্রংশ মানুষ নামক জীবের কিংবা এলিয়েন কোন
কিংবা আমার ক্রোমোজোমে কোথাও কোন গণ্ডগোল আছে
তাই হয়তো তোদের উপেক্ষার পদাঘাতে জর্জরিত প্রতিদিন
কিংবা ভুল করে পৃথিবী নামক গ্রহে চলে আসা কোন প্রাণী
যার বোঝার ক্ষমতা নাই কেন তুই আজ অন্য কারো ঘরণী?

মানুষ আমায় হয়তো পাগল বলে
তাতে আমার কি এসে যায়
এখনো শুধু তোকেই ভালোবেসে যাই
তাতে তোর কি এসে যায়
পাগলের মত ভালোবাসা গ্রহণ করতে হলে
নিজেকেও যে পাগল হতে হয়
তা আমি যেন একটু একটু বুঝতে পারি
তাই তো তোর থেকে দূরে সরে গিয়ে
একা একা তোকে এত ভালবাসতে পারি
প্রতিদান চাই না আমি কিছুই তোর কাছ থেকে
সুখে থাকিস তুই চিরকাল তাতেই আমার হবে।

এভাবেই ভাবনার রাজ্যে হারিয়ে যাই প্রতিদিন
তোরে নিয়ে ভাবনা
তোরে নিয়ে কল্পনা আর স্বপ্নে স্বপ্নে বাস
দিন আর রাতে মেটাই মনের যত যাতনা
কেটে যাচ্ছে তো জীবন, জীবনের মত করে
প্রতিক্ষার প্রহর গুনে তোরে দেখার
অপেক্ষার রাত গুনে তোর ফিরে আসার।





শনিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১২

তুই আর যন্ত্রণার দিন-রাত্রির পর্ব গুলো - মধ্য দুপুর পর্ব

তুই আর যন্ত্রণার দিন-রাত্রির পর্ব গুলো

মধ্য দুপুর পর্ব –

- যাযাবর জীবন


মধ্য দুপুর
ঘেউ ঘেউ তাড়শব্দে ডাকছে কিছু পাগলা কুকুর
হয়তো আমাকেই দেখে
স্বজাতির কেও তাদের উঠোন মারাতে এসেছে ভেবে।

কখনো আমি হেটে চলেছি ঘামে ভেজা সপসপে গায়ে
খাড়া রৌদ্দুরের ঝাঁ ঝাঁ সূর্যালোক বাতির নিচে
কিংবা মাঝে মাঝে কাক ভেজা হয়ে
কোন এক বৃষ্টির দিনে মন খারাপ করা দুপুরে
জীবনের প্রয়োজনে, জীবিকার সন্ধানে
কিংবা কখনো বাদুড় ঝোলা হয়ে বাসের হ্যন্ডেলে
চেপেচুপে স্থান করে নেই কোন মতে ভিড় ঠেলেঠুলে
বাসের ভেতরে জায়গা একটুখানি কোনমতে
শত মানুষের ঘাম আর দূষিত নিঃশ্বাসের মাঝে।

আমার তো আর তোর মতন এসিওয়ালা কালো জীপ নেই
প্রশান্তিতে বসে থাকব তার ভেতর
এখানে ওখানে আসা যাওয়া লাটসাহেবের মত করে
তুই বা তোর বিরাট বড়লোক জামাইয়ের মত করে;

বৃষ্টির দিনে আমি কাকভেজা হেটে চলি
খুব মাঝে মাঝে কালো কোন জীপ এসে
আরো একটু বেশি করে
রাস্তার সব নোংরা পানিগুলো ছিটকে দিয়ে চলে যায়
পেছন না ফিরে
ঠিক তোর মতন করে একই সভ্যতায়
যেভাবে তুই ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলি আমায়;

খুব মাঝে মাঝে রৌদ্দুর ঝাঁ ঝাঁ দুপুরে
যখন আমি বাদুড় ঝোলা বাসের হ্যান্ডেলে
পাশে দিয়ে হুস করে এসিওয়ালা গাড়ি চলে যায়
হয়তো তোরই মত কেও
ঠাণ্ডার প্রশান্তিতে বসে অবহেলায় তাকায়
আমি যেন অনুভব করি
তাদের সেই চাহনির বিষের ছুঁড়ি
যাবার কালে যেভাবে চিড়ে নিতে তাকিয়েছিলি
অবজ্ঞা আর অবহেলায়;

তবু খুব মাঝে মাঝে প্রায়ঃশই মনের ভেতরে
তোর কথা মনে হলে অস্থির লাগে মধ্য দুপুরে
যেন শত না বলা কথাগুলো ধেয়ে মনে আসে
মাথার ভেতরে কোথায় যেন এক কবিতা হয়ে ভাসে;

আমি ইতিউতি খুঁজে বেড়াই কাগজ আর কলম
যদি পরে ভুলে যাই লিখে রাখব এখন
নাহ, কোথাও খুঁজে পাই না কাগজ মানুষের ভীরে
কারো পকেটে নাই কলম, সব ছুটছে এখন যার যার তীরে;
কবিতাগুলো আর লেখা হবে না ভেবে
আমি আউড়ে যাই বিড়বিড় করে
উড়িয়ে দিতে শব্দ কিছু বাতাসের গায়ে
যদি ভেসে ভেসে লাগে তোর গায়ে এসে
হয়তো এসির হিমহিম ঠাণ্ডায় একটু উষ্ণতা খুঁজে পাবি
না হয় একটু শুধু অনুভবে আমার বিষণ্ণতা ছুঁবি;
আশেপাশের লোকজন কেমন কেমন তাকায়
পাগল নাকি অন্যকিছু বুঝতে যেন চায়
সরে যায় একটুখানি দূরে
ঠিক তোরই মতন করে
যেন কামড়ে দেব তাদের শত মানুষের ভীরে
যেমন আঁচরে কামড়ে রক্তাক্ত করেছিলি হৃদয় আমায়
চলে যাওয়ার কালে, রেখে গিয়েছিস জানি কোন ঘোরে
তবু আজো কেন জানি প্রতি মধ্য দুপুরে
তোরে বড্ড মনে পড়ে।




অন্ধকার সময়ে বসবাস

অন্ধকার সময়ে বসবাস

– যাযাবর জীবন

আজকের সময়গুলো একা বয়ে যাচ্ছে
অথচ পেছন ফিরলে দেখি তোকে আর
সামনে সুদীর্ঘ একাকীত্বের পথ
পেছনে ছিলো জ্যোৎস্নার মায়াবী চাঁদ
সামনে ঠায় দাড়িয়ে আছে ঘন কিছু অন্ধকার
পথের দিশা খুঁজে মেলা ভার
সারিবদ্ধ অন্ধকারের অমাবস্যার জঙ্গলে
এখন করি বসবাস।

অথচ পুরো হৃদয় আঙ্গিনা জুড়ে ছিলি
তুই, তুই আর তুই; আলোকিত হয়ে
ছিল হৃদয়ের পূর্ণতা
এখন চাঁদের উপবৃত্ত ঘিরে অমাবস্যা
আর হৃদয়ের কোথায় জানি
এক বিশাল শূন্যতা।




শুক্রবার, ১২ অক্টোবর, ২০১২

তুই আর যন্ত্রণার দিন-রাত্রির পর্ব গুলো - ভোরের পর্ব

তুই আর যন্ত্রণার দিন-রাত্রির পর্ব গুলো

ভোরের পর্ব –

কাক ডাকা কাকাভোরে
তোরে বড্ড মনে পড়ে
চারিদিকে কোথাও কেও নেই
বিজন রাত্রির আঁধার এখনো ছেয়ে আছে চারিধার
শুধু কটি কাক ডাকছে কা কা রবে
সারারাত জেগে আছি তোকে মনে করে
কেন জানি ইদানীং তোকে বড্ড বেশি মনে পড়ে
নিদ্রা দেবী দেয় না ধরা এখন আগের মতন করে
একটু খানি ঝিমানি ধরা ডরমিকামের ঘোরে
ওলোট পালট অনেক হল সারাটি রাত ধরে
আজান শুনে উঠি এবার আড়মোড়ার পরে
পা বাড়াই একপা দুপা মসজিদের তরে
সকাল বোধহয় হয়েই গেল স্বপ্ন গেলে উড়ে
সারাটি রাত পড়ে ছিলাম তোর বুকের পরে
কল্পনারই ঘোরে
অলীক সব ভাবনা গুলো ছিল মাথা ভরে
তোরে বড্ড মনে পড়ে ইদানীং অনেক বেশি করে
নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে
মাথার ভেতর কেমন জানি কিলবিলিয়ে ওঠে
ভাবনাগুলো মনে আসে কবিতারই ছলে
খুঁজে বেড়াই কাগজ কলম কিছু লিখব বলে
ভোরের বেলায় খালি রাস্তায়
কাগজ কলম কে বয়ে যায়
মনের জমা কথাগুলো আকুলবিকুল করে
বিড়বিড়িয়ে কথা বলি নিজের মনের সাথে
পথের সাথে পা মিলিয়ে চলার ফাঁকে ফাঁকে
উড়িয়ে দিতে যন্ত্রণা ওই মনে যত আসে
কাগজ ছাড়া কাব্য লিখি চিড়বিড়িয়ে দাঁতে
বাতাসেতে উড়িয়ে দেই হাওয়ার সাথে সাথে
হঠাৎ দেখা অল্প কিছু নিশি কন্যার সাথে
ফিরছে বাড়ি সারা রাতের নষ্ট কাজের শেষে
বিড়বিড়ানি তারাও শোনে পাগল ভাবে আমায়
ফকির কিংবা পাগল ভেবে অবাক চোখে চায়
আলতো করে পাগল থেকে দূরে সরে যায়
বোঝে না তো বিড়বিড়ানি কিসের যন্ত্রণায়
কি করব বল? তোরে বড্ড মনে পড়ে হায়
কবিতারা মাথা কুটে আমার মাথা খায়।

আপন মনে আউড়ে চলি আছে যা মনের ভেতরে
নিঃসরিত কথামালাগুলো বের কষ্টে, কবিতার আকারে
ভোরের পাখিগুলো কিচিমিচি করে আমার মাথার ওপরে
তারাও আমায় পাগল ভেবে মাথার ওপর দেয় ঠুকরে
ঠিক তোরই মতন করে, যেন খুবলে নেবে উপড়ে
ভাবিসনি যেমন তুইও ঠোকর দেবার কালে
খেলার পুতুল ভেবেছিলি, খেলেছিলি ছলে
একটু ভাবিস মানুষ আমি, আমারও হৃদয় পোড়ে
রক্তাক্ত হৃদয়ে পথ হেটে চলি ভোরের আধো-অন্ধকারে।

হয়নি সাধন লালনেরও সারাটি রাত ভজে
কেমনে হবে তোরই সাধন একটি রাতের খোঁজে?
প্রেমের ভজন কত ভাবে সাইজি গেয়ে যায়
তোর উপেক্ষার কাব্যগাঁথা মনে বিড়বিড়ায়।




কর্পোরেট সভ্যতা ও বিপণন ব্যবস্থা

কর্পোরেট সভ্যতা ও বিপণন ব্যবস্থা




আমাদের মা বোনদের
আজকে আমরা কোথায় দাঁড় করিয়েছি
কর্পোরেট সভ্যতার নামে
বিজ্ঞাপনের ঢং এ?

ঘোমটার আড়াল ছেড়ে আজ বের করে
নিয়ে এসে সাজিয়েছি কাকে?
ভালো করে একবার চেয়ে দেখতো চোখের অন্ধ চশমার ঠুলি খুলে
এ যে তোরই আপন কিংবা রক্তের আত্মীয় কোনো খুব কাছের মানুষ
মুখে রঙ চড়ানোর আগে বোধ হয় ভালো করে দেখিসনি তাকে ।

কর্পোরেট ওয়ার্ল্ড নিজের চাকরি বাঁচাতে হবে
বসের ঠেলা প্রডাকশনে নতুন মুখের সন্ধান চাই
দৌড় দৌড় দৌড় এখানে ওখানে চাকরি বাঁচানোর তরে
এ এজেন্সি সে এজেন্সি ঘুরে নতুন মুখ আর খুঁজে পাওয়া যায় না;
প্রেশার বাড়ে তার, প্রেশার বসের, প্রেশার প্রডাকশন হাউসের -
সময় নেই হাতে
তবু খুঁজে বের করতে হবে একটি আনকোরা নতুন মুখ;
আবার দৌড় দৌড় দৌড়ের খেলা চলে, আঁতিপাঁতি করে
এখানে ওখানে খোঁজা হয়, শেষ পর্যন্ত নতুন একটি মুখের সন্ধান মেলে
টাইম নাই এখন আর, পাঠাও তাকে মেক আপ রুমে
ঘোমটা পড়া মেয়েকে ঘসে মেজে নিয়ে আসো ক্যামেরার সামনে।

লিপস্টিকের টকটকে লাল জুড়ে আছে কালচে ঠোঁটটাকে আড়াল করে
পুরো মেকআপের পড়ত সারা মুখ জুড়ে, শ্যামল বরন মায়াবতীকে
ফুটিয়ে তোলা হয় রাজকন্যার বেশে
মেকআপ ম্যানের হাতের জাদুতে
তীব্র লাইট, ক্যামেরার এঙ্গেল বিভিন্ন কোনা থেকে
ক্লিক ক্লিক ক্লিক ক্লিক ক্লিক
ক্যামেরার শাটারের শব্দের মধুর ক্লিক ধ্বনি বাজে
ছবি উঠতে থাকে একের পর এক
সাথে সাথে কাপড়ের ভাঁজ খোলা হয় কিছু
কোথাও অর্ধেক কোথাও তার চেয়ে আরেকটু বেশি কিছু
ছবি ডেভেলপ করা হয় খুব তাড়াতাড়ি করে
সময় নেই আর হাতে
বিলবোর্ডগুলো পড়ে আছে খালি হয়ে এখানে ওখানে
শহরের সবকটি প্রাইম লোকেশনে
ছবি প্রিন্টে পাঠাও এখন, চেক করার সময় নেই কার
ছবি প্রিন্ট হতে থাকে একটি একটি করে
সাথে সাথে প্রোডাকশন বয়রা ছুটে বিলবোর্ডে সেটে দিতে;
রাতের আঁধারে সারা শহর ভরে যায় নতুন মুখের পোস্টারে
সকালে শহুরে মানুষ দেখে, নতুন এক লাস্যময়ী নতুন মুখ
সেক্সি এক ভঙ্গিতে চেয়ে আছে যেন তাদের দিকে
চোখে মুখে কি এক কামনার দৃষ্টি ছুঁড়ে
আহ , এতদিনে একটা ছবির মত ছবি সেঁটেছে বিলবোর্ডে
লাস্যময়ী আগুনের টুকরো জ্বলে ওঠে সারা শহর জুড়ে
আগুন লাগিয়ে দিতে কামনা লোলুপ সব হায়েনার মনে।

এদিকে কর্পোরেট ম্যানেজারের বের হয় এসি গাড়িতে চড়ে
চারিদিক চোখ বুলোতে বুলোতে, যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে
এ কার ছবিতে ছেয়ে আছে সারটা শহর
বড় বড় সব বিলবোর্ডে!!!!
ভালো করে চেয়ে দেখে এ যে তারই আপন বোন
যাকে মানুষ করেছিল বুকে ধরে
লালন করেছিল হয়তো মেয়ের মতন মনে করে
আজ তারই বেতনভূক্ত কর্মচারীরা তাকে সাজিয়ে তুলে
বিখ্যাত করে ফেলেছে আম-জনতার মাঝে
তারই অজান্তে।
এখন চারিদিক জোড়া তার বোনের নাম ফোটে
অথচ ভেঙ্গে গেছে পরিবারের ভালোবাসার জোড়াটুকু
বোন এখন আকাশে ওড়ে ডানা মেলে
ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড় মডেল নামে।

অথচ রূপ এই খ্যাতি তো চায় নি বাবার মত স্নেহে লালন করা বড় ভাই
চেয়েছিল একটি ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে বোনকে সুখী করে দিতে
হার কপালের কি ফের আজ তার; মডেল বোন তার নয়
আম-জনতার
সে এখন কোন এক অচিন স্বপ্ন-পুরীতে ডানা মেলে ওড়ে
কল্পনার যত আবেগ নিয়ে
আরো বেশি বড় হবে।

আরেকটু কাপড় খুলবে ধীরে ধীরে, পরবর্তী মডেল এর ফটো-শুটিং এ
আস্তে আস্তে একে একে পরনের কাপড়ের সব বিলুপ্তি হবে
নানা পোজে, নানা ঢং এ – শরীর দেখিয়ে যাবে
তবেই না সে সমস্ত সংবাদ পত্রের শিরোনাম হবে
যতসব ছোটলোক মানসিকতা সব ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে
একদিন হয়ে উঠবে দেশের সমস্ত বড় মডেল
কিংবা প্রতিদিন সংবাদপত্রের নতুন শিরোনাম
তবেই তো টাকার ঝনঝনানি কানে মধুর সুর বাজাবে
বাবা, মা, ভাই, বোন, পরিবার কোথায় পড়ে রবে
লজ্জায় মুখ লুকিয়ে
তাতে নব্য মডেলের কি এসে যাবে?

অথচ কে ভেবেছিল বিপণন এর ঝলমলে মেকি আলোর ভুবনে
সে নিজেই আজ হয়ে গেছে পণ্য
শত কোটি মানুষের জন্য।

হায় বিপণন
হায় কর্পোরেট কালচার
ঘোমটা টানা মায়াবতী রমণীকে
আজ টেনে নিয়ে এসে সাজিয়েছে
পণ্যের পসরা রূপে।

ধন্য কর্পোরেট সভ্যতা
ধন্য আজকের বিপণন ব্যবস্থা।






(এ লেখাটি কাওকে ছোট করার উদ্দেশ্যে লেখা নয়, শুধু মাত্র আমারদের সমাজের বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে লেখা, যদি কারো জীবনের ঘটনার সাথে মিলে যায় সেটা একদমই অনিচ্ছাকৃত কো-ইন্সিডেন্স)



রঙ বদলের খেলা

রঙ বদলের খেলা

এখন আমার সময় যেন আর কাটে না
এখন মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি
নির্লিপ্ত চাহনিতে, দিনে কিংবা রাতে
এখন দিনের বেলায় বড্ড বেশি বেদনা চারিধার
এখন রাতের প্রহর বড্ড বেশি অনিদ্রার হাহাকার
রঙ বদলের খেলা দেখি আকাশের
যেভাবে দেখেছিলাম খেলা, তোমার রঙ বদলের।

আকাশ রঙ বদলায় ক্ষণে ক্ষণে তার মত করে
কখনো ধুসর কুয়াশায় ঢাকা ভোরের সকাল হয়ে
কখনো হালকা কিংবা গাঢ় নীলে মাখামাখি মধ্য দুপুরে
কখনো মেঘে ঢাকা চারিধার, সারাদিন মন খারাপের বেলা
কখনো রক্তিম লালিমায়, আমারই রক্তে রাঙা অবুঝ সন্ধ্যাবেলা
কখনো অপার্থিব জ্যোৎস্না
গ্রহণের গ্রাস, যেন অন্য ভুবনের কোন রঙ কোন এক ধুসর কবিতার
আমায় টেনে নিতে চায় অন্যভূবনে একা সয়ে নিতে বেদনা;
কখনো অন্ধকারের কালো
অন্ধত্বের গ্রাস মনের, সব হারিয়ে ঠিক যেন আমারই মত
তুমি হীনা, হারিয়ে পৃথিবীর সব রূপ, রস, আলো।

কিছু করার নেই এখন আর আমার যেন............ !!!!
চেয়ে চেয়ে শুধু আপনমনে দেখা, রঙের বদলে যাওয়ার খেলা
তোমার মনের কিংবা আকাশের, সকাল দুপুর আর সন্ধ্যাবেলা
কিংবা রাতের তাঁরার মেলা আর চাঁদের উঁকিঝুঁকিতে সাদা-কালো মেঘের খেলা
মাঝে মাঝে ঝরে পরে মেঘরাশি কিছু, বৃষ্টি হয়ে করুণা-ধারায়
হয়তো করুণা করে চোখের নোনাজল যত, ধুয়ে দিতে চায়
অথচ তুমি-তো সেটুকু করুণাও দেখাওনি আমায়।

বৃহস্পতিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১২

বীভৎস

বীভৎস

কি বীভৎস সুন্দর তোর মুখচ্ছবিখানি
জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যায় চোখ দুটি
চেয়ে থাকলে তোর পানে
তাই তো তোকে দেখতে চাই না।

কি বীভৎস উদ্ভিন্ন যৌবনা তোর দেহখানি
ধাক্কা লাগে মনের ভালো করে দেখতে গেলে
তোর যৌবন আগুন জ্বালায় চারিদিক পুড়িয়ে দিতে
তাই তো তোকে এখন আর চোখ মেলে দেখি না।

কি বীভৎস অশান্ত তোর মনখানি
পাগলা ঘোড়ার ছুটন্ত খুড়-শব্দ ভেসে আসে
তোর মনের লাগাম টেনে ধরা আমার কম্ম নয়
তাই তো তোর মনকে এখন আর ছুঁই না।

কি বীভৎস শীতল তোর হৃদয়খানি
মাইনাসের দুশ চল্লিশ ডিগ্রীর নিচে
তোর শীতলতায় যেন হিমবাহের ঠাণ্ডা
তাই তো এখন আর তোর হৃদয়ের স্পর্শ পাই না ।

অথচ কি বীভৎস করুণ তোর চাহনিখানি
কান্নার সাগর যেন ভেসে ওঠে ওখানে
তোর চোখে চোখ পড়লে
তাই তো চোখে চোখে কথা কই না।

আসলে সব আমারই দোষ
আমি বীভৎসতা সইতে পারি না।

মঙ্গলবার, ৯ অক্টোবর, ২০১২

সৃষ্টিকর্তা -


সৃষ্টিকর্তা -

উপর ওয়ালা একজন আছেন
আমাদের সৃষ্টিকর্তা;
অনেক যত্নে গড়েছিলেন পৃথিবী
আর তার প্রিয় মানব জাতি
হরেক রকম, হরেক বরণ, হরেক রঙের মানুষ
হরেক ধর্ম, হরেক সময়, হরেক সৃষ্টি তার
বড্ড ভালোবেসে মানব জাতিকে
আর এই পৃথিবীকে
জল, আলো, হাওয়া দিয়ে
গড়েছিলেন মানব জাতি অনেক আনন্দ নিয়ে;
তিনি
কারো কাছে খোদা
কারো বিধাতা
কারো ঈশ্বর
কারো ভগবান
আর কারো কাছে তিনি অস্তিত্বহীন
বিশ্বাস বেশিরভাগ মানুষের একেশ্বর
কেও বা নাস্তিক
তারা ভাবে সৃষ্টির সবই নশ্বর।

অথচ আজ আমরা কি দেখছি
আজ কোনদিকে চলেছে মানব জাতি?

আজ যেন প্রলয়ঙ্করী কেয়ামত নজদিক
যেন ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত ন্যুজ চারিদিক
আজ ক্রোধের খড়গে চারিদিক ধ্বংস লীলা
আজ বোধের জমিতে চাষ হয় ষড়রিপু
প্রতিবাদী স্বত্বা মরে গেছে যেন মানুষের মাঝে
বসবাস চারিদিকে কাপুরুষ আর কিছু ভীতু
এ আজ আমরা বোধের কেমন রূপ আঁকি?
নাস্তিক নই আমি
তবু যেন মাঝে মাঝে চারিদিকে
সৃষ্টির লজ্জায় অবনত এক একেশ্বর এর রূপ দেখি।

আজ চারিদিক জুড়ে ভ্রষ্ট ভালোবাসার নষ্ট যৌবন
পরকীয়া নামক নতুন এক বিষের বপন
পরিবার পরিজন পরস্পর হয়ে ওঠে দুর্জন
আজ চারিদিক জুড়ে প্রতিযোগিতা সম্পর্কের ছেদন
যেন কারো বলার কিছু নেই
যেন কারো করার কিছু নেই
যে যার মত কষ্টেসৃষ্টে টেনে যাচ্ছে জীবন
এ আজ আমরা সম্পর্কের কেমন রূপ আঁকি?
আস্তিক মানুষ আমি
তবু যেন মাঝে মাঝে চারিদিকে
অথর্ব ভাঙ্গাচোরা এক ঈশ্বর এর রূপ দেখি।

আজ দেখি অনাচার অবহেলা চারিদিক জুড়ে
মানুষই, মানুষের মাঝে নিজেদের ঘিরে
চাই ধন দৌলত আর অপার ক্ষমতা
সব দেখে মনে হচ্ছে যেন
চেয়েও দেখেন না তার সৃষ্টিকে বিধাতা
যেন প্রয়োজন ফুরিয়েছে আজ মানব জাতির
বসবাসের অযোগ্য এ পৃথিবীর
এ আজ আমরা পৃথিবীর কেমন রূপ আঁকি?
নাস্তিক নই আমি
তবু যেন মাঝে মাঝে চারিদিকে
তার প্রিয় সৃষ্টি মানুষের কাছে
হেরে যাওয়া এক বিধাতার রূপ দেখি।

ঈশ্বর, আল্লাহ্‌ কিংবা ভগবান
বসে আছেন উপরে সাত আসমান
ওখান থেকে দ্বিধা ভরে
যেন তাকিয়ে আছে পৃথিবীর পানে
করুণার দৃষ্টিতে
অসহায় অবলোকনে;
দেখছে তার হাতে গড়া
শ্রেষ্ঠ মানব সৃষ্টিকে
ভালোবাসায় হৃদয় পূর্ণ করে পাঠিয়েছিল
যাদের এই রূপ, রস, গন্ধমাখা পৃথিবীর মাঝে
আজ যেন তিনি নিজেই করতে পারছেন না ভেদাভেদ
পশু জাতি আর তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি - মানবের মাঝে।


সোমবার, ৮ অক্টোবর, ২০১২

তুই আর বাকি সব মেয়েগুলি



তুই আর বাকি সব মেয়েগুলি


কি আছে তোর ওই দেহে?
আলাদা অন্য কিছু আর দশটা মেয়ে থেকে?
কি আছে তোর ওই মনে?
আলাদা অন্য কিছু আর দশটা মেয়ে থেকে?
কি আছে তোর ওই রূপে?
আলাদা অন্য কিছু আর দশটা মেয়ে থেকে?
নিজেকে ভালো করে দেখ আয়নায়
না না আরশিতে নয়,
মনের আয়নায়
ভালো করে নিজেকে নিজে সুধায় দেখ
তুই আর বাকি দশটা মেয়ের মন
ভেতরে আসলে এক।

সবাই ভালোবাসতে জানে
সবাই কাছে টানতে জানে
যখন প্রয়োজন হয়
সবাই ছলনা জানে তোরই মত
সবাই ছুঁড়ে ফেলতে পারে তোরই মত
যখনি প্রয়োজন শেষ হয়।

তবে তোর আর বাকি দশটা মেয়ের মধ্যে
পার্থক্য কোথায়
ভেতরে কিংবা বাইরে থেকে?
হয়তো তুই দেখতে একটু সাদা
তবু কেন তোর মনে, ভরা এত কাদা?
আমি তোকে ডেকেছিলাম বলে রূপবতী?
তবে জেনে রাখিস
বাকি সবাই কিন্তু আমার কাছে মায়াবতী;
কেও তারা বোন, কেও বন্ধু আর কেও তোরই মত ছলনাময়ী
নানা রঙ এর নানা বর্ণের মানুষ দুনিয়ায়
সবাই ভালো যার যার মতন
তাতে আমার কি এসে যায়?

তবে তোর আর বাকি সবার মধ্যে পার্থক্য কি?
তবু কেন তোরেই এত ভালবেসেছি?


রবিবার, ৭ অক্টোবর, ২০১২

তোরা, তাঁরা আর আমি



তোরা, তাঁরা আর আমি

আমি তোদের মত নই
আমি তাঁদের মত নই
আমি থাকি আমার মতন

আমি তোদের অবহেলা বুঝি
আমি তাঁদের উপহাস বুঝি
আমি চলি আমার মতন

আমি তোদের কথার ঘোরপেঁচ বুঝি না
আমি তাঁদের মতন ঘুরিয়ে কথা কইতে জানি না
আমি কথা বলি সরল সোজা রেললাইনের মতন

আমি তোদের ভালোবাসার নির্মমতা অনুভব করি
আমি তাঁদের ঘৃণাগুলোকে বুকে ধরি
আমি ভালোবেসে চলি আমার মতন

আমি তোদের দায়বদ্ধতা দেখেছি
আমি তাঁদের সীমাবদ্ধতা জেনেছি
আমার অনুভবে মমতা ধরি সবার জন্য আমার মতন

আমি দেখেছি তোরা কিভাবে জীবন কাটাস
আমি দেখেছি তাঁরা এক একজন হতে পারে কতটা খাটাস
আমি আনমনে চেয়ে চেয়ে দেখে যাই আমার মতন

আমি তোদের নিষ্ঠুরতা লেখেছি
আমি তাঁদের কলঙ্ক ছেপেছি
আমি লিখে যাই কবিতার ভাষায় আমার মতন

কে কি মনে করল না করল; তাতে আমার কি এসে যায়?


শনিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১২

অটিস্টিক


অটিস্টিক





মনে মনে হাসি একা একা যখন খুশি তখনই
ভেতরে ভেতরে কাঁদি একা একা প্রায়শই;
কখনো অট্টহাসিতে ভেঙে পড়ি রঙিন দুনিয়া দেখে
মানুষের রঙ তামাশা মানুষের রঙ বদলানো ক্ষণে ক্ষণে
বড্ড মাথার ভেতর কেমন কেমন করে
সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে নিজেকে নিজে
ফেটে পড়ি অট্টহাসিতে মনের অজান্তে;
কখনো কখনো ডুকরে কেঁদে উঠি নিজে নিজে
চারিপাশের মানুষগুলোর নির্মমতা দেখে
বড্ড কষ্ট হয় মাথার ভেতর কিংবা বুকের কোথায় জানি
কেঁদে উঠি আমি নিজের অজান্তে।

কখনো মুগ্ধতা চোখে মুখে চারিপাশ দেখি প্রকৃতি
কখনো নীরবতা ছেয়ে ধরে অন্ধকারের রীতি;
আমি শুধু অপলক চেয়ে থাকি ভাষাহীন চোখে
রূপ রস আর গন্ধমাখা পৃথিবী দেখে
সামলে উঠি কিংবা উঠি না কখনো কখনো নিজে
প্রকৃতির খেলা দেখে যাই প্রাণ ভরে;
মুখ ফুটে বলা হয় না কোন কথা কাওকে
কেমন জানি অবসন্ন ভালোলাগায় ছেয়ে থাকে মন
বয়ে চলে মনের মাঝে কি এক ভাবের নিয়ন্ত্রণ
ভাষা ফুটে ওঠে না মুখে শুধু মন ভরে।

কখনো অন্ধকারে কি এক ভয় জেগে ওঠে মনে মনে
কখনো অশরীরী আত্মারা কথা বলে কানে কানে;
আমি শুধু দেখে যাই অন্ধকারের রূপ
ভাষাহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে
ভয় নামক কোন রিপু আছে মনেতে জাগে না যে
শুধু অন্ধকারের গান শুনি কান পেতে;
মাঝে মাঝে মনে হয় ঝাপ দেই ওই অন্ধকারে
মনের ভেতরের আর বাহিরের একই রূপ
যখনি চোখে ভেসে ওঠে
মরণ আমায় বুকে টেনে নেয় না হাত পেতে।

মাঝে মাঝে চারিদিকের মানুষগুলো কেমন জানি শরীরে আঘাত করে
মাঝে মাঝে খুব কাছের মানুষগুলো হৃদয় চিড়ে হাতে নিয়ে খেলা করে;
বোধশক্তিহীন এক মানুষ আমি পড়ে থাকি নিজেতে নিজে
চারিদিকের নির্দয়তা যেন আমার বুকে বাজে না যে
শারীরিক আঘাত একটুও যেন কোথাও লাগে না যে
শুধু মানুষের নির্লিপ্ত নির্মমতা কষ্ট দেয় মনে;
বোধবুদ্ধি কিছু কাজ করে মনের অনেক গভীরেতে
যখনই হৃদয় নিয়ে মানুষগুলো খেলতে আসে
নির্দয় ওই মানুষ নামক প্রাণীগুলি
কিছু বলতে পারি না কাওকে, শুধু ব্যথা লাগে প্রাণে।

কিছু কিছু অনুভূতি জাগে মনে যেন কেও জড়িয়ে ধরতে চায় ভালোবেসে
কিছু কিছু অনুভূতিতে বুঝি যেন বাকি সবাই ঘৃণার চোখে দেখে;
শারীরিক অনুভূতিহীন মানুষ আমি পড়ে থাকি এক কোণে
কখনো খেলা করে যাই একা একা মনে মনে
সাড়া দিতে পারি না কারো ভালোবাসায় নিজেকে
কেমন এক শুন্যবোধ অনুভূতি বয়ে চলে মনের ভেতর;
ঘৃণায় কুঁচকে যাওয়া চোখগুলোর দিকে তাকাতে পারি না
আয়নায় নিজেকে দেখে, বীভৎস এক চেহারা ফুটে ওঠে তাতে
চমকে উঠি নিজে নিজে, ভয়ঙ্কর এক চেহারা দেখে
যেন কেমন এক অশুচি অনুভূতি ছেয়ে থাকে মনের ভেতর।

কখনো কখনো কিছু বলতে চাই কাওকে, জিহ্বায় জড়তা এসে বসে
কথা বলতে চাই মানুষের সাথে, মুখে শব্দ বের হয় না অবশেষে;
কিছু কিছু কথা মনের মাঝে উঁকিঝুঁকি, কি এক যন্ত্রণা প্রতিক্ষণ
ভাষায় প্রকাশ করতে না পারার কিংবা জিহ্বার জড়তার
ক্লান্ত হয়ে পড়ি তখনি যখন বের হয় না মুখে কথা
বড্ড কষ্ট হয় মনের ভেতর কোথায় জানি আমার;
কিছু কিছু শুনতে না চাওয়া শব্দ কানে এসে ঢোকে প্রায়শই
কিছু মানুষের কথার আর কিছু চারিদিকের অবোধ্য শব্দমালার
ওগুলো সইতে পারি না যেন কিছুতেই, অবোধ্য যন্ত্রণায় ছটফট করি
অশুভ ঘণ্টা ধ্বনি বাজতে থাকে বুকের ভেতর কোথায় জানি আমার।

নিজেকে কেন জানি মেলে ধরতে পারি না অন্যের কাছে
মনের মাঝে কি যেন এক অনুভূতি বাঁধা হয়ে আসে;
কথার জড়তা, মনের জড়তা, ভাবনার জড়তাগুলো
সব যেন একসাথে কেমন এলোমেলো করে দেয় আমাকে
শব্দজট পাকিয়ে থাকে মনের মাঝে কথার ফাঁকে
ভাবনার জটগুলো সব ওলটপালট মনের কোণে – দিকশুন্য চারিদিক;
মাঝে মাঝে চারিদিকের মানুষগুলো ঘৃণা মাখা করুণা দৃষ্টি
যেন আমি মানুষ নই অন্যকোন গ্রহ থেকে আসা কোনো প্রাণী
মানসিক ভারসাম্যহীন বলে লোকে আমায়, কিংবা পাগল
খুব প্রিয়জনেরা কি জানি এক অন্য নামে ডাকে বুঝি না আমি - অটিস্টিক।





শুক্রবার, ৫ অক্টোবর, ২০১২

নীল চিঠি -


নীল চিঠি -


নীল চিঠি ফিরে ফিরে
আমার ডাইরির ভাঁজে গুটিসুটি শুয়ে থাকে
দেয়া হয় না তোকে, নীল রঙ এর খামে করে।

মরা প্রেমগুলো ডানা মেলে উড়ে যাক এবার আকাশপানে
মাতলা নদী হোক আরো মাতাল, মাতাল এক সমীরণে
ফিরে যাক যেখান থেকে উৎপত্তি তার
সেই সুদূর ঝর্নার দেশে।

দিনের বেলা শব্দজট, জ্যাম আর গ্যাঞ্জাম
রাতের বেলায় শুনি দূর দূর দিয়ে গাড়ি যাওয়ার শব্দ,
আমি চোখ বুজি, কান বুজি, নাক বুজে থাকি
শুনতে চাইনা অন্য কোন শব্দমালা কানের ভেতরে
দেখতে চাইনা অন্যকিছু তোরে ছাড়া
শুকতে চাই না তোর বুকের ঘ্রাণ ছাড়া
অন্য কিছু।

কাঁচপোকা হাঁটছে যেন আমার মেমব্রেন সেলের ভেতর দিয়ে
তোর বিহনে বরাবর নিষাদ জমে রয় তবু দ্বিধা নেই বলতে
তোরে ভালোবাসি।

নিঃসঙ্গতা থেকে নদী, জল আর সমুদ্র বেছে নিয়েছি
যাযাবর জীবনে তুলে নিয়েছি হাতে মাছের আঁশটে গন্ধ-ওয়ালা জাল,
স্মৃতির ছোঁয়া ধুয়ে নিতে নদীজলে করেছি স্নান
কিংবা বক্ষ ভরা বেদনায় অশ্রু নীরে।

ধরায় যেদিন এসেছিলেম সেদিন থেকেই অপয়া খ্যাতিটি জুটেছিল ভাগ্যে,
এ জন্ম বড়ই কষ্ট দিয়েছে দহনের জ্বালায় বারংবারে
এর ওর কাছ থেকে,
তাই তো হয়েছি বিদগ্ধ আর বিমুখ জীবন থেকে।

আজ আমার দীর্ঘশ্বাস বড্ড দীর্ঘ হয়ে পড়ে
যেন রেললাইনের শেষ সীমানা ছাড়িয়ে যায়
যেথা চোখ যায় না সেই অবধি
তুই যে পথেই যাবি
যেখানেই তোর পা ফেলবি
সেখানেই ছড়িয়ে রেখেছি আমার দীর্ঘশ্বাস
তবু এ বুকে একবার পা মাড়িয়ে আমায় চলে যাস।

আজ আমার ছায়া পড়ে না কোথাও
যেন অশরীরী আত্মা এক দাঁড়িয়ে আছে
ছায়াহীন মানুষ এর অবয়ব নিয়ে
কোন এক দিন ভুল করে ঢুকে পড়েছিলেম
তোর আলো ঝলমলে মনের ঘরে
কিছু না ভেবে চিন্তে, অর্বাচীনের মতো
তাই হয়তোবা ক্ষণিকের অন্ধকার
ঠাই নিয়েছিল তোর মনের ঘরে
অপয়া অশরীরী ছায়ার ছোঁয়া পেয়ে
আজ আমার ফেরারি স্বপ্নের ডানা ভেঙ্গে গেছে
এখন প্রলয়ের ধুসর রং ভাসে চোখের কোণে
খোলা দুটি চোখ মেলে অহল্যা প্রহর গুনি মনে মনে
অশরীরী ছায়া হয়ে। .

জন্মান্তর বলে যদি কিছু থেকে থাকে
তবে সেদিন আবার ফিরে আসব
হয়তো মানুষ নয় তবু অন্য কোন প্রাণীর রূপ ধরে
কুকুরের সাথে এখন পার্থক্য করতে পারি না নিজেরে
তাই অন্য কোন প্রাণীতে আমার কি যায় আসে?
পরের জন্মে অপেক্ষার প্রহর গুনব না কারো জন্য
একা হেঁটে যাব কোন এক নির্জন বালুকাবেলায়
যেথা ভালোবাসার নষ্ট কষ্টগুলো পীড়া দেবে না আমায়।

যদি আরেকটি জন্ম না পাই তবে না হয়
সন্ধ্যা তারা হয়ে আমি ফিরে আসব তোর কাছে
মনে কোন আশা না রেখে শুধু দেখে যাব তোকে
আর ফিরে যাব শূন্য হাতে
ভোরের আলোর সাথে সাথে লুকিয়ে যাব সূর্যের ওপারের দেশে
সন্ধ্যে বেলায় আবার দেখা হবে ভেবে।

এখন আমার মন আটকে থাকে
শূন্য চোখ বেড়ায় এদিক ওদিক তোকে খুঁজে খুঁজে
নীরবতাকে বড্ড আপন লাগে ভেবে
তারপর মাতাল চোখের চাহনিতে কি এক ঘোরে চেয়ে থাকি
মনের গভীর হতে কান্নার মতো কি যেন হারিয়েছি
অথচ দিকভ্রান্ত মানুষ ছিলাম না আমি।



বৃহস্পতিবার, ৪ অক্টোবর, ২০১২

মৌমাছি জীবন


মৌমাছি জীবন বড্ড যন্ত্রণা দিয়েছে আমারে
সূর্যমুখির ফুলো বনে
থিতু হয়ে বসতে ইচ্ছে করে বড্ড এখন
যাযাবর জীবন অনেক কেটেছে
ভ্রমর হয়ে অনেক উড়েছি
এখানে ওখানে মধু আহরণে
হরিণ হয়ে দৌড়েছি
বনে বনে
মায়া হরিণীর সন্ধানে
এখন আমার বড্ড থিতু হয়ে বসতে ইচ্ছে করে
তোকে বড্ড পেতে ইচ্ছে করে।

লাল কাঠপিঁপড়ের বিষ ঢেলে দিয়েছিস
যতটুকু ছিল তোর দাঁতে
আমায় বিষিয়ে দিতে কামড়ে দিয়েছিলি
মনে
মধুমক্ষির বিষে হুল ফুটিয়ে যন্ত্রণা দিয়েছিলি অনেক বেশি
প্রাণে ।

সাপের ছোবল তাও যেন সয়
তোর কথার বিষ মনে জেগে রয়
তোর বিষে নীল হয়েছি অনেক আগেই
ভালোবাসার বিষ ঝড়াতে পারিস নি আমার মন থেকে।

অনেক তো পার হল দিন
অনেক গুলো রাত একাকী দুজনে
এবার না হয় আপন করে নে আমারে
সব ভুলে গিয়ে একেবারে মনেপ্রানে
নতুন করে না হয় শুরু করলাম আবার আমরা
আগের মতন করে
বড্ড ক্লান্ত আমি এখানে ওখানে খুঁজে খুঁজে ফিরে
তোর সন্ধানে।




বুধবার, ৩ অক্টোবর, ২০১২

গায়ের গন্ধে মৃত্যুর ঘ্রাণ


গায়ের গন্ধে মৃত্যুর ঘ্রাণ

আমায় দেখো না তুমি আমার আত্মাকে দেখ
মৃতপ্রায়, মড়া শেকড়ের মত শুকিয়ে রয়েছে
স্মৃতির খাতাটাকে উল্টেপাল্টে দেখো ভালো করে
কোন এক পাতায় এখনো আমার নাম লেখা আছে
ভালো করে ঘসা কাঁচের আয়নায় মুখ চেয়ে দেখ
সেখানে আজো আমার প্রতিচ্ছবি কোথায় যেন ভাসে
এখনো সময় আছে কিছু, আছে অবকাশ চিন্তার
হয়তো আবার নতুন করে দুজনার কিছু ভাবনার
স্বপ্নগুলো দেখেছিলেম আমরা দুজনে মিলে
একটি টোকায় ঝরিয়ে দিলে ঝুরঝুর করে
বড় ভঙ্গুর ওই কাঁচের দেয়াল কিংবা স্বপ্নগুলো
টোকাতেই ভেঙ্গে খানখান হয়ে যায় মরে।

এখনো দূর থেকে তোমার ডাক শুনি
তাইতো এখনো প্রতীক্ষার প্রহর গুনি
দুঃখের আকাশে কেন যে এসে আজো জ্যোৎস্না জ্বালো
মনের গভীরে অথৈ অন্ধকার এখানে নেই কোন আলো
আমার গায়ের গন্ধ শুকে তুমি কি মৃত্যুর ঘ্রাণ পাও
ভালো করে আমায় দেখ আজ , মৃত্যুকে চিনে নাও।




ভালো মাইনসের পোলা আর লেদাইন্যা কবিগুলা


ভালো মাইনসের পোলা আর লেদাইন্যা কবিগুলা

কবি নামে কিছু আউলা মানুষ আছে
হাবিজাবি কথা লেহে
মনে যা আহে
কাগজে লেদায় কলম দিয়া।

ভালা মাইনসের পোলাগুলা কয় পাগল
আজাইরা থাকে
কাম নাই কোন
খেদাইয়া বেড়াইতে চায় লাঠি নিয়া।

ভালো মাইনসের পুতেরা সব
দুনিয়ার কাম করে
সারাদিন ধইরা এর পিছে হেয়
আঙ্গুল দিয়া চলে;
ধেৎ শালা তোরা ভালো মাইনসের পোলা
আঙ্গুল পইচ্চা মর
আজাইরা কবিগুলা কিছু লেখলেই তগো কতা
কয় শালারে ধর;
সবগুলা কবি পাগল যদিও হয়
মনে যা ভাবে লেখেও এক
হিপোক্রেটগুলার মনেতে কালা
মুখে কয় সাদা দুনিয়া দেখ।

কালা আয়না লাগায় গাড়ির কাঁচে
ভিতরে দুনিয়ার আকাম করে
আজাইরা কবিরা হেই কতা লেকলে
দৌড়ায় আইয়া ধইরা মারে
ভালা মাইনসের পোলাগুলাইন
নিশ্চিন্তে কইরা চলে
দুনিয়ার যত টেন্ডারবাজী, চান্দা আর ঠেকবাজী
মাইয়া মানু দেখলেই শালাগো চোখ ঠাডায়
জিহ্বা দিয়া লোল পড়ে
যেন কত দিন এর অভুক্ত কুত্তা এক একটা;
ইস্কুল কলেজের ছোড ছোড মাইয়াগুলাইন
ডরে ডরে কেলাস করে
এই জানোয়ারগো ডরে
কত গুলাইন ভালা মাইনসের পোলা আছে -
পড়া লেহা নাই, কাম কাইজ নাই
ঘুইড়া বেড়ায় আর লাফাঙ্গা গিরি করে
মাইয়া মানু সামনে পাইলে শিষ মারে
বান্দরের লাহান মুহে ভেংচি কাডে
কতগুলি খবিশ আছে কুত্তার লাহান
জিহ্বা বাইর কইরাই রাহে
যদি খালি কোন ইসকুল এর মাইয়া
সামনে আহে
কুত্তার লাহান ফাল পাড়ে
খবিশের লাহান কুৎসিত অঙ্গ ভঙ্গি করে
এগুলি বলে ভালা মাইনসের পোলা!!!!
হায় দুনিয়া কই যাই আমরা পলাইয়া?

এইতানের কারো কাছে ধরা খাইবার ভয় নাই মনে
দুইন্নাডা যেন হেগো লাইগাই বানাইছে ভগবানে
দুই চাইরটা মানু আছে কিছু কইবার চায় হেগো
হায় তবু সামনে ডরে ডরে কিছুই কইবার পারে নাগো
ভালা মাইনসের পোলাগো পকেট থাকে ফুলা
বাপের অসৎ টেকার বান্ডিল দিয়া
কিংবা পিস্তল একখান গুজা থাকে কোমড়ে
কোন শালার পুত কিছু কইব হেগোরে?

যদিও বা দুই চাইর বার ধরা খায়
ভালা পাবলিকগুলার হাতে
কিংবা পুলিশের হাতে,
তয় তো হইছেই কাম!!!!
দুনিয়াডা উল্ডাইয়া দিবার চায়
কি কান্ডডাইনা ঘটায় ওরে বাপরে!!
পকেটেতো মুবাইল আছে একখানা
বাপ আছে তার ভালা মানুষ বড় কারবাড়ি
ডর কি তার করতে বাড়াবাড়ি?
কোনহানে ধরা খাইলে
একখান ফোন হেগো বাপরে
বাপে হইল গিয়া দেশের বড় ব্যপারি
একটা ফোনের কারিশমা দেহায়
পুলিশ গুলাইন থাহে দৌড়ের উপরে।

হায় কপাল আমাগো
হেরা হইল গিয়া ভালা মাইনসের পোলা
আর পাগল আছি আমরা কতগুলা
হেগো লইয়া উল্ডা পাল্ডা কতা লেহি
কাগজের মইধ্যে যাই কলম দিয়ে লেদাইয়া
বড় অশান্তিতে এই পাগলগুলাইন থাহে
কাগজে লেদাইতে গিয়া
যদি দুই চাইরখান লেহা কেও লেহে
উস্টা মারবার আহে পিছন দিয়া
হেরা কাইড়া লইবার চায়
আমাগো লেহার স্বাধীনতা,
করবার চায় দেশ ছাড়া
যদি খালি আমাগো কলমে লেদায়
হেগো অপকর্মের কিছু কতা
ভালা মাইনসের পোলাগো
বিরুদ্ধে কোনো সইত্য কতা।

তয় জানস কি তরা?
অহনো মরি নাই রে শালারা
যতই দেহাস ডর লেইহা যামু আমরা
তোরা সব ভালামাইনসের পোলা
প্যান্টে হাগস বদনা ছাড়া
লেইক্ষা তগ কতা লেদাইমু কাগজে
দেহি কেমনে করস আমাগো দেশ ছাড়া??