বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৫

বিলীন



বিলীন
- যাযাবর জীবন

তুই আর আমি এক হতেই
ট্রাফিক সিগন্যাল সবুজ
কিংবা আমাদের মন,
বাকি সব মোড়েই লাল
রাস্তার কিংবা মনের
আমার আর তোর।

রেললাইন সমান্তরালই দেখায়
বিচ্ছেদ আর ভালোবাসার,
তুই আর আমি মিলতেই
রেলের পাতে ইঞ্জিন কু ঝিক ঝিক
পথটা আমাদের,
হাতে হাত।

আকাশে মেঘ সাদা কিংবা কালো
ঘর্ষণে বজ্র
ভালোবাসায় না ভিজলে কি আর
আষাঢ় আসে?
অপেক্ষায় প্রকৃতি, বর্ষায় ভিজে যেতে;
তুই আর আমি মিলতেই বৃষ্টি,
পরস্পরে বিলীন।



মনের ঘর



মনের ঘর

- যাযাবর জীবন

দিনমান পাখিই'তো ওড়ে
আমাদেরও না হয় কদিন পাখি জীবন
আপাতত থাকুক না কিছুদিন
ঘরখানা শূন্য পড়ে;
আকাশে সাদা কালো কত মেঘের ভেলা
কদিনের জন্য আমরা না হয় মেঘই হলাম
তারপর'তো সেই আবার হাঁড়িকুঁড়ি ঠোকাঠুকি
জীবন যুদ্ধের সংসার জুড়ে;
মেঘের ডাকে ময়ূর পেখম তুলুক আর নাই তুলুক
আমার পাখি জীবনে মন'তো বসে আছে শুধুই তোতে
সেই ছেলেবেলা থেকে আজ পর্যন্ত
তুইও তো আছিস ঠিক তেমনি, আমায় আগলে ধরে;

মনের ঝড়ে ভালোবাসার ধুলো ওড়ে,
উড়ুক না!
মাখামাখি তো হয়ে আছি দুজন দুজনে,
দুজনার মনের ঘরে।



সোমবার, ২০ জুলাই, ২০১৫

ক্ষরণ



ক্ষরণ
- যাযাবর জীবন

প্রেম গলে গেছে ঘন বৃষ্টিতে
মনে কাঁদার ছোপ
রোদ উঠলেই পুড়িয়ে নেব ভাণ্ড
ভালোবাসার;
হয়তো আবার ভালোবাসা ডুবে যাবে খুব শীগগির
জমাট বাঁধা রক্তে,
ক্ষরণ দিতে জুড়ি নেই তোর
বার বার,
নতুন করে প্রতিবার;
হৃদয় সয়ে গেছে আমার
আমিও সয়ে গেছি তো'তে।



রবিবার, ১৯ জুলাই, ২০১৫

প্রহর



প্রহর
- যাযাবর জীবন

আরেকটি দিন মৃত্যুর দিকে হাঁটি হাঁটি পা পা
খেয়ালে বা বেখেয়ালে,
আরেকটি দিন মৃত্যু আমার দিকে খুব ধীরে পা পা
নিয়তি মুচকি হেসে,
কদম বাড়তেই থাকে একে অপরের দিকে
পরস্পর আপন করে নিতে;

জীবন তো হারিয়ে যাবে আমার কাছ থেকেই
যেদিন ওদের, কদমে কদম মিলে যাবে;
অপেক্ষার প্রহর গোনে, "মাটির ঘর"।


রবিবার, ১২ জুলাই, ২০১৫

আলো আঁধার


আলো আঁধার
- যাযাবর জীবন

শার্শি বেয়ে চুইয়ে নামা অভিমানে বাষ্পীভূত মন-জানালার কাঁচ
জ্যোৎস্না আটকে আছে কালো মেঘের ওপরে,
রাতের কপাট খুলে দিতেই দরজার বাইরে অন্ধকার
তুই মন ফিরিয়েছিস বলে,
রাগের ধোঁয়ায় কান্না নামলেই প্রেমের বন্যায় ভেসে যাবি তুই
সেদিন আমি ধরাছোঁয়ার ওপারে;
দেরি হয়েই যায়
কোথাও না কোথাও
প্রেম গাড়ির চাকা হুইসেলের অপেক্ষায় প্রহর গোনে
অভিমানের কুয়াশা সরে যেতে যেতে থেমে যায় জীবন গাড়ি;

আফসোসের বাস কোথায়?
রাগের অস্থিমজ্জায়,
অন্ধকার কোথায়?
অভিমানে সময় বয়ে যায়;
আলো কোথায়?
ভালোবাসা যেথায়।


প্রতিবিম্ব



প্রতিবিম্ব
- যাযাবর জীবন

আরশিতে দুটি মানুষ
মুখোমুখি
একটি রক্তমাংসে গড়া
অন্যটি প্রতিচ্ছবি;

মানুষ কথা বলে
ছবির মুখ নড়ে
মানুষ কাঁদে
জলের দাগ প্রতিচ্ছবির গালে,
নিজের সাথে মূকাভিনয়
প্রতিফলন প্রতিচ্ছবির গায়
অভিনয় যখন মনের সাথে
কান্না কেন প্রতিচ্ছবির চোখে?

তবুও প্রতিদিন আয়নায় চোখ রাখি প্রতিচ্ছবির চোখে
যদি আলোর প্রতিসরণে ভুল করে তোর চোখ ভেসে ওঠে
ভালোবাসা দেখে নিস কাঁচের প্রতিবিম্বে।




শনিবার, ১১ জুলাই, ২০১৫

দূরত্ব


দূরত্ব
- যাযাবর জীবন


প্রথম দেখাটা,
কেমন যেন;
একটু ভয়
একটু শঙ্কা
লজ্জা ছিল কি? একটু;
কিংবা মন জ্বর,
প্রথমবার চোখে দেখার পর?
দেখেছিলাম তোর চোখে বিস্মিত থমক!
আমি যেনো তোর স্বপ্নের উল্টোরথ,
চমকে ওঠাটা চোখ এড়ায় নি আমার।

তারপর টেবিলের এপার আর ওপার
চোখে চোখে তাকিয়ে থাকা
সময়ের সাথে সাঁতার কাটা
চোখের ভেতর চোখ
তারপর ডুবতে ডুবতে ভেসে ওঠা
আবেগগুলো সামলে ওঠা
তারপর?
সময়ের দূরত্বে তুই আর আমি,
যোজন দূরত্বে ভালোবাসা;

তারপরও অনুভব রয়েই যায়
কোথাও না কোথাও
চিন্তা ও চেতনায়;
তোর,
আমার,
কিংবা ভালোবাসার।








মঙ্গলবার, ৭ জুলাই, ২০১৫

ভার্চুয়াল পুরুষ



ভার্চুয়াল পুরুষ
- যাযাবর জীবন

বাইরে ঝুম বৃষ্টি, হঠাৎ করেই;
মনটা একটু উচাটন হয়েছিল কি?
হঠাৎ করেই;
বৃষ্টি হলেই ভিজতে হবে এমন কোন কথা নেই
বৃষ্টির গান আর শুনব না বলে কানে আঙ্গুল;
বাইরে হোক না ঝড়, উড়িয়ে নিয়ে যাক সব
বৃষ্টি আসুক ঝেঁপে, ভাসিয়ে নিয়ে যাক সব
কি যায় আসে? মানুষের দেহে যদি পড়ে থাকে শব;
ভার্চুয়াল পুরুষ হতে হতে সেই কবেই ভেতরে হয়ে গেছি নির্লিপ্ত
সারাক্ষণ ফেসবুক মেসেজে রত থাকি, নারীতে সম্পৃক্ত
আমার কি আর বৃষ্টি-বিলাস মানায়?
নামুক না বৃষ্টি ছাদের ওপর একা
আমি নারীতে ভিজে আছি,
বৃষ্টিতে আর আমার ভেজা হবে না;
ভার্চুয়াল পুরুষ যখন ভার্চুয়াল জগতে রত
বাস্তব অনুভূতিগুলো তার আসলে তখন মৃত।

সোমবার, ৬ জুলাই, ২০১৫

মাটির ঘর



মাটির ঘর
- যাযাবর জীবন

এখানে আলো নেই
নেই অন্ধকার
কেমন জানি ধুসর ধুসর
চারিদিকে কুয়াশা,
এখানে থমকে আছে সময়
দিন আর রাত্রির পার্থক্য বুঝি না
চারিদিক ধোঁয়া ধোঁয়া
দৃষ্টিসীমা ঝাপসা।

এখানে শীত নেই
নেই চাদর গায়ে দেবার
এখানে গরম নেই
নেই ফ্যান বাতাস ছড়াবার;
এখানে আষাঢ় নেই বৃষ্টি দেখার
শরত নেই আকাশ দেখার
হেমন্ত নেই ধান ভানার
নেই বসন্ত মন হারাবার
এখানে সব ঋতু মিলেমিশে একাকার
চারিদিকে শুধুই আবছায়া অন্ধকার।

এখানে স্বামী নেই
স্ত্রী নেই
সন্তান নেই
নেই পরিবার,
এখানে সঙ্গী নেই কথা বলার
এখানে তুই নেই ভালোবাসার
এখানে আমি একা,
একাতে একাকার।

এখানেই এখন আমার বাস
ছোট্ট এক মাটির ঘরে;
তোমাদেরও আসতেই হবে
আজ
কাল
কিংবা পরশু
এখানেই,
এ কবরে।





হ-য-ব-র-ল



হ-য-ব-র-ল
- যাযাবর জীবন

তোর কলম
তোর খাতা
তোর মন
তা'তে গাঁথা,
তুই লেখ
তার কথা
সে ভাবে
তোর কথা,
তার মন
তো'তে গাঁথা
সে লেখে
তোর কথা;

আমি কে?
ছাতামাথা
কে ভাবে?
আমার কথা;

তুই
আমি
আর
সে'তে মিলে
হ-য-ব-র-ল
ব্যঙ্গের মাথা।




রবিবার, ৫ জুলাই, ২০১৫

ঈর্ষা



ঈর্ষা
- যাযাবর জীবন

এইতো সেদিন আগুন লাগলো মন নদীতে
মেঘ পুড়ে হলো ছাই
রাতের গায়ে ঈর্ষার বরফ জমতেই
সূর্য মুখ লুকোলো চাঁদে তাই;

দেশে যখন অমাবস্যা বিদেশে তখন রাগ পুড়ে কয়লা
চাঁদনি কোথায় পাই?
হিংসা বুড়ি দাঁত কাটে নক্ষত্রে বসে
তাইতো চাঁদে জ্যোৎস্না নাই;

কোথাও আগুন জ্বলে
কোথাও গন্ধ পোড়ে
কারো নাক বন্ধ
কেও ধোঁয়া গেলে;
ঈর্ষায় মন জ্বলে গেলে
ভালোবাসা পুড়ে ছাই।



শনিবার, ৪ জুলাই, ২০১৫

নিক্বণ



নিক্বণ
- যাযাবর জীবন

নূপুর কি আর নিজে বাজে?
রুমঝুম নিক্বণ বাজায় যে কে?
নারীর পায়েই যাদু আছে;
চুড়ির রুনঝুন সেও'তো নারীর হাতে
চুড়ি কি সে কথা জানে?
চুড়িতে নারীই সাজে।


অহং



অহং
- যাযাবর জীবন

কলার নূপুর ঝমঝম, হেঁটে চলে নারী
দৃপ্ত পদে, অহংবোধে
পদচিহ্ন রেখে যায় কিছু, পদদলিত করে
হৃদয় মাড়িয়ে নরে;
তবুও নারী
প্রেমিকা
কন্যা
জায়া
ও জননী;
অহং তো তার থাকতেই পারে
কলায় পটু নারী;
নর চিরকালই আনাড়ি।




শুক্রবার, ৩ জুলাই, ২০১৫

দূরত্ব



দূরত্ব

- যাযাবর জীবন

চাইলেই কি আর বাঁধতে পাবি?
মনটুকু পার হতে পারলেই আমার হবি
ভালোবাসা দেখবি যদি
বাইরে চেয়ে দেখ জ্যোৎস্না নদী;

দরজাটা পেরোলেই তো
অন্ধকার মুছে গিয়ে আমি
এইটুকু দূরত্বও পার হতে পারলি না?
ঐতো দেখা যায় শার্শির ফাঁক গলে চুইয়ে আসা জ্যোৎস্না;

এই যে ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে থাকা
তবুও দূরত্বটুকু পার হওয়া হয় না,
আমরা অন্ধকারে জ্যোৎস্নার গান শুনি
স্বপ্নে চাঁদ দেখি,
সময়ের রেলগাড়িতে চড়ে আফসোসের দীর্ঘশ্বাস ফেলি;
সেদিন একটু চেষ্টা করলেই তো হতো
কতটুকুই বা ছিল দূরত্ব?
তার সাথে আমার
কিংবা মনের সাথে ভালোবাসার।



বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই, ২০১৫

নির্ঘুম চোখে তুই



নির্ঘুম চোখে তুই
- যাযাবর জীবন

ঘুম, ঘুমিয়ে গেছে
জেগে আছে চোখ,
ভেড়া গুনতে গুনতে তোর ভুরু গুনে ফেলেছি
এবার মাথাটা বাড়িয়ে দে
তারা আর চুল গোনায় পার্থক্য কোথায়?
কোন না কোন ভাবে রাত তো কেটেই যায়;
তুই শুধুই চোখ দেখিস
আমি চোখের নদীতে দেখি জোয়ার ভাটা
কান্না কে দেখতে পায়?

রাত জেগে থাকলে
চোখ স্বপ্ন হয়ে যায়
ঘুম জেগে থাকলে
তুই কবিতায়।

মন বন্ধ



মন বন্ধ
- যাযাবর জীবন

নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে বিষ, ধুতুরা গন্ধ
বিশ্বাসের দেয়ালে দেয়ালে ফাটল, মন বন্ধ;
তবে কেন আর মিছে শব্দ বুনন?

কলম তোমায় দিলেম ছুটি
বদলে হাতে সুঁই সোনামুখি
সেলাই করে দিলাম সব কবিতার রন্ধ্র;
আজ মন বন্ধ
মন বন্ধ।


বুধবার, ১ জুলাই, ২০১৫

এ কেমন জীবন?


এ কেমন জীবন?
- যাযাবর জীবন

ভাঙ্গতে কম ভাঙ্গ নি
খুঁড়তে কম খোঁড় নি
এখানে, ওখানে, সেখানে
দিন রাত্রির অষ্টপ্রহরে
বছরের প্রতিটা ঋতু জুড়ে
হৃদয়টা ক্ষততে ভরে;
ক্ষত, ক্ষত আর ক্ষত
খুবলে তুলে ফেলেছ প্রতিদিন
আমার শরীর থেকে সব রক্ত মাংস;
এক একবার এক এক জন আসে জীবনে
এক একটি ক্ষত তৈরি করে যায়
আমার সারা গায়,
তারপর আবার হয়তো নতুন কেও আসে জীবনে
একটু করে হাত বোলায়
মলম লাগায় ক্ষতর গায়
তারপর ছুড়ে ফেলে রেখে আবার চলে যায়;
আবার জীবনে নতুন কারো আগমন
আবার নতুন করে ক্ষতের কারণ,
এ আমার কেমন জীবন?
আমি যেন বেশ্যার থেকেও অধম
যে যেভাবে করে যাচ্ছে আমায় ধর্ষণ;
আর কত?
আর কত ক্ষত দেবে একই শরীরে?

দোহাই তোমাদের
এবার একটু করুণা কর আমায়
আর ধর্ষণ করো না আমাকে তোমরা
সারাটা বছর জুড়ে বন্ধ কর এ খেলা,
আমি তোমাদের চলার পথ,
"আমি ঢাকার রাস্তা"।




অসীমের পথে



অসীমের পথে

- যাযাবর জীবন

বাইরে রৌদ্দুর ভেতরে ঝড়
মনে শঙ্কা পথ হারানোর;
মধ্য দুপুরের পিছলে আসা রোদ সরু রেলের পাতে,
চোখ ধাঁধায়
হয়তো কাঁদায়,
হাত কি থাকে হাতে?

রেলের পাত সমান্তরাল চলে গেছে
অসীমের পথে,
কেও কাওকে পায় না ছুঁতে;
না আমি তোকে
না তুই আমাকে
না ভালোবাসা, ভালোবাসাকে।