শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১১

নির্বাসন এ একা

শুভক্ষণে বন্ধু বেশে হয়েছিলে পরিচয় তোমার আমার সাথে
বন্ধুত্বের সীমার মাঝে প্রতিদিন কত কথামালা বাদাম খাওয়ার ফাঁকে
তারপর সময় গড়িয়েছে অনেকখানি বন্ধুত্বের গন্ডি পেরিয়ে
একান্ত কথাগুলো ফাঁকে দিয়েছিলে ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে।

পারিনি এড়াতে তোমাকে না পেরেছি তোমার ডাক
তাইতো গিয়েছিলেম ভেসে এসেছিল সে বন্য রাত
উজার করা ভালোবাসার গানে বেধেছিলেম কত সুর দুজনে
তোমাতে ডুবেছিলেম আমি ভালোবাসা নিয়ে প্রানে।

ডাকতে তুমি বন্য হয়ে পারিনিকো থাকতে ছেড়ে
গাছের ডগায় তুলে দিলে আনতে পেড়ে চাঁদ
পারিনি তোমায় শত বোঝাতে বামন আমি
ধরতে চাঁদেরে ওই পর্যন্ত যায়না আমার হাত।

অভিমানে মুখ গুড়িয়ে অন্যদিকে বসে
মনের ঝাল মিটেয়েছ তুমি বস্তাহীন এই পিঠে
তোমার রাগের পুতুল আমি চেয়েছিলেম মাফ
করলে নাতো করুনা আমায় করলে তুমি রাগ।

একটি দুটি মাশুল গুনি ব্যর্থতারই মাঝে
দিনে দিনে দ্বগ্ধ আমি ব্যর্থতাতেই লাগে
মন কি কোমল হয় কখনো? করনিকো ক্ষমা
তবু চেস্টা করে যাচ্ছি যা আছে সব আমা।

চদ্ররাতে একনৌকায় শুয়ে ছিলে বুকে
হঠাৎ উঠেই ধরলে মাতম না পাওয়ার সব শোকে
নিঠুর তুমি ধাক্কা দিয়ে নৌকা থেকে ফেলে
বাচালো আমায় মাঝ দরিয়ার দুঃখি যে এক জেলে।

মধুচন্দ্রিমার আবেশ ঘনা রাতের বেলার হাসি
করে দিলে ঘরের বাহির হাতে বাঁশের বাঁশী
বললে ডেকে আজকে থেকে এ দরজা বন্ধ
তোমার প্রেমে আমি ছিলেম তখনো যে অন্ধ।

ভালোবাসার হাতছানিতে দিয়েছিলে ডাক
করেছি ভুল দিচ্ছি মাশুল নেই জীবনের স্বাধ
ভালোবাসার অবুঝ খেলায় গিয়েছিলেম হেরে
তাইতো তোমার একতরফা ভালোবাসা গেছে মরে।

কোন এক ভুলক্ষনে ভালোবাসা জেগেছিল মনে আমার
সেই থেকে আজ অবধি পারিনি ভুলে যেতে তোমায়
সেই থেকে তুমি, রক্তে মিশে গিয়ে রক্তে মিশে যে আছো
আমাতে আমা হয়ে আমারই হয়ে গেছ।

তবুও তোমাকে খুঁজি কেন জানি না জানি না
ভাবি না কখনো আর পাবো কি পাবো না
যেথা আছ ভালো থেকো আমাকে ভেবো না
তোমাকে ভোলা কভু হলো না হলো না।

বাস্তবতায় হেরে গেছি তবু মনের কাছে বাঁধা
তাইতো এখন কাটছে জীবন তোমার শোকে কাঁদা
ক্লান্ত শরীর ক্লান্ত মনে ক্লান্ত চোখে দেখা
তাই তো আমি পড়ে আছি নির্বাসন এ একা।

বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১১

প্রাপকের আশায়

পৃথিবীর এই আজব নাটক পাড়ায়
মঞ্চস্থ হচ্ছে কতই না নাটক প্রতিদিন
কত ভালোবাসাবাসি
কত মাখামাখি দুজনে দুজনায়।

কতইনা চিঠি লিখা হয় প্রতিদিন
আনপনের কালিতে বা মনে মনে
ভালোবেসে নীল খামে করে
কত চিঠি পৌছে প্রাপকের কাছে;
কত চিঠি রয়ে যায় পড়ে
পোস্টঅফিসের কোন এক
নির্জন কোনে অবহেলায়।

ঠিকানাবিহীন ঠিকানায় লেখা
এমনই একটি চিঠি পাঠানোর খায়েশ
তোমার কাছে, আমার অনেক দিনের।

দিবা নিশি অপেক্ষায় থাকি
যদি কোনদিন হঠাৎ কখনো ভুল করে পৌছে যায়
আমার চিঠিখানি যথার্থ প্রাপকের কাছে ........


স্বপ্নে তুমি

মনের মাঝে বয়ে চলে
মন খারাপের পাগলা হাওয়া
তোমায় নিয়ে স্বপ্ন আঁকি
স্বপ্ন দেখি তোমায় পাওয়া।

ঘুমের মাঝে স্বপ্ন চুমে
নীলপরী সব ডানা মেলে
সত্যি হবে স্বপ্ন আমার
চোখ খুলে আজ তোমায় পেলে।

লাল হওয়া ঐ আকাশ পানে
সূর্য ডোবা দিনের শেষে
দেখি যেন তোমায় আমি
লাল টুকটুক পরীর বেশে।

জ্যোৎস্না রাতের আলোর ভিরে
খুঁজি তোমায় নদীর তীরে
হাতে হাতে দুহাত রাখি
স্বপ্নে যেন তোমায় দেখি।

অন্ধকারের তারার মেলায়
হারায় যে মন তোমার খেলায়
থাক তুমি যদি পাশে
থাকব বেঁচে তোমার আশে।

বৃষ্টি নামে টাপুর টুপুর
মেঘলা দিনের অলস দুপুর
হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি পাওয়া
মনে মনে তোমায় ছোঁয়া।

ঘুম ডাকে যে নিদের দেশে
চোখের মাঝে ঘুমের রেশে
ঘুম কেড়ে নেয় কে যে আমার
নিদ্রাহীন এক পরীর বেশে।

মন ডাকে যে মনটাকে আজ
মন খারাপের কান্না ঝরে
বৃষ্টি ঝরা রাতের শেষে
হাত বাড়িয়ে তোমায় খোঁজে।



তোমাকে বুকে ধরে।

মনের মাঝে হাঠাৎ করেই যেন কার মুখ উঁকি দিয়ে ওঠে
রংতুলি চেয়ে আছে হাতদুটি পানে তৃষ্নার্ত পিপাসা নিয়ে
যদি তুলি খানি হাতে নেয়া যায়
সাদা ক্যানভাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে
প্রতিক্ষার প্রহর গুনে
যদি মন চায়, যদি ছবিখানি আঁকা হয়ে যায়।

দ্বিধা দ্বন্দের দোলায় দুলছি আমি
একবার রংতুলির ডাক শুনি
সাদা ক্যানভাসে মনের আয়নার প্রতিচ্ছবি দেখি
মনে দ্বিধা সংশয়, বড্ড ভয় হয় রংতুলি হাতে নিতে
কতবার, কতশতবার রংতুলি আমার হাতের মাঝেই
শুকিয়ে গেছে রঙ এর রঙে রাঙ্গা হয়ে
লাল, নীল, সবুজ, হলুদ
রঙের বাটিতে রঙ গুলে যাই একটির পর একটি
ক্যানভাসে কখনো ফেলতে পারিনি দাগ একটিবারের তরে
স্ট্যান্ডে দাঁড়ানো ক্যানভাস তাই চেয়ে থাকে মুখ ভারে
আমিও দাঁড়িয়ে থাকি অসহায় চোখে সাদা ক্যানভাসের তরে।

মনের আয়নায় ফোটানো ছবির একটি রেখাও
যেন তুলিতে আঁচর কাটতে পারি নি ওই ক্যানভাসের গাঁয়ে
পারি নি একটিবারের তরেও তোমার ওই মুখছবি আঁকতে
দ্বিধা দ্বন্দ ভয় সব এক হয়ে রয়
যদি আমার আঁকা চুলির আঁচরে ফোটে ওঠে অন্য একটি মুখ
সেদিন তোমাকে আমি মুখ দেখাব কিভাবে?

তার থেকে পড়ে থাক রংতুলি আর ক্যানভাস এর ডাক
রঙের ডিব্বে গুলি বন্দি শুকিয়ে যাক
তুমি রয়ে যাও আমার মনের আয়নার মাঝে
আমাতে আমা হয়ে।

একটিবারের দেখা রূপে চিরদিনের তরে
তার থেকে হ্রদয় কুঠোর হতে বের করে এনে
মনের আয়নায় দেখব তোমাকে চিরকাল
যতদিন মনের আয়না ঘষা কাঁচে পরিণত না হয়ে যায়
কিংবা তোমার মুখচ্ছবি ঝাপসা না হয়ে আসে।
আছ তূমি মনের মাঝে মনের আয়নার রাণী হয়ে
থাকো তুমি তাই মোর হ্রদয় কোণে
আমার মনের মানবী হয়ে।
ছবিতে তোমার রূপ কখনোই তুলে আনবো না আর
যতদিন বেঁচে থাকি
তোমাকে বুকে ধরে।

যদি ভুল ছবিটি একে ফেলি
ক্ষমা করতে পারব না নিজেকে নিজে আমি।

বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১১

ষড়রিপুর মাঝে বন্দি

মনের ঘরে কিসের আশা, মনের মাঝে কিসের বাসা
বন্ধ ঘরের কেওর মেলে, বন্ধ মনের গহীন কোনে
একটু খানি উঁকি, চমকে যেন উঠি
হিংস্র যেন দানব আমি, দাবার ঘরের ঘুঁটি।


চলার পথের ষোল বাঁকে, খোঁজে নারী লোলুপ চোখে
চোখের মাঝে লালসা ঝরে, চোঁরা চোখে চেয়ে দেখে
মনে মনে বাহুডোরে একলা ঘরে বন্দি করে
পেতাম যদি একলা নারী একটি বারের সাথী
কাম যখন ওঠে জেগে, বিবেক তখন রয় ঘুমিয়ে
ঘরের মাঝেই বিবি আছে, অপেক্ষারই প্রহর চেয়ে
পেছন ফিরে তাকাই যদি চমকে যেন উঠি
কামের লিপ্সা দানব বানায় দাবার ঘরের ঘুঁটি।


মনের ঘরে ক্রোধের বাসা কোথায় পালায় ভালোবাসা
শ্বশুর বাড়ির টাকা কড়ি মনের মাঝে ওরায় ঘুড়ি
বিবির সাথে মিঠে কথার মালার লহর বুনি
লোলুপ মনের গহীন কোনে কড়ির হিসাব গুনি
না মিটলে লোভের আশা বিদ্ধ যে হয় ভালোবাসা
বউ পেটালো হিংস্র পশু নির্যাতনে দানব শিশু
একটু খানি পেছন ফিরে চমকে যেন উঠি
ক্রোধের ঘরে হলাম দানব দাবার ঘরের ঘুঁটি।


লোভ লালসা থাবা মেলা, টাকার পিছে ছুটে চলা
পাশের বাড়ির খেলার সাথি, হাঁকায় যে আজ বড় গাড়ি
পেছনে পড়ে আছি আমি ছিলেম যে তার সাথি
বিবেকটারে মোচর দিয়ে বোধ বুদ্ধি বিসর্জনে
ছুটে চলি টাকার পিছে পেতে গাড়ি বাড়ি
লোভের থাবা গ্রাস করেছে, বিবেক নিল আড়ি
হঠাৎ করেই পেছন ফিরে চমকে যেন উঠি
লোভের মাঝে হিংস্র দানব দাবার ঘরের ঘুঁটি।


কিসের মোহে অন্ধ হলাম বিবেকটারে বিদায় দিলাম
মদের নেশায় হয়ে চুরচুর শরীরটাতে হয় ভাংচুর
কিবা পেলাম কি হারালাম একটু যদি আগে ভাবতাম
মনের মাঝে হিংসা জাগে বন্ধু আমার চলে আগে
রিপুর কাছে বাঁধা আমি পরশ্রীকাতর এই মন
বোধ বুদ্ধি সকলই যেন দিয়েছিলেম বিসর্জন
মোহ হতে মুখ ঘুরিয়ে চমকে যেন উঠি
মনের মাঝেই দানব আমি দাবার ঘরের ঘুঁটি।


তাইতো এখন শেষের বেলায় জীবন যে পার করেছি হেলায়
অতীতগুলো বড়ই ভাবায় করেছি পার লোভ লালসায়
পুরো জীবন ভাবতে গিয়ে পেছন ফিরে উঁকি দিয়ে চমকে যেন উঠি
ষড়রিপুর মাঝে বাঁধা, আমি যেন এক দাবার ঘরের ঘুঁটি।



সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১১

চাঁদের আলো

চাঁদের গায়ে আলো হাসে
কলংকে তার কি বা আসে
জ্যোৎস্না বিলায় দরাজ হাতে
মেঘ তাকে কি ঢেকে রাখে।

পূর্ণিমার ওই আলোর কিরণ
আলো করে সবারই মন
দাগগুলো তার কালো যত
অন্ধকারে আলো তত।

পাথর হ্রদয় থাক না যতই
অন্ধকারের কালোর মতই
চাঁদ যদি তারে হেসে বলে
পাথর হ্রদয় যায় যে গলে।

জ্যোৎস্না ভরা আলোর মেলায়
পাষাণ হ্রদয় একটু গলায়
কালো গুলো আলো করে
অন্ধকার সব যায় যে সরে।


চন্দ্রকাথার কাব্য

চন্দ্রকাথার কাব্য সব লিখে গিয়েছেন যত মনীষী জন
চাঁদের হাজার রূপের তাতে হয়েছে কি সব বর্ণন?

প্রতি জ্যোৎস্না রাতে সে যেন আসে নব নব সাজে
প্রতি চন্দ্রবেলায় হ্রদয়ে তাই তো নতুন সুর বাজে।

মধ্যরাতের হেসে ওঠা চাঁদের বন্যায়
আঁখি হতে নিদ সব কেড়ে নিয়ে যায়
জ্যোৎস্নার ঢল ভাসায় ধরাচল
তারে দেখিবার তরে আঁখি চঞ্চল।

হ্রদয় বীণায় নব ঝংকারে নতুন নতুন সুর সব বাজে
হারাই হারাই আমি ওই বহুরূপী জ্যোৎস্নারও মাঝে।

প্রতি চন্দ্রবেলায় আঁকি, রূপ যত তার
রঙ সে কি ধরা যায় ওই জ্যোৎস্নার
তুলিতে শুকায় রঙ শুধু ভাবনায়
আঁচর পড়ে না শুধু ক্যানভাসের গায়।

নারকেল পাতার ফাঁক গলে চুয়ে পড়ে জ্যোৎস্না
একটুখানি গা ভেজাবার মনে বড় বাসনা
বালিয়ারি ঢেকে দেয় খোলা সাগর তীরে
জোয়ার এসে আছরে পড়ে ধুয়ে নেয় স্রোতের ভিরে।

জানালার ফাঁক গলে আলো চুমে যায়
ঘুম ভাঙে মাঝরাতে চাঁদের বন্যায়
ছুটে যাই আহ্বানে ঘর থেকে বার
সারা গাঁয়ে মেখে নিতে আলোটুকু তার।

কত আশা বাসা বাঁধে মনে ভাবনায়
একটি বার যদি ওই, জ্যোৎস্না ধরা যায়
অপার্থিব রূপের আঁধার আর আছে কার
আলো যত রূপ ধরে ওই জ্যোৎস্নার।

চাঁদ যদি ঢেকে যায় মেঘেরও ছায়ায়
সুর তোলে বীণার তার, বোবা কান্নায়
পাওয়া আর না পাওয়ার বেদনা যত
চন্দ্রগীতি লেখা হবে হ্রদয়ে তত।

প্রেমিকের ভালোবাসা বাঁচে থাকে যত
জ্যোৎস্নার হাসিতে দেখে হারায় হ্রদয় তত
চন্দ্রকাব্য লেখা হবে তার কলমে অপূর্ণ সব আশায়
প্রতি চন্দ্রবেলায়, হায় প্রতি চন্দ্রবেলায়।