মঙ্গলবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

নীল চাঁদ

কাল চাঁদ দেখেছি নদীতে সারা রাতভর 

আর তোকে ভেবে মন জ্যোৎস্নার ঘর 

আজ সারা দিনভর সূর্যটা পুড়িয়েছে বেশ

যদিও মনে ছিলো কাল রাতের কিছু রেশ;


দিনে প্রখর সূর্য আর আকাশের নীল রঙ 

রাত নামতেই তুই নামলেই মন অন্যরকম 

রাতে চাঁদ, রাতে তারা, পুরো আকাশটা ভরা 

শুধু মনটা জানি কেমন কেমন তুই ছাড়া; 


মাঝে মাঝে দিনের বেলাতেও তোকে মন চায়   

একদিন না হয় দুপুর স্বপ্নে তো তুই চলে আয়!  

মন পুকুরে তুই নামলেই মন শ্যাওলা সবুজ  

এই দেখ! তোর কথা ভাবতেই মন অবুঝ; 


স্বপ্নে স্বপ্নে তুই আর আমি স্বপ্নের কথা কই! 

হয়তো কখনো চোখ খুলতেই দেখব সামনে তুই

সেদিন খুব জ্যোৎস্না হবে আর আকাশে নীল চাঁদ

আর আয় আয় ডাকবে তোর ভালোবাসার ফাঁদ।


 

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


নীল চাঁদ 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ মোবাইল ক্লিক। 





একা একা মন

নদীতে রাত, নদীরও রাত

তবুও কুলকুল ঢেউ চলছে

অথচ রাতটা ঠিক ঘুমিয়েছে, 

ঘুম নেই নদীর, ঘুম নেই ঢেউয়ের 

ক্রমাগত পাড়ে ভাঙছে ঢেউ

নদীর পাড় আছে, পাড়ে কোথাও নেই কেউ; 


আকাশে রাত, আকাশেরও রাত

ঘুমঘুম ঘুমে রাত ঘুমিয়েছে 

বেহায়া চোখে জেগে আছে অন্ধকার 

আর সাথে জেগে আছে চাঁদ, 

জেগে আছে সুনসান নিস্তব্ধতা 

আর মনে শূন্যতার ফাঁদ; 


আড়মোড়া ভাঙছিল মেঘ 

ইতিউতি জ্যোৎস্নার ভাঁজে  

মোড়াচ্ছিলো মন মরমর 

অসময়ে তোর উঁকি মনের খাঁজে, 

আমি চাঁদ দেখি, চাঁদে তোর মুখ 

চাঁদের উঁকিতেই মনে মনসুখ; 


একা একা রাত, একা একা চাঁদ

একা জ্যোৎস্নার সুখ 

একা নদী, একা ঢেউ 

আর পাড়ে আছড়ে পড়া দুখ,

খোলা চোখে জ্যোৎস্না, খোলা চোখে নদী

আর চোখ বন্ধ করলেই তোর মুখ। 


২১ সেপ্টেম্বর,  ২০২১


#কবিতা 


একা একা মন 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ মোবাইল ক্লিক। 




মনে আয়

হঠাৎ করেই চোখ মেলে, চারিদিকে ঘন বন  

আর চোখে সবুজ দেখে দেখে, সবুজ সবুজ মন 

বনে ঝরে পড়া পাতা, আর গুল্মলতা

কাকে জানি মনে হতেই, মনে মনে কথা 

নাম না জানা কিছু গাছ, অচেনা কিছু ফুল 

তোকে কি মনে পড়ছে? নাকি মনের ভুল? 


জালের মত খাল আর কিছু নদী 

ঢেউ এর পর ঢেউ, বয়ে চলে নিরবধি 

জোয়ার আর ভাটা, ঢেউ কুলকুল 

মন কেমন কেমন, তোতে মশগুল; 


তুই কে? 

বনে বন্য

ফুল, লতাগুল্ম 

জলে বয়ে চলা 

মনে কথা বলা,

আচ্ছা! তুই কি নারী? 

ভালোবাসায় আমি বড্ড আনাড়ি; 


ঐ চেয়ে দেখ! 

এত্ত বড় এক চাঁদ উঠেছে, 

আকাশে জ্যোৎস্নার গান 

বনে বন্য ঘ্রাণ 

বড্ড মন কেমন করছে! তুই কোথায়?  

মনে মন চাইছে, একবার মনে আয়।


২০সেপ্টেম্বর,  ২০২১


#কবিতা 


মনে আয় 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ মোবাইল ক্লিক। 




কিছু ছাড় দেয়া, কিছু মানিয়ে নেয়া

এই যে চেনা নেই,  জানা নেই 

আগে কখনো দেখাও হয় নি 

পরের বাড়ির একটা মেয়ে হুট করে জীবনে চলে এলো,   

তারপর আমার ঘরটাকেই নিজের ঘর বানিয়ে, জীবন হয়ে গেলো!  

ব্যাপারটা ঠিক কেমন জানি, একদম অন্যরকম না? 

আমার তো মাঝে মাঝে অদ্ভুত লাগে,

তোমাদের কারো লাগে কি? 


কেউ কেউ প্রেম করে বিয়ে করে 

কেউ বিয়ে করে প্রেম করে 

কারো কারো আবার বিয়ের পরেও প্রেম হয় না 

তবুও ঠিকই সংসার কররে যাচ্ছে,  

এরা কি প্রেম বোঝে না? 

নাকি দাম্পত্যে বনিবনা হয় না? 

আচ্ছা! ভালোবাসা না থাকলে দুটি মানুষ একসাথে সংসার করে কেন? 

আমার ঠিক বোধগম্য হয় না; 


তবে কেউ কেউ সাহসী হয়

বনিবনা না হলে ক্রমাগত চেষ্টা করে যায় 

তারপরও না পারলে তখন খুব ভদ্রভাবে আলোচনা করে দুজন আলাদা হয়ে যায়,

এটাই হওয়া উচিৎ 

তবুও সব ক্ষেত্রে এটা হয় না 

পুরুষ শাসিত সমাজে, পুরুষদের মেনে নিতে কষ্ট হয়

তাদের অহং বোধে আঘাত লাগে 

খুব সহজে তারা ছেড়ে দিতে চায় না 

অত্যাচারের নিত্য চিত্র আমরা খবরের কাগজে পড়ি; 


এর আবার ব্যতিক্রমও আছে 

কিছু স্ত্রী আছে তারাও খুব সহজে ছাড় দেয় না

খোরপোষ, ভরণপোষণ এগুলোর জন্য অনেক খারাপ কিছু করে ফেলতেও দ্বিধা-বোধ করে না

এমনকি আজকাল তো মেয়েদের পক্ষে কিছু আইন হওয়াতে ও শ্রেণীটার বেশ সুবিধাই হয়েছে 

অনেক স্বামীকে বিনা অপরাধে যে জেলের ভাতের স্বাদ গ্রহণ করতে হয়েছে 

এগুলোও খবর হয়েছে, 

জোরাজুরিতে কি আর সংসার হয়? 

ওটা তো দুটো মনের মিলন 

তাই না? 


কোন কোন দাম্পত্য প্রেমের কলকল 

কোন কোন দাম্পত্য কলহের কোলাহল 

কিছু ছাড় দেয়া, কিছু মানিয়ে নেয়া

এটাই দাম্পত্য, 

আর নয়তো ছাড়াছাড়ি তো আকছারই হচ্ছে।


০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


কিছু ছাড় দেয়া, কিছু মানিয়ে নেয়া

 - যাযাবর জীবন 



পক্ষপাতিত্ব

ভাই-ভাই সম্পর্ক কিংবা ভাই-বোন সম্পর্ক, বাবা-মায়ের জন্য 

একই বাবার ঔরসে, একই মায়ের পেট থেকে জন্ম 

রক্তের একটা টান তো থাকবেই! এটাই শাশ্বত, এটাই সত্য

বাবা-মা আর ভাই-বোনের মাঝে পারস্পরিক টান, সংসারের মাধুর্য;  


ভাই-বোনদের মধ্যে সম্পর্ক সাধারণত মধুরই হয়, যদি স্বার্থ না আসে

যদি জীবনের কোন মোড়ে স্বার্থ এসে সম্পর্কে ফাটল ধরাতে চায়ই    

বেশিরভাগ বাবা-মাই ভাই সে ফাটলগুলো বন্ধ করতে সচেষ্ট থাকেন

স্বার্থের মূলে মলম লাগিয়ে সম্পর্কগুলো মধুর করার চেষ্টায় রত থাকেন; 


আমরা সাধারণত দেখি সন্তানরাই বড় হয়ে বাবা-মাকে কষ্ট দিয়ে থাকে

সে ঘরে বৌ এনেই হোক! কিংবা অর্থাভাব অথবা অন্য কোন কারণ  

যদিও এটা কোনভাবেই উচিৎ না তবুও দেখছি, নয় এটা চোখের ভ্রম 

চারিদিকে দেখতে দেখতে আজকাল আমাদের চোখে সয়ে গেছে বৃদ্ধাশ্রম; 

  

তবে অল্প কিছু এমন বাবা-মাও থাকেন, যারা পক্ষপাতিত্ব করেন  

সন্তানে সন্তানে পক্ষপাতিত্ব করতে গিয়ে রক্তের সম্পর্কটাই নষ্ট করে দেন

অথচ এই একটা জায়গায় সন্তানের ভরসা থাকে সবচেয়ে বেশি, তাই না? 

সন্তানের মন কখন ভেঙে যায় জানেন? বাবা-মায়ের পক্ষপাতিত্বে; তাই না?


০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


পক্ষপাতিত্ব

 - যাযাবর জীবন 


সম্পর্কের টান

টাকা পয়সা, সম্পত্তি এগুলো বস্তুগত

তবে সম্পর্ক'কে করে ফেলে যখন তখন ক্ষত 

স্বার্থ নামক অদৃশ্য এক ভাইরাস আছে  

সম্পর্ক থেকে সম্পর্ক'কে আলাদা করতে জুড়ি নেই এর মত;


আচ্ছা, সম্পর্ক কি? 

কিছু রক্তের টান 

কিছু কাগজে কলমের সাইন 

আর কিছু অনুভব অনুভূতি; 


ওটা ভাঙে কিভাবে?

সম্পর্কে অর্থ এলে 

সম্পর্কের মাঝে স্বার্থ এলে 

কিংবা খলের কানকথায় কান দিলে; 


স্বার্থ নামক ভাইরাসটা কখনো কখনো 

সম্পর্কের ভেতরে বসবাসরত মানুষগুলোর মনুষ্যত্বটাই মেরে ফেলে,

মনুষ্যত্ব মরে গেলে মানুষ আর মানুষ থাকে কই? 

মানুষ যদি মানুষই না থাকে ওখানে সম্পর্ক থাকবে কি করে?  


আমি বহু সম্পর্ক হারিয়েছি, স্বার্থ ভাইরাসের কারণে 

তবুও মাঝে মাঝেই কোথায় যেন কিসের এক টান আমাকে কাঁদায়  

ওগুলো রক্তের টান কি? নাকি অনুভূতির? নাকি মৃত সম্পর্কের? 

একলা হলেই কেমন জানি লোনা লাগে চোখ; তোমরা কেউ কাঁদো কি?


০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


সম্পর্কের টান 

 - যাযাবর জীবন 



এক সেকেন্ড ব্যবধান

এক সেকেন্ড ব্যবধানে কত কিছুই না হয়ে যায়!


ঐ যে বিছানায় পড়ে আছে একটা নিথর দেহ, যেন জীবিত লাশ   

অথচ সেদিন কি সুন্দর সময়ই না কাটাচ্ছিল পরিবারের সবার সাথে! 

হাসি আনন্দে গল্প করতে করতে খাচ্ছিলো খাবার টেবিলে বসে 

হঠাৎ করেই জানি কি হলো

সেকেন্ডের ব্যবধানে মাটিতে পড়ে গেলো,

দৌড়োদৌড়ি, এম্বুলেন্স, হাসপাতাল 

হাসপাতালের বিশাল এক বিল মিটিয়ে বাসায় নিয়ে এলো 

একটা জীবিত লাশ,

সব কথা শোনে, সব বুঝে, অনুভূতিগুলোও যেন আগের থেকে তীক্ষ্ণ  

শুধু নড়তে পারে না, বলতে পারে না

নিথর বিছানায় পড়ে থাকে,

খাবার টেবিলে পড়ে যাওয়ার এক সেকেন্ড আগে কেউ ভেবেছিলো? 


এক সেকেন্ডের ছোট্ট একটা ভুল বোঝাবুঝি, একটু কথা কাটাকাটি

একটা দাম্পত্য হয়ে যেতে পারে মাটি, 

ঐ যে দম্পতিটা দেখছ!

সুখী দম্পতি বলে এক সময় সবাই খুব প্রশংসা করতো 

সবার সাথে হাসতো, গাইতো, গল্পে আনন্দে মেতে থাকতো

হঠাৎ করেই কোন একদিন কোন এক মুহূর্তে কি নিয়ে জানি বিবাদ হলো

বিবাদটা চারা থেকে মহীরুহ হলো 

তারপর বিচ্ছেদে গড়ালো,

এক সেকেন্ডের সেই কথা কাটাকাটির আগে 

এরা দুজনের কেউ ভেবেছিলো?   


এক সেকেন্ডের ব্যবধানে চলে যেতে পারে প্রাণ, 

মনে কর পরিবারের সবাই মিলে ছুটিতে গেলে 

গাড়িতে সবাই মিলে হাসি আনন্দে গল্পে মেতে ছিলে

হঠাৎ করেই ওপাশ থেকে একটা বাস কিংবা ট্রাক

বিশাল একটা শব্দ ধারাম,

লোকজনের চিৎকার, চেঁচামেচি, এম্বুলেন্স, হসপিটাল

ওখানে পরিবারের কারো হয়তো হাত কাটা পড়লো

কিংবা কারো হয়তো পা, অথবা অন্য কোন অঙ্গ

তবুও তো বেঁচে আছে! 

আর পরিবারের ঐ যে সদা হাস্যোজ্জল ছেলেটা!

মাত্র কলেজ পাশ করে বের হয়েছিলো

হসপিটালে নিতে নিতে নিথর হয়ে গেলো

বেড়াতে যাবার আগে কেউ ভেবেছিলো?  


এক সেকেন্ডের ব্যবধানে কত কিছুই না ঘটে যায়, 

অসুখ বিসুখে কেউ কেউ হয়তো বিছানায় পড়ে রয় 

কথায় কথায় কথা কাটাকাটিতে হয়তো সম্পর্ক হারায় 

কিংবা কোন এক্সিডেন্টে শরীরের কোন অঙ্গ হারায়

এমন কি এক সেকেন্ড ব্যবধানে বলা নেই কওয়া নেই 

একটা সুস্থ সবল মানুষ লাশ বনে যায়। 


০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


এক সেকেন্ড ব্যবধান

 - যাযাবর জীবন 



বডি

আহা বেচারা জীবনভর কি কঠোর পরিশ্রমটাই না করেছে! 

নেশার মত শুধু টাকা কামিয়েছে 

আর সম্পদের পাহাড় গড়েছে,  

বেচারা কিছু নিয়ে যেতে পারলো না;


কাকে বলছ?

ঐ বডিটাকে?


বডি? 

 - নাম নেই কোন?


নাম ছিলো তো! যতদিন বেঁচে ছিলো

শবের কোন নাম থাকে না

আহা, দেখো কেমন কাঠের খাটিয়ায় অসহায় শুয়ে আছে বেচারা;


অথচ কি দুর্দান্ত প্রতাপ প্রতিপত্তিই না ছিলো!

যতদিন বেঁচে ছিলো, 

কোন সমস্যা সামনে এলেই টাকায় সব কিনে নিতো

টাকায় কি কেনা না যায়? 

যদি কিছু কিনতে ব্যর্থ হতো তাহলে ছিনিয়ে নিতো ক্ষমতায়, 

আজ ক্ষমতা কোথায়? 


আচ্ছা! বডিটা কোথায় যাবে?

কেন? 

 - ঐ তো মাটির ঘরে, 


ওখানে এসি আছে? বিছানায় ম্যাট্রেস লাগানো হয়েছে?

নতুন চাদরটা বিছিয়ে দিও কিন্তু, 

নরম বালিশটা দিতে ভুলো না,  

ইলেকট্রিক কানেকশনগুলো ভালো করে চেক করে দিও

আই পি এস এর ব্যাটারিটাও চেক করো

কারেন্ট গেলে যাতে সাথে সাথে লাইট জ্বলে উঠে

অন্ধকার উনি একদমই সহ্য করতে পারেন না;  


আরে বোকা!

ও ঘরে বাতি থাকে না, এসি তো অনেক দূরে 

ম্যাট্রেস কোথায় দিবে? ও ঘরটায় থাকে না বিছানা

দামি চাদর? সাদা মার্কিনের কাপড় কেনা হয়েছে

গোসলের পরেই পড়িয়ে দেবে   

তারপর শুইয়ে দেবে বাঁশ দিয়ে ঢেকে মাটির বিছানায়;


বডি পচতে পচতে কবরের ভেতরেই দুর্গন্ধ ছড়াবে

তারপর একসময় মাটির সাথে মিশে গিয়ে মাটি হবে,

এত অহংকার কিসের হে মানব?



০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


বডি 

 - যাযাবর জীবন 









শরতের ডাক

সেই ছোটবেলা থেকেই ছবি তোলার বড্ড শখ 

কথায় আছে না! শখের তোলা আশি টাকা

আজকাল তোলার মাপ ক'জনারই বা আছে জানা? 

আরে বাবা! ইদানীং স্বর্ণই বা কেনে ক'জনা? 


ক্যামেরা অবশ্য তোলার মাপে বিকিকিনি হয় না 

ওটার কেনাবেচা অনেকটা ব্র্যান্ডের মাপে 

ব্র্যান্ড শব্দটাতেই আমার আবার আপত্তি 

আসলে আপত্তি না, পয়সার ঘাটতি - হিপোক্রেসি;  


একসময় ব্র্যান্ডের ক্যামেরার দিকে লোভাতুর তাকিয়ে থাকতাম 

সেলুলয়েড যুগে পাই পাই জমিয়ে কমদামী একটা কিনেছিলাম 

সেটাই কাল হয়েছিলো - তারপর থেকে ক্লিক ক্লিক এর নেশা  

সেলুলয়েড ফিল্ম এর যুগ আজ ইতিহাস, স্মৃতির ঘষা কাঁচ;   


এরপর এলো ডিজিটাল ক্যামেরার যুগ, মেগাপিক্সেল 

ব্র্যান্ড ছাড়া ছোট একটা কিনেছিলাম - ডিজিটাল ক্যামেরা  

তিল তিল চাকরির পয়সা জমিয়ে, শখ তো মিটলো! 

চাকরি করে আর ক টাকাই সঞ্চয় থাকে বলো! 


যুগে যুগে ক্যামেরায় মেগাপিক্সেল বাড়তে থাকে

এর ওর হাতে যখন দেখি প্রফেশনাল ক্যামেরা

আমার তখন ব্র্যান্ডছাড়া ডিজিটাল ক্যামেরা ভরসা   

আমার বড্ড মন কেমন কেমন করে - বোধহয় ঈর্ষা;  


পয়সা আর পয়সা জমিয়ে কি আর প্রফেশনাল ক্যামেরা হয়? 

টাকা জমানো শুরু, তারপর কোন এক সময় - ইচ্ছেতে কি না হয়? 

কষ্টের টাকায় শখ পূরণের আনন্দই আলাদা, প্রফেশনাল ক্লিক শুরু  

আজকাল সবাই দেখি মোবাইলেই ক্লিক ক্লিক - সবাই ছবির গুরু; 


অনেক দিন ধরেই আমি ঘরবন্দী, করোনায় ওলোটপালট জীবন

ক্যামেরাটাও আলমারিবন্দী অবহেলায়, ওরও মন কেমন কেমন  

মাঝে মধ্যে ঝেড়ে মুছে রাখি, মাঝে মধ্যে টুকটাক কথা বলি ওর সাথে  

বড্ড অভিমানিনী, আমার স্পর্শ পেলেই লুটিয়ে পড়ে হাতে;

 

ঘরবন্দী থাকতে থাকতে মনে কেমন যেন অলসতায় ধুলো জমেছে    

ধুলো জমেছে ক্যামেরার লেন্সগুলোতে, ধুলো জমেছে ইচ্ছেগুলোতে  

আজকাল প্রায়শই ক্যামেরা হাতছানি ডাকে - আয়, আয়, আয় 

শরতের সাজে প্রকৃতি সেজে যেন ডাকছে আমায় - তুই কোথায়? 


০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১

#কবিতা


শরতের ডাক 

 - যাযাবর জীবন 


অর্থে সম্পর্কের বিভেদ

ওরা এক মায়েরই সন্তান,  

দুই ভাই 

পিঠাপিঠি 

ছেলেবেলাটা একই রকম 

একই স্কুল একই কলেজ 

ইউনিভার্সিটিতে এসে দুজন দু ডিপার্টমেন্ট 

পড়ালেখা শেষে একজন চাকরি,  একজন ব্যবসায়

সময়ের চাকায় সময় গড়ায়

বিয়েশাদী,  সন্তান   

যার যার আলাদা সংসার 

চাকরিজীবীর কর্পোরেট চাকরি 

ধাপে ধাপে উন্নতি 

বেশ ওপরে উঠে যায়, জীবন খেলায়, 

যত ওপরে উঠে ততই চেহারায় জেল্লা ফোটে

কথা কয় টাকায়; 


ব্যবসায়ীর শুরুতেই কিছু কষ্ট, তারপর বেশ উন্নতি 

তারপর একটা সময় টাকার পাহাড়

তারপর হঠাৎ করেই ব্যবসায় ঘাটা 

ব্যবসা মানেই জোয়ার আর ভাটা 

একের পর এক ব্যবসা পরিবর্তন 

কপাল সবগুলোতেই ফাটা

বয়সের আগেই বড্ড বুড়িয়ে গেছে বেচারা ব্যবসায়ী ভাই টা; 


আজকাল খুব ক্বচিৎ কদাচিৎ দেখা হয় দুজনে

কোন বিশেষ পালা পার্বণে, 

দেখা হলেই চাকরিজীবী ভাই এর চোখে করুণা 

করুণার চোখ দেখে ব্যবসায়ী ভাই এর চোখে ফোটে বেদনা

চাকরিজীবী ভাই বোঝে না,

অথচ কোন একসময় এরা দুজন ভাই ছিলো

ছিলো গলায় গলায় ভাব

আজ একজন অসহায় চেয়ে থাকে আরেকজন ভাবসাবে বাপ; 


টাকা বড্ড আজব বস্তু 

বিভেদ বুঝিয়ে দেয় সম্পর্কে।


০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


অর্থে সম্পর্কের বিভেদ  

 - যাযাবর জীবন 


সমঝোতার বন্ধন

দাম্পত্য একটি বন্ধন

পবিত্র, 

যার যার ধর্মে কবুল পড়ে দুজন দুজনকে জীবনের সাথে জুড়ে নেয়া

সে প্রেমের বিয়েই হোক কিংবা পারিবারিক ভাবে জুড়ে দেয়াই হোক;


যদিও জন্ম মৃত্যু আর বিয়ে, মহান আল্লাহ্‌ তায়ালার পূর্ব নির্ধারিত!

তবুও কি জুড়ে নেয়ার আগে যাচার চেষ্টা করা হয় না?

হয়তো! 

যারা প্রেম করে! আর যারা প্রেমে পড়ে! 

- তারা কি পরস্পর না যেচেই পড়ে?

পারিবারিক ভাবে যাদের জুড়ে দেয়া হয়! 

 - তারা কি পরস্পর'কে যাচে না?

অল্প কিছু থাকে চাপিয়ে দেয়া; 


এত যাচাই বাছাই এর পরেও সব দাম্পত্য টেকে না

 - প্রেমের বিয়েতে প্রেম অল্প কিছুদিনের মধ্যেই কোথায় জানি উবে যায় 

 - জুড়ে দেয়া দাম্পত্যের আঠা কেন জানি আলগা হয়ে যায় 


ছোট্ট একটু ভুল বুঝাবুঝি থেকে দাম্পত্য ভাঙনে গড়ায় 

কিছু দাম্পত্য সন্তানের দিকে তাকিয়ে ঠুনকো কাঁচের মত টিকে তো রয়!

তাতে আসলে কি সন্তানের মঙ্গল হয়? 

বাবা মায়ের নিত্য লড়াই দেখতে দেখতে সন্তানগুলো কি স্বাভাবিক রয়?

নাকি অসহনীয় এক পরিবেশে এদের জীবন ছেয়ে যায় বিতৃষ্ণায়? 

তার থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া কি ভালো নয়!


কেউ বোঝে

সম্মানজনক-ভাবে আলাদা হওয়ার পথ খোঁজে,  

আর কেউ জোড় করে আঠার মত লেগে থাকে  

যে সকল দাম্পত্যগুলো গড়তে গড়তে ভেঙে গিয়েছিলো ঝুরঝুর কাঁচের মত; 


আর বাকি দাম্পত্যগুলো একেকটা একেক রকম

একটার সাথে আরেকটা মিলাতে যায় বোকারা

কোনটা দিনে হাঁড়িকুঁড়ি ঝনঝন করেও রাতে নিস্তব্ধ হয়ে যায় খাটে

আর কোনটা হাসি গল্পে মেতে হাতে হাত রেখে;


দাম্পত্য সমঝোতার বন্ধন 

জোড় করে আঠা লাগিয়ে রাখার বস্তু নয়। 


০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


সমঝোতার বন্ধন 

 - যাযাবর জীবন 


  


 

ঢেকে রাখা দুঃখগুলো

দুঃখগুলো একদম নিজস্ব, ঢেকে রাখতে হয় 

মানুষকে দেখে ফেললেই বিপদ

প্রথমে আহা উঁহুর বন্যা 

কিছুদিন পর ওখানেও একটু একটু টোকা

কোন একদিন আশ্চর্য হয়ে দেখবে কেউ কেউ ওখানে দিয়েছে খোঁচা 

তারপর পালা পার্বণে সুযোগে নানাজন দিচ্ছে লবণের ছিটা

ভালো লাগবে?


তার থেকে দুঃখগুলো থাকুক না একদম আমার নিজের মনে ঢাকা  

মাঝে মধ্যে না হয় খুব বৃষ্টি হলে চোখ ভাসাবো কেঁদে

বৃষ্টির সাথে চোখের জল মিশে গেলে কান্না বুঝবে কে?

কিংবা যখন একা থাকব, অথবা গভীর রাতে নির্জনে

যখন আশেপাশে কেউ থাকবে না তখন

একা একা অন্ধকার হবে দুঃখগুলোকে ভেবে;


মানুষ আমার দুঃখগুলো জেনে কি করবে? 

তোমার নুন ছিটা খেতে ইচ্ছে করলে ঢোল পিটাও, 

আমি বেশ ভালো আছি এই একা 

আমার দুঃখগুলো সব মনের চাদরে রাখা আছে ঢাকা।


 

০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


ঢেকে রাখা দুঃখগুলো 

 - যাযাবর জীবন 



   

নানা রকম দাম্পত্য

এক এক দাম্পত্য এক এক রকম

এক এক দাম্পত্যের পরিণাম এক এক রকম;


দাম্পত্য দুটি মানুষের বন্ধন

একসাথে পথচলা 

একসাথে ঘরবাঁধা 

একসাথে বসবাস

একসাথে হাতে হাত ধরে জীবন  যাপন;


একসাথে কি সবাই হাতে হাত ধরে জীবন যাপন করতে পারে?

তাহলে দাম্পত্যে বিচ্ছেদ হবে কেন?


কিছু দম্পতি একসাথে পথ চলা তো শুরু করে, 

কতদূর যেতে পারে? 

কিছু দাম্পত্য পথের শুরুতেই পথ শেষ করে দেয়

কিছু দাম্পত্য কিছুদূর একসাথে এগোয় তারপর হাত ছেড়ে দেয়

কিছু দাম্পত্য বহুদূর একসাথে চলার পর খুব আশ্চর্যজনক ভাবে বিচ্ছেদে গড়ায়

কিছু দাম্পত্যের বিচ্ছেদ হয় মৃত্যুতে;


দম্পতিরা বেশীরভাগই ঘর বাঁধে

কেউ অল্প সময়ের জন্য

কেউ অনেকটা সময় পারি দেয় 

কেউ আমৃত্যু একসাথে রয়ে যায়,

আর অল্প কিছু দাম্পত্য রয়ে যায় শুধুই কাগজে কলমে

এদের শুরুও কাগজে কলমে, সমাপ্তিও কাগজে কলমে

একসাথে ঘর আর বাঁধা হয় নি এদের জীবনে;


আচ্ছা! এই যারা আমৃত্যু একসাথে রয়ে যায়

এরা কি সবসময় সুখী হয়?

এদের মধ্যেও তো কত দাম্পত্য কলহ!

কত কত মান অভিমান, কত কত বিরহ! 


ঐ যে ওদের দেখ!

ওরা কিন্তু দম্পতি, 

একসাথে এক ছাদের নীচে আমৃত্যু বসবাস করেও 

এরা পরস্পর কথা বলে না, কথার আদান প্রদান সন্তানের মাধ্যমে 

কিছু দম্পতি তো বছরের পর বছর একদম কথা না বলেই কাটিয়ে দেয়

কিছু দম্পতি এক ছাদের নীচে তো রয়, তবুও রাতে এদের বিছানা আলাদা হয়,  

এরা একসাথে কেন থাকে?

কেউ কেউ বাধ্য হয়ে, কেউ লোকলজ্জার ভয়ে

কেউ সন্তানের দিকে তাকিয়ে, বাকিরা কোন না কোন কারণে;  


আর ঐ যে ওদিকে চেয়ে দেখ!

ওরাও দম্পতি, 

দু'জনই সারাদিন বাইরে কঠোর পরিশ্রমে কাটায়, জীবিকা নির্বাহে 

সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে সন্তানের ফাই ফরমাস, রান্না বান্না, এটা সেটা 

তারপরেও রাতে পরস্পরের হাতে হাত না রাখলে এদের ঘুম আসে না; 


কত রকম মানুষই না আছে আমাদের মাঝে!

আছে কতরকমের দম্পতি

আছে কত রকমের দাম্পত্য,

একটির সাথে আরেকটির কোনরকম মিলই খুঁজে পাওয়া যায় না। 



০২ সেপ্টেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


নানা রকম দাম্পত্য 

 - যাযাবর জীবন 



  

খাদ্য ও ক্ষুধা

খেতে কে না পছন্দ করে!

সবাই কি আর খেতে পারে?


কারো পেটে প্রচণ্ড ক্ষুধা থাকে 

খুব মাঝে মধ্যেই খাদ্য জোটে

সেটা খাদ্যের অভাবে কিংবা অর্থের, 


কারো পেটে ক্ষুধা থাকে, মনে খাওয়ার বাসনা   

খাবারও সামনে থাকে, তবুও খেতে পারে না 

অরুচি কিংবা অন্য কোন অসুখের কারণে,


কারো পেটে ক্ষুধা থাকে, ক্ষুধা থাকে মনে  

অর্থেরও কোন অভাব নেই খাবার কেনার জন্য 

রুচির অভাব নেই মুখে, দেদার খেতে পারে    

অসুখও নেই কোন যে খেতে বাঁধা আছে

তবুও এরা খেতে পারে না, কৃপণতার জন্য 

এরা শুধু টাকা চেনে, টাকা জমায় আর টাকা গুনে,  


কত রকম মানুষই না আছে পৃথিবীতে! 

 আছে কত রকমই না ক্ষুধা!  


০১ সেপ্টেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


খাদ্য ও ক্ষুধা 

 - যাযাবর জীবন 

দোষের পাঁচ

দোষ 

সবাই করে 

একটা মানবিক  ত্রুটি 

কখনো ভুলে হতেই পারে  

আমার করায় কোন দোষ নেই  

অন্যে করলেই দোষ দেখি 

পরের পিছন শুঁকতে 

ভালো লাগে

ছিদ্রাহ্নেষী 



পরনিন্দা 

কারো অনুপস্থিতিতে 

আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে 

ভাইয়ের মাংস খাওয়া বলে 

অথচ আমরা নিত্যই খাই চিবিয়ে 

এটা চরম খারাপ জেনেশুনে 

তবুই করেই যাচ্ছি 

আসলে স্বভাবে 

গীবত 



রিপু 

আমার আছে  

মানুষ মাত্রেই থাকে  

কারো বেশি কারো কম   

এত বাছবিচার করে চলা যায়!  

আমার দিকে তাকাও কেন? 

অন্যে করলে দোষ 

আয়নায় দেখি 

লোভাতুর   


লোভ 

কার নেই? 

অর্থ অনর্থের মূল  

আমি ধোয়া তুলসী পাতা? 

টাকা দেখলে এক হাত জিহ্বা  

আলজিহ্বাও বের হয়ে যায় 

আর চকচকে চোখ 

ঢাকব কিভাবে? 

লোভী 



স্বার্থ 

শুনতে খারাপ

সম্পর্ক নাড়িয়ে দেয় 

সকল ঝগড়া ফ্যাসাদের মূল  

অর্থ সম্পত্তি সম্পর্ক থেকে দামী

স্বার্থে সম্পর্ক ছিন্ন হয়  

তবুও স্বার্থের জয়    

সম্পর্কের নয়  

স্বার্থপর  


৩১ আগস্ট, ২০২১


#কবিতা 


দোষের পাঁচ 

 - যাযাবর জীবন 







 

জুড়ে দেয়া পারিবারিক সম্পর্কগুলো

জুড়ে দেয়া সম্পর্কগুলো কেমন যেন বড্ড অন্যরকম

হ্যাঁ, বিবাহ সূত্রে জুড়ে দেয়া পারিবারিক সম্পর্কগুলো, 

ওগুলো কখনো হাসায়, কখনো কাঁদায়

কখনো অবোধ্য, কখনো বড্ড ভাবায়; 


এই ধর যেমন, শাশুড়ি আর বৌ এর সম্পর্ক, 

শাশুড়ি কেন জানি কখনোই মা হতে পারে না 

মেয়ে হতে পারে না কেন জানি বৌগুলো,  

অথচ কি নির্বিকারেই না ছেলে বনে যায় মেয়ের স্বামীটা  

কি সহজেই না মা হয়ে যায় ছেলেগুলোর শাশুড়ি

বৌগুলো পারে না কেন? কেন পারে না বৌ এর শাশুড়ি? 


জায়ে জায়ে গলায় গলায় মিল দেখেছ তোমরা? আমি দেখি নি

অথচ ভায়রা আর ভায়রা কি সহজেই না বন্ধু বনে যায়! 

মা আর ছেলেতে কোথায় জানি একটা অন্যরকম মিল থাকে 

অথচ ছেলের ঘরে বৌ আসলেই মা বনে যায় পুরোদস্তর শাশুড়ি 

তখন কেন জানি ছেলে থেকে বেশি আপন হয়ে যায় মেয়ের স্বামী, 

অন্যরকম আলাদা একটা মিল থাকে বাবা আর মেয়েতে 

শ্বশুর আর মেয়ে জামাই এর খুব একটা গলায় গলায় ভাব না হলেও

ওদের মাঝে খুব একটা খারাপ সম্পর্ক সচরাচর দেখা যায় না,

আমি পারিবারিক এ সমস্যাগুলো একদমই বুঝতে পারি না 

অথচ প্রতিনিয়ত চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি একই ঘটনা; 


তুমি, আমি, তোমরা, আমরা চোখের সামনে জুড়ে দেয়া এই সম্পর্কগুলো দেখছি

জুড়ে দেয়া সম্পর্কগুলোর ভেতরের ফাঁকগুলো বড্ড চোখে লাগে, মনে বাজে  

এ ফাঁপা সম্পর্কগুলোতে নিজেকে না জুড়ে নেয়া যায়! না বিচ্ছিন্ন করা যায়!  

প্রায় সংসারেই ভুক্তভোগী ছেলেগুলোকে এ সম্পর্কগুলো সময় সময় কাঁদায়। 


২৯ আগস্ট, ২০২১


#কবিতা 


জুড়ে দেয়া পারিবারিক সম্পর্কগুলো  

 - যাযাবর জীবন 



  

লবণের ছিটা

লবণ ছিটাতে আমাদের জুড়ি মেলা ভার 

কোথাও লাগুক আর নাই বা লাগুক

একটু লবণের ছিটা তো দিবেই!  

আরে না, না! তরকারিতে না; লবণের ছিটা দেবে মনেতে   

মাঝে মধ্যে আমিও ছিটাই, তুমি ছিটাও না? 

কারো ক্ষতে লবণ ছিটিয়ে দেখই না 

এর থেকে মজা! অন্য কিছুতেই পাবে না; 


সব মানুষই মনে হয় লবণ ছিটায়

কেও একটু কম কেউ বা বেশি,  

কোথাও একটু ক্ষত দেখলেই হলো 

ওখানে মলম লাগাবে না রে! লবণ ছিটাবে 

এক চিমটি হলেও একটু ছিটা দিবেই দিবে 

গায়ে সান্ত্বনার হাত বুলোতে বুলোতেই লবণ ছিটাবে,

লবণ ছিটানোতে ওরা অন্যরকম একটা আনন্দ পায়; 


আমি আজকাল খুব যত্ন করে ক্ষতগুলো ঢেকে-ঢুকে রাখি

তবুও সব ক্ষত কি আর ঢাকা যায়!

কোথাও যদি দেখা যায় ক্ষতের একটু উঁকি!

ওমনি কাছের মানুষগুলো এক চিমটি লবণের ছিটা দিয়ে যায়

হ্যাঁ, কাছের মানুষগুলোই সবচেয়ে বেশি লবণ ছিটায় 

গায়ে মাথায় সান্ত্বনার হাত বুলাতে বুলোতে,

খবরদার ক্ষত দেখিও না কিন্তু, কাছের মানুষগুলো'কে।  


২৭ আগস্ট, ২০২১


#কবিতা 


লবণের ছিটা 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





ঘর বাড়ি

সবাই তো বাড়ি ফিরে, ঘরে কি ফিরে? 

বাড়ি মানেই ইট কাঠ দালান কোঠা, 

ওগুলোতে অনুভূতি কোথায়? 

বাড়ি কি অপেক্ষায় থাকে? 


আমরা ঘরে ফিরতে চাই, 

যেখানে খুব মমতায় মা জিজ্ঞাসা করবে, কেমন ছিলি রে খোকা? 

যেখানে বাবা বলবে, সারাদিন ক্লান্ত হয়ে এসেছিস, যা আগে হাত মুখ ধুয়ে নে

স্ত্রী হয়তো বাবা-মায়ের সামনে কিছু বলবে না, তবে বেডরুমে একা পেলেই একটু জড়িয়ে ধরবে

জড়িয়ে ধরাটাই অনেক কথা বলে দেয়, সব কি আর মুখে বলতে হয়?

ছেলেমেয়েগুলো বাবা এসেছে বলে ছুটে আসবে, জড়িয়ে ধরবে; 

এই যে কাছের মানুষগুলোর এত এত ভালোলাগার অনুভূতির বহর! 

এদের নিয়েই তো ঘর; 


কারো কারো ঘরে ফেরার তাড়া থাকে 

ওখানে প্রিয়জনরা অপেক্ষায় আছে, 

কেউ কেউ বাড়ি ফিরতে ভয় পায়

ওখানে ইট কাঠ দালান কোঠা হো হো হাসে; 


ঘরে ফেরা মানেই আনন্দ,   

বাড়ি ফেরা সহজ নয়। 


২৫ আগস্ট, ২০২১


#কবিতা 


ঘর বাড়ি 

 - যাযাবর জীবন 


অসাধারণ তো কত কিছুই হতে পারে!

একটা ছেলে আর একটা মেয়ের জীবনের দিকে তাকাও! 

কোনা পার্থক্য দেখতে পাচ্ছ? 

কোন মিল? 

আমি তো দেখতে পাচ্ছি শুধুই অমিল,

ভুল হচ্ছে না তো আমার? 

বয়স হলে চোখ কত ভুলই তো দেখে, মন ভুল ভাবে,

আমি যা দেখছি সেটুকু একটু বলি! 

ভুলগুলো ধরিয়ে দিও;  

 

একটা ছেলে আর একটা মেয়ের জীবন 

ওগুলোকে একটু দেখার চেষ্টা করি জীবনের ধাপে ধাপে,   

দুজনার জীবনেই শৈশব থাকে, কৈশোর থাকে 

দুজনার জীবনেই যৌবন আসে, আসে প্রৌঢ়ত্ব, আসে বার্ধক্য 

এক এক জীবনকে না হয় ভেবে নেই এক একটা অধ্যায়! 

জীবনের অধ্যায়;

 

শৈশবটা দুজনারই অনেকটা একই রকম কাটে

খেলা খেলায়, আদরে আদরে

যেই না কৈশোরের আগমন ঘটলো! চোখের পলকে অধ্যায় বদলায়, 

ছেলেগুলোর কৈশোর কাটে খেলা খেলায়

পড়াশুনাটা ঠিকঠাক করলে আর তেমন বিধিনিষেধ কোথায়? 

অথচ মেয়েগুলো আটকে যায় বিধিনিষেধের বেড়াজালে 

এটা করো না, ওটা করো না, এখানে যেও না, সেখানে যেও না, একা যেও না 

ওভাবে কাপড় পড়তে হয় না, শরীরটা ঢেকে রাখো, ওড়নাটা ঠিক করো 

পড়াশুনার পাশাপাশি প্রতিটা মা'ই তার মেয়ে'কে, মেয়ে হওয়া শেখায়; 


যৌবন? 

ছেলেগুলোর খেলাধুলো অব্যাহত থাকে 

পড়াশুনায় ঠিক থাকলে ওদের একটু আধটু প্রেম গুরুজনের চোখে দুষ্টুমি,

মেয়েরা প্রেম করলেই তাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে

এ মেয়েকে ঘরে রাখাই দায়! লেগে যায় বিয়ের জোগাড়ে

আর কৈশোরে প্রেম? ও তো মহাপাপ! 

প্রেমের ভুত ভাগে গুরুজনের মারে,

আর প্রেমে যদি বাঁধা দিতে না পারে তবেই বিপত্তি 

সে কৈশোরেই হোক কিংবা যৌবনেই

বিয়ে দিয়ে হাঁপ ছাড়ে মা-বাপ,

আরে মেয়েদের আবার মন আছে না কি? 

মা গুলোও ওসময় কেন যেন ভুলে যান  

কোন একদিন ওনারাও কিশোরী ছিলেন, ছিলেন যুবতী, 

প্রচণ্ড সাহসী না হলে আসলে মেয়েদের প্রেমের হয় না কোন গতি;   


বৈবাহিক জীবন! 

সাধারণত ছেলেরা একটু দেরী করেই এ জীবনে ঢুকে

সাধারণ হিসাবে পড়ালেখার পর চাকরি বাকরি, আয় রোজগার

নিজের পায়ে দাঁড়ানো, তারপর বিবাহ

আর যদি প্রেম করে তবে কত কিছুই তো ঘটে যেতে দেখি!

আপাতত সে না হয় বাদ'ই দিলেম;

মেয়েরা খুব সহসাই এ জীবনে ঢুকে পড়ে

বেশীরভাগ প্রথম যৌবনে, বাবা-মা যেভাবে চান

আর অল্প কিছু কৈশোরে, সাহসী প্রেমের টান;


সংসার! 

ছেলেদের ক্ষেত্রে সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা শেষে কাঁধে টিফিন বক্স ঝুলিয়ে অফিস যাওয়া

সন্ধ্যেয় হেলতে দুলতে অফিস থেকে বাড়ি ফিরে একপেট নাস্তা 

রাতের খাবার শেষে বিছানায় যেতে না যেতে উথলে ওঠা প্রেমে বৌ'কে কাছে পাওয়ার বাসনা

রমণ শেষে নাক ডেকে ঘুম, সকালে অফিসের প্রস্তুতি শেষে নাস্তার টেবিল, 

সাপ্তাহিক ছুটি ছাটায় সাপ্তাহিক বাজার করে বন্ধু বান্ধবের সাথে আড্ডা

মাসে একবার শ্বশুর বাড়িতে মধুর হাঁড়িতে নাক ডোবানো

বছরে এক আধবার বৌ'কে নিয়ে কোথাও বেড়ানো    

দৈনন্দিন এ সকল জীবন যাপন সাধারণত একই ছকে বাঁধা

সেই সকাল থেকে সন্ধ্যা! চাকরি করে পয়সা কামানো, চাট্টিখানি কথা?

কি কষ্টই না করে ছেলেগুলা! সাধারণ হিসেবে 

অসাধারণ তো অনেক কিছুই হতে পারে! আমরা সেদিকে নাই বা গেলাম; 

 

মেয়েদের ক্ষেত্রেই কোথায় বা তেমন আর পার্থক্য! 

না হয় একটু কাকভোরেই ঘুম থেকে উঠেতে হয় 

দুহাতে সবার নাস্তা আয়োজন আর একই সাথে স্বামীর অফিসের টিফিনের ব্যবস্থা 

স্বামী অফিসে যেতে না যেতে দুপুরের হেঁশেল ঠেলা 

বিকেলের নাস্তার আয়োজন শেষ হতে না হতে রাতের খাবারের ব্যবস্থা  

ও হ্যাঁ! প্রতিবেলা খাবারের পরে হাঁড়িকুঁড়ি বাসনকোসন ধোয়ার কাজটা তো বলাই হলো না 

বলা হলো না, খাবারের আয়োজন করতে গিয়ে কুটা-বাছার আয়োজনের কথা 

বলা হলো না, নিজের কাপড়চোপড় এর সাথে সাথে স্বামীর কাপড় চোপর ধোয়ার কথা

বলা হলো না, ঘর পরিষ্কার ঝাড়ু পোঁছা, মশারি বিছানা রাতে পাতা ও সকালে তোলা 

রাতের খাবার শেষে তাড়াতাড়ি হাত চালাতে হচ্ছে, কত কাজ জমে আছে! 

বেচারা স্বামীটা একটু শারীরিক আদরের জন্য কাতর হয়ে আছে

ছুটি ছাটার দিনে একটু মাথা গা হাত পা টিপে দিলে কি খুশিই না হয় বেচারা, 

আর যদি ভুলে একান্নবর্তী পরিবার হয়! সেটা হিসেবের একদম বাইরেই রাখি 

বিনি পয়সার এমন ঝি, কোথাও খুঁজে পাবে নাকি? সাধারণ হিসেবে 

অসাধারণ তো কত কিছুই হতে পারে! আমরা সেদিকে নাই বা গেলাম; 


প্রৌঢ়ত্বে ছেলেদের অবসর জীবন

সারাজীবন অনেক কাজ করা হয়েছে, করেছে কষ্টকর উপার্জন 

এবার বসে খাবার দিন,

ঘরে কন্যা সন্তান থাকলে তো কথাই নেই 

বাবার জন্য কিছু করতে মেয়েগুলোর কখনো না নেই

ছেলেটা যদিও একটু বোহেমিয়ান, তবুও বাবা অন্ত প্রাণ 

আর স্ত্রী তো সেই বিয়ের পর থেকেই সেবাদাসী, চাহিবা মাত্র সব হাজির, 

ভালোই কেটে যায় অবসর জীবন, সাধারণ হিসেবে 

অসাধারণ তো কত কিছুই হতে পারে! আমরা সেদিকে নাই বা গেলাম; 

 

মেয়েদের আবার প্রৌঢ়ত্ব কি? অবসর জীবনই বা কি?  

কি এমন ঘোড়ার ডিমের কাজটা করে উল্টে ফেলে তারা? 

ঐ তো একটু হেঁসেল সামলানো! বাচ্চাকাচ্চাগুলো মানুষ করা

স্বামী সেবা, বাজার সদাই রান্না বান্না

ঘরদোর একটু পয় পরিষ্কার করে গুছিয়ে রাখা 

সেই একই রুটিন তো বিয়ের পর থেকে করেই আসছে

তার আবার কষ্টটা কি? 

আরে অবসর মানেই বাত ব্যামো, এটা ওটা সেটা

যতদিন কাজে ততদিনই সুস্থ জীবন

যা করছে করুক না! এটাই সাধারণ হিসেব 

অসাধারণ তো কত কিছুই হতে পারে! আমরা সেদিকে নাই বা গেলাম;    


বৃদ্ধ বয়সের আবার নারী আর পুরুষ কি? 

সন্তানরা চাইলে ভালো থাকা, না চাইলে গলগ্রহ হয়ে মৃত্যুর অপেক্ষা

সে নারীই হোক কিংবা পুরুষ, সাধারণ হিসেবে

অসাধারণ তো কত কিছুই হতে পারে! 


আমি সাধারণ মানুষ, সাধারণ হিসেবেই দেখি!  

আমি যেভাবে দেখছি, ভুল হলো কি?

কি জানি! হয়তো হতেও পারে

যুগ বদলে গিয়েছে, বদলেছে মানুষ

বদলে গিয়েছে আমাদের মানসিকতা,

হয়তো আমারই চোখের ভুল, কিংবা মনের। 


২৪ আগস্ট, ২০২১


#কবিতা 


অসাধারণ তো কত কিছুই হতে পারে!

 - যাযাবর জীবন 





এলো চুলে এলোমেলো ভাবনা

সেদিন স্নান শেষে তুই ভিজে চুল আঁচড়াচ্ছিলি, 

তোর চুলের ফাঁকে চিরুনিটা হারাতে দেখেই পুরনো কথা মনে পড়ে গেলো 

একদিন আমিও হারিয়ে গিয়েছিলাম তোর মনের বাঁকে, সবটুকু প্রেম নিয়ে 

এতই সহজ নারীর মনে ডুব দেয়া? একবার ডুবলে ভাসতে পেরেছিলো কে কবে?    


চিরুনির আঁচরে তুই চুলের জট খুলছিলি 

আমি খুলতে চেষ্টা করছিলাম মনের জটগুলো 

মেয়েরা চুলের জট ছাড়াতে পারে খুব সহজেই

মনের জট কি খোলা যায় রে? তুই পেরেছিস?  


মনে আছে! ভালোবাসার সেই প্রথম দিনগুলোতে 

আমি নাক ডুবিয়ে থাকতাম তোর চুলের গভীরে

তোর গায়ের সোঁদা গন্ধ আজো মাতাল করে আমায় 

প্রতিটা গায়েরই আলাদা গন্ধ থাকে, শুধু দম্পতি চেনে; 


এই যে চুলে বেণির পাক দিয়ে ঘুমুতে এলি!

ভালোবাসার প্যাঁচে প্যাঁচে মনটাকে সেই কবেই বেণি করেছিলি 

মাঝে মাঝে তোর এলোমেলো খোলা চুল আমার বুকের ওপর অগোছালো পড়ে থাকে    

এলোমেলো চুলের এলোমেলো গন্ধে এলোমেলো হই আমি, দাম্পত্যে কি এমনই?


    

২৩ আগস্ট, ২০২১


#কবিতা 


এলো চুলে এলোমেলো ভাবনা 

 - যাযাবর জীবন