মঙ্গলবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

অসাধারণ তো কত কিছুই হতে পারে!

একটা ছেলে আর একটা মেয়ের জীবনের দিকে তাকাও! 

কোনা পার্থক্য দেখতে পাচ্ছ? 

কোন মিল? 

আমি তো দেখতে পাচ্ছি শুধুই অমিল,

ভুল হচ্ছে না তো আমার? 

বয়স হলে চোখ কত ভুলই তো দেখে, মন ভুল ভাবে,

আমি যা দেখছি সেটুকু একটু বলি! 

ভুলগুলো ধরিয়ে দিও;  

 

একটা ছেলে আর একটা মেয়ের জীবন 

ওগুলোকে একটু দেখার চেষ্টা করি জীবনের ধাপে ধাপে,   

দুজনার জীবনেই শৈশব থাকে, কৈশোর থাকে 

দুজনার জীবনেই যৌবন আসে, আসে প্রৌঢ়ত্ব, আসে বার্ধক্য 

এক এক জীবনকে না হয় ভেবে নেই এক একটা অধ্যায়! 

জীবনের অধ্যায়;

 

শৈশবটা দুজনারই অনেকটা একই রকম কাটে

খেলা খেলায়, আদরে আদরে

যেই না কৈশোরের আগমন ঘটলো! চোখের পলকে অধ্যায় বদলায়, 

ছেলেগুলোর কৈশোর কাটে খেলা খেলায়

পড়াশুনাটা ঠিকঠাক করলে আর তেমন বিধিনিষেধ কোথায়? 

অথচ মেয়েগুলো আটকে যায় বিধিনিষেধের বেড়াজালে 

এটা করো না, ওটা করো না, এখানে যেও না, সেখানে যেও না, একা যেও না 

ওভাবে কাপড় পড়তে হয় না, শরীরটা ঢেকে রাখো, ওড়নাটা ঠিক করো 

পড়াশুনার পাশাপাশি প্রতিটা মা'ই তার মেয়ে'কে, মেয়ে হওয়া শেখায়; 


যৌবন? 

ছেলেগুলোর খেলাধুলো অব্যাহত থাকে 

পড়াশুনায় ঠিক থাকলে ওদের একটু আধটু প্রেম গুরুজনের চোখে দুষ্টুমি,

মেয়েরা প্রেম করলেই তাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে

এ মেয়েকে ঘরে রাখাই দায়! লেগে যায় বিয়ের জোগাড়ে

আর কৈশোরে প্রেম? ও তো মহাপাপ! 

প্রেমের ভুত ভাগে গুরুজনের মারে,

আর প্রেমে যদি বাঁধা দিতে না পারে তবেই বিপত্তি 

সে কৈশোরেই হোক কিংবা যৌবনেই

বিয়ে দিয়ে হাঁপ ছাড়ে মা-বাপ,

আরে মেয়েদের আবার মন আছে না কি? 

মা গুলোও ওসময় কেন যেন ভুলে যান  

কোন একদিন ওনারাও কিশোরী ছিলেন, ছিলেন যুবতী, 

প্রচণ্ড সাহসী না হলে আসলে মেয়েদের প্রেমের হয় না কোন গতি;   


বৈবাহিক জীবন! 

সাধারণত ছেলেরা একটু দেরী করেই এ জীবনে ঢুকে

সাধারণ হিসাবে পড়ালেখার পর চাকরি বাকরি, আয় রোজগার

নিজের পায়ে দাঁড়ানো, তারপর বিবাহ

আর যদি প্রেম করে তবে কত কিছুই তো ঘটে যেতে দেখি!

আপাতত সে না হয় বাদ'ই দিলেম;

মেয়েরা খুব সহসাই এ জীবনে ঢুকে পড়ে

বেশীরভাগ প্রথম যৌবনে, বাবা-মা যেভাবে চান

আর অল্প কিছু কৈশোরে, সাহসী প্রেমের টান;


সংসার! 

ছেলেদের ক্ষেত্রে সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা শেষে কাঁধে টিফিন বক্স ঝুলিয়ে অফিস যাওয়া

সন্ধ্যেয় হেলতে দুলতে অফিস থেকে বাড়ি ফিরে একপেট নাস্তা 

রাতের খাবার শেষে বিছানায় যেতে না যেতে উথলে ওঠা প্রেমে বৌ'কে কাছে পাওয়ার বাসনা

রমণ শেষে নাক ডেকে ঘুম, সকালে অফিসের প্রস্তুতি শেষে নাস্তার টেবিল, 

সাপ্তাহিক ছুটি ছাটায় সাপ্তাহিক বাজার করে বন্ধু বান্ধবের সাথে আড্ডা

মাসে একবার শ্বশুর বাড়িতে মধুর হাঁড়িতে নাক ডোবানো

বছরে এক আধবার বৌ'কে নিয়ে কোথাও বেড়ানো    

দৈনন্দিন এ সকল জীবন যাপন সাধারণত একই ছকে বাঁধা

সেই সকাল থেকে সন্ধ্যা! চাকরি করে পয়সা কামানো, চাট্টিখানি কথা?

কি কষ্টই না করে ছেলেগুলা! সাধারণ হিসেবে 

অসাধারণ তো অনেক কিছুই হতে পারে! আমরা সেদিকে নাই বা গেলাম; 

 

মেয়েদের ক্ষেত্রেই কোথায় বা তেমন আর পার্থক্য! 

না হয় একটু কাকভোরেই ঘুম থেকে উঠেতে হয় 

দুহাতে সবার নাস্তা আয়োজন আর একই সাথে স্বামীর অফিসের টিফিনের ব্যবস্থা 

স্বামী অফিসে যেতে না যেতে দুপুরের হেঁশেল ঠেলা 

বিকেলের নাস্তার আয়োজন শেষ হতে না হতে রাতের খাবারের ব্যবস্থা  

ও হ্যাঁ! প্রতিবেলা খাবারের পরে হাঁড়িকুঁড়ি বাসনকোসন ধোয়ার কাজটা তো বলাই হলো না 

বলা হলো না, খাবারের আয়োজন করতে গিয়ে কুটা-বাছার আয়োজনের কথা 

বলা হলো না, নিজের কাপড়চোপড় এর সাথে সাথে স্বামীর কাপড় চোপর ধোয়ার কথা

বলা হলো না, ঘর পরিষ্কার ঝাড়ু পোঁছা, মশারি বিছানা রাতে পাতা ও সকালে তোলা 

রাতের খাবার শেষে তাড়াতাড়ি হাত চালাতে হচ্ছে, কত কাজ জমে আছে! 

বেচারা স্বামীটা একটু শারীরিক আদরের জন্য কাতর হয়ে আছে

ছুটি ছাটার দিনে একটু মাথা গা হাত পা টিপে দিলে কি খুশিই না হয় বেচারা, 

আর যদি ভুলে একান্নবর্তী পরিবার হয়! সেটা হিসেবের একদম বাইরেই রাখি 

বিনি পয়সার এমন ঝি, কোথাও খুঁজে পাবে নাকি? সাধারণ হিসেবে 

অসাধারণ তো কত কিছুই হতে পারে! আমরা সেদিকে নাই বা গেলাম; 


প্রৌঢ়ত্বে ছেলেদের অবসর জীবন

সারাজীবন অনেক কাজ করা হয়েছে, করেছে কষ্টকর উপার্জন 

এবার বসে খাবার দিন,

ঘরে কন্যা সন্তান থাকলে তো কথাই নেই 

বাবার জন্য কিছু করতে মেয়েগুলোর কখনো না নেই

ছেলেটা যদিও একটু বোহেমিয়ান, তবুও বাবা অন্ত প্রাণ 

আর স্ত্রী তো সেই বিয়ের পর থেকেই সেবাদাসী, চাহিবা মাত্র সব হাজির, 

ভালোই কেটে যায় অবসর জীবন, সাধারণ হিসেবে 

অসাধারণ তো কত কিছুই হতে পারে! আমরা সেদিকে নাই বা গেলাম; 

 

মেয়েদের আবার প্রৌঢ়ত্ব কি? অবসর জীবনই বা কি?  

কি এমন ঘোড়ার ডিমের কাজটা করে উল্টে ফেলে তারা? 

ঐ তো একটু হেঁসেল সামলানো! বাচ্চাকাচ্চাগুলো মানুষ করা

স্বামী সেবা, বাজার সদাই রান্না বান্না

ঘরদোর একটু পয় পরিষ্কার করে গুছিয়ে রাখা 

সেই একই রুটিন তো বিয়ের পর থেকে করেই আসছে

তার আবার কষ্টটা কি? 

আরে অবসর মানেই বাত ব্যামো, এটা ওটা সেটা

যতদিন কাজে ততদিনই সুস্থ জীবন

যা করছে করুক না! এটাই সাধারণ হিসেব 

অসাধারণ তো কত কিছুই হতে পারে! আমরা সেদিকে নাই বা গেলাম;    


বৃদ্ধ বয়সের আবার নারী আর পুরুষ কি? 

সন্তানরা চাইলে ভালো থাকা, না চাইলে গলগ্রহ হয়ে মৃত্যুর অপেক্ষা

সে নারীই হোক কিংবা পুরুষ, সাধারণ হিসেবে

অসাধারণ তো কত কিছুই হতে পারে! 


আমি সাধারণ মানুষ, সাধারণ হিসেবেই দেখি!  

আমি যেভাবে দেখছি, ভুল হলো কি?

কি জানি! হয়তো হতেও পারে

যুগ বদলে গিয়েছে, বদলেছে মানুষ

বদলে গিয়েছে আমাদের মানসিকতা,

হয়তো আমারই চোখের ভুল, কিংবা মনের। 


২৪ আগস্ট, ২০২১


#কবিতা 


অসাধারণ তো কত কিছুই হতে পারে!

 - যাযাবর জীবন 





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন