শনিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৮

একাকীত্বের দীর্ঘশ্বাস



একাকীত্বের দীর্ঘশ্বাস
- যাযাবর জীবন


একদিন সময় চলে যাবার
কে আর থাকে বল?
একে একে সবাই চলেই যায়;

একদিন সময় হাপুস কাঁদার
চোখের পানি সবার
মানুষ চলে যাবার;

কারো চলে যাওয়ায় থমকে থাকে না পৃথিবী
কারো চলে যাওয়ায় সময় থমকায় না রে বাপু,
বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন, খুব প্রিয়জন
হয়তো অল্পসময়ের একটু দুঃখ বোধ
একটু মন খারাপ
একটু চোখের পানি
তারপর আবার যথারীতি দশ ইন্দ্রিয়, ষড়রিপু;

বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে রক্তের সম্পর্ক
সবচেয়ে আপন জন
তাঁদেরও কিন্তু একসময় শোক সয়ে যায়
সময় ধারায়;

শুধু একজন
রক্তের সম্পর্ক বিহীন একজন আছে,
যার দীর্ঘশ্বাস প্রতি রাতে
সারাজীবন রয়ে যায়;
স্বামীর জন্য স্ত্রীর
স্ত্রীর জন্য স্বামীর
যখন পাড়ি দেয়া হয়ে গেছে ভালোবাসাবাসি দাম্পত্যের
এক, দুই বা তিন দশক
এক, দুই বা তিন যুগ অধ্যায়;

আর যেখানে দাম্পত্য বিষময়
সেখানে মৃত্যুতে কার কি আসে যায়?

একজন ওপার দেশে চলে গেলে
সঙ্গী কিংবা সঙ্গিনী
ঘুমের মাঝেও হাত বাড়িয়ে খুঁজে
যুগ যুগের নির্ভরতার একটি হাত
যেখানে দাম্পত্য ভালোবাসার,
আর রাত কাটে একাকীত্বে অসহায়;

এক জনের চলে যাওয়া আরেকজনের একাকীত্বের দীর্ঘশ্বাস
প্রতিদিন প্রতিরাত সারাবছর বারোমাস
বিছানায় একলা হাত
প্রতি রাত, প্রতিরাত
আর একাকীত্বের অনুভব সারাজীবন বয়ে যায়।










চিরঘুমে



চিরঘুমে
- যাযাবর জীবন


তোমরা বল মৃত্যু;
আমি বলি ঘুম,
লম্বা একটা ঘুম;

ইস্পাত কঠিন অভঙ্গুর একটা ঘুম;
ডাক্তার বৈদ্য কবিরাজ কারো সাধ্য নেই এ ঘুম ভাঙানোর,
খুব হঠাৎ
অসময়ে
অনিচ্ছায়
স্বপ্নহীন চির চোখ বন্ধ হয়ে যাওয়া এক ঘুম,
তোমরা যাকে মৃত্যু বল;

একদিন খুব হঠাৎ আমিও ঘুমিয়ে পড়ব,
চিরঘুমে;

আমার ঘুমে কিছু আসবে যাবে না পৃথিবীর,
যথারীতি ভোর হবে পাখি ডাকবে
সকাল হবে সূর্য উঠবে
নীলাকাশে সাদাকালো মেঘ ভাসবে
দুপুর রোদে ঘাম হবে
বিকেল বেলায় হলুদ সূর্যে প্রেমিক প্রেমিকার মন খারাপ
সন্ধ্যেবেলায় সূর্য ডুববে
রাতে উঁকি দেবে চাঁদ
কখনো জ্যোৎস্না হবে
কখনো চাঁদ লুকোবে অমাবস্যায়
আকাশ জোড়া তারার মেলা
আরও কত কই?
পৃথিবী ঘুরবে তার অক্ষ-পথে সূর্যের চারিদিকে
আপন মনে;

শুধু আপনজনরা আমায় ঘিরে থাকবে
অনেক আদরে ডাকবে
কান্নাস্বরে ডাকবে ঘুম ভেঙে উঠে বসতে
আমি তখনো ঘুমোতেই থাকব
অভঙ্গুর চিরঘুমে;

বাসা ভরা লোক আসবে
আত্মীয়স্বজনদের মন খারাপ
মলিন মুখে একপাশে একঠায় দাঁড়িয়ে বন্ধুবান্ধব
স্ত্রী পুত্র কন্যারা আকুল কাঁদছে
আমি সব দেখছি ঘুমের ভেতর
খুব ঘুম ভেঙে উঠতে ইচ্ছে করছে
ইচ্ছে করছে তাঁদের সান্ত্বনা দিতে
অবশ হয়ে আসা হাত পা
অসাড় দেহ সাড়া দিচ্ছে না আমার কথায়
আমি ঘুমঘোরে
চিরঘুমে;

আপনজনরা আমায় গোসল করাচ্ছে বড়ই পাতায় গরম জলে
আমার বড্ড শীত শীত লাগতেই
সাদা কাপড়ে জড়িয়ে দিচ্ছে অনেক আদরে
কাঠের খাটিয়ায় শুইয়ে দিচ্ছে নাকে তুলো গুঁজে
জানাজায় অনেক অনেক লোক জড়ো হয়েছে
আমার খাটিয়া কাঁধে করে নিয়ে যাচ্ছে কবরস্থানে
শুইয়ে দিচ্ছে ছোট্ট সাড়ে তিন হাত মাটির ঘরে
আমি সব দেকছি শব হয়ে
শুয়ে থেকে গভীর ঘুমে;
এরপর ছোট্ট ঘরে বাঁশের বেড়া
তার ওপর মাটি পড়ছে কোদাল কোদাল
আমি অন্ধকার ছোট্ট ঘরে
গভীর ঘুমে;

তোমরা যাকে মৃত্যু বলো।





একটা মেয়ে, অনেকগুলো অধ্যায়



একটা মেয়ে, অনেকগুলো অধ্যায়
- যাযাবর জীবন


একটা মেয়ে
অনেকগুলো অধ্যায়
একটা বই
একটা উপন্যাস;

শৈশব, কৈশোর, যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব, বার্ধক্য
এক এক জীবন, এক এক অধ্যায়;

একটা মেয়ে,
শৈশবের খেলার সাথী
খেলা শেষ হওয়ার আগেই নিমিষে কৈশোরের আগমন
চোখের পলকে অধ্যায় বদল,
একটু কি ভালোলাগা তৈরি হয়েছিল মনে?
খেলার সাথীর সাথে খেলার ছলে,
আচ্ছা! যৌবনে কিংবা প্রৌঢ়ত্বে তার কথা মনে পড়বে?

একটা মেয়ে,
কৈশোরটা বড্ড অন্যরকম;
সমবয়সী একটা ছেলের বোধের অতীত কিছু অনুভব
খুব গোপন কিছু কষ্ট
কিছু লালে ভেজা লজ্জা
শুধুই একটা মেয়ের একান্ত নিজস্ব গোপন
মা তখন পৃথিবীতে সবচেয়ে আপন;

সমবয়সী খেলার সাথীর প্রতি কেমন যেন অন্যরকম একটা মায়া
অন্য এক আকর্ষণ
ভালোবাসা?
কি জানি?
বোঝার আগেই তো বেশীরভাগ মেয়ের অধ্যায় বদল
জীবনের অধ্যায়,
যৌবন কি এসেছিল?
বসন্ত হেসেছিল?
কি জানি! হয়তো মোহে পড়ে ভুল করে
নয়ত বাবা-মায়ের চাপে পড়ে
রঙ মেখে সং সেজে
নতুন অধ্যায়
সংসার;

একটা মেয়ে,
পরিপূর্ণ একটা মেয়ে
যৌবনের ঝাণ্ডা উড়িয়ে
স্বাভাবিক নতুন অধ্যায়,
একটা সংসার
নতুন জীবন
মানিয়ে নেয়া
কিংবা টানাপোড়ন,
কেও হয়তো লেখাপড়া শেষ করে
কারো জ্ঞানার্জন আঁতুড় ঘরে
বাসন কুঁড়ি হাড়ি হেঁসেল
স্বামী সংসার
বাড়ি বদল
পরিজন বদল
অধ্যায় বদল
জীবনের সবচেয়ে কঠিন অধ্যায়;

একটা মেয়ে
একজন স্ত্রী
নতুন একটা অধ্যায়
সংসার জীবন,
এ জীবনটা বড্ড অদ্ভুত
চারিদিকে বৈপরীত্যের সমাহার
কারো জীবন সহজ
কারো তরল
কারো গরল
কারো কঠিন
কারো জটিল
কেও চালিয়ে যায়
কেও মানিয়ে নেয়
অনেকগুলো জীবন থমকে যায়
কারো সংসারের সমাপ্তিতে
কারো বা জীবনের;

আচ্ছা!
কোন একলা রাতে
কোন ঝুমঝুম বৃষ্টির রাতে
স্বামী যখন কোলবালিশের বেড়ার ওপাশে
বিপরীত শুয়ে নাক ডাকে
তখন কি শৈশব বা কৈশোরের ভালোলাগার ছেলেটার কথা মনে আসে?
একটু কি মনখারাপ হয়?
একে কি ভালোবাসা কয়?

একটা মেয়ে
একজন মা
নতুন একটা অধ্যায়
দায়িত্বের বোঝা
নতুন একটা জীবন,
আর্থিক সচ্ছলতা তো সরল জীবন
নতুবা নতুন অধ্যায়
টাকা পয়সা কাজ অভাব
নিত্য টানাপোড়ন
চলছে জীবন
চলছে সংসার
দৈনন্দিন গল্প-কথা
জীবন চাকায় সময়-গাড়ি;

প্রৌঢ়ত্ব,
উপন্যাসের অধ্যায় বদল;
কাজের চাপে কারো সময় উড়ে যায়
কর্মহীন কারো সময় কাটানো দায়
কারো প্রৌঢ়ত্বেই বার্ধক্য
কেও পটের বিবি
কেও সংসার আঁকড়ে
কেও ডিভোর্সি
কারো সন্তান কলেজ-গামী
কেও ততদিনে নানী
বয়সটা থিতু হয়ে বসার
অথচ কেও প্রৌঢ়ত্বেই অসার
জীবন গাড়ি সময় চাকায়
উপন্যাসের অধ্যায় এগিয়ে যায়;

বার্ধক্য,
উপন্যাসের এ অধ্যায় কারো ভরা সংসার
কারো সঙ্গীহীন একাকীত্ব
কারো কারো অধ্যায় বড্ড অসহায়
সন্তান সন্ততি কে কোথায়?
ছেলে?
বৌ কথা কও;
মেয়ে?
জামাইটা বড্ড বেয়ারা;
স্বামী?
হয় টেঁসে গেছে নয়তো বিছানায় যমে মানুষে
নারী?
একাকীত্বে অসহায়ত্বে;
আজকাল বড্ড পসার হয়েছে বৃদ্ধাশ্রমের
ছেলে মেয়েগুলোর বড্ড দয়া
দেখে যায় তো দু-মাস ছ-মাসে একবার এসে
আরে! এই বা কম কিসে?

উপন্যাসের সমাপ্তি?
মাটির ঘরে;

একটা মেয়ে, একটা গোটা বই, একটা সম্পূর্ণ উপন্যাস;
হয় সুখপাঠ্য না হয় খটমটে প্রবন্ধ
মিলনাত্মক আর নয়তো বিয়োগাত্মক।










ভার্চুয়াল কফি



ভার্চুয়াল কফি
- যাযাবর জীবন


আজ সকালটা অন্যরকম,
কফির কাপে;

নেটের এপারে আমার কফি চুমুক
নেটের ওপার থেকে তোর ঠোঁট চুমু
হোক না ভার্চুয়ালে
অনুভব তো মনে মনে;

কোন এক দিন আমরা ঠিক সামনাসামনি বসব
কফির কাপ হাতে
টেবিলের দুপাশে
চোখে চোখে,
একটাই কফির কাপ থাকবে দুজনার মাঝে
মাত্র এক কাপ কফি তাতে
তারপর কাপের কফি শেষ হতেই
দু-জোড়া ঠোঁট
চুমু পান ঠোঁটে ঠোঁটে;

কেন চুমু খেতে চাস ভার্চুয়ালে?
ঠোঁট বাড়ালেই আমি তোর মনের অন্তরালে।






রবিবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৮

পরস্পর বিরোধী স্বত্বা



পরস্পর বিরোধী স্বত্বা
- যাযাবর জীবন


প্রায়শই দুটি মানুষ দেখি
আমার মাঝে;

একজন ভালো
আরেকজন কালো
একজন হৃদয়বান
আরেকজন হৃদয়হীন
একজন দয়ার্দ্র
আরেকজন নিষ্ঠুর,
একই শরীরে পরস্পর বিরোধী
দু-মেরুর দুটি মানুষ
আমারই ভেতরে;

দিনের আমি আর রাতের আমির ফারাক বিস্তর
ফারাক আয়নার এপারের আমি আর ওপারের আমির মাঝে
মাঝে মাঝে যখন চেহারা থেকে পর্দা সরে যায় আমি নিজেই আঁতকে উঠি নিজেকে দেখে;
রিপুর কদর্যতা আয়নায় ভেসে ওঠে;
এত বীভৎস রূপ মানুষের হতে পারে?
এত পরস্পর বিরোধী বিপরীত স্বত্বা বোধহয় শুধু আমারই আছে
মাঝে মাঝে আমি আঁতকে উঠি আয়না দেখে;

তোমরা শুধু আমার বাইরের আবরণটুকুই দেখেছ দিনের সূর্যালোকে
ভাগ্যিস অমাবস্যা আমার রাতের চেহারাকে ঢেকে রাখে,
আমি তো নিজেই ভয় পাই প্রায়শই আমার কদর্য রূপ দেখে;

আমি কি মানুষ না দানব? বড্ড জানতে ইচ্ছে করে।





আমি সম্পর্কের কথা বলছি



আমি সম্পর্কের কথা বলছি
- যাযাবর জীবন


সম্পর্কগুলো বড্ড আজব
বড্ড গোলমেলে
খুব কাছের সম্পর্কগুলো;

বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন
রক্তের সম্পর্ক
অথচ স্বার্থে উনিশ বিশ
তো রক্তারক্তি, সম্পর্কে বিষ;

বন্ধু-বান্ধব?
ততক্ষণই মধু যতক্ষণ ট্যাঁকে টাকা
ট্যাঁক ফাঁকা?
প্রয়োজনে একবার ডেকে দেখই না
সব সম্পর্ক ফাঁকা;

প্রেমিক-প্রেমিকা?
সে আবার কি?
ততক্ষণ সম্পর্ক
যতক্ষণ শরীর যতক্ষণ স্বার্থ
নতুন শরীরের হাতছানি কিংবা টানাপোড়নে অর্থ
প্রেম তোমায় ছুটি
বিদায় সম্পর্ক;

স্বামী-স্ত্রী?
বড্ড জটিল সম্পর্ক,
সংসার? সে তো আরেক কাঠি বাড়া
টিকে গেলো তো টেস্ট ম্যাচ
নয়তো টুয়েন্টি টুয়েন্টি,
বল আর ব্যাট ছাড়া;

আমি সম্পর্কের কথা বলছি
তোমরা কেন স্বার্থ খোঁজ।








অতল গহীন



অতল গহীন
- যাযাবর জীবন


চুমু মানেই যে ঠোঁট চুমু হতে হবে কে বলেছে?
তুই সামনে থাকলে
চা চুমুতেই আমার বেশ চলে যায়;

ভালোবাসা মানে শরীর জড়িয়ে থাকা নয়
ভালোবাসা হলো তুই, আমি আর অনুভব,
মাঝে মাঝে হঠাৎ একটু চোখের দেখা
একটু হাতে হাত
একটু আদর স্পর্শ
কিছু গল্প কথা
কিছু চুপ সময়
আর হৃদয়ে হৃদয়ে অনুভব,
মাঝে মাঝে টিস্যুতে আড়াল তোর চোখের জল
তারপর বিদায়ের সময় মন খারাপ
তোর, আমার দুজনারই;

এভাবেই বেশ চলে যায় দিন
ভালোবাসাবাসির দিন,
আমার মনে তুই কিন্তু প্রতিদিন, আর প্রতিদিন;

আচ্ছা!
আমার কথা কি তোর মনে আসে?
একবারের জন্য হলেও, প্রতিদিন;

কিছু প্রশ্নের উত্তর কখনোই জানা হয়ে ওঠে না,
নারীর হৃদয়, অতল গহীন।


কফি-চুমু



কফি-চুমু
- যাযাবর জীবন


কত কিছুই না খাওয়াস তুই!
সকালে রুটি পরোটা ভাজি ডিম
কর্ণফ্লেক্স ওটস দই,
দুপুরে ডাল ভাত মাছ মাংস
তরি তরকারি নানাবিধ সবজি,
রাতে পোলাও কোর্মা
মোগলাই বিরিয়ানি আরও কত কি!

সবই তোর মেইন ডিশ
না থাকে ষ্টার্টার না থাকে ডেজার্ট,
ডেজার্টের কথা বললেই প্লেটে কি সব ছাইপাঁশ হাবিজাবি
মিঠাই মণ্ডা দই পিঠা আরও কত কি!
ধ্যুর! এগুলো ডেজার্ট হলো?

কখনো বলেছি তোকে চুমুতে আমার আপত্তি!
ষ্টার্টার কিংবা ডেজার্টে;
চুমু ভিজিয়ে
কফির কাপে;

ধ্যাত! বড্ড ডাকাত তুই,
ইশশ! দিলি তো ঠোঁটটা ভিজিয়ে।


সঙ্গী


সঙ্গী
- যাযাবর জীবন


একলা আকাশ
একলা সূর্য
একলা আমি
তৃষ্ণার্ত কাক;

রৌদ্র তুমি রেগেছ কেন?
নীল পুড়ে গেছে আকাশের
বড্ড গরম লাগছে আমার;

আজ রোদ কেমন সঙ্গী হারা
মেঘগুলো যে কোথায় লুকিয়েছে!
আকাশ ঢাকবে কিসে?

ও বাতাস তুই চুপ কেন রে?
ঘামগুলো একটু শুকিয়ে দে না!
শরীর জুড়বো তুই আসলে;

আজ সঙ্গীহীন বাতাসেরও মন খারাপ
মেঘ লুকিয়েছে পাহাড়ের ওপাশে
আয় না রে মেঘ! বৃষ্টি হতে;

কেও নেই ডাকে সাড়া দেয়ার
ভ্যাপসা গরমে আমি একা
আর মনখারাপের একলা বিকেল,

জানালার পাশে একলা একটা কাক বসে
সেই সকাল থেকে ডেকেই যাচ্ছে তারস্বরে কা কা,
তারও কি সঙ্গী হারিয়েছে?

আচ্ছা! আমার সঙ্গী কোথায়?
উত্তর নেই মনের কাছে।



চোখের ভেতর অন্ধকার




চোখের ভেতর অন্ধকার
- যাযাবর জীবন



পাখির ভোর, খুঁজছি তোকে;

সৌম্য সকাল, খুঁজছি তোকে;

রৌদ্র দুপুর, নেই তুইল

ক্লান্ত বিকেল, কোথায় রে তুই?

সন্ধ্যে হয়ে এলো এলো
ঝপ করে এবার নামবে আঁধার
কোথায় তুই?
ফিরে আয়;

আঁধার নামলে পৃথিবীর রাত
লক্ষ তারা, আমি একা
একলা রাত আমার একার
তুই না থাকলেই তো আমি রাত
সকাল দুপুর সন্ধ্যে বেলায়
চোখের ভেতর অন্ধকার,
কোথায় তুই?
ফিরে আয়
ফিরে আয়।





নীল নীল বৃষ্টি




নীল নীল বৃষ্টি
- যাযাবর জীবন


হলুদ বিকেল ফ্রেমে বাঁধানো
মেঘ মেঘ সন্ধ্যের ডানা
নীল দেখি লালাভ আকাশে
মনের ফ্রেমে তুই;

কোকিল বাতাস বইলেই মন আনচান
সর্ষে পায়ে তোর খোঁজ
চড়ুই দিন উড়াল ডানায়
তুই কোথায়?
সন্ধ্যে নামছে মেঘ হয়ে
মনের ফ্রেমে তুই
বৃষ্টির রঙ নীল নীল
এবার তো আয়।



চাঁদ চাঁদ অনুভূতি



চাঁদ চাঁদ অনুভূতি
- যাযাবর জীবন


যখন মেঘ মেঘ আকাশ তখন ভেজা ভেজা মন
যখন হিমেল বাতাস তখন মন উদাস
বৃষ্টি হলেই চোখ কান্না,
এক এক দিন মনে এক এক রকম রাত নামে
কখনো কখনো জ্যোৎস্না
কখনো জোনাক
কখনো আকাশে লক্ষ তারার মেলা
কখনো অন্ধকার;

তোকে জড়িয়ে রাখা
তুই নাম দিয়েছিস কাছে আসা,
তোর ঠোঁট ছুঁয়ে ছুঁয়ে আদর
তুই নাম দিয়েছিস ভালোবাসা,
আমি তোকে ধরতে পারি
অনুভূতি কি আর ধরা যায়?
আমার অনুভূতিতে শুধুই দিন আর রাত
আলো আর আঁধার,
আচ্ছা! অনুভূতির রঙ কি?
আমি শুধু নীল চিনি;

তোর কথা মনে এলেই
কখনো মন সূর্য কখনো চাঁদ
কখনো মেঘলা কখনো জ্যোৎস্না
কখনো সাগর কখনো আকাশ;

যখন খুব বেশী তোর কথা মনে হয়
চাঁদ চাঁদ অনুভূতিতে দাগ কেটে যায় রাত।






অচেনা অনুভব



অচেনা অনুভব
- যাযাবর জীবন


অনুভূতিগুলো খুব চেনা চেনা
তবুও বড্ড অচেনা;
এতই সোজা! ভালোবাসা চেনা;

এই যে স্পর্শ
হাতে হাতে
ঠোঁটে ঠোঁটে
শরীর শরীরে
ভালো লাগায় বিহ্বল
এগুলো সবই তো ধরা ছোঁয়ার বাইরে
আর ভালো লাগার অনুভব,
তোমরা নাম দিয়েছ ভালোবাসা
আচ্ছা! ভালোবাসা ধরতে পার কি?
এতই সোজা!
ভালোবাসা ধরা;

তুই আমায় ছুঁয়েছিস শরীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে
মন ছুঁয়েছিস কি?
শুধু তো শরীরই ধরেছিস
মন ধরা এত সহজ!
এতই সহজ! ভালোবাসা ধরা;

আমি কিন্তু তোকে ছুঁই নি
শরীরে ধরি নি তোর,
যখন গভীর রাত
যখন সবাই গভীর ঘুমে
যখন তুই ঘুম-স্বপ্নে
আমি চুপটি করে তোর মন ছুঁয়ে দিয়ে এসেছি,
কখনো মনে এসেছে কি?
প্রতিদিন ঘুম ভেঙেই কেন আমায় খুঁজিস;

শরীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে প্রেম
মন ছুঁয়ে ছুঁয়ে আমি
ধরা ছোঁয়ার বাইরের এক অনুভূতি
আমি জানি
খুব ভালো করেই জানি
তোর কাছে ভালোবাসা মানেই আমি;

আমার কাছে?
কিছু অনুভব না হয় রইলোই অজানা!
এতই সোজা! ভালোবাসা চেনা।


উল্টো পথ



উল্টো পথ
- যাযাবর জীবন


ভাবনা যখন পূর্ব পশ্চিম
বাস্তব চলে উত্তর দক্ষিণ
জীবন চলায় ওপর নিচ
ছায়ার মত আগে পিছ

রাত যখন চোখের ভেতর
সূর্য তখন মাথার ওপর
দিবাস্বপ্নে জ্যোৎস্না যখন
কড়া রোদে পুড়ছি তখন

পূর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণ
আলো আধার ওপর নিচ
সৃষ্টিকর্তার ললাট লিখন
সংসার দারুণ বিষ

মানুষ মাত্রই স্বপ্ন দেখে
চন্দ্র সূর্য আকাশ ঘুরে
আগুন দেখে ডানার ভরে
পিপীলিকার পাখা পুড়ে।

কখন তাকালি চোখে



কখন তাকালি চোখে
- যাযাবর জীবন


কখন তাকালি চোখে?

কত কত কথা
কত শত ব্যথা
কত সূর্য তারা খুশি
কত চাঁদ জ্যোৎস্না হাসি
কত রাতকালো দুঃখ
কত আষাঢ় শ্রাবণ কান্না
কত গল্প কবিতা কাব্য
দুচোখে রয়ে আছে জমা,
কখন তাকালি রে?

চোখে তো মন লেখা থাকে
কেও পড়তে পারে কেও বোঝে না,
তুই সব পড়ে ফেলেছিস?
আচ্ছা!
বলতো দেখি
তোর নাম কোথায় লেখা;

মেঘ মেঘ অশ্রু দেখেছিস?
খুব ভালো করে চোখ চেখে দেখ
সাগর কত কত লোনা।


পাহাড় ভিজছে আহারে



পাহাড় ভিজছে আহারে
- যাযাবর জীবন


ঘর থেকে বের হতেই মন রোদ
রাস্তা ঘুরছে পাহাড়ে
ঘুরছি আমি
কি সুন্দর! আহারে;

বড্ড মনে হচ্ছে তোর কথা,
তুই মানেই তো সূর্য
যখন মন প্রেম বোধে,
আমার আজ রোদে ভেজার দিন
আর তোতে, ঝুমঝুম রোদে;

কোথায় যেন কেও ডাকছে
পাহাড়ের তাকে তাকে তাকাই
রাস্তার বাঁকে বাঁকে চাই
কোথাও কেও নেই
কাকে খুঁজে পাই?
পাহাড়ে হালকা মেঘ
রাস্তা পুড়ছে রোদে
আমি যে কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়াই?
কি এক বোধে;

ঝুমঝুম ভিজছে মন পাহাড়ে
পাহাড় ভিজছে তোতে, আহারে, আহারে।




আকাশ ডানা



আকাশ ডানা
- যাযাবর জীবন



পাখি ঘুমায়
আমি আকাশে
আমার সকাল
পাখির রাত;
পাখির ঘুম
আমার ভালোবাসা
পাখির ঠোঁটে চুম
আমার আকাশ ডানা......




মনেতে মনখারাপ



মনেতে মনখারাপ
- যাযাবর জীবন


নৌকাটা ঘাটে বাধা
মাঝি বিহীন,
রাতটা অন্ধকার
চাঁদ বিহীন,
মনেতে মনখারাপ
তুই বিহীন।




আকাশ গাড়ি



আকাশ গাড়ি
- যাযাবর জীবন


গাংচিল নীলাকাশে
পাহাড়ে ঝর্না
সমতলে নদী
ভোরের রাঙা আকাশ
আরও কত কি!
তুই কোথায়?

সূর্যোদয়ে কফির কাপ হাতে তোকে ভাবছি
কফির ঠোঁটে একা চুমু খেতে ভালো লাগে?
কত প্রেম রয়ে গেছে বাকি;
তুই কোথায়?

আকাশ গাড়িতে উড়তে যাচ্ছি,
মেঘ ধরতে;
তুই কোথায়?


আমার আকাশে তুই



আমার আকাশে তুই
- যাযাবর জীবন


সূর্য তো প্রতিদিনই ওঠে, পূবাকাশে
তুই কি একদিন উঠবি আমার আকাশে?
সকাল হয়ে;

চাঁদ তো আকাশেই ওঠে, চাঁদের রাতে
তুই কি একদিন উঠবি আমার আকাশে?
জ্যোৎস্না হয়ে;

বৃষ্টি তো প্রায়শই নামে, মেঘ হলে
তুই কি একদিন নামবি আমার বুকে?
কান্না হয়ে;

আমি প্রতিদিনই অপেক্ষায় থাকি তোর আসার
সকাল, বিকেল, সন্ধ্যে কিংবা রাতে
একদিন তো আয়!
যে কোন উছিলায়
যে কোন প্রহরে,
আলো না হয় অন্ধকার হয়ে
মেঘ না হয় বৃষ্টি হয়ে
জ্যোৎস্না না হয় অমাবস্যা হয়ে
হাসি না হয় কান্না হয়ে
যে কোন সময়ে
যে কোন রূপে;

আমি তো অপেক্ষাতেই থাকি
অলস অপেক্ষায়,
তোর আসার;
যে কোন সময়ে
যে কোন রূপে।


দূর, বহুদূর




দূর, বহুদূর
- যাযাবর জীবন


বর্ষাকালে মেঘ হবে
বৃষ্টি নামবে জল ডাকাতের হা রে রে রে রবে
মাঝে মধ্যে ওলোটপালট বাতাসের ধুন্ধুমার ঝড়ে
জানালার কাঁচ ঝরে পড়বে যত্রতত্র
বুনো তেঁতুল গাছটার চিরল পাতার ফাঁকে আশ্রয় নেবে
পাখ পাখালির দল
এটাই স্বাভাবিক;

একটা উদাসী কাক লাইটপোষ্টের ওপর একলা বসে
ঝুম বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে
ধ্যান ধরে কার কথা ভাবছে যেন আনমনে,
কেন যেন ওকে দেখলেই আমার নিজের কথা মনে হয়
আমারও তো একাই ভিজতে হয়
রোদে কিংবা বৃষ্টিতে
ভালোবাসায় কিংবা তোতে
খুব কি স্বাভাবিক?

সেদিনের কথা মনে আছে তোর?
সেদিন সারাদিন বৃষ্টি ঝরছিল
দুপুরে দমকা বাতাস
বিকেলে ঝড়ো হাওয়া
সেদিন কিন্তু বৃষ্টিতে কিছু আসে যায়নি আমাদের
আমরা মশগুল ছিলাম ভালোবাসায়
দুজন দুজনকে আবিষ্কার করতে
সকাল দুপুর বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নামতেই
অন্ধকারে চোখ চেয়েছিলাম চোখে
তারপর শরীর থেকে শরীর উঠেছিল আড়মোড়া ভেঙে
তুই ঘরে ফিরেছিলি
আমি সারারাত বৃষ্টিতে ঠায় সেখানেই বসে
তোতে আর তোতে মাখামাখি হয়ে,
আর রাতের অন্ধকারে কবিতাগুলো উপন্যাস হয়ে গিয়েছিল
আমাদের ভালোবাসাবাসির গল্পে মিশে;

এখনো যেদিন খুব বৃষ্টি যখন তখন
এখনো যেদিন তুই ঝরে পড়িস মন
আমি আজো হারাই, হারাই তখন;

একদিন আকাশের ডানায় সুখ উড়বে
আর মেঘের ডানায় ভাসবে রৌদ্দুর,
স্বপ্ন ভেঙে উঠতে হবে এবার
যেতে হবে আমায় অনেকটা পথ
দূর দূর,
বহুদূর।


স্মৃতি-বিলাস



স্মৃতি-বিলাস
- যাযাবর জীবন


আকাশ ভেঙে বৃষ্টি
বাইরে বের হতেই ভিজে গিয়েছি;

হঠাৎ সেদিনের কথা মনে হলো
সেদিনও ঠিক এমনই ঝুমঝুমান্তি বৃষ্টি ছিল
তুই অপেক্ষায় ছিলি বই এর দোকানে
আমি পৌঁছেছিলাম রিক্সায়, চুপচুপে ভিজে
তোর সামনে দাঁড়াতেই বড় বড় অবাক চোখে তাকালি
তারপর ফিক করে হেসে দিলি
আমার আর দোকানে ঢোকা হলো না
তোর মনে এলো বৃষ্টি-বিলাস
তুই নেমে এলি রাস্তায়
তারপর দুজন রিক্সায়
ঝাঁপ উঠিয়ে, পর্দা ফেলে
ঝুমঝুম বৃষ্টিতে জড়িয়ে বসে ছিলাম দুজন
তেমন লোকজন ছিল না সেদিন রাস্তায়
তবুও যারা ছিল তারা তাকিয়ে ছিল অবাক চোখে
আমরা দুজন দুজনকে জড়িয়ে
মানুষের তাকানোতে আমাদের কি যায় আসে!
কি মধুরই না ছিল সে দিনগুলি
ইচ্ছে হলেই ইচ্ছেমতন ইচ্ছে-ডানা মেলে
উড়ে যেতাম, ভিজে যেতাম যখন তখন দুজনে;

বাইরে আজো বড্ড বৃষ্টি হচ্ছে ঝুমঝুমান্তি
আমি ঘরের কোনে
ভিজছি তো'তে মনে মনে;
আবার কখনো সেই দিন আসবে কি জীবনে?
আর একবার, মাত্র একটিবার
ইচ্ছে-ডানায় ভিজব দুজনে
ঝুমঝুম বৃষ্টিতে হুড ফেলে, পর্দা উড়িয়ে
শরীরে শরীরে জড়িয়ে জড়িয়ে;

স্মৃতি-বিলাসে বড্ড মন ভিজে যায়
বৃষ্টি-দিনে;
দেখ!
তোর কথা ভাবতেই কেমন ভিজে গিয়েছি
বসে থেকে ঘরের কোনে;
বড্ড ভেজাস তুই
কারণে আর অকারণে।


আয়, না রে! ভালোবাসি



আয়, না রে! ভালোবাসি
- যাযাবর জীবন


আয়, না রে! ভালোবাসি;
আয়না'কে নয়
ওখানে আমার নিজেকে দেখতে
বড্ড ভয় হয়;

আয়না দেখি না কেন জানিস?

ওখানে লোভ
ওখানে লালসা
ওখানে রিপুর থাবা
আর স্বার্থের বাসা

ওখানে যত না ভালোবাসা তারচেয়ে বেশী ঘৃণা
ওখানে যত না আলো তার চেয়ে বেশী কালো

ওখানে বাস করে কাম আর ক্রোধ
ওখানে তাকালেই যত অন্ধকার বোধ

ওখানে আমারই চেহারা চির পরিচিত, চির চেনা
কিন্তু আয়নায় তাকালেই আঁতকে উঠি আমি
কে রে ওটা ওখানে?
আমার নিজের কাছেই সে বড্ড অচেনা!

আয়নায় দেখি মনের যত কালো, আমারই
আয়না অন্ধকারের কথা কয়
আয়, না রে! তোকে ভালোবাসি;
আয়না'কে নয়।

অস্থির অনুভূতি




অস্থির অনুভূতি
- যাযাবর জীবন


সেদিনও একটা দিন ছিল
বৃষ্টি-ভেজা
আজকের মতই
সেদিন আমাদের প্রথম দেখা
অচেনা ছিলাম আমরা সেদিন
চেনা রাস্তার দুধারে দুজন
রাস্তা পার হয়ে তোর কাছে পৌঁছতেই
আনত তোর চোখ
আমার দৃষ্টিতে অবাক অনুভব
আকাশ পরী পৃথিবীতে কেন?

তারপর কত সময় পার হয়ে গেছে!
পারি দিয়ে ফেলেছি কত কত অনুভূতি
সুখের
দুঃখের
মিলনের
বিচ্ছেদের
আজকাল আর অনুভূতি দাগ ফেলে না মনে;
কালকেও একটা দিন ছিল
কাল যখন চোখে চোখ রাখলি
তোর মন কাঁদছিল
আঁচলে কি আর অশ্রু লুকানো যায়?
আমার বড্ড বাজে অভ্যাস
মন পড়ে ফেলার,
যখন হাত ধরলি কাল
অনেক বছর পরে আবার কেন যেন সেই অস্থির অনুভূতি
সেই প্রথম প্রেমের মত,
তোর স্পর্শে কিছু একটা আছে
আমায় নিয়ে যায় পুরানো অনুভবের দেশে,
অনেক কষ্ট হয়েছে সামলাতে নিজেকে
তোর ঠোঁট টানছিল আমায়
বড্ড অস্থির করে;

আবার কখনও যদি দেখা হয়ে যায় আমাদের,
এবার কিন্তু বসব না কোথাও
হাত রাখব না হাতে
চোখ রাখব না চোখে
দাঁড়িয়ে থেকেই দুটো কথা বলব অচেনা কোন রাস্তার ধারে
অচেনা পথিক হয়ে
তারপর যে যার পথে চলে যাব চেনা রাস্তা ধরে;

জানিস! আজ কেমন মেঘলা মেঘলা আকাশ
তোর বুঝি মন খারাপ?
তুই ঝরলেই বৃষ্টি ঝরবে
আমি অস্থির হব তোর কান্নায়
আর বাঁকানো ঠোঁটে ঠোঁট রাখব আগের মত করে
কান্না শুষে নিতে;
ধ্যাত!
তোর কথা মনে এলেই আকাশের মন খারাপ।