বৃহস্পতিবার, ৫ জুলাই, ২০১২

আমি আজ বৃদ্ধাশ্রমে


কিছু বলতে ইচ্ছে করে
কিছু লিখতে ইচ্ছে করে
আমাকেই নিয়ে
আমার পশুত্বকে নিয়ে
যখন কোন এককালে দিয়েছিলেম
স্নেহ মায়া মমতার বিসর্জন;
এখন সেই পুরোনো দিনের কথাগুলো মনে পড়ে
সেদিন গুলোই যেন আজ আমার নিজের জীবনে
বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে।

আজ আমার সময় হয়েছে তোমাদের ছেড়ে চলে যেতে
নির্বাসনে একা একা সময় কাটাতে
হয়তো কিছু আমারই মত বৃদ্ধের সাথে
বৃদ্ধাশ্রম নামক সেই ভয়াবহ কারাগারে
যেথায় একদিন ঠেলে পাঠিয়েছিলেম আমারই জন্মদাতা পিতাকে
একা একা নির্বাসনে, ওই বৃদ্ধাশ্রমে।

সেদিনের কথা আজো কেন মনে ভাসে
কতই না অনুনয় বিননয় করেছিলেন তিনি
চোখের জলে ভেসে;
ওরে খোকা আমায় যাস নে ফেলে একা
এই নির্বাসনের কারাগারে;
আমি নিশ্চুপ পড়ে রব তোর ঘরের এক কোণে
না হয় এক বেলা কিছু খেতে দিস আমায়
যদি জনকের কথা মনে পড়ে
আর না হয় ভুখা পেটে রয়ে যাব
টেপের পানি খেয়ে, চুপেচাপে ঘরের এক কোণে।
তবুও তো দেখতে পাব তোকে সারাদিনে একটিবারের তরে
আমার দাদুভাইকে একবারের জন্য হলেও তো কোলে তুলে নেব
গভীর ভালোবাসায় জড়িয়ে।
আমার থাকার কোন ব্যবস্থা করতে হবে না তোকে
না তোষক না বালিশ না লাগবে আমার শীতের চাদর
তোর মারা ছেড়া শাড়ি জড়িয়ে পড়ে রব ঘরের এক কোণে
তোর দামী কারপেটের বিছায়ায় শুয়ে
তাতেও তোদের অসুবিধা হলে না হয় পড়ে রব স্টোররুমের অন্ধকার কোণে
তোদের ফেলে দেয়া শত নোংরা আবর্জনার মাঝে একটু ঠাই করে নেব
সারে তিন হাত মাটির বিছানা ফেলে
তোর মায়ের ঘামের গন্ধমাখা শারীর আঁচল বুকে ধরে।
আমায় ঠেলে ফেলে দিস না রে বাপধন
ওই বৃদ্ধাশ্রমের নির্জন কারাগারে।

হায় আজ আমারই সন্তান আমারই পথ ধরে
রেখে দিয়ে গিয়েছে আমায় নির্বাসনে
সেই একই বৃদ্ধাশ্রমের নির্জন কারাগারে
যেথায় রেখে গিয়েছিলেম আমার জন্মদাতা পিতাকে
কোন এক অতীতকালে
সকল স্নেহ মায়া মমতাকে ভুলে
আজ আমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে
আমাকে একা রেখে যাস নে বাবা
তোর ঘরের কোন এক কোনে আমাকে ফেলে রাখ
তবুওতো দেখতে পারব তোকে, আমার দাদুভাইকে
লাভ নেই জানি
এটাই নিয়তি
এটাই কর্মফল আর তার পরিণতি।

ধিক আমায় ধিক
উপরওয়ালার খেলা দেখে গেলাম এ জীবনেই
আমার কর্মফল ভোগ করতে হবে আমাকেই
সকল ভুলের খেসারত দিয়ে যেতে হবে
এই পৃথিবীতেই প্রতিটি মানুষের
কোন না কোন সময়, আমার মতন করে
ফিরে পাবে যার যার কর্মফলের পরিণতি
আজ নিজেকে দিয়ে নিজেই আমি বুঝি।

হয়তো আমার পরবর্তী প্রজন্মগুলো নিজ থেকেই চলে যাবে
বৃদ্ধাশ্রমের কারাবাসে, একটা নির্দিষ্ট সময় পার হলে
কাওকে কিছু না বলে,
শুধু তার পূর্ব কর্মফলের কথা ভেবে
যা সে করেছিল তার পূর্বপুরুষের সাথে
নিম্নগামী ভালোবাসার তবুও হয়তো জেগে রবে
শুধুই মনে মনে।
আমরা কি ঊর্ধ্বগামী ভালোবাসার প্রকাশ কখনো দেখতে পাব?
যখন বৃদ্ধাশ্রমে যাবার কালে সন্তান পিতার হাত ধরে বলবে কখনো হয়তো,
বাবা, তুমি যেও না আমাদের ছেড়ে
কিংবা তার অনুজের অনুনয় হাহাকার হয়ে রবে
দাদুভাই, তুমি থাক না আমাদের সাথে আমাদের অংশ হয়ে
হয়তো সেই সুদিনে দাদুভাই এর চোখ ভিজে উঠবে অঝর লবন জলে
নিম্নগামী ভালোবাসার নাড়িছেড়া টানে।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন