শনিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১০

দহনের জ্বালা


ভালোবাসা মানে এক একজনের কাছে এক এক রকম
কেও ভালোবাসে দূর থেকে
কেও বা কাছে এসে
তোমার ভালোবাসা তীব্র ঝড়ের মত ধেয়ে চলে মিলনের পানে
আর আমার ভালোবাসা?
সে যে শুন্যতায় ঘেরা তোমাকে ভেবে ভেবে, মনে মনে
শান্ত নদীর মত, কোমল বাতাসের মত
নৈঃশব্দের মাঝে কবিতার গুনগুন ধ্বনি
এখানে আবার তোমার উপস্থিতি ঝড় হয়ে আসতে পারে, আমার মনে
ক্ষতবিক্ষত হ্রদয় অনলে কেন পোড়াতে চাও আবার কাছে এসে
এতটুকু বোঝ না কেন তুমি?
কেন জানান দিতে চাও নুপূর পায়ে আগমন বানী?
দহনের জ্বালা বোঝা হয়ে গেছে আমার অনেক আগেই
তুমি চলে যাবার কালে
আমায় কস্ট দিতে কেন এত ভালো লাগে তোমার
আমাকেই শুধু?

বৃহস্পতিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১০

বস্তির জীবন যাপন ও আমরা

হিম কুয়াশার রাত
শীত যেন জাকিয়ে পরছে চারিদিক থেকে
পাতা ঝরা গাছের ফাক দিয়ে চুঁইয়ে পড়ছে
টুপ টুপ করে শিশির বিন্দুগুলি
ল্যাম্পপোস্ট এর গা ঘেসে সার সার দাঁড়িয়ে সব
পলিথিনের কুঁড়েঘর
নীল, সাদা, কিছু বা শতচ্ছিন্ন কাগজ আর ময়লার ধুসর রঙে রাঙ্গানো
সারি দেয়া সব ঘরগুলো দাঁড়িয়ে আছে ইস্টিশনের পাশ ঘেসে
সমান্তরাল দুটি লোহার দন্ড ঘরগুলির পাশ ঘেসে চলে গেছে
রেললাইনের পাত দুটি পড়ে আছে অলস শীতের রাতে
মাঝে মাঝে কু ঝিক ঝিক কান ফাটানো শব্দে
ঢাকা পড়ে যায় পলিথিনের ঘর থেকে ভেসে আসা কান্না ধ্বনি।

একটি ঘরে ছেড়া পলিথিনের গা চুইয়ে আসা শিশির বিন্দুগুলো
ভিজিয়ে দিচ্ছে ছেড়া কাঁথা একপাশ থেকে
আরেকপাশে ছোট বাবুটিকে বুকে ধরে
মা ওম দেয়ার চেস্টায় কেঁপে কেঁপে ওঠে
শীতের রাতে।

একটি ঘরে বুড়ো বুড়ি দুটি একে অপরকে চেপে ধরে শুয়ে আছে
আর প্রহর গোনে সূর্য ওঠার
একটু ওমের আশায়।

একটি ঘরে বাবা হারা ছোট ছোট দুটি বাচ্চার কান্না ধ্বনি ভাসে
ক্ষুধায় জ্বালায়
অধঃনমিত অস্রুসজল মুখে মা বসে আছে তাদের পাশে
আজ ভিক্ষা জুটে নি হায়।

আমি হাটিতেছি রেললাইনের পথ ধরে
আর দেখি বস্তির দুপাশের জীবন যাপন
কুয়াশা ভেজা শীতের রাতে।

রেললাইনের ওপারের ঘরগুলিতে একটু উঁকি মেরে দেখি তো!

ওখানে কে কাঁদে?
কার শব দেহ পরে আছে অসীম অবহেলায়?
খোলা আকাশের নিচে ঘন কুয়াশার মাঝে
থুথ্থুরি বুড়িটা মরে গেল আজ, যাহ!
কাল ও না একটা চাদর চেয়েছিল ফোঁকলা দাতের করুন হাসি দিয়ে
শব্দগুলো গুঞ্জরিয়ে ওঠে আজ যেনো মনে - বাবা বড্ড জার পড়ছে
এট্টু দয়া কর, একটা কম্বল দিয়া যাইও মোরে।
দাদির শব দেহের পাশে নাতনীর কান্না ধ্বনি
ছেলে চিন্তিত মায়ের দাফন নিয়ে – কবরেও যে টাকা লাগে।

ঠিক তার পাশের ঘর থেকে অসুস্থ বৌয়ের কাতর ধ্বনি ভেসে আসে
পোয়াতি বৌটি যে কোন সময় বাচ্চা বিয়োবে
পাথর মুখ করে ভাঙ্গাচোরা চেহারায় পাশে বসে আছে খালা বা ফুফু
গরম জল বালতিতে করে আর বাঁশ কঞ্চির ছুড়ি হাতে
অবহেলায় বিয়ানো সন্তানের নাড়ি কাটবে বলে।

ঘরে ঘরে অভুক্ত আর অর্ধভুক্ত নরনারীর কলকাকলী ভেসে আসে
খাদ্য জোটাতে পারে নি আজ যারা
কেও কাজ পায় নি বলে, কেও ভিক্ষের অভাবে
আর কারো কপাল দোষে।

ওইতো দেখা যায় আরেক ঘরে নব বিবাহিত দম্পতি একে অপরকে
আবিস্কার করছে ল্যাম্পোস্টের চুইয়ে আসা আলোর ঝলকে
ঠোটে ঠোট রেখে, বুকে মুখ গুজে
ওম খুঁজে বেড়ায় আদিম নেশায়
একে অপরের মাঝে।

প্রহর কাটে একে একে
বস্তির শব্দগুলো স্তিমিত হয়ে আসতে থাকে একটু একটু করে
রাতের দ্বিপ্রহরের ট্রেন থামে
ইস্টিশনের কলকাকলী থেমে যায় এক সময়
সারাদিন ফেরি করে আসা ফেরিওয়ালার দল আশনাই এর নেশায়
নরমাংসের দোকান খুজে ফেরে;
এরই মাঝে সখিনা, জরিনা সকল পসরা খুলে বসে
রাতের বন্য খেলার সঙ্গী হতে একই বস্তির কোনো কোনা ঘরে
পেটের ধান্ধায় দেহ বেচে যায়
কিংবা ক্ষুধার জ্বালায়।

শীতের রাত
আমি হাটিতেছি রেললাইনের পথ ধরে
আর দেখি বস্তির দুপাশের জীবন যাপন
বিচিত্র সব খেলাঘর সারি সারি বসে আছে বস্তির রূপ ধরে
ল্যাম্পোস্টের আলো ঝলকে ওঠে রেললাইনের পাশে পড়ে থাকা
একটুকরো ভাঙ্গা আয়নার মাঝে,
আয়নায় নিজেকে দেখি
চমকে উঠি
কানটুপিতে ঢাকা কার মুখ দেখি?
আপাদমস্তক গরম জ্যাকেট গায় ওটা কি আমি?

আর শীতের ঘন কুয়াশায় পড়ে থাকা থুথ্থুরী বুড়ির মৃতদেহ খানি
কিংবা ক্ষুদার যন্ত্রনায় কাতর ওই শিশুমুখ গুলি
কিংবা ছেঁড়াকাথায় ঢাকা মায়ের বুকে শুয়ে থাকা ওই ছোট্ট বাবুটা
গরম জ্যাকেট গায়ে, কানটুপিতে ঢাকা আমি
ধ্বিক আমায়, ধ্বিক।

আমিও হতে পারতেম ওদেরই একজন
কিংবা হয়তো আমি ওদেরই একজন
তাদের সমাজ থেকে বিতারিত
আজ গরম জ্যাকেট গায়ে, কানটুপিতে ঢাকা আমি।

বুধবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১০

ভালোবাসার খাঁদ

তোমাকে দেখলেই বুকে ধাক্কা লাগে
না দেখে থাকতে পারি না একমুহুর্তও
বলতে পার কেন এমন হয়?

বৃস্টির দিনগুলিতে যখন
রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজি আর মনে মনে ভাবি
চাঁদনি রাতে যখন শরীর জুরে জ্যোৎস্না মাখি
আর মনে মনে ভাবি
সাগরের তীর ধরে বালুকাবেলায় যখন
হেটে চলি একা একা বহুদুর পানে
অথবা যখন সাঁতার কাটি অস্রুজলে
আর কথা বলি মনে মনে
কেন যেন সারাক্ষন তুমি থাক আমার হ্রদয় জুড়ে
চোখ বন্ধ করে স্বপ্নাপ্লুত আবেশে
আমি বেশ থাকি ভেবে,
আছ তুমি আমার হাতদুটি ধরে
স্বপ্ন জগত থেকে বের হয়ে খুজি তোমার হাতখানি
বাড়াই হাত দুটি আমার তোমাকে একটুখানি ছুয়ে নিতে
কোথায় তুমি? শুন্য চারিধার............
স্বপ্নভংগ, আবার একা একা পথচলা

অনন্দিতা, তুমি আছ শুধু আমার স্বপ্নেরই দেশে
আছ তুমি শুধু হ্রদয় মাঝে
বস্তবতায় আছে শুধু শুন্যতা, আর অপেক্ষার প্রহরগুলো
তোমারই জন্য, শুধু তোমারই জন্য।

বলতে পার,
কতটা বৃস্টি হলে নদীতে বান ডাকে
কতটা অন্ধকার হলে অমানিশা হয়
বলতে পার কি, কতটুকু হ্রদয় পুড়লে
ভালোবাসা হয়?

হয়ত আমার ভালোবাসাতে খাঁদ ছিল অনেকটুকু
তাই হয়তো পারি নি তোমার হ্রদয় ছুঁতে
পাই নি তোমায়,
আমার পথচলার সাথী হতে ।

বুধবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১০

বিজয় দেখেছিঃ

আজ বিজয়ের ৪০বছর
বয়সে, প্রৌঢ় কি সে খুব বেশি
হওয়ার কথাতো ছিল তার যেন
রূপ যৌবনে একাদশি।

৭১ এ বিজয় দেখেছি
নিস্পাপ এক শিশু,
৭৫ এ কলংকিত সে
ক্রুশবিদ্ধ যেন যিশু।
৭৭ এ সিপাহি বিপ্লব
রক্তে রাঙ্গানো মাটি,
৮২ এ কেন রাঙ্গা হতে হল
চট্রগ্রামের মাটি।
৮৫ এ এসে হায়না খেদাও
আন্দোলনের ডাক,
৮৭ এ এসে ঝাটাপেটা খেয়ে
বুঝ বুঝি এলো তার।
খোলা মঞ্চে গান গেয়ে গেয়ে
ফাসির কাস্ঠে বিচার,
নূর হোসেনকে জীবন দিতে হল
বুকে একে স্বৈরাচার।

৮৭, ৯২, ৯৭ আর ২০০২
একই রূপ ধরে সরকার আসে
পালা বদলের একই খেলা
দেশ মাত্রিকাকে ধর্ষন করে তাদের
কাটে যে জীবন বেলা।

প্রতিবারই কাঁপে আন্দোলনে
আকাশ বাতাস মাটি
সরকার নামাও দেশ বাচাও
বেছে নাও সোনা খাঁটি।

বার বার করে পালা বদলের রূপ
এ যেন পুতুল খেলা
দেশ মা আমার গোল্লায় যাক
ভরছে আমার ঝোলা।

শাসক রূপে যে আসে দেশে
দেশ গড়ব ভাব করে সে যে
দেশকে বানাব সোনা
একদম করে খাটি,
কিছু দিন গেলে
বনে যায় সে যে
স্বৈরাচারের ঘাটি ।

দু হাজার পাঁচ
তত্বাবধায়ক সরকার নামে
দেশে এলো এক অভিশাপ
ছাড়লো কুরশি চুষে ছিবড়ে করে
দেশকে করল ফাক।

আজ দেশে নতুন সরকার
বয়স মাত্র তিন
এর মাঝেই শেষ রিজার্ভ টাকা
করতে হচ্ছে তাকে ঋণ।

হায়রে বাংলা মা আমার
কত শত বীর সন্তানের জননী তুমি
গর্ব ভরে রত্নগর্ভার
কদমে কদমে চুমি।

শহীদ সালাম, জাব্বার, বরকত আর
কত শত তাদের নাম
আবার দিয়েছ জন্ম শত
রাজাকার আর কুলাংগার সন্তান।

দেশ মা আমার রত্নগর্ভা
গর্বে ভরে বুক
যখন দেখি সালাম বরকত আর
জিয়া, মুজিবের মুখ।

সেই মা আবার প্রসব করে
সর্প যেন তার রূপ
স্বৈরাচার, রাজাকার, হায়নার দল সব
দুঃখে যে ভাঙ্গে বুক।

৭১ এ বিজয় দেখেছি
মায়ের কোলে বসে
মায়ের হাসিতে বিজয় মালা
অনেক আশের আশে।

৭৫ এ কালোরাত সেই
১৫ই অগাস্ট রাত
বাবার চোখেতে দেখেছি কান্না
পাতে নেই নি সেদিন ভাত।

৮২তে এসে কেদেছি নিজে নিজে
অসহায়ত্তের কালো বোঝা নিয়ে, যৌবনের প্রথম কান্না
করেছি প্রার্থনা সেদিন দেশ মায়ের কাছে
বীর শহীদের অকাল প্রান বধ বন্ধ কর
আর না, আর না।

৮৫ থেকে ৮৭ পর্যন্ত
আন্দোলনের মাঝে দিন রাত
স্বৈরাচার খেদাও দেশ বাচাও
অবশেষে, স্বপ্ন হয়েছে সাচ।

এর পর থেকে গুটিয়ে গেলাম ‘
দেখলাম রাজনীতি
আসলে সকলেই ফাঁকা বুলি ঝাড়ে
নেইকো কারো কোন নীতি।

আমরা সবাই গুটি, কতক সব
দাবার বোর্ডে সাজানো
রাজা মশাইরা খেলছে একেলা
বড়িগুলো সব আগানো।

মোহরা বানিয়ে খেলছে সবাই
পাইক পেয়াদায় পরিবিস্ট
সৈন্য এগিয়ে দেখছে খেলা
কে থাকে অবশিস্ট।

যৃনা জন্মেছে সেদিন থেকে
যেদিন দেখেছি খেলা
মানুষ নিয়ে খেলছে তারা
বসেছে মরন মেলা।

আমি মানুষ রূপী কুকুর দেখেছি
দেখেছি বুনো হায়না
ডাকিনী দেখেছি শকুনি দেখেছি
আর দেখেছি অসচ্ছ আয়না।

আমি আয়নার মাঝে দেখেছি সকলই
দু টুকরো মাংসের লড়াই
দুটি মানুষ রূপী কুকুরের কামড়া কামড়ি
আর সেই কুকুরেরে ওপর হায়েনার ঝাপা ঝাপি
কুকুরের পেট চিড়ে
সেই ভক্ষিত মাংস বের করে ছিড়ে খাওয়া
দেখেছি আমি ডাকিনির বেশে
শকুনীর কালো থাবা,
আর হায়নার ওপর
চর্বিত ভক্ষিত, সেই দু টুকরো মাংসের তরে
ডাইনীর থাবা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়া
আর তার পেট চিরে বের করে আনা
নিজের খাদ্যের পরে।
শুধু দু টুকরো মাংসের লোভে,
এরাও মানুষ,
কিংবা মানুষরূপী দানব সকল।

আজ আমার বাংলা মা
প্রৌড়ে পরেছে, ৪০ বয়স হল
নব যৌবনের কমনিয়তা হারিয়েছে
এখন তাকে চিমশানো বুড়ি বল।

আজ বিজয় আমার
দাঁত বের করা লোলুপ হায়েনার
কালো কুৎসিত মন,
আজ বিজয় আমার
আশি বছরের থুথ্থুরী বুড়ির
চিমশানো দুটি স্তন।

আজ বিজয় আমার
প্রি ম্যাচিওরড সন্তানের
আকালে পৃথিবির ডাক,
আজ বিজয় আমার
কুমারী মাতার
অকাল গর্ভপাত;
আর সাথে নিয়ে কিছু
অমানুষ, হায়েনার
দুষিত রক্তস্রাব।

আজ বিজয়েরই মাস
আজ বিজয়েরই দিন
আজ ১৬ই ডিসেম্বর
আজ বিজয় দিবস
আমাদের আনন্দের দিন
আজ আমি বিজয় দেখেছি
বিজয় দেখেছি।

শুক্রবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১০

বেচে থাকা – ১

বেঁচে আছি আমরা প্রতিনিয়ত কাজের ভিরে
বেঁচে আছি আমরা জীবন যুদ্ধের মাঝে
প্রতিদিন নানা কাজকে ঘিরে
এক একজনের কাছে বেঁচে থাকার মানে এক এক রকম
কেও বেঁচে থাকে দুমুঠো ভাতের আশায়
কেও অপচয় করে ডাস্টবিনে ভাত ছড়ায়।
চাষী ভোর বেলায় লাঙ্গল কাধে ছোটে ক্ষেতের পরে
কালোবাজারী সার ফেরী করে ঘুরে চাষী দের ঘরে ঘরে
সেচের পানি পায় নাকো চাষী খরার চৈত্র মাসে
সোনার বাংলার অলিক ইলেক্টিসিটি দেবে কবে আর সেচের মেশিন পড়ে
আমাদের সোনার সরকারের বড় বড় বুলি আওড়ে যায়
প্রতি দিনের এজেন্ডায়
সেশ সম্বল হাতে টানা সেচ, খালের পানি হয়ে গেল শেষ
তবুও কেচে নেয় বালটি ভরে অথবা আজলায়
শুধু ধান পাকা সোনাফলা ওই খেত কে বাচাতে
তীব্র খড়ার কবল থেকে একটু একটু করে।



রক্ত পানি করে গোলা ভরা ধান তোলে
পেটের ধান্ধায়
না পারিলে যে মহাজনের খড়া
দাদনের বোঝা গায়।
হয়তো কোন বছর অনেক কস্টে ধান ওঠে গোলা ভরে
হাসিতে ভরে ওঠে চাষীর মুখখানি
দাদন মেটাবে, ভাত জুটাবে
সংসারের ঘানি টানি।
সেখানেতেও পায় কি সুখ
চেপে ধরে এসে কালো বাজারী চোখ
২০টাকার চাল কিনে নিয়ে যায়
১০টাকা সের ধরি
না বেচিলে পড়ে থাকে গোলে
পচে যায় ধান পচে যায় চাল
গেজায় নতুন বীজ
মহাজনের দেয়া পায়ে বেড়ী,
তার থেকে ১০টাকা ধরে বেচে দেয় সবই
পড় থাকে যা গোলা তলে
আবার না খেয়ে থাকা আবার যুদ্ধ লাঙ্গল কাধে তুলে।

মধ্য স্বত্তাভোগী ধান সংগ্রহে ট্রাক ভরে গোলা ঘরে
জমায় যে ধান, খুদ কুড়া সব গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে
মহাজন আসে কিনিতে সবই একবারে লট ধরে
১০টাকার ধান ১২ টাকায় কিনে মনে থাকে চিন্তার বান
আড়তে যাবে , প্যাকিং হবে, কত শত তার ঝামেলার কাম
১০টাকার ধান প্যাকিং শেষে ৩০টাকায়
বেচবে বলে বাসনা;
হায়রে জীবন, হায় নিয়তি
১০টাকার ধানের পরিনতি হয় ৩০টাকা কেজি ধরে
চাষী কিনে খায় জীবন চালায় তারই উৎপাদিত ঘামঝরা শশ্যদানা
১০টাকার ধান কিনতে যে হয় ৩০টাকায়
মনে ধরে যাতনা।

বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১০

চন্দ্রাহত

কুয়াশা চাদর বিছানো শুরু করেছে বিষন্ন বিকেলের গায়
শীতের বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নেমে আসছে চারিদিক থেকে
মফস্বলের কোন এক ছোট্ট শহরে অনেক দূরে দূরে ল্যাম্পপোস্টগুলি বসানো
হলুদাভ নিওন বাতিগুলি মাত্র জ্বলে উঠেছে কুয়াশার চাদর ভেদ করে
অলৌকিক নিঃশব্দ এক ভৌতিক পরিবেশ চারিপাশ জুড়ে
মনের খেয়ালে একা একা হাঁটছিলেম একলা রাস্তা ধরে
আজব আজব সব দৃশ্য ভেসে উঠছিল মনের মাঝে
তোমাকে ভেবে ভেবে
কল্পলোকে তুমিও আমার পাশে ছিলে
আমার হাত ধরে হাঁটছিলে ঠিক আমার পাশে পাশে
আমাকে সংগী করে
আর কথামালা সব গাথা হচ্ছিল যেন মনে মনে আনমনে
শুধু তোমাকে নিয়ে আমাদের স্বপ্নগুলোকে ঘিরে
তুমি পথে হাঁটছিলে আমার হাতটি ধরে
আমাকে সংগী করে আনমনে আনমনে।

দুর হতে মাঝে মাঝে একটি দুটি করে ট্রাক বা বাসের হেডলাইট
সামনে থেকে চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছিল আমার
চকিত বাস্তবে ফিরছিলাম আলোর দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে
কিংবা পেছন থেকে হেডলাইট পড়ে আমার একাকিত্বের ছায়াসঙ্গী তৈরী করছিল
যে পথ হাঁটছিল আসলে আমার সাথে সাথে
আমি ও আমার ছায়াসঙ্গী দুজনে একা একা হাটছিলে ওই একাকী পথটি ধরে
মনের মাঝে তোমার হাত ধরে আর হ্রদয় মাঝে শুধু তোমাকে ভেবে।

একটু পর আকাশে উঁকি দিল জ্যোৎস্না
চন্দ্রাহত হলাম আমি চন্দ্রবেলায়
চাঁদের মাঝে তোমার মুখ যে শোভা পায়
কেন যে তোমার আর চাঁদের রূপকে আলাদা করতে পারি না
সেটাই বুঝে ওঠা হলো না আজো
দুজনার চেহারাতেই আলো ঝলকায় বলে কি?
নাকি তোমরা দুজন দুজনার আয়নার প্রতিচ্ছবি?
ধ্যাত, কি যে সব অলিক কল্পনা
আমার হাটার পথে একে যায় সব আলপনা
চাঁদ হেঁটে চলুক আকাশের গা ধরে
তুমি আলো হয়ে হেঁটে চল আমার হাত দুটি ধরে
ছায়াসঙ্গীকে পেছনে ফেলে
আজ এই ভরা জ্যোৎস্না রাতে চন্দ্রালোকিত মন আমার
ভরে উঠুক শুধু তোমার আলোতে
তাই তো খুঁজে ফিরে চাঁদকে আমি প্রতি চন্দ্রবেলায়
আকাশের গায় তোমায় মুখছবি দেখি সেথা হ্রদয় মেলায় ।

মঙ্গলবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১০

ভিন্ন সত্বা -

বেচে আছি আজ দুটি সত্বার ভিরে

আনন্দ ও বিষাদের মিস্রন

কাজ আর অবসাদ এ জীবন যাপন

ভালো মন্দ মিলেই আজ কাটাই জীবন

সাদা আর কালোর কি অপূর্ব বাধন

ইচ্ছে আর অনিচ্ছের ঘুড়ি ওড়ে আকাশে

একসাথে মিলেমিশে, নাচে আমায় ঘিরে ঘিরে

আমি অসহায় চেয়ে দেখি দুটি আলাদা সত্বার বেচে থাকা

একই দেহে, আমাকে ঘিরে।



আমার প্রথম সত্বা বেচে থাকে কাজের মাঝে

কভু আনন্দে কভু বিষাদে

মানুষের মাঝে, মানুষের ভিরে



আমার দ্বিতীয় সত্বা দিন কাটায় একলা

বিষন্ন রাত্রি জেগে

তোমাকেই ভেবে ভেবে



প্রথম সত্বাকে নিয়ে আমার ভাবতে হয় না এতটুকু

জীবন সেখানে বহমান নদীর মত

মদু সমীরণে বাতাস খেলা করে

দিন কেটে যায় দিনের মত করে।

দ্বিতীয় সত্বা যখন প্রথম সত্বার উপর চড়াও হয়

তখন হ্রদয়ে বান ডাকে, চারিদিকে ঝড় ওঠে

আর আমি হারাই বিষাদ মেলায়

শুধু তোমাকেই ভেবে ভেবে।



তুমি জান তুমি সব জান সেই সেদিন থেকে

যখন তোমার, আমার কিংবা আমাদের

দুটি হ্রদয় সত্বা এক হয়ে মিশেছিল অন্ধকারের

ওই তারার মেলায়

জোনাকী আলো জ্বেলেছিল

চাঁদনী আকাশে হেসেছিল

আমাদের প্রেমের খেলায়

আর আমার দুটি সত্বা এক হয়ে মিশে গিয়েছিল

হ্রদয় মেলায়।



তবে আজ কেন আবার দুটি সত্বা নিয়ে বেচে থাকা

এই জীবন খেলায়।





সোমবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১০

আঁচরের গভীরতা হ্রদয়ে

ভালোবেসেছিলে তুমি আমায় ঝড়ো হাওয়া হয়ে ঝড়ের মত করে
ভালোবাসা জাগিয়েছিলে তুমি আমার হ্রদয়ে
ধিরে ধিরে, মৃদু মধুর বাতাশের লয়ে

ভালোবেসে তুমি আছড়ে পড়েছিলে সাগরের তীব্র ঢেউ এর মত করে
আমি বয়ে চলেছিলেম ঐ নদীটার শান্ত ছোট ঢেউ হয়ে
কুলুকুলু বেগে এগিয়েছিলেম তোমা পানে

ভালোবাসার দহনে তুমি জ্বালিয়েছিলে পেট্রোলিয়ামের তীব্র দহে
আমি জ্বলেছিলাম কয়লার আগুন হয়ে
ধ্বিকিধ্বিকি পুড়ে নিঃশেষ হতে

তুমি ভালোবেসেছিলে মধ্যগগনের সূর্যটার তীব্রতা নিয়ে
আমি ভালোবেসেছিলেম তোমাকে
জ্যোৎস্নার স্নিগ্ধতায় মেখে

তুমি ভালোবেসে খরগোসের গতিতে ছুটে এসেছিলে আমার পানে
আমি কচ্ছপের গতিতে হেঁটেছিলেম
তোমা পানে ধীর লয়ে

আজ আর সেই ভালোবাসা নেই
তোমার, আমার কিংবা
আমাদের দুজনের কারো মাঝেই
শুধু রয়ে গেছে আঁচর কিছু হ্রদয়ের মাঝে
কারোটা হালকা হয়ে
আর কারো গভীর ভাবে।

সাগরের ঢেউ আছড়ে পরে শেষ হয়ে যায় বালুকাবেলায়
নদীর ঢেউ বয়ে আনে বন্যা চারি ধার
তীব্র ঝড় লন্ডভন্ড করে দেয় আশ পাশ
ক্ষনিকের তরে
ধীরে আসা বন্যা ক্ষতি করে যায় চারি পাশ
রেখে যায় তার দীর্ঘছাপ
বহুকাল ধরে
তেলের আগুন পুড়ে নিঃশেষ হয় বাতাসে
কয়লার আগুন জ্বলে ধ্বিক ধ্বিক করে
সূর্যের দাহ পোড়ায় শুধু কস্ট দিতে
জ্যোৎস্না কিরণ বিকায় আজো শান্তি রূপে।

বন্য ভালোবাসা চলে আসে হঠাৎ করে
তীব্র রূপে ক্ষনিকের তরে
হ্রদয়ে হয়তো আঁচর কাটে
গভীর হয়ে না বসে;
ধীর লয়ে যে ভালোবাসা আসে
কোমল রূপে ধিরে ধিরে
ধীর লয়ে দাগ কাটে হ্রদয়ে
দাঁত বসাতে থাকে আস্তে আস্তে করে
মস্তিস্কের কোষে কোষে
আঁচর কাটে গভীর করে
আর কামড়ে ছিঁড়ে হ্রদয় প্রতিদিন
শুধু রক্ত ঝরাতে।