শনিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১২

অটিস্টিক শিশু


অটিস্টিক শিশু


একটি শিশুর জন্ম
বাবা মা র মনে অনেক হাসি
দাদা দাদি নানা নানী সবাই যেন খুশি
পূর্ণাঙ্গ একটি শিশুর জন্ম হয়
চারিদিকে মিষ্টির লহর বয়ে যায়।





ধীরে ধীরে বড় হয় শিশু
মায়ের মন কেমন কেমন করে
বাবার চোখে যেন কিছু ধরা পড়ে
চোখ মুখ নাক কান হাত পা মাথা সবই আছে তার
তবুও সব থেকেও কি যেন নেই
ভাষাহীন এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে মাঝে মাঝে
যেন অন্ধ সে চোখ
কথা বললে মনে হয় শোনে না কানে
মাঝে মাঝে কালা বলে মনে হয় তারে
কিছু প্রশ্ন করলে জবাব নেই কোন মুখে
যেন বোবা হয়ে থাকে
শুধু খিদে পেলে চিৎকার করে কাঁদে
হাত পা ছড়িয়ে
পেট ভরা থাকলে চুপচাপ বসে থাকে
একা একা কি যেন ভাবে
অথচ ভাবুক নয় যে সে
ডাকলে সাড়া দেয় না
দশটা বাচ্চার সাথে খেলে না
যেন কিছুই বোঝে না
আসলে সবই সে বোঝে
শুধু ব্যক্ত করতে পারে না নিজেকে
কিংবা আর সবার সাথে মানিয়ে নিতে
নিজে নিজে হাসে আর নিজে নিজে কাঁদে
নিজে নিজে খেলে, নিজের মাঝে থাকে।




বাবা মা ছোটে ডাক্তারের কাছে
এই টেস্ট ওই টেস্ট চলে
রেজাল্ট বের হয় অবশেষে
অটিজম শিশু একেই এখন বলে।
কি করতে পারে বাবা মা?
কিছু বুঝতে পারে না
তবু সন্তানকে বুকে আগলে সামলে বাড়া
অসীম মমতায় বড় করে তোলা
মানসিক প্রতিবন্ধী শিশু
সবাই আড় চোখে দেখে আর পিছু কথা বলে
বাবা মা আগলে যায় সন্তানকে
নিজের রক্ত তো? বুকে ধরে মানুষ করতে হবে একে।





ধীরে ধীর বড় হয় শিশু
বাবা মায়ের চিন্তা বাড়ে
এ কেমন এক শিশু কারো সাথে খেলে না যে
চুপ চাপ বসে থাকে ঘরের এক কোণে
যেন ধীরে ধীরে বোল ফোটে মুখে কথা বলে আপন মনে
জড়তা মাখানো কিছু আধো আধো কথা
কিংবা হয়তো কথাই ফোটে না মুখে
শুধু ইশারায় কথা বলে বাবা মার সাথে
ভাবে বাবা মা, সন্তানকে মেশাতে হবে আরও দশটি শিশুর সনে
খেলতে পাঠায় বাড়ির আশেপাশের শিশুদের সাথে
আশে পাশের ছেলে মেয়েরা বড্ড নিষ্ঠুর
খেলতে গেলেই পাগল বলে, খোঁচা মারে এখানে সেখানে
অবুঝ শিশুটি বাড়ি ফেরে কান্না চোখে নিয়ে
শত চেষ্টায়ও আর পাঠানো যায় না তারে
পরদিন খেলতে তার খেলার সাথিদের সাথে।

শিশুটিকে সবাই ঘৃণা করে দূর থেকে পাগল বলে
অথচ বোঝে না যে বাবা মায়ের বুকে তা শেল হয়ে গাঁথে
সময় বয়ে যায় ধীরে ধীরে
একসময় বাবা মা চিন্তায় পড়ে
শিক্ষা দিতে হবে তার শিশুকে
যাতে বড় হয়ে আর দশটা মানুষের মত বাঁচে।
হায় কপাল!!!
নিতে চায় না ভর্তি কোন সাধারণ স্কুলে
বাবা মায়ের ছোটাছুটি সার হয় দৌড়ায় একুলে ওকুলে
শেষে খুঁজে বের করে অটিজম শিশুদের কোন এক স্কুল
যেথায় পরম মমতায় কিছু সভ্য মানুষ
করে যাচ্ছে অক্লান্ত পরিশ্রম
এই মানসিক ভারসাম্যহীন শিশুদের নিয়ে
খেলার ছলে শেখানো চেষ্টা চলে
শিখতে শুরু করে শিশু, মানুষ হওয়ার চেষ্টায়
নিজের মত আর দশটা শিশুকে পাশে পেয়ে
এখানে সবাই তারই মত দেখে মনে যেন ফিরে পায় বল
মানসিক বিকাশের শুরু হয় তার।





হাজার শ্রদ্ধা জানিয়েও শেষ করা যাবে না
এই সব মানুষগুলোর অবদানের কথা
যারা বুকে ধরে মায়া মমতায় বুলি ফোটায়
মানসিক ভারসাম্যহীন এই শিশুদের মুখে
কিংবা সমাজের যে মানুষগুলো আজ অটিজম নামক
ভাইরাসের সাথে লড়ে যাচ্ছে নিজ নিজ অবস্থান থেকে।





আমাদের দেশে এ সব মহান মানুষগুলো প্রমাণ করে দিয়েছে
বাংলাদেশের অটিস্টিক শিশুরাও জয় করে আনতে পারে
বিশ্ব অটিস্টিক অলিম্পিকের স্বর্ণ
অন্যান্য দেশের সাথে প্রতিযোগিতা করে।





আসলে তো অটিজম কোন ভাইরাস নয়
শিশুর জন্ম বা ভবিষ্যৎ তো তার নিজের হাতে নয়
এই ভাইরাস ঢুকে আছে আমাদের মানুষ নামের কিছু
পশুর মনের মধ্যখানে, যারা অটিস্টিক শিশুগুলোকে পাগল বলে
আর দূরত্ব তৈরি করে রাখে তার সন্তানের সাথে।




হায় মানুষ আমরা নিজেদের বলি?
নিজের বাচ্চার সাথে খেলতে দেই না ওই অটিস্টিক শিশুটিকে
দেখতে পারি না আমার বাচ্চার সাথে তার মেশা
ওই অটিজম নামক এক ভয়ঙ্কর এক মানসিক ব্যাধি যেন
চলে আসবে ছোঁয়াচে রোগের মত আমার সন্তানের গাঁয়ে
মানুষ আমরা ঘুরছি আবর্তে চক্রাকারে ছোট মন নিয়ে
নিজেদেরই মাঝে, নিজেতে নিজে মেতে থেকে
একটু কি মনটাকে দিতে পারি না আমরা উদার করে?


রিসার্চে দেখা গেছে একশত পঞ্চাশটি শিশুর মাঝে
একটি শিশুর জন্ম হয় অটিজম শিশু হয়ে;
একবার কি ভেবে দেখেছি কভু মনের গহীন থেকে
এই একশত পঞ্চাশ নাম্বার সন্তানটি তো আমারও হতে পারে?






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন