সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

নিন্দিত নরক


নিন্দিত নরক
- যাযাবর জীবন

ভাবনার সহস্র জ্বালামুখ
আজ টুঁটি চাপা সংকীর্ণ
চেতনারা চেপে বসে বুকের ওপর
গ্রাস করছে এক বিষণ্ণ গহ্বর;
চিন্তা ভাবনার রংধনু কথন
স্তব্ধ হয়ে নিস্তব্ধ অবহেলায়
ক্ষয়িষ্ণু কাগজ টুকরো টুকরো
ভাঙ্গা পেন্সিলের শীষে
এলোমেলো রঙ ছড়িয়ে আছে
বিচ্ছিন্ন ভাবে সাদা ক্যানভাসে
বিচ্ছিন্ন কথার ফুলঝুরি
আজ তিমির নিস্তব্ধতায়
নিজেরই বেঁছে নেয়া
নিন্দিত নরক জ্বালায়।


অনুভবে অনুভূতি


অনুভবে অনুভূতি
- যাযাবর জীবন

সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না
চাওয়া পাওয়া
রিপুর তাড়না
কখনো পেয়ে হারানোর বেদনা;
কতরকম অনুভূতি কাজ করে
মনের ভেতরে
প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে
দিন রাত্রির অষ্টপ্রহরে।

অনুভবে অনুভূতির তীক্ষ্ণতা
প্রারম্ভ, ভোরের সূর্যোদয়ের কালে
খুব মাঝে মাঝে বিষের মত বিঁধে গায়ে
মধ্যাহ্নের তাতানো রৌদ্দুরে
বিকেলের সূর্যালোকে অনুভবগুলো
হেলে পড়ে উপলব্ধির দুয়ারে;
অনুভূতির ছায়া দীর্ঘ হতে হতে মিলিয়ে যায়
সন্ধ্যের আলোছায়ায়
আলো আঁধারির উপলব্ধির মায়ায়;
নতুন করে জন্ম নিতে নতুন অনুভূতিগুলো
নতুন তীব্রতায়
চন্দ্রোদয়ের কালে
রাতের মধ্যপ্রহরে
নির্ঘুম বিষ চোখের পাতায়
কারো কথা মনে হলে
বুকের অনেক গভীর ভেতরে
কেমন এক অন্য অনুভূতির তীক্ষ্ণতা
নতুন করে;
চন্দ্র হেলে পড়ে রাতের শেষ প্রহরে
নতুন সূর্যোদয়
আবার নতুন অনুভূতির জন্ম লয়
এভাবেই ক্রমাগত
চলে আসছে অবিরত
যুগ যুগ কাল ধরে।

মনের দুয়ার খুলে রেখেছি
নতুন নতুন অনুভূতির উপলব্ধিগুলোকে
স্বাগত জানাতে
দিবা রাত্রির অষ্টপ্রহরে
নতুন আবাসন
নিত্য নতুন
বসত গাড়ে মনের ঘরে।


গতি


গতি
- যাযাবর জীবন

তোকে ছাড়া চলতো না আমার একটি মুহূর্ত
কিংবা আমা বিহীন তোর
আজ মনে হয় আঁটকে ছিলেম দুজনেই
ফাঁপা একটা সম্পর্কের ভেতর;
কাওকে ছাড়া কারো চলে না
বড্ড মিথ্যে, ভুল ধারণা;
জীবন চলে তার নিজস্ব পথে
থাকুক আর না থাকুক
কেও কারো সাথে;
ঘূর্ণায়মান পৃথিবী
ঘুরে চলেছে অবিরাম
তার নিজস্ব কক্ষপথে;
থেমে নেই কেও
না তুই
না আমি
না আমাদের জীবন
না ঘূর্ণায়মান পৃথিবী।

চলাই জীবন
চলাই গতি
সাথে নিয়ে এসেছি কপালে লিখে
অমোচনীয় কালিতে যার যার নিয়তি.........

মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

পথ চলতে পথের বাঁকে


পথ চলতে পথের বাঁকে
- যাযাবর জীবন

এইতো সেদিন
অনেক দিন পর খুব হঠাৎ
কেন জানি বাইরে লাঞ্চ করতে ইচ্ছে হলো
তুই তো খুব ভালো করেই জানিস
একা খাওয়ার অভ্যাস নেই
তাই সাধারণত: লাঞ্চ করা হয় না
তবু সেদিন কি যে হলো?
সকালে নাস্তা করিনি বলেই বোধহয়
ভর দুপুরে একটু পেটে টান পড়লো
কেন জানি তোর খুব পরিচিত সেই
রেস্টুরেন্টটার কথা মনে পড়ে গেলো;
অনেকটা পথ আমার জন্য, হাঁটতে হয় আজকাল
তোর মত লাটসাহেবা তো আর নই
যে কালো জীপে, টিনটেড কালো গ্লাসে মুখ ঢেকে চলব!
অগত্যা পায়ে হেঁটেই গন্তব্য পথ যাত্রা
একটু সময় লাগলো
পৌঁছে গেলাম পথ হাঁটায়
পথ যতই লম্বা হোক না কেন
কোন এক সময় তো পথ ফুঁড়োয়।

রেস্টুরেন্টে ঢুকেই খুব আকস্মিক
ধাক্কা খেলাম যেন হাজার ভোল্টের ইলেকট্রিক;

কোনার টেবিলে কে বসে?
যদিও পেছন থেকে তবুও একটুও অসুবিধা হয় নি চিনতে;
আরে বোকা যতই চুল উল্টে ভোল পাল্টাস না কেন
তোকে সামনে কিংবা পেছন থেকে
এক পলকের একটু দেখাই আমার জন্য যথেষ্ট।

অনেক অনেক দিন পর দেখলাম তোকে
খুব হঠাৎ করেই
একদম অনিচ্ছাকৃত অজান্তে;
আমি দেখতে চাই নি
কেন যেনও চোখটা আটকে গেলো
আঠার মত
পলক ফেলতে কষ্ট হচ্ছিল খুবই
তবু খুব সহসাই বোধোদয় হলো;
ঘুরে দাঁড়ালাম চট করে পেছন ফিরে
তোর চোখ যাতে না পড়ে আমার তরে;
হয়ত ইতস্তত করবি
হয়তোবা একটু অস্বস্তি
কি দরকার তোকে বিব্রত করে?
খুব অন্তরঙ্গ ঘনিষ্ঠ বসে ছিলি তোরা দুজনে
হয়তো অর্ডার দিয়ে লাঞ্চের অপেক্ষায়
কিংবা লাঞ্চের সমাপ্তিতে একটু সময় পার করায়
হাতে হাত রেখে
যেমনটি করতাম আমরা দুজনে মিলে
বাইরে কোথাও খেতে গেলে।

তোর হাতটাতেই আড়চোখ চলে গেল
কেন জানি
তোর হাত নেই তোর কাছে
ওটা বন্দী হয়ে আছে তোর সাথীর হাতের মুঠোয়;
কেন জানি খুব বড় একটা ধাক্কা লেগেছিল বুকে
খুব সহসাই ঝটকা ইলেকট্রিক ভোল্ট, হঠাৎ করে
হয়তো পুরনো কথা মনে পড়ে,
আমার হাতটাও কেন জানি
বড্ড বেয়ারা হয়ে উঠলো খুব সহসাই
কখন যে পাশের টেবিলে রাখা গ্লাসটা ভেঙ্গে গেল
চোখের নিমিষে মুঠোর চাপে;
এই যাহ্‌, এ কি হলো?
ভাগ্যিস তুই পেছন ফিরে বসেছিস
কিংবা মত্ত দুজনে দুজনার মাঝে
খেয়াল করিস নি, বেঁচে গেলাম বাবা;
আমার আসলে কিছু মনে করার নেই
ঝটকা লাগারও কিছু নেই
আমিও তো ঠিক এমনই করতাম
কোন এক সময়
তোর পাশে আমি এলে;
হাত কেটে রক্ত ঝরছে, ওয়েটার দৌড়ে এলো
সাদা ন্যাপকিন হাতে;
বুকের ক্ষরণেও কি রক্ত ঝরে?
নাহ আজ আর লাঞ্চটা হলো না এখানে
থাক অন্য কোনো দিন;
ওয়েটারের পকেটে কটি টাকা বকশিশ গুঁজে দিয়ে
উল্টো পথে হাঁটা ধরলাম রাস্তার দিকে।

আমি দিবাস্বপ্ন দেখতে চাই নি
তবু তোকে দেখে ফেলেছিলাম
খুব সহসাই কোন এক বিষণ্ণ বিকেল বেলায়
লাল শারীতে বড্ড মানিয়েছিল তোকে
এখনো চোখে লেগে আছে;
সে দিন থেকে কেন যেন বিকেলটাই বদলে গেলো
আমার কাছে, খুব সংগোপনে;
এখন আর বিকেল দেখি না
দুপুর গড়িয়ে বিকেল আসে
বিকেলের ম্লান আলো সন্ধ্যেয় গড়ায়
গড়াক; প্রকৃতির নিয়মে;
আমার কি এসে যায়?
হাত বাড়িয়ে এখন আর ছোঁয় না
আমার হাত অন্য কারো হাত
আমি চলি আমার নিয়মে;
তুই হাতে নিয়ে বসে থাক নতুন প্রিয়ার হাত
তুই খেলিস প্রেম খেলা তোর নিয়মে;
ইচ্ছে নাকি স্বেচ্ছাচারিতা
আমি জানি না
জিজ্ঞাসা করি নি কখনো
জানতে ইচ্ছে হয় না।

এ জীবনে দেখতে চাই নি তোকে আর
তবু দেখতেই হলো
প্রকৃতির খেলা হয়তো
অথবা ভাগ্যের নির্মম পরিহাস নয়তো;
হয়, এটা প্রায়শই: হয়
আমার সাথে হতেই হয়;
ন-মানুষের ভাগ্যে অনেক বড় একটা "না" ছাপ
মেরে দিয়েছেন ওপরওয়ালা
পরিত্রাণ? এ জন্মে হবে না বোধহয়।

তোকে দেখতে চাই না কখনই আর
তবু আমার চাওয়া আর না চাওয়ায়
যাবে আসবে কার?
তোর; না কি ঐ নিষ্ঠুর ওপরওয়ালার?
এভাবেই না চাইতেও দেখা হয়ে যাবে
আবার হয়তো
কোন এক রেস্টুরেন্টে কিংবা কোন জানা আর অজানা
রাস্তার ধাঁরে
পথ চলতে পথের বাঁকে, বারে বারে।

এখন আর এ নিয়ে ভাবি না খুব বেশী
নিয়তির খেলা খেলছে নিয়তি
আমি, তুই, আমরা খেলার পুতুল
শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি;
খুব মাঝে মাঝে দেখা হয়ে গেলে
তোর সাথে
এখনো কেন জানি ঝাপসা হয়ে ওঠে
চশমার কাঁচ দুটো, অন্ধকার হয়ে
ও কিছু নয় রে, চোখের জলীয় বাষ্প
সময়ের সাথে সাথে উবে যায় হাওয়ায়
ঠিক তোর মত।

তোকে এভাবে দেখতে চাই নি
তবু দেখতে হলো
তোকে নিয়ে আর কিছু লিখতে চাই নি
তবু কলমটা হাবিজাবি এঁকে গেল;
আমি শুধু একটু ঘুমাতে চেয়েছিলেম
গভীর শান্তির ঘুম
চেতনার জগত থেকে অচেতন জগতের গভীর আত্ম-ধ্যানে
যেখানে নির্জনতা কথা কইবে নীরবতার সাথে
মাটির অনেক গভীর তলদেশে
একেবারে মাটি হয়ে, মাটিতে মিশে।





মানব ধর্ম


মানব ধর্ম
- যাযাবর জীবন

লবণ ছিটাতে আমাদের জুড়ি মেলা ভার
লাগুক আর না লাগুক
তরকারির বাটিতে কিংবা জীবন চলার পথে;
মুখে বন্ধু বলে ডাকতাম গাধাটারে
কুত্তা বিলাই যা ইচ্ছা তাই মনে মনে
বেটা বেক্কল মূর্খ জীবনেও বুঝে নাই
ওর মাথায় কাঁঠাল ভাইঙ্গা খাই;
বেচারার হাতটা নাকি কাইট্টা গেছে
আহহারে যাই, একটু দেখতে যাই
চুপে চাপে হাতে লবণ মাখাইয়া লইয়া যাই;
যাওয়া আর আসার পথে
হাত বুলানোর ছলে
গাধাটার কাঁটা ঘাঁ'য়ে একটু লবণ ছিটাই
দেখি না একটু কেমুন লাগে
লবন ছিটাইতে; মনে বড্ড আনন্দ পাই
ও শালা তো আগের থাইকাই গোমূর্খ
ইদানীং তো আর মানুষের পর্যায়েও নাই।

রে মূর্খ; এটাই মনুষ্যত্বের পরিচয়
ও হে গাধা; মানব ধর্ম কথা কয়।


অর্থ




অর্থ
- যাযাবর জীবন

ছোট্ট একটি নাম
অথচ বিশাল কলেবরে
নানাবিধ কর্মযজ্ঞ তার
সে এক অমূল্য রতন
সকলের মনের ভেতরে থাকে খুব সযতন
সকলে পিছনে পেছনে দৌড়োয় তার
কেও কেও এদিক আর ওদিক হাতড়ায়
তীব্র আকাঙ্ক্ষা মনে – তারে ধরিবার।

কি সেই মহামূল্যবান বস্তু?
বাঁধায় তুলকালাম অনর্থ;

যার জন্য পৃথিবীতে সকল মতপার্থক্যের কারণ
নির্ণয় করে দেয় সম্পর্কের ধরণ
শুধুই দেবার আর নেবার
এর মাঝে নেই কোনই তৃতীয় পক্ষ
যদি অদৃশ্য কিছু থেকে থাকে তবে তা ‘স্বার্থ’;
তুচ্ছ তার নাম অথচ মহামূল্যবান মহার্ঘ্য
এরই লাগি সকল বিসর্জন বিবেকহীন
না হয় হলোই সকলের সাথে সম্পর্ক বিহীন
হোক না বাবা, মা ভাই বোন পরিবার পরিজন
কিংবা অন্য যে কোন সম্পর্ক
এর কাছে সব একদম তুচ্ছ;
সকল অনর্থের যে কারণ
অমানুষের হৃদয় করেছে তারে ধারণ;

খুব ছোট্ট একটি ডাক নাম তার – “অর্থ”





রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

মানুষের মন



মানুষের মন
- যাযাবর জীবন

নিজের সাফল্যে আমরা যত না খুশী হই
কাছের মানুষকে বিপদে পড়তে দেখলে
তার থেকে অনেক বেশী আনন্দিত হই
হায়, আমার সাধু সন্ন্যাসীর মনের দরবার!
দূর থেকে দাঁড়িয়ে আহা উহু করাতে
আমাদের জুরি মেলা ভার
মানুষ না কি পরিচয় আমাদের
হায়, বুঝি না মানুষের আজব কারবার।


ছলাকলা না মনকলা?


ছলাকলা না মনকলা?
- যাযাবর জীবন

সম্বোধনে কিছুই যায় আসে না
যা ইচ্ছে ডাকতে পার;
মা, বোন, বান্ধবী কিংবা প্রিয়তমা
মনে মনে মনকলা খেতে খেতে
বসে বসে নারীর নানান রূপ দেখই না;
নারীর মন বোঝে নি ওপরওয়ালা
তুমি কোন ছার হে মূর্খ মানব
এসেছ মন বুঝনে-ওয়ালা
না বুঝেই নারীর ছলাকলা
মনে মনে খেয়ে যাও মনকলা!

মা ডাকে ডাকছ, দিচ্ছ ছেলের শ্রদ্ধা
বোন ডেকে দিচ্ছ তাকে ভাই এর ভালোবাসা
বন্ধু ভেবে কাছে টানা
কিংবা প্রেমিকা ভেবে,
ভালোবাসায় সাগরে ভাসিয়ে রাখ না!
কে বাঁধা দিয়েছে তোমায়,
কে করেছে মানা?
প্রতিদান অবশ্যই পাবে একটুকু হলেও
ছলায় বা কলায়?
সম্পর্ক?
আসলে তাঁদের কাছে উনিশ আর বিশ
যতক্ষণ পাশে থাক মধু
দূর করে দিলেই মনে হয় বিষ;
সম্বোধনে তাদের কিছুই আসে যায় না
কিংবা সম্পর্কের গণ্ডীতে বেড়ী পড়া,
তুমি মনে মনে খেয়ে যাও মনকলা।

সে তোমাকে কিভাবে নিচ্ছে?
তুমি আসলে জানই না,
তবে যেভাবেই নিচ্ছে সেটাই তাঁদের কাছে চূড়ান্ত
তুমি শুধুই ভেবে মর প্রকারন্ত;
তারাই ঠিক করে নেবে
তুমি কে হবে?
হতে পার তুমি তার ভাই, বন্ধু
প্রিয়জন কিংবা জীবন সাথী;
একচক্ষু আবেগে পূর্ণ নারীর মন
সে মনেতে যেভাবে ভাবে
সেভাবেই তোমাকে নেবে
তাতে কিন্তু নেই একটুকুও ফাঁকি।

মাটির ঐ পুতুলের ভিতরে
ভুলেও নারীর হৃদয়ের তলদেশ
খুঁজতে যেও না
অথৈ জলে ঢেউ উঠলে
কোথাও কিনারা খুঁজে পাবে না;
তার থেকে মনকলা খাও
আর দেখে যাও নারীর ছলনা।

ভাবাবেগের নিয়ন্ত্রণে খুব ভালো হয়
যদি ভাবলেশহীন হয়ে যেতে পার;
আর নয়তো বিরহ ব্যথায়
দিনের বেলায় ধুঁকে ধুঁকে চল
আর রাতের বেলায় চাঁদের সাথে একা কথা বল
কিংবা দহনের জ্বালায় জ্বলে পুড়ে মর।

আমার কি?
নারীর কলা যতটুকু দেখেছি, বলে গেছি
যতটুকু জেনেছি, জানিয়েছি;
পরে কিন্তু বল না আবার,
জেনে শুনেও সাবধান করে নি।




শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

মনুষ্যত্ব


মনুষ্যত্ব
- যাযাবর জীবন

চামড়ার খোলস হাড়ের ওপর
চড়ানো তো থাকে
জন্তু জানোয়ারেও;
তবে, মানুষ বলে কাকে?
ওপরওয়ালা মনের খোলসেতে ভরে
মনুষ্যত্ব দিয়েছে যাকে।

লোভ রিপুর তাড়নায়
মনুষ্যত্ব দেখি আজ শোভা পায়
শুধুই বই এর পাতায়
কিংবা কোন পাগল কবির
কবিতার ভাষায়
আর না হয় পাগল কোন আঁকিয়ের
সাদা ক্যানভাসে কালো কালিতে
এলোমেলো লেপ্টানো
বড্ড শোভা পায়।

ওপরওয়ালা ওপরে বসে চিন্তিত বড়
বোঝে না আজকের মানুষের মতিগতি
অনেক যতনে নিজ হাতে গড়ে
মাটি আর পানিতে
তাঁরই সৃষ্টি সর্বশ্রেষ্ঠ মনুষ্য প্রজাতি
কোথায় যাচ্ছে এরা
কেন এত তরা
কি হবে এদের গতি?
বিবেককে এরা আজ পুরোমাত্রায় দিয়েছে বিসর্জন
রিপুর কাছে করে দিয়েছে নিজেরে সম্পূর্ণ সমর্পণ
হায় মনুষ্য জাতি;
করেছে মনুষ্যত্ব থেকে বিভাজনে বিবেকটারে,
ওপর ওয়ালা বড্ড চিন্তিত ভাবে
চামড়ার খোলসে ভরে তবে
মানুষ বানিয়েছি কারে?





বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

বিষ



বিষ
- যাযাবর জীবন

বিষের প্রকারভেদ জানো?
আমার কাছে শোনো;

লাল পিঁপড়ার কামড়ে চুলকায় খানিক
হয়তো একটুকু উহ্‌
কাঠ পিপড়ার কামড়ে
বড্ড জ্বালা;
ঠিক ভ্রমরের কামড়ের কাছাকাছি
তবে রেগে গেলে এরা
কামড়ায় মেলা;
ঢোঁড়া সাপের কামড়ে জ্বলে একটু
তবু সয়ে যায়;
কাল কেউটের ছোবল;
জান কেমন?
ঠিক যেন মানুষের লোভ রিপুর
নখদন্ত মেলা, কামড়ের মরণ।

ভালোবাসার কামড়ের বিষ কেমন?
একদম মধুর মতন;
আর ভালোবাসার মানুষের উগরে দেয়া ঘৃণার বিষ?
কাঠকয়লার গনগনে লাল আগুনে বসে থাকা যেমন।

মানুষ মুখে কামড়ায় বারবার
ঢোঁড়া সাপের বিষে
জ্বালাতে ভালোবাসার মানুষেরে
অথচ নিজে দহনে জ্বলে পুড়ে মরে শতবার;
তারপর?
একসময়, ঢোঁড়া সাপ পরিণত হয় শঙ্খচূড়ে
ক্রমাগত বিষের জ্বালা সয়ে যেতে যেতে।

তারপর?
একটি ছোবল শঙ্খচূড়ের বিষে
ঘৃণা মাখানো শেষ ছোবল
মানুষের দাঁতে মানুষেরে
কামড়ে ধরে শেষবার;
ছিন্নভিন্ন জীবন
আলিঙ্গনে মরণ;
জীবন আর মৃত্যুর মাঝে
শুধু একটি মুহূর্তের ফারাক
বড্ড কার্যকরী এ বিষ
হতে এপার আর ওপার।

রক্তের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিষ মিশে গেলে
বেঁচে থাকার আছে কি উপায়?
হোক সে প্রেমে; কিংবা ঘৃণায়?




বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

নরকের পৃথিবী


নরকের পৃথিবী
- যাযাবর জীবন

স্বর্গ মর্ত্য পাতাল খুঁজে চলেছি
মন্দির, মসজিদ আর গির্জায় ঘুরে ঘুরে
ঈশ্বর, আল্লাহ্‌ কিংবা ভগবানের সন্ধানে;
যদি কোথাও দেখা পাই তার
শুধাইব তারে একটিবারে;
কি অপরাধ ছিল আমার পূর্ব জন্মের কালে?
কেন এখানে টেনে এনে শাস্তি দিল আমায়
এই জনমে; এই নরকের পৃথিবীতে.........





লোভ


লোভ
- যাযাবর জীবন

লোভ রিপুটা আছে
আমাদের সবার মাঝেই আছে,
ঘুমিয়ে কিংবা জেগে
পরিমাণে শুধু কম আর বেশি
কারো কারো প্রকাশ একটু বেশি রকম প্রকট
কারোটা চুপেচাপে ফণা মেলে অনুভবে;

লোভের প্রকাশ প্রকট হলেও একদিক দিয়ে ভালো
অন্তত: হিপোক্রেসিটা কিছুটা হলেও তো কম হলো!!!!



মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

জীবনের ভিন্ন লক্ষ্য



জীবনের ভিন্ন লক্ষ্য
- যাযাবর জীবন

জীবনের চলার পথের গুরু এক
আর সাধন-পথের গুরু আরেক
হাজার রঙের মানুষের লক্ষ্য অনেক
লক্ষ লক্ষ্যের আদতে লক্ষ্য এক
জীবন পথের চেলাচামুণ্ডাদের
তার নাম - "অর্থ"
সাধন পথের চেলাচামুণ্ডারা
এর নামকরণ করেছে - "অনর্থ"

এক এক জন এক এক ভাবে দীক্ষিত হয়
যার যার গুরুর দীক্ষায়
কেও শিক্ষায় কেও কুশিক্ষায়
সাধনা-লব্ধ জ্ঞান এক একজনের এক এক রকম
কারো সমৃদ্ধি কারো কল্যাণ
কেও মানব প্রেমে খোঁজে ভগবান।

জীবনপথের হোক আর সাধন-পথের
গুরুর দেখা সবাই পেতে চায়
কেও পায় আর কেও বা হারায়
খুব অভাজনেরা পেয়ে হারায়।




ডিজিটাল জগৎ


ডিজিটাল জগৎ
- যাযাবর জীবন

আজকাল ডিজিটাল হয়ে গেছি
তুই, আমি, আমরা ও আমাদের জীবন
এমনকি ডিজিটাল হয়ে পড়েছে আমাদের প্রেম
ডিজিটাল প্রেমেতে ডিজিটাল রসনা
ডিজিটাল কামনায় ভার্চুয়াল বাসনা;
এখানে বার বার রক্তাক্ত অজস্র আমি
এখানে বার বার রক্তাক্ত অজস্র তুই
এখানে বার বার রক্তাক্ত অজস্র ভালোবাসা
চেনা আর অচেনার ভীরে যেন সব ধোঁয়া ধোঁয়া
ভার্চুয়াল প্রেমে কেও পায়না কারো ছোঁয়া
তবুও মিছে ভালোবাসার এক জগৎ গড়ে তুলছি
আমরা সবাই মিলে
তুই, আমি আর
আমাদের চারিপাশের সকল ডিজিটাল ভাবনা।

ভার্চুয়ালে বন্দি তুই
ভার্চুয়ালে বন্দি আমি
ভার্চুয়ালে বন্দি প্রেম, কাম, ভালোবাসা
ভার্চুয়ালে বন্দি ডিজিটাল নামক এক নতুন প্রজাতি
ডিজিটাল প্রেমের ভার্চুয়ালে মাখামাখি
আদতে কোথাও খুঁজে পাই না আমরা রিয়ালিটি।

এখানে প্রতিদিন দেখা ভার্চুয়াল জগতে
পরস্পরের সাথে,
তবু কখনো হয়নি দেখা বাস্তবেতে
এখানে নিত্য চলে ডিজিটাল প্রেম
আর প্রতিদিন একই হারে ভার্চুয়াল ছেঁকা,
তবুও প্রেম চলে ভার্চুয়াল জগৎ জুড়ে
ভার্চুয়াল নারীর সাথে ভার্চুয়াল নরে;

আদতে এখানে -
তুই একা
আমি একা
আমরা সবাই মিলে একসাথে থাকি
একসাথে বসবাস
নিত্যই ভার্চুয়াল দেখা;
তবু বাস্তবে থাকি বড্ড একা একা
বুকের ভেতরটা খুব বেশি খালি খালি
একদম যেন বাস্তবের পরিপূর্ণ শূন্য ফাঁকা।



সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

অবমূল্যায়ন


অবমূল্যায়ন

- যাযাবর জীবন

নারী মানেই সুন্দরী
পুরুষ তার পূজারী;
তবে প্রেম মানে কি হে
সুন্দরী রমণী?
শুধুই দেহতে এমন বিশেষ কিছু, কি আছে রে তোর?
রমণের ক্লান্তির পর, একটু আছে কি ভাবনার অবসর?

প্রেম মানে কি শুধুই দেহ আর রমণের বাসনা?
এতে ভালোবাসার বড্ড বেশী অবমূল্যায়ন হলো না?




মুঠোফোনে স্বপ্ন কথন


মুঠোফোনে স্বপ্ন কথন

- যাযাবর জীবন

সাগরের অনেক গভীর তলদেশ থেকে
জলের কোলাহল ভেঙ্গে
মৃদু একটু জল তরঙ্গ
ভেসে আসে কানে
মুঠোফোনের তরঙ্গ মাধ্যমে
তখন আমি গভীর ঘুমে
ছোট্ট একটি প্রশ্ন - কেমন আছ পৃথিবী?

বুকের খাঁচায় চারিদিক থেকে
কোথা থেকে যেন এক সাঁড়াশির চাপ
ছটফট করে লাফিয়ে বিছানায় আমি
যেন ভেঙ্গেচুরে চুরমার হয়ে গেছি
দমবন্ধ কিছুক্ষণ
নাকি অনেকক্ষণ
মনে নেই এখন
হিমালয়ের ওপাড় থেকে হালকা বাঁশির শব্দ কি শুনেছি
নাকি ঘুমের ঘোরে মনের ভ্রমে জেগে উঠেছি
হাতের মুঠোফোন কানে লাগানো দেখি
সুরেলা বাঁশি আবার সুধায় - কেমন আছ পৃথিবী?

এবার যেন বোধোদয় হয়
চাঁদের গান পৃথিবীতে বাজতে রয়
আমি বিমোহিত
অভিভূত
অবশ হয়ে পড়েছি;
অনেক অনেক কিছু একসাথে বলতে ইচ্ছে করে
গলাফাটা চিৎকারে
তবু টুটি চেপে ধরি সংযমে
খুব ধীরে উত্তর দেই -
চাঁদনী ছাড়া অন্ধকার হয়ে আছে পৃথিবী;
"তুমি কবে আসবে চাঁদনি?"

আবার সেতারের টুংটাং তরঙ্গ ধ্বনি
আমি তো তোমারই আছি পৃথিবী
সেই বিগ-ব্যাং থেকে আজ পর্যন্ত
তোমার সাথে লেপ্টে আছি
মাঝে মাঝে শুধু সূর্যটা বাঁধা হয়ে আসে
দুজনার মাঝে
এটাও বোঝ না কেন তুমি?
সেই আগের মতই পাগল রয়ে গেলে
এতদিনে একটুও বদলাও নি।

তারপর শুনশান নীরবতা
দূরে কোথাও ঝি ঝি পোকার একটানা ডাক শুনি
মুঠোফোন নিস্তব্ধ নিশ্চুপ হয়ে গেছে
আমিও স্তব্ধ
তবে কি এতক্ষণ স্বপ্ন দেখেছি?
হতেই পারে না
যুগ যুগ ধরে ঐ কণ্ঠস্বর
আমার কানে একটুও ভুল হবে না;
বিহ্বল চেয়ে পাগলের মত নাম্বারটা বের করার চেষ্টা করি
মুঠোফোনের কল লিস্টে দেখি
শেষ রিসিভ করা কলটি
"নো নাম্বার" উঠে আছে
সেই অনেক আগের কথাই রেখেছে সে
কখনোই আমায় জানতে দেয়নি
তার বর্তমান অবস্থানটি
শুধু খুব মাঝে মাঝে
অনেক অনেক দিন পরে পরে
হঠাৎ করেই এভাবে আইডেন্টিটি-বিহীন নাম্বার থেকে
একটি সুরেলা ধ্বনি ভেসে আসে কানে
খুব অসময়ে
যখন আমি গভীর ঘুমে;
ঠিক তখনই চাঁদনি জানতে চায় তার পৃথিবীর কথা
মুঠোফোন নামক তরঙ্গ মাধ্যমে,
আমি শুধু টের পাই
আমার জন্য তার ভালোবাসাটুকু
এখনো সেই আগের মতই রয়ে গেছে তার মনে
যেমন করে আমি এখনো সেই আগের মতই ভালোবাসি তাকে
দূর থেকে দূর থেকে
ভালোবাসার প্রতিদানে ভালোবাসা
সীমাহীন প্রতিদিন।

হাহাকারে বুকের অনেক গভীর তলদেশ থেকে
চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে
তোকে ছাড়া আমি ভালো নেই, ভালো নেই চাঁদনি।


রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

অভিমানের বেড়াজাল


অভিমানের বেড়াজাল
- যাযাবর জীবন

আজ চন্দ্রের কততম দিবস? - ভুলে গেছি;
হিসেব রাখা হয় না অনেক দিন ধরে
অথচ চাঁদের সাথে আমার প্রেম কাহিনী
সে আর কে না জানে? রাত্রি ও ধরণী!

অথচ দেখ জীবনটাই কেমন বদলে গেছে আজ
এখন আমার মধ্য দুপুর অথচ পৃথিবীর নিশুতি রাত
আমি জেগে আছি অন্ধকার ঘরে আর আকাশেতে জেগে চাঁদ
মনে পড়ে দুজনকেই দুজনের
তবু দেখা হয় না কারো সাথে কারো
খুব জানা কারণে আর তুচ্ছ অকারণে
অল্প কিছু ভুলে কিংবা অনেক দিনের জমানো অভিমানে;
আমি পড়ে থাকি অন্ধকারের কোণে
চাঁদ আলো বিলিয়ে যায় ধরিত্রীর কোনে কোনে
আমার অভিমানে চাঁদের কি এসে যায়?
আজ আমার আর চাঁদের মাঝখানে
হাইফেনের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে মাথার ওপরের ছাঁদ
যেমন তোর আর আমার মাঝে ছোট্ট একটু অভিমানের ফাঁদ।।

আমার আর চাঁদের মাঝে ভেঙ্গে যাবে অভিমান
খুব সহজেই, খুব সহসাই
যখনই সরে যাবে মেঘের চাদর
তার আর আমার মাঝে
কিংবা আমার ইচ্ছে হলে
মাথার ওপরের ছাঁদটাকে পদতলে
কাঁচকলা দেখিয়ে অন্ধকারের কালোয়;
মন ভরে তাকে একবার দেখলেই
ভাসিয়ে দেবে আমায় আলোর বন্যায়
ভেসে যাবে আমাদের সব অভিমান
চাঁদের আলোকিত আলোয়।

কিন্তু তুই? আমার আর তোর মাঝের
অভিমানের অদৃশ্য বেড়াজাল
যেটায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছি দুজনে বেদনায়?
কে কাটবে ঐ বেড়াজাল?
তুই না আমি?
কেও পা বাড়াই না;
অক্ষমতার হাঁ হুতাশ বুকে নিয়ে আমরা দুজন
দু ভুবনে পড়ে আছি;
সেই কতদিন হয়ে গেছে আমরা কোথাও যাই না
আসলে আমাদের কোথাও যাওয়ার যায়গা নেই
একে অপরকে ছাড়া;
শুধু শূন্য হাহাকার বুকে নিয়ে ঘুরি ফিরি খাই দাই
আর রাতের নির্জন আঁধারে দুজন
নির্জনতার গান শুনি
একে অপরের অতৃপ্ত বুকে ঘ্রাণ শুঁকি মনে মনে
মনের ঘরে বন্দী হয়ে অন্ধকারে তাকাই
যদি কোথাও জোনাক জ্বলে ওঠে
একটুখানি আলোর দিশা কোন এক সুদূর থেকে
পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে আমাদের দুজনকে দুজনার পানে।

অপেক্ষায় আমি
প্রতীক্ষায় তুই
প্রহর গোনার প্রহর বয়ে চলে টিক টিক অবিরাম
যেন সেই বিগ-ব্যাং থেকে আজ অবধি
দুজনার এই অতৃপ্ত প্রতীক্ষার প্রহর
কখনো সমাপ্ত হবে কি?




ওপরওয়ালার খোলা কথা



ওপরওয়ালার খোলা কথা

- যাযাবর জীবন

ওপরওয়ালা ডেকে কয়
ওরে ওরে ও বোকা
ঠকাতে মন খারাপ করিস কেন?
তুই তোর মত ঠকে যা, ঠকে যা।

মানুষের আর সাধ্য কি আছে?
ঠকায় মানুষেরে?
দানার মালিক তো বসে আছে
তোদের মাথার ওপরে
তোদেরই দিকে চেয়ে
কেন ভুলে যাস তোরা?

মন খারাপ করিস না রে মানব
তোদের ঠকানোর ফাঁকের মাঝেও
আমার গোপন ফাঁক, রেখে দিয়েছি অনেক
তুই তোর মত করে ঠকে যা;
মানুষ আর কতই ঠকাবে তোকে?
তোর টা শেষ হলে
ঢেলে দেব আরো অনেক করে
আমার অসীম ভাণ্ড থেকে,
দেখছি আমি সব এখানে বসে
তোদের নসিব লিখে রেখেছি আমি
আমার নিজ হাতে
মনকির নকীর? সে তো শুধু গুনে যাচ্ছে
হিসেব রাখার ছলে
বসিয়ে দিয়েছি আমিই তাদের তোদের কাঁধের পরে;
পাপ পুণ্যের ফলাফলে তোর কি যায় আসে
বিবেক বুদ্ধি দিয়ে দিয়েছি অনেক করে তোকে
নিজের মত করে ঠকিয়ে যা কিংবা ঠকে যা
তোর বিবেক যা বলে
যার যার হিসেব অনুযায়ী
কর্মফল পেয়ে যাবি আখেরাতে।



শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

পাগলের প্রলাপ


পাগলের প্রলাপ
- যাযাবর জীবন

খুব অল্পতেই রেগে উঠি ইদানীং
হয়তো স্বভাব দোষে
তুই খুব ভালো করেই জানিস তা,
সেই কত যুগ ধরে আমাদের বাস একসাথে;
হয়তো ইদানীং রেগে যাই হঠাত করেই
হয়তো একটু অতিমাত্রায় বেশী রকম
মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ঔষধের প্রভাব যখন
তাও খুব ভালো করেই জানিস তুই
যখন বাক্সর পর বাক্স ঐ নেশাগুলো কিনে আনিস নিজেই
আমার তো আর ঔষধ কেনারও ক্ষমতা নেই!
গ্লাসে পানি ঢেলে বিষগুলো চালান করিস নিজের হাঁতে
আমারই পেটে, একটু বেশীদিন বাঁচিয়ে রাখতে;
হাজার হোক একপ্রকার বিষই তো
গণ্ডগোল তো একটু হবেই মাথায়।

ইদানীং কি যে করি, কাকে কি কেন বলি
কিছুই মনে থাকে না
কিছু বুঝে বলি বেশিরভাগ না বুঝেই;
শুধু তুই কিছু বললেই যত আমার বাহাদুরি
গলা ফাটানো চিৎকার সব তোরই ওপর ঝারি;
সয়ে যাস মুখ বুজে
পাগল কে বড্ড বেশী ভালোবাসিস যে!
আমি বুঝি, সবই বুঝি
তবু ঐ চণ্ডাল রাগ সামলাতে না পারি
সোজা সাপ্টা মুখের তুবড়ি উড়িয়ে ঝগড়া করি
মেয়ে মানুষের মতন;
তোর কাছ থেকে নেয়া শিক্ষার
প্রয়োগ করি তোরই ওপর অতি যতন;
বেশি রাগ করিস নে বাবু
বড্ড ভালোবাসি যে
তাই তো উনিশ থেকে বিশ হলে
মনটা অভিমানে কাঁদে;
কি জানি কেন? হয়তো পাগল হয়ে গেছি বলে।

একে একে চারটা ডাক্তার দেখালি
সব বড় বড় এক একজন রাশভারী
অনেক নামীদামী
টাকা গুনলি কাড়িকাড়ি
কোন লাভ কি হলো?
সবাই তো একই রায় দিলো;
সেই যে আমি তোকে ঠাট্টার ছলে বলেছিলাম
কোন লাভ নাই রে
রেখে আয় আমায় পাগলা গারদে
এখন প্রমাণ পেলি কি?
নাকি তোর আরো পরীক্ষা নিরীক্ষার রয়েছে বাকি?

তুই কেন বুঝিস না?
এখন সত্যি সত্যি মাথা কোন কাজ করে না
তোর সাথে গলা ফাটিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলি
তাও আশ মেটে না;
ইচ্ছে করে সব ভেঙ্গেচুরে তছনছ করে দিতে
তোর একটুখানি অবহেলাতে
বড্ড অভিমানী হয়ে পড়েছি পাগল হতে গিয়ে;
কেন এমন করিস?
একটু বুঝ না রে আমায়
একটু ভালো করে বাঁচতে দিস।

তোর তো সবাই আছে চারিধার জুড়ে
বাবা, মা, ভাই, বোন ছেলে মেয়ে পরিজন
কত ভালোবাসে তোকে
কত সোহাগে কত আদরে
চারিদিক থেকে ঘিরে;
তুই ছাড়া আমার আর কে আছে বলতো দেখি রে "বাবু"?

তোর মুখটা কালো দেখলে আমার সব ওলোটপালট
বুকের ভেতর খামচে ধরা কেমন এক অনুভব
ঠিক বোঝাতেও পারি না
শুধু কেমন এক কষ্ট কষ্ট ভালোবাসার ক্ষরণ
ঠিক লাল রক্তের নয়
একদম কালো কুচকুচে অন্ধকার
কেন রাগ করিস পাগলের ওপর
ক্ষমা চাইনি বলে অভিমানে?
কেন রে আমায় এমন করে করিস কাবু?

তুই কি খুব বেশী ক্লান্ত হয়ে পড়েছিস?
পাগল টেনে টেনে;
আর টানতে হবে না তোর, আমাকে;
পারলে রেখে আয় আমায় পাগলা গারদে।
খুব মাঝে মাঝে আমার কথা মনে পড়লে
দেখা করিস গিয়ে
তবে পাগলেরও একটা শর্ত আছে -
সেই পুরনো দিনের মতন হাসিমুখ নিয়ে;
একটু হাতটা ধরে থাকিস কিছুক্ষণ ধরে
সেই আগের মত অনেক শক্ত করে।

নিরন্তর নির্বাসন নিতে পারি আমি
তোকে ভালোবেসে;
শুধুই তোর একটি হাসিমুখের জন্য ।



বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

বিকিকিনির হাঁট


বিকিকিনির হাঁট
- যাযাবর জীবন

আজকাল বিকিকিনির হাঁটে
খুব সহজলভ্য করে নিয়েছিস নারী
টাকার মূল্যে বিকোয়
ধিক বিবেক, নাকি তোরা আনাড়ি?
ভেবে দেখেছিস কে?
তোরই জন্মদাত্রী মা এর জাত
অথচ পয়সার বিনিময়ে মিটাস ভোগ বিলাস
হায় মানুষ! বানিয়েছিস বাজারের পণ্য
মা জাতিকে, তোরা ধন্য!!!

সম্মান যদি না দিতে পারিস
তবে কচু গাছ খুঁজে নে
দড়িটা পেয়ে যাবি একটু খুঁজলে
তাও না পেলে মায়ের আঁচল গলায় পেঁচিয়ে দে;
মা মরে গেছে? হায় কুলাঙ্গার তোরই তো দোষে,
তাহলে কি আর করবি!
ঐ নেশার বিষই কিছু বেশী করে কিনে নে
বিকিকিনির হাঁটে সেও বড্ড সহজ লভ্য
একটু বিবেকবোধ
একটু মনুষ্যত্ব
যদি মরে গিয়ে থাকে
নেশার বিষ পুরোটা ঢেলে দে গলায়
তোর বেঁচে থাকার প্রয়োজন ফুরিয়েছে এ ধরায়......





একটি মুহূর্ত


একটি মুহূর্ত
- যাযাবর জীবন

একটি মুহূর্ত
চোখের পলক ফেলতে না ফেলতে
ওলোটপালট পুরোটা জীবন
ভালোবাসায় বিদ্ধ
ঘৃণায় চৌচির
প্রেমে সিক্ত
দহনে রিক্ত
টর্নেডো বিধ্বস্ত
ধুলায় ধূসরিত
শুধু মাত্র একটি মুহূর্তের ফের।

হঠাৎ দেখা এক ঝলক
চোখের পলক
চমকে ওঠা
ভালোলাগা
ভালোবাসা
ঘর বাঁধা
এক পলকের একটি ঝলক থেকে
একটি মুহূর্তে দেখার সাথে সাথে
একটি জীবন
কাটানো একসাথে
শুধুই একটি মুহূর্ত
ভালোবাসায় সিক্ত।

হঠাৎ অভিমান
খুব হঠাৎই একটি মাত্র অবান্তর কথা
মুখের আড় না ভাংতেই
ফসকে গেল অসম্ভব কোন একটি কথা
থমকে গেল একটি মুহূর্ত
চমকে ওঠা
থমকে যাওয়া জীবন
অহংবোধে আঘাত
খুলে এলো যেন আঠা দিয়ে জোড়া লাগানো
এক সুন্দর মনোহর সংসার
ভালোবাসা হলো ঘৃণায় পরিণত;
একটি বেফাঁস মুহূর্তের ফাঁক গলে
একটি বেফাঁস কথা
ভেঙ্গে চুড়ে খান খান
শুধুই একটি মুহূর্তের বেফাঁস কথা।

তাহলে ভালোবাসা আর ঘৃণার ফারাক
- শুধুই কি একটি মুহূর্ত?
কিংবা গড়া আর ভাঙার ফারাক?

একদিন খুব আনমনে
পথ হাঁটতে পথের বাঁকে
চোখের পলক ফেলতে না ফেলতে
মূর্তিমান দৈত্যটা হঠাৎ সামনে
ধুমমমম!!!!!!!!
কি ছিল ওটা?
ট্রাক, বাস, জীপ কিংবা গাড়ি
কি এসে যায় এখন?
ট্রাক বা বাসের ড্রাইভার কি নেশাগ্রস্থ ছিল?
নাকি কালোটাকার গরমে বেপরোয়া মদ্যপ এক লম্পট
কিংবা বাপের আদরে বখে যাওয়া কোন এক সন্তান?
কি এসে যায় কে ছিল ড্রাইভার?
দেহটা পড়ে আছে ঐ যে রাস্তার ধারে
প্রাণটা কি আছে এখনো?
হয়তো এখনো হৃদয়টা ধুকপুক করে
কিংবা নিথর হয়ে গেছে মুহূর্তের অবসরে,
পরাণ পাখি খুব ফুড়ুৎ মারে
চোখের নিমিষে
পলক ফেলতে না ফেলতে
মুহূর্তের ফাঁক গলে
একটি মুহূর্ত;
জীবন আর মৃত্যুর মাঝে পড়ে আছে
একটি অচেতন দেহ কিংবা লাশ
কি এসে যায় কার?
সেও তো সেই মুহূর্তের কারবার।
শুধুমাত্র একটি মুহূর্তের ফাঁক।

তবে কি জীবন আর মৃত্যুর মাঝে দূরত্ব
- শুধু ঐ একটি মুহূর্ত?

নাকি এ সবই কোন এক অদৃশ্য নিয়তির খেলা
অনেক আগে থেকেই পূর্ব নির্ধারিত।






মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

যাতনার ভালোবাসা সযতনে


যাতনার ভালোবাসা সযতনে
- যাযাবর জীবন

যত্ন করে চোখের কোণে জমিয়ে রাখা স্বপ্নগুলো
যত্ন করে মাথার ভেতর গুনগুনানি গান শোনালো
যত্ন করে হৃদয় ঘরে, ঘর বাঁধার ঐ ইচ্ছেগুলো
যত্ন করে মনের ভেতর রেখে দেওয়া স্মৃতির ধুলো
যত্ন করে মুছে দিলি জীবন থেকে খুব যতনে
যত্ন করে ফেলে গেলি ডাস্টবিনের ঐ ময়লা কোণে।

ইচ্ছেগুলো তোর বুকেতে যত্ন করে বেঁচে উঠুক
ইচ্ছেগুলো তোর বুকেতে তীব্রভাবে জ্যান্ত নাচুক
ভালোবাসার স্পর্শগুলো ধিকি ধিকি আগুন জ্বলুক
ভালোবাসা তোর চালেতে ঝুম বৃষ্টি নেমে আসুক।


নেশার ভুল, বিবেকের সংশোধন



নেশার ভুল, বিবেকের সংশোধন
- যাযাবর জীবন

লাল সুরার লাল নেশা, মনে না হয় একটু লাল রঙই ধরাতো
ছুঁড়ে ফেলে দিলাম ঝুম নেশায় একদিন
চার চোয়ানীর নাচের ঘোরে
খুব হঠাৎ করে
অথচ চলতো না একটি দিনও তোরে ছাড়া
আমার লাল নেশা
খুব কি ক্ষতি হলো?
তোর বা আমার?
কি জানি?
আমার তো মনে হয় কিছুটা লাভই হলো,
অর্থের সাশ্রয়ে
কিংবা কিছুটা রাশ টানা ধর্মের অবক্ষয়ে।

ক্যান্সার ষ্টিকের ধোঁয়াটে নেশা
ভাসতাম ধোঁয়ায় চব্বিশ ঘণ্টা
একটার পর একটা
কিংবা এক ম্যাচের কাঠিতে এক বাক্স ধোঁয়া
ম্যাচের কাঁঠি বাঁচানোর চেষ্টা কিংবা কৃপণতা;
ছুঁড়ে ফেলে দিলাম ঝুম নেশায় একদিন
ধূম্রজালের ধোঁয়ার ঘোরে
খুবই হঠাৎ করে
অথচ চলতো না একটি দিনও তোরে ছাড়া
আমার ধোঁয়ার নেশা;
খুব কি ক্ষতি হলো?
তোর বা আমার?
কি জানি?
আমার তো মনে হয় কিছুটা লাভই হলো,
অর্থের সাশ্রয়ে
কিংবা কিছুটা রাশ টানা ক্যান্সার আগমনে।

তোর প্রেমের কঠিন নেশা
মনের কথা তারপর শরীরের বার্তা
খুব স্বাভাবিক প্রেমের পরিণয়
একটা সময় শরীরই কথা কয়
মনের আড় ভেঙ্গে, পেছন ফেলে সকল সংশয়;
ছুঁড়ে ফেলে দিলাম মনের যত প্রেম
ছুঁড়ে ফেলে দিলাম তোকে, খুব অবহেলায়
অন্যান্য নেশাগুলোর মত
বেঁছে নিতে নেশা বিহীন জীবন যাপন
তাও খুব হঠাৎ করে
অথচ চলতো না একটি দিনও তোরে ছাড়া
লেপ্টে থাকত মনেতে শরীরের নেশা
খুব কি ক্ষতি হলো?
তোর বা আমার?
কি জানি?
আমার তো মনে হয় সত্যিকারের লাভ হলো
এবার দুজনের;
অনৈতিক ভালোবাসার নৈতিক রাশটানা
একটা ভুল কতদিন করা যায় একটানা?

বিবেক, বুদ্ধি, মনুষ্যত্ব যখন একসাথে কথা কয়
ছুঁড়ে ফেলা সকল নেশা, মানুষেরই পরিচয়
আজকের হয়তো আপাত ক্ষতি
আগামীর অবশ্যই জয়।




সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

ক্ষুধা, তৃষ্ণা ও লোভ



ক্ষুধা, তৃষ্ণা ও লোভ
- যাযাবর জীবন

অনেক ক্ষুধা?
সয়ে যা না বাপু;
কতটুকু?
ঐ মঙ্গার দেশে একটি ক্ষুধার্তের একটি রুটি খেতে দেখে
হৃদয় তৃপ্ত হয় যতটুকু।

অনেক তৃষ্ণা?
সয়ে যা না বাপু;
কতটুকু?
ঐ তৃষ্ণার্ত চাতকের পানের তৃষ্ণা মেটানো দেখে
হৃদয় তৃপ্ত হয় যতটুকু।

কথার মর্ম বোঝে ক'জন?
লোভের ধর্মে করে আছি মোরা পদার্পণ
সম্বরণে ক্ষতি কি খুব বেশী?
ক্ষুধা, তৃষ্ণা কিংবা লোভের;
অর্থই লোভ
লোভই পাপ
এলোমেলো জীবন সকল অনর্থের।




রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

ভালোবাসা


ভালোবাসা
- যাযাবর জীবন

এত বড় বড় খেলোয়াড়ের বাস
পুরোটা ফেসবুক জুরে,
অনেক বড় খেলোয়াড় তোরা
খেলিস হৃদয় কেড়ে।

ভালোবাসা কি? সংজ্ঞা খুঁজছি,
সেই তোর খেলার পাত্র হওয়ার পরে;
এখনো বুঝি নি ভালোবাসা বলে
সত্যি কোথাও কিছু আছে না কি?
নাকি ওটা শুধুই কবিতার ভাষা
আসলে স্বার্থের সুগন্ধি রূপকথা;
হাতছানি দেয় ফেসবুক জুরে
কুৎসিত কিছু মন
সুন্দর সব চেহারার অন্তরালে
ছলে বলে কৌশলে চেহারা বদলে ঘুরে।

এখানে কেও রাত জাগে প্রেমিকের তরে কেঁদে
কেও বা রাত জাগে প্রেমিককে কাঁদাতে;
আর ভালোবাসা নামক সোনার হরিণ?
সে যে সৃষ্টি হতে থাকে কাব্যের পৃষ্ঠা জুড়ে;
অধরা এক প্রেমের হাতছানিতে
দহনে পুড়ে পুড়ে।



কলমের শক্তি ও কিছু অন্যরকম অনুভূতি



কলমের শক্তি ও কিছু অন্যরকম অনুভূতি
- যাযাবর জীবন

বিশ্বাস অর্জন করতে চলে যায়
যুগের পর যুগ
ভাঙতে মুহূর্ত মাত্র;
কে বোঝে?
বিশ্বাস ভঙ্গের যাতনা বয়ে যেতে হয়
যুগের পর যুগ ধরে।

এগুলো মানুষের অনুভূতি
কুকুরের নয়
কে বোঝে?

কিছু কিছু মানুষ আছে
চেয়ে ভাত খায়
খেতে দিলে থালা ভরে ভাত খায়
পেট ভরলেও ঠেসে যায়
যতক্ষণ না পেটে চাপ লাগে
কিংবা বদনার অভাব অনুভব করে
তারপর আর সময় কোথায়?
খাওয়ার থালাটাতেই হেগে যায়
এদেরও মানুষ কয়
আমার বড্ড লজ্জা হয়।

এরা আবার স্বার্থের রাজনীতি করে
নিজের পেছন ধোয় না হাগার পরে
অথচ নির্দ্বিধায় পরের পেছনে আঙ্গুলি করে
এদেরও নাকি মানুষ বলে!

"আজকে যাদের এরা অবহেলায় ছুঁড়ে মারে
কালকে প্রয়োজনে ডাস্টবিন ঘেঁটে বুকে তুলে ধরে
তখন যে এদেরই খুব বেশী প্রয়োজন হয়ে পড়ে
ভোটের রাজনীতি নাকি এরেই বলে!"
আমি নির্বোধ মানুষ রে ভাই
বুঝি কম।

মাঝে মাঝে ঐ সব মানুষগুলো ভুলে যায় কেন?
স্বার্থের রাজনীতি থেকে কলমের শক্তি অনেক বেশী ধারালো।



বিশেষ দ্রষ্টব্য: রাজনীতিবিদরা আমার থেকে ১০০ মাইল দূরে থাকুন। অথবা কলমের খোঁচা খেলে পেছনে চোতরা পাতা ঘষুন।


শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

প্রেমের রণক্ষেত্র


প্রেমের রণক্ষেত্র
- যাযাবর জীবন

ভালোবাসায় কেন এত দ্বন্দ্ব
ঈর্ষা, জ্বলন, দহন
কথা কাটাকাটির মারপ্যাঁচ
নিত্য নৈমিত্তিক
যেন এক রণক্ষেত্র
একজনের বুলি তো
আরেকজন চালায় যেন মেশিনগানের গুলি
মুখে সার্বক্ষণিক
মাঝে মাঝে হাতাহাতি
যেন সত্যিকারের এক রণক্ষেত্র
তুচ্ছ বিষয় নিয়ে হাজারো দ্বন্দ্ব
প্রেমেতেও কেন যে এত বারুদ পোড়া গন্ধ?

থাকা আর না থাকা



থাকা আর না থাকা
- যাযাবর জীবন

আমার চলে যাওয়া আর না যাওয়ায়
কিছুই হবে না উনিশ বিশ
এই ধরিত্রীর;
নদীর জল সেদিনও কুলকুল বয়ে যাবে জানি
সেদিনও লাগবে জোয়ার ভাটার টান
নদীতে, সাগরে
বয়ে চলা জলরাশিতে
দিনের সূর্যের নীচে
কিংবা রাতের নক্ষত্রের তলে
ঠিক আজকের মতই।

সেদিনও গন্ধ ছড়াবে
শিউলি, বকুল, হাসনাহেনা
আর যত নাম না জানা বনফুল
গন্ধের ঢেউ এসে লাগবে সেদিনও
প্রেমিক আর প্রেমিকার মনে
খুব সুগন্ধে ভরে রবে তাঁরা
যতদিন প্রেম রবে;
তারপর বিচ্ছেদের বেদনা ফুলের ঘ্রাণটুকুও
বড্ড দুর্গন্ধ মনে হবে;
খুব মন পোড়া যাতনায় মৃত দেহের গন্ধ পাবে
এখানে ওখানে;
ঠিক আজকের দহনের মতই।

ব্যাঙ্গমা আর ব্যাঙ্গমী আজকের মতন
সেদিনও রয়ে যাবে
হয়তো দুজন দুজনে গল্পের কথন কবে
হয়তো তোর আর আমারই ভালোবাসার গল্প
প্রেমের কিংবা বিচ্ছেদের
ব্যর্থতা আর পোড়া দহনের;
কারো থাকা আর না থাকায় কিছুই আসে যায় না
শুধু নিজেতে নিজে পুড়ে ছাই হয় বেদনা।










শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

মনে পরার অঙ্ক



মনে পরার অঙ্ক
- যাযাবর জীবন

কেন রে বারে বারে জানতে চাস?
তোর কথা মনে করি কত বার?

আমি যদি জিজ্ঞেস করি তোরে -
দিনের মুহূর্তগুলো গুনে দেখেছিস একবার?
মাসের, বছরের; যুগের?
অমাবস্যার মেঘহীন রাতে ফকফকা তাঁরার আকাশ
সন্ধ্যে থেকে গোনা শুরু করে
ভোরের আলো ফোঁটা পর্যন্ত
গুনে দেখ একবার;
কান পেতে শুনে দেখ
হৃদয় ধুক পুক ধুক পুক করে কতবার?
সাগরের ঢেউগুলোর আছড়ে পড়া গুনেছিস কখনো?
একের পর এক, তারপর এক, তারপর আরেক
তারপর আর তারপর; ক্রমাগত:
দিনের পর দিন, মাসের পর মাস
যুগের পর যুগ ধরে?
বালুকাবেলা থেকে একমুঠো বালি তুলে
গুনে দেখেছিস কখনো, মুঠোতে কয়টা বালি আঁটে?
সাগর পারের সকল বালিরাশি কুড়িয়ে
গুনে দেখিস একটি একটি করে।

যখনি তোর ঐ সকল গোনাগুনতির সমাপ্তি হবে
ঠিক তখনই জানতে পারবি
খুব ভালো করে;
তোর কথা মনে পড়ে কতবার-
প্রতিদিন
প্রতিরাত
মাস ঘুরে বছর
যুগের পর যুগ ধরে।

প্রতিটা নিঃশ্বাসের সাথে সাথে
তোর কথা মনে পড়াই তো
এখনো আমার বেঁচে থাকার প্রেরণা
এ কথাটাই আজো বুঝলি না।




বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

সংশোধন



সংশোধন
- যাযাবর জীবন

দর্পণে চোখ পড়ে শুয়ে থেকে থেকে
আয়নাটা বিছানা থেকে অনেক অনেক দূরে
সামর্থ্যে কুলোয় না কাছে গিয়ে দেখি
তাই বিছানার কোল ঘেঁষে
বিশাল বড় এক আয়না লাগিয়েছি
দেখতে নিজেকে নিজে;
মাঝে মাঝে আয়নার দিকে তাকাই
ভুলে ভরা একটা মানুষের দেখা পাই
মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখা যায়
শুধুই ভুল আর ভুল
জীবনের সকল খেলায়।

আজকাল চোখও যেন বিদ্রোহ করে
তবু জোর করে চেয়ে থাকি আয়নার তরে
দেখি ভুলে ভরা মানুষটাকে মন ভরে
প্রাণ ভরে
আর একটি একটি করে ভুলগুলো
শোধরানোর চেষ্টা করি
যতটুকু যা ভুল করেছিলাম মনে পড়ে।

হাতে খুব বেশী সময় তো আর নেই এখন
বাকী রয়ে গেল যে করতে, অনেক ভুলের সংশোধন।




নিবিড় ভালোবাসা



নিবিড় ভালোবাসা
- যাযাবর জীবন

আমরা লড়ব
ঝগড়া করব
একে অপরের সাথে
বালিশ ছোঁড়াছুড়ি
তুলো উড়বে সারা বাসা জুড়ি
প্রতিদিন
আর প্রতিদিন
সকালে, দুপুরে আর বিকেলে;
তারপর সন্ধ্যের অবশেষে
নীরে ফেরা পাখির মত
ফিরে আসব
পরস্পরের টানে
ভালোবাসায় দুজনে
অনেক অনেক ভালোবাসব
আবার পরের দিন সকালে লড়ব
সন্ধ্যের ভালোবাসায় জড়িয়ে থাকব
ক্রমাগত: আর ক্রমাগত:
যতদিন বেঁচে থাকা
ভালোবাসা আর ভালোবাসা।

লড়তেই হবে আমাদের পরস্পরের সাথে
শুধুমাত্র নিবিড় ভালোবাসার জন্য।


বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

গোপন কথা


গোপন কথা
- যাযাবর জীবন

কত গোপন কথাই না জীবনে থাকে
একান্ত নিজস্ব করে, মানুষ ঢেকে রাখে
কেও যাতে জানতে না পায়;
তোর আর আমার গোপন যত কথা
শাড়ির আঁচলে থাকার কথা ঢাকা
বাতাস হয়ে বইবে কেন রে গাছের পাতায়?

কার সাথে প্রেম করেছিলি রে তুই মনা
চুপে চাপে করে যেতি তা না
কে করেছিল তোরে মানা?
তোর আর তার গোপন প্রণয়
ঢাক ঢোলের বারিতে পুরো শহরময়
জানবে কেন রে লোকে?
তিলকে তাল করে
বলে বেড়ায় ঢোল মেরে
এ কেমন প্রেমিক বেঁছে নিয়েছিলি মনা?
তোর প্রেমের কথা আরেকজনের মুখে শুনি
যত সব নোংরা ভাষায়
সম্পর্কই চুকিয়ে দেই তাদের সাথে
তবুও; আমার তো শুনতে ভালো লাগে না।

প্রেমিক বাছতে আরেকটু সাবধান হয়ে যাস
নাইলে ভেঙ্গেচুরে ছারখার হয়ে যাবে তোর সংসার
যে কোন সময়;
সন্দেহের ছোট্ট স্ফুলিঙ্গ
দাবানলে পরিণত হতে সময় লাগে না।


মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

সৌন্দর্য



সৌন্দর্য
- যাযাবর জীবন

সুন্দরী কি কোনো উপমা?
কি জানি?
বুঝি না;
দেখি তোমার ঝাপসা চেহারা
ঘষা কাঁচের দেয়ালে,
আমার চশমার কাঁচটাও ঘষা
দাগ পড়ে গেছে অতি ব্যবহারে
এখানে ওখানে পড়ে থাকতে থাকতে
চোখে যেন থাকতেই চায় না আজকাল
কি এক অভিমানে;
আমি মনের চোখে সৌন্দর্য দেখি
নয় চশমার কাঁচে
আর তোমার সৌন্দর্য?
সে যে তোমারই ক্যামেরায় ফুটে ওঠে
ঐ যে যেটাকে তুমি ভাঙ্গা ক্যামেরা বল;
আর ফুটে ওঠে তোমার লেখার তুলিতে
যেগুলো পড়ে থাকে তোমার ব্লগের কোণে
শীতের ঝরা শিউলির মত
আমি কুড়িয়ে নেই একটি একটি করে।

বুঝি না আমি
তুমি কোন সুন্দরী?
কিংবা আমি
কোন সৌন্দর্য দেখি!





রঙের দুনিয়া



রঙের দুনিয়া
- যাযাবর জীবন

কত পদের
কত রঙের
কত ঢঙের মানুষ
এই দুনিয়ায়;
সুস্থ অসুস্থ
আরো আছে বিকারগ্রস্থ
পুরুষ ও নারীর সমারোহ
রঙের খেলায়
রূপের মেলায়
এই দুনিয়ায়।

কেও দেহের বাঁকগুলো দেখে মজা পায়
কারো বাঁকের খাঁজেই চোখ চায়,
কেও বাঁক দেখেই বাকবাকুম
সীমাবদ্ধতা সেটুকুতেই
আর এগোতে ভয় পায়;
কেও বাঁকের খাঁজে নাক ঘসে
প্রকট কুকুর ভাব
আসক্তি পর নারীতে
এটাই স্বভাব;
কেও আঁচল ফেলে রেখে
বাঁক দেখায়
টাকার প্রয়োজনে
কেও ঝুঁকে থাকে চোখের সম্মুখে
খাঁজ দেখানোর তরে
একদম অপ্রয়োজনে
শুধুই দেহের নেশায়
আনন্দম, আনন্দম
একটু আনন্দের জন্য ভেসে বেড়ায়
এখানে ওখানে
রঙের দুনিয়ায়।




সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

স্মৃতির বেদনা



স্মৃতির বেদনা
- যাযাবর জীবন

কিছু কিছু ভুল কখনোই শুধরানো যাবে না
তার মধ্যে সবচেয়ে বড় ভুল
তোকে ভালোবাসা;
কিছু সময় কখনোই ফিরে আসবে না
এর মধ্যে সবচেয়ে মধুর সময়
তোকে জড়িয়ে ধরে রাখা;

সময় উড়ে যায় কালের ডানার ভরে
মানুষ চলে যায় সাড়ে তিন হাত ঘরে
স্মৃতিগুলো কখনোই মরে না;
সময়ের কাল-কুঠুরিতে বন্দি হয়ে থেকে
ভালোবাসার মানুষগুলোর জন্য
রেখে যায় এক টুকরো বেদনা।





রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

অহংকার


অহংকার
- যাযাবর জীবন

দেখেছি পতন ঐ অহংকারীর
খুব কাছে থেকে চেয়ে
তাই তো আজকাল দাঁড়াই না আর
আয়নার সামনে যেয়ে।

জীবনের সমস্ত ভুলগুলো
একসাথে ফুটে ওঠে
আয়না কথা বলে
আমি অসহায় চেয়ে থাকি
পুরনো সব ভুলের কথা
একটি একটি মনে হলে।

রিপুগুলো পতন ঘটায় মানুষের
একটু একটু করে,
অহংকারের গরিমায় মানুষ
কারো বাড়ানো হাতও না ধরে;
পড়ে যায়
মরে যায়
অন্ধকারের গহীন কুয়োতে
"অহংকার", গলা চিরে গান ধরে।






ব্যবহৃত


ব্যবহৃত
- যাযাবর জীবন

ঝিনুকের বুক চিরে মুক্তোগুলো তুলে নিয়েছিস
কিছু বলি নি সেদিন
সয়ে গিয়েছি ঝিনুকের বেদন
ভেবে নিয়েছি
লোনা জলে ধুয়ে গিয়েছে সব রোদন
বুক চেরা ঝিনুকগুলোর;
সাগর ছিল খুব কাছে
অথচ এতটুকু দয়া হয় নি তোর
বুক চেরা ঝিনুকগুলোকে
ভাসিয়ে দিতে সাগর জলে
ঝিনুকের দেহে প্রাণ ফেরাতে
জলের স্পর্শে;
খুব অবহেলায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলি
শুকনো বালুকাবেলায়
পুড়ে ছাই হতে।

ঠিক যেমন ব্যবহারের পর
ফেলে দিয়ে গিয়েছিলি আমায়
পথের মোরের ডাস্টবিনে।

কেন বারে বারে ব্যবহৃত হতে হবে আমাকেই?





অনৈতিক ভালোবাসা



অনৈতিক ভালোবাসা
- যাযাবর জীবন

কারো চোখ দেহের বাঁকে
কারো আঁচল লুটায় মাটিতে
সময়ের দোষ কিংবা বয়সের?
না মনের সাথে প্রতারণা?

ভাদ্রের কুকুর কুকুরী
কথা বলে চোখাচোখি
নিবিড় চেয়ে থাকে
কাছাকাছি আসে, দুজন দুজনা।

রঙের দুনিয়ায় দেহের খেলা
সেই আদিকাল থেকে ক্রমাগত:
ঐচ্ছিক ভালোবাসার
অনৈতিক অবমাননা।