সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

মুঠোফোনে স্বপ্ন কথন


মুঠোফোনে স্বপ্ন কথন

- যাযাবর জীবন

সাগরের অনেক গভীর তলদেশ থেকে
জলের কোলাহল ভেঙ্গে
মৃদু একটু জল তরঙ্গ
ভেসে আসে কানে
মুঠোফোনের তরঙ্গ মাধ্যমে
তখন আমি গভীর ঘুমে
ছোট্ট একটি প্রশ্ন - কেমন আছ পৃথিবী?

বুকের খাঁচায় চারিদিক থেকে
কোথা থেকে যেন এক সাঁড়াশির চাপ
ছটফট করে লাফিয়ে বিছানায় আমি
যেন ভেঙ্গেচুরে চুরমার হয়ে গেছি
দমবন্ধ কিছুক্ষণ
নাকি অনেকক্ষণ
মনে নেই এখন
হিমালয়ের ওপাড় থেকে হালকা বাঁশির শব্দ কি শুনেছি
নাকি ঘুমের ঘোরে মনের ভ্রমে জেগে উঠেছি
হাতের মুঠোফোন কানে লাগানো দেখি
সুরেলা বাঁশি আবার সুধায় - কেমন আছ পৃথিবী?

এবার যেন বোধোদয় হয়
চাঁদের গান পৃথিবীতে বাজতে রয়
আমি বিমোহিত
অভিভূত
অবশ হয়ে পড়েছি;
অনেক অনেক কিছু একসাথে বলতে ইচ্ছে করে
গলাফাটা চিৎকারে
তবু টুটি চেপে ধরি সংযমে
খুব ধীরে উত্তর দেই -
চাঁদনী ছাড়া অন্ধকার হয়ে আছে পৃথিবী;
"তুমি কবে আসবে চাঁদনি?"

আবার সেতারের টুংটাং তরঙ্গ ধ্বনি
আমি তো তোমারই আছি পৃথিবী
সেই বিগ-ব্যাং থেকে আজ পর্যন্ত
তোমার সাথে লেপ্টে আছি
মাঝে মাঝে শুধু সূর্যটা বাঁধা হয়ে আসে
দুজনার মাঝে
এটাও বোঝ না কেন তুমি?
সেই আগের মতই পাগল রয়ে গেলে
এতদিনে একটুও বদলাও নি।

তারপর শুনশান নীরবতা
দূরে কোথাও ঝি ঝি পোকার একটানা ডাক শুনি
মুঠোফোন নিস্তব্ধ নিশ্চুপ হয়ে গেছে
আমিও স্তব্ধ
তবে কি এতক্ষণ স্বপ্ন দেখেছি?
হতেই পারে না
যুগ যুগ ধরে ঐ কণ্ঠস্বর
আমার কানে একটুও ভুল হবে না;
বিহ্বল চেয়ে পাগলের মত নাম্বারটা বের করার চেষ্টা করি
মুঠোফোনের কল লিস্টে দেখি
শেষ রিসিভ করা কলটি
"নো নাম্বার" উঠে আছে
সেই অনেক আগের কথাই রেখেছে সে
কখনোই আমায় জানতে দেয়নি
তার বর্তমান অবস্থানটি
শুধু খুব মাঝে মাঝে
অনেক অনেক দিন পরে পরে
হঠাৎ করেই এভাবে আইডেন্টিটি-বিহীন নাম্বার থেকে
একটি সুরেলা ধ্বনি ভেসে আসে কানে
খুব অসময়ে
যখন আমি গভীর ঘুমে;
ঠিক তখনই চাঁদনি জানতে চায় তার পৃথিবীর কথা
মুঠোফোন নামক তরঙ্গ মাধ্যমে,
আমি শুধু টের পাই
আমার জন্য তার ভালোবাসাটুকু
এখনো সেই আগের মতই রয়ে গেছে তার মনে
যেমন করে আমি এখনো সেই আগের মতই ভালোবাসি তাকে
দূর থেকে দূর থেকে
ভালোবাসার প্রতিদানে ভালোবাসা
সীমাহীন প্রতিদিন।

হাহাকারে বুকের অনেক গভীর তলদেশ থেকে
চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে
তোকে ছাড়া আমি ভালো নেই, ভালো নেই চাঁদনি।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন