শুক্রবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২১

দাওয়াত

আমি যখনই কোন দাওয়াতে যাই 

আশেপাশের মানুষগুলোকে দেখি

তাদের চোখগুলো লক্ষ্য করি, কিছু কিছু জ্বলজ্বলে চোখ 

চেয়ে আছে খাবারের ডিশের দিকে, 

খেতে তো আমরা সবাই এসেছি, দাওয়াত সবারই 

তবুও এর মধ্যেও দু চারজনের আচরণ সবার নজর কাড়ে

এরা যেন সকলের মাঝে আলাদা, আচরণে নিজেরাই প্রমাণ করে,    

আচ্ছা! খাবার কি ফুরিয়ে যাবে, আগে না নিলে? 

নাকি আর রিফিল দেয়া হবে না ডিশের খাবার শেষ হয়ে গেলে! 


খাবারের টেবিলে বসলে ওরা প্রিয় ডিশটা হাত বাড়িয়ে টেনে নেয় তার দিকে সবার আগে 

ডিশগুলো থেকে নিজের পছন্দের টুকরোগুলো আগে আগে তার পাতে 

বাকিদের ভাগে কি থাকলো, তাদের থোড়াই কেয়ার তাতে!

এগুলো কি স্বভাবে? নাকি অভাবে? 

আমি বলবো অভাবে 

শিক্ষার অভাব, সহবতের অভাব;


ঐ যে বুফে খাবারের টেবিলটা দেখছ?

ওখানে দেখবে কয়েকজন যেন হামলে পড়ে  

কাড়াকাড়ি হুড়োহুড়ি 

যেন এখনই খাবার শেষ হয়ে গেলো!

অথচ বুফের রিফিল হয় যথারীতি বিরতিতে, 

যে দাওয়াত করেছে সে তো হিসেব করেই করেছে

দাওয়াত দিয়ে কে আর কম খাওয়ায় বলো!

ঐ ওদের, এটা কে বোঝাবে?    

 

মানুষকে বেড়ে খাওয়ানোর মধ্যেও কিন্তু অন্যরকম একটা আনন্দ আছে 

নিজে না নিয়ে আগে মানুষকে বেড়ে দেয়াতেও একটা সুখ আছে 

যে খাওয়াতে জানে, সেই বোঝে

আর বাকিরা গিলে যায়, গোগ্রাসে।   



১৬ মার্চ, ২০২১


#কবিতা 


দাওয়াত 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




গীবত

মাংস তো প্রতিনিয়তই খাচ্ছ,

নরমাংস খেয়েছ কি? 

ভাই এর মাংস খেয়েছে?

আপন ভাই এর মাংস! 


খেতে কেমন?

মিষ্টি মিষ্টি! টক টক! নাকি লবণ লবণ! 

কি কি মশলা মিশিয়ে খেয়েছ?

টমেটো সস নাকি বার-বি-কিউ সস?

ঝাল ঝাল করে রান্না করা? নাকি পানসে?

লবণ বেশী দিয়ে ফেলো নি তো!

কিংবা চিনি?

আচ্ছা ওটা খেতে কি গরুর মাংসের মত?

নাকি হরিণের

নাকি সেই সাইবেরিয়া থেকে উড়ে আসা অতিথি পাখির মত

খেলে বল হয়? শক্তি পাও?

ওটা খেতে নিশ্চয়ই অন্যরকম, একদম নেশা নেশা

না হলে কেন প্রায় প্রতিদিনই খাও

জান না প্রতিদিন মাংস খাওয়া ঠিক না!

তাও আবার নরমাংস!

শুধু নরমাংস নয়, আপন ভাই এর মাংস;


শুধু তোমাকেই বলছি না!

আমি নিজেও খেয়ে ফেলি মাঝে মাঝে 

বেশিরভাগ সময় ভুল করে আর কখনো কখনো তোমাদের পাল্লায় পরে

কখনো খেয়ে থাকি তোমাদের হোটেল থেকে রান্না করা মাংস 

কখনো সখনো বা তোমাদেরই দাওয়াত দিয়ে বসি, নিজেই রান্না করে;


গীবত! ওটা তো ভাইয়ের মাংস খাওয়াই

তাই না?

আমরা অহরহ খাচ্ছি

জেনে কিংবা না জেনে

বুঝে কিংবা না বুঝে

ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় 

প্রতিদিনই খাচ্ছি, হয় তোমার রান্না করা কিংবা আমার

গীবত থেকে সংযত হতে পেরেছি কে কবে? 

 

এই যে শুধুশুধুই মানুষের পেছনে সমালোচনা! 

মানুষের পেছনে কথা বলা! 

তাতে কি মেলে?


আরেহ্! ও তোমরা বুঝবে না!

আত্মতৃপ্তি, আত্মতুষ্টি 

ও যে আমার থেকে অনেক অনেক এগিয়ে!

পেছন থেকে টেনে না ধরতে পারি!

একটু কুট সমালোচনায় কিছু বদনাম তো ঢেলে দিতে পারি!

ওটুকুই বা কম কিসে?


তাই বলে গীবত করে?

আরে ধ্যুর! তুমি পড়ে আছে সেই আরব্য রজনীর দেশে

আজকাল কে আর এগুলো মানে? 

হয় পেছন থেকে টেনে ধর!

কিংবা বদনামের দুর্গন্ধ ঢেলে দাও সারা গায়ে

ব্যাটার বড্ড বাড় বেড়েছে

সাহসের বলিহারি দেখেছ?

ইশশ! আমার থেকে কতটা এগিয়ে গিয়েছে! 


আমিও মানুষ! ভুলত্রুটি আমারও আছে

তুমিও বন্ধু, যদি সামনে থেকে ভুল ধরিয়ে দাও

হয়তো একটু মন খারাপ হবে! তবে নিজের শোধরানো হবে

পেছন থেকে যদি গীবত কর! বলো তো আমার কি উপকার হবে?

কি উপকারই বা হবে তোমার নিজের?


ঐ দেখ ভাইয়ের মাংস খাচ্ছে কারা যেন

আপন ভাইয়ের, কাঁচা চিবিয়ে 

ওরা গীবত করছে; 


তুমি খাবে? 

 

  

১৬ মার্চ, ২০২১


#কবিতা 


গীবত 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




ওপারের ভাবনা

হাতে গরম পানি পড়েছে কখনো?

গরম তেলের ছিটা? 

চুলো জ্বালাতে গিয়ে আগুনে হাত চলে গিয়েছে কখনো

কিংবা গরম কয়লায় পা? 

তবে আর আগুনে পোড়ার জ্বালা বুঝবে কি করে! 


এই পৃথিবীর আগুনই সইতে পার না!

জাহান্নামের আগুনের কথা চিন্তা করতে পার? 

"তাত্তালিউ আলাল আফয়িদাহ" 

যেখানেই লাগুক না কেন সোজা হৃদয় পুড়তে থাকবে 

কখনো ভাবনায় আসে? 

আমার তো ও কথা মনে হলেই ভয় জাগে,  

তোমাদের জাগে না?


আজ চারিদিকে মৃত্যুর মিছিল 

মহামারী দিকে দিকে 

"আল্লাজি খালাকাল মাওতা ওয়াল হায়াতা লিয়াবলুয়াকুম" 

জীবন তৈরির আগেই মৃত্যু নির্ধারণ করেই তোমাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে  

প্রত্যেক জীবিত'কেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে 

তবুও মানুষের এত বড়াই কিসে? 

বিবেক বিবেচনা আর মনুষ্যত্ব বিসর্জন দিয়ে

অর্থ, সম্পত্তি আর খ্যাতি নামক মরীচিকার পেছনে

আমরা ক্রমাগত ছুটছি এক অধরা অতৃপ্তির পেছনে;     

একবারও কি ভাবনায় আসে! জীবন আর মৃত্যুর ফারাক কত?

মাত্র তো একটা নিঃশ্বাস! 

তারপর ছোট্ট ঐ মাটির ঘরে শুয়ে থাকে লাশ; 


একটাবার ওপারের কথা ভাবি!    

একবার ঐ চিন্তা মাথায় এলে 

একবার ঐ জীবনের কথা মনে হলে

পাপের পথে পা বাড়াবে? 

চলো এবার সংযত হই, পাপের পথ থেকে! 


ঐ দেখ মৃত্যুর মিছিল! 

একদিন ওখানে তোমার, আমার আর বাকি সকলের নাম খুঁজে পাবে।  


১৬ মার্চ, ২০২১


#কবিতা 


ওপারের ভাবনা 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



আগমন

আজকাল প্রায়শই তার আগমন

খুব হঠাৎ হাঠাৎই 

এই হুট করে আলোর বেগে আসে

হাওয়ার বেগে ছুঁয়ে দেয় 

আবার শব্দের বেগে ফিরে যায়

আমার কানে লেগে থাকে পদধ্বনি;


সেই প্রথমবার যখন সে এসেছিলো!

আমায় প্রায় পরাজিত করেই ফেলেছিলো

প্রিয়জনদের হৈ চৈ, কান্নার রোল 

ঘুম ঘুম এক গভীর ঘুমে তলিয়ে যেতে যেতে আমি হাসপাতালে 

আমি যাই নি কিন্তু, আমায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো

তারপর আরেকবার 

তারপর আরেকবার

তারপর থেকে সে ঠিক আমার বাড়ি চিনে গেলো,  

এইভাবে হুট হাট হানা দিলে ডাক্তারই বা কয়বার বাঁচাবে? 

গাদা গাদা ঔষধগুলো কয়দিনই বা বাঁচিয়ে রাখবে মৃত্যু থেকে?


মৃত্যুটা কেমন, আমি জানি না!

তবে গভীর এক ঘুমে তলিয়ে যাওয়াটার অনুভবটা জানি 

অন্যরকম এক ঘুম,

হুট করে আসে, হানা দেয় আমার পুরো স্বত্বার মাঝে 

তারপর হঠাৎ করেই যেন আমার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে 

হয়তো সময় ঘনিয়েছে, কিংবা সময় হয় নি! 

মাঝে বেশ অনেকগুলো দিন তার শব্দ শুনি নি 

আমিও যেন ওর কথা ভুলে গিয়ে আশেপাশের শব্দে বেশ বুঁদ ছিলাম;   


এই তো সেদিন রাতে হঠাৎই আবার একবার

তারপর আবার 

খুব দূর থেকে একটু একটু যেন ভেসে আসা শব্দ

একটু একটু অনুভব নিউরন কোষে

একটু একটু অনুভূতি বুকের গভীরে'তে 

একদিন রাতে গভীর ঘুমে একটা আলোর ঝলক

আমি ঝট করে ঘুম থেকে উঠে বিছানায়

তীব্র অনুভূতিতে অবশ শরীর 

ও তোমরা বুঝবে না, 

কোন গন্ধ পাচ্ছি কি?

মৃত্যুর গন্ধ!  

তারপর আবার পা ঘষটে ঘষটে কোথায় যেন মিলিয়ে গেলো;


সময় ঘনিয়ে এসেছে

খুব কাছেই সে আছে    

আমি বুঝতে পারছি

খুব ভেতর থেকে,   

এবার সে আসবে সশব্দে, চারিদিক জানান দিয়ে 

তারপর নিস্তব্ধ হয়ে যাবে সব

আর সাদা চাদরে ঢাকা আমি পড়ে থাকব শব। 



১৫ মার্চ, ২০২১


#কবিতা 


আগমন 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




  

নতুন বছরের দোয়া

আজকাল আমাদের সময়টা বড্ড খারাপ যাচ্ছে

আমাদের বলতে আমার, তোমার, ওর, তার, আর সবার

আজকাল আমরা বড় অসহায় হয়ে পড়েছি 

অসহায় প্রকৃতির হাতে, রোগশোকের হাতে, অভাবের হাতে 

আজ রোগে শোকে এক দুর্বিষহ জীবন কাটছে ঘরে ঘরে

অনেকদিন ধরেই চাকরি বিহীন চাকরিজীবীরা 

অনেকে চাকরীচ্যুত

অনেকদিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ধুঁকে ধুঁকে চলছে

অনেক ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে 

অনেকদিন যাবত কর্মহীন হয়ে বসে আছে শ্রমজীবী মানুষের দল

কর্ম, চাকরি, ব্যবসা মানেই টাকা 

আর টাকা মানেই পেটে অন্ন

তাই না?


এই যে কর্মহীন সময় যাচ্ছে!

পেট কি তা মানছে?

ক্ষুধা তো জানান দিচ্ছে প্রহরে প্রহরে

পেট খাদ্য না পেলে শরীর চলবে কিভাবে?

আধপেটা, অভুক্ত আজ কতজন রয়েছে, কোন হিসেব আছে?


অথচ ঠিক ওপাশটায় তাকিয়ে দেখ!

ডাস্টবিন উপচে পড়া খাবার

হ্যাঁ, খাবারই তো ওগুলো

ঐ যে ওদের বাড়ি থেকে ফেলে দেয়া সব উচ্ছিষ্ট খাবার 

পেটের তুলনায় অনেক বেশী হয়ে যায় প্রতিদিনই,  

ওরাও নাকি অসহায়

ব্যবসায় অনেক ক্ষতির সম্মুখীন 

তবে প্রতি বেলায় ওদের টেবিলে এত এত খাবার আসে কোত্থেকে?

মানুষ এত এত খাবার প্রতিদিন ডাস্টবিনে ফেলে কিভাবে?


ও তোমরা বুঝবে না

ক্ষতি মানে কি জানো?

আগে লাভের পরিমাণ ছিলো মাসে হাজার কোটি 

ওটা এখন নেমে পাঁচ বা সাতশো কোটিতে ঠেকেছে, 

তিন বা পাঁচশো কোটি লস না? 

আরে! কাকে কি বলছি! তোমরা কোটি চেন?

তা চিনবে কিভাবে?

তোমাদের বেশিরভাগের কারবার শত'তে

তারপরের শ্রেণী বেশকিছু হাজারে

আর অল্প কিছুর গোনাগুনতি লক্ষ'তে! তাও তো হাতে গোনা

তোমরা অভুক্ত থাকবে না তো থাকবে ঐসব কোটি গোনা!

 

আজ বাংলা বছরের প্রথম দিন

এই দিনটায় প্রতিটা বাঙালির মুখে চিরকাল হাসি ছিলো অমলিন

যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী বাসায় ভালো খাবার 

আজ কোথায় সেসব জৌলুসের বাহার? 


আজ কোথাও উৎসব নেই 

নেই আনন্দ মিছিল, আতশবাজি 

ইলিশ! আজ না হয় স্বপ্নে খাব! 

সাথে কাল রাতের বেঁচে যাওয়া পানি ভাতে মরিচ ডলে

পান্তা-ইলিশ না হয় স্বপ্ন ঘোরে! 


নতুন বছরে আজ প্রথম রোজা

আচ্ছা! কতজন কাল রাতে পেট পুরে সেহরি করেছে?

আজ ইফতার জুটবে কতগুলো পেটে?

আজ রাতে কি ওদের কপালে সেহেরী হবে?

নাকি সারারাত দৌড়তে হবে হসপিটাল থেকে হসপিটালে

ঘরের মূমূর্ষ রোগীটার জন্য একটা সিটের সন্ধানে

অন্যান্য বছরের মত এবার ইলিশের বাজার কোথায় আর চড়া!

হসপিটালের একটা সিটের আজ বড্ড খরা 

একটু অক্সিজেনের জন্য হাঁসফাঁস করা ঐ চেহারাগুলো দেখেছ?

তবে তো তোমরা মৃত্যুর ছায়াগুলোকেই দেখে ফেলেছ; 


আজ নতুন বছর, আজ নেই কোন উৎসব

এক ভয়াবহ মহামারী'তে যেন থেমে গেছে সব 

আজ মৃত্যুর মিছিল ঘরে ঘরে, মহল্লা মহল্লায় শোক  

আর কবরস্থানগুলোতে কাতারে কাতারে শব। 


এবার না হয় নতুন বছরে অন্যরকম এক দোয়া করি!

মহান আল্লাহ্‌ তায়ালার কাছে হাত তুলে সবাই মিলে দোয়া করি

পৃথিবী থেকে যেন তুলে নেন এই মহামারী 

নতুন এক পৃথিবীতে সাম্যের সাথে আবার যেন নতুন করে বাঁচতে পারি।  



১৪ মার্চ, ২০২১


#কবিতা 


নতুন বছরের দোয়া 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ ক্যামেরা ক্লিক । 






মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২১

অতীত

অতীতগুলো মাঝে মাঝে বড্ড ভাবায়

এক একজনের অতীত জীবন এক এক ঢং এর 

এক একজনের অতীত স্মৃতি এক এক রঙের

কারো কারো অতীত বড্ড কাঁদায়;


কারোর জীবনে বাবা-মায়ের আদর 

কারো কারো জীবনে বাবা-মায়ের শাসন

কারো কারো জীবনে ভাইবোনের স্বার্থাহ্নেষণ 

কারোর জীবনে ক্রমাগত সংসারের পেষণ,  

মেয়েদের জীবন তো আরও খারাপ 

শরীরের ভেতর যেন পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে ওঠে সাপ

ওগুলোর ছোঁয়া ভয়ঙ্কর, ছোবল বিষাক্ত

অপ্রাপ্ত বয়সেই জানতে হয় শরীরের যত নগ্ন সত্য; 


অতীত খুঁড়তে গেলেই কারোর দহন

অতীত খুঁড়লেই কারো ক্ষরণ

সাদাকালো কাদামাটি লাগানো কারো কারো জীবন

কারোর বা রংধনু রঙে রাঙানো ভুবন,   

আকাশটা কারো জীবনে স্বচ্ছ নীল, কারো ওখানে কালো মেঘের ছায়া

তবুও জীবনের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয় সংসারের যত মায়া


অতীত থেকে মাঝে মাঝে ভেসে আসে এক একটা শুভ্র সুফি চেহারা 

শুভ্রতার ভেতর আমি ঠিক দেখে ফেলেছি কতটা অন্ধকার হতে পারে তারা

সামনে থেকে মুখে এক একজন বুক এগিয়ে দেয় 

পেছনটা ফেরার সাথে সাথেই পিঠে ছুঁড়ি গেঁথে দেয়; 

 

ওরা কারা? 

আরে বলো কারা, না? 

আত্মীয় স্বজন সে তো স্বার্থ সম্পর্ক, হতেই পারে!

ভাই বোন? ওরা তো রক্ত! ওরা কিভাবে পারে? 

সন্তান? সে তো আজকাল অহরহ 

বাবা-মা? খুব আশ্চর্য হচ্ছ? কোথাও কি হচ্ছে প্রদাহ? 

থাক তা হলে বলব না, 

যা দেখেছি তা নিজের মাঝেই থাক! 

স্মৃতিগুলো অতীত হয়ে আকাশে উড়ে যাক। 


কি ভাবছ? 

আমার অনেক মন খারাপ? 

আরে নাহ!  

আজকাল ক্ষরণে আর লাল জাগে না, 

সম্পর্ক নামক কৌতুকগুলো সেই কবেই কালো বানিয়ে ফেলেছে আমাকে!

আজকাল আর অতীতের অন্ধকারগুলোও খুঁড়তে ইচ্ছে করে না, 

আমি তো নিজেই অতীত, 

আমি নিজেই রাত। 



১৩ মার্চ, ২০২১


#কবিতা 


অতীত

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




 

বিশ্ব ভাইবোন দিবস

ভাইবোনেরও নাকি দিবস হয়? 

লোকে যে কত কথাই কয়!

ঐ তো ওরাও ভাই বোন  

সাকুল্যে ছিলো তিনজন; 

আজ কে কোথায় রয়?


তারা দুটি ভাই একটি বোন ছিলো 

একটা সময় তিনজনে মিলে এক আত্মা ছিলো 

একটা বড় গামলায় মা ভাত মাখাতো 

তিন ভাইবোন গামলার চারিদিকে গোল হয়ে বসে

এক নলা এক নলা ঘুরে ঘুরে এক একজনের মুখে

রাতে শোয়ার সময় মায়ের দুপাশে  তিন জনারই শোবার আবদার

বাবার আদরে তিন জনারই সমান ভাগ 

ছেলেবেলাটা বড্ড অন্যরকম ছিলো

পরস্পরের প্রতি মায়া ছিলো, স্নেহ ছিলো,  ভালোবাসা ছিলো;


তারপর বড় হতে হতে সবার নিজস্ব জগৎ হলো 

জগতে নিজস্ব ভাবনা এলো

ভাবনায় স্বকীয়তা এলো

পড়াশোনার কারণে তিনজন তিনদিকে গেলো

ভাইবোনের মিল তখনো ছিলো, 

সময় গড়ালো; 


তাদের বিয়ে হলো, সংসার হলো

ভাইবোন এর মাঝে স্বামী স্ত্রী ঢুকে গেলো

সন্তান হলো

ভাইবোন বাবা মা হয়ে গেলো

সময়ের প্রয়োজনে যে যার মত আলাদা হলো;

 

বাবার কিছু সহায় সম্পত্তি ছিলো

সেগুলোর ভাগবাটোয়ারা হলো

ভাগবাটোয়ারায় কিছু তো মনোমালিন্য থাকেই! 

তাই না? 

সম্পর্ক থেকে সম্পত্তি বড় 

অর্থ সম্পর্কে টেনে আনে অনর্থ,  

ভাইবোন!  সে কি টাকা থেকে বড়?

আজ এক একজন ভাই বোন এক এক জায়গায় 

শুধুমাত্র সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারায়,

টাকা পয়সা! না ভাইবোন আগে? 

সম্পর্ক! সে তো সম্পত্তির ভাগে; 


টাকা টাকা টাকা, আরও টাকা এক ভাই এর মাথায়

ব্যবসা বাণিজ্য বাড়তে থাকে, বেড়েই যায়

ভাই দিবস, বোন দিবস, বাবা দিবস, মা দিবস! 

এগুলো তার মাথায় নেয়ার এত সময় কোথায়?

টাকা সম্পর্ক বিকোয়; 


বোন? সম্পত্তি ভাগাভাগিতে সেই যে সম্পর্ক ভাগাভাগি! 

তারপর নিজের সংসারে সর্বময় কাজী 

ভাইরা? সম্পত্তির বিনিময়ে সম্পর্ক তো ছেড়েই এসেছি! 

ওদের খবর নেয়ার সময় কোথায়? 

সম্পত্তি সম্পর্ক বিকোয়; 


আরেকটা ভাই! 

দিবস গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে 

ক্যালেন্ডারে দিবসগুলো ভাসে 

ছেলেবেলার কথা মনে করে নিজেই হাসে

বড়বেলার কথা মনে করে নিজেই কাঁদে

আর অনুভূতির তীব্র শীতে কাঁপতে থাকে 

শুয়ে থেকে ছেঁড়া-ফাড়া পুরনো সম্পর্কের কাঁথায়; 

টাকা সম্পর্ক কাঁদায়; 


বাবা মায়ের এক এক সন্তান বোধহয় এক একরকম হয়েই থাকে

কেউ সম্পত্তি যাচে 

কেউ সম্পর্ক,

সব ভাইবোন গুলো একরকম হয় না 

সব ভাইবোনের সম্পর্কগুলোও একরকম হয় না,

কিছু সৌভাগ্যবান ভাইবোন আজো নিজেকেই বিলিয়ে দেয় ভাইবোনের জন্য

কিছু অভাগা ভাইবোন সম্পর্ক বিকিয়ে দেয় তুচ্ছ সম্পদের জন্য, 

পৃথিবী ঘুরতে থাকে তার মত নিজ অক্ষে 

দিবসগুলো ক্যালেন্ডারে ঘুরে আসে তার মত 

ভাইবোন সম্পর্কে ক্যালেন্ডারের কিই বা যায় আসে!


১৩ মার্চ, ২০২১


#কবিতা 


বিশ্ব ভাইবোন দিবস

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



ভার্চুমানব

আমরা সবাই আজকাল যার যার মোবাইলে,  

ভার্চুয়ালে;  

কেউ ফেসবুকে, কেউ ইন্সটাগ্রামে, কেউ ইউটিউবে 

কেউ হোয়াটসএপে, কেউ ভাইবারে, কেউ ম্যাসেঞ্জারে

কোন না কোন মোবাইল এপে, ভার্চুয়ালে;


বাবা মা ভাই বোন সবাই মিলে খাবার টেবিলে 

মুখে কথা নেই, চোখ যার যার মোবাইলে  

একজন হাসছে একজনের মন খারাপ 

একজন ভুরু কুচকে আরেকজনের ঠোঁটে ভাঁজ

পরস্পরের দিকে তাকিয়ে নয়    

পরস্পরের কোন কথাতেও নয় 

অভিব্যক্তিগুলো মোবাইল স্ক্রিনে ভেসে আসা কোন এপ চ্যাটের প্রতিফলন 

কিংবা ভার্চুয়াল কোন গল্প, কবিতা কিংবা কৌতুকের প্রতি মনোযোগ জ্ঞাপন  

অথচ এরা বসে আছে একই টেবিলে

একজন আরেকজনের সামনে;


সামনের ঐ মানুষগুলোর সাথে পরস্পরের রক্তের সম্পর্ক

অথচ আত্মার সম্পর্ক এদের ভার্চুয়ালের সাথে;  

এরা ভার্চুয়ালে হাসে, ভার্চুয়ালে কাঁদে 

ভার্চুয়ালে প্রেম করে শুধু সংসার করতে আসতে হয় সামনে

সুযোগ থাকলে ঐটুকুও হয়তো হয়ে যেত ভার্চুয়ালেই; 


আজকাল বিয়েটাও কিন্তু অনেক জায়গায় ভার্চুয়ালেই হচ্ছে  

একজন এদেশ আর একজন বিদেশে 

বিয়ে পড়ানো অনলাইন এপে

দুপক্ষেরই সাক্ষী-সাবুদ বর কনের চারিদিকে

কাজী সাহেবও আছেন খাতা কলম হাতে 

এজিন কাবিন সবই অনলাইন এপে, 

আজকাল খুব হরদম হচ্ছে;


তারপর বিয়ের পর স্বামী স্ত্রী অনলাইনে একান্তে  

দুজন মোবাইলে এদিকে আর ওদিকে 

অথচ বাস্তবে দুজন পৃথিবীর দুপ্রান্তে

নব দম্পতির মাঝে প্রেম হচ্ছে, ভালোবাসা হচ্ছে, চুমু হচ্ছে

দুজন দাম্পত্য আবেগে হয়তো বিছানায় গড়াগড়ি, সেও হচ্ছে; 

তারপর?   


আচ্ছা! অনলাইনে কি বাচ্চা হওয়ানো যায়?      

আমরা কি ঐ দিনটার অপেক্ষায় আছি? 

কে জানে হয়তো কিছু একটা বের হয়ে যাবে! 

হয়তো কোন এক আজব তেলেসমাতিতে  

শারীরিক সম্পর্ক ছাড়াই চলে আসবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম! 


কেমন হবে তারা? 

ভার্চুমানব?


সময় বলে দেবে। 


 

১২ মার্চ, ২০২১


#কবিতা 


ভার্চুমানব

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




সম্পর্কের পিছু ডাক

আশেপাশে অনেকগুলো মানুষ বাস করে;  

তাদের ধরা যায়, ছোঁয়া যায় 

আচ্ছা এই যে আশেপাশের মানুষগুলো! 

আমায় অষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে কত রকমই না সম্পর্কে জড়িয়ে!

মায়া, মমতা ভালোবাসা মিলিয়ে; 

তাহলে সম্পর্ক ধরতে পারি না কেন? 

ধরতে পারি না ভালোবাসাগুলোও; 


শরীরের ভেতরে নাকি একটা মন থাকে!  

অথচ ওটাকেও ধরতে পারি না কখনো

এই না পারার বেদনায় প্রায়শই আমার বড্ড মন খারাপ থাকে

খুব ইচ্ছে করে একটা সম্পর্ক ধরতে

খুব ইচ্ছে করে সম্পর্কের ভালোবাসা ধরতে

ভালোবাসার ভেতরকার মায়াগুলো ছুঁয়ে দেখতে 

মায়াগুলোকে আবেগে জড়িয়ে ধরে আদর দিতে

আমি সম্পর্ক ছুঁতেই পারলাম না, আদর দেব কিভাবে? 


সম্পর্ক নামের অধরা এই সম্পর্কগুলো মাঝে মাঝে খুব ভাবায়

সম্পর্ক নামের সম্পর্কগুলো মাঝে মাঝে সম্পর্কই ভেঙে দিয়ে খুব কাঁদায়,  

আমি রক্তমাংসের মানুষ

সম্পর্কের ভালোবাসায় হাসি 

সম্পর্কের ভাঙনে কান্নায় ভাসি 

আর অনুভব অধরা সম্পর্কে; 

   

কিছু ছেড়ে যাওয়া অনুভব

কিছু ক্ষয়ে যাওয়া সম্পর্ক আমায় পিছু ডাকে 

সম্পর্কের বন্ধনে জড়িয়ে। 



১০ মার্চ, ২০২১ 


#কবিতা 



সম্পর্কের পিছু ডাক 

 - যাযাবর জীবন 



ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





বন্ধুত্বের তুই আর ভালোবাসার তুই

ছেলে আর মেয়েতে বন্ধুত্ব হয় কেন?

বিপরীত মেরুতে কিছু আকর্ষণ তো থাকেই, তাই না?


ছেলে আর মেয়েতে বন্ধুত্ব নষ্ট হয় কেন?

বন্ধুত্বে কাম রোগ বাসা গাড়লে 

আকর্ষিত শরীর শরীর না পেলে

আকর্ষিত মন মন না পেলে, 

শরীর বড় অদ্ভুত রোগ 

ওখানে লোভের বাস, শরীর জুড়ে কামের আশ

আর সম্পর্কের সর্বনাশ;

 

অবোধ্য কিছু কারণে কিছু কিছু সম্পর্ক বন্ধুত্বে অটুট রয়ে যায় 

আর বেশীরভাগ সম্পর্কগুলো সময়ের সাথে হারিয়ে যায়  

অল্প কিছু সম্পর্ক পরিবর্তিত হয়ে হয়ে প্রেম হয়ে যায়

সম্পর্ক গড়ায় ভালোবাসায়, 

একজন আরেকজনের জীবনে তুই হয়ে রয়ে যায় ; 


বন্ধুত্বের তুই আর ভালোবাসার তুই এর মধ্যে পার্থক্য জানিস?


একটা মেয়ে বন্ধুকে যতই তুই বলে ডাকিস না কেন! 

তাকে কি বুকের ভেতর জড়িয়ে ধরা যায়? 

নাকি সারারাত জড়িয়ে রাখা যায়?  

ছেলে আর মেয়ে বন্ধুর জড়াজড়িতে মনে কাম চলে আসেই, 

রক্ত মাংসের মানুষ তো! তাই না? 


অথচ দেখ! 

ভালোবাসার তুই'কে সারারাত বুকে জড়িয়ে ঘুমাস না? 

মনে সবসময় কাম আসে? 

আসে না;   

একবার ভেবে দেখ তো! 

কামহীন কত কত রাত কাটিয়েছিস পরস্পরের বুকে? দাম্পত্যে  

শরীর? সেটা শরীরেরই প্রয়োজনে, দাম্পত্যে

কাম? অবশ্যই; মন প্রেম হলে! দাম্পত্যে

তারপর?

তারপর এই যে সারারাত পরস্পর জড়িয়ে ঘুমানো! সেখানে কাম কোথায়?

ভালোবাসার তুই ভালোবাসার বুকে নিশ্চিন্তে ঘুমায়, নির্ভরতায়; সারারাত। 


পার্থক্য তো আছেই! বন্ধুত্বের তুই আর ভালোবাসার তুই এ। 


০৮ মার্চ, ২০২১


#কবিতা 


বন্ধুত্বের তুই আর ভালোবাসার তুই

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





কালির আঁক

আমাকে সেদিন একজন জিজ্ঞাসা করলো, 

 - আচ্ছা! এই যে এত এত কবিতা লিখ! একটা বই বের কর না কেন?


আমি হেসে বললাম, 

 - আজকাল ঝালমুড়ি আর লোকে খায় কোথায়? বইগুলো সের দরে বেচব কার কাছে?

 - আচ্ছা, বল তো!  আজকাল উঁইপোকা ঢাকা শহরে কোথায় আছে? বইগুলো খাবে কে? 

 - আমার ছোট্ট বাসা, বই রাখার জায়গা কোথায়, খাটের তলায়? আর আজকাল সব বক্স খাট; 

 - তা ছাড়া বই ছাপাতে টাকা লাগে না? আমার বাবার কোথায়, টাকা ছাপার কারখানা? 


তুই মন খারাপ করে বললি, 

 - তোমার সবটাতেই বাড়াবাড়ি, কি হয় একটা দুটো বই ছাপালে? কয় টাকাই বা লাগে?


আমি হেসে বললাম, 

 - আমি লিখি মনের আনন্দে, ছাপাখানা বই ছাপে টাকা রোজগারে জন্য, 

 - দুটোর উদ্দেশ্য আকাশ পাতাল ভিন্ন; 


তুই অভিমান করে বললি, 

  - আচ্ছা থাক, তোমায় বই ছাপাতে হবে না, 

     আজ আমার জন্য একটা কবিতা লিখ; 


আমি একটা শব্দ লিখে তার সামনে দিয়ে বললাম,  

 - এই নে তো কবিতা;


সে উচ্ছ্বসিত হেসে উঠে বলে,

 - এত তাড়াতাড়ি! কই দেখি দেখি! 


তারপর কবিতাটা দেখেই মন খারাপ করে বললো,

 - তোমাকে কবিতা লিখতে বলেছি - "কবিতা" বানান লিখতে বলি নি;


আমি এবার হো হো করে হেসে দিয়ে বললাম, 

 - আরে বোকাই ওটাই কবিতা, এক শব্দের কবিতা; 


সে রাগ করে বললো, 

 - ধ্যাত! তুমি শুধু দুষ্টুমি কর, এক শব্দে আবার কবিতা হয় নাকি?


আমি বললাম,

 - কেন হবে না? বিশ শব্দের গল্প হলে এক শব্দে কবিতা হবে না? 

   আমি একটা শব্দ এঁকে দিলাম তুই এবার মন খুশি মত এটাকে টেনে বড় করে নে 

   তা হলেই হয়ে যাবে কবিতা;


সে রাগাহ্নিত কণ্ঠে বললো, 

 - তুমি একটা যা তা; 


রাগ করছিস কেন?


 - রাগ করব না?


কেন করবি? খুব তো আজকাল বিশ শব্দের গল্প পড়ছিস, এক শব্দের কবিতা পড়তে এত রাগ কেন? 

তোরা বলিস বিশ শব্দের গল্প, আমি বলি বিশটা বিষ শব্দ;


 - শব্দ আবার বিষ হয় নাকি? ওটাও একধরণের গল্প, সে তুমি বুঝবে না;


গল্প না গল্প ঢেঁকুর?


 - গল্প ঢেঁকুর আবার কি?


ঐ যে তোরা খাওয়া দাওয়া শেষ হয়ে যাওয়ার পর ঢেঁকুর তুলিস না? সেটার কথা বলছি;


 - গল্পের সাথে ঢেঁকুর এর সম্পর্ক কি?


তোদের বিশ শব্দের গল্প তো আসলে গল্পের ঢেঁকুর, মানুষ খেয়ে ঢেঁকুর তোলে তোরা গল্প বলতে গিয়ে ঢেঁকুর তুলিস; 

ঢেঁকুর তুলতে তুলতেই গল্প শেষ, তোদের বিশ আমার কাছে বিষ;


 - আচ্ছা বাদ দাও তুমি আজ আমাকে একটা কবিতা লিখে দাও, আমি ছাপাবো   


এই তো দিলাম! 


 - কই দিলে? 


এই যে, এতক্ষণ ধরে এতসব কি লিখলাম? 


 - আরে! এটা তো তোমার আর আমার কথোপকথন!


আরে বোকা! যারা বুঝে, তাদের জন্য এটাই কবিতা; 

তুই নিশ্চিন্তে ছাপিয়ে দে, মনের অক্ষরে মন আঁক দিলেই কবিতা 

ছাপা অক্ষরে তো শুধু কালি আঁক দেয়।  



০৬ এপ্রিল, ২০২১ 


#কবিতা 


কালির আঁক 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




মানবতার বিনিময়

একদিন আমি ঘাড়ে সংসারের বোঝা চাপিয়ে বলদের পিঠে করে রওনা দিলাম 

দেখলাম এক রাখাল ছাগলের পিঠে চড়ে ঘাসের সন্ধানে মাঠে ঘুরতে বের হলো 

এক ব্যবসায়ী গাধার পিঠে বসে নিজে তার পিঠে বিশাল এক লবণের বোঝা চাপালো 

আরেকটু সামনে দেখলাম এক দৌড়বিদ ঘোড়ার পিঠে, ছুটছে টগবগ টগবগ বাতাসের আগে 

তারও একটু সামনে ক্ষেতের মাঝে এক মোষের পিঠে দেখলাম দুইজন কৃষক, জোয়ালটা কৃষকদের ঘাড়ে   

তাদের ঠিক পেছন থেকেই খরগোসের পিঠে চেপে তীর-বেগে ছুটে গেলো এক সবজি বিক্রেতা গাজর খেতে খেতে

এক অকর্মণ্য অলসকে দেখলাম কচ্ছপের পিঠে বসে রোদ পোহাতে পোহাতে হেলে-দুলে ঘুমোচ্ছে  

হঠাৎই কোথা থেকে একটা রাজনৈতিক দলের নেতা কুকুরের পিঠে চেপে খামখাই তারস্বরে ঘেউ ঘেউ ডাকাডাকি করতে লাগলো   

আমি ধমক দিয়ে বললাম, কিরে? কুকুরের পিঠে বসেছিস বলেই কি ঘেউ ঘেউ করতে হবে?

আমাকে দেখ তো! আমি কি মুখে একবারও হাম্বা শব্দ করেছি?

ঐ যে ছাগলের পিঠে চড়া রাখালকে দেখ তো! সে কি ম্যা ম্যা করেছে একবার?

নাকি ঘোড়ার পিঠে বসে দৌড়বিদ হ্রেষা ধ্বনি দিচ্ছে বারবার? 

এবার নেতা কুকুরের লেজটা হাতে ধরে আমার হাতে দিয়ে বলল, দেখ তো, এটা সোজা করতে পারিস কি না! 

 - আরে বোকা! আমি কুকুরের পিঠে, ঘেউ ঘেউ ছাড়া আমাকে মানায় না; 

 

ঠিক আমাদের বিপরীত দিক থেকে এক কষাই হায়েনার পিঠে চেপে নরমাংসের একটা টুকরো মুখে নিয়ে পাশ দিয়ে ছুটে বেরিয়ে গেলো

একজন ট্যানারি মালিক তাই দেখে নেকড়ের পিঠে চেপে ছুটে গেলো মৃত মানুষটার চামড়া খুলতে  

অন্যদিকে এক চামড়া ব্যবসায়ী চিতার পিঠে চেপে বের হয়েছে হরিণ ধরতে  

ওদিকে বাঘের পিঠে চেপে এক শিকারি বেশ হেলে-দুলে বনে ঘুরছে শিকারের সন্ধানে 

তাই দেখে বানরের পিঠে চড়ে এক চাটুকার বাঘকে মুখ ভেংচাচ্ছে কাঁধে আরেক বানর নিয়ে 

সিংহের পিঠে চেপে এক ধড়িবাজ ফকির আয়েশি ঘুম দিয়েছে নরম কেশরগুলো বালিশ বানিয়ে 

বিশাল এক হাতীর পিঠে দাঁড়িয়ে ক্ষুধার্ত এক বনরক্ষক ইতিউতি তাকাচ্ছে হৃষ্টপুষ্ট গাছের সন্ধানে 

এত প্রাণীদের ভিড়ে এক ভূমিদস্যু মনুষ্য সন্তান এক মনুষ্য ক্রীতদাসের ঘাড়ে চড়ে হেলে দুলে এসে বলল, 

ও হে! তোরা সব পশুতেই সন্তুষ্ট! তোরা বড্ড বোকা  

আমাকে দেখ! আমি জমি কিনতে কিনতে জমির মানুষগুলোকেই কিনে নিয়েছি

দলে দলে মানুষকে দিয়ে ধোঁকা;


আমি খুব আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কিসের বিনিময়ে?

সে হেসে উত্তর দিলো মানবতার।


০৬ এপ্রিল, ২০২১


#কবিতা 


মানবতার বিনিময়

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



মৃত ভার্চুয়াল দেয়াল

সকালে হালকা বাতাস দিচ্ছিলো 

আমি ঝুরঝুর করে সজনে পাতাগুলো ঝরে পড়তে দেখছিলাম;


ঝুরঝুর করে ঝরে পড়ছে জীবন

মৃত্যুর মিছিল ভার্চুয়াল দেয়ালে

ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন 

গত কয়েকদিন ধরে আর টাইপ করতে হচ্ছে না

একবার সকালে কীবোর্ডে কপি করে নিলেই 

সারাদিন সেটাই পেস্ট করে মাগফেরাত জানানো যায় সকল মৃতের প্রতি, 

বোবা হয়ে যাচ্ছে একের পর এক ভার্চুয়াল দেয়াল 

কয়েকদিন সমবেদনার হাহাকার

মৃত'কে কয়দিন কেই বা মনে রাখে?  

খালি হচ্ছে শহর, সামনে মৃত নগরী; 


একদিন তোমরাও সমবেদনা জানাবে আমার ভার্চুয়াল দেয়ালে এসে

কপি পেস্ট এ ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন সেটে,

আজ

কাল 

কিংবা পরশু

কে জানে? 

 


০৬ এপ্রিল, ২০২১


#কবিতা 


মৃত ভার্চুয়াল দেয়াল 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




দাম্পত্য নির্ভরতা

খাটের দুপাশে দুজন 

কখনো চিত হয়ে কখনো মুখোমুখি কখনো পিঠাপিঠি

কখনো আধো-ঘুমে কখনো ঘুমে আর স্বপ্নে স্বপ্নে   

সারারাত একসাথে দুজনে;


মাঝে মাঝেই একজনের ওপর আরেকজনে হাত

জাগরণে কিংবা ঘুমে

সারারাতে বেশ কয়েকবার   

ওটা অভ্যাস;


ওটা অনুভব

ওটা অনুভূতি

স্পর্শে পাশে থাকা

স্পর্শে কাছাকাছি 

স্পর্শে স্পর্শে ভালোবাসা

জাগরণে কিংবা গভীর ঘুমে

হাতটা স্বয়ংক্রিয় চলেই যায় পাশের মানুষটার ওপর  

শরীরে হাত পড়তেই আবার নিশ্চিন্ত ঘুমে; 


অভ্যাসটা কিন্তু একদিনে তৈরি হয় নি! 

অনুভবটাও দু-চারদিনে আসে নি, 

ঐ যে স্পর্শানুভূতি! 

ওটা জানে শুধু স্বামী স্ত্রী

নির্ভরতা, বিশ্বাস, ভালোবাসা; কি নেই সেখানে?

ভালোবাসার সংসারে শুধু স্বামী-স্ত্রীই জানে; 


এই যে বিয়ের পর পর চায়ের কাপে দুজনা পাশাপাশি বসে ভোর দেখা থেকে শুরু! 

তারপর ডিমের কুসুম ভেঙে সূর্য ওঠতে উঠতে ভালোবাসার খোলস ভাঙা  

একজনার চোখের দিকে তাকিয়ে আরেকজনার পৃথিবী জানা  

একজনার ঠোঁটের ভাঁজে আরেকজনার অনুভব চেনা 

একজনার চোখের বাষ্পে আরেকজনার মনে শ্রাবণ ধারা 

একজনার হাসি মুখে আরেকজনার মন জ্যোৎস্না  

একজনার দুঃখে আরেকজনার অমাবস্যা, 

আচ্ছা! এগুলো তোমার জীবনে কখনো ঘটেছে? 

তবে তো তুমি দাম্পত্যই দেখই নি; 


আজকাল মাঝে মাঝে গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যায়

অজান্তেই পাশে হাত চলে যায় বিছানায়  

অন্ধকার ঘরেই স্পর্শানুভূতিতে বুঝি - আছে, পাশেই আছে

আবার নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ি কিংবা কখনো হয়তো বা জেগেই উঠি 

যেদিন ঘুম ভেঙে যায়! সেদিন নানা কথা মনে'তে উঁকি 

এই যে মানুষটা পাশে শুয়ে আছে! 

কখনো মুখ ফুটে কিছু বলে নি, অথচ জানি কি গভীর ভাবেই না ভালোবাসে! 

আমি বুঝি, অনুভবেই বুঝি, খুব ভেতর থেকে বুঝি, 

মাঝে মাঝে শুধুশুধুই কত রাগ করি! মুখ ফসকে কত কিছুই বলে ফেলি! 

হয়তো সে মনে মনে রাগ করে! অভিমান করে; তবুও সব সয়ে যায় মুখ বুজে 

দিনশেষে চায়ের কাপ হাতে পাশে বসে হাসিমুখে

হাবিজাবি অর্থহীন টুকটাক কিছু গল্পে মাতে জড়িয়ে ধরে 

তারপর সারাদিনের কর্ম-ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ে পাশে শুয়ে 

হাতটা ঠিক আমার বুকের ওপর রেখে তলিয়ে যায় স্বপ্ন-ঘুমে 

ঘুমের মাঝেই ওপাশ ফেরে, ঘুমের মাঝেই এপাশ 

শরীরে হাতের স্পর্শ পাই কয়েকবার সারারাতে 

ঘুমের মাঝেই আমারও হাত চলে যায় কয়েকবারই পাশে, দৈনন্দিন অভ্যাসে 

মন আশ্বস্ত হয়, আছে কেউ পাশে আছে  

ভালোবাসা, ভালোবাসা বোঝে স্পর্শানুভূতিতে 

তারপর মন আবার ঘুমিয়ে পড়ে দাম্পত্য নির্ভরতায়। 


 

০৫ মার্চ, ২০২১


#কবিতা 


দাম্পত্য নির্ভরতা 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা। 




আমার কি দায়!

আমার আশেপাশে সবার অবস্থা এক নয় 

আমার চারিদিকে সবার গল্পগুলোও এক নয়

আমার পাশের বাড়ির মানুষ কি অবস্থায় থাকে

কখনো কি জানতে চেয়েছি পরস্পর কথার ফাঁকে?   


কারো কারো খাবারের প্রাচুর্যে দিন আর রাত কাটে

কেউ দিনান্তে একবেলা কি খাবে? চিন্তায় মাথা কুটে

কারোর ডাইনিং টেবিলে পদে পদে খাবারের বাহার 

কোন পরিবারে সারাদিনে মাত্র একবেলা নুন ভাত আহার;  

 

 

সাদা কালো বাদামী সব রঙের মানুষ নিয়েই আমাদের বসবাস

একই সমাজে ধনী গরীব আর মধ্যবিত্তের শ্রেণিভেদের উপহাস 

পাশের বাড়ির খবর আজকাল আর রাখে ক জনা?

স্বামী স্ত্রী আর সন্তান, পরিবার বলতে আমার তো মাত্র এ ক'জনা; 

 

কে খেলো আর কে না খেলো আমার কি যায় আসে?

আয়নার ঐ মানুষটা নিজেকে বড্ড ভালোবাসে 

আমাদের উদর পূর্তি এক একদিন এক এক খাবারে 

আমার কি দায় পড়েছে ওদের ঘরের খবরে!   


০৩ এপ্রিল, ২০২১ 


#কবিতা 


আমার কি দায়!

 - যাযাবর জীবন