শুক্রবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৩

অপেক্ষায় অশ্বত্থ গাছ


অপেক্ষায় অশ্বত্থ গাছ
- যাযাবর জীবন

তোর বাড়ির সামনের ঐ অশ্বত্থ গাছটা
দাঁড়িয়ে থাকে ঠায়
সকালের সোনারোদে পশ্চিমে ছায়া হেলে থাকে
দুপুরের খাড়া রোদে সোজা তোর দিকে চায়
বিকেলের ক্লান্তিতে ছায়া হেলে পড়ে
পূবের কোনায়
তবুও গাছটা দাঁড়িয়ে থাকে ঠায়
তোর অপেক্ষায়
দিনে
রাতে
চব্বিশ ঘণ্টায়
রোদে পুড়ে
বৃষ্টিতে ভিজে;
মাসের পর মাস যায়
ঋতুর পর ঋতু বদলায়
গাছের কি আসে যায়?
সে তোর জন্য অপেক্ষায়
তোর ঘরের ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে ঠায়।

ঘন অমাবস্যা রাতে তুই দেখিস না তাকে
সে কিন্তু ঠিকই চোখ রাখে তোর জানালায়
পর্দাটার ফাঁক গলে কিছু আলো আসে
সাথে তোর অবয়ব কিছু ভেসে আসে
শান্তিতে রাতের নিদ্রা যায়
তোর সাথে সাথে
তুই নরম বালিশের কোলে
সে অন্ধকারে পুড়ে।

যখন তোর খুব মন খারাপ হবে
জানালার পর্দাটা সরিয়ে দেখে নিস তাকে
দিন রাত্রির যে কোন প্রহরে
দাঁড়িয়ে আছে হয়ে তোর পাহারাদার
তোরই ঘরের সামনে
গাছ হয়ে দাঁড়িয়ে ঠায়
তোরই অপেক্ষায়।

গাছ হয়ে আর কতকাল পাহারা দেব তোরে?
বিষ পিঁপড়ে যে ধরেছে আজ শেকড়ে
সময় ঘনিয়েছে বিদায় নেবার।









কাছের ও দূরের মানুষ


কাছের ও দূরের মানুষ
- যাযাবর জীবন

কত রকম মানুষের বাস
দূরের ও কাছের,
আমাকে ঘিরে
আমার চারিদিকে।

কিছু মানুষ বাস করে যোজন যোজন দূরে
অথচ যেন গেড়ে বসে হৃদয়ের অনেক গভীরে
আমার সকল চিন্তা চেতনার ভেতরে
ইচ্ছে হলেই পাই না তাঁদের ছুঁতে
ইচ্ছে করলেই পারি না দেখতে
তবু বড্ড ইচ্ছে করে
খুব মাঝে মাঝে
মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে
কিংবা জড়িয়ে ধরতে
কিংবা একটু ছুঁতে,
কোথায় যেন এক না বলা গল্প
মনের ভেতরে রয় ঘিরে
তাঁদের কথা মনে হলে।

কিছু মানুষ বাস করে একদম শরীর ঘেঁসে
তবু যেন কেমন অচেনা লাগে
যেন তাঁরা আমার কেও নয়
যেন তাঁরা অন্য কোন ভূবনের বাসিন্দা
যেন অন্য দেশের
কিংবা অন্য শহরের
খুব হঠাৎ করেই চলে এসেছে
আমার জগতে, বেড়াতে;
আবার চলে যাবে দূরে
বেড়ানো শেষ হলে;
এই সব কাছের মানুষগুলোই
আমার চারিদিক ঘিরে রয়
তবু যেন মন মানসিকতায়
কিংবা জীবনের বাস্তব আরেক রকম গল্পে
এদেরকে যোজন যোজন দূরের মানুষ মনে হয়।

কিছু মানুষ দূরে থেকে অনেক কাছে রয়ে যায়
আমার কল্প গল্পের শুরু হয়;
কিছু মানুষ কাছে থেকে অনেক দূরে সরে যায়
আমার বাস্তব গল্পের সমাপ্তি হয়;
আমি থাকি আমার মত করে
কত গল্পই তো জীবনে চলে আসে
বার বার ঘুরে
একই গল্প একই সুরে
কাছে আসা আর দূরে যাওয়ার মাঝে ঘুরে।

নিয়তির খেলায় কিছু মানুষ ছেড়ে চলে যাবে
হয়তো স্বল্প সময়ের জন্য
হয়তো আবার ঘুরে আসার জন্য
কিংবা চিরতরে;
এটা আমার জীবনের গল্পের শেষ নয়
হয়তো সমাপ্তি গল্পের
কিংবা তাঁদের, আমার সাথে সম্পর্কের
যারা চলে গেছে আমায় ছেড়ে।

নিয়তির খেলায় কিছু মানুষ চিরদিন রয়ে যাবে
চিন্তা চেতনায় বুকের গভীরে
হয়তো বাস্তবে চলে যেতে হবে অন্যভূবনে
নিয়তির কাছে হার মেনে চিরতরে;
এটা তাঁদের জীবনের শেষ নয়
নয় সমাপ্তি তাঁদের জীবনের গল্পের
বিচ্ছেদ থেকে শুরু আমার কল্প গল্পের
বসতি গেড়ে মনের গভীরে
তাঁদের নিয়ে
তাঁদের ঘিরে
যারা চলে গিয়ে রয়ে গেছে মনের ভেতরে।




বুধবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৩

অব্যক্ত কান্না


অব্যক্ত কান্না
- যাযাবর জীবন

সব কবিতায় গান হয় না
সব কথায় সুর দেয়া যায় না
কিছু গানের রাগ মন নেয় কারি
ঠান্ডার প্রলেপ যেন বৃষ্টির পানি
মনুষ্য রাগ প্রলয়ঙ্করী
বিধ্বংস সংসার, স্বাস্থ্য হানী।

সব বোকামিগুলো চোখে দেখা যায় না
যেমন প্রেমে পড়ে জব্দ,
সব শব্দগুলো কানে শোনা যায় না
যেমন মন ভাঙ্গার শব্দ,
সব কান্নার জল হয় কি সাদা ?
সব অশ্রুজল চোখে দেখা যায় না
গুমরে ওঠা মনের ভেতরের কান্না
মন পেতে শোনে আর ক জন?
চারিধারে ছড়িয়ে আছে
বন্ধু বান্ধব আর আত্মীয় স্বজন।

ক্ষরণে হৃদয় হতে থাক রক্তাক্ত
লোনা জলের ধারা থাক না কিছু অব্যক্ত............


মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৩

সংসার


সংসার
- যাযাবর জীবন

প্রতিদিন নতুন নতুন
ঘটনাবলী জীবনে
কারণে আর অকারণে
অবাস্তব সব কারণে, বাস্তব দহন
তুচ্ছ সব কারণ, পাহাড় চাপা মরণ
কারণ আর অকারণ
আকাশ প্রমাণ ক্ষরণ
রক্তাক্ত হৃদয়ে সাদা চোখে দেখে যাই নীরবে
সং সেজে থাকি তবু বলতে পারি না
মনের আড় পার হয়ে
হাজারো মনের বাঁধার পাহাড় ডিঙ্গিয়ে
এ সংসারে বাস করে
বলতে গেলে তো ছিন্নভিন্ন হয়ে যেত
সেই কবে
ভিন্ন হতো সংসার ডামাডোল সরবে!

কোন মানে হয় না
কোন মানে খুঁজে পাই না
ঘটে যাওয়া চারিদিকের ঘটনাবলী
খুব কাছে থেকে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছি
ইদানীং যেন ব্যথার পাহাড় গড়ে ওঠে
অনভ্যস্ত আঘাতে আঘাতে
খুব বেশী কাছের লোক থেকে;
অবিশ্বাস্য সব কান্ডকরন দেখি
অবিশ্বাস নিয়ে চোখে
কোথায় বাস করছি আমরা
সত্যি বুঝি না
এর নাম কি সংসার না চিড়িয়াখানা
এখানে কেও কারো না
কেও কাওকে বোঝে না
কারো মধ্যে যেন সে চেষ্টাটাই দেখি না
ধৈর্য, সহনশীলতা, ক্ষমা
পারস্পরিক বন্ধন
সংসারের যত সব আয়োজন
সংসার সাজাতে নিত্য প্রয়োজন
আর ভালোবাসার নিবিড় বন্ধন;
এ শব্দগুলো এখন যেন
শুধুই ডিকশনারিতে পড়ে থাকা
কিছু অক্ষর
সাদা কাগজে কালো কালির আঁচর
কিংবা লালে লাল
হৃদয়ের অনেক গভীর ভেতর।




একা


একা
- যাযাবর জীবন

আমরা কেও কোথাও যাই না।

নিজ নিজ স্থানে পদ্মাসনে বসে থেকে
ভাব ধরি, আমি ভাবের পূজারি;
ফুল পদ্ম দিয়ে যা
আমার চরণ তলে
ভাবের ঘোরে ভবের বাসায়
ধোঁয়াটে ভাব নিয়ে
অপরিণামদর্শী ভুবন গড়ে তুলি
নিজেই নিজের ঢোলে দেই বাড়ি
ধোয়া তুলসী পাতা আমি
পূজো দে আমায়
ভাব ধরি;
মুখ নিঃসৃত নিজস্ব লালা দিয়ে বুনে চলি
মাকড়সার জাল
নিজের জালে আটকে থাকি নিজেই
নিজের অজান্তেই
একরাশ হাহাকার বুকে নিয়ে
পড়ে থাকি
একা......

একবার ভাবের ঘরে ঢুকে পড়লে আর বের হওয়া হয় না
এখানে যারা একবার ঢোকে
আমরা আর কোথাও কেও যাই না
একরাশ হাহাকার বুকে নিয়ে ঘুরি ফিরি খাই দাই
ভবের ঘোরে ভাবের জগতে ঘুরে বেড়াই
একা...............

জলের কোলাহল



জলের কোলাহল
- যাযাবর জীবন

আমার আছে জল
জলের আছে কোলাহল
কলকল ধ্বনি;
মিশে আছে কত
পাড় ভাঙ্গা যত
অসহায় কান্নার ধ্বনি;
খুব মন পেতে
জলের কোলাহল হতে
কান পেতে শুনি;

পাড় ভাঙ্গানিয়া কান্নার ধ্বনি।

শুনতে কি পাও?
না শুধুই পড়ে যাও
কাব্যের কোলাহল ধ্বনি।


সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৩

মনের তিন বেলা


মনের তিন বেলা
- যাযাবর জীবন

সকালটা সুন্দর
মন মনোহর
চোখ মেলে দেখো।

দুপুরটা অস্থির
শতেক কাজের ভির
কাজের মাঝে থাক।

রাতটা অন্ধকার
মন করে থাকে ভার
দিনের দিনলিপিগুলো, অনুভবে বোঝ।


বেলার কোন না কোন প্রহরে
আলো আসতেই হবে
মনের ভেতরে।

শূন্য


শূন্য
- যাযাবর জীবন

বাবা মা ভাই বোন
পরিবার পরিজন
চারিদিকে ঘিরে থাকা আত্মীয় স্বজন
তাকিয়ে থাকে আমার দিকে
বিশাল বড় এক হা করে
আমার আর কিছুই দেবার ক্ষমতা নেই আজ
তোমাদের কাছ থেকে কিছু নেব
আমার যে বড্ড বেশী লাজ
হবে না আমাকে দিয়ে কিছুই আর
না দেয়া না নেয়া
সব শূন্যের কোঠায় এসে ঠেকেছে
লেনা দেনা
চাওয়া পাওয়া।

আমি নিজেই আজ বিশাল একটা শূন্য

"ক্লান্তি, আজ আমায় ক্ষমা কর প্রভু"

শূন্যতে কাঙ্গাল হয়ে তোমার চরণে
ঘর বাঁধব কভু।



বাকি সবার মত ঠেলে ফেলে দিও না সেদিন
বুকে তুলে নিও, পড়ে থাকা হাড় মাংস
হায়েনাদের ধারালো দাঁতে ছিন্নভিন্ন
স্বার্থের বিষদাঁতে হয়তো পচে গেছে।

তবুও কখনো আমি হয়তো মানুষ ছিলাম
তোমার সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ সেরা জীব।

কথকথা


কথকথা
- যাযাবর জীবন


বাতাস বইলো কি?
দূরে কোথাও একটু হিমেল,
হালকা একটু ঝাঁপটা লাগলো যেন গায়
মনটা জুড়ালো।

বৃষ্টি হচ্ছে কি?
দূরে কোথাও
উতলা মনে বৃষ্টি বিলাস
বড্ড আনচান
ঝুম বরষার।

নাহ, আজো হলো না
কোথা থেকে এক ঝাপটা বাতাস
বয়ে এলো কোথা থেকে কে জানে?
মেঘ সরালো পাহাড় দেশে
সূর্য হাসলো অবশেষে।

আজো হলো না
কখনোই হয় না
কোনো বিলাসই আমার জন্য না,
শুধু শুধুই স্বপ্ন দেখা.........

রিক্সাটা ছেড়ে দিলাম মাঝ পথে
পথের মানুষ পথ হাঁটা...............

আনন্দ


আনন্দ
- যাযাবর জীবন

আজ অনেক দিন পর বিছানা থেকে উঠে বসলাম
আজ অনেক অনেক দিন পর ছাঁদে ঢু দিলাম
আজ মনে ভরে আকাশ দেখলাম
মেঘে ছাওয়া আকাশ
আমার মনের মত
আজকে বৃষ্টি হবে কি?

বড্ড ইচ্ছে করছে অফিসে যেতে
খোলা রিক্সার হুড নামিয়ে দিয়ে
যদি বৃষ্টি নামে?
না হয় হলোই একটু বর্ষা বিলাস
বৃষ্টির জল মেখে নেব গায়ে।

অফিস যাওয়ার পথে দুটি কদম গাছ
সারা বছর দেখি রাস্তায় ঠায় দাঁড়িয়ে রয়
অথচ বর্ষাতে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে
সোনালী টেনিস বল গুলো ঝুলে থাকে;
আচ্ছা এখন কি কদম ফোটার সময়?
সোনালী রঙের টেনিস বল
বড্ড মন কেমন করা
বৃষ্টিতে যদি হয় ভেজা;

আজ অনেক দিন পর ঘর থেকে বের হব
খোলা রিক্সায়
দুচোখ ভরে চারিদিক দেখে নেব আজ
মেঘ রৌদ্দুর আকাশ, আলো বাতাস
কেমন দিয়েছে সাজ!
আবার কবে বের হওয়া হয়
তার কি কোন ঠিক আছে?

বেঁচে থাকাটাই বড় মধুর মনে হয়।

রবিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৩

ডায়েরীর ছেঁড়া পাতা থেকে

ডায়েরীর ছেঁড়া পাতা থেকে
- যাযাবর জীবন

ছোট্ট এক টুকরো জমি, বাবার কেনা। সেই অনেক অনেক কাল আগের। তখন আমার জন্মও হয় নি। স্কুল শিক্ষক বাবা অনেক কষ্টের টাকা জমিয়ে এক টুকরো
জমি কিনেছিলেন এই ঢাকা শহরে। এখন তা সোনার খনি। ওনার টিউশনির টাকায় টিনের ঘর তুলেছিলেন মাথা গোঁজার ঠাই হিসাবে। সম্ভবত ওনার সংসার হিসেবেও।
দুটি শয়ন কক্ষ, একটি বৈঠকখানা, এক চিলতে বারান্দা আর সামনে ঘাসের লন। ওপরে পাকা ছাঁদ দেবার টাকা ছিল না তাই টিনে চাল। মনে আছে ছোট বেলায়
মা ঘুম পাড়াতেন গান গেয়ে, একদিকে টিনের চালে বৃষ্টির রিমঝিম অন্যদিকে মায়ের গুনগুন। কখন যে চোখ লেগে যেত ঘুমে নিজেই জানতাম না। আমি বাবা আর মা;
এই তিন জনের ছোট্ট সংসার। ভালোই চলছিল। তারপর কালের স্রোতে জীবন গড়িয়ে চলল - বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠ পেরিয়ে কর্পোরেট ভুবনে ঢুকে গেলাম। বাবার
অনেক ইচ্ছে ছিল, ছেলে যেন তার মত শিক্ষক হয়। ওনার মত সৎ মানুষ হয়ে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মানুষ হওয়ার শিক্ষায় নিজেকে নিয়োজিত করি। না হয়
বাস্তব জীবনে থাকুক কিছু পয়সার টানাটানি! তবুও তো সৎ উপার্জনে দুটি অন্ন বস্রের সংকুলান হয়ে যাবে। পছন্দ হয় নি সেদিন বাবার কথা, ছোট বেলা থেকে দেখে
আসা টানাটানির সংসারের বোঝা; এ যেন আমার জন্য না। আমার জন্য অন্য এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছি আমি নিজে। তাই গা ভাসালাম কর্পোরেট যুগে।

এরপর ছেলের বিয়ে দেবার জন্য মা উঠে পড়ে লাগলেন। এক সময় বাধ্য ছেলের মত বিয়ের পিঁড়িতে বসে পড়লাম।
বড় শোবার ঘরটা বাবা-মা ছেড়ে দিয়েছিলেন আমার জন্য সেই অনেক কাল আগেই; যেদিন বিয়ে করে নতুন বৌ ঘরে তুলেছিলেম। ওনারা নিজেদের সরিয়ে
নিয়ে গিয়েছিলেন দ্বিতীয় শোবার ঘরে। তখনো আমাদের মাত্র দুটি শোবার ঘর। বাবার সারাজীবনের সৎ উপায়ের সঞ্চয়ে এর থেকে বেশী কিছু করার সামর্থ্য ওনার
ছিল না। তবুও একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা। ওনাদের পঁচিশ বছরের সংসার পাতা শোবার ঘরটা নির্দ্বিধায় সাজিয়ে দিয়েছিলেন আমাকে; এখনো মনে আছে।
সেও তো প্রায় পঁচিশ বছর হয়ে গেছে।

এর মধ্যে সংসার বড় হয়েছে কলেবরে, ছেলে মেয়ে এসেছে সংসারে। বড় ছেলে আর বড় মেয়ে দুটোই বিশ্ববিদ্যালয়ে, ছোট মেয়েটা এবার ও লেভেল দেবে।
সময়ের স্রোত গড়িয়ে আমি এখন অনেক উঁচু পদে, বেসরকারি চাকরিতে। বসেদের তেল মেখে মেখে। আজকের যুগের কর্পোরেট সভ্যতা, তেল ছাড়া
কোথায় কবে উপরে উঠতে পারে? বেতন মাশাল্লাহ ভালই পাচ্ছি, অফিসের গাড়ী আমার নিজের যাতায়াতের জন্য। এছাড়াও বেগম সাহেবার জন্যও গাড়ী হয়েছে
লোনের বদৌলতে। যদিও দরকার ছিল না কোন; তবু ট্যাক্সের উকিলের পরামর্শ। লোনের কিছু বোঝা নিজের গাঁয়ে অযাচিত চাপানো, এটাও নাকি আজকের
যুগের কর্পোরেট সভ্যতার অংশ। আমার কি? টাকা যোগায় ভুতে, আমি তেলের উপর আছি। অধঃস্থনদের তেল খাই আর ঊর্ধ্বতনদের তেল মাখি। কর্পোরেট সভ্যতার
ধ্বজাধারী। সারাদিন অফিস করি, একটু মদ্যপানের অভ্যাস কর্পোরেট ক্লায়েন্টের বদৌলতে (শাক দিয়ে মন ঢাকি, আমি আবার মদ খাই নাকি?); মাঝে মধ্যে
অনেক রাতে বাড়ি ফেরা, মাঝে মধ্যে সুন্দরী রমণীর বাহুডোরে পাঁচ তারা হোটেল কক্ষে। কর্পোরেট ব্যবসার নামে, ক্লায়েন্ট খুশি করতে। এক রুমে আমার ক্লায়েন্ট,
আরেক রুমে আমি। দুজনাই দুই তন্বী সুন্দরীর বাহু-বন্দি। টাকা যোগায় অফিস, ব্যবসা হতে হবে যে! আমার যেন কেমন এক ঘোরের রাত কাটে আর টাকার দিন।
বুঝতে পারি নিজেই এখন আমার অনেক অনেক সুদিন। বসেরাও খুশি, ক্লায়েন্টও খুশি আমি তো আহ্লাদে ষোলোখানা। দিন যাচ্ছিল এভাবেই কালের স্রোতে ভেসে।
দিন দিন ঐ ছোট্ট বাসায় দম বন্ধ লাগে, যদিও এর মধ্যে টিনের বাসা ভেঙে ফেলেছি সেই কবেই। লোনের বোঝা মাথায় নিয়ে এখন ছয়-তালা বিল্ডিং শোভা পাচ্ছে
আমার বাবার জায়গায়। একমাত্র ওয়ারিশান আমি। পুরো একটি তালা জুড়ে আমাদের বসবাস, চার চারটি শোবার ঘর অথচ স্থান সংকুলান হচ্ছে না
যেন এত বড় বাসাতে কিছুতেই; কিংবা হয়তো মন সংকলন। বৌ এর নিত্য কানাকানি, তোমার বাবা এই করেছেন তোমার মা ঐ করেছেন - হরদম এ যেন
জীবনের অংশ হয়ে গেছে। ইদানীং আর মন লাগে না সংসারে কিছুতেই। তবুও সংসার নামের এক জঞ্জালে বসবাস, সং সেজে নিজে। মাঝে মাঝে শাশুড়ি বৌ এর
ঝগড়া যেন তুঙ্গে ওঠে। যথারীতি বৌ তার বাপের বাড়ি, আমি ঘরে ফিরে দৌড়াই বৌ ফিরিয়ে আনতে; প্রয়োজনে হাতে পায়ে ধরি। আরে তেল দিতে দিতে আমি এখন
তুখোড় তৈলমর্দনকারী। বড় বড় সাহেবদের মন গলে যায় আর এ তো ঘরের বৌ, আমার কাছে বড্ড বেশী ছেলেখেলা। খারাপ লাগে না মাঝে মাঝে একটু কপট চেহারা
নিজেরই। খুব মাঝে মাঝে আয়নায় চেয়ে দেখি - কাকে দেখা যায়? মানুষ না তেলের ব্যাপারী?

মাঝে মধ্যে ঝগড়া চরমে ওঠে, ছেলে মেয়েগুলো মায়ের সাথে জুটে; আমার মা অসহায় চোখে ছেলে বৌ এর কাণ্ড দেখে, নাতি নাতনীদের স্বরূপ দেখে - আর
খুব অগোচরে আঁচলে চোখ মোছে, যেন বাবা কিছু জানতে না পারে। আর বাবা! সব দেখে, সব বোঝে; ইদানীং কেমন যেন বোবা হয়ে গেছে। অনেক আশায়
মানুষ করা ছেলের অমানুষ রূপ দেখে। খুব মাঝে মাঝে তাদের জন্য আমার করে দেওয়া ছোট্ট ঘুপচি কামরাটায় ডাকে। বেশিরভাগ সময়, সময় হয় না আমার হাতে।
কিংবা হয়তো সময় থাকে, তবুও মনের খুব গোপন কোথায় যেন এক অপরাধ বোধ কাজ করে - ভয় লাগে বাবার মুখোমুখি হতে। একদিন তো সরাসরি জিজ্ঞাসাই
করে ফেললেন - "বাবারে, শিক্ষক পিতার পুত্র তুমি আজ কোন শিক্ষায় শিক্ষিত হলে, একটু বুঝিয়ে বলবে আমায়? পুরনো দিনের মানুষ আমি আমার মাথায়
ঢোকে না তোমার আলাদীনের চেরাগের কাহিনী"। আমি আমতা আমতা করি, বলি - ও তুমি বুঝবে না বাবা। হাতে চেরাগ আমার কর্পোরেট সভ্যতা। এখানে ঠিক মত
ঘষা দিতে পারলে আজকের যুগে টাকার নহর বয়ে যায়, আর ঘসতে না পারলে জীবন বয়ে যায় অর্ধাহারে আর অনাহারে। বাবা খুব তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে রয়
আমার চোখের দিকে, আমি চোখ নামিয়ে ফেলি; সইতে পারি না বাবার ঐ দৃষ্টি।

ইদানীং যেন শাশুড়ি বৌ এর দা কুমড়ো সম্পর্ক (কি জানি আজকালকার স্যাটেলাইট সভ্যতার সিরিয়ালের বদৌলতে কি না কে জানে?)। একদিন বাসায় ফিরতে হলো
বাবার ফোন পেয়ে। বাসায় ঢুকে দেখি বৌ এর অগ্নিমূর্তি, কাঁচের গ্লাস প্লেট সারা ডাইনিং রুম জুড়ে পড়ে আছে ভাঙাচোরা হয়ে। মা এক কোনে বসে থরথর কাঁপছে, আর
আঁচলে চোখ মুছছে। বাবা নিশ্চুপ এক কোনায় ঠায় দাঁড়িয়ে। বৌ আমার ডাইনিং টেবিলের উপরে বসে আছে অগ্নিমূর্তি হয়ে। ছেলে মেয়েগুলো মায়ের পাশে - আজ যেন
এর একটা হেস্তনেস্ত করবেই।

আমি ঘরে ঢুকে থ। কার পক্ষ নেব? নিত্য দিনের এই তু তু ম্যা ম্যা আর কাঁহাতক সয় প্রাণে?
মায়ের পাশে দাড়াই, বৌ এর হুঙ্কার-ধ্বনি, লেজ গুটিয়ে চলে আসি বৌ এর আঁচলের তলায়। এবার হুঙ্কার ধ্বনি আমার - প্রতিদিন তোমরা কি শুরু করেছ?
একটা দিনও কি একটু শান্তিতে থাকতে দেবে না আমায়? বাবার চোখে বিস্ময় দেখি, মায়ের চোখে পানি - তাঁদের একমাত্র ছেলের স্বরূপ দেখে চোখে অবিশ্বাস।
বাবা যেন এবার অন্যমানুষ, বাবা হয়ে ওঠে আমার। এই প্রথম বার তিরস্কারের স্বর শুনি মুখে বাবার। তেলের ওপর তৈলমর্দন পেছনটা হয়ে আছে বড্ড নরম।
বাবার তিরস্কারে তাই বড্ড লাগে যেন সেখানে, মনের মাঝে হঠাত যেন এক অমানুষ গর্জে ওঠে। হিতাহিতশুন্য কোথা থেকে কি জানি বলে ফেলেছিলাম সেদিন।
কাল হয়ে গিয়েছিল বাবা সন্তান সম্পর্ক পারিবারিক বন্ধনের ডোর। বাবাও গর্জে বলেছিলেন - রে মূর্খ দূর হয়ে যা এখনি। কোলে পিঠে মানুষ করেছিলাম তোকে
আজকের দিন তখন দেখিনি।

কি হতো সেদিন প্রতি উত্তর না দিলে, না হয় সয়েই যেতাম বাবার তিরস্কার একদম মুখ বুজে। তখনো বুঝিনি শুধু মূর্খই নই মানুষই আমি হইনি, তাইতো বাবার
মুখের ওপর সেদিনই বলে দিয়েছি। দূর হতে হলে তুমি দূর হও, খেতে পড়তে কমতি রাখিনি এত দম্ভ কোথায় পাও?

বাবা শুধু মনে করিয়ে দিয়েছিলেন সেদিন - আমার বাড়িতে বসে আমাকেই ভয় দেখাও?

মনের শয়তান মুখে বমি করে আজেবাজে কথাগুলো সব আমার মুখে ফোটে। কি? কার বাড়ি? কাগজ দেখেছ কি? ব্যাঙ্কের কাছে যাও গচ্ছিত আছে তোমার দলিল দস্তাবেজ,
পাওয়ার অফ এটর্নি নিজের হাতে দিয়েছিলে আমায় লিখে, মনে পড়েছে কি? এত বড়াই কেন - কি আমার সাধের সম্পত্তি!

সেই থেকে শুরু তারপর ক্রমাগত একের পর এক।
আলাদা হলো অন্ন, আলাদা বাসস্থান, চিলেকোঠার ঘরে হলো বুড়োবুড়ির স্থান।
এক বাড়িতে বসবাস আমাদের, আমার ঘরে উচ্ছিষ্ট খাবার পড়ে রয়।
বুড়ো এই বয়সে টিউশনি ধরেছে বুড়ির অন্ন কখনো হয় কখনো নয়।
একই বাসায় থাকি এখনো, চিলেকোঠায় বুড়োবুড়ি; আলিশান আমার বাড়ি।
আমি আর এর মধ্যে নেই, খুব মাঝে মাঝে ঘরে ঢুকতে বের হতে চোখে চোখে দেখা হয়।

দিন পার হয়
দিন পার হয়
কালের স্রোতে বয়ে চলে সময়।

ইদানীং যেন চুলে ধরেছে পাক, মনেতে শয়তান গেড়েছে বসবাস।
ছেলে মেয়েগুলো উচ্ছন্নে গেছে আমার তাতে কি?
যার যার জীবন করছে যাপন, আমি মানিয়ে নিয়েছি।

কোন এক রাতে ঘুম ভেঙে গেল বৌ এর ডাকে, কান্নার আওয়াজ কোথা থেকে যেন আসে - চিলেকোঠায় কি?
বৌ বলে, চল না একটু খবর নিয়ে দেখি।

দুজনে যাই একসাথে, ছোট্ট ঐ চিলেকোঠার ঘরে।
প্রথম বারের মত দেখতে বুড়োবুড়ির সংসার
সারাটা জীবন আমি সেজে ছিলাম সং, আর আমার বৌ দম্ভের গাছে ঢেলেছে সার
তাইতো এতদিনে একবারও হয়নি আমাদের সময় চিলেকোঠায় আসার
অহংকার, আসলে সবই অহংকার।

যাই হোক ঘরে ঢুকে দেখি পা ছড়িয়ে কাঁদছে আমার মা বুড়ি
নিথর বাবার শরীরটা পড়ে আছে মাটির ওপর বেছানো তোষকে
খাট কেনার সাধ্য তাঁদের ছিল না আর এই বয়সে
বুড়ো বুড়ির তো আর বাসর শয্যা নয়
এই বয়সে এই ভালো মাটির কাছাকাছি, মাটির সাথে পরিচয়।

এখন দিন বদলেছে, যুগ বদলেছে এত সময় আছে কার
মরার পরে দেরি করিনি খুব বেশী বাবার গোর দেবার
সকাল হতেই মাটি চাপা দিয়েছি আজিমপুরের গণ কবরে
আসার পথে দেখে এসেছি আমার জন্য কিনে রাখা অনেক দামের জমিটারে
অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, তৈলমর্দনে নিজের জায়গা সংরক্ষিত
একটু যেন শঙ্কা লাগে কে দেবে কবরে প্রদীপ ঘৃত।

যাক বাবা, অনেক দিন বেঁচেছিলে অনেক জ্বালায় জ্বলে
এখন নিশ্চয়ই শান্তিতে ঘুমুবে
মনকির নকীরের পালা শেষ হলে;
হঠাত এ কথা মনে এলো কেন?
এই ড্রাইভার এ,সি টা বাড়াও একটু ঘামছি যেন।

তারপর সারাদিন মান অনেক পরিশ্রম অফিসের জ্বালা সয়ে
তৈলমর্দনের পালা চলেছে সারাদিনই একটু একটু রয়ে
বাসায় ফেরা হলো ক্লান্তি শেষে
হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম
এবার যেন বাস্তব চিন্তা মাথায় কিছু নিলাম।

বুড়োতো গেল, এখন আবার বুড়ির উপায় কি?
নতুন করে আবার নাকি শুরু হয় অশান্তি
বড্ড উচাটন মন
চিলেকোঠায় গেলাম।
বুড়ি একঠায় বসে এখনো সেভাবে
সকালে যেমন রেখে গিয়েছিলাম।

কি জানি হলো মনের মাঝে একটু ধাক্কা খেলাম
অনেক দিন পর গাঢ় স্বরে "মা" বলে ডাকলাম।

সারাদিনে কিছু খেয়েছ মা?

বুড়ি ফ্যালফ্যাল তাকিয়ে রয়
যেন বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়,
আলতো করে আমার মাথার ওপর হাত রাখে
তুই খেয়েছিস বাবা?

হুম, আমি তো এই মাত্র খেয়ে তোমাকে দেখতে এলাম।

ওতেই আমার খাওয়া হয়ে গেছে রে পাগলা, আমার জন্য চিন্তা করিস না।
দেখ না, সবাই মিলে কেমন ফাঁকি দিয়ে চলে যায়।
তুই ফাঁকি দিলি নিজে ফাঁকিতে পড়ে
সংসারের যাঁতাকলে
তোর বাবা ছিল হাতের লাঠি
সেও হঠাতই দিয়ে গেল ফাঁকি
আমি ভাবছি এবার আমার হবে কি?
ডাক আসতে আর কতদিন বাকি?

কেমন যেন অন্যরকম এক মায়া হলো, মায়ের জন্য।
অনেক অনুনয় করে বললাম - মা আমার ঘরে চলো, এখানে কেও নেই তোমার
এতদিন বাবা ছিলেন দুজন দুজনকে দেখাশোনা করার;
এখন অভিমান ছাড়, আমার ঘরে চলো। জীবনটা একা পাড়ি দিতে পারবেনা।

মা জিজ্ঞাসা করলেন - ওখানে কে দেখবে আমায়?
নাতি নাতনী সব গেছে তো যার যার চুলায়
এখন বিশাল বাড়িতে শূন্যতা ঘোরে
তুই আর তোর বৌও দুজন দু ঘরে
সময়টা কেমন পালটে গেল আমাদের, নারে?

হ্যাঁ মা, সময় পাল্টেছে, পাল্টে গিয়েছে জীবনধারা
এ জগতে কেও কারো নয়
স্বার্থ দেখায় নিজ নিজ চেহারা।

হ্যাঁ রে বাবা, তাই তো এতদিন দেখে এসেছি;
মায়ের চোখে চোখ রাখতে পারিনি
মাথা নিচু করে চলে এসেছি।

তারপর সময় ঘড়িতে আরো কিছু কাঁটা ঘোরে
ঘুরি আমিও জীবনের পাঁকে পড়ে
সংসার চলে সংসারের মত
চলছে দিন মা আর বৌ এখনো মিলেমিশে
আমার মনেতে কোথা থেকে যেন এক ভয় কুঁকড়ে থাকে;

একদিন ভয় রঙ দেখায়
সাদাকালো জীবনে রঙ্গিন ছবি শোভা পায়
বৌ এর পুরাতন চেহারা ফুটে ওঠে
মায়ের আঁচল যথারীতি চোখ মুছে
আমি অসহায় শূন্য চোখে
কিংকর্তব্য-বিমুখ।

শেষমেশ অনেক আলাপ আলোচনার পর "মা" কে রেখে এলাম বৃদ্ধাশ্রমে।

মাথা থেকে যেন একটা বোঝা নেমে গেছে।

আবার নির্ঝঞ্ঝাট সংসারে আমি সং সেজে থাকব
অহংকারের গাছে আমার বৌ সার ঢালবে
দুজনে মিলে সংসার করব
খাওয়া দাওয়া একসাথে
রাতে শোয়া দুজন দুঘরে দু-বিছানাতে
ঘুমের বড়ির নেশায় ঘুমাই দুজনে।

জীবনটা কি এমনই?

কোনো এক রাতে হঠাতই ঘুম ভেঙে যায়, অন্ধকারের মাঝে আয়নায় চোখ যায়
আমি ধীরে ধীরে উঠে বসি
আয়নার সামনে যাই
ওখানে কাওকে দেখা যায় নাকি?
নাকি ওটা আমারই প্রতিচ্ছবি।

ঠিক যেন বিশ বছর আগের বাবা চেয়ে আছে আমার দিকে
দেখে একটু চমকে উঠি
রক্ত কথা বলে
বাবার জিনের কিছু কি এখনো আমার ভেতর রয়ে গেছে?
নইলে অপরাধ-বোধের এক অব্যক্ত যন্ত্রণায় ঘুম ভাঙ্গায় কে?

ক্রিং ক্রিং টেলিফোন বেজে ওঠে
ধরব না ধরব না করেও হাত বাড়াই মুঠোফোনের দিকে
ওপাশ থেকে বৃদ্ধাশ্রমের সুপারভাইজারের গলা ভেসে আসে
"আপনার মা একটু আগে মারা গেছে"
হুম, ঠিক আছে; আমি পৌঁছে যাব সকালে।

আয়নার প্রতিচ্ছবি যেন আমায় ব্যঙ্গ করে
একটু ভয় পাই যেন
লাইট জ্বালাই
খুব ভালো করে চেয়ে দেখি - এ আমি নই
আসলে বাবাই এসেছিলেন আমাকে মায়ের মৃত্যু সংবাদ দিতে।
অন্যভূবনে গিয়েও সন্তানের প্রতি ভালোবাসাটুকু ঠিকই ধরে রেখেছেন।


পুনঃশ্চঃ

এটা গল্প না কবিতা না ডায়েরীর ছেঁড়া পাতা তা জানি না
কারো জীবনের সাথে মিল আছে কি না তাও জানি না
তবে কেন যেন ইচ্ছে করল মনে মনে ডায়েরী লেখার
আজ অনেক দিন পর অন্য কোন কবিতা বা গল্প না লেখে না হয় ডায়েরীই লিখলাম
কিংবা মনে মনে একটু একটু করে না লেখা ডায়েরির কিছু ছেঁড়া পাতা থেকে পাঠ করলাম
কেও পড়লো তো পড়লো না
শুনলো তো শুনল না
বুঝলো তো বুঝলো না
তাতে আমার কিছুই আসে যায় না
কেন জানি এ লেখাটি লিখতে গিয়ে বার বার চোখ ভিজে উঠেছিল - নিজেই জানি না।

এমনই কি হবে আমার জীবনের পরিণতি?
কিংবা তোমার?
কিংবা তার?

সংসারের গতি আজ কোন মুখি?
জানি না
বড্ড জানতে ইচ্ছে করে।


নতুন সংজ্ঞায় বন্ধুত্ব


নতুন সংজ্ঞায় বন্ধুত্ব
- যাযাবর জীবন

তুই আমার কে?
আমি তোর কে?
বন্ধুত্ব নামক এক সম্পর্ক
পরিচয়ের সূচনাতে;
সম্বোধন "বন্ধু"
ডাকতে হবে তো কিছু
শুরুটা এভাবেই হয়
হয়েছিল এভাবেই;
মাধ্যম? কেও না কেও হয়ে রয়
যতি চিহ্নের মত, হতে পরিচয়।

তারপর?

সময় গড়ায় কালের স্রোতে
বন্ধুত্বের হাঁটি হাঁটি পা পা
পাড়ি জমায় একটু একটু করে
সীমা লঙ্ঘিতে;

ভালোবাসার বন্ধন?
যৌবনের তাড়না?
নাহ্‌, ঠিক হলো না।

সীমার বাঁধন ভেঙ্গে কলঙ্কিত বন্ধুত্ব
সময় দৌড়োয় নিয়ে কলুষিত সম্পর্ক
সংসারে কিছু ভাঙা গড়ার খেলা
সবই কি জীবন আর যৌবনের তারনা?
পুরনো সং এ নতুন সাজ
নিত্য সংসার গড়ায় নেই কারো লাজ
এ কি যুগের কালিমা?
কি জানি, হয়তো;
মাথায় ধরে না।
তবু একটু একটু বুঝি মনে হয় -
এখনকার বন্ধুত্ব যুগের সাথে চলমান
কিংবা কালের স্রোতে ভাসমান
অগভীর কালো জলেই নাকি শ্যওলা পড়ে
পা পিছলায় কিংবা সম্পর্ক,
আবার হয়তো হতে পারে
ইদানীংকার নতুন ভাবে
নতুন যুগে, নতুন করে
বন্ধুত্বের নাম-
নতুন ধারায় সংজ্ঞায়িত।

তারপর???????

আবার নতুন বন্ধুত্ব
নতুন সম্পর্কের সূচনা
নতুন পথে পথচলা
নতুন জীবনের হাতছানি
এ যেন এক নিত্য নতুন
নব যুগের কলুষিত খেলা;

তারপর ক্রমাগত.........

চক্রের সমাপ্তি কোথায়
কেও জানে না।

কোথাও খুঁজে পাই না আজ আর
আমাদের সেই পুরনো দিনের
গভীর সম্পর্ক
টলটলে কালোজলের মত
বহমান নদীজলের মত পবিত্র
যার নামকরণ করেছিলাম "বন্ধুত্ব"।

তুই আমার কে?
আমি তোর কে?
আসলেও বড্ড জানতে ইচ্ছে করে
নতুন যুগের এ পৃথিবীতে।





শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৩

নারী


নারী
- যাযাবর জীবন

যতটুকু বয়স হলে যৌবন প্রাক্কালে
পরিপূর্ণ রমণী হতে পারে
একটি নারী,
মন বলে হয়ে গেছে
দেহ বলে আড়ে আড়ে
মনেরে চোখ ঠারে
রমণীর রূপে প্রকাশিতে
এখনো রমণী হতে
আছে আরো অল্প কিছু সময় বাকি;

খুব সহসাই
স্বল্প সময়ের ব্যবধান
বুকে সেফটিপিন গাঁথে হাত
যৌবন ঢাকে আনাড়ি,
প্যাঁচের পর প্যাঁচ
শারিতে প্যাঁচ
বোঝে, আজ হয়ে উঠছে নারী;
শারির প্যাঁচে আপাদ মস্তক ঢেকে রাখার কলা
এও অন্য এক নারীসুলভ চালাকি।



মনের আড় বেয়ে প্রেমধারা নামে
বয়ঃসন্ধির খুব প্রাক্কালে
কাল গড়ায় সময়ের স্রোতে
সন্ধ্যে গড়ালে হুহু হাহাকার
চখীর প্রাণ কাঁদে চখার সন্ধানে;
কেমন যেন আনচান চারিধার
মনের চোখেতে কার যেন
উঁকি বারে বার,
ডামাডোল বাজাতে হয় না
শরীর বাজায় ঢোল;
হাতে চুড়ির টুংটাং
অপেক্ষায় বাড়ানো হাত
ধরবে শক্ত বাহু
গুজবে মাথা লোমশ বুকে
এখন যৌবন এসেছে ধেয়ে
রমণীর দেহমন জুড়ে।

খুব হঠাৎ করেই চোখের নিমিষে
সামনে দেখি এক পরিপূর্ণ নারী।



শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৩

বাইল্য প্রেম


বাইল্য প্রেম
- যাযাবর জীবন

মনে আছে কি -
আমাগো বাইল্য প্রেম কাহিনী?
তুই আর আমি
সেই কত দিন হইয়া গেছে
এখনো চোখের সামনে ভাসে
বাইল্য কালের ছেলেমানুষি
বুঝতাম না ঠিকমতন
আসলে ছিল প্রেমকাহিনী।

তোর একমাত্র সোয়ামীর
পয়েলা পোলার ঘরের পয়েলা নাতনি
আমার বড় বৌ এর
পয়েলা মাইয়ার ঘরের পয়েলা নাতি
নাক টিপলে দুধ বাইর হয়
তয় দুইটাই চরম বদ;
ইদানীং প্রেম করতাছে চুটাইয়া
আর আমরা চাইয়া চাইয়া দেহি
আঙ্গুল চুই মুখে ভইরা
মাঝে মইধ্যে কামড়াইয়া দেহি
স্বপ্ন দেকতাছি নাকি
লাভ কি?



পুরাণ কতা মনে পড়তাছে কি?
এই বয়স আমাগোও আছাল
তোর লগে ইটিশ পিটিস
বাবায় বাইড়াইয়া উডাইছাল
আমার পিছনের ছাল
পীরিতে ধরা খাইয়া
তর লগে পুস্কনির পাড়
নাইরকেল গাছের চিপায়
জড়াজড়ি
তোর আর আমার
হি হি।

অহন নাতি পুতির পীরিত দেহি
ধুর?
খালি দেইখা লাভ কি?

বুইড়া বয়সের ভীমরতি
মাতার ভিতরে খাবলাইয়া ধরে
পাইনসা জীবনে আউলা কাম
কিছু করবার মনে করে
কেমুন আউলা চিন্তা মাতায় ঝাঁকি মারে
চল না, দুইজনে পলাইয়া গিয়া বিয়া করি
দুইন্নারে দেই একখান টাসকি
হি হি
কি যে সব আজগুবি ভীমরতি।

আইচ্ছা এমুন করলে কি অইব?
মাইনসে নানান কতা কইব?
মাইনসের কতায় কি আহে যায়
তরে অহনো যে আমার পরাণ চায়!
ছি, ছি!! মরি মরি
বুইড়া বয়সে ভীমরতি।

বাইল্য প্রেমের পরিণয়
কখনো হয় কখনো নয়
অহন, নাতি নাতনির পীরিত দেহি
দুইজনে খাড়াইয়া দুই ব্যলকনিত
আর পুরান দিনের স্বপ্ন দেহি
চশমার কাঁচ ঝাপসা হয় মাঝে মাঝে
কেন?
কে জানে?




বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৩

কবিতা



কবিতা
- যাযাবর জীবন

আমি আর তুই
এপার আর ওপার
মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া
বিভাজিত সীমানা,
অলিন্দ আর নিলয়
কাঁটাতারের আঘাতে রক্তাক্ত হৃদয়
তবু কবিতা কথা কয়।

শুধু প্রেমে কি আর কবিতা হয়?
প্রেমেতে ক্ষরণ
প্রেমেতে রমণ
তারপর অনেক অনেক পুড়ে পুড়ে দহন
তবেই না ভালোবাসা হয়
ক্ষরণে ক্ষরণে মনের কথাগুলো
কবিতা হয়ে রয়।

ছি! এভাবে বলতে নয়
ভালোবাসার অপমান হয়
কিংবা কবিতার...............


হৃদপিণ্ড আর হৃদয়


হৃদপিণ্ড আর হৃদয়
- যাযাবর জীবন

হৃদপিণ্ড ধরেছে মানুষ
কেটে ছুঁড়ে করোনারি, আরটারি
ঘুরে বেড়িয়েছে অলিন্দ আর
নিলয়ের অলিগলি
হাতে কেঁচি আর ছুঁড়ি
চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনেক বাহাদুরি;

তবু ছুঁতে পেরেছে কি হৃদয়?
যেথা প্রেম কথা কয়............


বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০১৩

অসম সমীকরণ


অসম সমীকরণ
- যাযাবর জীবন

তুই আমি আর আমাদের প্রেম
ত্রিমাত্রিক এক অসম সমীকরণ
এখানে পাই এর মান জানা নেই
তবে ভালোবাসার মাত্রা অসীম;

সীমার মাঝে বসবাস দুজনার
তবু সময়ের দূরত্ব অনেক বেশী
কি এক বাঁধা কোথায় যেন
পার না হতে পারি
দুজনে
শত-চেষ্টা করে;
আরে, আরে
এত মন খারাপ করিস না রে
সমাধান করে নেব
সামনের চতুর্মাত্রিক ভূবনে
তুই আর আমি দুজনে মিলে
হয়তো একটু আগে আর পরে
ঐ ভূবনের ডাক চলে এসেছে
যাবার ইচ্ছে নেই তবু চলে যেতেই হবে
দুজনকেই;
সময় সমীকরণটা মিলিয়ে নেব
সেখানে বসে দুজনে মিলে
অগাধ সময় রইবে সেদিন
আমাদের দুজনার হাতে
কখনো পেছন ফিরে
ত্রিমাত্রিক ভুবনের ভুলগুলো দেখার
অবকাশ মিলবে কি?
নাকি চতুর্মাত্রিক জীবন শুরু করে
আবার পঞ্চম মাত্রার
ভুলের সূচনা গড়ব?
সেই যে শুরু করেছিলাম
যে সকল ভুলের
প্রথম মাত্রার শুরুতে;
মাত্রাগুলো এগিয়ে যাবে ক্রমাগত
সাথে সাথে ভুলগুলো আর কত?
এরা কি পরস্পরের সাথে অঙ্গাঙ্গী জড়িত?
ঠিক তোর আর আমার মত।

কোন মাত্রায় ভুল হবে না আমাদের দুজনার
বলতে পারিস?
কিংবা মাত্রা হবে নির্ভুল অসীম............


বিশ্বাস


বিশ্বাস
- যাযাবর জীবন

দেখা হতেই হবে
কোন একদিন
এ মাটির পরে
দুজনে দুজনে;
চুপচাপ কিছুক্ষণ
অপলক চেয়ে থাকা
পলক না ফেলা সেই পুরনো খেলা
তারপর মুচকি হাসি দুজনার ঠোঁটে
ঠেকবে গিয়ে চোখেমুখে
তারপর হাতে হাত রাখব
আবার আমরা দুজন
সব ভুলে গিয়ে
ঠোঁটে ঠোঁট
তপ্ত চুমু
ভালোবাসি নিঃশ্বাসে
ভালোবাসি বিশ্বাসে
এখনকার মতন
কিংবা তখনকার
জানা তো ছিলই আমার;

দেখা হতেই হবে
কোন একদিন দুজনার।

জানি আজ তো অনেক ব্যস্ততা
অনেক বড় হয়ে গেছিস তুই
ভুলতে কি পেরেছিস আমাকে
জানি পারবি না তুই;
আমার সময় কেটে যায় কোন মতে
তোকে ভেবে ভেবে
পথে হেঁটে চলে
খুব মাঝে মাঝে
নুড়ি পাথর কুড়োই
যেটা ভালো লাগে যেখানে
অত:পর রেখে দেই পকেটে গোপনে
তোকে দেব বলে
দেখা হবার কালে।

যদি অনেক দিন পর দেখা হয়
যদি দেবার মত কিছুই না থাকে
যদি নুড়ি পাথরে ক্ষয় ধরে যায়
যদি পকেট ছিঁড়ে পড়ে যায়
যদি আমি আমাতে না থাকি
তবু তুই আসবি
সেদিন কি দেব তোকে?
হৃদয়টা আছে, থাকবে তোর তরে
নিবি?
হয়তো পোকায় খাওয়া শূন্য হৃদয়
তবু ভালবেসেছিল শুধুই তোকে।



মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০১৩

লেখক ও পাঠক


লেখক ও পাঠক
- যাযাবর জীবন

এক সময় পাঠক খুঁজে নিত লেখককে
পত্রিকার আনাচে কানাচে থেকে
সেই সব দিন ছিল
সেই সব সময়
সেই সব লেখা
সেই সব লেখক।

আজ লেখক ছড়িয়ে দেয় লেখা পাঠকের মাঝে
ট্যাগে ট্যাগে ফেসবুকে
ব্লগে ব্লগে
আজকের সময়
আজকের লেখা
আজকের লেখক।

সেদিনও লেখক ছিল
সেদিনও পাঠক ছিল
আজো লেখক আছে
আজো পাঠক আছে;

তবু কতইনা ব্যবধান
দুটি সময়ের মাঝে।


আকাশের রীতি


আকাশের রীতি
- যাযাবর জীবন

সময়ের বৃষ্টি অসময়ে ঝরে
সময়ের ফুল ফোটে অসময়ে
প্রেমের হেম গ্রীষ্ম দাহে
হৃদয় পুড়িয়ে যায়।

সময়ের মেঘ অসময়ে আকাশ জুড়ে থাকে
অসময়ের মেঘ কাঁদে ঈশান কোনে
মেঘের কান্নার শব্দ কে আর শোনে
কান পেতে
বুক পেতে
তবুও তো সূর্যকে ঢেকে রাখে
মেঘের কাপড় পড়ে;
তপ্ত গরমে ঝাঁ ঝাঁ রৌদ্দুর আকাশ জুড়ে
প্রয়োজন যখন মেঘ ছাতার
মেঘগুলো সব কোথায় পালিয়ে যায়
নগ্ন সূর্য খৈ ফোটায় মাথার পরে
মেঘ বিহীন পুরোটা আকাশ
সময়ে আর অসময়ে
কেমন যেন ন্যাংটা হয়ে পড়ে।

রীতি নীতি না মানা
বেশরম আকাশ !




সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৩

এলোমেলো


এলোমেলো
- যাযাবর জীবন

এলোমেলো মানুষের
এলোমেলো কথার ভীরে
হারিয়ে যাই আমি
প্রায়ঃশই
এলোমেলো হয়ে;
রাতের গভীর অন্ধকারে
যখন মাথার উপর খাড়া রৌদ্র
মগজ ফুটছে লক্ষ ডিগ্রি তাপে।

এক চিলতে বৃষ্টির পরশ বুলিয়ে যাবি কি আমায়?
কে আছে কোথায়?
অর্ধ চন্দ্রের রাতে সাহসী হতে............

উল্টো মানুষ


উল্টো মানুষ
- যাযাবর জীবন

উল্টো কিছু মানুষের বাস
উল্টো এই পৃথিবীতে
যেখানে জীবন যাত্রাই হয়ে গেছে উল্টো
জীবন থেকে মরণ পর্যন্ত।

পশু সমাজের সাথে এদের
কোথায় যেন এক সেতুবন্ধন
করে যাচ্ছে ইচ্ছাকৃত উল্টো জীবন যাপন
মানুষ হয়ে
মনুষ্য সমাজে
চড়ে জীবনের উল্টো রথে;
খেয়ে, না খেয়ে
কষ্টে সৃষ্টে বেঁচে আছে কোনমতে
উল্টো পথে যেয়ে
তবু সমঝোতা করতে পারে না
জীবনের সাথে
কিংবা তথাকথিত সমাজ ব্যবস্থা
কিংবা মানুষ নামের ঐ সব প্রাণীগুলো
যারা চলে মুখোশ পড়ে
বদলায় মুখোশ ক্ষণে ক্ষণে
সময়ের হাত ধরে
দিনে কিংবা রাতে
সুযোগের সদ্ব্যবহারে
যখন যেমন
স্বার্থের প্রয়োজনে
নীতির জলাঞ্জলি
অনৈতিক কারণে।

সমাজে স্থান কোথায় এই সব উল্টো মানুষগুলোর?
যারা চিরাচরিত সমাজের নিত্য-রূপ উল্টো দেখে
চলমান ঘটন আর অঘটনে উল্টো বকে
খাতায় কলমে সোজা ছবি আঁকে
চোখে যা দেখে
সুসভ্য মানুষগুলো বাঁকা চোখে দেখে
আড় চোখে চায় (উল্টো দেখে)
ভেতরে ভয়ে কুঁকড়ে যায়
কখন না মুখোশটা খুলে পড়ে যায়
উল্টো এই মানুষগুলোর
উল্টো সব কাজ কারবারে।

সবাই সোজা মানুষ হতে চায়
মনুষ্য সমাজে যাদের বাস
সুশীল সমাজের বাসিন্দা হতে চায়
কারণে আর অকারণে;
আমার বড্ড সাধ জাগে
উল্টো মানুষ হবার
না হয় পশু সমাজেই নেব বাস
জ্বলব না নিত্য অনৈতিক দহনে।





নগদ আর বাকী


নগদ আর বাকী
- যাযাবর জীবন

লাজ, লজ্জা, ভয়
তিন থাকতে নয়
ধোঁকা দিতে গেলে;
মানুষকে
স্বার্থে
অর্থে
সম্পর্কে
ভালোবাসায়;
ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলে দাও
সময় মত
জয় তোমার হবেই হবে
নিশ্চিত আজকে
নগদের পৃথিবীতে।

বাঁকির নাম ফাঁকি
চিরকাল জেনে এসেছি
তাই লাজ লজ্জা ভয়
বিবেক থেকে দূরে রেখেছি
নগদ যা পেয়েছি
দুহাতে কুড়িয়েছি;

পরের কথা পরে ভাবা যাবে
অন্যভূবন বলে যদি কিছু থাকে
প্রতিদান না হয় নিয়ে যেও সেদিন
অন্যভূবনে
সুদাসলে।




রবিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৩

সাদামাটা জীবনের রঙ্গিন স্বপ্ন


সাদামাটা জীবনের রঙ্গিন স্বপ্ন
- যাযাবর জীবন

রঙ্গিন চশমার আড়ালে
চোখটা কেন ঢেকে রেখেছিস রে ?
চোখ তুলে তাকাতে এখন
হয় কি লজ্জা?
তবু একবার চোখ তুলে তাকা,
চশমা খুলে সাদা চোখে
চোখে চোখ রেখে
দেখ ভালো করে
হৃদয়টা মুঠোতে ভরে
না হয় খামচে ধরে
না হয় আগের মত জড়িয়ে ধরে;
দেখ ভালো করে
কত জন্মের কান্না জমা আছে
তোর সাদামাটা বিসর্জনে
পাগলা রাগের অসংলগ্ন অভিমানে;
রঙ্গিন চশমায় ক্ষরণের লাল
দেখবি কেমন করে?

সাদামাটা জীবন দেখ সাদা চোখে
রঙ্গিন চশমা খুলে নিয়ে
চল না আবার সাদামাটা জীবনটা
রাঙাই নতুন করে
রংধনুর সমস্ত রঙ এনে
তুই আর আমি দুজনে মিলে
সেই আগের মত করে।

পারবি কি?
নাকি হৃদয়ের কাছে হেরে যাবি?
আমি এখনো লৌহ মানব আছি
তোর জন্য অপেক্ষায় পথ চেয়ে
তোকে বুকে টেনে নিতে।




লাল কালি



লাল কালি
- যাযাবর জীবন

তুই চলে যাওয়ার পর
আর কোন কবিতা লিখতে পারিনি
তুই নিজেই এত বিশাল একটা কবিতা
যে তোকে নিয়ে যায় না কোন লেখা
কলম থেমে থাকে
তোর কথাটি মনে হলে।

তোর ছবিটা আঁকতে গিয়ে
থমকে যায় রংতুলিটা
মনে করতে পারি না কিছুতেই
তোর মুখচ্ছবিটা
ইদানীং কি যে হয়েছে
মনেরও বুঝি ভুলোমন
কোথায় যে পড়ে থাকে?
তোকে ভুলতে গিয়ে।

কোন এক সুদূর অতীতে
কলম চলত ধূমকেতুর গতিতে
কবিতা ঝরে পড়তো তোকে নিয়ে
খাতার পর খাতা কালো কালিতে
তোর আর আমার দিনগুলোতে
মাখামাখি ভালোবাসাবাসির।

কখনো তুলি হাতে সারা দিন-মান
রঙের ছড়াছড়ি ক্যানভাস জুড়ে
অবয়ব ফুটে উঠত একটু একটু করে
তোর স্বল্প বসনে
বড্ড লজ্জা
সামনে বসতে মডেল হয়ে
অথচ কমতি ছিল না
প্রেমে ও কামে
ছিল না লজ্জা চুমুতে চুমুতে
ভরে নিতে ও দিতে।

আর এখন?
মনে পড়ে না কখনো তোর
ছবি এঁকেছি ক্যানভাস জুড়ে
লিখেছি কোন কবিতা
খাতার পর খাতা ভরে
এখন ক্ষরণের কালিতে
শুধুই লাল রঙ দেখি
এতে
না হয় কবিতা
না হয় ছবি
শুধুই ছোপ ছোপ রক্ত
হৃদয়ের আনাচে কানাচে।







শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৩

ব্যবধান


ব্যবধান
- যাযাবর জীবন

ভালো লাগতে সময় লাগে না
সময় লাগে ভালোবাসার মানুষটাকে বুঝতে
তার থেকেও বেশী সময় লাগে ভালোবাসতে
সবচেয়ে বেশী কষ্ট সম্পর্কটাকে টিকিয়ে রাখতে
সময়, ধৈর্য, সহনশীলতা, মায়া মমতা
সবচেয়ে বেশী লাগে ক্ষমা করে দেবার ক্ষমতা
আমাদের এত ধৈর্য কোথায়?
কোথায় এত সময় প্রিয়জনকে বোঝার
কিংবা তার মান, অভিমান সয়ে যাওয়ার?

তার জ্বলজ্যন্ত প্রমাণ তুই আর আমি
আমাদের অসহনশীলতা, আজকের দুর্দশা
ঠেকে শিখেছি দুজনেই আমরা
একটু রাগ, একটু অভিমান;
কোথায় নিয়ে এসেছে আজ আমাদের?
অসহায় চোখে চেয়ে দেখি তোর আর আমার
আজকের আকাশ পাতাল ব্যবধান।

প্রেম গাঁথা


প্রেম গাঁথা
- যাযাবর জীবন

ইদানীং কাজ নেই কোন হাতে
মন নেই কোন কাজে
অলস মস্তিষ্কে শয়তান তা থৈ নাচ নাচছে
আমিও নাচছি তার সাথে তাল মিলিয়ে
বিছানায় শুয়ে শুয়ে
স্মৃতির রোমন্থনে।

পুরনো প্রেমগুলো আজকাল যেন স্মৃতিতে ভেসে ওঠে
পুরনো সেই দিনগুলোর কথা মনে হলে
বড্ড হাসি পায় আজকাল
কান্নার দিনগুলোর কথা মনে হলে
প্রতীক্ষা কিংবা অপেক্ষার অসহনীয় যন্ত্রণার কথাগুলো
আজ বড্ড হাসি পায় সে দিনগুলোর কথা মনে হলে
এখন তো আর প্রতীক্ষার প্রহর গোনার কেও নেই
নেই কেও অপেক্ষার অভিমানে লাল হয়ে
আজ আমার ছুটি
বিছানায় পড়ে থাকি
তবু স্মৃতিগুলো ভাসে চোখের সামনে
ঘোলাটে কিছু খুব কাছের মানুষের কথাগুলো
কিংবা পরিষ্কার চোখে দেখি হঠাত কোন একটি চেহারা
মনস-পটে ভেসে ওঠে
যার কখনোই কোন প্রেম ছিল না আমার সাথে
তবু তার কথাই কেন হঠাত মনের পর্দায় ভেসে ওঠে
মনেতেও ভাইরাস লেগেছে বোধহয়
শরীরের ব্যাকটেরিয়াগুলো ছড়িয়ে
এ বয়স তো ভাইরাস আর ব্যাকটেরিয়ার তীর্থ স্থান
যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা খেলে দুজনে মিলে
আমি অসহায় চেয়ে দেখি শুয়ে শুয়ে।

মাঝে মাঝে সেই স্কুল জীবনের স্মৃতি ভেসে ওঠে
কি জানি ছিল মেয়েটার নাম?
বেলি বা শিউলি, খুব ভালো করে আজ আর মনে নেই
শুধু কানে বাজে একটি কথা আজো -
"আমার সাথে প্রেম না করলে কিন্তু
তিন তালা থেকে লাফ দেব"
সে বয়সটা বোঝার কথা নয় নারীর কলা
কিভাবে বুঝবো - এই বার্ধক্যে এসেও বোঝা হলো না
তারপর কি জানি কি হয়েছিল
স্কুল জীবনের প্রেম আর কচু পাতার পানি
দুটোই গড়িয়ে পড়ে সময়ের হাত ধরে।

কলেজটা পার হলো কিছুটা নির্বিঘ্নে
কো এডুকেশনের ছিল না বালাই
তাই কিছুটা শান্তির সময় কাটানো
স্যারদের কড়া খবরদারীর মাঝে
তবুও গানের ক্লাসে কিংবা গিটার ক্লাসে
টুং টাং সুরের লহরী বাজে
ক্লাসে নাকি আমার মনে
সুন্দরীরা লাইন দিয়ে গান গায়
আমার পরান উথাল পাথাল
আড়ে আড়ে তাদের দিকে চায়
প্রেম কি হয়েছিল?
একটি বা দুটি;
না না; মিউজিকের গ্রাজুয়েশন করতে করতে
মনে হয় চার পাঁচটি
কিংবা আরো কিছু বেশী
আজ আর মনে নেই ভালো করে
শুধু মনে আছে ঊর্মি বা শর্মির কথা
বড্ড ভালো ছিল মেয়েটি
কাঁচা বয়সের প্রেমে হাবুডুবু
আমিও কুয়োর পানিতে ডুবুডুবু
তারপর সময়ের স্রোতে কুয়োর পানি গেল শুকিয়ে
প্রেমের সমীরণ থেমে গেল
প্রকৃতি গরম হয়ে উঠলো
তাপিত মায়ের কুপিত দণ্ডাদেশে
তারপর কোথায় জানি হারিয়ে গেল।

ইউনিভার্সিটি জীবনে একটি মেয়েকে বড্ড মনে ধরেছিল
ফুটফুটে একটি মেয়ে
প্রায়ই গাড়ি থেকে নামে
চুপচাপ মাথা নিচু করে ক্লাসে ঢুকে যায়
আমার প্রাণ করে হাঁসফাঁস;
কয়েকদিন পেছন পেছন ঘুরলাম
বড্ড ভালো লেগেছিল তারে
আশা ছিল প্রেম করিবার তরে
ধাক্কা খেলাম থলের বেড়াল বের হলে
শুনে হলাম মর্মাহত
মেয়েটি বলে বিবাহিত
কোন এক শিল্পপতির অল্পবয়সী স্ত্রী
বুকে যেন শেল বাধলো
আমার প্রেম হয়ে গেল ইতিহাস।

এমন আরো কত কি?
বিছানায় শুয়ে শুয়ে শয়তানের প্ররোচনায়
অলস মস্তিষ্কে স্মৃতির শবচ্ছেদ করি
আর শুয়ে শুয়ে মনে মনে
লিখি যতসব আজেবাজে পুরনো প্রেম গাঁথা
কিংবা সকল ব্যর্থ জীবনের কথা।

শুক্রবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৩

বিসর্জন


বিসর্জন
- যাযাবর জীবন

দেখেছিলাম সাদামাটা একটা মন
তাই হয়তো হয়েছিল
আমাদের মাঝে কিছু
সাদাকালো প্রেম;
রূপে তুই ছিলি সাদা
না হয় ছিলি একটু বেশী রূপবতী
চারিদিক জুড়ে আলো ছড়াতি
কালো অন্ধকারের জ্যোৎস্না বাতি
খুব সাদামাটা প্রেমে
ভরে ছিল আমাদের জীবন
তবে হঠাৎ কি হলো?
সাদামাটাই কি কাল হলো?
জীবনটাই বদলে গেল......

আমি কালো তো কালোই
রঙ্গিন হতে পারব না জীবনে
কিংবা রঙ মেখে সং সেজে সাদা
জানাই ছিল তোর
তবু প্রেম তো কিছুটা ছিল তো তোর মনে;

নাকি শুধুই ছলনা
নারীর কলা
তবুও ভালো থাক
একটা জীবন তো করে ছিলি আলো
আমিই না হয় ছিলাম কালো
এভাবে ছুঁড়ে ফেলতে হয় না বিসর্জনে।



স্বরূপ


স্বরূপ
- যাযাবর জীবন


ঝরে পড়া রাতের তাঁরার মত
ঝরে পড়ি আমি
রাতের গভীর আঁধারে
আকাশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে
কিংবা মাঝে মাঝে নারকেল পাতায়
পিছলে পড়া জ্যোৎস্নার মত
মেঘের রাতে হঠাৎ দমকা হাওয়ায়
মেঘগুলো সরে গেলে
তারপর আবার অন্ধকার
চাঁদ মুখ লুকোয় কালো মেঘের আড়ালে
আমি ঝরে পড়ি অন্ধকার হয়ে
ক্রমাগত ধরিত্রীর বুকে;
অথবা

বনের ছুটে চলা মায়া হরিণীর
পেছন ছুটে চলা
হঠাৎই সামনে শঙ্খচূড়ের ফণা
ছোবলে কাঁতর ধ্বনি
উফফ
উধাও চঞ্চল হরিণী
রক্তাক্ত আমি
মাটির সাথে কথা বলা
জীবিত কিংবা মৃত
অথবা.........

উড়ে চলা গাংচিল
মুক্ত আকাশের গায়
হঠাৎ কোন শিকারির গুলির শব্দ
ডানা ভাঙ্গা রক্তাক্ত
ঝরে পরে নদীর বুকে
ভেসে যেতে জোয়ারের স্রোতে
কিংবা আছড়ে মাটিতে
গুলিবিদ্ধ গাংচিল
রক্তাক্ত আমি
কিংবা
বাতাসে ভেসে যাওয়া কিছু পালক
লাল লাল ছোপ
উড়ে বেড়ায়
অথবা......

সন্ধ্যের আঁধার ঘনায়
সোনারোদ ডুবে যায়
সময়ের শেষ বেলায় ফিরে আসে সকলেই
ঘরে কিংবা মাটির পরে;
কেও পড়ে থাকে অবহেলায় মাটিতে
কেও আদরে বুকের খাঁচায়
কেও ভেসে যায় জলের ধারায়
আর কিছু ডানাভাঙা পালক উড়তে থাকে
বাতাসে
সাথে কিছু রক্তাক্ত ক্ষত
অথবা.........

এই সব ক্রমাগত......
আলো অন্ধকার
উড়ে যাওয়া ছিন্নভিন্ন পাখির পালক
মেঘ, বৃষ্টি
কাদামাটির ঢেলা
অনাদর অবহেলা
বুকের ক্ষত
রক্তাক্ত
রাতের অন্ধকার
আমার মত
গভীর
গহীন
অনেক জমিয়ে রাখা নোনাজল
খুব মাঝে মাঝে...
হঠাৎই মগজে ঝমঝম নূপুরের ধ্বনি
কিংবা কানে তালা লাগা অশুভ কিছু শব্দ
অসহনীয়
অসহ্য
পাগল পাগল রূপ
এই আমি
এই আমার স্বরূপ.........

ভালো করে চেয়ে দেখে নে আগে
কালো অন্ধকারের রূপ...

বদলাতে পারব না নিজেকে
নিবি আমাকে?
যেমন আছি তেমনি
ঠিক এইভাবে
নিজের করে.........



বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৩

তুই আর আমি


তুই আর আমি

- যাযাবর জীবন

আমার সবগুলো জীবনে
তুই একটি নাম - "ভালোবাসা"

তোর সবগুলো জীবনে
আমি একটি নাম - "যন্ত্রণা"

তোর সবগুলো জীবন
শুধুই আমার - "স্বপ্নে".

আমার সবগুলো জীবন
ভুলে ভরা - "দিবা-স্বপ্ন"

দেখা হয়েছে তোর আর আমার দুজনার বাস্তবে
প্রেম হয়েছে, হয়েছে ভালোবাসা খুব কাছ থেকে
তারপর ঘুম ভেঙ্গে হারিয়ে ফেলেছি তোকে
এখনো শূন্যতার মাঝে খুঁজি চারিদিকে শুধুই তোকে।

"যন্ত্রণা কি" - খুব জানতে ইচ্ছে করে।


ডিজিটাল প্রেম


ডিজিটাল প্রেম
- যাযাবর জীবন


পরিচয় ফেসবুকে।

হাই, হেলো টুকটুক
মাঝে মধ্যে খুব হঠাৎ
একটি দুটি কথা হতো প্রথমে
তারপর ক্রমাগত.........
নেশা ধরানো কি এক ঘোরে
ছেলেটির সময় কাটানো
তথ্যের আদান প্রদান প্রাত্যহিক
মাধ্যম শুধুই প্রাযুক্তিক
এ যুগের ডিজিটাল;
ফেসবুক স্ক্রিনে
মেয়েটির অনেক তথ্য সাজানো
অনেক ছবি বিভিন্ন ভঙ্গি
ছেলেটি ভাবে, আমি কি লাকি!
জুকারবার্গের প্রতি ডিজিটাল চুমু
হায় সুন্দরী, আমার প্রেয়সী
পরিচয় মাধ্যম
ফাইবার অপটিক্যাল।

টুকিটাকি কথা দিয়ে শুরু যে পরিচয়
তার থেকে হলো কত ভাবের বিনিময়
তারপর কোথা থেকে কি যে হলো
দেখা হয় নি সামনা সামনি এখনো
শুধুই ছবির বিনিময়
আর আদান প্রদান তথ্যের
ফাইবার অপটিকে
ডিজিটাল প্রেমে
প্রেম! সত্যি কি হয়েছিল কখনো?

প্রেম!!!!!!
নাহ্‌ ঠিক প্রেম নয়
ছেলেটির মনে হয়
এ যেন এক স্বপ্নের গভীর প্রণয়
প্রতিদিনের ভাবের বিনিময়
ছেলেটি ফোন নাম্বার দিয়ে রাখে আর প্রহর গোনে
প্রতীক্ষিত কল আর আসে না মুঠোফোনে
সরাসরি হয় না কথা
ছেলেটি মাথা খোঁটে
আর শুধুই ডিজিটাল অনুনয়;
দিন পার হয়
ছেলেটির প্রেম গাঢ় হয়
না দেখা ডিজিটাল প্রেম
অনেক আবেগ
মন মানে না ভাবাবেগ
মান অভিমানে ছেলেটি কি না করে
একবার সরাসরি কথা বলার তরে
কিংবা দেখা হবার;
অনেক অনুনয় বিনুনয়
প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হয় একসময়;
অনেক কালের অপটিকাল প্রেমের পর
হলোগ্রাফিক স্ক্রিনে ভেসে এলো আসল ছবি
মাধ্যম স্কাই পি।

হায়! এ কি???
সম লিঙ্গের দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে রয়
চমকে উঠে ছেলেটি
মুচকি হাসে তার ডিজিটাল প্রেমিকা
(ফেসবুকের ছেলে-রূপি মেয়েটি)
টা টা জানায়
ছুঁড়ে দেয় ডিজিটাল চুমু
তারপর হলোগ্রাফিক স্ক্রিনটি কালো হয়ে যায়।

যাহ্‌
এ কি হলো?
এত দিনের প্রেম বৃথা গেল
আশায় গুড়ে-বালি, পণ্ডশ্রম হলো!

দুজন ব্লক হয়ে যায় দুজনার কাছে
ফেসবুক থেকে চিরতরে
ডিজিটাল প্রেমের অবসানে
আবার নেমে পড়ে নতুনের সন্ধানে;
দুজনে মিলে একসাথে
নতুন কোন ডিজিটাল খেলায় মেতে
যার যার ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে
একজন খোঁজে প্রেমের কারাগার
আরেকজনের প্রেমের খেলার নামে প্রতারণার;

কত রকম মানুষ
কত রঙ, কত তাদের রূপ
ডিজিটাল দুনিয়ায় বোঝে না কেও কারো স্বরূপ
এখানে প্রতিদিন প্রতারিত কত শত লোক
কেও সয়ে যায়, কেও ছাড়ে ইহলোক
শুধু প্রতারণার দায় সইতে না পেরে;
এ কেমন খেলা খেলে মানসিক রোগীর দল
বড় গলা করে দেয় আবার নিজেরে মানুষ পরিচয়
কারো কাছে এটা শুধুই খেলা
কত শত মানুষের জীবন সংশয়
প্রতিদিন ডিজিটাল প্রেমের মূল্য ভরে;
ডিজিটাল প্রেম যেন
মানসিক রোগের আঁধার
তবু নিত্য টানে ঐ ডিজিটাল বক্সের
অন্ধকার কারাগার।

ডিজিটাল প্রেম কথা বলে
প্রাযুক্তিক তথ্যের ব্যবহারে।




বুধবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৩

দোলা


দোলা
- যাযাবর জীবন

আর কত 'দোলা'য় দোলাবে জীবন?

সংশয়ের ঢেউয়ের দোলায় দুলছে
চাওয়া আর পাওয়া
অপেক্ষা আর উপেক্ষা
ইচ্ছা আর অনিচ্ছা
ভালো আর মন্দ
সবকিছুতেই কেমন যেন এক
অদ্ভুতুড়ে ঘোলাটে মিশ্রণ
দুলছি আমি দুলছে জীবন।

চাওয়া আর পাওয়ার মাঝে পার্থক্য মাপতে ভয় হয়
হতেই হবে, ফারাক যে এখানে সাত আসমান
তাই এখন আর কিছুই চাই না
আসলে কি চাইতে গিয়ে কি যে চাব
আর কি পেতে গিয়ে কি যে হারাবো
তাও তো জানি না;
চাইতে গেলে হাত পাততে হয় বুঝি?
মন পেতে চাওয়া যায় না?

এখন আর ইচ্ছে আর অনিচ্ছার মাঝে
ব্যবধান করতে পারি না
আজকাল যেন ইচ্ছেগুলোকেই অনিচ্ছা মনে হয়
আবার অনিচ্ছাগুলোই যেন মনের গোপন ইচ্ছে
এখানেও কেন এত সংশয়?
আমি দুলি, মন দোলে, দোলে হৃদয়।

তোর আর আমার দূরত্বের ব্যবধান অল্প একটু পথ
এই তো মাইলের কাঁটায় কয়েক মাইল হবে হয়তো
তোর গাড়িতে বিশ মিনিটের পথ
আমার হাঁটা পথে না হয় এক ঘণ্টা মাত্র;
অথচ পেরুতে পারছি নে কেও এইটুকু পথ
যেন দুজনার মাঝে যোজন যোজন দূরত্ব
যেন আঁকা বাঁকা পথে কত কাঁটা বেছানো
কিংবা সংশয়ের কাঁটাতারের বেড়া
আলাদা করে রেখেছে আমাদের;
পথের বা মনের দূরত্ব পার হতে পারি না
সংশয়ের কারণে বা অকারণে
দুলছি আমরা সংশয়ে দুজনে
দোলায় দোলায় দুলছে জীবন।

তবু এর মাঝেই বেঁচে থাকা
এর মাঝেই জীবন চলা
মাঝে মাঝে ধূমকেতুর গতি
আর বাকি সময় বোধহীন অসাড় এক শূন্যতা
সংশয়ের পালে বয়ে চলে যেন এক ঝড়ো হাওয়া;
মনেতে অচেনা কেমন এক
বোধহীন বোধের ঢেউয়ের দোলা
সে যে কি? আসলে আমি জানি না
শুধু জানি,
দুলছি আমি, দুলছে জীবন
হয়তো সংশয় বড় কারণ
কিংবা অমূলক এক শঙ্কা অকারণ।

এত "দোলা" সইব কেমনে?



মঙ্গলবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৩

জলপদ্ম



জলপদ্ম
- যাযাবর জীবন

কোন এক সময় আমাকে ছাড়া তোর চলত না
এখন তোর প্রতীক্ষার প্রহর গোনা
কোন এক সময় তোকে ছাড়া আমার চলত না
আমার অপেক্ষার দিনরাত্রি এখন তুই হীনা।

দিন বদলায়
পালা বদলের খেলায়
কালের স্রোতে
সময় চলে যায়
দিন বদলে যায়
কিংবা বদলে যাই আমরা।

সময় বয়ে যায় কালের নদীতে
সময়ের স্রোতে বাঁধ দেবে কে?
গতিই জীবন, এগিয়ে চলা
বেছে নিয়েছিস তুই,
তোর পথ চলা;
স্থাণু বসে আমি, বাঁধ দেয়া পুকুর
জোয়ার ভাঁটার ছোঁয়া লাগে না
তবু, খুব মাঝে মাঝে ছলকিয়ে ওঠে
যখন স্মৃতিগুলোর ঢিল পুকুরে পড়ে
বুঝি যেন তখন
এখনো বেঁচে আছি থেমে থেকে
জলপদ্মের পুকুরেতে।

দু ভুবনে দুজন
দু জগতের বাসিন্দা
কলকল নদী তুই
আমার থেমে থাকা
ভালোবাসার কমতি নেই কারো
তবু জলে তেলে মেলে না
স্রোতস্বিনী নদীতে পদ্ম ফোটে না।



বিষ পিঁপড়ের দল



বিষ পিঁপড়ের দল
- যাযাবর জীবন

বিষ পিঁপড়ের দল
খেয়ে গেল আমায়
মধু মাখা ছিল যখন
আমার সারা গায়;

নিম পাতার ঝাড়ন
সাথে চিরতার রস
মাখলাম সারা গায়
বিষ পিঁপড়ের দল
ভাবে; এ কি ছল?
দূর থেকে আড়ে চায়।

দেখছে আমায়
বেটা করছেটা কি?
মনে বড্ড শঙ্কা জাগে
ভাণ্ড এবার ফুঁড়বে নাকি?

হায় হায় হায়
কপাল চাপড়ায়......


জানতে ইচ্ছে করে



জানতে ইচ্ছে করে
- যাযাবর জীবন

আমি তোর কে?
বড্ড জানতে ইচ্ছে করে,
বলে দিয়ে যাস
আজ না হয় কাল
যখন তোর সময় হবে
আজকাল যেন কালেরও ধরেছে অকাল।

তুই আমার কে?
কখনো কি জিজ্ঞাসা করেছিস?
আমাকে?
খুব গোপনে;
কোনদিন!
প্রশ্ন আসার আগ পর্যন্ত জবাবটা না হয় গোপন থাকুক;
কোন এক দিন অকালের যদি কাল আসে
সময় নিজেই বলে দেবে,
প্রকাশ্যে;
সেদিন।


সোমবার, ১২ আগস্ট, ২০১৩

উল্টো জীবন


উল্টো জীবন
- যাযাবর জীবন

সরব ঢেউয়েরা আছড়ে পড়ছে
ঐ সুদূরের নীল পাহাড়ে
সবুজের কোলাহলে দুলছে সাগর
কি মায়া, কি মায়া চারিদিকে;
আহারে, আহারে।

বনভূমি ছেয়ে আছে নীল জল রাশি
ডুব সাঁতারে মেতেছে প্রেমেতে
নদীর যত হরিণ আর হরিণী;
পাখির ঝাঁকের কলকাকলি
সারা নদী জুড়ে করে জলকেলি
মুখরিত জেলে-দল টেনে তোলে জালে;
ডানা মেলা মাছেদের দল
উড়ছে আকাশে
মধু সন্ধানে মৌমাছিগুলো
ঠুকরে বেড়ায় নীল ক্যাকটাসে
হলুদ রঙের ছোপ যেন পুরোটা আকাশে
ভর দুপুরে আধার হয়ে আসে
চারিধার জুড়ে রঙধনু জ্যোৎস্নাতে
সূর্যোদয়ের রাতে আমায় স্বপ্ন দেখায় কে
ঘুম কেড়ে নিয়ে চারিদিকে এত হল্লা মাচায় যে।

বদলে গেছে প্রকৃতি
বদলেছি আমি
বদলেছে রাত
বদলেছে দিন
নীরবতা ভেঙ্গে দিয়ে;
রাতের সূর্যে খর চোখ চেয়ে
দিবাস্বপ্ন আমায় ভাঙ্গিয়ে দিল কে?
ভেবে পাই না জানালার শিকে
মাথা ঠুকে ঠুকে
রাতের সরবতা ভেঙ্গে
দিনের নীরবতায়
টোকা, টুক টুক টুক
আমার ঘুমের ঘরে কে?

তোর কি হয়েছে জানি না
আমার স্বপ্নরা পেয়েছে রঙ্গিন ঠিকানা
রাতের সূর্যে ধুলোয় ধূসরিত চারিধার
ঝমঝম বালি ঝরে
হলুদ মেঘগুলো সব আকাশ থেকে পড়ে
গল্পেরা হেঁটে এসে ঘুম পাড়ায়
নিদের দেশে যেয়ে;
কবিতারা কোথায় আজ?
কি জানি কোন পথে
হেঁটে চলে যায়
রেললাইনের ধুলো মাখা মেঠো পথ ধরে
কু ঝিক ঝিক করে
সেই কোন দূর অজানায়......

আমি ও আমার ঠিকানা
জানি না, সত্যি জানি না
সেই কবে থেকে খুঁজে যাচ্ছি তারে
নিজেই জানি না;
শুধু দেখেছি যাযাবরের এক
উল্টো পথের ধারা
উল্টো জীবনের, ভেসে উল্টো রথে
উল্টো হাওয়ায়, চেপে উল্টো পথে।

রবিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৩

ইচ্ছে


ইচ্ছে
- যাযাবর জীবন


ইচ্ছে ছিল পাখি হয়ে উড়ে চলার
দূর আকাশে ডানা মেলে ভেসে
দুজনার একসাথে
অথচ নেমে যাচ্ছি ধীরে ধীরে
পাতালের গহীন তলদেশে
একা......

এইতো সেদিনও স্বপ্নগুলো ছিল রঙ্গিন
রোদ চশমা ছিল দুজনার চোখে
ঠুনকো কাঁচে একটু ঘষাঘষি
ঘোলা হয়ে এলো পৃথিবী
নীরব তুই নীরব আমি
নেমে যাচ্ছি পাতালের সিঁড়ি বেয়ে
নৈঃশব্দ্যের দেশে
কি জানি কি ভাবনায়
অভিমানে? না যাতনায়
দুজনে.........

হয়তো আবার কোন এক দিন
অন্য কোনো ভূবনে
কয়েক হাজার যুগ পেরিয়ে
উঠে আসব সিঁড়ি বেয়ে
একসাথে দুজনে
হাতে হাত রেখে
পাতালের অন্ধকার থেকে
আলোর ভুবনে;
নয়তো উড়ে যাবো নীল আকাশে
মেঘের দেশে
এ ভূবনের আকাঙ্ক্ষা মেটাবো
পাখি হয়ে উড়ে চলার
হাজার যুগ পারি দিয়ে, ও ভূবনে
দূর আকাশে ডানা মেলে ভেসে...............


শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০১৩

ঈদের বার্তা


ঈদের বার্তা
- যাযাবর জীবন

একটা ঈদ গেল
এই তো মাত্র কাল
মহাকালের ভীরে হারিয়ে গেল
হয়তো একটি মুহূর্তকাল
জীবন চলছে জীবনের মত
কালের পদধ্বনিতে মুখরিত কাল।

এই প্রথম বার -
একটা বার মুঠোফোন বেজে ওঠেনি এইবার
সুরেলা ধ্বনিতে কোন শুভেচ্ছা বার্তা নিয়ে
সারারাতে, সারাদিনে;
তবু একটি মাত্র মেসেজ কখন জানি টিং করেছিল
আমার মুঠোফোনে
তখন আমি গভীর ঘুমে।

আজকাল কারো জন্য অপেক্ষায় দিন কাটে না
দিন পার হলো না রাত্রি এলো
তাতে আমার কিছুই আসে যায় না
শুধু মহাকাল থেকে ঝরে যাচ্ছে একটি একটি করে দিন
আর আমি এগোচ্ছি গুটিসুটি পায়ে
লক্ষ্য সামনের কোন এক মহাপ্রলয়ের সুদিন।

সারাদিন ঘুমের পর সন্ধ্যে নাগাদ আড়মোড়া ভেঙ্গে
চোখ চলে গেলো মুঠোফোনের পানে
হয়তো অনেক দিনের অভ্যাস বশে
দেখতে কেও কি স্মরণ করলো আমাকে?
মেসেজটা দেখে চমকে উঠলাম আমি
এও কি হতে পারে, নাকি হবার কথা?
মহাকাল জানে।

মনের ভেতর ঝড়
উত্তর দেব কি দেব না!
দেব কি দেব না?
দ্বিধা আর দ্বন্দ্ব মনেতে ঠাসা
তবু যেন বুকের ভেতর কোথায় লুকিয়ে ছিল
এক চিলতে ব্যথা;
পুরনো সেই নাম্বার থেকে
আজ এতদিন পরে
কেও তো স্মরণ করেছে আমায়
হয় ভালোবাসায় না হয় ঘৃণায়
আর বাকি সবাই?
বন্ধু বলে ডাকে যারা আমায়?
কই একটি মেসেজ রাখার সময় হয়নি কারো
না ফেবু তে না মুঠোফোনে?
মাঝে মাঝে খুব মনে হয়
আসলে কি বন্ধুত্ব বলে কোন কিছু আদৌ আছে?

দ্বিধা আর দ্বন্দ্ব কাটিয়ে অপ্রত্যাশিত মেসেজের উত্তর লিখলাম
উত্তরটা হয়তো একটু বড়ই হয়ে গিয়েছিল
কিংবা সম্বোধনটা অভ্যাস কিংবা অনভ্যাস বশে
সেই পুরনো;
তাই হয়তো আর কোন প্রতি উত্তর আসে নি
হয়তো আসবে আবার কোন এক বিশেষ দিনে
কিংবা হয়তো আর আসবে না কোনো দিনও
তবু মনেতে কেমন একটা অনুভূতির ঢেউ দোলা দিল
এখনো আমার সেই পুরনো নাম্বারটা তার কাছে সেভ করা ছিল!!
বিশ্বাস করতে একটু কষ্ট হয়েছিল
তাই এলোমেলো শব্দে সম্বোধন
আমার অনেক দিনের অভ্যাস, হয়তো তার জন্য অপ্রয়োজন;

আজকাল আর শব্দ সাজাতে পারি না যে
জড় পদার্থের কি আর কোনো অনুভূতি থাকে?




অশান্ত সময়


অশান্ত সময়
- যাযাবর জীবন

শান্ত হয়ে এসেছে অশান্ত জীবন
শান্ত হয়ে গেছি আমি
অশান্ত সময়গুলো পাড়ি দিতে দিতে
বড্ড বেশী হয়ে পড়েছি ক্লান্ত,
আজকালকার সময়ের ভাষা
বোঝার আশা তাইতো দিয়েছি ক্ষান্ত।

কত দিন চোখ মেলে দেখি না
আকাশে তাঁরার মেলা
কি জানি? হয়তো এখন ভেসে বেড়াচ্ছে
অপরূপ জ্যোৎস্নার ভেলা
কিছু যেন আর যায় আসে না;
এখন আর দিনরাত্রির পার্থক্য বুঝি না
আজকাল আর জানতেও ইচ্ছে করে না
উঁকি দিয়ে আকাশটাকে দেখব,সেও হয়ে ওঠে না
মন মেলে দেখব দিবারাত্রির পার্থক্য,তাও হয় না
কেমন যেন এক জড় পদার্থ
স্থির পড়ে থেকে থেকে
একটু একটু পাড়ি দেয়া
দিন আর রাত্রির অসহনীয় মুহূর্ত;
কেন যে চোখ মেলে দেখেছিলাম
মানুষের ভেতরের সব স্বার্থ?
বদলে দিয়েছে পুরোটা জীবন
বদলে গিয়েছি আমি
অশান্ত সময়ে বড্ড বেশী তাই আজকাল
শান্ত হয়ে পড়েছি কেন জানি।

জীবন থেকে কি তবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি?
না কি জীবনের আসল রূপ দেখে
হয়ে উঠেছি আরো জীবনমুখী?

রবিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৩

বন্ধু দিবস



বন্ধু দিবস
- যাযাবর জীবন

বন্ধু দিবস!!!
সে আবার কি?
সত্যি ভুলে গেছি।
বন্ধু চলে যাবার পর থেকে
মনটাকে শূন্য করে দিয়ে...

একটা সময় ছিল
মেসেজ বক্স ভরে থাকতো
একটা সময় ছিল
ওয়াল ভরা থাকতো
একটা সময় ছিল
সারাদিন সারারাত
মোবাইলটা পিপ পিপ করত
মেসেজে মেসেজে
টিং টিং টিং টিং
ফোনে আর ফোনে

এখন ওয়াল শূন্য
মেসেজ বক্স শূন্য
ফেসবুক আর মোবাইল দুটোরই
সারাদিন এ একটা ফোন আসেনি
একটা শুভেচ্ছা বাণী নেই কোথাও
একটা শুভেচ্ছা জানাই নি কাওকে
বন্ধু দিবস বলে একটা দিবস আছে
সে তো ভুলে গেছি সেই কবেই
বন্ধু চলে যাবার পর থেকে
মনটাকে শূন্য করে দিয়ে
এখন আমি নিজেকে বন্দী রেখেছি
নিজেই
মনেরও কারাগারে
নির্জনে নীরবে...


শনিবার, ৩ আগস্ট, ২০১৩

সময়ের দূরত্ব


সময়ের দূরত্ব
- যাযাবর জীবন

বৃত্তের কেন্দ্রে আমি
যেখানে ছিলাম সেখানেই দাঁড়িয়ে;
পরিধির শেষ প্রান্তে চলে গিয়েছিস তুই
অনেক ওপরে উঠে
নামে, যশে আর সম্মানে;
মাঝে আমাদের সাত আসমান দূরত্ব।

তবু আজো হাত বাড়িয়ে আমি দূর আকাশে
একবার তোর ছোঁয়াটুকু পেতে;
আজো মন বাড়িয়ে আছিস তুই অনুভবে
আমার মনটাকে ছুঁয়ে দিতে;
ভালোবাসার সাধ্য কোথায় -
যোজন যোজন সময়ের দূরত্ব পাড়ি দিতে?

তবু ভালোবাসা রয়ে যায় কোথায় যেন
মনের কোন এক গোপন ঘরের কোণে
খুব নিরবে নিভৃতে;
মনের যত গোপন প্রেমের বাসনাগুলো
কবর চাপা দিয়ে, সময়ের প্রয়োজনে।



শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০১৩

নিয়তি


নিয়তি
- যাযাবর জীবন

ঘুরে বেড়ায় চঞ্চল মন
এখানে ওখানে
কি জানি কার সন্ধানে
কে জানে কে জানে?

স্থিতির সন্ধান এধার ওধার
কখনো খুশি কখনো হতাশার
জীবনের নানা কাব্য গীতি
আসলে কোথায় তার শেষ পরিণতি?

মরণের দেশে স্থিতি
এ আবার কেমন রীতি?
আসলে এটাই আসল রীতি
ওপর ওয়ালার লিখা যার যার নিয়তি।

বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট, ২০১৩

পথ চলা


পথ চলা
- যাযাবর জীবন

কবে যে বৃত্তের কেন্দ্র থেকে
পথচলা শুরু? আজ আর মনে পড়ে না;
ধীরে ধীরে ব্যাসার্ধ বাড়াতে বাড়াতে
পথ চলা, কোন এক অজানা পরিধির দিকে;
সামনে অন্ধকার না আলোর দিশা আছে
না জেনেই ঝাঁপিয়ে পড়া
কালের গহ্বরে।

কালের যাত্রা ধ্বনি যেন শুনি
কান পেতে খুব ধীরে
নরম পায়ে পায়ে কে যেন এগিয়ে আসছে
কিংবা কি যেন হামাগুড়ি দিচ্ছে
আমার দিকে
অজানা পরিধির শেষ দিক থেকে
উল্টো পথে আমারই দিকে;
তাহলে পথের কি এখানেই সমাপ্তি
কালের সমাপ্তিতে কিংবা জীবনের?

না হলে পরিধির সমাপ্তি না জেনেই
কেন ফিরতি পথ গুনি
অবচেতন মনে;
আজকাল ব্যাসার্ধের পরিমাপ করি না
শেষ থেকে আবার শুরুর দিকে যাত্রা
উল্টো ব্যাসার্ধ ধরে
কেন্দ্রের দিকে, পরিধির সমাপ্তি না দেখেই।

শুরু থেকে অনেক অব্ধি পথ চলা হলো
তবুও কিছুই দেখা হলো না মনে হয়
কিছুই জানা হলো না মন কয়;
অসম্পূর্ণতার হতাশা নিয়ে
উল্টো পথ হাঁটা শুরু হলো
যেখান থেকে শুরু করেছিলাম
সেই মূল কেন্দ্রের দিকে।

এইতো জীবন!!
যেখান থেকে শুরু সেখানেই সমাপ্তি
মাটি থেকে সৃষ্টি
মাটিতেই মাটি।

কেও কি পরিধির দেখা পেয়েছে?
এ জীবনে?
বড্ড জানতে ইচ্ছে করে।




আত্মতুষ্টি


আত্মতুষ্টি
- যাযাবর জীবন

একটা সময় ছিল
এইতো সেদিনও;
বলতে হতো না কাওকে কোন কিছু
বরং প্রশ্নবাণে জর্জরিত -
"কিছু কিনেছিস ঈদে"
কিছু লাগবে তোর?
ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক প্রশ্ন।

আমার চাহিদার কথা তার জানাই ছিল
জোর করে অফিস থেকে উঠিয়ে নিয়ে যেত
ঘুরে ঘুরে এখানে ওখানে
শেষমেশ অনেক বেঁছে বেঁছে
কিনে দিত ঈদের উপহার -
দুটি গামছা :P
আমার চাহিদা এইটুকুতেই সীমাবদ্ধ
এর চেয়ে বেশি কিছু নেবার মত কিছু নেই আমার
খুব ভালো করেই তার জানা ছিল।

আজ আর কোন উপহার কিনে দেবার কেও নেই
নেই কেও জিজ্ঞাসা করারও -
তোর গামছা দুটি কি ছিঁড়ে গেছে?
না কি চলবে এখনো - এই ঈদ পাড়ি দিতে।

এক একজনের আত্মতুষ্টির সীমারেখা কত তুচ্ছই না হতে পারে!
আমার পরনে গামছা, পেটে দুটো মোটা চালের ভাত
আর মনের মাঝে শুধুই তুই
এই আমার জীবন।