একদিন চায়ের কাপ হাতে বিকেল বারান্দায় ঢলা রোদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কথা প্রসঙ্গে তুই জিজ্ঞেস করলি,
- আচ্ছা! স্পর্শ কি?
আমি হেসে উত্তর দিলাম,
- কেন জানতে চাইছিস?
তুই বললি, তোর এই প্রশ্ন দিয়ে প্রশ্নের উত্তর আমার একদম পছন্দ নয়।
যা জিজ্ঞেস করছি সরাসরি উত্তর দে।
আমি আবার হেসে বললাম,
- এই প্রশ্নের উত্তর তো সরাসরি দেয়া যাবে না রে
- স্পর্শ এক একজনের জন্য এক এক রকম;
তুই এবার রেগে গিয়ে জিজ্ঞেস করলি,
- সেটা কেমন?
আমি বললাম, দেখ খুব সোজা কথায় আমি যেটুকু বুঝি তা হচ্ছে
- স্পর্শ, স্পর্শ
- স্পর্শ, অনুভব
- স্পর্শ, অনুভূতি
এখন ধর!
- মায়ের কাছে সন্তান'কে স্পর্শ করার অনুভূতি আদর মাখা।
- একটা বাচ্চার কাছে মায়ের স্পর্শ নির্ভরতা, বাবার স্পর্শ তখনো সে বুঝে ওঠা শেখে নি
- আবার বাচ্চা একটু বড় হয়ে যখন বুঝতে শেখে তখন মায়ের স্পর্শ প্রশ্রয়ের স্থান বাবার স্পর্শ নির্ভরতা।
- বাচ্চা আরেকটু বড় হয় তখন বাবা মায়ের পাশাপাশি বন্ধুদের স্পর্শ চলে আসে আর বন্ধুদের স্পর্শ মানেই আনন্দানুভূতি।
- সন্তান আরেকটু বড় হয়ে কৈশোরে তো বিপরীত লিঙ্গের স্পর্শের একটা অন্য অনুভূতি
কিছুটা ভালো লাগা, কিছুটা কামনা;
মেয়েদের ক্ষেত্রে কিন্তু কিছু স্পর্শ আনন্দের আবার কিছু গা গোলানো নোংরা অনুভূতি মাখা।
- যৌবনের স্পর্শ বেশীরভাগটাই হাতে হাতে বন্ধুত্ব আবার পাশাপাশি বিপরীত লিঙ্গে আকর্ষিত
প্রেম করাকালীন স্পর্শ বেশীরভাগ ভালোলাগার আর কিছুটা কামনা মাখা
তখন আর বাবা-মায়ের স্পর্শ খুব ভালো লাগে না, কেউ কেউ হয়তো অস্বস্তিই বোধ করে
- বিয়ের পরে স্পর্শে স্পর্শে স্বামী-স্ত্রী
কিছু স্পর্শ ভালো লাগার, কিছু কামনার আর বেশীরভাগ পরস্পর নির্ভরতার আশ্বাস
তারপর আবার নতুন সন্তান আগমন মাতৃত্বের স্পর্শ থেকে ক্রমাগত.........
- প্রৌঢ়ত্বে স্বামী-স্ত্রীর স্পর্শে বেশীরভাগটুকুই পাশে থাকার আশ্বস্ততা, নির্ভরতা আর স্পর্শ অভ্যাস
এর মধ্যে সন্তান কৈশোর বা যৌবনে
সন্তানের প্রতি স্পর্শে নির্ভরতার আশ্বাস
বাবা-মা আছে, পাশেই আছে আর অর্থনৈতিক নিশ্চয়তার হাত
- বার্ধক্যে স্বামী-স্ত্রী দুজনই বেঁচে থাকলে স্পর্শ অভ্যাস, পরস্পর কাছে থাকার অনুভব
আর একজন আগে চলে গেলে তাকিয়ে থাকা শূন্য হাত
সন্তানদের স্পর্শের জন্য কিছু কাতরতা, কিছু কাতরতা নাতি নাতনীদের স্পর্শের জন্য
আর অপেক্ষা ওপার যাত্রার;
এতো গেলো সুখী দাম্পত্যের কথা,
আজকাল কিন্তু অহরহই দাম্পত্য ভেঙ্গে যাচ্ছে চারিদিকে।
- সেসব দাম্পত্যের প্রথমদিকে ভালোলাগা, কামনা
তারপর যখনই দুজনের মধ্যে ফারাকের দেয়াল উঠে যায় তখন স্পর্শ মানেই যাতনা
খুব মাঝে মাঝে রাত গভীরে হয়তো শুধুই শারীরিক কামনা
আর নয়তো বেশীরভাগ দুজন দু ঘর কিংবা দু বিছানা
তারপর চারিদিকে ভাঙ্গনের কান ফাটানো চিৎকার;
এখন বল, কোন স্পর্শের কথা জানতে চাচ্ছিলি?
তুই কিছুক্ষণ চুপ করে একদৃষ্টে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলি
তারপর টুপ করে দু ফোঁটা কান্না ঝরে পড়তেই একটা হাত বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলি
- তুই এই হাত কতদূর পর্যন্ত ধরে রাখবি?
আমি তোর হাত আমার দু হাতে মুঠোর ভেতর চেপে ধরে হেসে বললাম,
- ওপার যাত্রার অপেক্ষা পর্যন্ত।
১৬ জানুয়ারি, ২০২২
#কবিতা
স্পর্শ অপেক্ষার
- যাযাবর জীবন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন