রবিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০২২

স্পর্শের স্পর্শে

কতদিন তোকে ছুঁই না বল তো!

কতদিন হয়ে গেছে?


কি এক আজব রোগ এলো পৃথিবীতে!

একটা পজিটিভ রিপোর্ট 

আর আমাদের আলাদা করে ফেলে এক ছাদের নীচে, 

এখন আমাদের দিন কাটে রাত কাটে দুজন দু ঘরে

এটা তাও ভালো, আছি তো এক ছাদের নীচে!


অথচ প্রথম প্রথম কি অবস্থা ছিলো চিন্তা করে দেখ তো!

কোন বাড়িতে পজিটিভ এলে পুরো বিল্ডিং ফাঁকা 

লোকজন দুদ্দাড় দৌড়ে পালাতো

কখনো বিল্ডিং ছেড়ে কখনো মহল্লা ছেড়ে,

মনে আছে সেই প্রথম দিনগুলোর কথা?

কেউ মারা গেলে লাশটা গোসল করানোর মানুষ পাওয়া যেতো না

জানাজা পর্যন্ত পড়ার লোক হতো না, দাফন করার লোকের বড্ড অভাব ছিলো,

তারপর ধীরে ধীরে সব সয়ে এলো,

সময়ে সবই সয়ে যায়;


আজকাল আমরা এক ছাদের নীচেই পাশাপাশি দু ঘরে থাকি

দিনে মাঝে মধ্যে দু চারবার দেখা করি মুখে মাস্ক ঢেকে

কে কবে জেনেছিল মাস্কটা আমাদের দৈনন্দিন পোশাকের একটা অংশ হয়ে যাবে?

মনে আছে সেই প্রথমবার যখন আমাকে ভাইরাস ছুঁয়েছিল?

ওটার রাগ বড্ড প্রখর ছিলো 

আমাকে বাড়িতে রাখার সাহস করলি না তোরা

আমার ফুসফুস অক্সিজেন নিতে পারছিলো না 

হসপিটালই একমাত্র ভরসা,

সেবারও একা ছিলাম অনেক কটা দিন হসপিটাল বেডে শুয়ে 

ভিজিটরের অনুমতি ছিলো না 

প্রতিদিনই একটা দুটো করে মৃত্যু দেখতাম আর হসপিটালের বারান্দা জুড়ে প্রিয়জনের কান্না

জানিস তখনো বড্ড মিস করতাম তোকে, তোর স্পর্শ

একটু জড়িয়ে ধরা;


তারপর আবার যখন তুই ভাইরাসে আক্রান্ত হলি সেবার!

তখন তুই বাসায়, আলাদা ঘরে 

এ ঘরে আমি একা

একটা পজিটিভ রিপোর্ট

কি সহজেই না দুজনকে আলাদা করে ফেলে দু ঘরে! 

পনেরোটা দিন বড্ড একা কেটেছিলো সেবারও

তোর স্পর্শ ছাড়া; 


এবার আবার যখন তুই ও ঘরে কোয়ারেন্টাইনে!

আমি এ ঘরে একা,

একা তুই ও ঘরে

আবার স্পর্শ ছাড়া দুজনে

দেখা সাক্ষাৎ মাস্ক পরিধানে,

এ কেমন জীবন আমাদের?


আজকাল একা থাকতে বড্ড খারাপ লাগে

পাশের খালি বালিশে হাত চলে যায় অজান্তেই

অজান্তেই ঘুমের মাঝে খুঁজি তোকে

একটু স্পর্শের অনুভূতি, তারাই বোঝে যারা ভালোবাসে;


অপেক্ষায় আছি      

একটা নেগেটিভ রিপোর্টের

একটু স্পর্শের 

এবার তুই এলে সারারাত জড়িয়ে ধরে রাখব

স্পর্শের স্পর্শে;


আচ্ছা! তোকে স্পর্শের এই তীব্র আকাঙ্ক্ষা'কে কি ভালোবাসা বলে?  


২৩ জানুয়ারি, ২০২২


#কবিতা 


স্পর্শের স্পর্শে

 - যাযাবর জীবন 



 

1 টি মন্তব্য: