বুধবার, ২৬ জুন, ২০১৩

চলে এসো তুমি সময় ফুরনোর আগে

চলে এসো তুমি সময় ফুরনোর আগে
-যাযাবর জীবন

শেষ রাত, আঁধারের কালিতে অন্ধকারের আলপনা আঁকছি। নাই বা গেল দেখা খালি চোখে তিমির অন্ধকারে। দেখার চোখ যে তোমার নেই, মরে গেছে। অন্ধত্বের চোরাবালিতে ডুবে গেছে তোমার অন্তর; সেই যেদিন থেকে ছেড়ে চলে গেছ আমার ঘর। তবুও অন্ধকারে আমি রংধনুর সাত রঙ একে চলেছি, মনের চোখে দেখে। অন্ধত্বের ঠুলি আমি পড়িনি এখনো, আলোর দিশায় আজো চোখে স্বপ্ন আঁকানো। তুমি ফিরে আসবে বলে যত আয়োজন করে রেখেছি। যদি ভুল ভাঙ্গে, যদি ফিরে আস আবার আমার ঘরে! কি জবাব দেব তোমায় অগোছালো হয়ে থাকলে পরে।

আমি রঙ কুড়চ্ছি একটি একটি করে। শ্রাবণের মেঘ থেকে হালকা আর কালো মেঘের রঙ তুলে নিয়েছি, পলাশ ফুল থেকে টকটকে লাল। সূর্যমুখী থেকে হলুদ কিছু রঙ এনেছি, সাথে একটু আঠালো মধু মাখানো, ছিনিয়ে নিয়েছিলেম যা মৌমাছির হুল থেকে।

জ্যোৎস্নার আলো থেকে হালকা হলুদ, কুয়াশার চাদর থেকে হালকা ধুসর, সাপের ফণা থেকে তুলে এনেছি নীল বিষ। আকাশ থেকে রঙ তুলে এনেছি বিভিন্ন সময়ে, সকালের হালকা নীল, দুপুরের পুড়ে যাওয়া স্মৃতির গন্ধ মাখা গাঢ় নীল, বিকেলের রক্তিম লালাভ কিছু রঙ। তোমার ঘৃণার নীল বিষের সাথে মিশিয়ে রেখেছি।

ঝমঝমে বৃষ্টি থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় তুলে রেখেছি কান্নার অশ্রুজল, ক্যানভাসে জলরং মেলাবো বলে। শুধু শুকনো রঙে তো আর ছবি হয় না, সাথে জলরং মেলাতে হয় কিছু। ভেবো না, অশ্রু জলে টান পড়লে হৃদয় চিড়ে বের করে নেব টকটকে কিছু লাল রঙ, ব্যথার জ্বালা সয়ে এখনো ধরে রেখেছি তোমারই জন্য, একটুও নষ্ট হতে দেই নি।

তুমি আসবে বলে স্বপ্ন সাজিয়েছি, রঙের বাহার আমার চারিদিক জুড়ে। তুমি ঘরে এলেই জলরঙে আঁকব অন্ধকারের আলপনা। ততদিনে আমি নিশ্চিত তোমার চোখের ঠুলি খুলে পড়বে, সূর্যের প্রখর রোদে তুমি দেখবে জ্যোৎস্নার জলরঙে আঁকা তোমার ছবিখানা।
সেদিন যেন আবার তুমি কেঁদো না। তুমি তো খুব ভালো করেই জানো তোমার অশ্রুজল আমি সইতে পারি না।
তবে খুব বেশী দেরি করো না, একটি করে তোমার দিন শুরু হয় আমার হয় হাতেগোনা দিনের সমাপ্তি। স্বপ্ন নিয়ে বসে আছি, যাবার আগে তোমার ছবিটা এঁকে দিয়ে যাব – তারপর স্মৃতি হয়ে যাব; হার মেনে নিয়তির কাছে। চলে এসো তুমি দিয়ে অন্ধকার পাড়ি। মাটি ডাকছে আমায়, চলে যেতে হবে খুব তাড়াতাড়ি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন