মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০১৩

বাবা মা ও সন্তান

বাবা মা ও সন্তান

(একটি ছোট গল্প - সত্য ঘটনার ছায়া অবলম্বনে)


- যাযাবর জীবন

আজ একটা ছোট্ট গল্প বলি তোমাদের, সত্য ঘটনা তবে স্থান কাল পাত্র গুলো পরিবর্তিত -

একদিন বুড়ো বাবা তার লায়েক ছেলের সাথে সোফায় বসে কথা বলছে, আসলে কথা না পুরনো একটা টুকরো স্মৃতি ঘাঁটছিলেন বাবা। বাইরে জানালায় একটা কাক এসে বসল।

বাবা: এটা কি ?

ছেলে: কাক

বাবা আবার জিজ্ঞাসা করলেন এটা কি?

ছেলে একটু বিরক্ত হয়ে বলল, দেখছ না এটা কাক?

বাবা তৃতীয় বারের মত প্রশ্ন করলেন - জানালায় এটা কি এসে বসেছে।

এবার ছেলে খুব বিরক্ত হয়ে: কয়বার বললাম যে এটা একটা কাক? তোমার চোখ তো এখনো অন্ধ হয়ে যায় নি।

বাবা হেসে চতুর্থ বারের মত অনেক গলায় অনেক মায়া ঢেলে জিজ্ঞাসা করলেন: বাবা জানালার শিকে এটা কি বসেছে।

এবার ছেলে ভয়ঙ্কর রেগে গেল: যদি কাক তোমাকে চেনাতে হয় তাইলে সোফায় না বসে বিছানায় শুয়ে থাক, এত বিরক্ত করতে যে পার! এক কথা বার বার জিজ্ঞাসা কর কেন? কতবার বললাম যে এটা একটা কাক, না কি তুমি কাকও চিনো না? বুড়োকে নিয়ে হয়েছে জ্বালা।

বাবা স্মিত হেসে উঠে গেলেন তার ঘরে, কিছুক্ষণ পর ড্রয়ার ঘেঁটে পুরনো একটি ডায়েরী নিয়ে ছেলেকে পড়তে দিলেন। বললেন বাবা আমার, যেদিন তোমার জন্ম হয় সেদিন থেকে আমি এই ডায়রিতে তোমার প্রতিদিনের প্রতিটা মুহূর্ত লিখে রেখেছি। তোমার যখন তিন বছর তখনকার এই লেখাটা একটু পড়ে দেখ বলে নির্দিষ্ট পাতাটি ছেলেকে পড়তে দিলেন।

ওখানে লেখা:
আজ আমার ছেলের বয়স তিন হলো, আধো আধো কথা বলে, যা দেখে তাই জিজ্ঞাসা করে। এটা কি, ওটা কি, এটা এমন কেন? ওটা অমন কেন? আমি ছেলের সাথে ছেলে হয়ে যাই তার। কি এক গভীর ভালোবাসার টানে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে তার প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর দেই একটু বিরক্ত বোধ করা তো দূরের কথা বরং নিম্নগামী ভালোবাসার স্রোতে ভেসে তার প্রশ্নগুলোর উত্তর দেই তাকে বুকে তুলে নিয়ে, কোলে বসিয়ে অনেক আদরে একই প্রশ্নের উত্তর দেই বার বার করে।

একদিনের ঘটনা - আমি ছেলের সাথে সোফায় বসে খুনসুটি করছি আর তার নানা উদ্ভট প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। না বুঝলে বার বার বোঝাচ্ছি। হঠাত করে জানালায় একটা কাক উড়ে এসে বসে কা কা শুরু করে দিল। আমার তিন বছরের ছেলে জিজ্ঞাসা করল - বাবা এটা কি?
আমি বললাম এটা একটা পাখি এর নাম কাক। ছেলে আবার প্রশ্ন করল এটা কি বাবা? আমি উত্তর দিলাম বাবারে এটা কাক, একটা পাখি। এভাবে আমার ছোট্ট সোনামণি ২৩ বার সেদিন একই প্রশ্ন করল, আমি একফোঁটা বিরক্ত না হয়ে তাকে ২৩ বারই বুঝিয়ে বললাম একই কথা উত্তরে। কি বুঝলো কি জানে আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে নতুন খেলায় মন দিল। আমার মনটা কি যে এক আনন্দে ভরে গেল।
সন্তান বাবা মায়ের শ্রেষ্ঠ আদরের ধন, তার এই হাজার প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে আমার মনে তার জন্য হাজার গুন বেশী ভালোবাসার কেমন এক অজানা অনুভূতি খেলা করে।

একটি সন্তান একটি বাবার জীবনকে বদলে দিতে পারে, আমার সন্তান যখন অনেক বড় হবে, যেদিন সে মানুষের মত মানুষ হবে; যেদিন আমার চলার সামর্থ্য থাকবে না সে নিশ্চয়ই আমাকে বুকে করে আগলে রাখবে যেমন আমি অপার ভালোবাসায় তাকে ভাসিয়ে রেখেছি। আজকের দিনটির কথা সেদিন হয়তো আমার মনে পড়বে কিংবা হয়তো মনে থাকবে না, বুড়ো হলে নাকি মানুষ অনেক কথাই ভুলে যায়, তবে আমার ছেলেকে আমি সেভাবেই মানুষ করব যেন সে আমাদের বুড়ো বয়সে বাবা মায়ের ভালোবাসার মূল্য দেয় ভালোবাসা দিয়ে। আজ এই পর্যন্তই থাক।
(ডায়েরির সেদিনের পাতা শেষ)

ছেলে পড়লো ডায়রিতে লেখা কথাগুলো, মনে কোনো ভাব জাগল বলে মনে হলো না। শুধু বলল বিরক্ত স্বরে - এই সব বস্তাপচা কথাবার্তা আজকের যুগে অচল। বাবা "be practical". আমার অনেক কাজ আছে, তোমার সাথে পুরনো কাসুন্দি ঘাটার সময় নেই। বার বার এক কথা বলে বিরক্ত কর না। বয়স হয়েছে এখন নামাজ কালাম পড় আল্লাহ্‌ খোদার নাম নাও। আর শুয়ে শুয়ে রেস্ট কর। আমি কাজে যাচ্ছি বলে ঘর থেকে বিরক্ত হয়ে বের হয়ে গেল।

আমরা কি আসলে মানুষ হয়েছি? নাকি যন্ত্র?
যে অপার স্নেহ মায়া মমতায় বাবা মা আমাদের অনেক কষ্ট সয়ে বড় করেছেন আমাদের গায়ে ফুলের টোকা না পড়তে দিয়ে তাঁদের আমরা আজ প্রতিদানে কি দিচ্ছি? একরাশ বিরক্তি? ওল্ড-হোম নামক কারাবাস?

আমরা মানুষ? ধিক আমাদের ..................


পুনশ্চ: (মূল থিম নেট এ অন্য একটি গল্প থেকে সংগৃহীত, তবে গল্পটা নিজের মত করে লিখলাম, আমি সাধারণত গল্প লিখি না তবে এটা না লিখে পারলাম না। এ গল্পে হয়তো অনেককে হার্ট করবে, অনেকে নাক সিটকাবে, ঐ রূপ ছেলে বা মেয়ের দলগুলো, তাতে আমার কি এসে যায়! কেও তো পড়বে? কেও তো বুঝবে? এটাই বা কম কি?)



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন