বুধবার, ৩০ জুন, ২০২১

দ্বিধাহ্নিত আয়না

আমি একা হতে চাই না,

একা হলেই দেখি দ্বিধাহ্নিত আয়না; 


একা হলেই নানা রকম ভাবনাগুলো মাথায় আসে 

একা হলেই বিবেক কথা বলে 

একা হলেই অতীত চলে আসে সামনে 

আমি অসহায় চোখে পাপেদের নৃত্য দেখি

সুদূর অতীতের সব ভয়াবহ পাপগুলি; 


বরফের মত একটা ঠাণ্ডা অনুভূতি আমার শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে যায়

আগুনের মত একটা হলকা মস্তিষ্ক পোড়ায় 

আমি আগুনে পুড়ি, পুড়ি হিম বরফেও 

পুড়তে পুড়তে কয়লা হতে হতে হৃদয়টা চিরে চিরে 

আমার ভেতরে ঢুকে যাই আমি নিজে 

শিরা উপশিরা হয়ে অলিন্দ নিলয় ঘুরে বেড়াই 

ওখানে সব ছোপ ছোপ কালো কালো জমাট বাধা রক্ত

রিপু কামড়ে কামড়ে লাল রক্তগুলো কালো করে ফেলেছিলাম সেই কবেই! 

আমার বড্ড দমবন্ধ লাগে

অস্থির হয়ে একাকীত্ব থেকে দৌড়ে মানুষের মাঝে চলে আসি

একটু সুস্থির হয়ে বসি, 


এবার ভালো করে তাকাই 

তাকাই সূর্যের দিকে - অথচ রাত দেখি চোখে   

জ্যোৎস্নার দিকে তাকাতে চাই - আমাকে অমাবস্যা ঘিরে রাখে,  

এবার একটা একটা করে মানুষের ভেতরে ঢুকি

ও কি! ও কি! ছুটে বের হয় আসি 

এদের সাথে আমার পার্থক্য কোথায়? 

এরা সবাই আমার মতই মানুষ - পাপে পাপে পূর্ণ;


আমি একটা মানুষ খুঁজছি; 

হাত পা মাথা থাকলেই কি মানুষ হয়?

কত পশুরই তো হাত পা মাথা থাকে!

আচ্ছা! ওরা কি স্বজাতির কাউকে হত্যা করে? 

মানুষ তো করে, কারণে আর অকারণে;

 

একবার আয়নার দিকে তাকাই আরেকবার পশুগুলোর দিকে

দ্বিধাহ্নিত চেয়ে থাকি মানুষ খুঁজতে গিয়ে। 


৩০ জুন, ২০২১


#কবিতা 


দ্বিধাহ্নিত আয়না 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





আয়না কথা

আমি হয়তো লেখাপড়া খুব একটা করি নি 

তবুও কেন জানি তোকে পড়তে আমার একটুও কষ্ট হয় না; 

 

তোর হাসির পেছনে লুকানো কান্না

তোর দুঃখের তাকে রেখে দেওয়া সুখের টুকরোটা 

তোর একাকীত্বের গহীনে আমার নীরব উপস্থিতিটা 

ওগুলো আমি ঠিক ধরতে পারি,  

কেন জানি আমি তোকে খোলা বইটার মত পড়তে পারি,

এর কি কোন কারণ আছে? 

কোন নাম?

জানিস! লোকে কত ভাবেই না ভালোবাসার কথা বলে! 

অথচ আমি কখনো ভালোবাসোতেই শিখি নি!

তবুও কিভাবে কিভাবে যেন তোকে ঠিক পড়ে ফেলি;


জানিস! আকাশে চাঁদ উঠলেই মনটা জানি কেমন কেমন করে

পর্দাটা সরিয়ে দিলেই জানালার শার্শি গলে বিছানার চাদরটা জ্যোৎস্নায় মাখামাখি হয়ে থাকে 

অথচ আমি পর্দা টেনে দিয়ে তোর দিকে চেয়ে থাকি, ঘরে তুই এলে 

তুই মানেই তো অন্ধকারে জ্যোৎস্না বৃষ্টি

আর মনে কি এক অবোধ্য বোধের অনাসৃষ্টি;

আচ্ছা! একে কি ভালোবাসা বলে?

ধ্যাৎ! আমার ভালোবাসাটাই শেখা হলো না; 


এই যে তুই পাশে থাকলেই 

বোঝা বোঝা, না বোঝার এক অনুভব!

বোধ্য বোধ্য অবোধ্য এক অনুভূতি! 

মায়া মায়া জড়ানো এক কষ্ট কষ্ট অনুভূতি!  

আর সুখ সুখ অসুখের মত এক বিহ্বল অনুভব! 

আচ্ছা! এগুলো কি ভালোবাসা? 

আমি বুঝতেই পারি না; 


কত আজব আজব প্রশ্নের উত্তরই তো জানা হয় না  

তবুও মাঝে মাঝে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করি 

- ভালোবাসা কি? 

চুপ করে থাকে আয়না; 


আচ্ছা! কোথাও কি ঝুমঝুমান্তি বৃষ্টি নেমেছে?

অমাবস্যায় কি কোথাও জ্যোৎস্নার বান ডেকেছে? 

কেন জানি বড্ড অস্থির লাগছে।  



৩০ জুন, ২০২১


#কবিতা 


আয়না কথা   

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





মঙ্গলবার, ২৯ জুন, ২০২১

কাজ ফুরোলে পাজি

যতদিন তোর কাম, ততদিনই আমার দাম, স্বার্থ এটার নাম;

কাজ ফুরোলো,দাম হারালো, এবার রাস্তা মাপ

স্বার্থেই মানুষ কোলে তোলে, স্বার্থ শেষে আছড়ে ফেলে  

কখনো ভদ্র ভাষায় আর কখনো চরম উপেক্ষায়

অল্পবুদ্ধির মানুষও কিন্তু উপেক্ষাটা বোঝে 

এ ঘরের কাজ ফুরোলে, নতুন কর্ম খোঁজে; 


ঐ যে কথায় আছে না!

যখন ছিলাম রসালো আম 

তখন দিতি অনেক দাম, 

এখন যখন ঝুনা নারিকেল 

আমার তখন কোথায় নাই বেইল,   

কেইই বা মনে রাখে? কাজ ফুরিয়ে গেলে 

আসল চেহারাটা সামনে আসে স্বার্থ হাসিল হলে;


আমি ঘর ঘরের কথা বলছি

আমি অফিস অফিসের কথা বলছি

বলছি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কথা 

বলছি কর্মক্ষেত্রের কথা  

আমি বলছি সম্পর্কের কথাগুলো,

সে চাকুরী-দাতা আর গ্রহীতাই হোক না কেন

কর্মচারী আর মালিকই হোক না কেন

কিংবা ঘরে ভাই বোন আত্মীয় স্বজনই হোক না কেন!

যতদিন কাজ, যতদিন অর্থ, যতদিন স্বার্থ, ততদিনই সুসম্পর্ক 

কাজ ফুরোলো তো প্রয়োজন ফুরোলো, 

আরে! ক্ষেত্র বিশেষে বাবা মাই বোঝা হয়ে যায়

ভাই বোন তো আরও আগেই 

আমি নগ্ন সত্যিটাই দেখেছি 

আমি সম্পর্ক খারাপ হতে হতে রক্তারক্তি দেখেছি

স্বার্থ! মনের চরম সম্পর্কঘাতি ব্যাধি;


নির্লোভ হতে পেরেছে কে?

মহামানবের স্থান ডিকশনারিতে। 

  


২৯ জুন, ২০২১



#কবিতা 



কাজ ফুরোলে পাজি

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





সোমবার, ২৮ জুন, ২০২১

সূর্যোদয়

সে অনেকদিন আগেকার কথা 

একদিন খুব ভোর বেলায় আমি তোর বাড়ির সামনে; 

খুব চমকে উঠেছিলি, যেদিন বললাম কাল ভোরে সূর্য দেখব একসাথে?

সেদিন সারা রাত ঘুম হয়েছিলো কি তোর? 

আমার তো হয় নি উত্তেজনায় 

তোর হয়তো ভয়ে

প্রেমের শুরু শুরুতে মেয়েদের মনে একটু বেশি বেশিই ভয় কাজ করে;


সেদিন আমি তোদের দরজায় কড়া নাড়ি নি, টিনের চালে ছুড়ি নি কোন ঢিল

তবুও তুই ঠিক জেনে গিয়েছিলি আমি চলে এসেছি

আমি তোদের বাসার সামনেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে সূর্যের অপেক্ষায় দাঁড়ানো মাত্র   

তুই খুব সাবধানে দরজা খুলে ভয়ে ভয়ে বারান্দায় বের হয়ে এসেছিলি, খুলে খিল; 

আমি চন্দ্রোদয় দেখলাম তোদের ঝুল বারান্দায়, চুপিচুপি একান্তে    

ততক্ষণে পূবাকাশে সূর্যোদয়

তুই চেয়ে রইলি, আমি চেয়ে রইলাম 

আমরা একসাথে সূর্যোদয় দেখলাম আকাশে; 

কিছুক্ষণ চোখে চোখে চেয়ে থাকা 

ঠোঁটের কোণে দুজনার মুচকি হাসি 

তারপর তুই দরজা বন্ধ করে ঘরে ঢুকলি, আমি বাসার পথে 

আমাদের প্রথম একসাথে সূর্যোদয় দেখা;   


তখনকার দিনের ভালোবাসাগুলো কি অন্যরকমই না ছিলো!

তাই না? 


আজ পঁয়ত্রিশ বছর পরও আমরা মাঝে মাঝেই একসাথে সূর্যোদয় দেখি  

এবার আর বারান্দা আর রাস্তায় দাঁড়িয়ে নয়, দুজন দুপ্রান্তে অপেক্ষাতেও নয় 

আমরা সূর্যোদয় দেখি দুজন ছাদে বসে দোলনায় দুলতে দুলতে 

একজন আরেকজনের গায়ে হেলান দিয়ে, 

একদিকে আকাশের গায়ে হেলান দেয়া চাঁদ ডুবতে থাকে

অন্যদিকে আকাশ ফুঁড়ে সূর্যটা ঘুম ভেঙে জেগে ওঠে 

আমরা দুজন সূর্যোদয় দেখি কখনো চায়ের কাপে চুমু ভিজিয়ে 

কখনো বা শুধুই দোলনায় বসে চুপ হয়ে পরস্পর হেলানে জড়িয়ে। 


২৮ জুন, ২০২১


#কবিতা 


সূর্যোদয় 

 - যাযাবর জীবন 

জীবন ও মৃত্যুর গল্প

মৃত্যুর কোন গল্প নেই 

গল্প নেই মৃতের 

মৃতের গল্প শব 

মৃতের স্থান কবর

তারপর শব পচে পচে মাটি 

আপনজনের জন্য কিছু স্মৃতি;


স্মৃতি! সেও বা কতদিন?

পরিচিত জনের জন্য একটু আহা ওহো! 

কারো ইচ্ছে হলে ইন্না লিল্লাহ (পুরোটা পড়ার সময় হয় না)

বন্ধুবান্ধবের জন্য হয়তো কিছুদিন, সপ্তাহ কিংবা মাস

খুব বেশি হলে বন্ধুদের কোন আড্ডায় দু মিনিটের জন্য স্মরণ

কিংবা হয়তো আরেকটু বেশি সময় ধরে স্মৃতি কথন

তারপর আবার নতুন কোন গল্পের টপিকে ফিরে যাওয়া, চলমান আড্ডা,

বাবা-মা যদি বেঁচে থাকেন তবে মৃত সন্তান অনেক ভাগ্যবান

ওনাদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দোয়াতে থাকা 

নিজের সন্তানরা! ওরা ব্যস্ত যার যার জীবনে, কর্মে, সংসারে 

খুব মাঝে মাঝে মনে হলে রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা

মৃতের বেঁচে থাকা স্ত্রী অথবা স্বামী! 

যখনই সংসার কর্মে ফুরসত মেলে তখন স্মৃতির ঝাঁপি 

আর দোয়া প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাজে (যদি না ওরা নতুন জীবনে প্রবেশ করে) 

আর না হলে মৃত তো মৃতই

পৃথিবীর সাথে শবের সংশ্লিষ্টতা কোথায়? 

কিংবা কবরে পচে গলে মাটি হয়ে যাওয়া মাটির সাথে!  


পৃথিবীতে যত গল্প সব জীবনের 

গল্পগুলো হয় জীবিতদের;

ওদের বেঁচে থাকার, ওদের ক্ষুৎ পিপাসার

শিশু থেকে বেড়ে ওঠার, শিক্ষা দীক্ষার 

পড়াশোনায় কম্পিটিশনের, চাকুরী কিংবা ব্যবসার

প্রেম, ভালোবাসা ও বিয়ের

সংসার, বাচ্চাকাচ্চা, তাদের দৈনন্দিন চাহিদা

চাহিদা মেটাতে মেটাতে হতাশা, নিজেকে ছিবড়ে করে ফেলা

চাকরি কিংবা ব্যবসার উন্নতি, দ্বন্দ্ব কর্পোরেট অফিসগুলোতে

দ্বন্দ্ব কার আগে কে তেল মেরে ওপরে উঠতে পারে   

প্রতিযোগিতা ব্যবসায়, দ্বন্দ্ব ব্যবসায়ীদের মাঝে;   

কারো সুখী কিংবা কারো অসুখী বিবাহ, দ্বন্দ্ব পরিবারের মাঝে  

কার জীবনে বা পরকীয়ার গল্প, কারো সুখী দাম্পত্যের 

বাবা, মা, ভাই, বোন, টাকা পয়সা, সহায় সম্পত্তি

অর্থ ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব, দ্বন্দ্ব সম্পর্কগুলোর মাঝে;

  

জীবন মানেই গল্প

হরেক রকম, হরেক রঙের নানাবিধ গল্প

আমরা সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে গল্পের ভেতর দিয়ে হাঁটি

গল্পের ভেতর দিয়ে সারাদিন রোদের ভেতর সাঁতার কাটি 

গল্পের ভেতর দিয়ে সূর্যাস্ত দেখি, রাত্রি দেখি, জ্যোৎস্না মাখি 

তারপর গল্প করতে করতে কিংবা সারাদিনে গল্পগুলো ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ি,

কাল আবার নতুন গল্পের জন্ম হবে, নতুন কোন উপলক্ষে

বেঁচে থাকা মানেই ঘটনা, ঘটনা মানেই গল্প 

গল্প জীবনকে ঘিরে, গল্প জীবিতদের ঘিরে;


এই যে আজ সারাদিন কত কত গল্প লেখা হয়েছে! 

এখনো বেঁচে আছি বলেই, তাই না!

আজ রাতের ঘুমের মধ্যে চিরঘুমে শব হয়ে গেলে

কাল হয়তো তোমরা একটি শবের গল্প বলবে

তারপর মাটি চাপা দিয়ে গল্প করতে করতে বাসার দিকে রওয়ানা দেবে

আহহারে! বড্ড ভালো মানুষ ছিলো;

দু দিন, সপ্তাহ! তারপর শবের গল্প পুরনো হয়ে যাবে; জীবন গল্পের ভিড়ে। 



২৮ জুন, ২০২১


#কবিতা


জীবন ও মৃত্যুর গল্প 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





সহনীয়

একদিন খুব হঠাৎ করেই সূর্যটা তেতে উঠলো

তোমরা বললে দুপুর, আমি দেখলাম রাগ;  

একদিন খুব হঠাৎ করেই সূর্যটা নরম হলো 

তোমরা বললে বিকেল, আমি দেখলাম অবসন্নতা;  

একদিন খুব হঠাৎ করেই সূর্যটা লাল হলো 

তোমরা বললে সন্ধ্যা, আমি দেখলাম বেদনা;  

একদিন খুব হঠাৎ করেই সূর্যটা চলে গেলো  

তোমরা বললে রাত, আমি দেখলাম অন্ধকার; 

তারপর খুব হঠাৎ করেই চাঁদের আগমন 

তোমরা বললে জ্যোৎস্না, আমি দেখলাম মায়া;   

একদিন খুব হঠাৎ করেই অন্ধকার দূর হলো  

তোমরা বললে সকাল, আমি দেখলাম হাসি;

সুখ দুঃখ হাসি কান্না রাগ অভিমান মায়া 

অনুভূতিগুলো সব মানুষের মনেরই ছায়া; 


সূর্যটা ঘুরছে, সূর্যটা পুড়ছে

উঠছে নামছে ভাসছে ডুবছে  

কখনো তাপ কখনো ভাপ

কখনো দিন কখনো রাত 

কখনো গরম কখনো ঠাণ্ডা , 

ভোরের কিংবা সন্ধ্যার সূর্যের দিকে তাকানো যায়

দুপুরের সূর্যের দিকে তাকাতে পারবে?

কিংবা রাতের?

মানুষের জন্য চরম কোন কিছুই 

সহনীয় নয়,

লাগাতার সাদা কিংবা শুধুমাত্র কালো জীবন কি 

মানুষের হয়? 

 



  

২৪ জুন, ২০২১


#কবিতা 


সহনীয় 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





অনলাইন পণ্য - রম্য গল্প

অনলাইন পণ্য, কিনে হোন ধন্য। 

খারাপ বললাম কি কিছু? 


এই যে আজকাল ফেসবুকে ঢুকলেই হাজার রকম পণ্যের বিপণন! কয়টি পণ্য আসলে কেনার যোগ্য? কয়টি পণ্যেই বা অনেকদিন ধরে সফল ভাবে ব্যবসা করে যাচ্ছে? খুব ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যায় হাতে গোনা অল্প কিছু কোম্পানি ছাড়া বাকিগুলোর বেশীরভাগই ভুয়া। চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ক্রেতা সাধারণের মনে প্রথমে একটা কৌতূহল জাগিয়ে তোলে; একবার কোনও একটায় লাইক দিলো তো সেই টাইপের সকল পণ্যের বিজ্ঞাপনে ভরে ওঠে নিউজ ফিড। মনে কর কেউ কোন একটা অনলাইন খাবারের কোন পেইজে লাইক দিলো, এরপর থেকেই দেখবে সম জাতীয় যত খাবার অনলাইন প্রমোশন হয় তার সবগুলো একের পর এক তোমার টাইমলাইন জুড়ে। কোন একটা কাপড়ের পণ্যে লাইক দেও! সকল অনলাইন পোশাক চলে আসবে তোমার ফিড ভরে। কি বিশ্বাস হলো না? একবার দিয়েই দেখ না! 


চটকদার বিজ্ঞাপনের কথায় মাথায় এলো, আমি নিজেও কি চটকদার বিজ্ঞাপনে আকর্ষিত হই নি? আরে বাবা হয়েছি। কতবার যে হয়েছি! তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই। অল্প কিছু সময় ছবির সাথে, বিজ্ঞাপনের দেখানো পণ্যের কাছাকাছি পণ্য হাতে পেয়েছি আর বেশিরভাগ সময় খেয়েছি ধোঁকা, হয়েছি বারে বারে বোকা। তবুও ঐ যে! ঐ সব চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়েছি আর নতুন নতুন পণ্য অর্ডার করেছি (প্রয়োজন থাকুক আর নাই থাকুন)। 


তা যা বলছিলাম, ঐ চটকদার বিজ্ঞাপনের কথা। গত বছরের কথা। একবার হঠাৎ করেই ফিডে একটা বিজ্ঞাপন দেখলাম। কিসের বিজ্ঞাপন? আরে বাবা চুল গজানোর বিজ্ঞাপন! চটকদার বিজ্ঞাপনে দেখলাম মেয়েদের চুল বড়  হতে হতে মেঝেতে গড়াচ্ছে। এক আধবুড়ো টাক মাথার ব্যক্তির পাশেই, দারুণ হ্যান্ডসাম মাথা ভরা চুলের এক যুবক দাঁড়িয়ে আছে গর্বিত ভাবে। বিজ্ঞাপন দেখে দৌড়ে আয়নার সামনে গেলাম। আমার টাকের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। :( আহা! আমারও যদি ওখানে অল্প কিছু, ঐ মাত্র অল্প আরেকটু চুল গজাতো! ঐ যে বিজ্ঞাপনে বলা আছে, ওদের শ্যাম্পুটি এক ফাইল ব্যবহারেই অর্ধেক টাক জুড়ে চুল গজানো শুরু করে দেবে। দ্বিতীয় ফাইল ব্যবহারে আমি নাকি পুরো যুবক হয়ে যাব। আহা! স্বপ্নে স্বপ্নে মাথা ভরা চুল দেখছি আর আমার যৌবনের মাথা ভরা চুলের কথা স্মৃতিতে ভাসছে। আবেগে প্রায় চোখে পানি চলে আসলো। আমি দৌড়ে গিয়ে তুরন্ত ম্যাসেজ করলাম তাদের ইনবক্সে। ভাইইইইইইইইইই! আমিও চাইইইইইইইইইইইই। আমার টাকটাকে ঢেকে দেন গো ভাইইইইইইইই। সম্ভবত রাত বারোটার দিকে মেসেজ দিলাম, আমার মোবাইল নাম্বার দিয়ে (ওখানে বলা ছিলো মোবাইল নাম্বার দিয়ে মেসেজ করতে)। 

ওমা!  পাঁচ মিনিটের মধ্যেই মোবাইলে ভেসে উঠলো মালয়েশিয়ার একটি নাম্বার।  কেউ ডাকছে আমায় মালয়েশিয়া থেকে। প্রথমে মনে করলাম হয়তো মালয়েশিয়া থেকে আমারই কোন বন্ধুবান্ধব অথবা চেনা পরিচিত কেউ ফোন করেছে। আমি হতচকিত হয়ে ফোন ধরলাম। ওপাশ থেকে ভরাট কণ্ঠে এক ভদ্রলোক গ্রিটিংস জানিয়ে খাস বাংলা ভাষায় জিজ্ঞাস করলো, ভাই! আপনি কি আমাদের প্রডাক্ট এর ব্যাপারে ইন্টারেস্টেড? আমি হতভম্ব হয়ে বললাম, কোন প্রডাক্ট? সাথে সাথে উত্তর এলো, ঐ যে আমাদের চুল গজানোর শ্যাম্পু? আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম, হ্যাঁ ভাই! আমি তো এই মাত্র আপনাদের ইনবক্সে মেসেজ করলাম! এত তাড়াতাড়ি উত্তর! তাও আবার মালয়েশিয়া থেকে? জবাব এলো, হ্যাঁ ভাই; আমরা কোন ভুয়া কোম্পানি না। আমরা ২৪/৭ - ৩৬৫। সারা পৃথিবী জুড়ে আমাদের প্রডাক্ট চলে। বাংলাদেশে আমাদের কোন অফিস নাই, আমরা মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, নেপালে আমাদের পণ্য  পাঠাই। আপনি কি ইন্টারেস্টেড? আবেগে আমার গলা বুজে আসলো। আহা! আহা! কি প্রফেশনালিজম! এদের প্রডাক্ট নিশ্চয়ই সেই লেভেলের প্রডাক্ট হবে। আমি আবেগ জড়িত গলায় জিজ্ঞাস করলাম, ভাই প্রথম ফাইল ব্যবহারের পরই রেজাল্ট পাব? উনি অপর পাশ থেকে হেসে বললো, অবশ্যই ভাই। আপনার চুল যেখানে উঠে গেছে ঐ অংশে প্রথম ফাইল ব্যবহার করতে করতেই দেখবেন ঘাসের মত ছোট ছোট চুল গজানো শুরু করবে; তারপর দ্বিতীয় ফাইল ব্যবহার করলে পুরোটায় চুল গজিয়ে যাবে। কি প্রফেশনাল জবাব! আহা! আহা! তবুও মনের মধ্যে একটা দ্বিধা ছিলো, টাকা দিলে এরা প্রডাক্ট ডেলিভারি করবে তো! আমি বললাম ভাই আমি অনলাইন ট্রান্সেকশন করি না, যদি ক্যাশ অন ডেলিভারি হয় তা হলে করব। ওপাশ থেকে জবাব এলো, কেন নয়? আপনি প্রডাক্ট হাতে পেয়ে তারপর টাকা দিবে। এবার আর কোন দ্বিধা রইলো না। এছাড়াও এরা আমাকে একবারও টাকলা বলে নাই (এই আবেগেই আমি হয়তো ওদের অর্ডার কনফার্ম করে দিতাম, তবুও যখন ক্যাশ অন ডেলিভারির কথা বললো! আর কি দেরি করা যায়? আর আগেপিছে সাতপাঁচ না ভেবে দিলাম কনফার্ম করে)।  একবারও মনে হলো না, মালয়েশিয়াতে এখন রাত দুই টা। এত রাতে হসপিটাল আর ইমার্জেন্সী সার্ভিস ছাড়া আর কোন কিছু খোলা থাকার কথাই না। তারপরও যদি ২৪/৭ অনলাইন সার্ভিস হয় তা হলেও ওখানে একজন কাওকে বসিয়ে রেখেছে আমার সাথে বাংলায় কথা বলতে। হায় চুল গজানোর লোভ! হায়!


দুদিন পরই ডেলিভারি ম্যান দোরগোড়ায়। আবারও ওদের প্রফেশনালিজমে আশ্চর্য হলাম। আহা! আহা! মাত্র পরশু রাতেই অর্ডার করলাম এর মধ্যেই মালয়েশিয়া থেকে শ্যাম্পু আমার ঘরে! এক মাস যাবত পুরো টাক জুড়ে শ্যাম্পু ঘষে ঘষে বোতল শেষ করলাম। ঘষার চোটে এক দুই গাছি যাও চুল ছিলো সেগুলোর উঠে যাওয়া ছাড়া আর বিশেষ কোন উপকার হলো না। আমি ওদের নাম্বারে ফোন দিলাম। ফোনই ঢুকলো না ঐ নাম্বারে! ওদের পেইজে গিয়ে নক দিলাম; ওপাশে কোন উত্তর নেই। কয়েকদিন পেইজে কমেন্টে কমেন্টে শুধু শুধুই গালাগালি করে নিজেকে ছোট করলাম। আসলে আমি যে গাধা এইটার প্রমাণ তো প্রডাক্ট কিনার সাথে সাথেই প্রমাণ করে দিয়েছি তাই না? তারপর যথারীতি ঐ পেইজ থেকে আমি ব্লক। বোকারা ব্লক হয়ই। আজকাল চটকদার বিজ্ঞাপনের পেইজটি অনেক খুঁজেছি, না গালাগালি করার জন্য না, বরং একবার সরি বলার জন্য (অনেক গালাগালি করেছিলাম তো! তাই); আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি, গাধা তো পণ্য কিনে হয়েইছিলাম, গাধার গাধা হয়ে গাধার মত ওদের শুধুশুধুই গালাগালি করেছি।।  হায় আমার টাক! আমি এখনো আয়নার দিকে তাকিয়ে আফসোস করি, যদি ঐ শ্যাম্পু ঐভাবে না ঘষতাম তাহলে হয়তো আরও দু গাছি চুল বেশি থাকতো!   


২৩ জুন, ২০২১


#রম্য 


অনলাইন পণ্য

 - যাযাবর জীবন 




দৃষ্টি, শব্দ আর অনুভূতি

ভোর বেলায় পাখির কলকাকলি, চারিদিক কিচিমিচি 

সূর্যের ঘ্রাণ নেব বলে আমি ঘুম ভেঙে বসে আছি 

বাধ সাধলো মেঘের ভেলা, নীলাকাশে ধুসর তুলা 

টিনের চালে ঝুমঝুম তানে, নিঃশ্বাস নিচ্ছি বৃষ্টির ঘ্রাণে  

সকাল বেলাতেই আকাশের কান্না, মন বৃষ্টি 

মানুষ ও পৃথিবী; আল্লাহ্‌ তায়ালার অপরূপ সৃষ্টি; 


আমরা সকাল দেখি, দুপুর দেখি, সন্ধ্যা দেখি, দেখি রাত্রি

প্রহরে প্রহরে আলো আর অন্ধকারের কত রূপ!

মাঝে মধ্যেই ভাবতে গেলে মন হয়ে যায় চুপ,

পাখির ডাক, পশুর ডাক, প্রকৃতিতে আরো কত কত শব্দ! 

কান পেতে পাহাড়, সাগর কিংবা আকাশের ডাক শুনি

আর মন পেতে প্রিয়জনের একটা ডাক শোনার প্রহর গুনি, 

আমরা বৃষ্টি দেখি, ঝর্ণা দেখি, নদী দেখি, দেখি সাগর 

পানিতে পানিতে কতই না পার্থক্য! পানির পথ বয়ে চলা

আর মনের ভেতর অনুভূতিগুলোর সাথে চুপিচুপি কথা বলা,



এই যে চোখ! শুধু কি দেখার? 

এই যে কান! শুধু কি শোনার?

এই যে মন? শুধুই অনুভবের? 

আর আল্লাহ্‌ তায়ালার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষগুলো? 


আমরা সাদা দেখি, কালো দেখি, হলুদাভ, বাদামী কত কত গায়ের রঙ 

মানুষে মানুষে কতই না পার্থক্য, নানা রঙের চামড়া জড়ানো 

আর মানুষ নামেরই অমানুষ দেখি, মানুষের চামড়ায় মোড়ানো; 


একদিন দেখতে দেখতেই চোখ ঘুমিয়ে যাবে 

একদিন শুনতে শুনতেই কান বধির হবে 

একদিন ধুকপুক থেমে গিয়ে হব অনুভূতিশূন্য

আজ দেখে নেই, আজ শুনে নেই, অনুভব করি 

আল্লাহ্‌ তায়ালার কাছে শোকর করি, বেঁচে থাকার জন্য। 




২১ জুন, ২০২১


#কবিতা 


দৃষ্টি, শব্দ আর অনুভূতি 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 






আমে আমে দলাদলি

একটা আম গাছ দাঁড়িয়ে ছিলো, ডালে ডালে আম 

মিলেমিশে বসবাস একসাথে, ভালোবাসার নাম   

কাঁচা আমগুলো টক টক, পাকাগুলো বেশ মিষ্টি 

এক এক আমের এক এক স্বাদ, শুরু অনাসৃষ্টি,  

একদিন জোর হাওয়া এলো, ডালে ডালে বাড়ি 

আটিগুলো আমেরই, তবুও আমে আমে আড়ি 

ঝরে পড়লো কিছু আম, গাছ থেকে টপাটপ 

ঝরে পড়া আটিগুলোতে, নতুন গাছ ঝপাঝপ; 


এক এক আটির গাছ, নতুন নতুন নাম নিলো 

সব আমেরই জাত, শুধু নামগুলো বদলে দিলো  

ল্যাংড়া, হিমসাগর, চোষা, হাঁড়িভাঙা, আম্রপালি

একই আম হয়েও সুরমা আর অশ্বিনী ফজলি,  

যত নামই নেক সবাই আসলে জাতে তারা আম

আটি দেখে কেও বলতে পারে? কোনটার কি নাম

আমেতে আমেতে তর্ক চরম, প্রশ্ন আটিতে আটিতে 

ওহে বাছা, মুখ খোলো; বলো তুমি কোন ঘাটিতে? 

 

ল্যাংড়া যখন জিজ্ঞাসা করে, ওহে আটি তুমি কার?

আটি হেসে কয়, তোমার গাছে যখন তখন ল্যংড়ার

হাঁড়িভাঙা যখন জিজ্ঞাসা করে, ওহে আটি তুমি কার?

আটি হেসে কয়, তোমার গাছে যখন আমি হাঁড়িভাঙার,  

আমের জাতে জাতে, আটিগুলোর লুকোচুরি খেলা 

তোমার দলে, তোমার দলে করে, কাটে ওদের বেলা 

যখন সব আমের মিলিত সভাতে প্রশ্ন, আটি তুমি কার?

আটিগুলোর উত্তর, আমরা আমের; তোরা দলাদলি ছাড়।


২০ জুন, ২০২১


#কবিতা_রূপক 


আমে আমে দলাদলি 

 - যাযাবর জীবন 



মুখোশ ধারি

মানুষের উপকার না হয়, নাই করতে পারি 

নিষ্ক্রিয় থাকায় কিছু মানুষের, অস্বস্তি ভারি  

অন্যের ক্ষতি করতে! এদের নেই কোন জুড়ি

আশেপাশে তাকাও, প্রমাণ মিলবে ভুরি ভুরি;


মানুষই সাহায্য খোঁজে, যখন বিপদে পরে  

বেশীরভাগ মানুষ এগিয়ে আসে, সাহায্য করে

অল্প কিছু মানুষ থাকে, আঙুলি করে হরেদরে 

এরা বিকৃত আনন্দ পায়, ভালো কাজ পণ্ড করে;


আসলে কি পণ্ড করতে পারে? তবু চেষ্টা করে

এরা আমাদেরই লোক, বাস আমাদেরই ঘরে

অন্যের ক্ষতি করতে গিয়ে, বার বার ধরা খায়  

তবু লজ্জা নেই এদের, একই কাজ করে যায়; 


এদের বড্ড চুলকানি, যে কোন ভালো কাজে  

অন্যের ভালো দেখলেই এদের মনে বড্ড বাজে

কারো ভালো দেখতে না পাওয়া, মানসিক বিকৃতি  

একটুও পিছু পা হয় না এরা, করতে অন্যের ক্ষতি; 


এরাও আমাদের মতই মানুষ, মানুষের মধ্যেই বাস

কারো ভালো দেখতে না পারাটা, মনের ভাইরাস 

ওপরে ভালোমানুষির মুখোশ আটা, মুখে মিঠা বুলি  

ভেতরে নিকষ কালো অন্ধকার, অন্তরে বিষের ঝুলি; 


এরা থাকুক এদের মত, চলো আমরা এগিয়ে চলি

মানুষ মানুষের জন্য, এসো মানবতার কথা বলি 

মানবতার আবেদনে চলো আমরাই দেই সাড়া

মুখোশ ধারিদের সাধ্য কি? মানবতা রুখতে পারা।


  

১৮ জুন, ২০২১ 


#কবিতা 


মুখোশ ধারি

 - যাযাবর জীবন  



    

 


ঘুম ছুঁয়ে দেয়া

মৃত্যু ছুঁয়ে দিয়ে গেছে তোমাদের কখনো?

উঁহু! মৃত্যু আসলে কাওকে ছুঁয়ে দিয়ে যায় না

ওটা হঠাৎ করেই আসে, একদম হঠাৎ

ছোঁয়াছুঁয়ি খেলাতে সে নেই

একবারেই আসে, সাথে করে একবারেই নিয়ে যায়;


তাইলে ঐ যে মৃত্যু ছুঁয়ে যাওয়ার কথা বলো কেন তোমরা?

আরে! ওটা কথার কথা, আর শুধুমাত্র একটা অনুভব

অনুভবটা খুব হঠাৎ হঠাৎই আসে, অসুস্থতা কিংবা শারীরিক কারণে 

মনে হয় শরীরটা যেন অবশ হয়ে গেলো  

মনের ভেতরে একটা অনুভূতি আমি যেন মৃত্যুর দোরগোড়ায়

ওটাকে ভুল করে তোমরা মৃত্যুর ছুঁয়ে দেয়া বলো,

তোমাদের হয়েছে এমন কখনো?


একদিন এমনই কোন এক ভুল অনুভূতি ভাবতে ভাবতে 

হয়তো চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকবো,    

সেদিন হয়তো সত্যি সত্যিই ঘুম ছুঁয়ে দিতে দিতে মৃত্যু এসে ছুঁয়ে দেবে আমায় 

তারপর এক অমোঘ টানে, সবার অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়ব চিরঘুমে; 

সেই মৃত্যুর ছুঁয়ে দেয়ার অনুভূতিটা কেমন 

তা তোমাদের বলে যেতে পারব না ফিরে এসে,  

সেই অনুভূতিটা কতটা ভয়ঙ্কর কষ্টের 

তা অনুভব করতে করতেই ঘুমিয়ে যেতে হবে চিরঘুমে;

তোমার

আমার 

তার

ওর 

সবার। 


 

১৬ জুন, ২০২১


#কবিতা 


ঘুম ছুঁয়ে দেয়া 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 








দু রকম আয়না

আয়না কি শুধু চেহারা দেখায়?

হবে হয়তো, 

আমার যখনই চেহারা দেখতে ইচ্ছে করে!  

আমি আয়নার সামনে দাঁড়াই, 

সামনে থেকে পেছন থেকে এপাশ থেকে ওপাশ থেকে  

নিজেকে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে খুঁটে খুঁটে দেখি 

ওটা তো মানুষেরই অবয়ব, না কি? 


আলো বন্ধ করে আয়না দেখেছ? 

না না! আমি ঐ কাঁচের আয়নার কথা বলছি না 

মনের আয়নার কথা বলছি, ওটা সবাই দেখতে পায় না 

আসলে চাইলে দেখতে পায়, তবে বেশিরভাগ মানুষই চায় না

ঐ কাঁচের আয়না আর মনের আয়নার মানুষ দুটোকে মেলানো যায় না

মাঝে মাঝে আমি নিজেও পারি না; 


কাঁচের আয়নায় শুধুই চামড়ার চেহারা 

ত্বকের উজ্জ্বলতার তারতম্য 

আলোর অনুকূলে ও প্রতিকুলে কম আর বেশী, সাদা আর কালো

চুলের পাক, দাঁড়ির ঝাঁক, মোটা কিংবা শুকনো একটা অবয়ব

একটা পুরোদস্তর গোটা চামড়া মোড়া মানুষ, তাই না? 

কাঁচের আয়নায় রক্ত দেখা যায়? অস্থি মজ্জা? হৃদপিণ্ড? মস্তিষ্ক? 

হৃদপিণ্ডের ভেতরের হৃদয় দেখা যায়? 

মস্তিষ্কের ভেতরের বুদ্ধি? 

মানুষের মাঝে উপস্থিত সকল রকম অনুভব আর অনুভূতি? 

প্রেম, ভালোবাসা, মায়া? 

হিংসা, দ্বেষ, স্বার্থ, লোভ আর যত সব রিপুগুলো? 

কাঁচের আয়নায় ওগুলো দেখতে পাও?

কই আমি তো পাই না; 


যখনই আমি মনের আয়না খুলে ওর ভেতর তাকাই!

প্রতিবারই খুব চমকে যাই;

কাঁচের আয়না আর মনের আয়নার ভেতর সম্পূর্ণ বিপরীত দুজন মানুষ'কে দেখতে পাই

একই শরীরে বসবাসরত দুজন, 

অথচ তারা একজন আরেকজন থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন;


ঐ যে কাঁচের আয়নায় ফর্সা রঙ এর মানুষটা দেখছি!

মনের আয়নায় কুচকুচে কালো,

সুন্দর হাসিটার ঠিক নীচেই হায়েনার হিংস্র দন্ত বিকশিত হাসি

দানশীল হাত দুটির ভেতর থেকে সবকিছু ছিনিয়ে নেবার জন্য অদৃশ্য চারটি হাত 

দয়ার্দ্র চোখের ঠিক নীচেই লোভের পাশবিক দৃষ্টি 

ভালোবাসায় পূর্ণ হৃদয়ের ঠিক পাশেই স্বার্থের অনাসৃষ্টি 

বুদ্ধিদীপ্ত কথার প্যাঁচে ভয়ঙ্কর সব সম্পর্ক নষ্টকারি কুবুদ্ধি   

বাতির আলোয় চামড়ার সাধু চেহারাটা বাতি নিভালেই শয়তানের রূপ ধারণ 

একই শরীরের ভেতর কিভাবে দুটি মানুষের একসাথে বিচরণ? 

আমি ভেবে পাই না;


আজকাল আয়না দেখতে আর বাতি নেভাই না

কি জানি! যদি শয়তান বের হয়ে আসে?

কিংবা হঠাৎ করেই অন্ধকারের আয়নায় থাকতে যদি কেউ বাতি জ্বেলে দেয়?  

মুহূর্তেই কি চেহারাটা বদলে নিতে পারব ভালো মানুষীতে? 


আচ্ছা! শয়তানেরও কি লজ্জা থাকে? 

কোন একদিন বাতি নিভিয়ে মনের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবতে হবে। 


১৩ জুন, ২০২১


#কবিতা 


দু রকম আয়না 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





সকালের বৃষ্টিতে মন কেমন কেমন

সকাল হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ

বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে

আমি বারান্দায় এসে দাঁড়াই, 

গাছের ডালের আড়ালে দুটি কাক

ডালের আড়াল বাঁচাতে পারে নি বৃষ্টি থেকে

ওরা ভিজছে

দুজন খুব কাছাকাছি, একজন আরেকজনের সাথে প্রায় লেগে

বৃষ্টির ছাটে ভিজছে,

একটু পর পর দুজন ঠোঁট ঘষাঘষি করে 

ওরা কি চুমু খাচ্ছে?

একটু পর পর দুজন গা ঘষাঘষি করে 

ঠাণ্ডায় কষ্ট হচ্ছে? দুজন দুজনার ওম নিচ্ছে?

নাকি স্পর্শে স্পর্শে ভালোবাসা

স্পর্শে স্পর্শে আশ্বস্ত করা - আমি আছি পাশেই আছি

ভালোবাসার নির্ভরতা?

বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেলো, আমি ঠায় জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছি

ওদের দেখছি, দেখছি ওদের ভালোবাসাবাসি

মনে হলো বৃষ্টিটা কি একটু ধরে এসেছে

ওরা ঠোঁটে ঠোঁটে থেকে ভালোবাসাবাসি শুরু করেছে

আমি কি লজ্জা পেলাম? একটু আকাশের দিকে চোখ দিলাম

ওদের ভালোবাসাবাসিতে কোন লজ্জা নেই

নেই কোন আড়াল

হয়তো মন চাইলো, তাই আদর করলো

বৃষ্টিতে তো মানুষেরও মন কেমন করে

প্রিয়জনের কথা মনে পড়ে 

ভালোবাসাবাসি করতে ইচ্ছে করে

পাখিদের করতে দোষ কি?

মানুষ আড়ালে ভালোবাসাবাসি করে, ওরা করে সবার সামনে

লজ্জাবোধ ওদের থাকবে কিভাবে? ওরা কি কাপড় পড়ে?

মানুষ তো ঠিকই কাপড়ে লজ্জা আবরণ করে;


ঐ যে নীচে রাস্তায় রিক্সায় দুজন কপোত কপোতী যাচ্ছে

রিক্সার হুড তোলা, পর্দা ফেলা  

এত ভোর সকালে? 

কেন নয়? বৃষ্টির সকালে রাস্তায় মানুষজন কম

হয়তো প্রেমে সুবিধা, লোকচক্ষুর আড়ালে! 

হঠাৎ নজর যেতেই দেখি দুজনার ঠোঁটে ঠোঁট একসাথে

বাহ! বেশ মজা তো! 

গাছে কাক দুটি ঠোঁটে ঠোঁটে, নীচে জোড়া ঠোঁটে মানুষ দুটি 

এক দল খোলা আকাশের নীচে লজ্জাহীন হয়ে

আরেক দল পর্দার আড়ালে লজ্জা ঢেকে নিয়ে 

ওরা তো মানুষ! বৃষ্টির দিনে ওদেরও মন কেমন করে

ওদেরও ভালোবাসাবাসি করতে ইচ্ছে করে

কোন দম্পতি জেগে উঠে নি?

বৃষ্টিতে ওদের মন কেমন করছে না?  

ওরা চার দেয়ালের ভেতর ভালোবাসাবাসি করছে না?

ঐ যে রিক্সার ওরা! হয়তো এখনো দম্পতি হয় নি, 

হয়তো ভালোবাসার কপোত কপোতী

রিক্সার পর্দার ভেতরই না হয় সুখ খুঁজে নিক

ওড়নার আড়ালে, লজ্জা ঢাকা দিয়ে;   


আজকাল অবশ্য মানুষের কাপড় ছোট হওয়া শুরু হয়েছে

ছোট হওয়া শুরু হয়েছে লজ্জাবোধ

একটা সময় প্রেম ভালোবাসা কথাগুলোই যেন গর্হিত ছিলো

আজকাল তো বাবা-মায়ের সামনেই ছেলেমেয়েরা প্রেমের কথা বলছে

বলবে না? বাবা-মাও তো সমস্বরে তাল মিলাচ্ছে

মানুষের লজ্জা কাটছে,

আজকাল কাপড় ছোট হওয়া শুরু করেছে 

ছোট হতে হতে কেমন যেন অস্বস্তিকর একটা অবস্থা  

কিছু জায়গায় তো মাত্র দু খণ্ডতে এসে ঠেকেছে

ও সব জায়গায় বড় কাপড়ে প্রবেশ নিষেধ

কিছু কিছু বিনোদনের জায়গা আছে শুনি, সেখানে কাপড় পড়াই নিষেধ

ওসব সামুদ্রিক দ্বীপে সভ্য মানুষগুলো যায় আদিম হতে

ওটাও নাকি এন্টারটেইনমেন্ট

আদিম থাকে, আদিম ভাবে ভালোবাসাবাসি করে 

দু চারদিন আদিম সময় কাটিয়ে আবার সভ্য জগতে ফিরে আসে 

পুরোদস্তর স্যুট টাই লাগিয়ে সভ্য হয়ে,

সভ্যতার বলিহারি! 


ঝুম বৃষ্টি দেখছিলাম বারান্দা থেকে

কত কিছুই না দেখে ফেললাম!

কিছু খোলা চোখে, কিছু অলীক ভাবনায়

মানুষ তো! বৃষ্টি হলেই আমারও মন কেমন করে,

নাহ্ যাই; এক কাপ চা বানিয়ে গৃহিণী'র ঘুম ভাঙাই 

তারপর না হয় চায়ের কাপে দুজন ঠোঁটে ঠোটে। 




 

১১ জুন, ২০২১


#কবিতা 


সকালের বৃষ্টিতে মন কেমন কেমন 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে নেয়া। 


  






 

স্পর্শ ও স্পর্শানুভূতি

স্বামী স্ত্রী সম্পর্কটা এক একটা বয়সে এক এক রকম; 


পারিবারিক সম্পর্কে বিয়ে হলে প্রথম কিছুদিন চলে যায় পরস্পরকে বুঝতে

বোঝাপড়া শেষ হয়ে গেলেই ভালোবাসার ঝড় দুজনের জীবনে

আর প্রেমের বিয়ের ক্ষেত্রে তো সাইক্লোন ভালোবাসা বিয়ের প্রথম দিন থেকেই;   

জীবনের শুরুতে স্পর্শ মানেই কামনার ছোঁয়া, যৌবনের উন্মত্ততা 

রঙিন আবেশে পরস্পরের মাঝে পরস্পরকে খোঁজা 

দিনই কি? আর রাতই কি? সুযোগ পেলেই বিছানা 

ওটা খুব স্বাভাবিক, ঢাকঢোল পিটিয়ে বলার কিছু নেই; 

  

তারপর কামনার ঝড় একটু থিতু হলে ধীরে ধীরে স্পর্শের গভীরতা বোঝা

কেউ স্খলনের পর পরই চট করে উঠে যায়

কেউ জড়িয়ে ধরে রয়

দুটোর অনুভবের পার্থক্য কিছু না কিছু তো কথা কয়!

স্বামী স্ত্রী খুব ভালো বোঝে, তাই না? 


অল্প কিছু সম্পর্কে থাকে রমণে বিবমিষা

কত কারণই তো থাকতে পারে!

দুজনার কিংবা একজনার পূর্ব প্রেম, যা সে ভুলতে পারে না

কিংবা শারীরিক গোপন অসুস্থতা, কাছে আসায় লজ্জা

আমরা সেগুলো'কে না হয় ছকের বাইরে ফেলি;   


তারপর আরেকটু সময় পার হয়

সংসারের প্রয়োজনে কিংবা জৈবিক মেলামেশায় সন্তানের আগমন

জীবনের একটা মোড়, মোড় সংসারের

হঠাৎ করেই স্বামী স্ত্রী সম্পর্কে তৃতীয় আরেকজন ঢুকে যায়

স্ত্রীর হাতটা পড়েই থাকে আলতো ভাবে সন্তানের ওপর, মা বলে কথা!  

স্বামীর হাত স্ত্রীকে খুঁজতে গিয়ে সন্তানের ওপর পরে 

ডিম লাইটের আধো আলোতে সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে কামনাটুকু মরে

তারপর সন্তান একটু বড় হওয়া পর্যন্ত কালেভদ্রে; 


সন্তান আরেকটু বড় হলে ওর জন্য আলাদা ঘর

আবার একসাথে স্বামী স্ত্রী 

সেই প্রথম দিকের ঝড়টা কিন্তু আর শরীরে ওঠে না 

প্রেমে থিতু ভাব না আসলেও ততদিনে শরীরে কিছু থিতু ভাব তো চলেই এসেছে!

সেই প্রথম প্রেমের পাগলামি এখন করলে কি চলে?

স্বামী স্ত্রী অনেকটা পরিপক্ব, পরিপক্ব দাম্পত্য সম্পর্ক 

আরেকটা সন্তান নেবে কি নেবে না সিদ্ধান্ত নেবার পালা এবার ঠাণ্ডা মাথায়

যারা নিবে বলে মনস্থির করে তারা ও পথে এগোয়  

নাইলে দুজন মন দেয় প্রথম সন্তানকে মানুষ করায়,

দাম্পত্যে আজকাল সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন কামনা 

বাকি দিনগুলো বিছানায় শুয়ে পরস্পর স্পর্শানুভবে;


এই যে স্পর্শানুভব! এটা কিন্তু এক এক দম্পতির এক এক রকম;


ঐ যে এক ধরণের দম্পতির কথা বলেছিলাম! ছকের বাইরে,

স্পর্শানুভূতিটা আসলে কখনো কোথাও স্পর্শই করে নি

অনুভবই যে হয় নি! 

ওদের বেশিরভাগের হয়ে গেছে ছাড়াছাড়ি

আর গোনা গুনতি যে কয়টি দম্পতি আছে তাদের অনুভূতি জানে কোলবালিশ, 

থাকুক! আমরা না হয় কোলবালিশকে কিছু নাই জিজ্ঞাসা করি! 


কিছু দম্পতি আছে সারারাত জড়িয়ে থাকে পরস্পর, বুকে মিশে

কিছু দম্পতি আছে সারারাত স্পর্শে থাকে শরীরে কোন না কোন অংশ ছুঁয়ে 

কিছু দম্পতি আছে রমণের পর আর স্পর্শ সহ্যই করতে পারে না

কিছু দম্পতি আছে স্পর্শ নেয় কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে 

কিছু দম্পতি একই বিছানায় রাত কাটায় মধ্যে কোলবালিশ সীমানা করে

আর কিছু দম্পতি আছে, রাত তো একই ঘরে কাটায়! তবে দুজন দু বিছানায় শুয়ে

আমি পরকীয়া, ঝগড়া বিবাদ, মনোমালিন্য এগুলোর কথা এখানে নাই আনলাম, 

এভাবেই কেটে যায় মধ্য বয়স থেকে প্রৌঢ়ত্ব পর্যন্ত;


যারা পরস্পর স্পর্শে ছিলো তারা তো এক হয়েই আছে! 

আর যারা বিভিন্ন কারণে স্পর্শানুভূতি থেকে সরে গিয়েছিলো!

তারা একটা সময় এসে পরস্পরের স্পর্শ খোঁজে, 

হ্যাঁ, প্রৌঢ়ত্বের দোরগোড়ায় এসে ঠিক দুজন দুজনকে খোঁজে 

তখন আর কাম কোথায়? শুধু মাত্র একটু হাতের স্পর্শ

একটু সাহচর্য, একটু নির্ভরশীলতা, পাশে কেউ তো আছে! ওটুকুই আস্থা

আবার তারা এক হয় দুজন দুজনার স্পর্শে 

আবার এক হয় দুজন একসাথে

এবার বিচ্ছেদ মৃত্যুতে।  

   

১০ জুন, ২০২১


#কবিতা 


স্পর্শ ও স্পর্শানুভূতি 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 






কবরের ডাক

প্রায় প্রতিদিনই একটা না একটা মৃত্যু সংবাদ

প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ ছেড়ে যাচ্ছে জীবন স্টেশনটা 

হ্যাঁ! যাদের কথা বলছি এরা আমারই আশেপাশের বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজন

কিংবা খুব কাছের কোন আপন জন;


এটা ঘটে আসছিলো আরও অনেক অনেক আগে থেকে 

আমরা খুব একটা আমলে নেই নি 

তখন হয়তো  ভার্চুয়ালে এত গভীর যোগাযোগ ছিলো না 

কিংবা হয়তো যোগাযোগ থাকলেই খবরগুলো চোখ এড়িয়ে যেত

কিংবা আমরা খবরগুলোকেই এড়িয়ে যেতাম;


কে মরলো আর কে বাঁচলো তা নিয়ে মাথা ঘামাবার  আমাদের সময়টাই ছিলো কোথায়? 

কিন্তু আজকাল? 

ঐ যে খুব কাছের বন্ধু বান্ধব, খুব কাছের আত্মীয় স্বজন

খুব হুটহাট চলে যাওয়া 

আর নেটে চোখ যাওয়া মাত্র একের পর এক 

কাছের মানুষগুলোর মৃত্যু সংবাদের ফেসবুক ফিড ভরে ওঠা, 

ওগুলো এড়াবো কি ভাবে?

কিছু কিছু দিনে ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন 

একবার কপি করে কতবার যে পেস্ট করেছি তা মনেও করতে পারব না 

অথচ ওরা সবাই ফেসবুকে খুব কাছের মানুষ ছিলো, কিংবা বাস্তব জীবনে; 


এই যে ওদের হুটহাট চলে যাওয়া! 

আজকাল এগুলো এত বেশি চোখে পড়ে কেন? 

আরে বন্ধুর চলে যাওয়া চোখে পড়বে না? 

ও তো আমারই সমবয়সী

মনের ভেতর কোথাও কি একটা ভয় কাজ করে না? 

আমার ডাক আসলো নাকি?

 

হ্যাঁ, মৃত্যুর মিছিল দেখলে তো চিন্তা লাগেই, একটু ভয়ও কি লাগে না?

আমার তো লাগে?

আমি কতটুকু প্রস্তুতি নিয়েছি?

এই যে জীবন স্টেশনটা ছেড়ে কবর স্টেশনে রওয়া দিয়েছি! 

ওখানকার রসদ কতটুকু সাথে নিয়েছি?

ওখানকার সওয়াল জবাবের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাচ্ছি! 

শুনেছি ওখানকার প্রশ্নকর্তা নাকি ভীষণ কড়া

একটা উলটাপালটা উত্তর দিলে নেমে আসে খড়া 

আজাব থেকে বাঁচতে পারব তো! 

নিজের আমলনামার দিকে চেয়ে বড্ড ভয় করে;


হে মহান আল্লাহ্‌ তায়ালা

আমাকে আরেকটু সময় দিন, আর অল্প একটু প্রস্তুতি নেবার!  

হায় আমরা শুধু প্রার্থনাটুকুই করতে পারি, আরেকটু সময়ের জন্য

অথচ মৃত্যু একটা অমোঘ গাড়ি

একটা সেকেন্ড দেরি করে না জীবন স্টেশনে;


একদিন খুব হঠাৎই আমার সামনে গাড়িটা এসে থামবে

এক টানে উঠিয়ে নিয়ে বলবে, চল;


টিক টিক টিক টিক বালুঘড়ি থেকে বালু ঝরছে

টিক টিক টিক টিক বালুঘড়ি থেকে বালু ঝরছে

একটা সময় টিক টিক টিক টিক ঘড়ির কাঁটার শব্দ থেমে যাবে 

কবর ডাকছে নিঃশব্দ চিৎকারে......... 

আয় আয় আয়।


০৮ জুন, ২০২১


#কবিতা 


কবরের ডাক 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




একজন, খুব আপন

চোখ মনের কথা বলে 

যে চোখ পড়তে পারে সেই জানে,   

এই হঠাৎ হঠাৎ বাতি নেভানোর কথাতেই তুই ঠিক বুঝে যাস 

তোকে চুমু খেতে ইচ্ছে করছে 

চোখ না পড়তে পারলে কি কাছে আসতি? 


মন মনের সাথে চলে 

যে মন বুঝতে পারে সেই জানে, 

এই যে বাইরে তুমুল বৃষ্টি! 

আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই তুই এসে হাত ধরলি

বললি, চল ভিজি

ঝুম বৃষ্টি হলেই আমার যে ভিজতে ইচ্ছে করে 

তা তোর থেকে কে আর ভালো জানে?

মন পড়তে না পারলে কি আর ভালোবাসতি? 


আমরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে শুধু চোখ চেয়ে থাকি 

কাছের মানুষটা কি করছে দেখি

চোখ পড়ার চেষ্টা করি কি?

মুখ মিথ্যে বলতে পারে, চোখ পারে কি?


আমরা শরীরের দিকে তাকিয়ে থাকি 

পাশের মানুষটা কি করছে দেখি

মন বোঝার চেষ্টা করি কি? 

কালো শরীরের মাঝে সাদা মনটা কয়জন দেখেছি? 


কেউ কেউ চোখ পড়েই মানুষের অনুভূতি বুঝে নেয়

কেউ কেউ মন বুঝেই একটা মানুষটাকে আপন করে নেয়,  


আমরা রাগে তেতে ওঠার তুলনা দেই প্রখর রোদের সাথে

অথচ ঠিক পাশের ছায়াটুকু চোখ এড়িয়ে যায় 

আমরা কান্নার তুলনা দেই বৃষ্টির সাথে 

রঙধনুটা অনেকে দেখতেই পায় না 

আমরা চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকি 

জ্যোৎস্না অনুভব করতে পারি ক'জনা? 


অথচ কেউ না কেউ তো কোথাও না কোথাও থাকেই

অন্তত একজন হলেও থাকে,  

যে তেতে ওঠা মাথায় হাত বুলোলেই মন মেঘ  

যে বুকফাটা কান্নায় জড়িয়ে ধরলেই মন শান্ত 

যে জ্যোৎস্নায় একসাথে চাঁদে চরকা-বুড়ি দেখে, 

একজন

খুব আপন;  


এই যে একজনের চোখের দিকে চেয়ে তাকে বুঝে ফেলা 

এই যে অনুভূতি দিয়ে একজনের মন পড়ে নেয়া! 

এগুলোর কি কোন নাম আছে?

তোমরা ভালোবাসা বলো কাকে? 


০৭ জুন, ২০২১


#কবিতা 


একজন, খুব আপন 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





পিছু কথা

ও কেন এত এগিয়ে গেছে?

আমি কেন পেছনে?

বড্ড মনঃকষ্ট;  


কিছু কিছু মানুষ আছে, যারা এগিয়ে যায়

ওটা অল্প কিছু মানুষের স্বভাব 

এরা এগোবেই,  

কিছু কিছু মানুষ আছে, পিছু টেনে ধরে

ওটাও তাদের স্বভাব

এরা পিছুবে না তো পিছুবে কে? 

যারা এগিয়ে যেতে চায়, তারা এগিয়েই যায়

আর যারা পিছু টেনে ধরে তারা পিছু পিছুই হাঁটে

ঐ এগিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর পিছু;


এরা কি শুধু পিছু হাঁটে?

উঁহু, এরা এগিয়ে যাওয়ার মানুষগুলোর পিছু টেনে ধরে, 

নিজের এগিয়ে যাবার মুরোদ নেই বলে? 

নাকি অন্যের এগিয়ে যাওয়ায় ঈর্ষায় জ্বলে জ্বলে?

পিছু কথা অন্যের জন্য যতই বিষ হোক এদের মুখের বুলি

এরা ক্রমাগত দোষ খুঁজে আর পিছু কথার চালাচালি; 


এরা দোষ খুঁজে কেন? নিজের গুন নাই বলে? 

উঁহু! এটাই ওদের স্বভাব; দোষ খুঁজতে পারে ক জনা? 

অন্যের দোষ ধরতে পারা! এটাও কি একটা গুন না? 

পিছু কথায় কাজ না হলে পিছু টেনে ধরা 

তাতেও কাজ না হলে কিছু অপবাদের কালি

এদের কাছে অপবাদের কলম তৈরিই থাকে 

যখন আর কিছুতেই ঐ সামনের সারির মানুষগুলোর 

সামনে যাওয়া আটকাতে পারে না,  

ঠিক তখনই অপবাদের কালো কলম খুলে দেয়

লিখতে না পারুক কিছু কালি তো ছিটিয়ে দেয়!

ওতেই তাদের তুষ্টি;


যারা সামনের সারির তারা সামনেই থাকে

পিছু কথায় পিছু টেনে ধরা মানুষগুলো পেছনেই পরে থাকে। 




০৬ জুন, ২০২১



পিছু কথা 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 







   

স্মৃতিতে স্মৃতিতে

একটা করে নিঃশ্বাস নিচ্ছি বুক ভরে

অক্সিজেন টেনে নিচ্ছি ফুসফুসে

একটা করে প্রশ্বাস ছাড়ছি বুক থেকে 

কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে দিচ্ছি শরীর থেকে,  

প্রতিনিয়ত দমে দমে, সেই জন্মের পর থেকেই

আচ্ছা কোন একটা সময়ে এসে যদি নিঃশ্বাস নিতে না পারি তবে কি হবে? 


এই যে গতকাল আমারই এক বন্ধু চলে গেলো!

চলে গেলো মানে কিন্তু একবারেই চলে গেলো 

জীবন নামক স্টেশনটা ত্যাগ করে

শরীর নামক গাড়িটাকে পরিত্যক্ত শব করে,  

তার মত প্রতিদিনই কেউ না কেউ চলে যাচ্ছে

না বলে না কয়ে এই যে হুটহাট প্রিয় মানুষগুলো চলে যায়!

আমাদের কি কিছু শিক্ষা দিয়ে যায়? 

অথবা আমরা কি মৃত্যু নিয়ে কিছু ভাবি?


এই যে আজকে তোমাদের সাথে কথা বলছি  

কালকে বলব কি না নিশ্চয়তা দিতে পারি?

এই যে এখন তোমাদের সাথে কথা বলছি!

একটু পর আর বলব কি না তারই কি নিশ্চয়তা আছে? 

জীবন আর মৃত্যুর মধ্যে তো ফারাক ঐ একটি নিঃশ্বাস

বুকের ওঠানামা চলতে চলতে খুব হঠাৎই থেমে গেলে

তোমরা চাদর দিয়ে ঢেকে দেবে মৃত বলে

অথচ একটু আগেও কথা বলছিলাম তোমাদের সাথে

এখন আর আমি মানুষ নেই, শব হয়ে গিয়েছি 

নিঃশ্বাস ও প্রশ্বাসে বুকের ওঠানামা বন্ধ হয়ে গিয়ে; 


এই যে এত এত বন্ধুবান্ধব! 

কেউ কেউ একদিন দুদিন মুখে উহ্ আহ্ দুঃখবোধ করবে  

কেউ কেউ সপ্তাহ ধরে মনে করবে, আত্মীয় স্বজনরা হয়তো আরেকটু বেশি 

স্ত্রী পুত্র কন্যারা সময় সময় মনে করবে

তারপর একটা সময় তাও স্মৃতি হয়ে যাবে

শুধু তাদেরই মনে পড়বে তাও খুব মাঝে মাঝে,

জীবনটা এমনই, এগিয়ে চলা 

সময় সময় পুরনো স্মৃতিগুলো মনে করে। 


০৫ জুন, ২০২১


#কবিতা 


স্মৃতিতে স্মৃতিতে 

 - যাযাবর জীবন 





তাহাদের দিনরাত্রি

সেই কাকভোর থেকে শুরু, 

ফজরের আজান শোনা মাত্র ওরা উঠে গেছে

নামাজ পড়ে নাস্তার আয়োজনে 

সাহেব মেমসাহেব অফিসে যাবেন, বাচ্চাগুলো স্কুলে

কত কাজ! এখন না উঠলে কি কুলোনো যাবে? 


দুপুরে অনেকগুলো রান্নার আইটেম, প্রায় প্রতিদিনই কাছাকাছি রকম  

মুরগীটা বাচ্চাদের বড্ড প্রিয়, প্রায় প্রতিদিনের মেন্যুতেই থাকে 

মাঝে মধ্যে গরু কিংবা খাসি ভুনা, সপ্তাহে এক বা দুদিন  

বাড়ির কর্তা মুরগী খেতে পারে না, ওনার জন্য প্রতিদিনই কোন না কোন মাছ 

বেগম সাহেবার আবার সবজি ছাড়া চলেই নাই, দুই পদ ভর্তা, একটা ভাজি

রাতে সাহেব আর বেগম সাহেবার জন্য লাল আটার রুটি

আজকাল লাল আটার বেশ চল হয়েছে, বাচ্চাগুলোর ভাতেই চলে;


দুপুরে ছেলে মেয়েগুলো যে যার সময়ে লাঞ্চ করে নেয় বাসায় কিংবা বাইরে 

রাতে সবাই মিলে এক টেবিলে, কিছু কথায় কিছু গল্পে কিছু হাসিখুশি সময়

যে যার পছন্দ মত সবজি কিংবা মাছ অথবা মাংসের ডিশে, ভাত কিংবা রুটিতে

সবার খাওয়া হয়ে গেলে টেবিল গুছিয়ে, খাবারদাবার ফ্রিজে উঠিয়ে

কাজের মেয়েগুলো রান্নাঘরের মেঝেতে বসে, রাতের খাবারে; 


এক এক বাসার পরিস্থিতি এক এক রকম

এক এক বাসার পরিবেশ এক এক রকম 

কোন কোন বাসায় কাজের মেয়ে একজন কোন কোন বাসায় দুজন 

অনেক বাসায় আবার ছুটা বুয়াতেই চালিয়ে নিতে হয়;  

কোন কোন বাসাতে কাজের মেয়েগুলোর খাবার আলাদা বেড়ে দেয়া হয় 

হাজারে একটা বাসায় এরা নিজের ইচ্ছেমত খায়, সবার জন্য যা রান্না হয়   

আর বেশীরভাগ বাসায় ওদের বরাদ্দ উচ্ছিষ্ট,  ভাতটা কমন থাকে 

তরকারি বলতে মুরগীর পাখনা, ঠ্যাং, গলা কাঠি; না খাওয়া মাছের লেজের কিছু অংশ 

পাতিলার তলানিতে পড়ে থাকা কাঁটাগুলো কে খাবে? এরা না খেলে কি ফেলে দেবে?

গতকালের কিছু বাসি খাবার রয়ে গেছে, খাবার কি আর নষ্ট করা যায়! 

দুপুরের সব্জিটায় কি একটু গন্ধ উঠেছে? দেখ তো তোরা খেতে পারবি কি না! 

খুব ক্বচিৎ কদাচিৎ বেগম সাহেবা মাছের একটা দুটো টুকরো দেন     

বাড়িতে এরা সংখ্যায় যদি একাধিক হয় তবে সবাই মিলে তাই ভাগ করে, খুব তৃপ্তির সাথে 

যার যার বাড়ির গল্পে মেতে, ওদেরও তো কিছু গল্প থাকে! 

দেশের বাড়ির গল্প, মা-বাবার গল্প, ভাই-বোনের গল্প  

রান্নাঘরে খাবারের সাথে গল্পগুলোও নিজেদের মধ্যে এরা ভাগ করে, আবেগের সাথে

খাবার খেতে খেতে সেই অনেক রাত, এবার শুয়ে পড়তে হবে

আবার কাল কাকভোরে ঘুম থেকে ওঠা, সেই ধরাবাঁধা প্রতিদিনের রুটিন; 

  

যার যার বাড়ির কাজের মেয়েগুলো তাদের মেম সাহেবাদের ব্যাবহার চেনে 

যার যার বাড়ির কাজের মেয়েগুলো তাদের সাহেবদের চরিত্র জানে 

যার যার বাড়ির কাজের মেয়েগুলো সাহেবদের ছেলেদের ভালোমন্দ দৃষ্টি বুঝে

যেসব বাড়ির সাহেব ও সাহেবের ছেলেদের চরিত্রে দোষ আছে   

সেসব বাড়িতে এরা বড্ড অসহায়, বেশিরভাগ মেনে নেয় যার যার অসহায় অবস্থা

আর অল্প কিছু কাজ ছেড়ে নতুন বাসার খোঁজে, অন্নের সংস্থান তো করতেই হবে 

নিজের ও দেশে থাকা বাবা-মা, ভাই বোনের জন্য; 


আচ্ছা! এই যে আজকাল আলিশান সব ফ্ল্যাট বাড়ি উঠছে! 

ওরা কোথায় থাকবে কারো চিন্তায় এসেছে?  

নাকি চিরাচরিত রান্নাঘরই এদের ঠিকানা হয়ে থাকবে?

খুব হাতেগোনা হাজারে একটা বাড়িতে রান্নাঘরের সাথে আলাদা একটা ছোট্ট কামরা 

আর বাকি সবার ভাগ্যে তেলাপোকা দৌড়ানো স্যাঁতস্যাঁতে রান্নাঘরের মেঝেতে বিছানা;  

একটা আলাদা বাথরুম! ওদেরও তো যেতে হয়! 

কমন বাথরুমে কি আর মেহমানের সামনে যাওয়া যায়? 

বাসায় মেহমান আসলে কতক্ষণ চেপে রাখা যায়? বোঝার কেউ আছে?  


আমরা মানবিকতার কথা বলি মানুষের সামনে মুখে ফ্যানা তুলে

কখনো কি উঁকি দিয়েছি নিজের ঘরে? 

আরে! কে বললো উঁকি দেই না? 

চোরচোখে সাহেব উঁকি দেন বেগম সাহেবা ঘরে না থাকলে   

বেগম সাহেবা উঁকি দেয় চোখে চোখে রাখতে, কিছু চুরি করে নিয়ে গেলো না তো! 

বাসার কিছু হারানো গেলে চোর বদনামটা এদের কপালেই জোটে

ফলশ্রুতি? গঞ্জনা, মারধর তারপর বেতনটা না দিয়েই ঘাড়ধাক্কা 

জীবন তাড়িয়ে নিয়ে যায়, এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে 

পেট চালাতে গেলে কাজ তো করতেই হবে

মুখ বুজে সব সয়ে।  

    

০৪ জুন, ২০২১


#কবিতা 


তাহাদের দিনরাত্রি  

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





প্রেমের পাঁচ

প্রেম 

অনেকেই করে 

একটা মানবিক অনুভূতি 

সবাই করলে হয় হরেদরে 

আমি কিন্তু ঠিকই প্রেম করছি   

অন্যে করলেই খুঁত ধরি

কেন এসব করি? 

ভালো লাগে? 

ঈর্ষাহ্নিত  


ইগো

অনুভব মনের  

কারণ সম্পর্ক ভাঙ্গনের  

অথচ জেনেশুনেই করছি নিত্য 

ভালোবাসা নামক সম্পর্কের হচ্ছে বিচ্ছেদ

তবুও কামরে ধরি ইগোকে 

দুজন দুপাশ থেকে

তারপর কাটাই 

একাকীত্ব   


সম্পর্ক

চিরস্থায়ী নয়

পুরনো সম্পর্কগুলো হারায়

নতুন নতুন সম্পর্কগুলোর ভিড়ে 

পুরনো অনুভূতিগুলো ফিকে হয় ধীরে 

জীবন এমনই জীবনের মোরে  

স্মৃতিগুলো পিছু রেখে  

সম্পর্ক এগোয় 

নতুন  


ছোঁকছোঁক 

আলুর দোষ 

কম আর বেশি 

সবার মাঝেই থাকে কিছু 

মেয়ে আর ছেলে, আলুক্ষেত আলুচাষি 

তবুও পরস্পরের প্রতি টান 

দোষ দিচ্ছ নাকি?

এটাই স্বাভাবিক 

মন 


শরীর 

নিয়ে খেলতে

সবসময় ভালো লাগে? 

অনেকেরই তো দেখি লাগে   

ওরা শরীরে শরীরে খেলা করে 

দোষ হয় বেচারি রাধিকার 

রাধিকাকে বেশ্যা বলো! 

তুলসীপাতা তোমরা?  

আধোয়া  


০১ জুন, ২০২১


#কবিতা 


প্রেমের পাঁচ 

 - যাযাবর জীবন   


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





পরিবর্তিত জীবন

এক একটা সময়ে মানুষের মন এক এক রকম

মনের পরিবর্তন বয়সের সাথে সাথে, এটাই স্বাভাবিক  

কালকে'র আমির সাথে আজকের আমি'র ফারাক বিশাল 

পরিবর্তন মানসিকতার, পরিবর্তনটা ব্যক্তি কেন্দ্রিক;  


পরিবর্তন যে কোন সময়ই আসতে পারে যে কারো মনে 

মুহূর্তের ব্যবধানে, কারণে আর অকারণে

অকারণে আদতে কি পরিবর্তন আসে?

কিছু না কিছু কারণ তো থাকেই পরিবর্তনে;


কিছু একটা কারণ তো ঘটেই জীবনে, খুব হঠাৎ করেই  

নিজেকে বদলে ফেলার, নিজেকে শুধরে নেয়ার

বেশিরভাগের বদল ভালোর দিকে, সময়ের হাত ধরে 

কাল আর আজ'কের আমি'র মধ্যে পরিবর্তন ভীষণ

বয়সের কারণে কিংবা আয়নায় নিজের ভুল দেখতে পেয়ে 

অথবা অসুস্থতায়, আর না হয় মৃত্যুকে অনুভব করে;   


আর খুব অল্প কিছু মানুষ ভালো থেকে খারাপের পথে হাঁটে

খুব নির্দিষ্ট কিছু কারণে, সে যে কোন কিছুই হতে পারে

এই যেমন হঠাৎ জীবনে কোন আঘাত, ফলশ্রুতি মনে ঘৃণা ভাব

অথবা সংসারে অশান্তি, পরকীয়ার হাতছানি, লোভ লালসা 

আর না হয় হঠাৎই কোন রিপুর আঁচর যখন মস্তিষ্কে কেটে বসে 

যে কোন কারণেই আমার মনে আজ ভালোমানুষির অভাব; 


কারণটা হোক না যতই তুচ্ছ কিংবা বিশাল, হয়েছে পরিবর্তন 

ওটা বদলে দিয়েছে কালকের তুমি আর আজকের তুমি'কে

খুঁজো না কালকের আমির মাঝে আজকের আমি'কে 

বদলে গিয়েছি আমরা, বদলে গিয়েছে আমাদের জীবন। 


০১ জুন, ২০২১


#কবিতা 



পরিবর্তিত জীবন 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত।  





কেমন আছ?

কেমন আছ?

 - হেসে উত্তর দেই, ভালো


তুমি কেমন আছ?

 - সে হেসে প্রতি উত্তর দেয়, ভালো; 


আসলে কি আমরা ভালো আছি? 

এই যে নিত্য দিন এত এত দুঃখ কষ্ট বুকে চেপে ক্রমাগত বলে যাচ্ছি

 - ভালো আছি 

 - ভালো আছি

আয়নার মানুষটাকে এ কথা বলতে পারছি?

পারছি না, তবুও মানুষের সামনে শুকনো কিংবা হাসি মুখে বলে যাচ্ছি ভালো আছি; 


আমার জীবনে কি হচ্ছে তা আমিই জানি

ওখানে পারিবারিক অশান্তি

ওখানে সন্তান'দের নিয়ে টেনশন

ওখানে বাবা-মায়ে ঝগড়া, ঝগড়া সন্তানে সন্তানে 

ওখানে ভাই-বোনে ঝগড়া, ঝগড়া শাশুড়ি-বৌ এ  

ওখানে বিপর্যস্ততা অসুখ বিসুখে, বিপর্যস্ততা আর্থিক অস্বচ্ছলতায়

কারো ঘরে হয়তো নুন আনতে পান্তা ফুরোয় 

কারো হয়তো মাথার ওপর ছাদটাই টিকিয়ে রাখা দায়

তবু কেউ যদি প্রশ্ন করে, কেমন আছ? 

 - শুকনো কিংবা হাসি মুখে উত্তর দেই, ভালো আছি;


এটা কি ভালো থাকা না প্রিটেন্ড করা? 

আচ্ছা! হিপোক্রেসি হয়ে যাচ্ছে না তো?

নাকি নিজেই নিজেকে একটু ভালো থাকার সান্ত্বনা? 

উঁহু! তা কেন হবে?

ঐদিকে একবার তাকিয়ে দেখি!

হ্যাঁ! ঐ দিকে; 


ঐ যে ওদিকে দেখ!  

হ্যাঁ! ঠিক তোমার পাশের বাসাতেই;

 - তুমি জানো ওদের ঘরে খাদ্য নেই 

 - ওদের মাথার ওপর টলোমলো ছাদ

 - ওদের ঘরে আরও বেশি ঝগড়া, আরও অশান্তি

 - মরণঘাতি রোগ কেড়ে নিয়েছে ওদের সহায় সম্বল; 

আমি কি ওদের থেকে ভালো নেই? 

 - হ্যাঁ! ওদের থেকে ভালো আছি

 - আলহামদুলিল্লাহ্‌

 - আলহামদুলিল্লাহ্‌ আমি ভালো আছি;   

  

ঐ যে ভিক্ষুকগুলো দেখ!      

হ্যাঁ! ঘর থেকে বের হলেই যাদের তোমার চোখে পড়ে 

 - ওরা আহার জোটাতে ভিক্ষা করে  

 - ওদের মাথার ওপর কোন ছাদই নেই 

 - অসুখ বিসুখ ওদের ঘরে ঘরে, ওরা বিনা চিকিৎসায় মরে 

 - হয়তো নদী ভাঙন কিংবা অন্য কোন কারণ আজ ভিক্ষুক বানিয়েছে ওদের 

আমি কি তাদের থেকে ভালো নেই? 

 - হ্যাঁ! তাদের থেকে অনেক ভালো আছি

 - আলহামদুলিল্লাহ্‌

 - আলহামদুলিল্লাহ্‌ আমি অনেক ভালো আছি;    


ঐ যে ওদের দিকে তাকাও! 

যাদের তোমরা রোহিঙ্গা বলো

কিংবা ঐ যে ওরা! 

বসনিয়ায়, ফিলিস্তিনে মরছে কাতারে কাতারে!     

হ্যাঁ! নিউজে টিভি চ্যানেলে প্রতিদিন আমরা ওদের দেখছি

দেখছি ওদের ওপর বর্বরতা, অমানবিকতা 

আর রিফ্যুজি হয়ে যাওয়ার করুণ সব কথোকতা,    

আমি কি তাদের থেকে ভালো নেই?

 - হ্যাঁ! তাদের থেকে অনেক অনেক ভালো আছি

 - আলহামদুলিল্লাহ্‌

 - আলহামদুলিল্লাহ্‌ আমি অনেক অনেক ভালো আছি;  


কেমন আছ? 

কথাটা কেউ জিজ্ঞাস করলেই 

এই যে শুকনো কিংবা একটু হাসি মুখ করে বলি - ভালো আছি!  


কেন? মহান আল্লাহ্‌ তায়ালার শোকর করে মন থেকে বলতে পারি না?  

 - আলহামদুলিল্লাহ্‌ 

 - আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভালো আছি 

 - আলহামদুলিল্লাহ্‌ আমি অনেক ভালো আছি। 

 - আলহামদুলিল্লাহ্‌ আমি অনেক অনেক ভালো আছি। 


৩১ মে, ২০২১


#কবিতা 


কেমন আছ?

 - যাযাবর জীবন 



ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত।