অনলাইন পণ্য, কিনে হোন ধন্য।
খারাপ বললাম কি কিছু?
এই যে আজকাল ফেসবুকে ঢুকলেই হাজার রকম পণ্যের বিপণন! কয়টি পণ্য আসলে কেনার যোগ্য? কয়টি পণ্যেই বা অনেকদিন ধরে সফল ভাবে ব্যবসা করে যাচ্ছে? খুব ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যায় হাতে গোনা অল্প কিছু কোম্পানি ছাড়া বাকিগুলোর বেশীরভাগই ভুয়া। চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ক্রেতা সাধারণের মনে প্রথমে একটা কৌতূহল জাগিয়ে তোলে; একবার কোনও একটায় লাইক দিলো তো সেই টাইপের সকল পণ্যের বিজ্ঞাপনে ভরে ওঠে নিউজ ফিড। মনে কর কেউ কোন একটা অনলাইন খাবারের কোন পেইজে লাইক দিলো, এরপর থেকেই দেখবে সম জাতীয় যত খাবার অনলাইন প্রমোশন হয় তার সবগুলো একের পর এক তোমার টাইমলাইন জুড়ে। কোন একটা কাপড়ের পণ্যে লাইক দেও! সকল অনলাইন পোশাক চলে আসবে তোমার ফিড ভরে। কি বিশ্বাস হলো না? একবার দিয়েই দেখ না!
চটকদার বিজ্ঞাপনের কথায় মাথায় এলো, আমি নিজেও কি চটকদার বিজ্ঞাপনে আকর্ষিত হই নি? আরে বাবা হয়েছি। কতবার যে হয়েছি! তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই। অল্প কিছু সময় ছবির সাথে, বিজ্ঞাপনের দেখানো পণ্যের কাছাকাছি পণ্য হাতে পেয়েছি আর বেশিরভাগ সময় খেয়েছি ধোঁকা, হয়েছি বারে বারে বোকা। তবুও ঐ যে! ঐ সব চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়েছি আর নতুন নতুন পণ্য অর্ডার করেছি (প্রয়োজন থাকুক আর নাই থাকুন)।
তা যা বলছিলাম, ঐ চটকদার বিজ্ঞাপনের কথা। গত বছরের কথা। একবার হঠাৎ করেই ফিডে একটা বিজ্ঞাপন দেখলাম। কিসের বিজ্ঞাপন? আরে বাবা চুল গজানোর বিজ্ঞাপন! চটকদার বিজ্ঞাপনে দেখলাম মেয়েদের চুল বড় হতে হতে মেঝেতে গড়াচ্ছে। এক আধবুড়ো টাক মাথার ব্যক্তির পাশেই, দারুণ হ্যান্ডসাম মাথা ভরা চুলের এক যুবক দাঁড়িয়ে আছে গর্বিত ভাবে। বিজ্ঞাপন দেখে দৌড়ে আয়নার সামনে গেলাম। আমার টাকের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। :( আহা! আমারও যদি ওখানে অল্প কিছু, ঐ মাত্র অল্প আরেকটু চুল গজাতো! ঐ যে বিজ্ঞাপনে বলা আছে, ওদের শ্যাম্পুটি এক ফাইল ব্যবহারেই অর্ধেক টাক জুড়ে চুল গজানো শুরু করে দেবে। দ্বিতীয় ফাইল ব্যবহারে আমি নাকি পুরো যুবক হয়ে যাব। আহা! স্বপ্নে স্বপ্নে মাথা ভরা চুল দেখছি আর আমার যৌবনের মাথা ভরা চুলের কথা স্মৃতিতে ভাসছে। আবেগে প্রায় চোখে পানি চলে আসলো। আমি দৌড়ে গিয়ে তুরন্ত ম্যাসেজ করলাম তাদের ইনবক্সে। ভাইইইইইইইইইই! আমিও চাইইইইইইইইইইইই। আমার টাকটাকে ঢেকে দেন গো ভাইইইইইইইই। সম্ভবত রাত বারোটার দিকে মেসেজ দিলাম, আমার মোবাইল নাম্বার দিয়ে (ওখানে বলা ছিলো মোবাইল নাম্বার দিয়ে মেসেজ করতে)।
ওমা! পাঁচ মিনিটের মধ্যেই মোবাইলে ভেসে উঠলো মালয়েশিয়ার একটি নাম্বার। কেউ ডাকছে আমায় মালয়েশিয়া থেকে। প্রথমে মনে করলাম হয়তো মালয়েশিয়া থেকে আমারই কোন বন্ধুবান্ধব অথবা চেনা পরিচিত কেউ ফোন করেছে। আমি হতচকিত হয়ে ফোন ধরলাম। ওপাশ থেকে ভরাট কণ্ঠে এক ভদ্রলোক গ্রিটিংস জানিয়ে খাস বাংলা ভাষায় জিজ্ঞাস করলো, ভাই! আপনি কি আমাদের প্রডাক্ট এর ব্যাপারে ইন্টারেস্টেড? আমি হতভম্ব হয়ে বললাম, কোন প্রডাক্ট? সাথে সাথে উত্তর এলো, ঐ যে আমাদের চুল গজানোর শ্যাম্পু? আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম, হ্যাঁ ভাই! আমি তো এই মাত্র আপনাদের ইনবক্সে মেসেজ করলাম! এত তাড়াতাড়ি উত্তর! তাও আবার মালয়েশিয়া থেকে? জবাব এলো, হ্যাঁ ভাই; আমরা কোন ভুয়া কোম্পানি না। আমরা ২৪/৭ - ৩৬৫। সারা পৃথিবী জুড়ে আমাদের প্রডাক্ট চলে। বাংলাদেশে আমাদের কোন অফিস নাই, আমরা মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, নেপালে আমাদের পণ্য পাঠাই। আপনি কি ইন্টারেস্টেড? আবেগে আমার গলা বুজে আসলো। আহা! আহা! কি প্রফেশনালিজম! এদের প্রডাক্ট নিশ্চয়ই সেই লেভেলের প্রডাক্ট হবে। আমি আবেগ জড়িত গলায় জিজ্ঞাস করলাম, ভাই প্রথম ফাইল ব্যবহারের পরই রেজাল্ট পাব? উনি অপর পাশ থেকে হেসে বললো, অবশ্যই ভাই। আপনার চুল যেখানে উঠে গেছে ঐ অংশে প্রথম ফাইল ব্যবহার করতে করতেই দেখবেন ঘাসের মত ছোট ছোট চুল গজানো শুরু করবে; তারপর দ্বিতীয় ফাইল ব্যবহার করলে পুরোটায় চুল গজিয়ে যাবে। কি প্রফেশনাল জবাব! আহা! আহা! তবুও মনের মধ্যে একটা দ্বিধা ছিলো, টাকা দিলে এরা প্রডাক্ট ডেলিভারি করবে তো! আমি বললাম ভাই আমি অনলাইন ট্রান্সেকশন করি না, যদি ক্যাশ অন ডেলিভারি হয় তা হলে করব। ওপাশ থেকে জবাব এলো, কেন নয়? আপনি প্রডাক্ট হাতে পেয়ে তারপর টাকা দিবে। এবার আর কোন দ্বিধা রইলো না। এছাড়াও এরা আমাকে একবারও টাকলা বলে নাই (এই আবেগেই আমি হয়তো ওদের অর্ডার কনফার্ম করে দিতাম, তবুও যখন ক্যাশ অন ডেলিভারির কথা বললো! আর কি দেরি করা যায়? আর আগেপিছে সাতপাঁচ না ভেবে দিলাম কনফার্ম করে)। একবারও মনে হলো না, মালয়েশিয়াতে এখন রাত দুই টা। এত রাতে হসপিটাল আর ইমার্জেন্সী সার্ভিস ছাড়া আর কোন কিছু খোলা থাকার কথাই না। তারপরও যদি ২৪/৭ অনলাইন সার্ভিস হয় তা হলেও ওখানে একজন কাওকে বসিয়ে রেখেছে আমার সাথে বাংলায় কথা বলতে। হায় চুল গজানোর লোভ! হায়!
দুদিন পরই ডেলিভারি ম্যান দোরগোড়ায়। আবারও ওদের প্রফেশনালিজমে আশ্চর্য হলাম। আহা! আহা! মাত্র পরশু রাতেই অর্ডার করলাম এর মধ্যেই মালয়েশিয়া থেকে শ্যাম্পু আমার ঘরে! এক মাস যাবত পুরো টাক জুড়ে শ্যাম্পু ঘষে ঘষে বোতল শেষ করলাম। ঘষার চোটে এক দুই গাছি যাও চুল ছিলো সেগুলোর উঠে যাওয়া ছাড়া আর বিশেষ কোন উপকার হলো না। আমি ওদের নাম্বারে ফোন দিলাম। ফোনই ঢুকলো না ঐ নাম্বারে! ওদের পেইজে গিয়ে নক দিলাম; ওপাশে কোন উত্তর নেই। কয়েকদিন পেইজে কমেন্টে কমেন্টে শুধু শুধুই গালাগালি করে নিজেকে ছোট করলাম। আসলে আমি যে গাধা এইটার প্রমাণ তো প্রডাক্ট কিনার সাথে সাথেই প্রমাণ করে দিয়েছি তাই না? তারপর যথারীতি ঐ পেইজ থেকে আমি ব্লক। বোকারা ব্লক হয়ই। আজকাল চটকদার বিজ্ঞাপনের পেইজটি অনেক খুঁজেছি, না গালাগালি করার জন্য না, বরং একবার সরি বলার জন্য (অনেক গালাগালি করেছিলাম তো! তাই); আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি, গাধা তো পণ্য কিনে হয়েইছিলাম, গাধার গাধা হয়ে গাধার মত ওদের শুধুশুধুই গালাগালি করেছি।। হায় আমার টাক! আমি এখনো আয়নার দিকে তাকিয়ে আফসোস করি, যদি ঐ শ্যাম্পু ঐভাবে না ঘষতাম তাহলে হয়তো আরও দু গাছি চুল বেশি থাকতো!
২৩ জুন, ২০২১
#রম্য
অনলাইন পণ্য
- যাযাবর জীবন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন