স্বামী স্ত্রী সম্পর্কটা এক একটা বয়সে এক এক রকম;
পারিবারিক সম্পর্কে বিয়ে হলে প্রথম কিছুদিন চলে যায় পরস্পরকে বুঝতে
বোঝাপড়া শেষ হয়ে গেলেই ভালোবাসার ঝড় দুজনের জীবনে
আর প্রেমের বিয়ের ক্ষেত্রে তো সাইক্লোন ভালোবাসা বিয়ের প্রথম দিন থেকেই;
জীবনের শুরুতে স্পর্শ মানেই কামনার ছোঁয়া, যৌবনের উন্মত্ততা
রঙিন আবেশে পরস্পরের মাঝে পরস্পরকে খোঁজা
দিনই কি? আর রাতই কি? সুযোগ পেলেই বিছানা
ওটা খুব স্বাভাবিক, ঢাকঢোল পিটিয়ে বলার কিছু নেই;
তারপর কামনার ঝড় একটু থিতু হলে ধীরে ধীরে স্পর্শের গভীরতা বোঝা
কেউ স্খলনের পর পরই চট করে উঠে যায়
কেউ জড়িয়ে ধরে রয়
দুটোর অনুভবের পার্থক্য কিছু না কিছু তো কথা কয়!
স্বামী স্ত্রী খুব ভালো বোঝে, তাই না?
অল্প কিছু সম্পর্কে থাকে রমণে বিবমিষা
কত কারণই তো থাকতে পারে!
দুজনার কিংবা একজনার পূর্ব প্রেম, যা সে ভুলতে পারে না
কিংবা শারীরিক গোপন অসুস্থতা, কাছে আসায় লজ্জা
আমরা সেগুলো'কে না হয় ছকের বাইরে ফেলি;
তারপর আরেকটু সময় পার হয়
সংসারের প্রয়োজনে কিংবা জৈবিক মেলামেশায় সন্তানের আগমন
জীবনের একটা মোড়, মোড় সংসারের
হঠাৎ করেই স্বামী স্ত্রী সম্পর্কে তৃতীয় আরেকজন ঢুকে যায়
স্ত্রীর হাতটা পড়েই থাকে আলতো ভাবে সন্তানের ওপর, মা বলে কথা!
স্বামীর হাত স্ত্রীকে খুঁজতে গিয়ে সন্তানের ওপর পরে
ডিম লাইটের আধো আলোতে সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে কামনাটুকু মরে
তারপর সন্তান একটু বড় হওয়া পর্যন্ত কালেভদ্রে;
সন্তান আরেকটু বড় হলে ওর জন্য আলাদা ঘর
আবার একসাথে স্বামী স্ত্রী
সেই প্রথম দিকের ঝড়টা কিন্তু আর শরীরে ওঠে না
প্রেমে থিতু ভাব না আসলেও ততদিনে শরীরে কিছু থিতু ভাব তো চলেই এসেছে!
সেই প্রথম প্রেমের পাগলামি এখন করলে কি চলে?
স্বামী স্ত্রী অনেকটা পরিপক্ব, পরিপক্ব দাম্পত্য সম্পর্ক
আরেকটা সন্তান নেবে কি নেবে না সিদ্ধান্ত নেবার পালা এবার ঠাণ্ডা মাথায়
যারা নিবে বলে মনস্থির করে তারা ও পথে এগোয়
নাইলে দুজন মন দেয় প্রথম সন্তানকে মানুষ করায়,
দাম্পত্যে আজকাল সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন কামনা
বাকি দিনগুলো বিছানায় শুয়ে পরস্পর স্পর্শানুভবে;
এই যে স্পর্শানুভব! এটা কিন্তু এক এক দম্পতির এক এক রকম;
ঐ যে এক ধরণের দম্পতির কথা বলেছিলাম! ছকের বাইরে,
স্পর্শানুভূতিটা আসলে কখনো কোথাও স্পর্শই করে নি
অনুভবই যে হয় নি!
ওদের বেশিরভাগের হয়ে গেছে ছাড়াছাড়ি
আর গোনা গুনতি যে কয়টি দম্পতি আছে তাদের অনুভূতি জানে কোলবালিশ,
থাকুক! আমরা না হয় কোলবালিশকে কিছু নাই জিজ্ঞাসা করি!
কিছু দম্পতি আছে সারারাত জড়িয়ে থাকে পরস্পর, বুকে মিশে
কিছু দম্পতি আছে সারারাত স্পর্শে থাকে শরীরে কোন না কোন অংশ ছুঁয়ে
কিছু দম্পতি আছে রমণের পর আর স্পর্শ সহ্যই করতে পারে না
কিছু দম্পতি আছে স্পর্শ নেয় কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে
কিছু দম্পতি একই বিছানায় রাত কাটায় মধ্যে কোলবালিশ সীমানা করে
আর কিছু দম্পতি আছে, রাত তো একই ঘরে কাটায়! তবে দুজন দু বিছানায় শুয়ে
আমি পরকীয়া, ঝগড়া বিবাদ, মনোমালিন্য এগুলোর কথা এখানে নাই আনলাম,
এভাবেই কেটে যায় মধ্য বয়স থেকে প্রৌঢ়ত্ব পর্যন্ত;
যারা পরস্পর স্পর্শে ছিলো তারা তো এক হয়েই আছে!
আর যারা বিভিন্ন কারণে স্পর্শানুভূতি থেকে সরে গিয়েছিলো!
তারা একটা সময় এসে পরস্পরের স্পর্শ খোঁজে,
হ্যাঁ, প্রৌঢ়ত্বের দোরগোড়ায় এসে ঠিক দুজন দুজনকে খোঁজে
তখন আর কাম কোথায়? শুধু মাত্র একটু হাতের স্পর্শ
একটু সাহচর্য, একটু নির্ভরশীলতা, পাশে কেউ তো আছে! ওটুকুই আস্থা
আবার তারা এক হয় দুজন দুজনার স্পর্শে
আবার এক হয় দুজন একসাথে
এবার বিচ্ছেদ মৃত্যুতে।
১০ জুন, ২০২১
#কবিতা
স্পর্শ ও স্পর্শানুভূতি
- যাযাবর জীবন
ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন