সেই কাকভোর থেকে শুরু,
ফজরের আজান শোনা মাত্র ওরা উঠে গেছে
নামাজ পড়ে নাস্তার আয়োজনে
সাহেব মেমসাহেব অফিসে যাবেন, বাচ্চাগুলো স্কুলে
কত কাজ! এখন না উঠলে কি কুলোনো যাবে?
দুপুরে অনেকগুলো রান্নার আইটেম, প্রায় প্রতিদিনই কাছাকাছি রকম
মুরগীটা বাচ্চাদের বড্ড প্রিয়, প্রায় প্রতিদিনের মেন্যুতেই থাকে
মাঝে মধ্যে গরু কিংবা খাসি ভুনা, সপ্তাহে এক বা দুদিন
বাড়ির কর্তা মুরগী খেতে পারে না, ওনার জন্য প্রতিদিনই কোন না কোন মাছ
বেগম সাহেবার আবার সবজি ছাড়া চলেই নাই, দুই পদ ভর্তা, একটা ভাজি
রাতে সাহেব আর বেগম সাহেবার জন্য লাল আটার রুটি
আজকাল লাল আটার বেশ চল হয়েছে, বাচ্চাগুলোর ভাতেই চলে;
দুপুরে ছেলে মেয়েগুলো যে যার সময়ে লাঞ্চ করে নেয় বাসায় কিংবা বাইরে
রাতে সবাই মিলে এক টেবিলে, কিছু কথায় কিছু গল্পে কিছু হাসিখুশি সময়
যে যার পছন্দ মত সবজি কিংবা মাছ অথবা মাংসের ডিশে, ভাত কিংবা রুটিতে
সবার খাওয়া হয়ে গেলে টেবিল গুছিয়ে, খাবারদাবার ফ্রিজে উঠিয়ে
কাজের মেয়েগুলো রান্নাঘরের মেঝেতে বসে, রাতের খাবারে;
এক এক বাসার পরিস্থিতি এক এক রকম
এক এক বাসার পরিবেশ এক এক রকম
কোন কোন বাসায় কাজের মেয়ে একজন কোন কোন বাসায় দুজন
অনেক বাসায় আবার ছুটা বুয়াতেই চালিয়ে নিতে হয়;
কোন কোন বাসাতে কাজের মেয়েগুলোর খাবার আলাদা বেড়ে দেয়া হয়
হাজারে একটা বাসায় এরা নিজের ইচ্ছেমত খায়, সবার জন্য যা রান্না হয়
আর বেশীরভাগ বাসায় ওদের বরাদ্দ উচ্ছিষ্ট, ভাতটা কমন থাকে
তরকারি বলতে মুরগীর পাখনা, ঠ্যাং, গলা কাঠি; না খাওয়া মাছের লেজের কিছু অংশ
পাতিলার তলানিতে পড়ে থাকা কাঁটাগুলো কে খাবে? এরা না খেলে কি ফেলে দেবে?
গতকালের কিছু বাসি খাবার রয়ে গেছে, খাবার কি আর নষ্ট করা যায়!
দুপুরের সব্জিটায় কি একটু গন্ধ উঠেছে? দেখ তো তোরা খেতে পারবি কি না!
খুব ক্বচিৎ কদাচিৎ বেগম সাহেবা মাছের একটা দুটো টুকরো দেন
বাড়িতে এরা সংখ্যায় যদি একাধিক হয় তবে সবাই মিলে তাই ভাগ করে, খুব তৃপ্তির সাথে
যার যার বাড়ির গল্পে মেতে, ওদেরও তো কিছু গল্প থাকে!
দেশের বাড়ির গল্প, মা-বাবার গল্প, ভাই-বোনের গল্প
রান্নাঘরে খাবারের সাথে গল্পগুলোও নিজেদের মধ্যে এরা ভাগ করে, আবেগের সাথে
খাবার খেতে খেতে সেই অনেক রাত, এবার শুয়ে পড়তে হবে
আবার কাল কাকভোরে ঘুম থেকে ওঠা, সেই ধরাবাঁধা প্রতিদিনের রুটিন;
যার যার বাড়ির কাজের মেয়েগুলো তাদের মেম সাহেবাদের ব্যাবহার চেনে
যার যার বাড়ির কাজের মেয়েগুলো তাদের সাহেবদের চরিত্র জানে
যার যার বাড়ির কাজের মেয়েগুলো সাহেবদের ছেলেদের ভালোমন্দ দৃষ্টি বুঝে
যেসব বাড়ির সাহেব ও সাহেবের ছেলেদের চরিত্রে দোষ আছে
সেসব বাড়িতে এরা বড্ড অসহায়, বেশিরভাগ মেনে নেয় যার যার অসহায় অবস্থা
আর অল্প কিছু কাজ ছেড়ে নতুন বাসার খোঁজে, অন্নের সংস্থান তো করতেই হবে
নিজের ও দেশে থাকা বাবা-মা, ভাই বোনের জন্য;
আচ্ছা! এই যে আজকাল আলিশান সব ফ্ল্যাট বাড়ি উঠছে!
ওরা কোথায় থাকবে কারো চিন্তায় এসেছে?
নাকি চিরাচরিত রান্নাঘরই এদের ঠিকানা হয়ে থাকবে?
খুব হাতেগোনা হাজারে একটা বাড়িতে রান্নাঘরের সাথে আলাদা একটা ছোট্ট কামরা
আর বাকি সবার ভাগ্যে তেলাপোকা দৌড়ানো স্যাঁতস্যাঁতে রান্নাঘরের মেঝেতে বিছানা;
একটা আলাদা বাথরুম! ওদেরও তো যেতে হয়!
কমন বাথরুমে কি আর মেহমানের সামনে যাওয়া যায়?
বাসায় মেহমান আসলে কতক্ষণ চেপে রাখা যায়? বোঝার কেউ আছে?
আমরা মানবিকতার কথা বলি মানুষের সামনে মুখে ফ্যানা তুলে
কখনো কি উঁকি দিয়েছি নিজের ঘরে?
আরে! কে বললো উঁকি দেই না?
চোরচোখে সাহেব উঁকি দেন বেগম সাহেবা ঘরে না থাকলে
বেগম সাহেবা উঁকি দেয় চোখে চোখে রাখতে, কিছু চুরি করে নিয়ে গেলো না তো!
বাসার কিছু হারানো গেলে চোর বদনামটা এদের কপালেই জোটে
ফলশ্রুতি? গঞ্জনা, মারধর তারপর বেতনটা না দিয়েই ঘাড়ধাক্কা
জীবন তাড়িয়ে নিয়ে যায়, এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে
পেট চালাতে গেলে কাজ তো করতেই হবে
মুখ বুজে সব সয়ে।
০৪ জুন, ২০২১
#কবিতা
তাহাদের দিনরাত্রি
- যাযাবর জীবন
ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন