শনিবার, ২১ আগস্ট, ২০২১

দেরী না হয়ে যায়!

কিছু একটা লিখতে ইচ্ছে করছে, 

কিছু একটা; 


কিছু একটা লিখতে ইচ্ছে করছে বাবা'কে 

অথচ বাবা অনেক আগেই চলে গিয়েছেন আমাকে ছেড়ে

ঐ সুদূরে, ধরা ছোঁয়া বাইরে অনেক অনেক দূরে

অথচ বাবা'কে কখনোই কিছু লিখা হয় নি 

কখনো বলা হয় নি কত'টা ভালোবাসি তাকে 

আজ হঠাৎ করেই তাকে লিখে আর কি হবে?

বাবা পড়তে পারবে?

কে জানে? 

হয়তো কলমটা পড়বে! কিংবা কাগজ'টা! 

আজকাল তো দেখি বাবা দিবসে ফেসবুক জুড়ে বাবা'ময় ভালোবাসা

অথচ বেঁচে থাকতে বাবা'কে একটা বার বুকে জড়িয়ে ধরি নি

একটা বার মুখ ফুটে বলি নি - 'বাবা, তোমাকে ভালোবাসি';


আজ কিছু একটা লিখতে ইচ্ছে করছে মা'কে 

কোথায় আছে মা? কোন সুদূরে? 

বেঁচে থাকতে কয়দিন জিজ্ঞাসা করেছি - 'মা, খেয়েছ?'

'কেমন আছ মা?'  

অথচ মা দিবসে ফেসবুক জুড়ে উথলে ওঠা মায়ের প্রতি ভালোবাসা

কোন মানে হয়? 


এই যে বাবা, মা, ভাই, বোন, সন্তান সন্ততি, এমন কি স্ত্রী

কয়দিন কয়বার ওদের বলেছি, ভালোবাসি; তোমাদের বড্ড ভালোবাসি

অথচ কখনো ভালোবাসার তো কমতি ছিলো না মনে! 

ভালোবাসার কমতি নেই এখনো,

শুধু মুখ ফুটে বলা হয় না;  


এই যে রক্তের সম্পর্কগুলো! 

দেরি হবার আগেই কথা বলে ফেলো, 

ভালোবাসার কথা চিৎকার করে বলতেও হয় না 

শুধু একটু জড়িয়ে ধরলেই হয়;


যে চলে গেছে তাকে ভালোবাসার কথা বলেই বা কি হবে?

আর লিখেই বা কি হবে? 

আমার দেরি হয়ে গেছে, 

তোমার হয়তো এখনো সময় আছে। 


২২ আগস্ট, ২০২১


#কবিতা 


দেরী না হয়ে যায়!  

 - যাযাবর জীবন 


শুক্রবার, ২০ আগস্ট, ২০২১

বড় সন্তান

বেশীরভাগ সংসারের বড় সন্তানগুলোর মুখে কুলুপ আটা থাকে,

এরা যে কথা বলতে পারে না, তা নয় কিন্তু!

কথা বললে যদি অন্যরা কষ্ট পায়! তাই সংযত হয়ে থাকে 

সংযত হয়ে থাকতে থাকতে চুপ থাকাটা এদের অভ্যাস হয়ে গেছে;


এরাও হাসে, অন্যের হাসিতে

নিজের জীবনের হাসির কারণ কালেভদ্রে আসে; 

এরা কাঁদে, যত না বাকিদের দুঃখে তারচেয়ে বেশি নিজে দুঃখ পেয়ে 

দুঃখ পেলে এরা একা একাই কাঁদে; 


বুঝ হওয়ার পর থেকে নিজের ভাগের'টা রেখে দেয় ছোট ভাইটার জন্য 

রেখে দেয় আদরের ছোট বোনটার জন্য

ওরা খেলেই যেন তার খাওয়া হয়, এক পার্থিব আনন্দ লাভ করে

এভাবে না খেতে খেতে একসময় ভালো খাওয়ার অভ্যাসটাই চলে যায় মন থেকে;


তারপর বয়স বাড়ার সাথে সাথে সংসারের টুকটাক দায়িত্ব 

বাবার আর্থিক অবস্থাটা এ বুঝে যায় সবার আগে 

নিজের পড়ালেখাটা নিজেই চালানোর চেষ্টা টিউশনি কিংবা টুকটাক কাজে

সাথে ছোট ভাইবোনগুলোর জন্য কিছু একটা করার চেষ্টা, এভাবেই দিন চলে; 


পালা পার্বণে ভালো কাপড়টা! এ বছর ছোট ভাইটা নেক! ও বছর ছোট বোনটা

বাবা বলেন, তুই কাপড় পড়বি না? সে হেসে বলে, ওরা পড়লেই আমার পড়া 

ভালো খাবারটা! আগে বাবা খেয়ে নেক, তারপর ভাই বোনগুলো, বাকি থাকলে মা

মা বলেন, তুই খাবি না? আরে মা! ওরা খেলেই আমার খাওয়া;


দিন যায়, মাস গড়ায়, বছর পার হয়ে যুগ চলে যায়

একসময় বাবাও চলে যান, তারপর পৈতৃক কিছু সম্পত্তি; ভাগ বাটোয়ারা 

ভাই বোনরা ভালোটা, বাকি যেটা থাকে সেটা রইলো তার! 

ভাগ বাটোয়ারায় মা'টা যে রয়ে গেলো? ভাইবোনরা মিলে ওটা বড়জনকে উপহার দিলো; 


যাক, ওরা সন্তুষ্ট সে এতেই খুশি; মা'কে নিয়ে এবার আলাদা সংসার 

নিজেরও তো সংসার আছে! স্ত্রী আছে সন্তান আছে! সাথে নতুন অতিথি 'মা' 

শাশুড়ি বৌ এর কবে হয়েছিলো বনিবনা? সংসারে হাঁড়িকুঁড়ি বাজে    

কাজে দেয় সংযত হয়ে থাকতে থাকতে চুপ থাকার অভ্যাসটা; 


চাকরির টাকায় সংসার, কিছু টানাটানি তো লেগেই থাকে! আরে! অভ্যাস তো আছেই!  

এখন ভালো খাবারটা আগে মায়ের জন্য, তারপর সন্তানদের জন্য, তারপর স্ত্রী 

ওরা খায়, সে তৃপ্তি নিয়ে দেখে; ভালো খাবারের অভ্যাসটা তার সেই কবেই চলে গেছে!

কাপড় চোপড়! আগে মা, তারপর সন্তান, তারপর স্ত্রী; পুরনোটা তার আরও বেশ কিছুদিন চলবে; 


সংসারে কাউকে না কাউকে সংযত হতে হয়, কাউকে না কাউকে ত্যাগ করতে হয়

বড় সন্তান বাবা মায়ের অনেক আদরের ধন, তার কাছে বাবা-মায়ের আশা সবচেয়ে বেশি

তার কাছে তার সন্তানদের আশা সবচেয়ে বেশি, তার স্ত্রীর আশা সবচেয়ে বেশি 

শুধু তাকেই কোনও আশা করতে হয় না, ওদের হাসিমুখ দেখলেই এর মুখে হাসি।


    

২১ আগস্ট, ২০২১


#কবিতা 


বড় সন্তান 

 - যাযাবর জীবন 








   

সম্পত্তির নেশায়

উপার্জন তো করছি আমরা সবাই! 

বেঁচে থাকার জন্য, একটু ভালো থাকার জন্য

যত না নিজেদের জন্য তারচেয়ে বেশি সন্তানদের জন্য

তাই না? 


আমার সেই ছাত্রজীবন থেকে শুরু 

তারপর চাকরি

তারপর ব্যবসা

তিলে তিলে সঞ্চয়

মাটির ব্যাঙ্ক থেকে বেসরকারি ব্যাঙ্কে একটা একাউন্ট

ওখানে থোক কিছু সঞ্চয়, দুর্দিনের জন্য  

তিলে তিলে গড়া অল্প কিছু সহায় সম্পত্তি 

মাথা গুঁজার ঠাই, একটা বাড়ি 

যাতায়াতের জন্য একটা গাড়ি,

ভালো ভাবে বেঁচে থাকার জন্য অনেক হয়েছে না?

আমার তো হয়েছে;


অনেকের দেখি হয় না,

টাকা টাকা করতে করতে টাকা বেশুমার 

এখানে ওখানে সেখানে সম্পত্তির পাহাড় 

গ্যারেজে নামি দামি ব্র্যান্ডের গাড়ির সমাহার 

তবুও কি মন ভরে?

ধ্যাত! পাঁচ দশটা ফ্ল্যাটে কি হয়? কিংবা দু চারটা বাড়িতে!

আরে! নিজ নামে কমার্শিয়াল একটা টাওয়ার করতে না পারলে মন শান্ত হয়?

তারপর আরেকটা, আরেকটা

আচ্ছা! একটা শপিং কমপ্লেক্স করা উচিৎ না? 

দেশে অনেক হয়েছে! এবার কিছু বাড়ি কেনা যাক অন্যান্য দেশে

শুনেছি মালয়েশিয়ায় নাকি বাড়ি খুব সস্তা

আরে আমেরিকা আর অস্ট্রেলিয়া তো ব্যবসায়ীদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে

ওখানে কিছু টাকা ছড়িয়ে না আসলে কেমন হয়! 

টাকাগুলো এ ব্যাঙ্ক ও ব্যাঙ্কে বড্ড ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে

নিজের একটা ব্যাঙ্ক না হলেই নয়! 

মার্সিডিজ তো সবার কাছেই থাকে! এবার একটা বুগাটি কিংবা রোলস রয়েস!

আজকাল বড্ড বেশি বিদেশে যাওয়া হচ্ছে, 

একটা প্রাইভেট জেট হলে খারাপ হয় না;


চাহিদা হাঁটি হাঁটি পা পা করতে করতে দৌড়োতে শুরু করেছিলো সেই কবেই

তারপর পাহাড় পর্বত ডিঙিয়ে এভারেস্ট ছুঁয়েছিল 

আজকাল আকাশে উড়তে উড়তে প্রায় ঐ চাঁদ ছুঁয়ে ফেলেছে, 

মন ভরছে কি?


আচ্ছা! একবার একটু অন্যরকম চিন্তা করে দেখি তো! 

প্রথম যে বন্ধুটা আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলো! সে সেই ছাত্র জীবনে

তার পরের জন, যখন চাকরি শুরু করেছিলাম 

তারপর একজন দুজন করে ওদের সংখ্যাটা কমতে শুরু করেছে

আজকাল কিন্তু খুব কাছের বন্ধুগুলো কড়ায় গুনতে পারি

এরপর যে কোন সময় আমি, যে কোন সময় তুমি, যে কোন সময় সে;


 - যে ছাত্রজীবনে চলে গিয়েছিলো 

তার পৈত্রিক সম্পত্তি ভাগাভাগি হয়ে গিয়েছিলো ভাইবোনদের মধ্যে,

ভাইদের সময় কোথায় তার কথা ভাবার?  


 - যে চাকরি করতে করতে চলে গিয়েছিলো

তারও কোন সন্তান ছিলো না, বৌটা আরেকটা বিয়ে করে এখন সংসার করছে

পৈত্রিক সম্পত্তি ভোগ করছে ভাই বোনরা, ওকে স্মরণ করে কে? 


 - তারপর যারা সন্তান সন্ততি রেখে চলে গিয়েছে, তাদের মধ্যে 

যাদের অল্প ব্যাঙ্ক ব্যাল্যান্স যা ছিলো, সন্তানদের পড়ালেখাতেই শেষ 

যারা কিছু সহায় সম্পত্তি রেখে গিয়েছিলো, সন্তানদের মধ্যে মারামারি কাটাকাটি ঝগড়া 

যাদের সম্পত্তির পরিমাণ যত বেশি ছিলো, তাদের সন্তানদের মধ্যে ঝগড়া তত বেশি, 


ঐ যে বাবা'টা তিল তিল করে যে সঞ্চয় রেখে গিয়েছিলো! তাকে স্মরণ করার সময় কোথায়?

বরং মাঝে মধ্যেই গালাগালির পাহাড়, কেন আরেকটু বেশি রেখে যায় নি এই বলে,  

প্রথম প্রথম মৃত্যু দিবসে হুজুর ডাকিয়ে দোয়ার আয়োজন করতো!

তারপর সময়ের সাথে মৃত্যু দিবসটাই ফিকে হতে হতে কেউ কেউ হয়তো ভুলেই গেছে;

 

বাবার'ই যখন এই অবস্থা! তখন দাদা, পর-দাদাদের অবস্থান কোথায়?

অথচ বাবা'টা ঐ মাটির ঘরটায় শুয়ে সন্তানের দিকে চেয়ে থাকে একটু দোয়ার আশায়

তার এত এত সহায় সম্পত্তি কাজে লাগে কোথায়?

না এ জীবনে সে ভোগ করে যেতে পারলো!

না ও জীবনে সম্পদের পাহাড় তার কোন কাজে লাগলো! 


অথচ আমরা পাগলের মত ছুটছি সম্পত্তির পাহাড় গড়ার নেশায়। 

একটু চিন্তা করার সময় কি এখনো হয় নি আমাদের? 



২১ আগস্ট, ২০২১


#কবিতা 


সম্পত্তির নেশায়

 - যাযাবর জীবন 




পোড়া গন্ধ

গন্ধ পাচ্ছ তোমরা? 

পোড়া গন্ধ, 

কি জানি একটা পুড়ছে! 


রাবার পোড়া গন্ধ কি? 

ইলেকট্রিসিটির তারে আগুন লাগলো নাকি?  

ইলেকট্রিক বিলে তো আগুন লেগেই আছে;  


টায়ার পোড়াচ্ছে না তো কেও?

বোকার মত কথা বলো না তো! 

আজকাল হরতাল কোথায়?


গ্যাস পুড়ছে না তো কোথায়?

তিতাসের সাপ্লাই তো বন্ধ হয়ে গেছে  

কে আর শখ করে সিলিন্ডারে কাপড় শুকায়? 


মন পুড়ছে না তো কারো?

আজকাল কি আর মন পোড়ে?

প্রেমের সংজ্ঞাই তো পালটে গেছে; 


মনে হয় ফেসবুক পুড়ছে

আজকাল রাত হলেই আগুন লাগে ইনবক্সে

কথার ঘষাঘষিতে শরীরে আগুন লাগতে কতক্ষণ? 


রাত গভীর হলেই অলিতে গলিতে গাড়ি

নিশিকন্যাদের পশরা, দরদামে বনলে 

গাড়ির ভেতরেই শরীর পোড়া গন্ধ;


ক্লাবগুলো পুড়ছে নরনারীর গরমে 

গলা পুড়ছে রঙিন পানি ধ্বকে,  

মাঝে মধ্যে খবর পোড়া গন্ধ; 


পরকীয়া তো আগুন জ্বালায়ই  

সংসার পুড়ছে হরহামেশায় 

দাম্পত্য পুড়ে ছাই হয়ে যায়; 


কথার গরম শাশুড়ির

কথায় গরম বৌ 

সম্পর্ক পুড়ে হরহামেশায়; 


বাড়িতে বাড়িতে স্বার্থের আগুন 

আগুন লেগে থাকে সম্পর্কে 

বাবা-ছেলে, ভাই-ভাই; কি আসে যায়? 


ঈর্ষা পুড়ছে কোথাও, কেউ পুড়ছে ঈর্ষায়  

কোথাও পুড়ে অভিমান, কেউ পুড়ে অভিমানে  

আমরা মানুষের পেছনের গন্ধ শুঁকি;   


কেউ শরীর পুড়িয়ে ক্ষুধা মেটায় 

কেউ টাকা পুড়িয়ে শরীর মেটায় 

আমরা গল্পের গন্ধ পাই;  


হরহামেশাই আগুন লাগে কোথাও না কোথাও  

হরহামেশাই কিছু না কিছু পুড়ে

বস্তু কিংবা মানুষ, শরীর অথবা মন;

  

আজকাল পোড়া গন্ধগুলো বড্ড তীব্র লাগে 

কাম, শরীর, স্বার্থ, সম্পর্ক  

অনেক আগেই পুড়িয়ে ফেলেছি মনুষ্যত্ব। 


১৭ আগস্ট, ২০২১


#কবিতা 


পোড়া গন্ধ

 - যাযাবর জীবন 




হিবিজিবি রাত

হলদেটে জ্যোৎস্না আধভাঙা চাঁদ 

মিটিমিটি তারার হাতছানি ফাঁদ 

চারিদিক কালচে ধুসর রাত 

আর আমার হাতে শূন্য হাত; 


মাঝে মাঝে সন্ধ্যে নামতেই মন খারাপ

সে রাতগুলো না হয় নির্ঘুম হোক   

মাঝে মাঝে ঘুম তো আসে ক্লান্তিতে

আজকাল স্বপ্ন দেখে না চোখ, 


রাতের ফ্রেমে বাঁধানো থাকে অন্ধকার   

মনের ফ্রেমে তুই 

বেশ কিছুদিন চোখে স্বপ্ন না এলেই 

অস্থির হয়ে রই; 


যেদিন স্বপ্নে তুই আসিস 

সেদিন মন বসন্ত বাতাস 

অমাবস্যার রাতেও চোখ 

দেখে আলোকিত আকাশ, 


আজ বড্ড মন আনচান  

তুই এখন কোথায়?  

ভেতরে কান্না বৃষ্টির ঢল  

একবার চোখে আয়।



১৬ আগস্ট, ২০২১


#কবিতা 


হিবিজিবি রাত 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ মোবাইল ক্লিক। 




অনাকাঙ্ক্ষিতের অপরাধ

সাধারণত জন্ম মানেই আনন্দ

একটি শিশুর পৃথিবীতে আগমন

বাবা-মা, আত্মীয় স্বজনের মধ্যে খুশির আমেজ বয়ে যায়,  

তবুও! 

সব জন্মেই কি আনন্দ আছে? 


ঐ যে ওদিকে চেয়ে দেখ তো! 

ওখানেও কিছু কিছু সন্তানের জন্ম হয়েছে

কই! কারো মুখেই তো হাসি দেখছি না!

কারো চোখে নেই খুশির ঝিলিক,

ঐ সন্তানগুলো অনাকাঙ্ক্ষিত 

হয়তো বাবার কাছে কিংবা মায়ের কাছে অথবা সমাজের চোখে;


বাবার কাছে সন্তান অনাকাঙ্ক্ষিত হতে পারে?

হ্যাঁ, পারে তো! 

আমি দেখেছি, পারে;

এর আগে পরপর তিনটি কন্যা সন্তানের বাবা হওয়ার পর

চতুর্থ এ সন্তানটিও যখন কন্যা হয়ে জন্ম নিলো!

তখন খুশির পরিবর্তে বাবার মুখটা কালো হয়ে গেলো,

আচ্ছা! সন্তানটার কোথায় অপরাধ হয়েছে?  

কেউ বলতে পারবে!  


মায়ের কাছে সন্তান অনাকাঙ্ক্ষিত হতে পারে?

হ্যাঁ, পারে তো! 

আমি দেখেছি, পারে;

কিছু কুকুর ঐ মায়ের শরীরের আঁচরে কামড়ে রক্তাক্ত করে

পেটে একটা সন্তান ভরে দিয়েছিলো, 

এ সন্তানটির কথা যখন মা জানলো! 

তখন আর ফেলে দেয়ার কোন উপায় ছিলো না 

নিজের জীবনের ওপর কেই বা রিস্ক নিতে চায় বলো! 

সন্তানটা যখন জন্ম নিলো! খুশির পরিবর্তে মায়ের মুখটা কালো হয়ে গেলো,

এ সন্তানটা মায়ের কাছে বোঝা, ঘৃণ্য সমাজের চোখে, 

আচ্ছা! সন্তানটার কোথায় অপরাধ হয়েছে?  

কেউ বলতে পারবে!  


০৯ আগস্ট, ২০২১


#কবিতা 


অনাকাঙ্ক্ষিতের অপরাধ 

 - যাযাবর জীবন 



কাঙ্ক্ষিত মৃত্যু

সাধারণত মৃত্যু মানেই কান্না 

যে কেউই পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় 

হোক বাবা-মা, হোক সন্তান, হোক আত্মীয় স্বজন 

সবার মাঝেই কান্নার রোল বয়ে যায়,  

তবুও! 

সব মৃত্যুই কি বেদনার? 

 

ঐ যে ওদিকে চেয়ে দেখ তো! 

ওখানেও কিছু কিছু মৃত্যু হয়েছে

আমি কারো চোখেই কান্নার পাশাপাশি অন্য কি জানি একটা দেখেছি,  

ওটা কি স্বস্তির ঝিলিক? 

ঐ মৃত্যুগুলো কাঙ্ক্ষিত 

কাঙ্ক্ষিত বাবা-মায়ের কাছে, কাঙ্ক্ষিত সন্তানদের কাছে

কিংবা পরিবারের অন্য কারো কাছে,

কিছু মৃত্যু কাঙ্ক্ষিত সমাজের কাছে; 


ঐ যে বৃদ্ধ কিংবা বৃদ্ধা মারা গেলেন!  

বছরের পর বছর অথর্ব হয়ে খাটে শোয়া ছিলেন 

শেষের কয়েক মাস তো বোঝাই যায় নি বেঁচে আছেন না মারা গিয়েছেন! 

বেডশোর হয়ে পেছন দিকটায় পচন ধরেছিলো অনেক আগেই

ওনার প্রচণ্ড কষ্ট সইতে পারছিলেন না সন্তানরা, আত্মীয় স্বজনরা 

আজ চলে গেলেন একবারে, নিথর দেহটা পড়ে রইলো

সন্তানদের চোখে জল, পাশাপাশি কোথায় যেন একটা স্বস্তির আভা

খুব কাছে থেকে দেখলে তোমরাও ঠিক বুঝতে পারতে, 

এ মৃত্যুটা কাঙ্ক্ষিত ছিলো পরিবারে কাছে

জীবন নয়; 


ঐ যে ছেলেটা কিংবা ঐ যে মেয়েটা আজ মারা গেল!  

বহুদিন ক্যান্সারে ভুগছিলো 

মধ্যবিত্ত পরিবারে ঘোড়ারোগ  

সহায়সম্পত্তি ঘটিবাটি যা ছিলো বিক্রি করে কোনমতে চিকিৎসা চলছিলো

ডাক্তার অনেক আগেই জবাব দিয়ে দিয়েছিলো

আজ একবারেই চলে গেলো 

নিথর দেহটা পড়ে রইলো

পরিবারে মানুষগুলোর চোখে জল, 

এ কান্না প্রিয়জনের চলে যাওয়ার 

এ কান্না পরিবারটা নিঃস্ব হবার 

আর হসপিটালে দৌড়াদৌড়ি করতে হবে না ভেবে হয়তো 

কারো কার চোখে খানিক স্বস্তির আভা,  

খুব কাছে থেকে দেখলে তোমরাও ঠিক বুঝতে পারতে,

এ মৃত্যুটা কাঙ্ক্ষিত ছিলো পরিবারে কাছে

জীবন নয়;  


ঐ যে আজ একটা মানুষের ফাঁসি হলো!

ফাঁসি মানেই তো মৃত্যু, তাই না? 

টিভিতে, রেডিওতে সবাই নিউজের সামনে 

ভয়ঙ্কর এক অপরাধীর ফাঁসি 

মৃত্যুতে কান্নার পরিবর্তে সবার মুখে হাসির আভা

ঐ যে, ঐ পরিবারগুলোকে দেখ!

ঐ লোকটা যে পরিবারগুলোর কোন না কোন সদস্যকে খুন করেছিলো! 

ঐ যে ঐ পরিবারটাকে দেখ!

ঐ লোকটা যে পরিবারগুলোর মেয়েদের নষ্ট করেছিলো! 

ঐ লোকগুলোর চোখের দিকে তাকাও!

ঐ লোকটা যাদের হাত পা কেটে পঙ্গু করে দিয়েছিলো! 

আসলে ঐ লোকটা কোন মানুষ ছিলো না, ছিলো দানব

মানুষের পৃথিবীতে দানবের ঠাঁই কোথায়? 

ওর মৃত্যুতে কেন খুশি হবে না এরা?

ফাঁসি দিয়ে মৃত্যু তো খুব সহজ মৃত্যু 

এ দানবটার এর থেকেও অনেক অনেক কঠিন মৃত্যু পাওনা ছিলো

এ মৃত্যু কাঙ্ক্ষিত ছিলো ঐ ভুক্তভোগী মানুষগুলোর কাছে 

এ মৃত্যু কাঙ্ক্ষিত ছিলো সমাজের কাছে।  



০৯ আগস্ট, ২০২১


#কবিতা 


কাঙ্ক্ষিত মৃত্যু 

 - যাযাবর জীবন 

চিঠি স্মৃতি

অনেক দিন পর তোর কথা মনে পড়তেই বই এর ভাঁজ থেকে একটা 

হলুদ খামটা বের করলাম, অনেক অনেক দিন আগের পুরনো একটা 

চিঠির খাম। হলুদ রঙটা পুরনো হতে হতে কেমন যেন ম্যাড়মেড়ে হয়ে 

গেছে, যেন ভাঁজ খুললে এক্ষুনি ঝুরঝুর করে হাতের ভেতর ঝরে পড়বে।


খামটা খুললাম। ভেতর থেকে তোর চিঠিগুলো বের হলো, আমাকে লেখা 

তোর বিভিন্ন সময়ের চিঠিগুলো। বেশ অনেকগুলো চিঠি, আমি খুব যত্নে 

রেখে দিয়েছিলাম ঐ হলুদ খামে। আজ একটা একটা করে চিঠি খুলতেই

একটা একটা করে খুলে যাচ্ছে স্মৃতি। স্মৃতিগুলো এখনো এত নতুন কেন? 


এক একটা চিঠির এক একটা স্মৃতি। একটা চিঠিতে এক বৃষ্টির বিকেলের 

স্মৃতি; সেদিন আমরা একটা কফি-শপে। তুই বললি খুব বৃষ্টি খেতে ইচ্ছে 

করছে। আমি সাথে সাথে তোর হাত ধরে তোকে নিয়ে রাস্তায়, ঝুম বৃষ্টিতে; 

পরের দিনই এত্ত বড় এক চিঠি, কত পাগলামিই না করতে পারিস তুই!  


একটা চিঠিতে কোন এক চাঁদনি রাতের স্মৃতি। সেদিন রাতে চুপিচুপি এনালগ 

টেলিফোনটার ওপার থেকে তোর গলা, এই! জ্যোৎস্না খেতে ইচ্ছে করছে। 

আমি ফোন রেখে তোর বাড়ির নীচে। চাঁদ চাঁদ বলে চিৎকার করছি, জানালায় 

তোর উঁকি, পরের দিনই বই এর ভাঁজে চিঠি, এত পাগলামি করিস কেন তুই?   


কোন একদিন দুপুরে ক্লাস করে হাঁটতে হাঁটতে বললি, খুব ক্ষুধা পেয়েছে। চল 

আজ অন্য কিছু খাই। আমি হেসে বললাম, কি খাবি? চায়নিজ না কোরিয়ান?

জাপানি চলবে? তুই ফিক করে হেসে দিয়ে বললি - চুমু খাব, খাওয়াবি? আমি 

সাথে সাথে জড়িয়ে ধরে চুমু; পরেরদিনই চিঠি - ছিঃ! তুই এত খারাপ কেন? 

   

আমি একটি একটি করে চিঠির সাথে একটি একটি স্মৃতি খুলে যাই। মধুর সব

স্মৃতি। প্রতিদিন আমাদের দেখা হতো আর প্রতিদিন বই এর ভাঁজে একটি করে

চিঠি। খুব বিশেষ কিছু কি লিখা হতো তাতে? শুধুই কিছু ভালোবাসার টুকিটাকি। 

ওগুলো আজ সব অতীতের কিছু স্মৃতি। ধ্যাত! চোখের কোণে কিছু পড়লো কি?     


 

০৮ আগস্ট, ২০২১


#কবিতা 


চিঠি স্মৃতি 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা।  





মানুষরূপী

মানুষরূপী কিছু পশুর দল আমাদের আশেপাশেই থাকে  

আদতে স্বার্থ-লোভী এরা সুদিনে চারিদিকে ঘিরে থাকে 

কথায় মধুর নহর বয়, অন্তরে বিষের বিষ 

স্বার্থের টোকা পড়লে ব্যবহারে বদল, দশ থেকে বিশ;


কথায় পিন ফোটায়, বাঁশ দেয় পেছনে একটু সুযোগ পেলে 

দুধের মাছি এরা মুহূর্তে উড়ে যায়, স্বার্থ উদ্ধার হলে 

কখনো পেছনে কামড়ে ধরে কখনো ঢালে কথার বিষ 

কানকথায় কানভারী করে, আর কানেতে ঢালে বিষ;  


স্বার্থ উদ্ধারে তৈল মর্দন, পা চাটে প্রয়োজন হলে 

তারপর মুহূর্তেই উধাও হয়ে যায় স্বার্থ উদ্ধার হলে  

ময়লা থেকেও খুঁটে খুঁটে এরা সিক্কাও চিমটি দিয়ে তুলে   

চুপেচুপে মুছে পকেটে ভরে, মানুষের চোখের আড়ালে;   


স্বার্থের প্রয়োজনে কাছে আসে এরা স্বার্থে সম্পর্ক গড়ে 

এদের তুমি একদম চিনবেই না স্বার্থ উদ্ধারের পরে 

মানুষ নামে মানুষ এরা মনেতে বিষের বিষ 

পশুর সাথে পার্থক্য এদের উনিশ আর বিশ।  


০৬ আগস্ট, ২০২১


#কবিতা 


মানুষরূপী 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



দাম্পত্যের রূপ

ঐ যে দম্পতিটাকে দেখছ!

সারাক্ষণ যেন ঝগড়া করছে! ও বাসায় সারাক্ষণই চিৎকার চেঁচামেচি 

একজন উত্তর বললে আরেকজনকে যেন দক্ষিণ বলতেই হয়

একজন পূবে গেলে আরেকজন যেন রওয়ানা দেয় পশ্চিমে 

আশেপাশের মানুষ দেখছে, এরা সারাক্ষণ লড়ছে;


রাত নেমে এসেছে, ঘুমানোর সময় হয়েছে

এবার এদের শোবার ঘরটায় ঢুকি তো! 

একজন বিছানার চাদর ঝাড়ছে, আরেকজন মশারীর দড়ি বাঁধছে 

যথারীতি দুজনার মুখ কিন্তু চলছে, ও কি! মুখে দেখি দুজনার হাসি! 

হাসতে হাসতে ঝগড়া করছে কি?

আরেকটু কাছে গেলাম;

দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে শুয়েছে

একজন তখনো যেন ঝগড়া করছে, মুখ চলছে, ঠোঁটে বিড়বিড়  

আরেকজনেরও মুখ চলছে, ঠোঁট বিড়বিড়; 


এবার আরেকটু কাছে গিয়ে কান পাতলাম

       - একজন আরেকজনকে বলছে, তোকে কি সারাক্ষণ ঝগড়া করতেই হয়? 

       - এবার আরেকজন প্রথম জনের ঠোঁটে তার ঠোঁট চেপে ধরে বললো, 

       - দিনের বেলায় ঝগড়া থামাবার জন্য তোর ঠোঁট আর আজকাল পাই কোথায়?

       - সারাক্ষণ তো সংসারের এটা ওটা সেটা, লেগেই আছে; আমার জন্য একটু সময় বের করিস? 


আরে! ওরা তো ঝগড়া করছে না! 

পরস্পর আদর করছে, চুমু খাচ্ছে; ভালোবাসাবাসি করছে  

ভালোবাসাবাসির সমাপ্তিতে একজন আরেকজনকে বুকে জড়িয়ে ধরে তলিয়ে গেলো শান্তির ঘুমে, 

এদের দাম্পত্যের পঁচিশ বছর হয়ে গেছে;

 

এরা ভালোবেসে ঘর বেঁধেছিল

এদের মধ্যে ভালোবাসাটুকু এখনো আছে, পুরোমাত্রাতেই আছে 

এদের ঘরটাও আছে, ভালোবাসায় গড়া মজবুত একটা ঘর। 


এবার ঐ দম্পতিটাকে দেখ,

সারাক্ষণ যেন মুখে মধু লেগেই আছে 

জান, বাচ্চা, বাবুটা ইত্যাদি আদরের ডাক  ছাড়া পরস্পর সম্বোধনই নেই যেন! 

সবার সামনে কত মধুরই না ব্যবহার পরস্পরের প্রতি

খাবার টেবিলে, তুমি এটা খাও; প্লিজ এটা একটু নিয়ে দেখ!

এই তরকারিটা না খুব মজা হয়েছে, আজ সব তোমার পছন্দের আইটেম রান্না করেছি

মুরুব্বীদের সামনেও পরস্পর গায়ে ঘেঁসে বসে আছে, কথা বলছে একদম যেন গালে গাল লাগিয়ে 

ঠোঁটের সাথে ঠোঁট লাগিয়ে, পারলে খাবার মুখে দেওয়ার আগে যেন পরস্পরের ঠোঁট মুখে তুলে নেয় 

খাবারের আগেই যেন চুমু খাবে খাবে এমন একটা ভাব 

দেখে কে বলবে না এরা ভালোবাসার লায়লি মজনু! 

 

রাত হয়ে এসেছে, এবার এদের শোবার ঘরটায় ঢুকি, 

একজন বিছানা থেকে তোষক নামাচ্ছে মাটিতে আরেকজন জাজিমের ওপর চাদর বিছাচ্ছে 

দুজনার কারো মুখে কোন কথা নেই  

তবে কি এরা কোন কারণে ঝগড়া করেছে?  

আরেকটু কাছে গেলাম;

একজন শুয়ে পড়লো খাটের ওপর জাজিমে, আরেকজন মাটিতে তোষকে 

দুজনার কোলে দুটি কোলবালিশ, ঘরে পিন পতন নৈঃশব্দ্যতা; 

 

অনেকক্ষণ পর একজনের দীর্ঘশ্বাস ভেসে এলো 

আরেকজনের মুখ ঝামটা - দীর্ঘশ্বাস বারান্দায় গিয়ে ফেলো 

অসহ্য হয়ে গেছি অভিনয় করতে করতে, 

এটা কোন জীবন হলো? এভাবে আর কতদিন কাটানো যায়? 


এবার আরেকটু কাছে গিয়ে কান পাতলাম

        - একজন আরেকজনকে বলছে, তোমার কি প্রতি রাতে ঝগড়া না করলেই চলে না?  

        - এবার আরেকজন মুখিয়ে উঠলো, তোমার মত অমানুষ কপালে জুটলে চলবে কিভাবে? 

        - এতদিন হয়ে গেলো, শোধরাতে পেরেছ নিজেকে? আর কত সময় দেব? 

        - আরেকজনেরও গলা চড়ছে, তুমি বদলেছ নিজেকে? সারাক্ষণ ঠ্যাস মেরে কথা বলা, কিভাবে আমাকে ছোট করবে তার পাঁয়তারা! কখনো বুঝতে চেয়েছ আমাকে? 

        - এভাবে ক্রমাগত কথা কাটাকাটি চললো প্রায় অর্ধ রাত ধরে, তারপর মনে হয় প্রায় মধ্যরাতের কোন একটা সময় কথা কাটাকাটিতে ক্লান্ত হয়ে এরা ঘুমিয়ে পড়লো 

        - দুজন দুজায়গায় বুকে দুটি কোলবালিশ জড়িয়ে,  


ওহ, ওরা তো প্রেম করছে না,

পরস্পর আদর করছে না, চুমু খাচ্ছে না; ভালোবাসাবাসিও হচ্ছে না 

এদের মধ্যে ঠাণ্ডা একটা যুদ্ধ চলছে, 

এরা এক ঘরে বসবাসরত নামে দম্পতি 

এদের দাম্পত্যের মাত্র পাঁচ বছর পেরিয়েছে; 


এরাও ভালোবেসে ঘর বেঁধেছিল

আজ এদের মধ্যে ভালোবাসার রেশ মাত্রও অবশিষ্ট নেই, 

শুধু নড়বরে ঘরটাই রয়ে গেছে, 

তাও কি আছে?  ওটাও তো আজ ভাঙে তো কাল ভাঙে। 


বাইরে থেকে দেখে একটা দম্পতি’কে বিচার করতে যেও না 

বাইরে থেকে আসলে দাম্পত্য বিচার করা যায় না 

দাম্পত্য দুজনার মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস, পারস্পরিক নির্ভরশীলতা 

পরস্পরের প্রতি সম্মানবোধ, পরস্পরের জন্য ভালোবাসা; 

ওটা শুধু দম্পতিরা নিজেরাই অনুভব করতে পারে 

আর বাইরের মানুষ শুধু দাম্পত্যের বাইরের রূপটাই দেখে।  

 


০৩ আগস্ট, ২০২১


#কবিতা 


দাম্পত্যের রূপ

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





চূড়ান্ত গন্তব্য

একটা একটা করে দিন যাচ্ছে 

একদিন একদিন করে বয়স বাড়ছে

বাড়ছে কি? 

কমছে না তো!  

আমি তো দেখছি কমছে; 

 

ঐ যে একটা চূড়ান্ত গন্তব্য স্থির করা ছিলো না?

সেই জন্মেরও আগে যে গন্তব্যটা নির্ধারণ করে পাঠানো হয়েছিলো! 

জন্মের সাথে সাথেই ঐ গন্তব্যের দিকে পথ যাত্রা

আমি জীবন নামক এক ট্রেনে চেপে বসেছি 

একটি একটি দিন এগোচ্ছি 

ক্যালেন্ডারের পাতায় দেখছি একদিন একদিন বয়স বাড়ছে 

ট্রেনের জানালায় উঁকি দিয়ে দেখছি, গন্তব্য এগোচ্ছে 

আমার বয়স বাড়ছে আবার সময় কমছে

এটা বিপরীতধর্মী  কথা হয়ে গেলো না?   

হোক গিয়ে! ঐ তো গন্তব্য যেন চোখেই দেখা যাচ্ছে! 

আমি আমারটা দেখতে পাচ্ছি  

তোমরা কেউ তোমাদেরটা পারছ কি? 


এই যে এত বড় একটা যাত্রায় নেমেছি! 

পথে কত কিছুই না কুড়িয়েছি! 

কত কিছু দেখলাম

কত মানুষের সাথে পরিচয় হলো

পরিচয় হলো টাকার সাথে

পরিচয় ধনসম্পদের সাথে 

পথে পথে কুড়িয়েছি কত কত সম্পর্ক!  

কিছু কিছু সম্পর্ক নেমে গেছে পথেই কোন এক স্টেশনে

কিছু কারণে কিছু একদম অকারণে 

আবার নতুন সম্পর্ক নতুন স্টেশনে উঠেছে

কাছে এসেছে, পাশে বসেছে, আপন হয়েছে

তারপর কোন একদিন কি জানি এক স্বার্থ বলে একটা পাথর কুড়িয়েছিলাম না! 

ওটায় আঘাত পেয়ে আবার দূরে সরে গেছে, নেমে গেছে পরের স্টেশনে; 


এই যে পথে পথে ক্রমাগত কুড়িয়ে যাওয়া এত এত অর্থ! 

সম্পদের পাহাড় 

এত এত সব সম্পর্ক!  

আচ্ছা আমার চরম গন্তব্য চলে এলে এগুলো নিয়ে নামতে পারব তো!

নাকি কিছু রয়ে যাবে জীবন গাড়িটায়? 

জানো! আমার না পেছনে কিছু ফেলে যেতে খুব খারাপ লাগে,

এত কষ্ট করে কুড়ানো সব জিনিসপত্র! কেউ ফেলে যায়?


ক্যালেন্ডারে একটি একটি দিন যায়, গাড়ি একটু একটু এগোয়  

জানালা দিয়ে তাকিয়ে ঐ দূরে স্টেশনটা দেখছি 

আর একটু একটু করে সব গুছিয়ে নিচ্ছি 

একটু একটু করে ট্রেনের দরজার কাছে নিয়ে রাখছি

আমার স্টেশনে ট্রেনটা থামলেই সব নিয়ে নেমে যাব, 

তোমরাও সব গুছিয়ে রাখ কিন্তু! 

জীবনের যা কিছু উপার্জন; 

 

ঐ তো সামনে একটা স্টেশন এলো

ট্রেনটা ক্ষণিকের জন্য থামলো, 

এখানে আমি নামব কি? 

উঁহু! আমার বন্ধুটা নেমে গেলো, 

এই, এই! 

এই শোন! 

ওকি? তোর জিনিসপত্রগুলো নিয়ে নামলি না? 

সব তো গুছিয়ে রেখেছিলি দরজার সামনে,  

কিছু না নিয়েই নেমে গেলি?

এত এত টাকা, এত এত সম্পত্তি

এগুলো সাথে নিলি না? 

এই যে তোর এত এত আত্মীয় স্বজন! 

এদের নিয়ে গেলি না? 


হায়! ট্রেনটা আবার চলতে শুরু করলো আরেক গন্তব্যে

আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম আমার বন্ধু মাটিতে পড়ে রইলো শব হয়ে

কেউ গোসল করালো, কেউ সাদা কাফন পড়ালো

জানো! তারপর না ওকে নিয়ে রেখে দিলো ছোট্ট একটা মাটির ঘরে

আচ্ছা! তোমরাই বলো!

এত এত সম্পদের মালিক'কে কি না শুইয়ে দিলো মাটির ঘরে? 

ওর বুঝি কষ্ট হবে না! 


ঐ তো সামনে আরেকটা স্টেশনে ট্রেনটা থামছে যেন 

এবার কে নামবে? 

আমি 

তুমি 

না সে?

আমার স্টেশন এলে আমাকে অন্তত টাকাগুলো সাথে নিতে দিও! 

একদম কপর্দকহীন অবস্থায় যাওয়াটা কি ঠিক হবে? 


ট্রেনটা থামলো, 

কোত্থেকে জানি একটা আওয়াজ এলো

ওরে! বোকা নাম,

আমি বললাম, টাকাগুলো সাথে নেই?  

ভারিক্কী গলায় কেউ ধমক দিয়ে বললো, 

তোর আমলনামাটা সাথে করে নেমে যা।  

 

 

০২ আগস্ট, ২০২১


#কবিতা 


চূড়ান্ত গন্তব্য

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত।