শুক্রবার, ২০ আগস্ট, ২০২১

সম্পত্তির নেশায়

উপার্জন তো করছি আমরা সবাই! 

বেঁচে থাকার জন্য, একটু ভালো থাকার জন্য

যত না নিজেদের জন্য তারচেয়ে বেশি সন্তানদের জন্য

তাই না? 


আমার সেই ছাত্রজীবন থেকে শুরু 

তারপর চাকরি

তারপর ব্যবসা

তিলে তিলে সঞ্চয়

মাটির ব্যাঙ্ক থেকে বেসরকারি ব্যাঙ্কে একটা একাউন্ট

ওখানে থোক কিছু সঞ্চয়, দুর্দিনের জন্য  

তিলে তিলে গড়া অল্প কিছু সহায় সম্পত্তি 

মাথা গুঁজার ঠাই, একটা বাড়ি 

যাতায়াতের জন্য একটা গাড়ি,

ভালো ভাবে বেঁচে থাকার জন্য অনেক হয়েছে না?

আমার তো হয়েছে;


অনেকের দেখি হয় না,

টাকা টাকা করতে করতে টাকা বেশুমার 

এখানে ওখানে সেখানে সম্পত্তির পাহাড় 

গ্যারেজে নামি দামি ব্র্যান্ডের গাড়ির সমাহার 

তবুও কি মন ভরে?

ধ্যাত! পাঁচ দশটা ফ্ল্যাটে কি হয়? কিংবা দু চারটা বাড়িতে!

আরে! নিজ নামে কমার্শিয়াল একটা টাওয়ার করতে না পারলে মন শান্ত হয়?

তারপর আরেকটা, আরেকটা

আচ্ছা! একটা শপিং কমপ্লেক্স করা উচিৎ না? 

দেশে অনেক হয়েছে! এবার কিছু বাড়ি কেনা যাক অন্যান্য দেশে

শুনেছি মালয়েশিয়ায় নাকি বাড়ি খুব সস্তা

আরে আমেরিকা আর অস্ট্রেলিয়া তো ব্যবসায়ীদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে

ওখানে কিছু টাকা ছড়িয়ে না আসলে কেমন হয়! 

টাকাগুলো এ ব্যাঙ্ক ও ব্যাঙ্কে বড্ড ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে

নিজের একটা ব্যাঙ্ক না হলেই নয়! 

মার্সিডিজ তো সবার কাছেই থাকে! এবার একটা বুগাটি কিংবা রোলস রয়েস!

আজকাল বড্ড বেশি বিদেশে যাওয়া হচ্ছে, 

একটা প্রাইভেট জেট হলে খারাপ হয় না;


চাহিদা হাঁটি হাঁটি পা পা করতে করতে দৌড়োতে শুরু করেছিলো সেই কবেই

তারপর পাহাড় পর্বত ডিঙিয়ে এভারেস্ট ছুঁয়েছিল 

আজকাল আকাশে উড়তে উড়তে প্রায় ঐ চাঁদ ছুঁয়ে ফেলেছে, 

মন ভরছে কি?


আচ্ছা! একবার একটু অন্যরকম চিন্তা করে দেখি তো! 

প্রথম যে বন্ধুটা আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলো! সে সেই ছাত্র জীবনে

তার পরের জন, যখন চাকরি শুরু করেছিলাম 

তারপর একজন দুজন করে ওদের সংখ্যাটা কমতে শুরু করেছে

আজকাল কিন্তু খুব কাছের বন্ধুগুলো কড়ায় গুনতে পারি

এরপর যে কোন সময় আমি, যে কোন সময় তুমি, যে কোন সময় সে;


 - যে ছাত্রজীবনে চলে গিয়েছিলো 

তার পৈত্রিক সম্পত্তি ভাগাভাগি হয়ে গিয়েছিলো ভাইবোনদের মধ্যে,

ভাইদের সময় কোথায় তার কথা ভাবার?  


 - যে চাকরি করতে করতে চলে গিয়েছিলো

তারও কোন সন্তান ছিলো না, বৌটা আরেকটা বিয়ে করে এখন সংসার করছে

পৈত্রিক সম্পত্তি ভোগ করছে ভাই বোনরা, ওকে স্মরণ করে কে? 


 - তারপর যারা সন্তান সন্ততি রেখে চলে গিয়েছে, তাদের মধ্যে 

যাদের অল্প ব্যাঙ্ক ব্যাল্যান্স যা ছিলো, সন্তানদের পড়ালেখাতেই শেষ 

যারা কিছু সহায় সম্পত্তি রেখে গিয়েছিলো, সন্তানদের মধ্যে মারামারি কাটাকাটি ঝগড়া 

যাদের সম্পত্তির পরিমাণ যত বেশি ছিলো, তাদের সন্তানদের মধ্যে ঝগড়া তত বেশি, 


ঐ যে বাবা'টা তিল তিল করে যে সঞ্চয় রেখে গিয়েছিলো! তাকে স্মরণ করার সময় কোথায়?

বরং মাঝে মধ্যেই গালাগালির পাহাড়, কেন আরেকটু বেশি রেখে যায় নি এই বলে,  

প্রথম প্রথম মৃত্যু দিবসে হুজুর ডাকিয়ে দোয়ার আয়োজন করতো!

তারপর সময়ের সাথে মৃত্যু দিবসটাই ফিকে হতে হতে কেউ কেউ হয়তো ভুলেই গেছে;

 

বাবার'ই যখন এই অবস্থা! তখন দাদা, পর-দাদাদের অবস্থান কোথায়?

অথচ বাবা'টা ঐ মাটির ঘরটায় শুয়ে সন্তানের দিকে চেয়ে থাকে একটু দোয়ার আশায়

তার এত এত সহায় সম্পত্তি কাজে লাগে কোথায়?

না এ জীবনে সে ভোগ করে যেতে পারলো!

না ও জীবনে সম্পদের পাহাড় তার কোন কাজে লাগলো! 


অথচ আমরা পাগলের মত ছুটছি সম্পত্তির পাহাড় গড়ার নেশায়। 

একটু চিন্তা করার সময় কি এখনো হয় নি আমাদের? 



২১ আগস্ট, ২০২১


#কবিতা 


সম্পত্তির নেশায়

 - যাযাবর জীবন 




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন