শুক্রবার, ২০ আগস্ট, ২০২১

দাম্পত্যের রূপ

ঐ যে দম্পতিটাকে দেখছ!

সারাক্ষণ যেন ঝগড়া করছে! ও বাসায় সারাক্ষণই চিৎকার চেঁচামেচি 

একজন উত্তর বললে আরেকজনকে যেন দক্ষিণ বলতেই হয়

একজন পূবে গেলে আরেকজন যেন রওয়ানা দেয় পশ্চিমে 

আশেপাশের মানুষ দেখছে, এরা সারাক্ষণ লড়ছে;


রাত নেমে এসেছে, ঘুমানোর সময় হয়েছে

এবার এদের শোবার ঘরটায় ঢুকি তো! 

একজন বিছানার চাদর ঝাড়ছে, আরেকজন মশারীর দড়ি বাঁধছে 

যথারীতি দুজনার মুখ কিন্তু চলছে, ও কি! মুখে দেখি দুজনার হাসি! 

হাসতে হাসতে ঝগড়া করছে কি?

আরেকটু কাছে গেলাম;

দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে শুয়েছে

একজন তখনো যেন ঝগড়া করছে, মুখ চলছে, ঠোঁটে বিড়বিড়  

আরেকজনেরও মুখ চলছে, ঠোঁট বিড়বিড়; 


এবার আরেকটু কাছে গিয়ে কান পাতলাম

       - একজন আরেকজনকে বলছে, তোকে কি সারাক্ষণ ঝগড়া করতেই হয়? 

       - এবার আরেকজন প্রথম জনের ঠোঁটে তার ঠোঁট চেপে ধরে বললো, 

       - দিনের বেলায় ঝগড়া থামাবার জন্য তোর ঠোঁট আর আজকাল পাই কোথায়?

       - সারাক্ষণ তো সংসারের এটা ওটা সেটা, লেগেই আছে; আমার জন্য একটু সময় বের করিস? 


আরে! ওরা তো ঝগড়া করছে না! 

পরস্পর আদর করছে, চুমু খাচ্ছে; ভালোবাসাবাসি করছে  

ভালোবাসাবাসির সমাপ্তিতে একজন আরেকজনকে বুকে জড়িয়ে ধরে তলিয়ে গেলো শান্তির ঘুমে, 

এদের দাম্পত্যের পঁচিশ বছর হয়ে গেছে;

 

এরা ভালোবেসে ঘর বেঁধেছিল

এদের মধ্যে ভালোবাসাটুকু এখনো আছে, পুরোমাত্রাতেই আছে 

এদের ঘরটাও আছে, ভালোবাসায় গড়া মজবুত একটা ঘর। 


এবার ঐ দম্পতিটাকে দেখ,

সারাক্ষণ যেন মুখে মধু লেগেই আছে 

জান, বাচ্চা, বাবুটা ইত্যাদি আদরের ডাক  ছাড়া পরস্পর সম্বোধনই নেই যেন! 

সবার সামনে কত মধুরই না ব্যবহার পরস্পরের প্রতি

খাবার টেবিলে, তুমি এটা খাও; প্লিজ এটা একটু নিয়ে দেখ!

এই তরকারিটা না খুব মজা হয়েছে, আজ সব তোমার পছন্দের আইটেম রান্না করেছি

মুরুব্বীদের সামনেও পরস্পর গায়ে ঘেঁসে বসে আছে, কথা বলছে একদম যেন গালে গাল লাগিয়ে 

ঠোঁটের সাথে ঠোঁট লাগিয়ে, পারলে খাবার মুখে দেওয়ার আগে যেন পরস্পরের ঠোঁট মুখে তুলে নেয় 

খাবারের আগেই যেন চুমু খাবে খাবে এমন একটা ভাব 

দেখে কে বলবে না এরা ভালোবাসার লায়লি মজনু! 

 

রাত হয়ে এসেছে, এবার এদের শোবার ঘরটায় ঢুকি, 

একজন বিছানা থেকে তোষক নামাচ্ছে মাটিতে আরেকজন জাজিমের ওপর চাদর বিছাচ্ছে 

দুজনার কারো মুখে কোন কথা নেই  

তবে কি এরা কোন কারণে ঝগড়া করেছে?  

আরেকটু কাছে গেলাম;

একজন শুয়ে পড়লো খাটের ওপর জাজিমে, আরেকজন মাটিতে তোষকে 

দুজনার কোলে দুটি কোলবালিশ, ঘরে পিন পতন নৈঃশব্দ্যতা; 

 

অনেকক্ষণ পর একজনের দীর্ঘশ্বাস ভেসে এলো 

আরেকজনের মুখ ঝামটা - দীর্ঘশ্বাস বারান্দায় গিয়ে ফেলো 

অসহ্য হয়ে গেছি অভিনয় করতে করতে, 

এটা কোন জীবন হলো? এভাবে আর কতদিন কাটানো যায়? 


এবার আরেকটু কাছে গিয়ে কান পাতলাম

        - একজন আরেকজনকে বলছে, তোমার কি প্রতি রাতে ঝগড়া না করলেই চলে না?  

        - এবার আরেকজন মুখিয়ে উঠলো, তোমার মত অমানুষ কপালে জুটলে চলবে কিভাবে? 

        - এতদিন হয়ে গেলো, শোধরাতে পেরেছ নিজেকে? আর কত সময় দেব? 

        - আরেকজনেরও গলা চড়ছে, তুমি বদলেছ নিজেকে? সারাক্ষণ ঠ্যাস মেরে কথা বলা, কিভাবে আমাকে ছোট করবে তার পাঁয়তারা! কখনো বুঝতে চেয়েছ আমাকে? 

        - এভাবে ক্রমাগত কথা কাটাকাটি চললো প্রায় অর্ধ রাত ধরে, তারপর মনে হয় প্রায় মধ্যরাতের কোন একটা সময় কথা কাটাকাটিতে ক্লান্ত হয়ে এরা ঘুমিয়ে পড়লো 

        - দুজন দুজায়গায় বুকে দুটি কোলবালিশ জড়িয়ে,  


ওহ, ওরা তো প্রেম করছে না,

পরস্পর আদর করছে না, চুমু খাচ্ছে না; ভালোবাসাবাসিও হচ্ছে না 

এদের মধ্যে ঠাণ্ডা একটা যুদ্ধ চলছে, 

এরা এক ঘরে বসবাসরত নামে দম্পতি 

এদের দাম্পত্যের মাত্র পাঁচ বছর পেরিয়েছে; 


এরাও ভালোবেসে ঘর বেঁধেছিল

আজ এদের মধ্যে ভালোবাসার রেশ মাত্রও অবশিষ্ট নেই, 

শুধু নড়বরে ঘরটাই রয়ে গেছে, 

তাও কি আছে?  ওটাও তো আজ ভাঙে তো কাল ভাঙে। 


বাইরে থেকে দেখে একটা দম্পতি’কে বিচার করতে যেও না 

বাইরে থেকে আসলে দাম্পত্য বিচার করা যায় না 

দাম্পত্য দুজনার মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস, পারস্পরিক নির্ভরশীলতা 

পরস্পরের প্রতি সম্মানবোধ, পরস্পরের জন্য ভালোবাসা; 

ওটা শুধু দম্পতিরা নিজেরাই অনুভব করতে পারে 

আর বাইরের মানুষ শুধু দাম্পত্যের বাইরের রূপটাই দেখে।  

 


০৩ আগস্ট, ২০২১


#কবিতা 


দাম্পত্যের রূপ

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন