সেদিন খুব হঠাৎ করেই এক পুরনো বন্ধুর সাথে দেখা হলো
অনেক অনেকদিন পরে দেখা
কেমন আছিস, কোথায় আছিস ইত্যাদি অনেক কথা বলতে বলতে জানলাম
তার খুব সম্প্রতি সময়ে দাম্পত্যের বিচ্ছেদ হয়েছে
শুনে আমাকে দুঃখিত হতে দেখে সে হেসে ফেলে বললো
- তুই দুঃখ পাচ্ছিস কেন রে? এটা তো আমার জন্য চরম আনন্দের অনেকদিনের কাঙ্ক্ষিত একটা বিষয়; আহ! আমি মুক্ত
আমি চমকিত তার মুখের দিকে তাকিয়ে সেখানে আনন্দই দেখলাম, চোখে কি একটা খুশির আভা যেন! মানুষের চোখ মিথ্যে বলে না, সে আসলেই আনন্দিত; কিন্তু কেন?
আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই সে বললো,
শোন, জীবনের গল্প বলি
এক ছিলো টোনা আর এক ছিলো টুনি
তারা ভালোবেসে বিয়ে করলো, প্রথম বেশ কিছুদিন ভালোই ভালোবাসা হলো
তারপর হালকা কিচিমিচি, তারপর তারস্বরে, তারপর ঠোকাঠুকি
তারপর শব্দ চলে গেলো পাশের বাড়ি, সেখান থেকে আত্মীয় স্বজন
বাবার বাড়ি, শ্বশুর বাড়ি।
মেলানোর চেষ্টা হয়েছে দফায় দফায় কয়েক দফা
প্রথম প্রথম মিল হয়েওছিলো, ঠোকাঠুকি থেকে চুমোচুমি, তারপর সেই তথৈবচ
ফের কিচিমিচি থেকে বাবার বাড়ি হয়ে শ্বশুর বাড়ি
তারপর ফের মিল মহব্বত আবার ঠোকাঠুকি, এভাবে ক্রমাগত
তারপর কোন একটা সময় দুজনেই ক্লান্ত বিধ্বস্ত, তারপর একদম নির্লিপ্ত
একটা সময় কারোরই কারো প্রতি কোন টান অবশিষ্ট ছিলো না
তারপর দুজনার মতানৈক্যে সম্মানজনক ছাড়াছাড়ি
যে যার মত করে যার যার বাড়ি;
গল্পটা বলার সময় একটু বিষণ্ণতা কি তাকে ছুঁয়েছিলো?
এক ফাঁকে কোথায় যেন মনে হয়েছিলো গলাটা ধরে এসেছিলো
তারপর আবার চটজলদি সামলে নেয়া
আজকাল অভিনয়ে সবাই আমরা বড্ড পটু।
আরেকদিন আরেক বন্ধুর সাথে দেখা হলো
সেও অনেককাল বাদে
আমায় দেখে জড়িয়ে ধরলো, তারপর টেনে নিয়ে বসলো কফি শপে
বন্ধুকে দেখেই বুঝলাম চোখে মুখে কেমন এক সুখের আলো ছড়িয়ে আছে,
ওহ! বলতে ভুলে গিয়েছি আমরা যখন বন্ধুবান্ধব সবাই বিয়ের কর্মটি সেরে ফেলেছিলাম
তখনো আমার এই বন্ধুটি যেন ঐ পথ থেকে অনেক দূরে, বিয়ের নাম শুনলেই বলতো দূর দূর! ঝামেলা
তারপর অনেকগুলো বছর আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন;
আজ অনেক বছর পরে কফির টেবিলে জিজ্ঞাস করলাম, কিরে পাগলা! বিয়ে করেছিস?
লাজুক মুখ করে উত্তর দিলো, হ্যাঁ রে
ঐ আর কি শেষ পর্যন্ত বাবা-মায়ের ইচ্ছে
ঢুকে গেলাম দাম্পত্যে;
আমি হেসে বললাম, কেন তোর ইচ্ছে ছিলো না?
সেও হেসে উত্তর দিলো, ইচ্ছে যে একবারে ছিলো না তা কিন্তু নয়
আসলে হয়ে উঠে নি তখন যখন সবার সাধারণত হয়,
তা এখন কেমন আছিস?
- চোখে মুখে খুশির দ্যুতি ছড়িয়ে বললো, ভালো রে! অনেক অনেক ভালো
তা কবে বিয়ে করলি? আমাদের দাওয়াত দিলি না যে!
- সে বললো, ঐ আর কি হুট করে হয়ে গেলো।
এই তো বছর পাঁচেক হলো
আমি বললাম, যাক দেরিতে হলেও তো হলো!
আমার ছোট ছেলের বয়সও তো তাও বছর বিশেক হয়ে গেলো
তোর এত বছর পর হুশ হলো! তাও ভালো তাও ভালো,
সে লাজুক হেসে বললো, কি আর করব বল?
আমি বললাম, আচ্ছা বাদ দে
তোর সংসারের কথা বল;
সে বললো, তবে শোন
আমাদের বিয়েটা বাবা-মায়ের আয়োজন
বয়সের সাথে সাথে আমিও যেন বুঝতে পারছিলাম একাকীত্ব ভীষণ
দাম্পত্যটা হয়ে উঠেছিলো জীবনের প্রয়োজন
তারপর সে এলো, ঘর আলো হলো
বয়সের ফারাকটা যদিও একটু বেশিই ছিলো তবুও দিনে দিনে অনেকটা এডজাস্ট হয়ে এলো
এক সাথে থাকা থেকে একটু টান তারপর ভালোবাসা
তারপর টুকটুক করতে করতে সংসার এগিয়ে চলা
এর মধ্যে বাবা গত হয়েছেন, তোর ভাবি শাশুড়ির অনেক খেয়াল রাখেন
আমার মাও বৌমা বলতে অজ্ঞান
আর তোর ভাবির এটা করো না ওটা করো না করে আমার ওপর যত শাসন
দেরিতে বাসায় ফিরলে যত অভিমান
আমারও কখন বাসায় যাব! কখন যাব! অস্থির একটা টান
বেশ ভালোই আছি রে আমরা,
ওহ, শোন! তুই কিন্তু চাচা হবি বলে মুখ আলো করা হাসির দ্যুতি!
গল্পটা বলার সময় গলা থেকে একটা কি আনন্দের চ্ছটা!
মাঝে মধ্যে বৌ এর কথা মনে করে চোখে খুশির আভা,
এটা অভিনয় হতে পারে না
আমি বন্ধুর হাসিমুখের দিকে তাকিয়ে থাকি;
আচ্ছা! দাম্পত্যটা কি?
কারো কাছে ভালোবাসা কারো কাছে অসহনীয় বন্ধন
কেউ ভালোবেসে কাটিয়ে দেয় জীবন কেউ বা বাধ্য হয়ে মানিয়ে নেয় দুজন
কিছু দাম্পত্য বড্ড স্বল্প মেয়াদী - এদের দুজনেই যেন ইগোর খেয়ালী
কিছু দাম্পত্য গড়িয়ে গড়িয়ে কিছুদূর চলে - এরা মানিয়ে নিতে চায় চেষ্টার বলে
তারপর অনেকগুলো টিকে যায়, দুজনার চেষ্টায়
আর বাকিগুলো ভেঙে যায়, দুজনার অসহিষ্ণুতায়;
তবে বেশীরভাগ দাম্পত্য শেষ পর্যন্ত চলে, মরণ যতদিন ডাক না দিয়ে বলে
এগুলোর মধ্যেও কিছু আছে মানিয়ে নেয়া, কিছু মেনে নেয়া আর বাকিগুলো ভালোবাসা;
কিছু ছাড় দিয়ে কিছু ছেড়ে দিয়ে দুজনার মেনে নেয়া আর মানিয়ে নেয়াই দাম্পত্য
- কেউ দাম্পত্যে থেকে বোঝে কেউ ভেঙে যাওয়ার পর।
০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
#কবিতা
দাম্পত্যের রকমসকম
- যাযাবর জীবন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন