শনিবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৩

জীবন অঙ্ক



জীবন অঙ্ক
- যাযাবর জীবন

অঙ্ক কষেই চলেছি জীবনের
বোধোদয়ের পর থেকে
কিংবা জীবন যুদ্ধের জোয়াল
যেদিন থেকে কাঁধে;
সরল, সুদকষা, পাটীগণিত, বীজগণিত
ক্যালকুলাস কিংবা জ্যামিতিক
জীবনের প্রয়োজনে যত হিসাব নিকাশ
সবই গাণিতিক।

এক এক কুড়িয়ে যোগ করছি আনন্দ নহর
বিসর্জনের বিয়োগে ছুঁড়ে ফেলা হতাশার গহ্বর
গুনে গুনে বাড়ানো খুশির সরোবর
বেটে চলেছি ভাগে দুঃখ বরাবর;
জীবনের ফলাফল?
বিশাল এক "শূন্য"।

সবার জীবনের সমীকরণ মেলে না
আমারটার গলদ রয়ে গেছে হয়তো গোড়াতেই কোথায়
সরল জীবন অঙ্কের, খুঁজে পাইনি তার
হারিয়েছিল কোথায় সে সোনামুখী সুঁই, কোন খড়ের গাঁদায়।

সারাজীবন আশেপাশের মানুষগুলোকে মিলিয়ে হয়েছি ধন্য
অথচ আমারই জীবন ফলাফল বারে বারে অঙ্ক কষে পাই "শূন্য"



বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৩

নীল সবুজের পালা


নীল সবুজের পালা
- যাযাবর জীবন

বীজ থেকে শুরু
অঙ্কুরোদগম হতে হতে অরণ্য
কত মেঘ রৌদ্দুর
রাতের মিটি মিটি তাঁরা
অন্ধকারের গান
কিংবা ঝিঁঝিঁ'র ডাকে সাড়া;
নগর সভ্যতায় পরাকাষ্ঠায়
মানব অসভ্যতা ঢাকা
কিংবা চারিত্রিক?
সে তো বইয়ের ভাষার বাহুল্য মাত্র,
চরিত্র কোথায়?
কাপড়?
সে তো নিমিত্ত মাত্র
দু টুকরো, চারটুকরো
কিংবা হিজাব পড়া;
চোখের পর্দা না থাকলে দেহের পর্দায় কি আসে যায়?
নতুন বর্ষায় নতুন পানি নতুন জীবন আনে
বৃক্ষরা নতুন পাতা ছাড়ে
নীলাকাশের নীচে সবুজ অরণ্য শোভা পায়।

মানুষগুলো কবে সবুজ সতেজ হবে?
অসভ্য ভালোবাসাগুলো নীল হয় কেন?

পথ


পথ
- যাযাবর জীবন

জল ছুঁয়ে দিস
জলের টুংটাং
হৃদয় ছুঁয়ে যাস
হাহাকার জাগানিয়া গান;
চলতে পথে হাত ছেড়ে দিস
কান্নার জলকুমারী চোখে বাসা বাঁধে,
তবুও পথ ভিন্ন, বিভক্ত দুটি দিকে
সমান্তরাল রেলের পাতে বয়ে চলেছে;
কি দরকার ছিল বৃষ্টির কদমের
প্রগলভ যৌবনবতী রূপ ডানা মেলা
প্রথম বাদল ছোঁয়ায়;
অথবা আমার কদমে তোর কদম মেলা
দুটো পথ দুজনায়।

স্বপ্নের ভাঙা কাঁচে সেই তো পা কাটলো আমারই;
তোর নতুন মধুচন্দ্রিমা।




বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৩

দায়


দায়
- যাযাবর জীবন

আমি তোর খবর নিতেই থাকবো
হয় মুঠোফোনে নয় অন্য কোন ভাবে
উপায় বের করে নেব নিজের মত করে;
হয়তো প্রতিদিন
কিংবা সপ্তাহে একদিন
অথবা মাসে,
যখন তুই থাকিস যেভাবে।

কতদিন ধরে?

ঠিক ততদিন,
যতদিন অবহেলার ধোঁয়া চোখে না পড়ে
কিংবা উপেক্ষার অনুভব হৃদয় অনুভবে।

মানুষ বড্ড অভিমানী
আমি তারচেয়ে বেশি এককাঠি;
উপেক্ষার অনুভব
কিংবা অবহেলার ধোঁয়া
কেন জানি কোনটাই সহ্য হয় না;
এক একজন খুব অবহেলায় মুঠোফোন ধরে
এক একজন খুব সুন্দর করে এড়িয়ে চলে পাশ কাটিয়ে;
উপেক্ষাও যে একটা শিল্প
বুঝি নতুন করে, নতুন অনুভবে।

আমারই কেন সকল দায়
নানা রঙের সম্পর্ক রক্ষায়?

মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৩

সারা সারা


সারা সারা
- যাযাবর জীবন

মারার জন্য বন্দুক কিংবা পিস্তলের গুলি?
অপচয়ের কি আছে দরকার?
আরে আরে মারতে চাইলে নারীর কাছে
অভাব কি কলার?
ভঙ্গুর হৃদয়ে একটি কলার টোকাই তো যথেষ্ট
কিংবা একটু ছলার;
আর তারপর?
চায়ের কাপে ধোঁয়া তুলে
পায়ের ওপর পা তুলে আয়েশ,
মিটিয়ে নেয়া কোমল-মতি নারীর
মনে ছিল যত খায়েশ;
আর তারপর?
শুধুই ভাবলেশহীন চোখে দেখে যাওয়া
কোন এক কালের ভালোবাসার নরের
তিলে তিলে ধ্বংস
জীবন আর মরণ সারা সারা।

কলার ছিলকায় পা পিছলালে ধপাস, হয়তো একটু কাঁদে
তবুও তো বেঁচে গেল;
নারীর কলার ফাঁদে, পড়লো তো পা গহীন খাঁদে
বাঁচলে জীবন্মৃত, নয়তো জীবন গেল
কি আসে যায় সারা সারা।



শব্দ না নৈঃশব্দ্যের নগরী?



শব্দ না নৈঃশব্দ্যের নগরী?
- যাযাবর জীবন

মনে হয় যেন অন্য কোন যুগ ছিল
মনে হয় অন্য কোন সময় থেকে আগত
সেই তো ঐদিনের সব দিন গুলো;
কিচির মিচির পাখির ডাকে ঘুম ভাঙত
কোন একটা সময়
শহরে সকাল হতো;
এখন প্যাঁ পুউ প্যাঁ হর্ন বাজে
কানের ডগায়
মস্তিষ্কের ভেতর
রাস্তায় রাস্তায়
শহরের ঘুম ভাঙ্গে
আমরা গভীর ঘুমে মগ্ন
ঘুমের বড়ির নেশায়
ভোরের সূর্যের সাথে আজ
ঘুম ভাঙ্গার সম্পর্ক কোথায়?

একটা সময় ছিল
অলস দুপুরে পাগলা কোকিলের কুহুতানে
বড্ড মন কেমন করা সে দিনগুলো
হারিয়েই গেল জীবন থেকে
নগর ভেলায় ভেসে সে দিনগুলো;
দিনগুলো হারালো
না কোকিল গুলো?
নাকি তাদের সুরের মূর্ছনা মুছে গেলো
কিংবা নগর জীবনের গাড়ির শব্দে
চাপা পড়া ভাবনাগুলো;
বড্ড নস্টালজিয়ায় খুব মাঝে মাঝে
কেমন হঠাত করে
শব্দের জগতে নৈঃশব্দ্যের ঢেউ ওঠে
ব্যস্ত নগরীতে হাজার শব্দের মিশ্রণে
কে আর কোকিলের ডাক মনে করে!

সেই অনেক দিন আগে
এই তো এই ব্যস্ত নগরীতে
কে বলবে রাতের নিস্তব্ধতা
ভর করতো কানে এসে
দূর থেকে রেলের কু ঝিক ঝিক ঝিক ধ্বনি
নৈঃশব্দ্যের খান খান লেপ মুড়ি
ঘুম ঘুম চোখে রাতের গভীরে
কান পেতে শোনা অবচেতন মনে;
কিংবা ঐ শেয়ালের ঝাঁক, মনে পড়ে?
এই তো সেদিন
গুলশান, বনানীর লেকের পাড়ে
ভয় লাগতো খুব মধ্য দুপুরের রোদে
বিকেলের আধো অন্ধকারে
প্রায়ঃশই ভেসে আসা বাঘডাশার ডাক
রাতের বেলায় হুক্কা হুয়া
লেপ মুড়ি জুজু বুড়ি
মায়ের বুকের তলা
খুব মনে পড়ে; এইতো সেদিনকার কথা
ব্যস্ত এই শহরের পাড়ে
গুলশান, বনানীর লেকের ধারে।

এখন বিশাল সব অট্টালিকা
চারিদিক জুড়ে
উঁকি দিয়ে আকাশ দেখতে খুব কষ্ট হয়
জানালার পর্দা মেলে;
খুব মৃদু ঝিঁ ঝিঁ একটানা শব্দ এখনো যেন শুনি
রাতের অনেক গভীরে
বন্ধ জানালা
বাইরের জগত থেকে বিচ্ছিন্ন
তবু অবচেতন মনের কোথায় যেন রয়ে গেছে
ঐ ঝিঁ ঝিঁ শব্দের রেশ;
চোখ মেলে তাকাই মৃদু অন্ধকারে
সবুজ এসির বাতি ধ্বক করে চোখে লাগে
চেতনা ফিরে আসে
বুঝি, একটানা ঝিঁ ঝিঁ শব্দ ভেসে আসে এসির ভেতর থেকে
মেশিন জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি আমরা
তবু রয়ে গেছে অবচেতন মনের খুব গভীরে কিছু শব্দ
শব্দ দূষণের নগরীতে।

এখন সকাল দুপুর আর রাত্রির প্রতিটা প্রহর
রাস্তায় টায়ার ঘষা শব্দ,
এক সময় কানে তালা লাগতো
এখন খুব অভ্যস্ত;
ট্রাকের ভোঁ ভোঁ ছুটে চলা
বাসের ক্রমাগত কানফাটানো হর্ন
পিচের ওপর টায়ারের কষে চাপা ব্রেকের চিইইইইইইই
ধামমমম, দুটো গাড়ী মুখোমুখি
চারিধারে গাড়ির সমারোহ
ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে থমকে থাকা রাস্তার জীবন
এরই মাঝে এম্বুল্যন্সের সাইরেনের ক্রন্দন
খুব নিয়মিত, এতেই অভ্যস্ত;
কোন কিছুই কারো মনে দাগ কাটে না যেন
করার মত আমাদের কি কিছু আছে?
প্রশ্ন জাগে না কারো মনে, করার নেই কেন?

কোটি মানুষের শহরে আজ
প্রতিমুহূর্তে লক্ষ শব্দের দূষণ
এর মাঝেই আমরা গড়ে তুলি
শব্দ দূষণের নগরীতে
যার যার দরজা জানালায় পেরেক ঠুকে
ডিজিটাল নৈঃশব্দ্যের আবাসন।

মনের মাঝে কখনো পেরেক ঠুকে দেখেছ কি?
কিংবা কানের মাঝে?
শব্দ দূষণের জ্বালা বুঝবে কিভাবে?
আজ শহর কাঁদে
শব্দ দূষণের বোবা কান্নায়;
তবু মানুষ বোবা হয়ে রয়
নগরী কাঁদে যেন, তাই দেখে লজ্জায়।



সাদাকালো


সাদাকালো
- যাযাবর জীবন

সাদা দেহ ধারণ করেই কি সাদা মানুষ হওয়া যায়?
সাদা রঙ দিয়ে তোকে কে পাঠিয়েছে দুনিয়ায়?
একটু ভাবলে, ক্ষতি কি?

কালোরে কেন রে এত ঘৃণা করিস
কালো ছাড়া কি দাম আছে,
তোর সাদা দেহের;
তা কি বুঝিস?

সাদাকালো পরিমাপের সাদাকালো চোখে
না হয় তোর আছে সাদা একটা দেহ
আর কালো অন্ধকার একটা মনে যদি দেহ থাকে ঢাকি
তবে হয়তো দুনিয়ার কাছে হয়তো তুই সাদা
আমার কাছে সেটাই অমাবস্যার অন্ধকার রে সাদা বক পাখি।

আমি কত কালো দেহে দেখেছি সূর্যের আলো
হোক না তার দেহটা দেখতে একটু
কিংবা মিশমিশে কালো
তবু আমার কাছে সেই রে অনেক ভালো;
যার আছে স্নিগ্ধ সুন্দর ধবধবে সাদা
আর আকাশের মত বিশাল একটা মন
দেহের রঙ এ কি আসে যায়?

নশ্বর দেহ আজ আছে যা, নিমিষেই তা কাল হয়ে যায়
চিরস্থায়ী মন অপার ভালোবাসায়.........

সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৩

জীবন সংগ্রাম


জীবন সংগ্রাম
- যাযাবর জীবন

জীবন সংগ্রাম
রেসের ঘোড়া
ঊর্ধ্বশ্বাস দৌড় অবিরত;
রাশের দড়ি
কে টানে?
হাপরের ওঠানামা
বুকের খাঁচায়;
তারস্বরে কাকগুলো
মাথার ওপর কা কা রব
ডেকে যায় ক্রমাগত;
ঘিলু ঠোকরায়
শকুনির দল
মগজ বাড়িতে
ঠোঁট ডুবায়।

নিষ্পেষিত বুকের হাড়
ঐরাবতের থাম পা
চেপে বসে
লোভী চাপে;
ধিকি ধিকি আগুন
কয়লা পোড়া মনে
রণপায়ে পালিয়ে বেড়ানো
মরণ থেকে;
স্বার্থের গনগনে লাভাস্রোত
হায়েনার নখের আঁচর
দৌড় দৌড় তবু দৌড়
পালাতে জীবন থেকে
ফেটে চৌচির বুক
পেতে একটুকু দম;
মুখের নিঃসৃত হ্রেষা ধ্বনি
বুকের গভীরেতে
কান পেতে শুনি
পালাতে মরণ থেকে
আবার নতুন করে
দৌড়ের আয়োজন।

কাঠঠোকরার ক্রমাগত ঠোকর
হৃদয় ক্ষত
শুকোবে কি মরণে?
কাকচক্ষু মিঠে জলরাশি
লোনা হয়ে ওঠে
ক্রমাগত ক্ষরণে।


বুধবার, ২ অক্টোবর, ২০১৩

জীবন



জীবন
- যাযাবর জীবন

থেমে থাকে না কিছুই
কারো জন্যই,
না বৃষ্টি
না মেঘ
না হাসি
না কান্না
না কথা বলা
না পথ চলা
না জীবন
না মরণ,
শুধু একটু থমকায় হয়তো
প্রিয়জনের চলে যাওয়া;
স্মৃতির এত সময় কোথায়
জীবন পালে নতুন হাওয়া
মাটির ঘরে বসত যাহার
মাটির সাথে কথা কওয়া।

এইতো জীবন
এই নিয়তি
এটাই সত্যি
মেনে নেয়া।


হন্তক


হন্তক
- যাযাবর জীবন

স্বপ্ন দেখি প্রতিদিন
হত্যা করি নিজের হাতে
স্বপ্ন হন্তক আমি স্বপ্নের কারিগর হয়ে
প্রতিদিন প্রতিরাতে
বাস্তবকে ছুঁয়ে
বাস্তব প্রতিফলনের অনেক অনেক আগে।

ভ্রূণ হত্যায় পাপ হয়
স্বপ্ন হন্তকের সাজা কি?
হত্যার আবার এপিঠ ওপিঠ আছে নাকি?

অন্ধকারের ঘর


অন্ধকারের ঘর
- যাযাবর জীবন

চলমান ঝর্ণাধারায় পিচ্ছিল শ্যাওলা
বাঁশঝাড়ের ঘুণে ধরা হলদেটে কঞ্চিগুলো
নিশীথ রাতের অন্ধকারের পাহাড়ি বুনো সুর
জ্যোৎস্নার প্রখর আলোকচ্ছটায় পুড়ে যাওয়া রৌদ্দুর
অন্ধকারের আয়নায় দেখা হলো ছায়ার
এদিক ওদিক, অনেক তো দেখা হলো দুজনার;

চল এবার ঘর বাঁধি
বিবর্তনের অন্ধকারে।