মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৩

শব্দ না নৈঃশব্দ্যের নগরী?



শব্দ না নৈঃশব্দ্যের নগরী?
- যাযাবর জীবন

মনে হয় যেন অন্য কোন যুগ ছিল
মনে হয় অন্য কোন সময় থেকে আগত
সেই তো ঐদিনের সব দিন গুলো;
কিচির মিচির পাখির ডাকে ঘুম ভাঙত
কোন একটা সময়
শহরে সকাল হতো;
এখন প্যাঁ পুউ প্যাঁ হর্ন বাজে
কানের ডগায়
মস্তিষ্কের ভেতর
রাস্তায় রাস্তায়
শহরের ঘুম ভাঙ্গে
আমরা গভীর ঘুমে মগ্ন
ঘুমের বড়ির নেশায়
ভোরের সূর্যের সাথে আজ
ঘুম ভাঙ্গার সম্পর্ক কোথায়?

একটা সময় ছিল
অলস দুপুরে পাগলা কোকিলের কুহুতানে
বড্ড মন কেমন করা সে দিনগুলো
হারিয়েই গেল জীবন থেকে
নগর ভেলায় ভেসে সে দিনগুলো;
দিনগুলো হারালো
না কোকিল গুলো?
নাকি তাদের সুরের মূর্ছনা মুছে গেলো
কিংবা নগর জীবনের গাড়ির শব্দে
চাপা পড়া ভাবনাগুলো;
বড্ড নস্টালজিয়ায় খুব মাঝে মাঝে
কেমন হঠাত করে
শব্দের জগতে নৈঃশব্দ্যের ঢেউ ওঠে
ব্যস্ত নগরীতে হাজার শব্দের মিশ্রণে
কে আর কোকিলের ডাক মনে করে!

সেই অনেক দিন আগে
এই তো এই ব্যস্ত নগরীতে
কে বলবে রাতের নিস্তব্ধতা
ভর করতো কানে এসে
দূর থেকে রেলের কু ঝিক ঝিক ঝিক ধ্বনি
নৈঃশব্দ্যের খান খান লেপ মুড়ি
ঘুম ঘুম চোখে রাতের গভীরে
কান পেতে শোনা অবচেতন মনে;
কিংবা ঐ শেয়ালের ঝাঁক, মনে পড়ে?
এই তো সেদিন
গুলশান, বনানীর লেকের পাড়ে
ভয় লাগতো খুব মধ্য দুপুরের রোদে
বিকেলের আধো অন্ধকারে
প্রায়ঃশই ভেসে আসা বাঘডাশার ডাক
রাতের বেলায় হুক্কা হুয়া
লেপ মুড়ি জুজু বুড়ি
মায়ের বুকের তলা
খুব মনে পড়ে; এইতো সেদিনকার কথা
ব্যস্ত এই শহরের পাড়ে
গুলশান, বনানীর লেকের ধারে।

এখন বিশাল সব অট্টালিকা
চারিদিক জুড়ে
উঁকি দিয়ে আকাশ দেখতে খুব কষ্ট হয়
জানালার পর্দা মেলে;
খুব মৃদু ঝিঁ ঝিঁ একটানা শব্দ এখনো যেন শুনি
রাতের অনেক গভীরে
বন্ধ জানালা
বাইরের জগত থেকে বিচ্ছিন্ন
তবু অবচেতন মনের কোথায় যেন রয়ে গেছে
ঐ ঝিঁ ঝিঁ শব্দের রেশ;
চোখ মেলে তাকাই মৃদু অন্ধকারে
সবুজ এসির বাতি ধ্বক করে চোখে লাগে
চেতনা ফিরে আসে
বুঝি, একটানা ঝিঁ ঝিঁ শব্দ ভেসে আসে এসির ভেতর থেকে
মেশিন জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি আমরা
তবু রয়ে গেছে অবচেতন মনের খুব গভীরে কিছু শব্দ
শব্দ দূষণের নগরীতে।

এখন সকাল দুপুর আর রাত্রির প্রতিটা প্রহর
রাস্তায় টায়ার ঘষা শব্দ,
এক সময় কানে তালা লাগতো
এখন খুব অভ্যস্ত;
ট্রাকের ভোঁ ভোঁ ছুটে চলা
বাসের ক্রমাগত কানফাটানো হর্ন
পিচের ওপর টায়ারের কষে চাপা ব্রেকের চিইইইইইইই
ধামমমম, দুটো গাড়ী মুখোমুখি
চারিধারে গাড়ির সমারোহ
ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে থমকে থাকা রাস্তার জীবন
এরই মাঝে এম্বুল্যন্সের সাইরেনের ক্রন্দন
খুব নিয়মিত, এতেই অভ্যস্ত;
কোন কিছুই কারো মনে দাগ কাটে না যেন
করার মত আমাদের কি কিছু আছে?
প্রশ্ন জাগে না কারো মনে, করার নেই কেন?

কোটি মানুষের শহরে আজ
প্রতিমুহূর্তে লক্ষ শব্দের দূষণ
এর মাঝেই আমরা গড়ে তুলি
শব্দ দূষণের নগরীতে
যার যার দরজা জানালায় পেরেক ঠুকে
ডিজিটাল নৈঃশব্দ্যের আবাসন।

মনের মাঝে কখনো পেরেক ঠুকে দেখেছ কি?
কিংবা কানের মাঝে?
শব্দ দূষণের জ্বালা বুঝবে কিভাবে?
আজ শহর কাঁদে
শব্দ দূষণের বোবা কান্নায়;
তবু মানুষ বোবা হয়ে রয়
নগরী কাঁদে যেন, তাই দেখে লজ্জায়।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন