আজো কেন জানি
ভালোবাসা শেখা হল না
কেমন করে ভালোবাসা হয় বলতে পার কি?
সেই কোন ছোট্টবেলায় তোমায় নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম ঘর বাধার
মনের আয়নায় আকতাম তোমার লাল টুকটুকে বউ সাঁঝ
পুতুল খেলার ছলে প্রতিদিনই তোমার কাছ ঘেসে বসতাম
নিতেম তোমার এলোচুলের গন্ধটুকু প্রানভরে
বেলিফুল কিছু তোমার মাথার পরে ছড়িয়ে দিয়ে
তুমি বিরক্ত হয়ে বলতে দুস্টুমি করো নাতো সবসময়, সরে বস আমার কাছ থেকে!
আবার দুদিন বেলি না তুলে আনলে কথা শোনাতে ছাড়তে না কিন্তু অভিমান ভরে।
বলতে, কিগো পুতুল বর, বেলির দিন কি শেষ হয়ে গেছে?
বাগানে কি ফুল ফোটে নি আজ?
তোমার ভাষা আমি বুঝতে পারিনি সেদিন
যেমন বুঝি না আজো
তাই তো তোমায় আমার ভালোবাসার কথা মুখ ফুটে বলা হয় নি কখনো
আসলে অনেক ভিতু ছিলেম সেদিন, যেমন আছি আজো ।
শুধু তোমার কাছে ভালোবাসার প্রকাশ করতে না পারায়,
ভালবাসা হল না আমার আজো।
ভালোবাসতে পারি নি মনে হয় আজো সঠিক ভাবে
ঠিক যেভাবে মেয়েরা চায়, বা তুমি চেয়েছিলে হয়তো
আমার মুখফুটে ভালোবাসার কথা শুনতে।
যেদিন কাকভোরে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলে
কুয়াশা ভেজা সূর্যকিরণ গায়ে মাখাতে
শিশির ভেজা ধান খেত ধরে হেটে গিয়েছিলে আমার হাত দুটি ধরে
আর মনে মনে গুনগুনিয়েছিলে নদীপারের ধারে
আমি কিছুই বুঝি নি সেদিনও
ঐরাবতি নদীতীর ধরে হেটে চলেছিলেম তোমার কোমল হাত দুটি ধরে
তুমি হয়তো কিছু আবেশে কাধে মাথা রেখে হেটে চলেছিলে আমার পাশে পাশে ঘেষে
কিংবা সেদিন তুমি আমাকে টেনে হিচরে নিয়ে চলেছিলে চন্দ্রনাথা পাহাড় বাইতে
আমি এক পা দু পা করে তোমার সাথে সাথে তাল রেখে রেখে
হেটে চলে এসেছিলেম চন্দ্রানাথের মাথায়
ওই অত ওপর থেকে, ঝাউবন ঘেড়া সাগর দেখে উচ্ছলে আমায় জড়িয়ে ধরেছিলে
কানের কাছে কিছু গান গুনগুনিয়েছিলে
কি জানি বুঝাবার তরে।
আমি বুঝতে পারি নি তোমার গাওয়া রবিঠাকুরের ওই প্রেমের বানীগুলি
যা গান হয়ে বেজে ওঠেছিল সুরের অপার্থিব ঝংকারে তোমার কন্ঠ নির্গত হয়ে।
মনে আছে সেই যে আরেক বিকেলে কিছুটা জোর করে
ছেলেমানুষের মত আমায় সাগরবেলায় নিয়ে গিয়েছিলে
সেই বিকেল থেকে সন্ধ্যাবধি হাতে হাত রেখে সারাটা বীচ জুড়ে
হেটে বেড়ালে নানা ঢঙ এর কথা বলে
কতই না আবোল তাবল কথা বলতে,
কিছু বা ভালোবাসার কথা কিছু বা অবুঝকে বুঝ দিয়ে পাশে ডাকার প্রলোভন।
আমি সেদিনও বোকা ছিলেম, আজো ঠিক তেমনি বোকা আছি
তোমার মনের ভাব না বুঝে
তাইতো আজো ভালোবাসা হল না তোমায় মন ভরে
কল্পনাকে করে নিয়ে পরিনত বাস্তবে।
তোমার কি মনে আছে?
রেললাইনের দুপাশে স্লিপারএ পা রেখে আমার হাত ধরে হেটে যেতে
যতক্ষন একপাশ থেকে একটি রেলগাড়ির কু-ঝিক ঝিক শোনা যেত
তুমি আমার হাত ছাড়তে চাইতে না,
বলতে যাক না দেখি রেলগাড়িটা আমাদের মাড়িয়ে দিয়ে
ভিতু আমি ভয়ে সরে গিয়ে নেমে পড়তাম রেলের স্লিপার থেকে,
তুমি ঠিকই হেটে চলে যেতে একদম রেল গাড়ির সামনে,
ঠিক দুহাত ফারাকে নেমে যেতে আস্তে করে রেললাইনের পাথর ধরে,
আর আমাকে বলতে,
ডরপোক তুমি, তোমার সাথে নাকি আমি মরতে ভয় পাই।
আসলে কি তাই?
আমি তো মনে মনে আজো
তোমায় নিয়ে রেলের পাত ধরে হেটে চলি
ঠিক রেললাইনের সমান্তরাল পথে
তোমায় নিয়ে ঢুকে পরে রেলের ইঞ্জিনের ভেতরে,
হাতে হাত ধরে।
যেথায় কয়লার গনগনে আগুন আমার বুকের আগুন নিভিয়ে
ভাসাবে তোমার প্রেমের সরবরে।
আসলেই আমি প্রেম করতে শিখি নি,
জানি না কিভাবে ভালোবাসতে হয়
বা ভালোবাসার কথা বলতে হয়।
মনে আছে কি তোমার
পাশের বাসার ছোট্ট মেয়েটা যখন আমায় জড়িয়ে ধরত
খেলার ছলে ভাইয়া ভাইয়া করে
তুমি কেন জানি অগ্নিদৃস্টি হেনে তাকিয়ে থাকতে
আমার দিকে দুদিনের আড়ি নিয়ে
আর কথা বলতে গেলেই বলতে – যাও ওর পুতুল বর হও গিয়ে আমাকে বাদ দিয়ে
আমি ছাই সেদিন কি বুঝেছিলেম তুমিও আমায় ভালোবাসতে নিজের মত করে
আর জ্বলে পুরে ছাই হতে আমার পাশে অন্য কাওকে পেলে
তখন তোমার এসব মান, অভিমান, রাগ, অনুরাগের ভাষা বুঝিনি
বুঝতে পারি নি যে তুমিও আমায় ভালোবাস তোমার নিজের মত করে।
ক্ষমা করে দিও হে প্রিয়তমা,
আমার ছোট্টবেলার খেলার সাথি তোমায় বুঝতে পারি নি বলে
আর তোমার মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারি নি
তোমাতে তোমারই হয়ে।
আজ এতদিন পড়ে,
মরনের কালে যখন পুরো জীবন ফ্লাসব্যাক এর মত জ্বলে উঠেছে,
মনে হয় তোমাকে একটু একটু বুঝতে প্রেরেছি অথবা
বুঝেছি তোমার ভালোবাসার আকুলতা আমাকে ঘিরে
এই শেষ বয়সে এসে সেদিনের সেই ভাবনা গুলি কি
আজো তোমার মাঝে উকি দিয়ে যায় হে প্রিয়তমা?
আজো কি সেই ভালোবাসাটুকু বেচে আছে তোমার হ্রদয়গভীরে?
বড্ড জানতে ইচ্ছে করে
বড্ড জানতে ইচ্ছে করে।
সেদিনও আমি তোমার ভালোবাসা বুঝি নি
আজো তুমি রয়ে গেছে আমার কাছে অমাবস্যার চাঁদ হয়ে
কিন্তু শুধু জেনে রেখ, তোমায় আমি ভালোবেসেছিলেম সেদিনও
যেমন ভালোবেসে যাই আজো।
শুধু আমার ভালোবাসা শেখা হল না সেদিনও আর আজও
তোমাকে পাওয়ার মত করে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন