ভালোবাসার উপহার
-যাযাবর জীবন
এক একটি পুরুষ মানুষ এক এক রকম হয়
এক একটি পুরুষ মানুষ এক এক ভাবে তার ভালোবাসার কথা কয়
কখনো ঢাক ঢোল পিটিয়ে, কখনো বা খুব সঙ্গোপনে
কখনো তার স্ত্রীকে নিয়ে কখনো বা তার প্রেমিকাকে ঘিরে।
কখনো স্ত্রী কিংবা প্রেমিকার জন্মদিন মনে আসে,
কখনো ভালোবাসার মানুষটির সাথে কাটানো খুব খুব গোপন
কোন একটি দিনের কথা খুব প্রায়ঃশই মনে পড়ে;
ভালোবাসার ছলনা কিংবা জীবনের সাথে প্রতারণায়
আজ তার স্ত্রী হয়তো অনেক দূরে কোথাও
নতুন সংসার পেতেছে, মেতেছে অন্য পুরুষে;
কিংবা তার প্রেয়সী আজ হয়তো অন্য কোন পুরুষের বাহুডোরে
নতুন এক স্বপ্নে বিভোর হয়ে
ছেলেমানুষি প্রেম পিছু ফেলে
বাস্তবতাকে আঁকড়ে ধরে।
কঠিন বাস্তবতা, মহামূল্যবান টাকার বাঁধনে গাঁথা।
তবু যেন প্রেমিকের হৃদয়ে সত্যিকারের ভালোবাসা
মনের অনেক অনেক গভীরে বাসা বেঁধে থাকে
হঠাৎ করেই বিশেষ বিশেষ দিনগুলিতে
প্রিয়ার মুখ বড্ড বেশি মনে পড়ে
তার জন্যে কিছু করতে ইচ্ছে করে
তাকে কিছু উপহার দিতে ইচ্ছে করে।
কোথায় আছে সে?
কেমন আছে আজকের এই বিশেষ দিনটিতে?
খুব গোপন, একান্ত সঙ্গোপন, শুধুই দুজনে দুজনার
গভীর প্রণয়ের মাঝে
দুজনে মিলেমিশে একসাথে হয়ে
আজকের এই দিনে;
এই বিশেষ দিনটির কথা; তার কি মনে আছে?
কবির ভাবনায় কত কথা মনে ভাসে;
থাকুক না তার প্রেমিকা কিংবা স্ত্রী
অনেক অনেক দূরের কোন দেশে
কিংবা হয়ে অন্য কারো, না হয় অন্য কোন বেশে।
তবুও কবি যেন পরা-বাস্তব এক যুগে বাস করে
– স্বপ্নালু চোখে দেখে আর মনে মনে ভাবে
কি দেওয়া যায় তার প্রেমিকাকে!
আজকের দুজনার একান্ত ভালবাসা-বাসির বিশেষ এই দিনে
কি পেলে খুশি হবে সে?
ভাবতে ভাবতেই যেন সময় বয়ে যায় চোখের নিমিষে।
–একটি গোলাপ টকটকে লাল!
কিংবা প্রিয়ার অনেক পছন্দের একগুচ্ছ হলুদ গোলাপের ডালি!!
নাহ, গোলাপ নয় – “কাঁটা বিধতে পারে তার কোমল হাতে”।
- একগুচ্ছ রজনীগন্ধা!
কিংবা অসময়ের বেলি ফুলের মালা
ইচ্ছে করে বাগান তুলে নিয়ে আসতে তার জন্য,
নিজ হাতে মালা গেঁথে পড়াতে ইচ্ছে করে তার খোঁপায়
কিংবা তার গলায়
পড়িয়েছিল যেভাবে আগের সেই দিনগুলোতে।
নাহ – “কোথাও যদি মধু-পিঁপড়ে রয়ে যায়”!
বেলি ফুলের গোপন কোনো ভাজে?
আমার প্রিয়ার কোমল ত্বক সইতে পারবে না
“লাল পিঁপড়ের কামড়ের যন্ত্রণা”
কবি বসে ভাবে।
- তার থেকে একটি কবিতা না হয় উপহার হয়ে থাক আজ তার তরে
মনের সকল কথাগুলো, কলমের আঁচরেতে ভরে
হয়তো কখনো সে পড়বে কোন এক পত্রিকার পাতার ভাজে
কিংবা কখনো সময় পেলে নেট এ ঢুকে পড়বে কোন এক ব্লগে।
- হয়তো কোন এক “ভরাট কন্ঠের আবৃতিকার”
গমগমে কন্ঠে আবৃতি করে যাবে আনজান কোন পাগল কবির
বিশেষ কোন দিনে প্রেমিকাকে লেখা
ভালোবাসার উপহারের কবিতাখানি –
“জন্মদিনের উপহার – তোর যৌবনের রূপ”
***************************************
“বয়স তোর কত হল আজ ?
ছত্রিশ বা সাঁইত্রিশ কিংবা ছেচল্লিশ বা সাতচল্লিশ
সাল মাস এখন আর তেমন করে মনে থাকে না
বুড়ো হয়ে গিয়েছি আমি
স্মৃতিশক্তি পেয়েছে লোপ
তবু আজকের দিনটির কথা মনে আছে আমার
কিভাবে যেন!
“হয়তো জন্মদিন বলে তোর”।
অথচ সামনে থেকে দেখলে, কে বলবে তোর বয়স হয়েছে?
তোকে দেখায় এখনো তেইশ কিংবা চব্বিশ
কোন প্রকার মেকআপ ছাড়াই।
তা আমার থেকে ভালো কে জানে?
মেয়েরা তোকে দেখলে এখনো ঈর্ষে করে
কিভাবে ধরে রেখেছিস বয়সটারে
যৌবনের বেড়াজালে আটকে দিয়ে?
মনে তাদের অনেক প্রশ্ন জেগে ওঠে
নানা কথার ছলনায় জানতে চেষ্টা করে।
খবরদার কোন মেয়ে যেন তোকে কখনো
খোলা শরীরের দেখে না ফেলে;
তাহলে হিংসেয় তাঁরা জ্বলে পুড়ে মরবে
তোর শরীরের গাঁথুনি দেখে;
কে না বলবে শরীরের বাঁধুনিতে
তোর বয়স এখনো
আঠারো কিংবা উনিশ?”
***********************************
- প্রিয়ার কানে হয়তো এই কবিতার কিছু শব্দমালা ঢুকবে
একটু হয়তো চমকে ভাববে, থমকে তাকাবে
ভরাট কন্ঠের কবিতা আবৃতি শুনে।
- মনে মনে হয়তো বলবে - “কি অসভ্য লেখকরে বাবা”
প্রিয়ার যত গোপন কথা কবিতার ভাষায় দিয়েছে বলে
– ছিঃ, বেটা “মানব না দানব” বলে মুখ ফেরাবে।
- একবারের তরেও ভাববে না
“কবিতাটি লেখা হয়েছিল শুধুমাত্র তাকেই ঘিরে
কবি বাতাসে উড়িয়ে দিয়েছিল তার জন্মদিনের উপহার স্বরূপ
কবিতার কথার ছলে”।
সমগ্র পৃথিবী জুড়ে লাখো প্রেমের কবিতারা বাতাসে উড়ে চলে
প্রেমিকাকে মনে করে;
তাতে কি এসে যায় প্রেমিকাদের?
আজকের কঠিন বাস্তবতার বাহুডোরে বাঁধা পড়া দিনগুলোতে
পাগল সে সব আনজান প্রেমিকের কথা কে মনে করে?
সে আজ বড্ড ব্যস্ত তার বিশাল বড়লোক স্বামীর আমন্ত্রণে
আগত অতিথিদের আপ্যায়নে;
কোন এক ফাইভ স্টার হোটেলের পার্টিতে
নাচে গানে বিভোর হয়ে।
স্মরণ কালের শ্রেষ্ঠ পার্টি শেষ হয় রাত অনেক গভীর হলে
শরাবের নেশায় বুঁদ হয়ে স্বামী-স্ত্রী ঘরে ফেরে
বিছানায় এলিয়ে পড়ে স্বামীর বাহুডোরে সোহাগে আদরে
আনজান এক প্রেমিকের কথাগুলো
কখনো তার কানে আসে না ভেসে
হাওয়ায় ভেসে বেড়ায় কথামালাগুলো
লাখো প্রেমিকের হাহাকার হয়ে।
সব জেনেশুনেও প্রেমিক সকল
বাতাসেই উড়িয়ে দেয় এলোমেলো কিছু কথা
তার প্রিয়ার কথা মনে করে হৃদয়ের কিছু ব্যথা
কবিতার ছলে।
পাগল এক আনজান কবি
বিশেষ কোন দিনের কথা মনে করে
মনে মনে চলে যায় প্রেমিকার ঘরে
হৃদয়ের বাঁধানো খাতাটি কল্পনায় হাতে ধরে
তার প্রেমিকার জন্মদিন উপলক্ষে লেখা
একটি কবিতা উপহার নিয়ে।
প্রেমিকা সারাদিনের পার্টির আনন্দ ধকল শেষে গভীর আনন্দে
পড়ে থাকে তার বড়লোক স্বামীর লোমশ বুকের পরে
শরীরের শরীরে কথা বলে
প্রেমের অভিনয় চলে
(যেমন একদা চলেছিল তার পুরনো প্রেমিকের সাথে)
কিংবা বাসনার তৃপ্তিতে ঢলে পড়ে
নিদের দেশে হারিয়ে যায়, ঘুম নেমে আসে চোখে।
নির্ঘুম চোখে আনজান কবি হৃদয়ে সকল ব্যথা ধরে
প্রহর গোনে রাতের সাথে সাথে
বিশেষ এই আজকের দিনটিকে মনে করে।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন