“আলেয়া” আর “সালেহা”
জন্ম-পর্ব
“মা”
মা’ রে...
কি হইছে রে মানিক আমার?
আইচ্ছা মা,
একটা কতা জিগাই তরে?
কি কতা রে সোনা?
বস্তির বেবাকতের বাপ আছে, আমার নাই কেইল্লাইজ্ঞা?
আমার বাপে কই গেছে মা?
কিশোরী মাতা “সালেহা”
কেমন যেন হয়ে চমকে ওঠে এই প্রশ্নতে
হঠাৎ করে জল নেমে আসে চোখে
কিভাবে জবাব দেবে এই প্রশ্নের বুঝতে পারে না
চার বছরের “আলেয়া”র মা “সালেহা”।
বয়সে সে এখন উনিশ বছরের যুবতী
মেয়ে জন্ম দিয়েছিল কিশোরীতে পনর বছর বয়সে
সে শিশু জন্মের কথা মনে হলে চোখে জল আসে,
সে তো মা হতে চায় নি.........
মা কিভাবে হয় তার তো জানা ছিল না চৌদ্দ বছর বয়সে
গাঁয়ের অভাব সইতে না পেরে চলে এসেছিল শহরের আশে
একটু শহুরে জীবনের কল্পনার ডাকে
নতুন স্বপ্ন দেখার আশায়, হঠাৎ করেই যেন খেয়ালের বসে
ট্রেনে চেপে বসেছিল ছোট্ট মেয়ে সালেহা কোন এক সকালের ট্রেনে
সেও কত দিন হয়ে গেছে
তবু আজো চোখে ভাসে।
হঠাৎ করেই খেয়ালের বসে চড়ে বসেছিল
কু ঝিক ঝিক ট্রেনের ইঞ্জিনে উঠে
একা সেই গ্রামের ছোট্ট ইস্টিশন থেকে
নাহ আসলে একা না, আরো অনেক মানুষ উঠে বসেছিল তাতে
ট্রেনের ইঞ্জিন বোঝাই ছিল সেদিন মানুষের ঢলে;
এ গাঁ ও গাঁ, এ শহর ও শহর ঘুরে চলে এসেছিল
আলো ঝলমল রাজধানীর বুকে
মনেতে অনেক স্বপ্ন নিয়ে, কল্পনার জগতে ভেসে,
রাজধানী শহর, কি না জানি সব কিছু আছে সেখানে
বাবার মুখে শোনা, মায়ের ঘুমপাড়ানী গানের শহর
আর তার স্বপ্নের শহর, রাজধানী ঢাকা শহর।
সারা দিন ট্রেন চেপে সন্ধ্যায় ঢাকা শহরে এসে নেমেছিল
ছোট্ট চৌদ্দ বছরের মেয়ে সালেহা, যেন অনেকটা খেলার ছলে
কিছু না বুঝেই
সন্ধ্যার আলো ঝলমলে ঢাকা শহর দেখে মুগ্ধ চেয়ে ছিল সেদিন
স্বপ্ন টুটেছিল দুদিন প্রায় অনাহারে থেকে
কে কাকে ভাত দেয় আজকের পৃথিবীতে?
অবুঝ শিশুটি ঢাকার অলিতে গলিতে ছোটে
খাবারের সন্ধানে
গাঁয়ের মেয়ে ভিক্ষে করতে জানত না সেদিন
তাই ভুখোপেটা হয়ে পড়েছিল দুদিন
ক্ষিদের জ্বালা সইতে না পেরে
খাবার কুড়িয়েছিল ডাস্টবিনের ময়লার পরে
রাস্তার কিছু কুকুর আর বেড়ালের সাথে মিলে
হায় ক্ষিদে, মানুষকে কোথায় নিয়ে যায়?
গ্রামে বড় হওয়া ছোট্ট শিশুটি সেদিন বুঝতেও পারে নি
প্রকৃতির নির্মম খেলা,
তার জানা ছিল না অন্নের অন্বেষণ বলে কারে
কিংবা ক্ষুধার জ্বালা কেন এত জঠরে?
ঘুরে বেরিয়েছিল পুরো দুইদিন ঢাকা শহরের কোণে কোণে
রাতে শুয়ে থাকত সে রেলস্টেশনের এক কোণে
ক্ষুদা পেটে নিয়ে
একদা হঠাৎ জীবনটা যেন গেল ওলোট-পালট হয়ে
রেলস্টেশনের এক বুড়ো ভাম তাকে লক্ষ্য করছিল যেন দুদিন ধরে
তৃতীয় রাত্রিতে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল দুমুঠো ভাতের আশা দিয়ে
খাইয়েছিল তাকে সে রাতে পেট ভরে
তারপর কথার ছলনায় তাকে নিয়ে গিয়েছিল বস্তির এক ঘরে
তার সাথে থাকার কথা বলে;
ছোট্ট মেয়ে বুঝতে পারে নি সেদিন পড়েছে সে কোন হায়েনার মুখে
হঠাৎ মমতা পেয়ে যেন তার বাবার কথা মনে আসে
অসীম ভরসায় গিয়েছিল সেদিন বুড়ো ভামের সাথে
দেখেছিল বুড়ো ভামটাকে বাবার ছদ্মবেশে;
হায় কপাল, রাতে ঘুমের ঘোরে জেগে ওঠে দেখে
বুড়ো ভামটা চড়ে বসেছে তার গায়ের ওপর উঠে
ছোট্ট মেয়ে সালেহা বুঝে নি প্রথমে
কি করেন চাচা বলে উঠে বসে
চাচা তোর মায়ের, আমি তোর ভাতার
বলে বুড়ো গালি দিয়ে ওঠে
তারপর চলে সারারাত ধরে পৈশাচিক বাসনা
বুড়ো ভামের রাতে জেগে উঠেছিল কামনা
মুখে কাপড় গুঁজে চলেছিল রাতভর ধর্ষণ
প্রথমে গোঙ্গানীর মত কিছু শব্দ বেড়িয়েছিল তার মুখ থেকে
তারপর আর কিছু মনে ছিল না ছোট্ট মেয়ে সালেহার;
বুড়ো ভাম দিয়ে গিয়েছিল সারারাত ভরে কামনার নির্যাতন
করেছিল নোংরা শিশ্নের বীর্য বপন
সে রাতে
সারারাত ধরে, সালেহার শরীরের গভীরে।
সকাল বেলা নিজেকে আবিস্কার করে সালেহা
রেললাইনের বস্তির এক কোণে
সারা গায়ে ব্যাথা, নড়তে চড়তে পারে না
শুধু গোঙ্গানী এসেছিল তার মুখে
বস্তির এক খালা মতন মানুষ দেখেছিল তাকে
ভেবেছিল ট্রেনে কাঁটা পড়া কোন লাশ পড়ে আছে
কাছে এসে দেখে তখনো শ্বাস বইছে
বুকে করে নিয়ে এসেছিল তার ঘরে
তারও যে একটি মেয়ে ছিল ছোট্ট এ মেয়েটির মতন
কাঁটা পড়েছিল ট্রেনের নীচে খেলতে গিয়ে,
হয়তো তারই কথা ভেবে, কিংবা অন্যকিছু
জানা হয়নি সালেহার;
গরীবের ছেলে মেয়েরা আবার মানুষ নাকি?
এরা জন্মায় বিষে, আর মরে যে কিসে
তাতে কার কি যায় আসে
আজকের পৃথিবীতে?
ধীরে ধীরে “সালেহা” ভালো হয়ে ওঠে
মা রূপ অচেনা খালার যত্ন পেয়ে
তার জীবনের কথা শোনা হয় খালার
আর মরণের কথা সে রাতের লজ্জার
সময় কেটে যাচ্ছিল খালার বস্তিতে এসে
টুকটাক কাজ করে যাচ্ছিল খালার সাথে মিশে
কিছুদিন পরেই শরীর যেন কেমন কেমন
প্রবল বমি ভাব আর অচেনা এক অনুভব
বোঝেনি সেদিন “সালেহা” কি পাপ দেহে দিয়েছিল একরাতের দানব!!
তবু কাজ থেমে থাকে নি এর ওর বাসার
খালার সাথে সাথে পেট চলছিল কোনমতে তার
একদিন খালার চোখে আবিষ্কৃত নতুন সালেহা
মা হতে চলেছে যে কপাল পোড়া অভাগী
পেটে নিয়ে একরাতের ধর্ষণের নোংরা বীর্যের বীজ
খালা করে যান, তার সাধ্যমত ফকীরি তাবিজ;
লাভ হয়নি কোনো সেদিন
তারই ফলস্রুতি আজ এই আজকের অভাগীর বেটি “আলেয়া”
কিভাবে এ শিশুটিকে বাবার পরিচয় দেবে
বুঝতে পারে না “সালেহা”।
অনেক্ষণ চুপ করে থাকে
ভাবের ঘোরে যেন স্মৃতিগুলো ভেসে ওঠে
কথা বের হয় না মুখ দিয়ে –
ও মা
মা’রে
কইলি না মা?
আমার বাবা কই?
বেবাকতের বাবা আছে আমার বাবা কই গেছে?
এ কথার কোন জবাব নেই সালেহার মুখে
এ লজ্জার কথা মুখ ফুটে বলার সাহস আছে কার বুকে?
“সালেহা” অনেক্ষণ চুপ থেকে বলে
মা’ রে!!
তোর বাবা মইরা গেছে অনেক দিন আগে।
আমিই তোর বাবা আমিই তোর “মা”
আর কখনো বাবার কথা আমারে জিগাইস না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন