- যাযাবর জীবন
কখনো কি ভেবেছিলো আমার অবাক এ মন
ভুলে যাবি তুই আমাকে যখন তখন?
অথচ তোর স্পর্শ আমার পুরো আঙিনা জুড়ে
এখনো যেন ছোঁয়া খোঁজে তুই কেন দূরে?
ওই যে দেখা যায় বুড়ো কাঁঠাল গাছটার নিচে
ডালপালা যেথা শুকিয়ে আছে ঠিক তার পিছে
কিংবা হাসনাহেনার নতুন গজানো পাতায় পাতায়
উড়িয়ে আঁচল সেথায় সেথায়
টবের ক্যাকটাসে নতুন ফুল ফুটেছে
ছুঁয়ে দিয়ে গিয়েছিলি কাঁটার ডালে
শিউলি গাছটা আজ মরে গেছে
ছেয়ে ছিল ফুলে
কোন বিষের যাতনায় কে দেবে বলে
ঠিক যেন আমার মতন করে
শুকনো ডালে উঠোন গেছে ভরে
যেমন শুকিয়ে গিয়েছে মনটা আমার।
তোর স্পর্শ আমার পুরো বারান্দা জুড়ে
এখনো যেন ভেবে পায় না তুই কেন দূরে?
ওই যে দেখা যায় বুড়ো কাঠের চেয়ার
আমার মতই অপেক্ষায় গিয়েছে বুড়িয়ে
কিংবা লেখার টেবিলটা পড়ে আছে একা হয়ে
বসে থাকতিস যার উপর পদ্মাসন হয়ে
টেবিলের ওপরের কাগজ গুলো এখন যত্রতত্র
অনেক যত্নে তোর গুছিয়ে যাওয়া
যেন প্রশ্ন করে আমায় কেন তুই হাওয়া?
এখন আর তোকে নিয়ে কবিতা লেখা হয় না আগের মতন
তাই হয়তো কলমটার কালি শুকিয়ে গেছে
কলমদানিটাও পড়ে আছে একা, কালি শূন্য হয়ে
ছবি আঁকা হয় না অনেক দিন হয়ে গেছে
ধুলো বালি জমে রয়
পড়ে থাকা ক্যানভাসে
রংতুলিগুলো কেমন কাটখোট্টা হয়ে গেছে শুকিয়ে
রঙ কেনা হয় না অনেক দিন ধরে
তুই নেই বলে
কার ছবি আঁকব ভেবে পাই না
তুই নেই বলে কার কথা লিখব কবিতার ছলে
ভেবে পাই না
আমিও ওই বুড়ো চেয়ারটার মতন জবুথুবু বসে রই
অপেক্ষা কিংবা প্রতীক্ষায়
পাশে খোলা পড়ে থাকে না পড়া কিছু বই।
তোর স্পর্শ আমার পুরো ঘরটা জুড়ে
এখনো যেন তাদের মন মানে না তুই কেন দূরে?
ওই যে দেখা ঘসা কাঁচের আয়না
আজ তোকে চায় আমাকে চায় না
ওখানে প্রতিদিন মুখ দেখতিস তুই
গাড় লাল করে লিপস্টিক লাগাতিস
আর আয়নার সাথে কত কথা
আমি কিছু বলতে গেলেই ধমকে উঠতি
তুই কি বুঝিস বুড়ো ভাম বেটা
আমি চুপ করে দেখতাম তোর সাজ
একা একা;
তোর চুড়ির আলনাটা
এখনো ঠিক তেমনি সাজানো আছে
লাল, নীল, হলুদ, কালো আরো কত রঙের চুড়িতে
আমি মাঝে মাঝে তাতে হাত বুলোই আর টুং টাং শব্দ শুনি
যেন তোর ফিরে আসার প্রতীক্ষায় প্রহর গুনি
তোর কিনে দেয়া বিছানাটা পড়ে আছে আজো তেমনি
একা একা শোব বলে বিছানাতো কিনি নি!!
থাকনা আরো কিছু দিন পড়ে
ঘুণে খেয়ে শেষ হয়ে যাবে আস্তে আস্তে করে
আমার মতন, হৃদয় কুড়ে কুড়ে।
এখন বেলায় বেলায় সময় গড়িয়েছে অনেক
বিদায়ের ঘণ্টা ধ্বনি শুনি যেন কানে
তবু যেন কান পেতে রই কোন সুদূর পানে
প্রতীক্ষার প্রহর গুনে গুনে
তোর ফিরে আসার অপেক্ষা
স্মৃতি বিস্মৃতির দেয়াল ডিঙিয়ে
ভ্রান্ত ভ্রমের কুয়াশার আবরণ সরিয়ে
স্তব্ধ রাতের প্রহর পেরিয়ে
গোধূলির আলো ছায়া মাড়িয়ে
হলদেটে কোন এক জ্যোৎস্না রাতে
কিংবা অমাবস্যার কালো অন্ধকারে
ফিরে আসিস একবার তোরই ঘরে;
ওই বারান্দা
ওই চৌকাঠ
ওই আঙিনা
তোর চুড়ির আলনা
তোর বিছানার ভাঁজ
তোর রেখে যাওয়া সাজানো ঘর
ঠিক তেমনি আছে
যেমন রেখে গিয়েছিলি যাবার কালে;
শুধু আমিই বদলে গিয়েছি
বদলে গিয়েছে সময়
বদলে গিয়েছে কাল
চুলেগুলো হয়তো একটু সাদা রঙ ধরেছে
যৌবনে ভাটা পড়েছে
ক্ষয়িষ্ণু কালের কাছে কে না পরাজিত হয়
এখন দেহ আর মনের সাথে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা
বেঁচে থাকার তাগিদে
একসময় যৌবন পরাজিত হয়
ক্রমবর্ধমান বার্ধক্যের কাছে
যেন গোধূলির কাছাকাছি এক সূর্যাস্তের বিকাল;
শুধু তুই আমার চোখে
ঠিক সেদিনের মতই আছিস এখনো
উদ্ভিন্ন চির যৌবনা এক সবুজ সকাল।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন