শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৯

সৃষ্টির সবচেয়ে বড় আশ্চর্য




সৃষ্টির সবচেয়ে বড় আশ্চর্য
- যাযাবর জীবন


পৃথিবীতে এই যে এত এত মানুষ!
কেও কারো মত না,
না চেহারায় না আচারে না ব্যবহারে
না অনুভূতিতে না অনুভবে;

অথচ আশ্চর্যের বিষয় আমাদের অনুভূতির নামগুলো এক;

পৃথিবীর ছয়শ কোটি মানুষের ছয়শ কোটি মন
ছয়শ কোটি মনের ছয়শ কোটি অনুভূতি
অথচ ঘুরেফিরে সবাই অল্পকিছু অনুভূতির আবর্তে ঘুরছে,

হয় সুখের অনুভূতি কিংবা দুঃখের অনুভূতি
আনন্দের অনুভূতি কিংবা বেদনার অনুভূতি
ভালোলাগার অনুভূতি আর ভালো না লাগার অনুভূতি
ভালোবাসার অনুভূতি নয়তো ঘৃণার অনুভূতি,

এর চেয়েও মজার বিষয় হলো
পৃথিবীর ছয়শ কোটি মানুষ মাত্র দুটি দলে বিভক্ত,
ভালো
আর মন্দ;

ছয়শ কোটি মানুষ
ছয়শ কোটি মন,
কেও কারো মত না
কারো সাথে কারো মেলে না,
অথচ সবাই মিলে মাত্র একটি জাতি
মানব জাতি;

ছয়শ কোটি মুখোশের আড়ালে
সৃষ্টির সবচেয়ে বড় আশ্চর্য।






শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৯

পথের শেষে



পথের শেষে
- যাযাবর জীবন


ঐ যে রাস্তাটা
দূরে বহুদূরে চলে গেছে!
একদিন আমরা পথ হাঁটা শুরু করব দুজনে,
হয়তো অল্প কিছু সময়
হয়তো অল্প কিছু পথ,
আর নয়তো দীর্ঘ হতে হতে শেষ পর্যন্ত অসীম জীবনপথ;
কে জানে!

চুপ করে কি আর পথ হাঁটা যায়?
একসাথে পথ হাঁটতে হাঁটতে টুকটাক কথা
দুজন দুজনকে বোঝার চেষ্টা,
একটা দুটো কথায় কি আর মানুষ বোঝা যায়?
তাইতো একটু হাঁটতে চাই লম্বা একটি পথ;

একদিন টুকটাক কথা থেকে জীবনের গল্প
দুজন দুজনকে বোঝার চেষ্টা
গল্পে গল্পে কি আর মানুষ বোঝা যায়?
একসাথে চলতে হয় লম্বা একটি পথ;

হাঁটতে হাঁটতে একসময় হয়তো হাতে হাত ছুঁয়ে যাবে
একজন হয়তো তড়িৎ হাত সরিয়ে নেবে
আর নয়তো মুঠোয় মুঠো ভরে যাবে
পথ চলতে চলতে, পথের শেষে;

পথ পথের জায়গায় থাকে
অবস্থান পরিবর্তিত হয় মানুষের,
দুজন হাতে হাত ধরে পথ চলে একসাথে
কিংবা ভুল বোঝাবুঝিতে হঠাৎ বিচ্ছিন্ন পথের মাঝে;

আমরা কত ভাবেই না একজন আরেকজনকে বোঝার চেষ্টা করি!
আদৌ কি পারি?

আমাদের দুজনার পথের শেষটা কোথায়?
সময় বলে দেবে।






বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৯

কথার কথা



কথার কথা
- যাযাবর জীবন



কত সহজেই না মানুষ'কে ছোট করা যায়!
কথা দিয়ে;
কত সহজেই না মানুষ'কে বড় করা যায়,
কথা দিয়ে;

কথা বলতে কি আর ট্যাক্স দিতে হয়?
ভ্যাট?
অর্থ খরচ হয়?
উঁহু!
শুধু মুখ দিয়ে বলে দিলেই হয়,
কথা বলতে গিয়ে কে আর আগুপিছু চিন্তা করে?
কি সহজেই না মানুষ কঠিন কঠিন সব কথা
বলে ফেলে!

কারো কথায় মধু ঝরে
কারো কথায় বিষ
কারো কারো কথা তো পুতি দুর্গন্ধময়!
কথার কথা
মুখ ফস্কে, কথার ছলে

কারো কথায় ভালোবাসা ঝরে
কারো কথায় ঘৃণা
কারো কথায় মনখারাপ
কারো কথায় বীণা;

কেও কথায় বন্ধু গড়ে
কারো কথায় শত্রু বাড়ে
আমরা শুধু বলে ফেলি
কথার কথা, মুখ ফস্কে;

অথচ, একটাবার যদি চিন্তা করতাম!
কথা বলার আগে;
জীবনটা খুব অন্যরকম হত,
তাই না?






মন জানান দেয়



মন জানান দেয়
- যাযাবর জীবন


এই যে বহু বহুদিন আমাদের দেখা হয় না!
অথচ পরস্পর পরস্পরের মনে;
খুব আশ্চর্য একটা অনুভূতি না?

মাঝে মাঝে না!
বড্ড দেখতে ইচ্ছে করে তোকে;

এই যে অনেক অনেক দিন পর পর
দুজন দুজনার প্রতি নেটে ঢিল ছোঁড়া
হয় তুই কিংবা আমি;
খুব মজার না?

মাঝে মাঝে না!
বড্ড দেখতে ইচ্ছে করে তোকে;

এই যে অনেক অনেক দিন কথা হয় না!
তারপর একদিন হঠাৎই মুঠোফোন বেজে ওঠে
হয় আমার কিংবা তোর
আর আমরা দুজন দুজনার নিঃশ্বাস শুনি
খুব আজব না?

মাঝে মাঝে না!
বড্ড দেখতে ইচ্ছে করে তোকে;

এইভাবেই বেশ চলে যাচ্ছে আমাদের দিনগুলি
এভাবেই বেশ কেটে যাচ্ছে আমাদের রাতগুলি
দুজন পৃথিবীর শেষ দু প্রান্তে অপেক্ষায় বসে
আর দুজন দুজনকে এক অদ্ভুত ভালোবেসে;

জানিস!
মাঝে মাঝে না!
বড্ড দেখতে ইচ্ছে করে তোকে,
অথচ আমাদের দেখা হয় না;

এভাবেই কোন একদিন দেখা হওয়ার আগ পর্যন্ত না হয় আরো বহু বহুদিন খেলব আমরা,
দূর থেকে;

তারপর অপেক্ষার খেলা খেলতে খেলতে যখন অনেকদিন তোর মুঠোফোন একবারও বাজবে না
অনেক অনেকদিন এপাশ থেকে কেও নেটে ঢিল ছুঁড়বে না
একদিন যখন আমার কথা তোর খুব, খুব মনে হবে,
তুই পাগলের মত নেটে ঢিল ছুঁড়তেই থাকবি
এপাশ নীরব রবে,
তুই মুঠোফোনের বোতাম টিপতেই থাকবি
এপাশে সংযোগ বিচ্ছিন্ন দেখাবে,
তখন
ঠিক তখনই
তোর মন ভয়ে কেঁপে উঠবে;

মন ঠিকই জানান দেয়,
প্রিয়জনের না থাকা।



ঐ যে! আকাশ।





ঐ যে! আকাশ।
- যাযাবর জীবন


স্বার্থের গণ্ডি পার হতে পেরেছিলো কে কবে?
এই যে মায়া মমতা ভালোবাসা!
এই যে নানা রকম সম্পর্ক!
সবকিছু ছাপিয়ে স্বার্থটাই বড় হয়ে ওঠে,
স্বার্থের কাছে;

স্বার্থ তো স্বার্থই;
কখনো টাকার
কখনো বা অন্য কিছুর,
প্রত্যেকটা সম্পর্কের পেছনেই থাকে স্বার্থ;

স্বার্থের গণ্ডি কতদূর?

অন্যের ক্ষেত্রে উপদেশ;

নিজের ক্ষেত্রে ঐ তো! ঐ দেখা যায়,
কি দেখা যায়?
ঐ যে! আকাশ।







আমি একতরফা রাত



আমি একতরফা রাত
- যাযাবর জীবন


তুই একতরফা প্রেম করেছিস
ভালোবেসেছিস
কখনো চাঁদ হয়েছিস
কখনো রাত,
গাছেরও হয়তো অনুভূতি থাকে
অনুভব দাগ কাটে না পাথরে;

সব মেঘে কি আর বৃষ্টি ঝরে?
সব রাতে চাঁদনি!
আমি শুধুই অন্ধকার
অনুভূতি ও মনে;

আমি একতরফা রাত
ভালোবাসা ও প্রেমে।




অন্য কারো ঘর




অন্য কারো ঘর
- যাযাবর জীবন


যেদিন থেকে তুই হয়েছিলি পর
যেদিন থেকে তুই অন্য কারো ঘর
সেদিন থেকে তুই অনেক দূরে
ভৌগলিক অবস্থানে,
মন থেকে?
মন কি আর মানে রে?
মনের তো কত ইচ্ছেই মনে মনে!
কল্প চোখে;

মাঝে মাঝে বড্ড অস্থির লাগে আজকাল
মাঝে মাঝে কেমন আছিস জানতে ইচ্ছে করে,
তোরও কি করে না?
তবে কেন ডাকিস ইথারে ইথারে?
কেন ডাকিস ঠারে ঠোরে ইশারাতে?
কেন আকুল ডাকিস নীরব হয়ে, নৈঃশব্দ্যের রাতে?

একবার অবশ্যই যাব তোর কাছে,
নিজেকে ভেঙে;
নিজের ঘর দেখতে অন্য কারো ঘরে।





আগুন আগুন, রিপুর আগুন



আগুন আগুন, রিপুর আগুন
- যাযাবর জীবন


আগুন আগুন,
কোথায় আগুন?
আগুন আমার মনে;
আগুনে পুড়ি আমি
রিপুগুলোর সনে;

আগুন পুড়তে দেখেছ?
পড়ে থাকা ছাই?
মানুষ পুড়তে দেখেছ?
হতাশায় নাই নাই;

এই যে সম্ভব আর অসম্ভব সব চাওয়া
আর না পাওয়ার হতাশায় পুড়ে পুড়ে যাওয়া;

রিপু পোড়ালে কি হয়?

শরীরের মাঝে মানুষ রয়
রিপু পুড়ে পুড়ে মানুষ হয়।



মন'রে মন



মন'রে মন
- যাযাবর জীবন


মন'রে মন যখন তখন
কোথায় কোথায় চলে,
দিনে'তে চাঁদে রাতে সূর্যে
আকাশ বাতাস জলে;
যখন চোখ ঘুমিয়ে থাকে, তুই স্বপ্নচোখে
দিবা নিশীথে আলো আঁধারে, মন তোর কথা বলে.........





থাক না অনুভব, আমার কাছে



থাক না অনুভব, আমার কাছে
- যাযাবর জীবন



কেও কেও কবিতা লিখে
কেও কেও গল্প
কেও উপন্যাস
কেও খটমটে প্রবন্ধ,
যে যাই লিখে তা প্রকাশ করে ছাপা অক্ষরে
রংবেরং এর প্রচ্ছদ সকল, ছাপা বইয়ের মলাটে;

কারো কারো লিখা মানুষকে টানে
কেও কেও বিখ্যাত হয়ে ওঠে অল্পদিনে
আর কারো কারো বই উলুতে কাটে;

ইশশ! আমি যদি লিখতে পারতাম ওদের মত করে!!
আমারও মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে, বিখ্যাত হতে;

আমি জলরঙে মন লিখি সাদা রং ক্যানভাসে
আমি ক্রমাগত রাত আঁকি অন্ধকার কলমে
আমি মনে মনে কবিতা লিখি, মনের খাতা ভরে
তোকে মনে এলে;

এখন কেই বা আর কষ্ট করে মন পড়ে বল?
সবাই কি আর বিখ্যাত হতে পারে?

তোকে কাগজে লিখার দরকার হয় নি আমার কখনো;

অনুভব?
থাক না আমার কাছে!




মনের করিডোরে অন্ধকার



মনের করিডোরে অন্ধকার
- যাযাবর জীবন


মনের লম্বা করিডর, সুনসান নিস্তব্ধতা
সারারাত একটা বেঞ্চে বসেছিলাম আর পেছন ফিরে দেখা,
রাতটা ছিলো পূর্ণিমা, আকাশে বিশাল একটা চাঁদ
মনটা ছিলো অমাবস্যা, অন্ধকারের হাহাকার;

সাগরে একটা নৌকা দুলছিলো
মনের ভেতরে দুলছিলাম আমি
চোখে জীবনের অনেকগুলো কালো অধ্যায়
অন্ধকার করছিলো আমায়;

জ্যোৎস্নায় অন্ধকার দেখে কে?
জীবনে অন্ধকার যেচেছে যে;

আমি সারারাত অন্ধকার যেচেছি মনের করিডোরে
জ্যোৎস্নার তীব্র আলোতে।




দলছুট



দলছুট
- যাযাবর জীবন


কেও কেও জন্ম নেয় ভালোবাসা দিতে
কারো কারো জন্মই হয় ভালোবাসা পেতে
খুব অল্প সংখ্যক জন্মায় ভালোবাসা দিতে ও পেতে,
যেমন তুই;

আমি এদের কারো দলেই পড়ি না
না পেরেছি কাওকে ভালোবাসতে
না পেয়েছি ভালোবাসা কারো কাছ থেকে,
গাছের জন্মই হয় গাছ হয়ে থাকতে।


দুঃখের ফেরিওয়ালা



দুঃখের ফেরিওয়ালা
- যাযাবর জীবন


শুধু শুধুই তুই দুঃখের ফেরি করিস
ঝুড়িতে দুঃখ ভরে
একবার ঝুড়িতে আমাকে উঠিয়েই দেখ না
ভালোবাসায় আপন করে;

আমি তো ঘাটে ঘাটে ঘুরি
হয়ে আকাশ ঘুড়ি
তবুও মাঝে মাঝে যখন তখন
তোকেই মনে করি;

ও ফেরিওয়ালা এবার নামা আমায়
খালি কর তোর ঝুড়ি
আমার আকাশে নীল হ তুই
আমি মেঘ হয়ে হয়ে উড়ি........



কিছু কিছু নীরবতা



কিছু কিছু নীরবতা
- যাযাবর জীবন


কিছু কিছু সময় কথা
কিছু কিছু সময় নীরবতা
কিছু কিছু সময় ঠোঁট
কিছু কিছু সময় চুপ
কিছু কিছু সময় ভালোবাসা
কিছু কিছু সময় কামের দৌরাত্ম্য
কিছু কিছু সময় দূরে থাকা
কিছু কিছু সময় দূরত্ব
ভালোবাসা সবাই বোঝে না
বোঝে না ভালোবাসার মাহাত্ম্য;

কিছু নীরবতা আজ উড়িয়ে দিলাম আকাশে;
ভালোবাসা বুঝে নিস।



খুব নিশীথে, ক্ষণে ক্ষণে



খুব নিশীথে, ক্ষণে ক্ষণে
- যাযাবর জীবন


এই যে তোকে মনে পড়ে ক্ষণে ক্ষণে,
এই যে তুই ঘুমিয়ে থাকিস মনে;
আমিও কি কোথাও আছি?
তোর মনে? গোপন কোনো কোণে;

কোথাও তো কিছু আছেই
কোথাও কেও থাকেই
যার জন্য একটা কেমন কেমন অনুভব
একটা অস্বস্তিকর অনুভূতি
মনের ভেতর
খুব গোপন কোনো কোণে;

আচ্ছা! একে কি ভালোবাসা বলে?

কেন যে অযথা মন খারাপ হয় খুব নিশীথে, ক্ষণে ক্ষণে?
কারণে আর অকারণে।




সিকোয়েন্স



সিকোয়েন্স
- যাযাবর জীবন


পৃথিবীতে আসার একটা নিয়ম আছে
আছে সিকোয়েন্স
আছে সিরিয়াল,
আগে দাদা
পরে বাবা
তারপর আমি
তারপর সন্তান
তারপর নাতি নাতনি,
সিকোয়েন্সটা খুব সহজ
একের পর এক
নিয়ম মেনে;

যাওয়ার নিয়ম কোথায়?
কে আগে যায়?
কে পরে?

যাওয়ার কোন নিয়ম নেই
নেই সিকোয়েন্স
নেই সিরিয়াল
কে যে কার আগে যাবে কে বলতে পারে?
বাবার আগেই চলে যায় সন্তান
দাদার আগে নাতি কিংবা নাতিন
এর মাঝে সবচেয়ে ভারী বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ;

যাবার একটা সিকোয়েন্স থাকলে বড্ড ভালো হতো,
মৃত্যু নিয়ম মানে কোথায়?



সাথে করে কি নিয়ে যাচ্ছি?



সাথে করে কি নিয়ে যাচ্ছি?
- যাযাবর জীবন


কাঁচের আয়নায় বাইরেটুকু দেখা যায়, যতটুকু চোখ দেখে
মনের আয়না দেখে সবটুকু, ভেতর থেকে;
মাঝে মাঝে আমি আমায় দেখে শিউরে শিউরে উঠি
মানুষের খোলসে মানুষ নাকি?

এই যে তোকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকা!
আর ঘেঁষে থাকার অনুভব
মনে সান্ত্বনার অনুভূতি, কেও তো আছে পাশে!
আমার নিজেরই স্বার্থে, স্বার্থানুভব;

আজকাল বড্ড ভয় হয় একলা হতে
এই যে তোকে ছুঁয়ে থাকা! শরীরে শরীর ঘেঁষে
মনের মাঝে এক স্বস্তি স্বস্তি বোধ
কেও তো আছে!
কেও তো ছুঁয়ে আছে আমায়!
শরীরটা শীতল হওয়ার আগে;

একদিন ঘুমের মাঝে তোর হাতে বরফ অনুভূতি হতেই
ধরফরিয়ে উঠে বসবি
লাইট জ্বেলে দেখবি
ধুকপুক শুনতে বুকে কান পাতবি,
নৈঃশব্দ্যতা কানে তালা লাগাবে তোর
হয়তো চিৎকার করে কাঁদবি;

আরে বোকা!
মরণে ভয় কি?
শুধু আমলনামার দিকে তাকিয়ে খুব ভয় করে;
সাথে করে কি নিয়ে যাচ্ছি?







মৃত্যুঞ্জয়



মৃত্যুঞ্জয়
- যাযাবর জীবন


একটা সময় ছিলো কাছে আসার
একটা সময় ছিলো ভালোবাসার
একটা সময় ছিলো অনুভবের
আর দুজন দুজনাতে একাকার;

এখন দুজনার সময় দূরত্বের
সময় স্মৃতির জাবর কাটার
এখন অনুভবে শুধুই অনুতাপ
আর দূরত্ব দুজনার;

একসময় মনে ঝুল পড়ে
একসময় ভালোবাসায় শ্যাওলা ধরে
একসময় অনুভূতি ভোঁতা হতে থাকে
একটা সময় একাকীত্বে জীবন কাটে;

একটা সময় ছিলো, তুই আমি আর ভালোবাসা
এখন সবকিছু ছাপিয়ে ক্ষুধা
একসময় অনুভূতিগুলোর মৃত্যু হয়
একটা সময় সব সঙ্গই বিষময়;

একদিন আমি ছিলাম একদিন তুইও ছিলি
একদিন মন ছিলো আমাদের ভালোবাসার
আজ আমি আছি এখানে, অনেকটা দূরত্বে তুইও আছিস সেখানে
আর সময়ের সাথে সাথে মনটাও বদলে গেছে দুজনার;

সময়ে বদলে যায় অনুভব, সময় বদলে দেয় সব
কেও তাড়াতাড়ি বোঝে কেও বুঝেও অবুঝ হয়ে রয়,
কোন একদিন খুব হঠাৎই মরণ ডাক দিয়ে বলবে, 'আয়'
কে কবে হতে পেরেছিলো মৃত্যুঞ্জয়?









ঘুম পাড়ানি গান



ঘুম পাড়ানি গান
- যাযাবর জীবন


কোন কোন রাতে মনে কবিতা আসে
কোন কোন রাতে তুই
কোন কোন রাত শুধুই অন্ধকার
সব স্বপ্নে কি আর জ্যোৎস্না থাকে

চুইয়ে পড়া জ্যোৎস্নায় অপেক্ষায় হরিণ
দূরে কোথাও থেকে হরিণীর ডাক
আমায় ডাকে না কেও অমাবস্যা পূর্ণিমায়
নির্ঘুম চোখ অন্ধকারে চেয়ে থাকে
ঘুমের অপেক্ষায়

চোখের আয়নায় অনুভূতির ছায়া
মনের আয়নায় তোর বসবাস, পারদ হয়ে
নির্ঘুম বালিশটা তোর প্রতীক্ষায়
আমি ঘুম'কে ডাকতে থাকি
আয়, আয়, আয়!

কোন কোন রাত বড্ড লম্বা হয়
চোখ নির্ঘুম হলে
কোন কোন রাত অন্ধকার হয়
তোর কথা মনে হলে

আমি আমাকে ঘুম পাড়াই
ঘুম জাগানিয়া গানে।






অপাত্রে ভালোবাসা





অপাত্রে ভালোবাসা
- যাযাবর জীবন


অনেক রাত হয়েছে
রাতেরও ঘুম পেয়েছে,
তুই কেন এখনো জেগে?
আমি তো চুমু খেয়েছি সেই দুপুরের ঠোঁটে
রাতেও কি তার আবেশ থাকে?

আচ্ছা! আজ আমার চোখের দিকে তাকিয়েছিলি?
অনুভূতি দেখেছিলি কোনো?
কোন রঙ ছিলো কি আমার চোখে?

জলের রঙ যত স্বচ্ছই হোক না কেন!
আমি লবণ চাখতে পারি দূর থেকে
অনুভূতি হয়তো লুকোনো যায়
কান্না কিন্তু ঠিক ভেসে ওঠে চোখে,
মিছেমিছিই অপাত্রে ভালোবাসা ঢালিস
চোখের জলে;

অনেক রাত হয়েছে
এবার ঘুমিয়ে পড়,
আমি রাত্রি চাখি রাতের ঠোঁটে।






রক্ত সম্পর্ক



রক্ত সম্পর্ক
- যাযাবর জীবন


আপন কোথায়?
অভিধানের পাতায়;

সম্পর্কে?
হাসিও না তো!

আপন টাকা
তারচেয়ে আপন স্বার্থ
তারচেয়ে বেশী আপন লোভ
আমার কাছে আপনার চেয়ে আপন আমার রিপুগুলো,
প্রেম প্রীতি ভালোবাসা সম্পর্ক
এগুলো সব কাগজের পাতায়
অভিধানে
কাব্যে আর কবিতায়;

তা হলে এই যে পারিবারিক বন্ধন!
বন্ধু বান্ধব
আত্মীয় স্বজন!

আরে!
দিনের সূর্যে আলো খুঁজছ?
কিংবা রাতের অন্ধকারে, কালো?
এই যে বাবা মা
এই যে পরিবার
এই যে সন্তান
এই যে রক্ত সম্পর্কগুলো
তোমরা যাকে আপনার চেয়ে আপন বলো,
যতক্ষণ দিয়ে যাবে ততক্ষণই তোমার দাম
তুমি আমি
এরা ওরা
আমরা তোমরা
প্রত্যেকটা সম্পর্কই লেনদেনের পরিণাম;

কি বিশ্বাস হয় না?
জীবন যেচে দেখ,
একবার দেওয়া বন্ধ করেই দেখ না!
সব আপনেরই পর চেহারাটা দেখবে স্বচ্ছ ভাবে
একদম দিনের আলোয় ফকফকে আয়নায় চোখের সামনে
এর মাঝে সবচেয়ে বেশী পর চেহারাটা কে দেখাবে জানো?
তোমারই নিজের সন্তান!

খুব খারাপ লাগছে কথাগুলো তাই না?
কি করব বলো?
অভিধানের সাথে জীবনের মিল খুঁজে পাই না;

জীবনে সব চেয়ে বেশী কে কাঁদায় জানো?
রক্ত,
হয়তো লবণাক্ত বলে।







পরিবর্তন



পরিবর্তন
- যাযাবর জীবন


পরিবর্তন চারিদিকে
বদলাচ্ছে সব কিছু;
ঘণ্টায়, মিনিটে, সেকেন্ডে
চোখের পলক ফেলতে না ফেলতে
বদলাচ্ছি আমি
বদলাচ্ছে জীবন;

সময়ের সাথে বদলে যায় চাহিদা
বদলায় চাহিদার ধরণ
সময়ের সাথে সময়ই বদলে যায়
বদলে যায় জীবন

সকালে ঘুম থেকে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়াই
আয়নার মানুষটার কাঁধে দেখি হাজারো চাহিদার বোঝা
সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে আয়নার সামনে নিজেকে প্রশ্ন করি
ও হে! আজকের প্রাপ্তি কি?
চাহিদা ও প্রাপ্তির মাঝে ফারাক আকাশ পাতাল
ফারাক কাল ও আজকের মাঝে
ফারাক গত আর আগামীর মাঝে;

আমি পরিবর্তন দেখছি সময়ের
পরিবর্তন দেখছি নিজের
পরিবর্তন সম্পর্কের
পরিবর্তন অনুভূতির
পরিবর্তন মানুষের
পরিবর্তন জীবনের;

একটু পরেই গত হয়ে যাবে এখন
এখনটা আগামী হবে তখনকার গত
সময় বদলাচ্ছে দ্রুত,
টিক টিক টিক টিক
সময়ের ড্রাম বাজছে,
শুনতে পাচ্ছ?

সামনে কি আছে?
অনেক অনেক ভাঙন?
নাকি নতুন আরো কিছু সম্পর্ক নিয়ে
ক্রম পরিবর্তনশীল নতুন আরেকটি জীবন;

আমরা ঘড়ি দেখি, সময় চোখে দেখি না
পরিবর্তিত মানুষ দেখি, পরিবর্তন চোখে দেখি না;
আমি মাঝে মাঝে খুব অবাক হয়ে আয়নার দিকে চেয়ে থাকি,
জীবনের বদলে যাওয়া দেখি,
পরিবর্তিত আমাকে দেখি;
বদল অনুভবের
বদল অনুভূতির
বদল সম্পর্কের
বদল চেহারার
বদল জীবনের,
আচ্ছা!
সাদা চুল দাঁড়িতে ছাওয়া
কুঁচকানো চামড়ায় মোড়া
আয়নার ঐ মানুষটা কি আসলেও আমি?
কই!
এই তো সেদিন কান্না করছিলাম মায়ের কোলে;

সময় আলোর গতিতে চলে।












মানুষ মানুষ অমানুষ



মানুষ মানুষ অমানুষ
- যাযাবর জীবন


চারিদিকে কেমন এক শান্তি শান্তি অশান্তি
আর সুখ সুখ অসুখ
আরে নাহ! ক্যান্সার ফ্যান্সার না
আরো ভয়ঙ্কর নাম না জানা অন্য কোন অসুখ,
শারীরিক?
কিছুটা হয়তো!
তবে বেশীরভাগ মানসিক;

চারিদিকে এখন নারী নারী পুরুষ
কারো কারো ফ্যাশনের নামে হাতে চুড়ি
কেও কেও কানে দুল পড়ি
বাইরে এক একজন বাঘের বাচ্চা
ঘরে বৌ এর গোলামী;
চারিদিকে ইদানীং পুরুষ পুরুষ রমণী
না হয়েই বা করবে কি?
যা দিনকাল পড়েছে!
শিশুগুলোও ধর্ষণের শিকার
দ্বিধা হও ধরণী;

মানুষ এখন মানুষ মারে নির্লিপ্তে
মনের খুশিতে পিটিয়ে পিটিয়ে
রাস্তাঘাটে সমবেত হয়ে
মনের ভেতর শঙ্কা হলে
আরে আরে! বোধহয় ছিনতাইকারী?
হতে পারে ছেলেধরা!
হোক সে পুরুষ কিংবা নারী
ধ্যাত! মরে গেছে?
বেশ তো চলছিলো খেলা খেলা
খেলার ছলে;
মানুষ না অমানুষ?

মানুষ এখন মানুষ মারে নির্লিপ্তে
ঘরের ভেতর কয়েকজনের মিলে
মনের সুখে পিটিয়ে পিটিয়ে
অন্য ঘরানার দোহাই দিয়ে
কিংবা শুধু মতের মিল না হলে
একজন পেটায় বাকি সবার হাততালি
আরে, আরে! মরে গেলো নাকি?
ধ্যাত! আনন্দটাই মাটি;
মানুষ না অমানুষ?

আমাদের দুটো চোখ আছে তবুও বড্ড দৃষ্টিভ্রম
আমাদের দুটো কান আছে তবুও বধির
আমাদের একটি মুখ আছে, একদম বোবা
আমাদের দুটো হাত আছে, শেকল পড়ানো
আমাদের দুটো পা আছে, মাটির স্ক্র্যাচের
আচ্ছা! আমাদের মন আছে কি?
অনুভব?
অনুভূতি?

আছে তো!
মন আছে, বোধশুন্য
মনের মাঝে আছে সুখ সুখ অসুখ
কারো অল্প কারো বেশী,
আমাদের বিশেষত্ব কি?
মাংস দেখলেই আমরা মাংসাশী;

আচ্ছা! আমরা কি মানুষ না অমানুষ?
ইদানীং আমরা সবাই মানুষ মানুষ অমানুষ।






















হৃদয় বাড়ি



হৃদয় বাড়ি
- যাযাবর জীবন


হৃদয় এক বিশাল বাড়ি
চারটি ঘর, চার দরজা
প্রতি ঘরেই চাবি আছে
কোথাও নেই তালা,
পুরো বাড়িটাতেই তোর বাস
ভালোবাসায় একলা,

একদিন কোন একটি চাবি কাজ না করলেই
ঘুমিয়ে যাবে বাড়ি
চারিদিক সুনসান নিস্তব্ধতা
আর বাকি দরজাগুলোতে লাগবে তালা,
সেদিন তুই মুক্ত
ভালোবাসাহীন একলা।





ভালোবাসা নামলো বলে!



ভালোবাসা নামলো বলে!
- যাযাবর জীবন


যখন রাতের বেলায় অন্ধকার নেমে আসে
তখন কেন যেন তোর কথা খুব পড়ে মনে
আর আমি অন্য কেও বনে যাই মনে
কোথায় রে তুই?
কার সনে?

যখন রাতের বেলায় মনে রাত নামে
তখন,
ঠিক তখনই আমি অন্ধকার হই তো'তে,
আর অন্ধকারটাকে যখন আপন করে ধরতে যাই
তখনই স্বপ্নগুলো ঘুম হয়ে যায় চোখে
তারপর তুই আমি আর ঘুম খেলা করি, রাত্রির চোখে;

আমি ঘুমের মাঝেই তোকে পাই
আলো'তে হারাই
ওরে ও চোখ, অন্ধকার নেমেছে
ঘুমা এখন রাত্রির কোলে
ভালোবাসা এই নামলো বলে!




ভুলে থাকা কি যায়?




ভুলে থাকা কি যায়?
- যাযাবর জীবন


মানুষ কতকিছুই না ভুলে যায়!
মন যখন ভুলাতে চায়,
কখনো বা স্মৃতি'তে ধুলো জমে যায়
কখনো কালের বিবর্তনে মন থেকে হারিয়ে যায়,
ভালোবাসা কি ভোলা যায়?

এক এক সময় খুব ইচ্ছে করে ভুলে যেতে
ইচ্ছে করে মন থেকে মুছে দিতে তোকে
কতদিন যে কতভাবে স্মৃতি'তে রাবার ঘষেছি!
কতদিন কতভাবে রক্তে ধুয়েছি হৃদয়
লবণে ধুয়েছি চোখ,
ভালোবাসা কি মুছতে পেরেছি
নাকি ধুতে পেরেছি তোকে?
শুধুশুধুই ভুলতে চেয়ে অশ্রু ডেকেছি স্মৃতি খুঁড়ে;

এই যে দিনের বেলায় সূর্য থেকে আলো ছুঁড়িস!
এই যে রাতের বেলায় চাঁদের টর্চ জ্বালিস!
এই যে কাজের সময় স্মৃতির খোঁচায় বিরক্ত করিস!
এই যে ঘুমের সময় চোখে স্বপ্ন হয়ে বসিস!
কাছে আসতে পারিস না?
খুব কাছে!

কই, আমি তো দিনের বেলায় আলো ছুঁতে পারি না
অন্ধকার ধরতে পারি না রাতের বেলায়
স্মৃতির কাঁটা হতে পারি না কারো মনে
স্বপ্ন হতে পারি না কারো চোখে,
তবে ভালোবাসতে পারি রে
অনেক ভালো
যেখানে মন ডুবে থাকে মনে
আর তুই রক্তের অণু, পরমাণুতে;

আমি স্মৃতি'কে মাঝে মাঝে বড্ড বকা দেই
হৃদয়'কে কড়া শাসন,
কত অনুনয় বিনুনয়! তোকে ভুলিয়ে দিক পোড়া মন;
আমি সত্যিই ভুলে যেতে চাই
ভুলে যেতে চাই ভালোবাসা
ভুলে যেতে চাই স্মৃতি
ভুলে যেতে চাই তোকে,
একবার তো একলা হয়ে বাঁচি!
একটাবার ভালোবাসাহীন
একটাবার তুইহীন
আমার আমি হয়ে থাকি;

এই যে দূর, দূর থেকে এত এত ঢিল ছুড়ি!
শব্দের
বাক্যের
কবিতার
তোর গায়ে লাগে?

তোর বরফ নীরবতা আমার কান জমিয়ে দেয় মাঝে মাঝে,
নৈঃশব্দ্যতা বড্ড বুকে বাজে;

কখনো বরফ ভাঙার ভয়াবহ শব্দ শুনেছিস?
শুনবি কিভাবে?
কখনো মন ভাঙার চিৎকারে কেঁদেছিস?
কাঁদবি কিভাবে?

তুই বোবা ও বধির।

















সময়ের পথ হাঁটা



সময়ের পথ হাঁটা
- যাযাবর জীবন


সময়'কে দেখা যায় না
ছোঁয়া যায় না
অনুভব করা যায় না,
তবুও সময় ছিলো
সময় আছে
সময় থাকবে,
কালের সময়ে;
সময়'কে কে আর ধরে রাখতে পারে?
সময় হেঁটে চলে সময়ের পথ ধরে;

সময় আসে, সময় চলে যায়, সময়ের পথ ধরে
পৃথিবীতে মানুষ আসে সময়ের হাত ধরে
পৃথিবী থেকে মানুষ চলে যায় সময় ফুঁড়িয়ে গেলে
কালের চাকায় সময় ঘুরে, সময়ের পথ ধরে;

আমরা পৃথিবীতে আসি আমাদের সময় হলে
আমরা হাসি, খেলি, বেঁচে থাকি আমাদের সময়ে
রোগ, শোক, দুঃখ, বেদনা ভোগ করি আমাদের সময়ে
প্রেম, প্রীতি, ভালোবাসা আর মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়ি আমাদের সময়ে
আমরা আমাদের দীর্ঘ এক জীবন পাড়ি দেই মহাকালের অণু সময়ে,
তারপর একসময় থমকে যাই নিথর হয়ে
পৃথিবী ছেড়ে আমাদের চলে যেতে হয়, মৃত্যুর সময় হলে;

সময় কি আর থমকে থাকে?
সময় চলতে থাকে তার পথে, সময়ে;
সেই সুদূর অতীত থেকে হেঁটে হেঁটে অজানা এক সুদূর ভবিষ্যতের পানে।






মন খুলে খুলে



মন খুলে খুলে
- যাযাবর জীবন


শরীরে কি আছে ?
দলা দলা চর্বি
স্থানে স্থানে মাংসপিণ্ড
চামড়া দিয়ে মোড়ানো,
চর্বি আর মাংসের ভেতর কিছু হাড়গোড়
তারও ভেতরে ফুসফুস, যকৃৎ, কলিজা, হৃদয়;

হৃদয়?
সে আবার কি?
তোমরা যাকে মন বলো,
আরে ওটাই তো যত গণ্ডগোলের মূল
ওখানেই যত অনুভব;

তাহলে শরীরের প্রতি শরীরের এত টান কেন?
কেন এত ইচ্ছে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখার?
কেন রিপুর তাড়না?
কতক্ষণের টান?
কিছু মিনিট না হয় ঘণ্টা
তারপর তো পুরোটাই মন
আনন্দ কিংবা বেদনা;

আচ্ছা!
মনে কি থাকে?
সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না
প্রেম, প্রীতি, ভালোবাসা, ঘৃণা
দম্ভ, অহংকার, ক্রোধ, আর রিপুর তাড়না
পাওয়ার খুশি আর না পাওয়ার বেদনা?
মন কেন শরীর ছুঁতে চায়?
কামনায় কিংবা ভালোবাসায়;
শরীরের অংশ বলে?

আচ্ছা! মন কি শরীরের অংশ?
তাহলে দেখা যায় না কেন?

আমার একবার খুব মন দেখতে ইচ্ছে করে,
মন খুলে খুলে।







অলীক ইচ্ছেগুলো



অলীক ইচ্ছেগুলো
- যাযাবর জীবন


অনেকদিন দুপুর দেখি নি একসাথে
অনেক দিন মেঘ দেখি নি
বৃষ্টিতে ভিজি নি
অনেক দিন আকাশ দেখি নি একসাথে,
অনেক অনেকদিন তোকে যে দেখি নি!
কেমন আছিস রে তুই?
কোথায় আছিস?

একদিন আমরা অন্যরকম এক দুপুর দেখেছিলাম
অনেক অনেকদিন আগে
দুজন একসাথে
চোখে চোখে;

সেদিন সূর্য উঠেছিলো, না মেঘ জমেছিলো, না বৃষ্টি নেমেছিলো তা দেখিনি
সেদিন গরম ছিলো না ঠাণ্ডা ছিলো কেও অনুভব করি নি,
সেদিন শুধুই চোখে চোখ ছিলো
হাতে হাত
মনে মন
আর মাঝে মাঝে ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে ভালোবাসার অনুভূতি,
সেই এক অদ্ভুত স্বপ্নের দুপুরে;
মনে আছে?

এখন আমার আকাশে দুপুর নেমেছে
আমার একবারও জানালা দিয়ে উঁকি দিতে ইচ্ছে করছে না
একবারও জানতে ইচ্ছে করছে না
আজ কি রোদ উঠেছে? না মেঘ ভাসছে? নাকি বৃষ্টি নেমেছে?

আজ খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তোকে
ইচ্ছে করছে সেই সেদিনের মত তোর হাত ধরে বসে থাকতে
ইচ্ছে করছে চেয়ে থাকতে তোর চোখে
আর ডুবে যেতে তোর ঠোঁটে;
মাঝে মাঝে আমার কি সব অদ্ভুত ইচ্ছেই না মনে আসে!
অসম্ভব সব অলীক ইচ্ছেগুলো
ঝনঝন করে মনের ভেতর
মনখারাপের দ্বিপ্রহরে;

আচ্ছা! তোর মনেও কি এমন অলীক ইচ্ছে জাগে?
কেও উত্তর দেয় না,
চুপ করে থাকে দুপুর
কানে তালা লাগায় নিস্তব্ধতার হুঙ্কার,
আর দুপুর বেলায় রাত নামে আমার চোখে, মনখারাপে;
ঝাপসা চোখে কি দুপুর দেখা যায়?




ভার্চুয়াল ধোঁকা


ভার্চুয়াল ধোঁকা
- যাযাবর জীবন


ভার্চুয়াল সম্পর্কগুলো ভার্চুয়ালেই ভালো
বাস্তবে চলে আসলেই বড্ড কাঁদায়
ভালোবাসায় কিংবা ধোঁকায়



ইচ্ছের দাসত্ব



ইচ্ছের দাসত্ব
- যাযাবর জীবন


ইচ্ছের দাসত্বে জীবন পাড়ি,
ইচ্ছেগুলো ইচ্ছেমতন
মনের ভেতর যখন তখন
ইচ্ছেকে কখনো দাস বানাতে পারি নি
ব্যর্থতা আমারই;

যখন ইচ্ছে পাহাড়ে
ইচ্ছে হলো তো নদী কিনারে
ইচ্ছে হলেই সমুদ্রের ধারে,
ইচ্ছের দাসত্বে শরীর টেনে নিয়ে যাই
ইচ্ছে মনের ইচ্ছে বড়াই,
অথচ আমার তো ইচ্ছে করে পাহাড় হতে
নদী হতে
সাগর হতে,
ইচ্ছে আর বাস্তবের মাঝে বিস্তর ব্যবধান
ব্যবধান সাধ আর সাধ্যের মাঝে;

একদিন খুব ইচ্ছে করে প্রকৃতি হতে
ইচ্ছে করে মেঘ হতে
বৃষ্টি হতে
কখনো ইচ্ছে করে ঝড় হতে
কখনো ইচ্ছে সব ওলোট পালট করে দিতে,
ইচ্ছে করে আকাশ হতে,
অথচ মানুষের সীমাবদ্ধতা শুধুই নীলে;

এই যে শরীর!
সত্তর ভাগ জল
অথচ না পারি নদী হতে না হতে পারি সাগর;
মাটির তৈরি মানুষ অথচ ইচ্ছে করলেই পারি না মাটি হতে,
মজার বিষয় কি জানো?
মাটি হতেই হয় কোন এক সময়, ইচ্ছের বিরুদ্ধে;

আমার ইদানীং একদম ইচ্ছে করে না মাটি হতে,
ইচ্ছে করে পাহাড় হতে
কখনো ইচ্ছে করে সাগর হতে
খুব বেশী ইচ্ছে করে আকাশ হতে
আর ইচ্ছে করে ইচ্ছের দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে।









গন্তব্য কোথায়?



গন্তব্য কোথায়?
- যাযাবর জীবন


ট্রেন আসে
ট্রেন যায়
দিনে, দিনের নিস্তব্ধতা ভেঙে
রাতে, রাতের নীরবতা
বিকট শব্দে হুইসেল বাজে কুউউউউউ
ঝিক ঝিক ঝিক ঝিক
ষ্টেশনে ট্রেন আসে
ষ্টেশন জীবন্ত হয় কিছুক্ষণের জন্য
কিছু মানুষ নামে
কিছু ওঠে
যে যার গন্তব্যে
কু ঝিক ঝিক ঝিক ঝিক ট্রেন চলে যায়
ষ্টেশন নীরব হতে থাকে ব্যস্ততা কমে যায়
এই ফাঁকে একটুখানি ঝিমিয়ে নেয় ঘুম চোখে
সজাগ মন অপেক্ষায়
পরবর্তী ট্রেন আসার
ট্রেন আসে
ট্রেন যায়

ষ্টেশন পড়ে থাকে ষ্টেশনে
মানুষ নামে
মানুষ ওঠে
ট্রেন চলে যায়,
মানুষের গন্তব্য আছে
গন্তব্য আছে ট্রেনের
ষ্টেশনের কোন গন্তব্য নেই
ষ্টেশন দাঁড়িয়ে থাকে ঠায়;

আমার নিজেকে মাঝে মাঝে ষ্টেশন মনে হয়
কত মানুষ নামলো বুকে পা দিয়ে
কত মানুষ উঠলো আমায় মাড়িয়ে
যে যার গন্তব্যে,
আমি বসে একঠায়,
ভাবছি ষ্টেশনটার একটা নাম দেব,
কি নাম দেয়া যায়?
আচ্ছা!
অপেক্ষা নামটা কেমন হয়?

ধ্যাত!
কি সব আজেবাজে ভাবছি
ষ্টেশন তো ব্যবহারের জন্যই
মানুষ তো মাড়াবেই;

আমি কার গন্তব্য?
আমারই বা গন্তব্য কোথায়?
আমি কার অপেক্ষায়?
কিসের অপেক্ষায়?










ঘুমন্ত রাত



ঘুমন্ত রাত
- যাযাবর জীবন


কারো ভালোবাসার প্রকাশ প্রচণ্ড আবেগে
কেও কেও বুকের ভেতর চেপে রাখে
আমি কাওকে ভালোবাসতেই পারলাম না
আবেগ প্রকাশ করবো কি করে?

তবে খুব বুঝতে পারি কেও কেও আমায় ভালোবাসে
কেও অল্প স্বল্প
কেও প্রচণ্ড ভাবে
অল্পস্বল্প ভালোবাসার টান আমি উপেক্ষা করে যাই
প্রচণ্ড ভালোবাসার কাছে নিজেকে বড্ড তুচ্ছ মনে হয়
আমি নিজেতে নিজে বড্ড অসহায় হয়ে যাই;

ভালোবাসায় আমার বড্ড ভয়
আবেগহীন মনে কি জানি এক সংশয়,
পড়ন্ত বেলায় কি আর সূর্যোদয় হয়?
কে বোঝাবে তোকে?
শুধু শুধুই ভালোবেসে কষ্ট দিস মনটাকে;

তার থেকে সূর্য ভালোবাস
তাপ বিলাবে
মেঘ ভালোবাস
বৃষ্টি দেবে
জ্যোৎস্না ভালোবাস
আলো দেবে;

কেন রাত জাগিস ভালোবাসায়?
কেন অপেক্ষা করিস আমার আশায়?
আমি তো ঘুমন্ত রাত,
আমায় ভালোবেসে কি হবে?