রবিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২১

'জরু কা গোলাম'

'জরু কা গোলাম'  

কথাটা যে কবে শুনেছিলাম! ঠিক মনে নেই,  

সম্ভবত খুব ছোট বেলায়, যখন বোধবুদ্ধি হয় নি

যখন মানুষের বলা কথাগুলো গোগ্রাসে গিলতাম

আর সেগুলো বলার চেষ্টায় ক্রমাগত জিহ্ব নাড়ার চেষ্টা করতাম;


কথাটি হয়তো শুনেছিলাম দাদীর মুখ থেকে, কিংবা নানীর

হয় আমার বাবা'কে বলছিল কিংবা মামা'কে 

কেন বলেছিল সেটা তখন বোধগম্য হওয়ার কথাই না, 

তবে প্রথম শোনার পর থেকে আজ পর্যন্ত শুনেই যাচ্ছি

হয়তো বৃদ্ধ বয়সে যখন হাত পা অসাড় অবস্থায় বিছানায় শুয়ে থাকব

কিংবা হুট করে কোন একদিন মৃত্যু এসে ধমক মেরে বলবে 'চল আমার সাথে'

তখনো হয়তো 'জরু কা গোলাম' শুনতে শুনতে ঢলে পড়ব 

হয় তো দাদী নানীর মুখ থেকে নয়, হয়তো মা খালা ফুপুদের মুখ থেকে নয়

হয়তো ছেলের বৌ এর মুখ থেকে কিংবা নাত বৌ এর মুখ থেকে কিংবা নাতনির মুখ থেকে 

- সেই একই কথাটি বলছে হয়তো বলছে তাদেরই ছেলেদের;


আচ্ছা! ''জরু কা গোলাম' কি খুব খারাপ গালি?

আমি আজো বুঝতে পারি নি; 

পরিবারের কোন পুরুষ সদস্যের মুখ থেকে তো কখনো এই গালি শুনি নি! 


জন্মের পর থেকেই শুনেছি আমার দাদীর মুখ থেকে - বলছে আমার বাবা'কে, চাচা'কে 

অথচ আমার ফুপা ওনার কাছে মহা মনিষী, ফুপুর কথা ছাড়া নাকি উনি চলতেই পারেন না; 

 

শুনেছি আমার মায়ের মুখ থেকে - বলছে আমাকে, আমার ভাই'কে 

অথচ আমার বোন জামাই ওনার কাছে ঋষি, বোনের কথায় নাকি উঠে আর বসে; 

 

শুনেছি আমার নানীর মুখ থেকে - বলছে আমার মামা'দেকে

অথচ আমার খালুরা ওনার কাছে মহামানব, খালাদের কথাই নাকি তাদের বাড়ির সব; 

 

শুনেছি আমার মামীর মুখ থেকে - বলছে আমার মামাতো ভাই'গুলোকে

অথচ আমার মামাতো বোনের জামাইরা কেউ কেউ ওদের গ্রামে পরিচিত - বৌ পাগল; 

 

এই গালির উৎস কোথায়? 

 - শুধুমাত্র কি মায়েদের মনে? 


কা'কে দেয়? 

 - নিজ গর্ভজাত সন্তান'কে?


যে সন্তান উদয়াস্ত পরিশ্রম করে বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে

যে সন্তান সারাদিন শ্রান্ত ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরে বাবা-মা, স্ত্রী সন্তানদের মুখের হাসি দেখবে বলে

যে সন্তান বাবা-মায়ের কিছু হলে সারারাত উৎকণ্ঠায় বসে থাকে তাদের শিয়রে 

 - সেটাই হওয়া উচিৎ, ওটাতে দোষের কিছু নয়, 

কিন্তু স্ত্রীর কিছু হলে যদি স্বামীর নির্ঘুম রাত কাটে 

 - তবেই 'জরু কা গোলাম' 

 - ভুল বললাম?

 

ক্রমাগত শাশুড়ির বকুনি খেয়ে খেয়ে পরের বাড়ি থেকে আসা যে মেয়েটি হাসিমুখে 

সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তার স্বামীর সংসারের জন্য করেই যাচ্ছে সে নাকি 'জরু'

আর তার ভালোমন্দের ব্যাপারে যদি তার বৈধ স্বামীটি উৎকণ্ঠিত হয় তবে সে 'জরু কা গোলাম'

যুগ যুগ শাশুড়ি বৌ এর দ্বন্দ্বে পুরুষ মাত্রই এই গালিটি শুনে গেলাম;


আচ্ছা! জরুও কি একটি গালি? 

তাহলে তো আমার দাদী, নানী, মা, খালা, ফুপুরা, আমার বৌ, আমার কন্যা সকলেই জরু

আর আমার দাদা, নানা, বাবা, খালু, ফুপু, আমি, আমার ভাই, ছেলে সন্তান 

 - সকলেই 'জরু কা গোলাম', 

কারণ জীবনের কোন না কোন সময়ে, কোন না কোন পরিস্থিতিতে 

আমরা পুরুষরা তাদের স্ত্রী'দের কোন না কোন বিষয়ে উৎকণ্ঠিত হয়েছি

কোন না কোন বিষয়ে আমরা পুরুষ'রা তাদের স্ত্রী'দের কথা শুনেছি

 - ভুল বললাম? নাকি ঠিক বলেছি?  


যখন দাদী ও তার বোনেরা গল্প করতো! 

 - আমি হুট করে ঘরে ঢুকে পড়লেই শুনতাম বকছে আমার বাবা'কে, চাচা'কে

যখন নানী ও তার বোনেরা গল্প করতো! 

 - আমি হুট করে ঘরে ঢুকে পড়লেই শুনতাম বকছে আমার মামা'দের

যখন মা, খালা কিংবা ফুপুরা অথবা পাড়াতো সখিরা গল্প করতো! 

 - আমি হুট করে ঘরে ঢুকে পড়লেই শুনতাম বকছে আমাকে ও আমার ভাই'কে

   কিংবা আমার খালাতো, মামাতো, ফুপাতো ভাই'দের 

যখন আমার স্ত্রী, তার জা, তার ও আমার বোনেরা গল্প করে 

 - শুনতে পাই বকছে আমার ছেলে'কে, ভাইস্তা'কে, ভাইগ্না'কে 

যুগ যুগ ধরে সকলের মুখেই সেই একই গালি 

 - 'জরু কা গোলাম', আমরা সকল ছেলেগুলি;  


আমার দাদী নানীরা শাশুড়ি ছিলেন 

তারপর শাশুড়ি হলেন আমার মা খালা ফুপুরা

তারপর শাশুড়ি হচ্ছে আমার স্ত্রী, তার জায়েরা, ননদেরা  

একসময় শাশুড়ি হবে আমার মেয়ে'রা, তাদের মেয়েরা

এদের প্রত্যেকেই তাদের ছেলের ঘরে বৌ আনবে বেশ ঘটা করেই

কিছুদিন হাসি খুশি তারপর হাঁড়িকুঁড়ির ঝনঝন শব্দ  

তারপর শুরু হবে শাশুড়ি বৌ এর পাটা পুঁতোর লড়াই 

শাশুড়ির সংসার না বৌ এর সংসার! শুরু হবে ক্ষমতার বড়াই 

আর বলি হবে সকল দাদারা, নানারা, ভাইরা, ছেলে সন্তানরা

তথা সকল পুরুষ জাতি, 

জরু নাম দিবে জরুরা 

'জরু কা গোলাম' বহন করবে তাদের ছেলে সন্তানরা

তাই না? 


  

যে জরু ছেলে সন্তান জন্ম দিতে নয় মাস অমানুষিক কষ্ট সহ্য করে

সেই কি অবলীলায় ঐ ছেলেটিকেই দ্বিধাহীন চিত্তে গালি দিয়ে যাচ্ছে - 'জরু কা গোলাম'

 - আমার বোধবুদ্ধিতে ধরে না

 - ও আমার দাদা নানা, আমার বাবা চাচারা, আমার ভাইয়েরা, 

   আমার ছেলে'রা, ভাইস্তা'রা, ভাইগ্না'রা; তোমাদের বোধবুদ্ধি'তে কিছু ধরে? 

   - আমার যে খুব জানতে ইচ্ছে করে! 


৩১ জানুয়ারি, ২০২০


#কবিতা


'জরু কা গোলাম'

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




ভ্রমণে জানা

ক্রমাগত ঘুরছি এখানে ওখানে 

দেশ ও বিদেশ,  

যে ট্যুরিস্ট স্পটেই গিয়েছি ওখানে শুনেছি 

 - "লাগবে স্যার?" 

 - "ENJOY করবেন?" 

 - "মেয়ে লাগবে স্যার!"

আচ্ছা! ভ্রমণ মানেই কি সেক্স? 


ভ্রমণে তো আমরা ENJOY করিই, তাই না?

কিংবা একটু আনন্দ উদযাপনের জন্যই আমরা ভ্রমণ করি,  

তবে এক একজনের ENJOY এক এক রকম 

এক একজনের ENJOY এর এক এক ধরণ

ভ্রমণে কারো ENJOY মানেই SEX, কারো অন্য কিছু 

আর কেউ ENJOY করে প্রকৃতি, এক একজনের ENJOY এক এক রীতি;   


দুষ্ট লোকে বলে ঘুরতে গেলে তিনটা 'E'  

EAT, EJACULATE AND ENJOY


আমার কাছে 'E' এর অর্থ ভিন্ন, 

E তে তো কত কিছুই হয়, 

যদি স্পেসিফিক ৩টা 'E' এর কথা বলো 

তবে আমি বলব EXCURSION, EARTH AND EARN 

আমার আনন্দ ভ্রমণে, পৃথিবীকে জানায় 

অর্জন? এটা উপার্জন নয় কিন্তু! 

জ্ঞানেরও অর্জন হয়, সবার বোধগম্য নয়; 

  

দুষ্ট লোকে আরও বলে ট্যুরিজমের তিনটা 'S' 

SEX, SEX AND SEX


আচ্ছা! S তে তো কত কিছুই হয়, 

যদি স্পেসিফিক ৩টা "S' এর কথা বলো

তবে আমি বলি SUN, SEA AND SAND 

সূর্য তো আলোর উপমা, আলো পৃথিবীতে, আলো মনে 

সাগর মানেই তো পানি

আচ্ছা! মানুষের শরীরের কত ভাগ জানি পানি?  

এখানে বালি বলতে তো শুধু আর বালি নয়! বালি ও মাটি 

আর মানুষ মানেই তো মাটি;


দুষ্ট লোকেরা প্রায়শই বলে, ঘুরতে যাও তো সাথে তিন 'W' 

WINE, WILD AND WOMEN 


এটা কোন কথা হলো! 

W তে তো কত কিছুই হয়, 

যদি স্পেসিফিক ৩টা  'W' এর কথা বলো

তবে আমি বলব WEATHER, WATER AND 'WHO AM I'

আবহাওয়া না বুঝলে প্রকৃতি বুঝব কি করে? 

আমার ষাট ভাগ অংশই তো পানি আর পৃথিবীর সত্তর ভাগ

পানিই যদি না দেখলাম! তাহলে কি আর পৃথিবী দেখা হয়?

এই যে ভ্রমণ করছি! শুধু কি দেখতে? জানতে নয়?

আরে নিজেকে নিজে জানার মাঝেই তো রয়েছে, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিস্ময়, 

আচ্ছা! সত্যি করে বলো তো! নিজেকে জানে কজন?

আমি তো আজো আমার আমি'কে খুঁজে যাচ্ছি;


আমি স্বার্থপরের মত এতক্ষণ শুধু নরের ভ্রমণের কথাই বললাম 

নারীও তো ভ্রমণপিপাসু, তারাও তো নরের সাথে পাল্লা দিয়েই ভ্রমণ করে, 

তবে নারীর ক্ষেত্রে অক্ষরগুলো মনেহয় অনেকটাই আলাদা অর্থ বহন করে; 

যতদূর দেখেছি ওদের ক্ষেত্রে E তে EXPLORE

তারা সচরাচর ঘরে বাইরে নরে, সবকিছুতেই EXPLORE করে; 

তাদের ক্ষেত্রে S বলতেই SHOPPING 

ওটা তাদের স্বভাবজাত, 

W তে কি তবে WILDNESS বোঝায়?  

খানিক বন্যতা কি তাদের প্রকৃতিতে নাই?  

আরে, ওটুকু না থাকলে নর EXPLORE করবে কিভাবে? 

নারী বোঝার সাধ্য আমার কি আছে?  আমার ভুলও হতে পারে;  

 

কথার অর্থ শুধু শব্দ'তে নয় 

বক্তার আচরণেও শব্দের অর্থ বদল হয়,  

চোখ তো কতকিছুই দেখে!

দৃষ্টি ও দৃষ্টিভঙ্গির মাঝে পার্থক্য বিশাল; 


ভ্রমণ শুধু ঘোরাঘুরিই নয়

সময় সময় নিজেকেও জানতে হয়। 



৩০ জানুয়ারি, ২০২০ 


#কবিতা 

ভ্রমণে জানা 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা। 




সময়ের ডানা

আমাদের ডানা নেই 

উড়ে যেতে পারি না অতীতের কাছে

অথচ মাঝে মাঝে অতীত বড্ড টানে তার দিকে

এক এক সময় পুরনো স্মৃতিগুলো 

এক এক সময় হারিয়ে যাওয়া পুরনো মানুষগুলো; 

 

ডানা নেই সময়ের 

অতীত উড়ে আসতে পারে না আমার কাছে 

না পারে ভবিষ্যৎ আমাকে তার কাছে নিতে

অথচ মাঝে মাঝে বড্ড ইচ্ছে করে ভবিষ্যতে যেতে

ইচ্ছে করে ভবিষ্যতের আমাকে দেখতে;  


মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে সুদূর অতীতে গিয়ে নিজেকে বদলে ফেলতে

শুধরে নিতে পুরনো সব ভুলগুলো 

ক্ষমা চাইতে পুরনো মানুষগুলোর কাছে 

কত অপরাধই না জমা রয়েছে স্মৃতির পাতা জুড়ে, 

অতীতে ফেরা গেলে নিশ্চয়ই জীবনটা অন্যরকম হতো

হয়তো নিজেকে শুধরে নেয়া যেত!

আজকাল বড্ড ইচ্ছে করে আয়নায় শুদ্ধ মানুষ দেখতে;


আয়নার সামনে দাঁড়ালেই একটা অবয়ব

চেনা চেনা অথচ অচেনা 

ওখানে আমার ছবি অথচ ঐ মানুষটা ঠিক আমি না

আয়নার প্রতিচ্ছবিতে শুধুই একটা চেহারা 

আয়না ভেতরটা দেখে না

অথচ ভেতরটা কিঞ্চিৎ মানুষ মানুষ আদতে মানুষ না; 

 

একবার অতীতে যেতে পারলে অমানুষের অংশটুকু মুছে দিয়ে আসতাম    

কিন্তু সময়ের ডানা নেই, 

আমার অতীতে যাওয়া হয় না

বদলানো হয় না নিজেকে,    

আমি যেতে পারি না ভবিষ্যতের কাছে  

জানি না মানুষ হতে গিয়ে কি হয়ে যাব অবশেষে;


বদলাব বললেই কি বদলে ফেলা যায়?

মানুষ বদলে বদলে তবেই না অমানুষ হয়ে যায়; 


বিবেক মাঝে মধ্যে বড্ড দংশায়। 



২৯ জানুয়ারি, ২০২০ 


#কবিতা


সময়ের ডানা 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





বন্ধুত্ব গাঁথা

কাছে দূরে তোরা তোরা বন্ধু কজন

ভার্চুয়াল কিংবা রিয়ালে আছিস সারাক্ষণ

ইচ্ছে হলেই ফোনে ফোনে যখন তখন 

মাঝে মধ্যে একটু দেখা মনের টানে মন;


কাছে দূরের বন্ধুত্ব এই বেশ ভালো

খুব বেশী কাছে আসা মাঝে মাঝে কালো

দূর থেকে চাঁদনি, মোহময়ী আলো 

বহু দূরের সূর্য আলো সহনীয়;


বন্ধুত্বে কিছুটা ফারাক সম্পর্ক ভালো

স্বার্থ না এলে তবেই সম্পর্ক আলো 

কাছে দূরের বন্ধু মাঝে মাঝে দেখা 

বন্ধুত্বে প্রেম এলেই সম্পর্ক ফাঁকা;


বন্ধুত্বে প্রেম এলেই সম্পর্ক কালো

মন পুড়লে বোধোদয় আগেই ছিল ভালো

দুপুর রোদে চাঁদ কোথায় ? শুধু সূর্যের তাপ  

বিকেলেতে মন প্রেম, রাত্রি উদাস;  


রাত্রিগুলো অসহনীয় নির্ঘুম চোখ 

প্রেমেতে মন পুড়ে বন্ধুত্বে সুখ 

যৌবনে প্রেম এলে তাও হয়তো চলে

বিয়ের পরে প্রেম হলে পরকীয়া বলে; 


মধ্যবয়সের বন্ধুত্ব যখন প্রেমেতে গড়ায় 

বেশিরভাগ প্রেম দেখি হয় পরকীয়ায় 

মনে প্রেমের হাতছানি বন্ধুত্ব নষ্ট 

পরকীয়া সম্পর্কে সকল সম্পর্ক নষ্ট; 


সম্পর্ক সুন্দর থাকে, থাকলে বন্ধু হয়ে

নির্মল আনন্দ থাকে সম্পর্ক ছেয়ে ছেয়ে 

মাঝে মধ্যে একটু দেখা মাঝে মধ্যে কথা 

সুখ দুঃখ বিনিময়ে নির্মল বন্ধুত্ব গাঁথা। 



২৮ জানুয়ারি, ২০২০ 


#কবিতা


বন্ধুত্ব গাঁথা 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ মোবাইল ক্লিক।  




চল মন কাজে

আজ সূর্য ওঠে নি তাও ঘুম ভাঙা ভোর

রাতঘুমে ছিলি তুই আর স্বপ্ন তোর 

পাখির  ডাকে স্বপ্ন  উড়ে গেছে চোখ থেকে

আকাশের ডাকে আজ উঠে নি সূর্য

আজ কুয়াশার ভোর

কাল রাতটা ছিলো তোর; 


আজ ভোর হতেই দিনের ডাক 

দিনের বেলায় স্বপ্ন থাক 

আজ সকাল হতেই কাজ

দিন ডাকছে ডাকছে কাজ

পেট ক্ষুধা হয়ে যায় রাত ফুরোলেই

স্বপ্ন কোথায় সকাল ক্ষুধায়? 

চল মন কাজে আজ 

চল মন আজ স্বপ্ন থাক।


২৩ জানুয়ারি, ২০২০ 


#কবিতা 

চল মন কাজে 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ মোবাইল ক্লিক।




স্মৃতির গল্পগুলো

প্রতিটা দিনেরই এক একটা আলাদা গল্প আছে

আলাদা আলাদা গল্প আছে প্রতিটা রাতের;


দিনের গল্পগুলো বেশিরভাগ কাজের

এগুলো অনেকটাই জীবিকা নির্ভর 

ঘাম ও শ্রমের গল্প 

কিছু গল্প ভোরের কিছু দুপুরের কিছু বিকেলের কিছু বা সন্ধ্যের

অল্প কিছু গল্প আছে ভালোবাসার

কিছু ভালোবাসা কাছে আসার  

কিছু বিকেল রোদে হেলান দেয়া মন পোড়ার

সবগুলো গল্প জমে থাকে মনে

মাঝে মাঝে স্মৃতির জানালা খুলে গল্পগুলো আমি উঁকি দিয়ে দেখি

কিছু গল্প মনে পড়লে হাসি কিছু গল্পে কাঁদি 

তারপর আবার স্মৃতির জানালায় খিল দিয়ে আকাশ দেখি চুপমনে;


রাতের গল্পগুলোতে অনেকগুলো অনুভব মিশে থাকে 

মিশে থাকে অন্ধকার  

সন্ধ্যের পর থেকেই মন খারাপে সূর্য ঘুমায়

কখনো রাতের মন ভালোতে আকাশে চাঁদের উঁকি 

কখনো মন খারাপে অমাবস্যা  

দাঁত নখ বের করে ফেলে মানুষের ভেতরের পশুগুলোও 

এখানেও কিছু জীবিকা আছে, কিছু শরীর বিক্রির কিছু নেশার 

আর ছোপ ছোপ অন্ধকার,

রাতেও কিছু গল্প থাকে ভালোবাসার 

আর কিছু অন্ধকারে ডুবে যাওয়ার, 

রাতের বিভিন্ন গল্পগুলো জমে থাকে মনে

আমি মাঝে মাঝে স্মৃতির জানালা খুলে উঁকি দিয়ে দেখি

কিছু গল্প মনে পড়লে হাসি কিছু গল্পে কাঁদি 

তারপর আবার স্মৃতির জানালায় খিল দিয়ে ঘুমিয়ে যাই চুপমনে; 


একদিন হয়তো কারো স্মৃতিতে আমার গল্পগুলোই উঁকি দেবে জানালা খুলে

কিছু দিনের গল্প কিছু রাতের গল্প 

কিছু আলোর গল্প কিছু গল্প অন্ধকারের

যেগুলো কোন একসময় হয়তো এঁকেছিলাম কারো কারো স্মৃতির ঘরে, 

জানতে কিংবা অজান্তে; 

মানুষ মরে গেলে তো স্মৃতিই হয়ে যায়, তাই না?


দূরে সরে যাওয়া আর মরে যাওয়ার মধ্যে পার্থক্য খুব কি বেশী?

কিছু উত্তর কখনোই জানা হয় না। 



১৯ জানুয়ারি, ২০২০ 


#কবিতা 

স্মৃতির গল্পগুলো 

 - যাযাবর জীবন 



ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা। 





প্রেমের প্রজন্মান্তর

প্রতিদিন নতুন করে কত কত প্রেম ওড়ে?

প্রতিদিন নতুন করে কত কত প্রেম পোড়ে?


এই যে প্রেমের হাতছানি!

চোখাচোখি হতে হতে ভালোলাগা

ভালোলাগা থেকে টান

টান থেকে ভালোবাসা

ভালোবাসা থেকে কাছে আসা

কাছে আসতে আসতে একটু ছোঁয়াছুঁয়ি

ছোঁয়াছুঁয়ি থেকে শরীরে শরীর

তারপর বিছানা,

আচ্ছা! প্রেম কি তবে কামনা? 


একটা সময় প্রেমটাই কঠিন ছিলো

তার থেকেও বেশী কঠিন ছিলো দেখা হওয়া

মনের আবেগ তখন শুধুই হলুদ খামে

তাও অনেক ভেবেচিন্তে ঠিকানা নির্ণয়,

একটা প্রেম হতে তখন সময় নিতো 

কোন কারণে পরিণয়ে গড়াতে না পারলেও

সারাজীবন মনে দাগ থেকে যেতো

একটা জীবন একটা প্রেম; ধ্যাত! বড্ড পুরনো; 

  

আজকাল প্রেম হরেদরে 

খামের যুগ শেষ হয়ে গেছে সেই কবেই! 

আজকাল ডিজিটাল মেসেজের টুংটাং

একদিনে প্রেম, দুইদিনে দেখা, তৃতীয় দিনে বিছানা

ছাড়াছাড়ি হতে সময় লাগে না 

শরীর তো ধুয়ে ফেললেই পরিষ্কার, তাই না? 

আর মনে দাগ? 

আরে কার কতগুলো প্রেম সেটাই তো এখনকার গর্ব, 

আচ্ছা! সতীত্ব বলে কি একটা কথা আছে না!

তুমি কোথাকার বোকা? 

শব্দটা ডিকশনারিতে আছে, দেখে নিও; 


ওহে! আজকাল প্রেম ওড়ে না

প্রেম পোড়েও না

মন পুড়লে তো প্রেম পুড়বে! 

আজকালকার প্রেম ভার্চুয়াল থেকে শরীরে এসে বসে

বন্ধ কামরায় কিছু সময় পার হয় 

বনে গেলে কিছুদিন রয় 

আরেকটু বনলে না হয় পরিণয়

আর তা না হলে পত্রপাঠ বিদায়, 

ঝর্ণার নীচে শুদ্ধ হয় শরীর, নতুন প্রেমের জন্য; 


পরবর্তী কোন এক প্রজন্ম হয়তো নেটে শরীর ছানতে ছানতে কৌতুক করবে

প্রাচীন কালে প্রেম বলে একটা শব্দ ছিলো 

ওটা নাকি খুব মানবিক একটা অনুভূতি 

বলেই ওরা খিলখিল হাসিতে গড়িয়ে পড়বে ভার্চুয়ালে;


সেদিন খুব দূরে কি? 



১০ জানুয়ারি, ২০২০ 


#কবিতা


প্রেমের প্রজন্মান্তর 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ মিমো সুখ। 








দাম্পত্য কথা কয়

কোথা কোথা থেকে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে

হুট করে পরিচয় কারণে আর অকারণে

পরিচয় থেকে পরস্পর বোঝার চেষ্টা তারপর প্রেম

তারপর পরিণয়, দাম্পত্য শুরু হয়; 


কিংবা সম্পূর্ণ অপরিচিত দুটি ছেলে মেয়ে

বাবা মায়ের কিংবা আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমে কথা বার্তা 

দেখাশোনা, পরিচয় হতে না হতেই পরিণয়

দাম্পত্য কথা কয়;


এই যে সম্পূর্ণ অচেনা কিংবা কিঞ্চিৎ চেনা 

অথবা বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসার সেতু পার হয়ে একটা বন্ধন

দাম্পত্য নামের একটা সম্পর্কে বাঁধা হয়ে গিয়ে হয়ে যায় আপন

খুব অদ্ভুত, তাই না? অথচ একসময় এরা কেউ কাউকে চিনতো না;


দাম্পত্যে দুজনার ভালোবাসা, বিশ্বাস আর নির্ভরতা

জীবনের শুরুতে শুধুই প্রেম আর পরস্পর বোঝার চেষ্টা

তারপর ধীরে ধীরে অধিকার বোধ, সংসার, দায়িত্বের বোঝা

খুঁটিনাটি ভুল বোঝাবুঝি, মান অভিমান, রাগ আবার মিটমাট;  


কিছু কিছু দাম্পত্যে ইগো আর স্বার্থের আঘাত 

কিছু কিছু দাম্পত্যে অর্থ আর কামের প্রভাব   

ভুল বোঝাবুঝি থেকে দূরত্ব, সম্পর্কে তৃতীয় ব্যক্তি

আর কিছু দাম্পত্যে পরকীয়া ভাইরাস, সম্পর্ক নাশ;


মধ্য বয়সটা পার হতে হতে সব দাম্পত্যই থিতু

বেশিরভাগই জোড়া লেগে থাকে নির্ভয়তা আর বিশ্বাসে

ভালোবাসা? সে তো আছেই

সুখী দাম্পত্য তো শুধুমাত্র আর ডিকশনারির শব্দ নয়! 

 

মনের মিল না হলেও কিছু দাম্পত্য জোড়া লেগে থাকে নামেমাত্র

কিছু বাধ্য হয়ে, বাকিরা অভ্যাসে

আর যাদের সুযোগ থাকে তারা আলাদা হয়ে যায়

এদের সংখ্যাটাও আজকাল নেহাত কম নয়। 


 


০৬ জানুয়ারি, ২০২০ 


#কবিতা 

দাম্পত্য কথা কয়

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





 

চুপকথা

সব সময় কি কিছু লিখতেই হবে?

আমি চুপ কলমটার দিকে তাকিয়ে আছি

তাকিয়ে আছি চুপ হাতের দিকে,

চুপ কলমটা তাকিয়ে আছে মস্তিষ্কের দিকে

মস্তিষ্ক কি আর চুপ থাকে?

ওখানে অনুভব অনুভূতির খেলা

ওখানে রক্ত সঞ্চালন,  

মস্তিষ্ক তাকিয়ে থাকে হৃদপিণ্ডের দিকে

ওটা ক্রমাগত ধুকপুক ধুকপুক করছে

ওখান থেকে মস্তিষ্কে রক্ত আসছে

মস্তিষ্ক বেঁচে আছে অনুভব আর অনুভূতিতে;


কোন একদিন হৃদপিণ্ডের ধুকপুক থেমে যাবে

রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যাবে

মস্তিষ্ক চুপ হয়ে যাবে

হাতে কোন সিগন্যাল পাঠাবে না

নিথর আঙুল কলম ধরবে না 

কলম লিখবে না অনুভবের চুপকথা;


এই যে হঠাৎ হঠাৎ হৃদপিণ্ডের ধুকপুক থেমে যাওয়া!

শুধুই কি থেমে যাওয়া? 


একবার ভাবো তো! 

মাথার ওপরে বটগাছের ছায়া

তুমি শান্তির ঘুম ঘুমচ্ছ নিশ্চিন্ত নির্ভাবনায়

ঝড় ঝঞ্ঝা সওয়ার জন্য বটগাছ তো আছেই!

হঠাৎ একদিন চোখ মেলে দেখলে মাথার ওপরের বটগাছ হাওয়া

তুমি দাঁড়িয়ে খোলা আকাশের নীচে

বড্ড অসহায় মনে হবে না?

আচ্ছা! এই যে বাবাগুলো হুট হাট কিছু না বলেই চলে যায়!

আর কিছু বোঝার আগেই মাথার ওপর থেকে ছাদটা সরে যায়! 

সন্তানদের বুঝি কষ্ট হয় না?

কেন না বলে কয়ে বাবাগুলো চলে যায়?


এই যে সারাদিন আমি বাইরে কাজের উছিলায়! 

মা বলে একজন তো আছেই, সংসারের মাথায়

সেই জন্মের পর থেকে সামলে নিচ্ছে সকল ঝুট ঝামেলা,  

মা! ওটা শুধু ডাক নয়

ওটা একটা অভ্যাস 

জীবনের পরতে পরতে 

আর নির্ভরতার চালক সংসার গাড়িতে 

আমি নিশ্চিন্ত নির্ভাবনায়;

কিন্তু একদিন হঠাৎ করেই মা ঘুমিয়ে যায়

আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই চারিদিক অন্ধকার

আর থমকে যাওয়া সংসার। 

আচ্ছা! মা কেন চলে যায়?

আমার বুঝি কষ্ট হয় না? 


একদিন বাবা চুপ হয়ে যায় 

বটগাছটা মাথার ওপর নেই হয়ে যায়  

 - আমি খোলা ছাদের নীচে অসহায়, 


একদিন মা চুপ হয়ে যায় 

সংসারটা চালক হীন থমকে যায় 

 - আমি সংসার জোয়াল কাঁধে অসহায়, 


কেন তারা চুপ হয়ে যায়?


কষ্টটা শুধুমাত্র তারাই জানে যারা বাবা মা'কে হারায়;


মনটা আজ খুব বেশী চুপ হয়ে রয়েছে

রাতের খোলা আকাশটার দিকে তাকিয়ে আছি  

ওখানে একসময় একটা বটগাছ ছিলো  

আজ শুধুই রাশি রাশি তারা,  

মন পড়ছে, মুখ জপছে  

রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা। 




 ০৫ জানুয়ারি, ২০২০


#কবিতা 


চুপকথা  

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত।