বুধবার, ৩১ মার্চ, ২০২১

সম্পর্ক জড়িয়ে ধরার

সম্পর্কগুলো আলাদা আলাদা, প্রতিটা সম্পর্কই অন্যরকম

বিশেষ করে একটা ছেলে আর একটা মেয়েতে, 

এক একটা সম্পর্কের সাথে কথা বলতে হয় এক একরকম করে

এক একটা সম্পর্কের সাথে সম্পর্ক রাখতে হয় এক এক দূরত্বে;


শারীরিক স্পর্শ আমার কাছে খুব অস্বস্তিকর, শরীরে যৌবন আসার পর থেকে  

বিশেষ করে ছেলে আর মেয়েতে, শারীরিক ছোঁয়াছুঁয়িতে 

সে সম্পর্কগুলো যেমনই হোক না কেন! 

আমার কোথায় যেন একটা অন্যরকম অস্বস্তি কাজ করে; 

 

মা ও ছেলের সম্পর্ক যতই আপন হোক না কেন!

মা'কেও সেই ছেলে বেলার মত জড়িয়ে ধরতে পারি না, বয়ঃসন্ধির পর থেকে 

মনের মাঝে কোথায় যেন একটা অস্বস্তি কাজ করে বোধ্য বা অবোধ্য এক কারণে 

আমি বোধহয় তোমাদের মত প্রগতিশীল হতে পারি নি আজকের যুগে;


মেয়ে যখন ছোট ছিলো সারাটাক্ষণ ছিলো আমার কোলে কাঁধে

তারপর একটা সময়ে এসে মেয়ে'কেও সেই আগের মত জড়িয়ে ধরতে পারি না

মেয়ে বড় হয়ে যাওয়ার পরে, মনের মাঝে কোথায় যেন একটা অস্বস্তি কাজ করে

আমি বোধহয় তোমাদের মত প্রগতিশীল হতে পারি নি আজকের যুগে;


ভাই ও বোনের সম্পর্ক যতই কাছের হোক না কেন!

তবুও আমি নির্দিষ্ট একটা দূরত্ব বজায় রাখি, জড়াজড়ি থেকে, 

এক একটা সম্পর্কের দূরত্ব এক এক রকম এক এক বয়সে

এক একজনার সাথে এক এক রকম ছোঁয়াছুঁয়ি এক এক বয়সে

আমার কোথাও একটা অন্যরকম অস্বস্তি থেকেই যায় জড়িয়ে ধরার ক্ষেত্রে,

কি জানি! আমিই বোধহয় খুব প্রগতিশীল হতে পারি নি এখনো, আজকের যুগে;


আমার কাছে পৃথিবীতে একটাই মাত্র সম্পর্ক নিশ্চিন্তে, নির্ভাবনায় জড়িয়ে ধরার

দ্বিধাহীন, অস্বস্তি-হীন দুজন দুজনার  

সেটা হলো স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক 

যে কোন সময় যে কোন পরিস্থিতিতে;


তবে এটা তখনই সম্ভব যদি প্রেম থাকে দুজনে 

যদি মিল থাকে দুটি মনে

তা না হলে স্বামী স্ত্রী আর পরপুরুষ, পরনারীর মাঝে পার্থক্য কোথায়?

ছোঁয়াছুঁয়ি তো অনেক দূরে। 


৩১ মার্চ, ২০২১


#কবিতা 


সম্পর্ক জড়িয়ে ধরার

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




৮৫'র ঘুড়ি

আমি সারাদিন ৮৫'তে ঘুরি

ঘুরি মানে ঐ আর কি! ঘুরাফিরা করি; 


কেউ কেউ দেখি ঘুড়ি উড়ায়, 

৮৫'তেই 

৮৫ মানে শুধু ক্লাব না কিন্তু!


ক্লাব থেকে লাটাই ধরে, ৮৫র সকল গ্রুপের ছাদে ঘুড়ি ওড়ে 

ঘুড়িও কিন্তু ঘুরে, উড়ে উড়ে ঘুরে 

মাথার ওপর ৮৫'র আকাশ, তার উপর ঘুড়ি   

সব ৮৫তেই ঘুড়িটা ঘুরে   

লাটাইটা হেলান ক্লাবের ওয়ালে, এককোণে ঐ দূরে। 


ঘুড়ি তুমি কার? - ৮৫'র 

লাটাই তুমি কার? - ক্লাবের 

আমি কার? যে ডাকে তার,  

কি মজা! কি মজা! আকাশে আকাশে ঘুড়ির বাহার;


শুধু আমার ঘুড়িটাই লটকে আছে ক্লাবের ছাদে

লাটাই? ক্লাবের লাটাই আর কোথায় যাবে?  


৩১ মার্চ, ২০২১


#কবিতা 


৮৫'র ঘুড়ি 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



মঙ্গলবার, ৩০ মার্চ, ২০২১

স্বপ্নে স্বপ্নে প্রেম কাহিনী

এখন গভীর রাত 

তুই নিশ্চয়ই ঘুমে 

হয়তো স্বপ্ন দেখছিস 

আমি চুপিচুপি তোর জানালায়  

দ্বিধা দ্বন্দ্ব নিয়েই উঁকি 

তোর চোখ বন্ধ, ঠোঁটে হাসি; স্বপ্ন দেখছিস কি? 

আমি অপলক চেয়ে থাকি 

অপলক তোকে দেখি

একমনে চুপিচুপি; 


জানালার এপাশ থেকে হাত রাখি তোর কপালে, মনে মনে 

দূর থেকে আদর দেই কপাল চুমে 

ওপাশে যেতে বড্ড ভয় 

যদি সামলাতে না পারি! 

যদি কাছে টেনে নেই!

যদি ভালোবাসা হয়ে যায়! 


জানালার ঐ ওপাশে ঘুমিয়ে আছে একটা পরী

এপাশে একটা মানুষ, মানুষটা আমি

পরীর সাথে মানুষের কি আর ভালোবাসা হয়? 

তবুও যখনই সময় পাই! যখনই সুযোগ হয় 

আমি স্বপ্নে স্বপ্নে পরীর জানালায় 

পরী স্বপ্ন দেখে হাসে, স্বপ্ন দেখে ঘুমায় 

আমি কখনোই তার খুব কাছে যাই না

নিজেকে বড্ড ভয়, যদি সামলাতে না পারি!

যদি ভালোবাসা হয়ে যায়!

ধ্যাত! তাই কি হয়! 

মানুষ আর পরী! তাই তো ভয়;   


আমি খুব মাঝে মাঝে স্বপ্ন দেখি

ঐ তো জানালার ওপাশে ঘুমিয়ে আছে একটা পরী

জানালার এপাশে আমি  

আর বাকিটা পরী আর আমার স্বপ্ন কাহিনী,  

স্বপ্নে স্বপ্নে আমাদের হতে হতেও না হওয়া একটি প্রেম কাহিনী।


২৯ মার্চ, ২০২১


#কবিতা 


স্বপ্নে স্বপ্নে প্রেম কাহিনী

 - যাযাবর জীবন 



ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




একটা একটা

বহু বহুদিন আগে

একটা ছেলে ছিলো

একটা মেয়ে ছিলো

একদিন দুজনার দেখা হলো

একদিন প্রেম হলো

একদিন হাতে হাত রাখল

একদিন তারা এক হলো

কেউ মেনে নেয় নি, তারা ঘরছাড়া হলো

তারপর থেকে দুজন এক হয়ে একাকী হলো;


তাদের বিয়ে হলো, হলো সংসার

সেদিন থেকে আধপেটা কিংবা অভুক্ত পেট দুজনার

দুটো পেট একটা ক্ষুধা

একটা পুরি কিংবা একটা সিঙ্গারা

আধাআধি সবসময় দুজনা 

একটি পেয়ারা কিংবা একটি আপেল

এক কামড় এক কামড় করে দুজনা  

দুটি কেনার সামর্থ্য ছিলো না; 

 

একটা ঘর হলো একটা মাদুর  

একটা কাঁথা একটা চাদর 

একটামাত্র বালিশ আরেকজনের মাথা বুকে  

বালিশে কমতি ছিল, ছিল না কমতি সুখে 

একটা থালায় দুজনার আধাআধি ভাগ   

দুজনার পিপাসা মেটায় একটা গ্লাস    

একটা কাপে দুজনার চুমুক চায়ে    

একটা সোফায় দুজন ডানে আর বাঁয়ে 

একটা টেবিল এলো সাথে একটা চেয়ার

অনেকদিন পরে একটা খাট, বন্ধুদের উপহার   

ঘরে একটি করে আসবাব আর দুজনার সংসার 

সামর্থ্য ছিল না দুটির, ভালোবাসা ছিলো দূর্বার;


একটা একটা করে তিলে তিলে গড়া

আধা পেট খাওয়া আধা পানি ভরা 

একটা একটা দিন একটা একটা বছর 

একজন চাকরি বিহীন একজনার টিউশনি ঘর ঘর 

অনুযোগ ছিলো না কারো দুজনার সংসার 

সারাদিন কাজে কাজে রাত্রিটা দুজনার 

একজন একজন করে পড়ালেখা শেষ করে

একজন পরীক্ষা দেয় অন্যজন সংসারের হাল ধরে 

একজন একজন করে দুজনার চাকরি 

দুজন এগিয়ে নেয় সংসার চাকতি  

একটু একটু করে তিল তিল সঞ্চয়

একটু একটু করে কেটে যাচ্ছিলো ভয় 

একটি একটি করে পরিবারে নতুন মুখ 

দুজনার ভালোবাসায় বাবা মা হওয়ার সুখ

একটু একটু করে জীবন আগায় 

দুজনার সংসার পূর্ণ ছিলো ভালোবাসায়; 


একটু একটু করে ছেলেমেয়ে বড় হয়

বাবা মা দুজনার ব্যস্ততা বেড়ে রয় 

সারাদিন অফিস শেষে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরা 

ছেলে মেয়ে সবাই মিলে সংসার আছে ভরা

ছেলে মেয়ের আবদার মেটাতে নাভিশ্বাস 

বাবার ওভারটাইম মায়ের ঘরের কাজ   

সারাদিন ক্লান্তিতে রাতে বিছানা ডাকে 

তখনো একটাই বালিশ অন্যজন শোয় বুকে;  


একটি একটি করে ছেলেমেয়ের বিয়ে 

তারা ব্যস্ত এখন যার যার সংসার নিয়ে 

কেউ তারা চাকরিতে কেউ ব্যবসায়

মেয়েগুলো যার যার সংসার সামলায়

বুড়োবুড়ি একা একা সারাদিন বাড়িতে

অবসর জীবনটায় দুজন দুজনাতে 

মাঝে মধ্যে আসে ওরা বাসাটা ভরে ওঠে

বুড়োবুড়ি দুজনা খুশিতে মেতে থাকে 

নাতি নাতনির হৈ চৈ ছুটির দিনগুলোতে 

বুড়োবুড়ি ব্যস্ত ওদের সাথে খেলাতে 

সারাদিন হৈ চৈ ক্লান্তিতে রাতে বিছানা ডাকে 

এখনো একটাই বালিশ অন্যজন ঘুমায় বুকে। 


 

২৭ মার্চ, ২০২১


#কবিতা


একটা একটা 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




ভালোবাসার কোলাহল

আমি অভিমান ম্যানেজ করতে পারি না 

রাগ তো একদমই না

বিশেষ করে ওরা যদি রাগ করে

যদি করে অভিমান

হ্যাঁ! ওরা বলতে ওরাই

আরে! বোঝো নি? ওরা মানে নারী 

প্রেমে আমি বড্ড আনাড়ি; 


একদিন আমার সে 

কথা বলছে না অভিমানে,

আমার মন খারাপ

বসে আছি চুপচাপ;


বন্ধুকে ফোন

ঘটনা বলে জিজ্ঞাসা করলাম, কি করি?


বন্ধু বললো, 

 - একটা ফোন কর

   প্রেমে গদগদ গলা 

   দুটো ভালো ভালো কথা 

   বরফ গলছে কি?

   গলছে না? 

   তাহলে শক্ত বরফে কিছু চোখের জল ফেল,  


আরে! লবণে বরফ তো আরও জমাট বেঁধে যাবে! 


বন্ধু বললো, 

 - জমতে দে

  এবার কিছু উল্টো রাগের আগুন ঢাল 

  দেখবি, ওদিকে ঠিক চোখের জল, বরফে ফাটল

  এবার তুই পেঁজা তুলা

  দেখিস! পেঁজা বরফে পা পিছলাস না; 


আরে! আমি তো পিছলে পড়েছি সেই কবেই!

চারচোখ ভালোবাসায়, সেই প্রথম দেখায় 

তারপর পিছলে পড়ছি তো পড়ছিই 

ভালোবাসায় কুয়োয়

আর ডুবছি ভালোবাসায়;


বন্ধু বললো,  

 - একটু সবুর কর

   এতটা ডুবিস না যাতে উঠতে পারবি না

   

আমি বললাম,

এখন তো আর উঠতেই পারি না

সেই যে প্রথম চোখে ডুবেছি

তারপর চোখ থেকে ঠোঁটে 

ঠোঁট থেকে নদী বেয়ে নেমে গিয়েছি সাগরে

তারপর ডুব সাঁতার

জানিস! আর ভাসতেই পারলাম না!


বন্ধু বললো,

 - ওরে বোকা! 

   ভালোবাসায় ডুবে গেলে কে ভেসেছে কবে?

   আর রাগ অভিমান? 

   সে প্রতিটা প্রেমিক প্রেমিকার সম্পর্কেই রবে;


একটু গরম

একটু নরম

একটু বরফ

একটু জল 

এগুলো মিলেই ভালোবাসার কোলাহল। 



২৭ মার্চ, ২০২১


#কবিতা 


ভালোবাসার কোলাহল

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




 


এই নাও বাংলাদেশ

একদিন আমাদের বাংলা ভাষায় কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিলো

একদিন আমাদের মুখ থেকে ওরা বাংলা ভাষা কেড়ে নিতে চাচ্ছিলো

একদিন কিছু টগবগে যুবক প্রতিবাদে সোচ্চার 

একদিন বাংলায় প্রতিবাদের গগন বিদারী চিৎকার

দিনে দিনে জান্তাদের ক্রমাগত অত্যাচার

আর বাংলা মায়ের দামাল ছেলেদের প্রতিবাদ

একদিন রাস্তায় নেমেছিল সালাম বরকত রফিক শফিউর জব্বার

একদিন রাজপথে হায়েনাদের রক্তের হোলি খেলা চারিধার 

একদিন সোনার ছেলেগুলো অকাতরে প্রাণ দিলো

বিনিময়ে আমাদের মুখে বাংলা ভাষা দিয়ে গেলো;  


একদিন জান্তার দল দেশটাকে কেড়ে নিতে চাইলো

একদিন হায়েনার দল মানচিত্রে আঘাত হানলো 

ঘরে ঘরে দামাল ছেলের দল ফুঁসে উঠেছিলো প্রতিবাদে

রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলো তারা সার বেঁধে 

একদিন সারা দেশ মেতে উঠেছিলো প্রতিরোধে 

একদিন দল বেঁধে ঘর থেকে বের হয়ে এসেছিলো প্রতিকারে 

একদিন কৃষকের হাতে গর্জে উঠেছিলো রাইফেল

একদিন ছাত্রের দল বুকে বেঁধে নিয়েছিলো গ্রেনেড

সেদিন বুক ফুলিয়ে যুদ্ধ করেছিলো বাংলার আবাল বৃদ্ধ বনিতা  

সেদিন যোদ্ধাদের কাতারে ছিলো দলে দলে বীরাঙ্গনা 

কাতারে কাতারে শহীদের চোখে ছিলো একটাই স্বপ্ন 

বাংলাদেশের বুকে স্বাধীন পতাকা, ওরা বাংলার রত্ন;     


নয় মাসের যুদ্ধ শেষে একদিন বাংলার সব দামাল ছেলে 

ধানের মাঠ থেকে সূর্যের কুসুমটাকে টেনে এনেছিল তুলে 

বলেছিল

এই নাও বাংলাদেশ;  


তিরিশ লক্ষ প্রাণ সবুজ মাঠে রক্ত ছড়িয়ে 

একটি স্বাধীন পতাকা বাংলার বুকে পতপত উড়িয়ে  

চিৎকার করে আনন্দে কেঁদে বলেছিল

এই নাও বাংলাদেশ।  




২৬ মার্চ, ২০২১


#কবিতা 


এই নাও বাংলাদেশ

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



কোয়ারেন্টাইনের দিনগুলো

করোনা হয়েছে তোমার? 

আমি জানি, কি ভয়াবহ এক অসহায় একাকীত্বে সময় কাটাচ্ছ, 

আমারও হয়েছিলো; 

 

চৌদ্দ বা একুশ দিন একঘরে বন্দী জীবন

ওরা বলে কোয়ারেন্টাইন 

আর যদি কপাল আরও খারাপ হয় তবে সাত বা দশদিন হসপিটাল

সেটা তো আরও ভয়াবহ

বাসায় না হয় একঘরে, তবুও কেও তো আছে দরজার ওপারে!

হাসপাতালে? ওখানে কেও নেই

ওয়ার্ডে জায়গা পেলে তো তোমার মতই আরও দু চার জন

আর কেবিন নিয়েছ তো মরেছ

ওখানে কিছু তেলাপোকা কিছু মশা আর নয়তো এরোসলের গন্ধ

আর বাকি সময়টা একা

সকাল দুপুর রাত্রি, প্রহর প্রহরের প্রত্যেকটা সময় বড্ড একা

আর মনের পুরোটা জুড়ে বড্ড ফাঁকা আর ফাঁকা; 

উঁহু! একদম একা বোধহয় বলাটা ঠিক হবে না, 

নার্স আসছে সকাল দুপুর রাতে

ডাক্তার দিনে এক বেলা 

টাকা আছে তো সাথে রাখো সার্বক্ষণিক ওয়ার্ড বয় 

আর নয়তো চব্বিশ ঘণ্টার নিস্তব্ধতা বৈ তো নয়;


সারাদিন পথ চেয়ে চোখ মোবাইল স্ক্রিনে

কেউ কি ফোন করলো একটা?

রিং হতে যা দেরি, একাকীত্বকে কিছুক্ষণ মারি!

ওহে! কয়জন ফোন করেছে একাকীত্বের এই একুশ দিনে?

একুশ জন গুনতে পারবে?

অথচ তোমার রক্ত সম্পর্ক তো অনেক

আত্মীয়-স্বজন? গুনে শেষ করা যাবে না

বন্ধু-বান্ধব? 

আরে ফেসবুকে হাজার পাঁচেক! 

স্কুলে, কলেজে, ইউনিভার্সিটিতে, অফিস কলিগ? তাও হবে হাজার খানেক

অথচ একুশ দিনে মাত্র একুশটি কল

তাও পাও নি?

তোমার থেকে অভাগা আর কে আছে? 


শোনো! 

তোমার যদি কখনো করোনা হয়

যখন একাকীত্ব তোমাকে ছেয়ে রয় 

আমাকে জানিও কিন্তু একবার, 

আমি জানি, একাকীত্বের কষ্ট   

আমি জানি, একটা ফোনের মূল্য 

ঐ ওরা বুঝবে না

ওরা তো কোয়ারেন্টাইনে ছিলো না। 



২৫ মার্চ, ২০২১


#কবিতা 


কোয়ারেন্টাইনের দিনগুলো 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 






বন্ধুত্বের বন্ধন

তুই আর আমি দুজন দু প্রান্তে

সামাজিক অবস্থানে 

বন্ধুত্বের বন্ধনে কাছে এসেছিলাম 

কিছু কাছাকাছি মনের টানে,

আমাদের অবস্থান আসলে দূরে; 


দূরত্ব ভৌগলিক দূরত্ব সামাজিক

অনেক দূরত্ব দুজনার মানসিক

আমি আকাশ দেখলে তোর চোখে সাগর  

আমি সবুজ দেখলে তুই তাকাস নীল বরাবর,

দূরত্ব আমাদের চিন্তা চেতনায়;    


আমার গায়ে যখন দখিনা বাতাস 

উত্তুরে হাওয়া তোর শরীর জুড়ে 

দম হাঁসফাঁস যখন আমার ঘাম শরীরে 

তুই আপাদমস্তক শীতের কাপড়ে, 

আমাদের বাস দুই ভুবনে;


আমি নীল দেখি আকাশটাকে   

তুই সেই আকাশই দেখিস কালো 

আমি যেখানটাতে খারাপ দেখি 

তোর চোখে সেটাই বড্ড ভালো,  

দুজনার ভাবনায় ফারাক দিবারাত্রির; 


মিল আর অমিলের বিস্তর ফারাক

ফারাক আমাদের চিন্তা চেতনায় 

আমার আর তোর চাহিদা আলাদা 

সবাই কি জীবনে আর সব পায়? 

আমরা দুজন ভিন্ন মানুষ;


পদে পদে মিল আর অমিল 

পদে পদে আমাদের দ্বন্দ্ব   

অনেকবার হয়েছে মনোমালিন্য 

অনেকবার কথা বন্ধ,

বন্ধুত্বের সুতো ছেঁড়ে নি; 


বন্ধনহীন দুটি ভিন্ন মানুষ

তবুও কোথায় যেন একটা বন্ধন

একজনের গায়ে আঘাত পেলে 

চুপেচুপে আরেকজনের ক্রন্দন,

এটাই বন্ধুত্বের বন্ধন।


২৫ মার্চ, ২০২১ 


#কবিতা 


বন্ধুত্বের বন্ধন

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 


 


যে কোন সময়

আজ রাতটা কি অদ্ভুত! তাই না?

আজ দশমী পূর্ণিমা; 

এই তো, আর মাত্র তিনটা দিন! তারপর চাঁদ তার পূর্ণ যৌবনে

আমি যৌবন পার করে এসেছি অনেক আগেই

ঘুমের কোটাও শেষ করে ফেলেছি সেই প্রৌঢ়ত্বের ঊষালগ্নে  

আজকাল নির্ঘুম চোখে রাত দেখি

অমাবস্যা আর পূর্ণিমা, প্রতিটি রাতের আকাশের দিকে চেয়ে থাকি;


আজকাল মৃত্যু খুব ভাবায়!

ঐ ওপরের আকাশটা থাকবে!

দিনের আকাশে সূর্য থাকবে, মেঘ থাকবে, নীল থাকবে 

রাতের আকাশে চাঁদ থাকবে, জ্যোৎস্না হবে, অমাবস্যা হবে

অমাবস্যায় আকাশে লক্ষ লক্ষ তারা জ্বলবে 

মাটিতে, ঘাসে, গাছে হাজার হাজার জোনাক নাচবে

কোন দিনে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকবে, কোন দিন গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি 

কোন রাতে কুয়াশা হবে, কোন কোন রাতে ঝুম বৃষ্টি 

কোন কোন দিনে মেঘের সাথে সূর্যের টুকি 

কোন কোন রাতে মেঘের সাথে চাঁদের লুকোচুরি

আহ! আকাশের এক একটা কি অপরূপ সব রূপ!

আকাশ আকাশের জায়গায় থাকবে

শুধু কোন একদিন আমার চোখ বন্ধ হয়ে যাবে

আমি আকাশের রঙ রূপ আলো অন্ধকার কিছুই দেখব না

তোমরা আমাকে শব বলে চাদরে ঢেকে দেবে; 


এই যে আকাশ আর নীলাকাশে হাজারো পাখির মেলা 

এই যে ঘাসের বন, সারি সারি গাছ আর বন জুড়ে শত প্রজাতির পশু পাখি  

এই যে সার দেয়া পাহাড় আর টিলার সারি, আর তার মাঝে মেঘের ভেলা 

এই যে পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণা, আর ঝর্ণা থেকে বয়ে চলা নদী

এই যে নীল সমুদ্র আর ধু ধু বালিয়াড়ি!

এই যে মানুষের ঢল আর পরস্পর হাত ধরে কিংবা ছেড়ে চলাচল

এই যে মানুষগুলো! 

বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, পর আর আপনজন 

এরা সবাই থাকবে, 

শুধু আমিই থাকব না

একটা মাত্র দমের হেরফের, মাত্র একটা

তারপর ধুকপুক থেমে যাবে

তোমরা বুকে কান পাতবে, হাত টিপে নাড়ি দেখবে 

তারপর চাদরে ঢেকে দেবে শব; 


আপনজনরা খুব কাঁদবে 

প্রিয়জনরা মন খারাপ করে থাকবে

তারপর মাটিতে শুইয়ে রেখে আসবে,

পৃথিবী চলবে তার মত, থমকে থাকবে না কোথাও কিছু

শুধু আজকের আমি কাল হয়ে যাব গত 

আর স্ত্রী সন্তানদের মাঝে রেখে যাব অল্প কিছু ক্ষত;

একটা সময় সবাই সব ভুলে যাবে

সময় সব ভুলিয়েই দেয় 

শুধু স্ত্রী সন্তানদের মনের দেয়ালে টানানো থাকবে কিছু স্মৃতি 

তারপর একসময় তাও ফিকে হয়ে আসবে, এটাই মানুষের রীতি; 


জন্ম মৃত্যুর এই শাশ্বত খেলাটার কথা আমি জানি

তবুও মৃত্যু আজকাল খুব ভাবায়, কেন জানি;

আজকাল ঘড়ির টিকটিকে মাথার ভেতর জানান দেয়

সমাপ্তিটা একদম সামনে, যে কোন সময়।    


 


২৪ মার্চ, ২০২১


#কবিতা 


যে কোন সময়

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



ছিদ্রের অন্বেষণ

ঐ যে চোখদুটি!

হ্যাঁ, আমারই চোখ,

ক্রমাগত ছিদ্রের অন্বেষণে;


চোখের অনেক কাজ

অনেক কাজ আমারও 

তবুও সব কাজ ছাপিয়ে সময়ে অসময়ে, 

সুযোগে মত সুযোগ করে এর ওর তার  ছিদ্রান্বেষণ,

সাবধানে থেকো তুমি, আমার সামনে এলে;


তুমি এটা কর নাই, তুমি ওটা কর নাই

তুমি এটা কেন করেছ? তুমি ওটা কেন করেছ? 

তোমার চলন বাঁকা, কথা ফাঁকা

তুমি চিকন, তুমি মোটা

তোমার টাকা নেই, তোমার কেন এত টাকা?

তোমার চুলে পাক, তোমার টাক মাথা

তোমার ছোট চাকরি, তোমার মন্দা ব্যবসা 

আজ বড্ড শীত, না আজ গরম আজ চারিদিক ভ্যাপসা  

তোমার জ্বর আসুক আর নাই আসুক 

আমার মাথা ব্যথা  

চুলকানি তোমার, চুলকায় আমার 

আমার চোখ খুঁজে কত ছিদ্র তোমার;


আচ্ছা! এই যে ক্রমাগত এর, ওর, তার, তাদের ও ওদের ছিদ্র খুঁজে যাচ্ছি!

আয়নায় কখনো নিজেকে দেখেছি?



২২ মার্চ, ২০২১


#কবিতা


ছিদ্রের অন্বেষণ

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



দুর্ঘটনার রেশ

সেদিন তাদের বিবাহ বার্ষিকী ছিলো 

জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী এই দিনগুলো একটু অন্যরকম হয়েই থাকে

এই দিনগুলোকে ঘিরে অনেকগুলো অনুভূতি থাকে 

একটু বাইরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া, বাইরে কোথাও ডিনার করা

যার যার অবস্থান থেকে, যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী;


সেদিন স্বামী স্ত্রী তাদের ছোট বাচ্চাটাকে নিয়ে কোন এক রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলো

হাসি ছিলো, আনন্দ ছিলো, গল্প ছিলো, আবেগ ছিলো 

ওদের মাঝে কত রকম অনুভূতিই না খেলা করছিলো!  

ডিনার শেষে তারা বাড়ি ফিরছিলো

রিক্সায় টুকটাক গল্প কথায় কিছু খুনসুটি ছিলো 

ছিলো আবেগ ঘন সুন্দর একটি রাতের পরিকল্পনা 

দুজনার চোখে স্বপ্ন ছিলো, চোখে ছিলো কিছু ভাবাবেগের খেলা,  

স্বামী স্ত্রী রিক্সায়, ছোট বাচ্চাটি মায়ের কোলে 

স্বামী পেছন থেকে স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলো 

আকাশে চাঁদ ছিলো, ফুরফুরে বাতাস ছিলো 

ফুরফুরে মন ছিলো 

তারা গল্পে গল্পে বাড়ি ফিরছিলো; 


একটি গাড়ি, কিছু যুবক

কিঞ্চিৎ নেশা, রঙিন দুনিয়া

বেপরোয়া চালনা

ধারাম!! 

রিক্সায় ধাক্কা;


স্বামী স্ত্রী ছিটকে রাস্তায়

ওলটপালট গড়াতে গড়াতে স্ত্রী রাস্তায়, বাচ্চাটি তখনো বুকে চেপে ধরা  

স্বামী উড়ে গিয়ে আইল্যান্ডের ওপর, মাথা আইল্যান্ডের রডে 

রক্তাক্ত রাস্তা

কয়েকবার ঝাঁকি খেয়ে স্থির হয়ে গেলো শরীর, 

গাড়িটা মুহূর্তের জন্য থামলো কি?

চালকের একবার ভ্রুকুটি, তারপর পলায়ন;


একটি এক্সিডেন্ট 

একটি মৃত্যু 

মৃত্যু একটি স্বামীর 

ওলোটপালট একটি পরিবার,   

হরেদরে হচ্ছে, প্রতিদিন হচ্ছে

কয়টি খবর কাগজে আসে?

এক্সিডেন্টের কিংবা মৃত্যুর 

কয়টি গল্প জানি আমরা ধ্বংস হয়ে যাওয়া পরিবারের?


ঐ যে বাপের টাকায় নেশা করে গাড়ি ড্রাইভিং সিটে বসা উচ্ছন্নে যাওয়া যুবকটি! 

কখনো জানবেই না ছোট্ট একটি ছেলের পুরো জীবনটাকেই ধ্বংস করে দিয়েছে;


একটি দুর্ঘটনা - শুধুমাত্র একটি মৃত্যু নয়

একটি পরিবারের ধ্বংস     

একটি পরিবারের মৃত্যু।   



২১ মার্চ, ২০২১


#কবিতা 


দুর্ঘটনার রেশ 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 






  




অনুভূতিহীন আঁচড়

মাঝে মাঝে রাতগুলোতে বড্ড রাত হই

মাঝে মধ্যে অন্ধকার

লোকে বলে দুঃখের রঙ নাকি কালো

অনেকক্ষণ রাতের দিকে তাকিয়ে থাকলে কেমন যেন ঝাপসা দেখি

চোখের ডাক্তার দেখাতে হবে খুব তাড়াতাড়ি;


মাঝে মাঝে মানুষের আনন্দ দেখি 

সূর্যের নানা রঙের আলোকচ্ছটায় আলোকিত দিনগুলো 

কারো মুখে হাসি দেখলেই কেন জানি আয়না হাসে 

অথচ অনুভূতি নামক ঐ সব মানবীয় আবেগ খুঁজে পাই না কোথাও 

রোবট হয়ে গেলাম নাকি? 


বৃষ্টি হলে প্রায়শই আকাশটা বড্ড কাঁদে  

মাঝে মাঝে বৃষ্টি ছাড়াও বাতাসে নোনা ভাব

মাঝে মাঝে চোখের কোনে লবণ 

অথচ আমার বড্ড অনুভূতি শূন্য এক জীবন

কান্নার শব্দ শোনা যায় কি? 


আমি মানুষের হাসি দেখি, আনন্দ আঁকি

দুঃখ দেখি, কান্না লিখি 

মাঝে মাঝে কলমটার দিকে অপলক চেয়ে থাকি, মাঝে মাঝে খাতার দিকে

আচ্ছা! মানুষের এত এত অনুভূতিগুলো আসে কোথা থেকে?

আবেগহীন কলম অনুভূতিহীন খাতায় আঁচড় কাটে, অনুভবশূন্য হাতে। 



২১ মার্চ, ২০২১

#কবিতা 


অনুভূতিহীন আঁচড়

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা। 

   




কবিতায় সন্ন্যাস

অন্ধকারের পরতে পরতে কালো, রাতের ঘনত্বে রাত 

রাত ঘন হতেই উরুর ফাঁকে ঘন কাম, ঘন আগুন নিঃশ্বাস        

রিপুর আঁচড় নিউরন কোষে, বিবেকের জানালা কালো অন্ধকার 

ইতিউতি খোঁজ শকুন চোখ, লালসার লালা নেকড়ের জিহ্ব  

মাংসের খোঁজে মাংস, শরীরের খোঁজে শরীর

শরীরের ঘনত্বে ঘন নিঃশ্বাস, কামের বিস্ফোরণে ঘাম 

ছিন্নভিন্ন তাল তাল দলা মাংস, ছিন্নভিন্ন কালো বিবেক 

রাত খুঁড়ছে অন্ধকার, রাতের পরতে রাত; 


কাম মিটে গেলে কলমের আঁচড়, কাগজে কবিতার আঁক

কলমের আঁকে বিবেকের সাদা রঙ, কবিতায় সন্ন্যাস;


কাল রাতে আবার কাম জেগে উঠলে কলম রেখে মাংসের খোঁজ, 

কবিতায় কি হিপোক্রেসি আঁকা যায়? 


২০ মার্চ, ২০২১


#কবিতা 


কবিতায় সন্ন্যাস

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





স্মৃতির অনুভূতি

আচ্ছা! তুই কি এখনো তাকিয়ে থাকিস পথের দিকে!

কি দেখিস?

আমি তো কবেই চলে এসেছি ও পথ হেঁটে;

ওখানে কিছু পাবি না আমার

সব গিয়েছে ধুলোয় মিশে?

ছায়াটা?

সেটাও সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি সূর্য ডুবিয়ে দিয়ে,

এখন ওটা শুধুই একটা রাস্তা

পিচ ঢালা অনুভূতিহীন;


একদিন ঠিক ওখানেই দেখা হয়েছিলো তোর সাথে প্রথমবার 

আমি অলস দাঁড়িয়ে ছিলাম ল্যাম্পপোস্টে হেলান দিয়ে 

তুই কোথা থেকে জানি বাড়ি ফিরছিলি হেঁটে 

চোখে চোখ পড়তেই আমার মুচকি হাসি 

হাসিতেই তুইও উত্তর দিয়েছিলি  

তারপর থেকে প্রায়ই; 


রাস্তা হাঁটতে হাঁটতেই কিছু অনুভূতি

প্রেম বলে কি?

কি জানি! 

তবে খুব দেখতে ইচ্ছে করতো তোকে

তোরও নিশ্চয়ই ইচ্ছে করতো আমায় দেখতে!

নতুবা কেন পথ হেঁটে আসতাম দুজনে পথের দুদিক থেকে?  

প্রতিদিন ঘড়ির কাঁটায় সময় ধরে

সে দিনগুলোর কথা, আজো কি তোর মনে পরে? 


ঐ দিনগুলোতে পথটাকে বড্ড সহজ মনে হতো  

হয়তো সোজা পথটুকু দেখে!

কিংবা দুজন দুজনার দিকে চেয়ে থেকে থেকে 

আমাদের চোখই যায় নি পথের গর্তগুলোর দিকে

কিংবা দেখা হয় নি বাঁকের ওপাশে পথের বিভক্তিটা ভালো করে,

ঠিক বাঁকের ওপারেই ছিলো পথটার বিভাজন

কখনো দেখিস নি তুই  

খেয়াল করি নি আমিও

তাই হঠাৎই খুব হোঁচট খেয়েছিলাম পথের বিভক্তিতে   

আর আমাদের বিচ্ছেদে; 


পথটা কিন্তু এখনো আছে সেই আগের জায়গায় 

অথচ অনেকগুলো সময় গড়িয়ে গেছে জীবন থেকে

সেদিনের পূবের সূর্য হেলে পড়েছে পশ্চিম দিকে,  

খুব মন খারাপ হলে আমি মাঝে মাঝে পথটায় এসে দাঁড়াই

পেছন ফিরে তাকাই

হেলান সূর্যে পেছন পথে লম্বা একটা ছায়া পড়ে, আমারই 

অনুভূতিহীন রাস্তায় 

আর স্মৃতির হাহাকার;


স্মৃতিগুলো অনুভূতিহীন হলে বড্ড ভালো হতো। 


১৬ মার্চ, ২০২১


#কবিতা 


স্মৃতির অনুভূতি

 - যাযাবর জীবন 



ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



সম্পর্কের খোসার গন্ধ

সম্পর্কগুলো বড় অদ্ভুত

নানা রকম সম্পর্ক হঠাৎ হঠাৎই তৈরি হয়

নানা রকম সুবাস ছড়ায় 

নানা রকম বন্ধনে জড়ায়

আবার খুঁটিনাটি ছোটখাটো কারণে খুব হুট করে ভেঙে যায়

কিছু দুর্গন্ধ রেখে যায়;


কিছু কিছু সম্পর্কের তৈরি হতে হয় না

ওগুলোকে আমরা রেডিমেড সম্পর্ক বলতে পারি

যেমন রক্তের সম্পর্কগুলো 

লোকে বলে রক্ত সম্পর্ক তো রক্তের 

ওটায় মায়া সবচেয়ে বেশি, টান সবচেয়ে বেশী 

হয়তো লোকে কোন একটা সময়ের কথা বলে

তবে আজকাল এ সম্পর্কগুলোতে স্বার্থের টান আমি খুব বেশী দেখি,

কারণ কি অনেক ভেবেছি

সম্পত্তির দামের সাথে সাথে সম্পর্কের দাম আনুপাতিক হারে বাড়ে নি হয়তো!


বন্ধুত্বের সম্পর্কগুলো তৈরি হতে হয়

কিছু বন্ধুত্ব সেই বাল্যকাল থেকে 

আটপৌরের মত মনে লেপ্টে থাকে 

আর কিছু তৈরি হয় সময়ের সাথে

এগুলোতেও স্বার্থ কিন্তু কম নয়! 

কিছু অর্থের, কিছু প্রয়োজনের 

কিছু সময় কাটানোর তাগিদের, কিছু মন খুলে কথা বলার

আজকাল কার সাথে আর মন খুলে কথা বলা যায়! 

সবাই তো আছে যার যার ধান্ধায়, জীবন চলার পথে; 


স্বামী স্ত্রী সম্পর্ক একটা আছে

এটা সম্পূর্ণ অন্যরকম একটা সম্পর্ক 

আগেকার দিনে দু প্রান্ত থেকে দুজনকে এনে জুড়ে দিতো

চলতো মৃত্যু পর্যন্ত 

কখনো ভালোবাসায় কখনো বা বাধ্য হয়ে,  

আজকাল এ সম্পর্কটা অনেকক্ষেত্রেই বন্ধুত্ব থেকেই তৈরি

কখনো কখনো বোঝাপড়া থেকে

এখন আর আগের দিনের মত টেনে নিয়ে যায় না মৃত্যু পর্যন্ত 

ভালোবাসার বন্ধনে চললো তো চললোই

আর নয়তো বোঝাপড়ায় পথ ভিন্ন; 


সব সম্পর্কেই কিছু না কিছু স্বার্থ থাকে 

কিছু কিছু সম্পর্ক স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে টিকে থাকে 

কিছু কিছু সম্পর্ক ভেঙে যায় স্বার্থের আঘাতে 

সম্পর্কগুলো মরে যায়, পচে গলে পড়ে থাকে সম্পর্ক নামের খোসাটি;


আমি কিন্তু একটা খোসাও ফেলি নি 

জীবনের সমস্ত গন্ধওয়ালা খোসাগুলো'কে মনের ভেতর জমিয়ে রেখেছি 

মাঝে মাঝে পচা গলা সম্পর্কের খোসাগুলো দেখি, 

এক একটি থেকে এক একরকম গন্ধ বের হয়

সবগুলো খোসাতেই স্বার্থের বোটকা গন্ধ 

কোন কোনটি'তে লোভের বমি মিশে আছে

কোন কোনটি'তে টাকার ঋতুস্রাব

কোন কোনটি'তে পচা গলা সম্পত্তির মৃতদেহের পুঁতি দুর্গন্ধময় গন্ধ;


আজকাল আমাকে আর নতুন পুরনো কোন সম্পর্কই টানে না 

আমি ভাবলেশ চেয়ে থাকি পুরনো সম্পর্কের খোসাগুলোর দিকে 

তারপর আবার চোখ বন্ধ

মন বন্ধ। 


১৫ মার্চ, ২০২১


#কবিতা 


সম্পর্কের খোসার গন্ধ 

 - যাযাবর জীবন  


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





রবিবার, ১৪ মার্চ, ২০২১

আলোর ঠিক ওপারেই

পথটা কিছু অন্ধকার কিছু আলোকিত

কিছু কুয়াশাচ্ছন্ন কিছু অস্পষ্ট 

জীবনটাও কিন্তু ঠিক এমনিই,


আমরা আলোর দিকে যেতে চাই

অথচ ঠিক তার নীচেই কালো

কে দেখেছে কাল?  


রাত পোহালে তো ভোর হবেই, সেটা প্রকৃতিতে

অথবা অন্ধকার হয়েই থাকবে কারো চোখ

অথচ সেখানে অনেক স্বপ্ন ছিলো কাল দেখবার;


আলো আর কালোর অবস্থান একদম পাশাপাশি 

একটা মাত্র দমের ফারাক, 

কেউ বোঝে কেউ পরিকল্পনা করে ভবিষ্যতের 

কারো পরিকল্পনা এ পৃথিবীর কারো ও পৃথিবীর 

যার যার বুদ্ধি অনুযায়ী, 


কেউ জিতে কেউ ঠকেও জিতে

কেউ এখানে হারে কেউ ওখানে 

অন্ধকারটা আলোর ঠিক ওপারেই।


১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ 


#কবিতা 


আলোর ঠিক ওপারেই

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ মোবাইল ক্লিক।






অন্য সকাল

আজ সকালটা অন্যরকম,  কুয়াশা কুয়াশা ধোঁয়াশা 

 - কি করছিস?  


– অপেক্ষা করছি কুয়াশা কাটার, অপেক্ষা সূর্যের

    হয়তো অপেক্ষা তোর


 তুই কি করছিস? 

-  আমিও আরেকটু আলোকিত হওয়ার অপেক্ষায় আছি, 

    যদিও অনেকক্ষণ হয়েছে ভোর; 


আমার অপেক্ষায় নেই? 

- না রে, আজকাল আর মানুষের অপেক্ষায় থাকি না 

  অথচ একসময় তুই ছিলি মন চোর 


কেন রে? বড্ড পুরনো হয়ে গিয়েছি? 

 - না রে, পেট আজকাল বড্ড টানে 

   ক্ষুধা ভুলিয়ে দেয় সব 


আমি যে এখনো তোকে ভাবি! 

 - একবার আমার হৃদয়ে ঢুকেই দেখ না! 

   ডুবে যাবি ভালোবাসায় তুইময় হয়ে; 


আমি মুচকি হেসে বলি 

- ঐ দেখ সূর্য উঠেছে? 

  দূর থেকে সূর্যটা একটা বিন্দুমাত্র,  অথচ পুরো পৃথিবীটাকে বৃত্ত করে আলোকিত করে

  তোর দৃষ্টি কেন্দ্রে, আমি ছড়িয়ে গিয়েছি পরিধি জুড়ে 

  তুই চাঁদনি উপভোগ করিস, আমি শুধুই চাঁদ দেখি 

  তুই ভালোবাসা ধরে রেখেছিস অনুভবে, আমার অনুভবে শুধুই ক্ষুধা

  আরে বোকা, ভরপেটেই ভালোবাসা মধুর লাগে

  কিছুদিন উপবাস দিয়ে দেখ! ইচ্ছে উপবাস না কিন্তু!  

  আমি অস্তিত্ব নাড়া দেয়া ক্ষুধার কথা বলছি

  তারপর না হয় একদিন ভালোবাসার অনুভূতি বুঝিয়ে যাস আমায়; 


কাজ ডাকছে, আজ যাই রে। 


১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ 




#কবিতা 


অন্য সকাল 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ মোবাইল ক্লিক।





রাস্তার রাজা

রাস্তার রাজা নাকি ট্রাক, 

কেউ বলে বাস; 


আমার অনেক দিনের শখ একদিন একটা ট্রাক চালাবো

একদিন বসবো বাসের ড্রাইভিং সিটে

তারপর ইচ্ছেমত এক্সেলেটর চেপে ধরব ব্রেকহীন কোন পিচ ঢালা রাস্তায়, 

কি হবে? 

কিছু রিক্সা পিষে দেব কিংবা কিছু গাড়ি 

হয়তো একটি দুটি মাইক্রোবাস কিংবা কোটি টাকার জীপ 

আর নয়তো খুব কম দামী দু চাকার একটি সাইকেল পিষে দিয়ে আমি হব সম্রাট 

আচ্ছা! ওগুলোর ভেতরে কি মানুষ থাকবে?

ধ্যাৎ!  কি এসে যায়! 

আজকাল মানুষের দাম আর কোথায়?


আমি রাস্তার রাজা

আমি ট্রাকের ড্রাইভার

আমাকে কিছু বলতে আসলে সারাদেশে বন্ধ হবে ট্রাকের চাকা

আমরা ট্রাক চালাই, তোমাদের খাদ্যের যোগানদার; 

কিংবা আমি বাস চালাই, আমি সম্রাট 

আমার মালিকের শত শত বাসের কারবার,

আমাকে ধরবে? 

এ সাধ্য কার?


রাস্তাটা আমাদের 

আমরা ড্রাইভার।


১৯ ফেব্রুয়ারি,  ২০২১


#কবিতা


রাস্তার রাজা 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ মোবাইল ক্লিক।





রাত দেখা

আমি প্রতি রাতেই রাতটাকে দেখি

রাত দেখার মধ্যে অন্যরকম একটা অনুভূতি আছে

একদম অন্যরকম, 

কালোর কতরকম প্রকারভেদ যে হতে পারে! 

তা রাতগুলো না দেখলে ঠিক বুঝবে না,

আমি কালোর তারতম্যের মাঝে পেছনের অপরাধগুলোর তারতম্য দেখি

কালোর পার্থক্যের মাঝে বিগত দিনগুলোতে করে আসা সব অপরাধের পার্থক্য খুঁজি; 

অপরাধ! 

হ্যাঁ, অনেকই তো করেছি

ইচ্ছেতেই হোক কিংবা অনিচ্ছাতেই 

লজ্জিত বিবেক মুখ লুকায় রাতের কালোয়, 

আমি রাতভর জীবনটাকে পেছন ফিরে দেখি;


সব রাত কি আর কালো থাকে রে! 

কিছু কিছু রাতে জ্যোৎস্না হয় 

আলোরও দেখা মেলে আমাদের জীবনের কিছু কিছু সময় 

আমি রাতের জ্যোৎস্নায় তাকিয়ে থাকি  

ওখানে জীবনের টুকটাক কিছু ভালো কাজের স্মৃতি, 

আমি রাতভর জীবনটাকে পেছন ফিরে দেখি;


রাতগুলো দেখতে হয়, পেছন ফিরতে হয় মাঝে মাঝে 

তাতে বিবেক জাগে

ভুলগুলো চোখে পড়লে হয়তো শোধরানোর একটা সুযোগ পাওয়া যায়!

পেছন যদি নাই ফিরি তাহলে ভুল দেখব কোথায়? 

ক্রমাগত টিক টিক টিক টিক ঘড়ির কাঁটা 

পেছন ফিরতে না দেরি হয়ে যায়!  



১৫ মার্চ, ২০২১


#কবিতা 


রাত দেখা 

 - যাযাবর জীবন 



      

নতুন দিন

কাক ভোরে শুধু কি আর কাক উড়ে? 

আমারও ঘুম ভেঙেছে কাক ভোরে; 


ঘুম ভাঙিয়ে দিলো ভেজা মন 

মনের ভেতর কোথায় জানি কি ভাঙছে 

আলো ভাঙছে প্রকৃতিতে

রাত ভাঙছে ভোরের আলোতে, 

আমি আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসি

জানালার পর্দা সরিয়ে দিতেই ঝুল বারান্দায় বাড়ি খায় একরাশ কুয়াশা 

আমি আকাশের নীচে এসে দাঁড়াই

আকাশের দিকে তাকাই, চারিদিকে এক অপার্থিব দৃশ্য!

ওপরে তাকালেই নিজেকে বড্ড তুচ্ছ লাগে

বিশাল আকাশ তলে কি ছোট্ট একটা প্রাণী!  

আমি নিজেকে সবসময় প্রাণীই ভাবি

বুকের ভেতর প্রাণের একটা অনুভব জাগে যে! 


আচ্ছা! এখন প্রকৃতিতে কতজন ঘুমুচ্ছে? 

কতজনই বা আমার মত করে ভোর দেখছে? 

সকাল নাড়া দেয় কজন'কে? 

সূর্যোদয়, পাখির কিচিরমিচির? 

কুয়াশা তো সকাল ভেজায়! মন ভেজায় কারো? 

চোখ তো শুধু দেখে, অনুভব করে কজন? 

আরে! অনুভব তো মন, 

বোঝে ক'জন? 


আমি সূর্যের অপেক্ষায় 

একটা সূর্য, নতুন একটা দিন। 


০৬ মার্চ, ২০২১


#কবিতা 


নতুন দিন 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ মোবাইল ক্লিক।





প্রথম বৃষ্টি

বছরের প্রথম বৃষ্টিটা অন্য রকম 
অনেকটা প্রথম ভালোলাগার অনুভব 
আমি হাত বাড়িয়ে একটু বৃষ্টি ছুঁই 
একটু অন্যরকম যেন সেই প্রথম ভালোবাসার ছোঁয়া,
গাড়ির কাচ এবার পুরোপুরি নামিয়ে দেই
মুশলধারায় বৃষ্টি, আমি ভিজছি
প্রথম বৃষ্টিতে একটু ভিজতে হয়
মনের কালিমাগুলো ধুয়ে নিতে..........


১৪ মার্চ, ২০২১

#কবিতা 

প্রথম বৃষ্টি
 - যাযাবর জীবন 

ছবিঃ মোবাইল ক্লিক। 



নিখাদ আনন্দ

কদিন ধরে আনন্দ কেনার খুব চেষ্টায় আছি, নিখাদ আনন্দ; 

এ বাজার ও বাজার ঘুরছি 

বিভিন্ন রকম আনন্দ দেখছি 

অথচ নিখাদ আনন্দ কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না; 


ঐ যে তোমরা আকাশ'কে নীল বলো! 

আসলে কি নীল? 

ওখানে নীলের মাঝেও কত রঙ এর পার্থক্য, তাই না?

সকালে গাঢ় নীল তো দুপুরে কেমন জানি সাদাটে রঙ মিশে আসমানি 

আর মেঘের সাথে আকাশ মিশলে তো কথাই নেই 

বৃষ্টির সাথে যখন মেঘ মিশে! তখন নীল খুঁজে পাও

অথচ নীল তো সেই আকাশেরই গায়,  

বিকেল বেলায় আকাশটা বিবর্ণ হতে হতে কেমন যেন মন খারাপের রঙ  

রাতে অন্ধকারের রঙে মিশে কালো

ঝকঝকে নীল কি আর সব সময় পাওয়া যায়? 


আনন্দের বাজারে ঘুরতে ঘুরতে কিছু দুঃখ দেখি কিছু কষ্ট

কিছু হাহাকার কিছু কান্না 

সবগুলোই মিলেমিশে আছে আনন্দের বিভিন্ন পসরার সাথে

আমি দোকানদারদের নিখাদ আনন্দের কথা জিজ্ঞেস করতেই ওরা হাসে

বলে বাবু! লবণ ছাড়া তোমার বাসায় তরকারি হয়?

আমি উত্তর দেই, সেটা আবার হয় নাকি? 

দোকানদার বলে, এই যে স্বর্ণ কেন? খাদ থাকে না?

আমি বলি, খাদ বিহীন কি আর স্বর্ণ হয়? 

দোকানদার বলে, আকাশটা কি সব সময় নীল হয়?

আমি উত্তর দেই, ওটা তো এক এক বেলায় এক এক রঙ ধারণ করে;

দোকানদার বলে, আচ্ছা বাবা! ঐ আয়নার সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে একটানা হাসতে থাকো তো!

আমি বললাম, যাহ! সারাক্ষণ একটানা কি আর হাসা যায়?


এবার দোকানদার বলে, তাহলে বাবু নিখাদ আনন্দ খুঁজছ কেন?

এই নাও এক কেজি আনন্দ, এক ছটাক দুঃখ 

একমুঠ ভালোবাসা, এক বুক কষ্ট

একমুখ হাসি আর এক চোখ কান্না,  

এবার সবগুলো মিলিয়ে বুকের ভেতর নাড়া দাও

তারপর পরিবারের সাথে পুরোটা ভাগ করে নাও 

ওটাই আনন্দ বাবু, ওটাই সুখ

নিখাদ আনন্দ খুঁজে আর সময় নষ্ট করো না;


আমি দোকানদারের কথায় চমকে উঠি

বিভিন্ন মিশ্রণে সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না, আনন্দ, ভালোবাসা কিনে

বাসায় ফিরে আসি 

বাসা মানেই তো পরিবার

আর পরিবার মানেই আনন্দ, 

তারপর সবগুলো অনুভূতি মিলিয়ে পরিবারের সাথে ভাগাভাগি করি 

ওদের খুশিতে হাসি, দুঃখে কাঁদি আর সুখ দুঃখ হাসি কান্নাগুলোতে একসাথে মাতি; 


এখন আমি আর নিখাদ আনন্দ খুঁজি না

খুঁজি না নিখাদ দুঃখ।


১১ মার্চ, ২০২১ 


#কবিতা 


নিখাদ আনন্দ 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



অন্ধকার সমাপ্তি

ঐ তো আর অল্প একটু দূরে

সমাপ্তিটা দেখতে পাচ্ছি, মানতে কষ্ট হচ্ছে;


শেষটা সবাই দেখতে পায় না, কেউ কেউ পায় 

কেউ অনুভব করে, সবাই জানে

বেশীরভাগ চোখ ফিরিয়ে রাখে, মন ফিরিয়ে রাখে

আমি পথের শেষ দেখছি অপলক চেয়ে; 


টিক টিক একটা বালু-ঘড়ি চোখের আড়ালে

সময় গড়িয়ে পড়ছে আলো থেকে আঁধারে 

ঘড়ির কাঁটা থামবেই আগে আর পরে

আমি সময় দেখছি প্রায় শেষের ঘরে;


শেষটা সবাই দেখতে পায় না

শেষটা সবাই দেখতে চায় না 

শেষটা অনেকেই জানতে চায় না 

শেষটা বেশীরভাগ মানতে চায় না 

কে আরা তাকাতে চায় অন্ধকারে!  

আলোতে বাস করে আলোর ভেতরে;


কেউ কেউ সময় ঘড়ির দিকে চেয়ে থাকে থামার অপেক্ষায়  

কেউ কেউ অবাক হয় যখন ঘড়ি কাঁটা হুট করে থেমে যায়   

আমি দাঁড়িয়ে আছি আলোতে, দেখছি অন্ধকার 

আজ কাল বা পরশু, ওখানে যেতেই হয় সবার;

প্রস্তুতি আছে কি আমার? 


টিক টিক টিক টিক কাটা দুলছে

বিন্দু বিন্দু বিন্দু বিন্দু সময় ঝরছে

এখন তখন কিংবা একটু পর

শেষটায় নিকষ কালো অন্ধকার;  

প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পাব কি?  


    

০৯ মার্চ, ২০২১


#কবিতা 


অন্ধকার সমাপ্তি 

 - যাযাবর জীবন 





কখনো ভেবেছিস?

এই যে পথচলা মেয়ে দেখলেই হা করে বুকের দিকে চেয়ে থাকিস! 

কি দেখিস?

কিংবা পেছন থেকে হেঁটে যাওয়া কোন মেয়ের কোমরের দুলুনিতে মন দোলা! 

খুব ভালো লাগে?


মনে কর কোন একদিন দূর থেকে কারো বুকের দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে

চেহারার দিকে তাকানোই কথা মনেই হলো না 

খুব কাছে চলে এলে হঠাৎ কি মনে হতে চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখলি 

ওটা তোরই মেয়ে,

কেমন লাগবে?

কখনো ভেবেছিস?


কিংবা কোমরের দুলুনিতে মন দুলতে দুলতে তুইও হেলে দুলে চলতে লাগলি

চেহারা দেখবি বলে 

পাশে গিয়ে চমকে উঠলি বোনকে দেখে, 

কেমন লাগবে?

কখনো ভেবেছিস?


পথচলা নারীর বুকে কিংবা কোমরে তাকানোতে বাহাদুরি নেই 

আছে লজ্জা, 

কবে বুঝবি, কামুক পুরুষ?


একটি দুটি কামুকের জন্য লজ্জিত হয় পুরুষ জাতি, 

চিন্তায় আসে কি?



২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১



#কবিতা 


কখনো ভেবেছিস?

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত।



জীবনের ফ্ল্যাশব্যাক

সামনে একটা গর্ত, অন্ধকার কালো 

আমি দাড়িয়ে, একদম মুখে 

যে কোন সময় পরে যেতে পারি হুট করে 

মূহুর্তের ফারাকে, ওটা কবর;


পেছনের দিকে তাকাই 

বিশাল লম্বা একটা রাস্তা পার হয়ে এসেছি,

ওখানে কিছু অংশ আলোকিত, অনেকটা অংশ ছায়া ছায়া কালো  

আর বেশ কিছু জায়গায় নানা রঙের আলো;


রঙিন আলোগুলোতে জীবনের সকল আনন্দগুলো  

আলোকিত অংশে বেশ কিছু ভালো কাজগুলো দেখতে পাচ্ছি

বেশ অনেকটা অংশ জুড়ে হালকা অন্ধকার 

আর কিছু অংশ গভীর কালো;  


হালকা অন্ধকার অংশে ছোটখাটো সব অন্যায়গুলো 

ভালো খারাপের মাপকাঠিতে যেগুলো একটু খারাপের পাল্লায় ঝুঁকে আছে 

তারপর গাঢ় অন্ধকার, আমি অন্ধকার অংশের দিকে তাকিয়ে আছি

গাঢ় কালোতে খুব ভালো করে উঁকি, ঝাঁকি খেয়ে চমকে উঠি;


ওকি! ওখানে যে গিজগিজ করছে পাপ

রিপুর থাবার বিষে নীল হয়ে হয়ে কালোর ছোপ 

ওখানে দেখা যাচ্ছে দাঁত নখ বের করা আমারই লোভগুলোকে  

ওরা যেন ভেংচি কাটছে ওখান থেকে, আমাকেই;


ওখানে পাপ হয়ে চিৎকার করছে আমারই অনিয়ন্ত্রিত সব কামগুলো

অসীম সব লোভগুলো 

আর জীবনের বিভিন্ন সময়ে করে ফেলা সব বড় বড় অন্যায়গুলো,

জীবন আর মৃত্যুর সীমারেখায় দাঁড়িয়ে আজ ওগুলোকে বড্ড ভয়াবহ মনে হচ্ছে

অথচ কি নির্দ্বিধায়ই না পাপগুলো করে ফেলেছিলাম জীবনের বিভিন্ন সময়ে 

কারণে আর অকারণে;


আমি পেছনের কালো দেখে ভয়ে সামনে তাকাই

ও কি! ওখানেও যে বিশাল এক আয়না পাই!

ওতে তো আরও ভালো করে দেখা যাচ্ছে পেছনটা! 

আলোছায়ার খেলায় আরও বেশি করে ফুটে উঠছে পেছনের কালো দগদগে ঘা; 

 

একবার পেছনে তাকাই

আবার সামনে, 

আরে! এটা আয়না না 

পেছনে ওটাও পথ না 

ওগুলো বিবেক, মনের দর্পণ 

জীবন পথের শেষে জীবনের ফ্ল্যাশব্যাক; 


ঐ যে সামনের অন্ধকার গর্তটা! 

পেছনটা দেখার পরে ওখানে যেতে বড্ড ভয় করছে; 


আচ্ছা! তোমরাও কি কখনো পেছন ফিরেছ? 

কেউ দেখেছ জীবনের ফ্ল্যাশব্যাক?  


আহা! 

সময় থাকতে দেখতে পেলে শুধরে নেয়া যেত জীবনের ভুলগুলো।


২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ 


#কবিতা 


জীবনের ফ্ল্যাশব্যাক

 - যাযাবর জীবন  


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



পেট সর্বস্ব জীবন

ক্ষুধা লাগে সবারই 

ওটা বেঁচে থাকার প্রয়োজন;


মনে কর একটা মৃতের বাড়ি,

কিছুক্ষণ আগে বাড়ির কর্তা মারা গেছেন 

বাড়ি জুড়ে কান্নার রোল, 

পাড়া পড়শিরা সব চলে এসেছে

আলোচনা সভা বসেছে

গোসল দেবে কে? কাফনের কাপড়ের ব্যবস্থা হয়েছে কি না?

জানাজা কখন দিলে ভালো হয়? কোন মসজিদে জানাজা হবে? 

মাইকিং করা হবে কি হবে না? আত্মীয় স্বজন সবাইকে খবর দেয়া হয়েছে কি না? 

এর মধ্যেই চায়ের আয়োজন

একটু চা না হলে কি আর আলোচনা চলে? সাথে বিস্কুটের প্যাকেট 

ঐ তো পাশেই চাদরে ঢাকা শবটা পড়ে আছে ঘরের কোনে 

একজন দুইজন আসছে, কেউ একজন চাদর সরিয়ে মুখটা দেখাচ্ছে

একটা দীর্ঘশ্বাস কিংবা ক্ষণিকের মাতম 

তারপর আবার ফিরে আসছে আলোচনায় চা বিস্কুট হাতে

আহারে জীবন! 


গোসল শেষে কাফন

জানাজার আয়োজন

আবার কান্নার রোল 

জানাজার পর দাফন, 

বাসায় ফিরে ঘরের মানুষ সাথে কিছু আত্মীয় স্বজন

সকাল কিংবা দুপুর থেকে খুব ধকল গিয়েছে

এর মাঝে কয়েক দফা শুধু চা বিস্কিট

এবার সবারই পেটে টান

পাশের বাসা থেকে চলে এসেছে ভাতের গামলা, তরকারির হাড়ি

প্লেট টেনে নেয় সবাই,

অনেক হয়েছে শোক এবার খাবার আয়োজন;


জন্ম মৃত্যু জরা, ক্ষুধা মানে না কোনকিছুই 

হয়তো অল্প কিছু সময়ের জন্য অন্যদিকে মন

হয়তো কিছু সময় দুঃখ কিছু সময় কান্না আর স্মৃতির কথন 

এ বাড়ি ও বাড়ি থেকে দিন কয়েক বেলা বেলা খাবার বাটি      

সকাল দুপুর রাতের খাবার টেবিল, আর ক্ষুধা নিবারণ

জীবনটা এমনই, আমাদের পেট সর্বস্ব জীবন। 


 

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১


#কবিতা 


পেট সর্বস্ব জীবন

 - যাযাবর জীবন 


 

ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





গাত্রবর্ণ

এই যে আমার গাত্রবর্ণটা দেখছ!

বাদামী বাদামী, 

এটা পুড়লে কালো হবে? 

ঘষতে থাকলে নিশ্চয়ই সাদা হবে না, 

তবে কাটলে ঠিক লাল বের হবে;


আচ্ছা! ঐ যে তোমাদের সাদা গাত্রবর্ণ! 

যেটা নিয়ে অনেক অহংকার কর 

কেটে গেলে কি নীল রক্ত বের হয়?


কিংবা ঐ যে কালো রঙের লোকগুলো!

যাদের খুব অবহেলা কর, কর অবজ্ঞা  

কাটলে ওদের শরীরে কি কালো রক্ত পাওয়া যায়?


আমরা চামড়ার রঙ নিয়ে খুব চিন্তিত, 

রক্তের রঙ এর কথা বলি না কেন?

রক্তে কোথায় লিখা আছে আভিজাত্য?

 

সাদা চামড়ায় কি শস্য ফলে?

ফুল ফোটে?

ফল ধরে?

আচ্ছা! ওখানে কি আগুন ধরে? 

আমার না একদিন খুব ইচ্ছে করে 

 - চুলোর ভেতর একজোড়া সাদা পা ঢুকিয়ে ঐ আগুনে রান্না করে খেতে,

ধ্যাত! আমার যে কি সব এলোমেলো ইচ্ছে হয় না!  

 - আরে! আভিজাত্য পুড়ে গেলে গায়ের রঙ কালো হয়ে যাবে না?


আচ্ছা! ঐ যে সাদা রঙ এর মানুষগুলো! 

ওরা কি চামড়া পুড়িয়ে আমার মত বাদামী হতে পারবে? 

কিংবা তাদের মত কালো? 

নাহলে ওরা সারা গায়ে কি সব মেখে দিনভর কেন অর্ধ উলঙ্গ রোদে পুড়ে?

 - চামড়া বাদামী করতে? 

তবে কি ওদের থেকে আমার আভিজাত্য অনেক বেশী? 


এই যে সাদা কালো আর বাদামী রঙের মানুষগুলো!

এদের ভেতরের অনুভব আর অনুভূতিগুলো কিন্তু একই, 

এরা খুশিতে হাসে, দুঃখে কাঁদে, ভালোবাসায় ভাসে 

এদের সবার জীবনেই দিন আসে রাত আসে

জরা আসে ব্যাধি আসে 

এদের ক্ষুধা লাগে, শীত লাগে, গরম লাগে

লজ্জা ঢাকার কাপড় লাগে, মাথা গোঁজার ঠাঁই লাগে

এই যে সবার সকল অনুভূতিগুলো! এগুলোতে কি রঙ আছে?

রঙের তারতম্য নাই রক্তের মাঝে,

তবে গায়ের চামড়ায় তোমরা মানুষ আলাদা কর কিভাবে? 


এই যে চামড়ার রঙে মানুষে মানুষে পার্থক্য! 

ঠিক হচ্ছে কি? একবার ভেবে দেখ তো! 


১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১


#কবিতা 


গাত্রবর্ণ 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



নিজকীয়া

এই! কি করছিস তোরা?

 - খেলছি,

এটা কি খেলা? 

 - শরীর খেলাখেলি; 


ওরে অসভ্য পুরুষ! ঘরে বৌ নেই? 

 - আছে! 


এই বোকা রমণী! স্বামী মরে গেছে?

 - নাহ! মরে নি তো!


তাহলে পরস্পর শরীর ছানছিস কেন?

 - আমরা পরকীয়া খেলছি, 


কেন? নিজকীয়ায় অরুচি ধরেছে? 

 - আরে নাহ! নতুন শরীর খুঁজছি, 


আরে এটা শরীর! ওটাও তো শরীরই

এখানেও দলা দলা মাংস, মাংসের দলা ওখানেও

দুটোই নরমাংস 

তবে মাংসে মাংসে কামড়াকামড়ি কেন? 


ধ্যাত! তুমি বোঝই নি, 

ওখানে মাংসের ভেতর মন আছে, মনে ভালোবাসা; 


কেন রে? এখানে কি মাংসের ভেতর পোকা? 

ওখানকার ভালোবাসা তোকে খাওয়াবে? পড়াবে? 

ওরে! ও শুধুই আনন্দ করবে, ক্ষণিকের আনন্দ

তারপর আবার সেই তো আবার নিজ ঘরে ফেরা

নিজকীয়া, তাই না?


আচ্ছা! একটু ভেবে দেখ তো একবার!

একদিন শরীরে শরীরে পরকীয়ায় মত্ত তোরা

হুট করে দমকা বাতাসে খুলে গেলো জানালা

তোর সোমত্ত ছেলেটা দাঁড়িয়ে ঠিক জানালার ওপাশে 

কিংবা সদ্য বিবাহিত মেয়েটা, জামাই নিয়ে সাথে 

তারপর? মুখ দেখাতে পারবি আর কখনো সন্তান'কে?


কিংবা মনে কর একদিন খোলা জানালার ওপাশে তোর স্বামী কিংবা ওর স্ত্রী

পরকীয়া আর রবে? 

নিজকীয়া তো নিশ্চিত হারাবে, তাই না? 


ওরে! ওখানে ভালোবাসা নেই, আছে মোহ

ওখানে শরীর নেই, আছে কাম 

ওখানে গড়ার কিছু নেই, আছে ধ্বংস

ওখানে আলো নেই, পুরোটাই ছোপ ছোপ কালো,

  

শোন! এখানেই অনেক বেশী তৃপ্তি, অনেক সন্তুষ্টি

এখানে পুরোটাই নিজের, আর নিজের যেটুকু আছে সেটুকুই ভালো।  


 

১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১


#কবিতা 


নিজকীয়া 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





যৌথ পরিবার

সম্পর্কে কিছু স্বার্থ থাকতেই পারে! 

সে যে কোন সম্পর্কেই থাকে,

ওটা আজকাল খুব স্বাভাবিক হয়ে গেছে;


রক্ত সম্পর্কগুলোতে যখন টাকা আসে তখন শুধু টাকাই থাকে

কখনো থাকে রক্তারক্তি 

ওখানে সম্পর্ক আর খুঁজে পাওয়া যায় না;


আমি একদম রক্ত সম্পর্কগুলোর কথা  বলছি, 

এই ধরো যেমন বাবা-মা সন্তান

এ সম্পর্কটা না! খুব বেশী আবেগপ্রবণ 

আজকালকার যুগে হয়তো সবচেয়ে বেশী চর্চিত 

এই যেমন ধরো বৃদ্ধাশ্রম চলে আসার পরেই, ঘরে ঘরে আলোচিত; 

আজকাল ভার্চুয়ালে সন্তানদের ধুয়ে মুছে করে ফেলে তুলোধুনো

করবে নাই বা কেন? 

আরে! ছোটবেলা থেকে তোদের বুকে পিঠে করে মানুষ করেছে

বৃদ্ধাশ্রমে থাকার জন্য? 

ইদানীং আমিও খুব ভয়ে থাকি, জানো! 

আমার জন্য না, আমার বোকাসোকা ঐ বুড়িটার জন্য 

হুট করে একদিন আমি মরে গেলে বৃদ্ধাশ্রমটা ও ঠিক বুঝবে?

উঁহু! চারিদিকে পাগলের মত ইতিউতি আমায় খুঁজবে;


আচ্ছা! বাবা-মাও যে স্বার্থের জন্য সন্তানদের ঘরছাড়া করে - কখনো দেখেছ?

যাহ! ওটা হয় নাকি কখনো? 

তুমি না মাঝে মাঝে বড্ড অদ্ভুত কথা বলো!

হা হা হা হা! 

হাসলে কেন? 

আরে, ওটা ভার্চুয়ালে আসে না! তাই তোমরা জানো না 

সন্তানদের জন্য ওটা বড্ড লজ্জা, কোন সন্তানই আওয়াজ তোলে না

বরং চুপ করে সরে যায় দূরে, বহুদূরে 

বসত গাড়ে পরিচিত লোকচক্ষুর আড়ালে, লোকলজ্জার ভয়ে,  

ছিঃ! লোকে জানলে বাবা-মায়ের বদনাম হবে না! 


ভাই বোনের সম্পর্কগুলো একদমই আপন

যতদিন পরিবার বাবা-মায়ের, একসাথে যৌথ পরিবারে যখন,  

তারপর সন্তানদের আয় রোজগার, তাঁদেরও সংসার

টাকার ক্ষীণ ঘষঘষে শব্দে স্বার্থের হুঙ্কার 

যৌথ পরিবার! ও ছারখার;  

আরে! এখনো যৌথ পরিবার আছে 

যৌথ পরিবারে বাবা-মা, ভাই-বোন আছে

সবাই মিলে এক ছাদের তলায়, একসাথে

বাইরে থেকে বড্ড চমৎকার, চকচকে সম্পর্ক ঝকঝকে পরিবার

অথচ ভেতরের দেয়ালগুলো রক্তাক্ত, প্রতিদিন ঝগড়া, মুখ দেখাদেখি বন্ধ

আর চার দেয়ালের ভেতর বাবা-মা, ভাই-বোনদের গর্জন, হুঙ্কার;

আরে ধ্যুর! ও কিছু না, ঘরের ভেতর এমন একটু হয়েই থাকে, তাই না? 


আর যদি বাবার কিছু সম্পত্তি থাকে! 

তবে তো কুরুক্ষেত্র দিন আর রাতে,  

মাংস ভাগা দেয়ার নাম শুনেছ? যৌথ পরিবারে ঢুকে দেখ

ওখানে স্বার্থের ভাগা দেয়া হচ্ছে সংসার ভাগাড়ে,

সম্পত্তি ভাগাভাগির পালা শেষে এবার আসে বাবা কার ভাগে? 

কার ভাগে মা? 

বৃদ্ধাশ্রম খুব সহজ ঠিকানা, তাই না? 


টাকা পয়সা, সহায় সম্পত্তি, অর্থ আর স্বার্থ  

যৌথ পরিবার, রক্ত সম্পর্ক 

বড্ড গোলমেলে, একটু উনিশ বিশে পুরোটাই অনর্থ; 


যৌথ পরিবার বলতে চাচা ফুপু আর চাচাতো ফুপাতো ভাই বোনের কথা বলছি না কিন্তু!

আমি শুধুমাত্র বাবা-মা আর আপন ভাই বোনের কথাই বলছি; 

আজকাল কোথাও একসাথে আছে নাকি? 




১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ 


#কবিতা 


যৌথ পরিবার 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 

 

  


   

সময়ের অনুভব

আজকাল সময়গুলো যেন উড়ে যাচ্ছে আলোর বেগে

পূবে সূর্য উঠতে না উঠতেই দুপুর

বিকেল না হতেই সূর্যের গড়ানো পশ্চিমে

সন্ধ্যা হতে না হতেই রাত নামে চোখে 

চোখ বন্ধ না করতেই আবার সকাল

অথচ ঘড়ি কিন্তু ঠিক গুনে গুনে চব্বিশ ঘণ্টাই বুঝে নেয় একটা দিনে;


আমি ঠিক বুঝতে পারছি না শুধু কি আমার ক্ষত্রেই সময় দৌড়চ্ছে? 

ঘড়ির কাঁটায় ঘণ্টা তো হয় ঠিকই ষাট মিনিটে

অথচ আমার ক্ষেত্রে যেন চোখের পলকে

আমি মাঝে মাঝে আজকাল ধমকেও থামাতে পারি না সময়'কে

এক একসময় মনে হয় এই যে আলোর বেগে সময়ের দৌড়!

এভাবে দৌড়লে তো আমিই ফুঁড়িয়ে যাব সময়ের আগে

নাকি সময় ডাকছে যেতে অন্ধকার ঘরে?


আচ্ছা! একটু পেছন ফিরে তাকাই তো!

একটা সময় ছিলো যখন সময় কাটতেই চাইতো না 

সেই ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠে দৌড়ে খেলার মাঠে

তারপর মাঠ থেকে ফিরে গোসল সেরে স্কুলের পথে

স্কুল! সে তো আরেক মজার জায়গা! পড়ালেখা, খেলাধুলা

বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, তবুও সময় যেন ফুরতোই না

তারপর স্কুল থেকে ফিরে গোসল, খাওয়া ঘুম

বিকেলে দৌড়ে খেলার মাঠে, সন্ধ্যায় পড়তে বসা

রাতে টিভির সামনে - খবর, নাটক আরও কত কি!

তারপর মা'কে জড়িয়ে ঘুম; এত সময় মানুষ ঘুমায়! 

সেই সূর্যের সকাল হওয়ার আগেই ঘুম ভাংতো দু চোখে

তারপর আবার খেলার মাঠে দৌড়...... ক্রমাগত... 

চব্বিশ ঘণ্টায় দিন! কত কিছুই না ছিলো করার! 


অথচ আজ? ঘুম থেকে উঠে কাজে যেতে না দুপুর

কাজের মাঝেই সন্ধ্যে, বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত

খাওয়া সারতে সারতে দুচোখে রাজ্যের ঘুম, ঘুম পুরা হতে না হতেই ঘড়িতে এলার্ম

ধ্যাত! ঘুমটাও যদি ঠিক মত হয়! চব্বিশ ঘণ্টা! চোখের পলক ফেলতেই শেষ হয়।

এই যে সময়ের হিসাবে সময়ের সংকোচন! 

মাঝে মাঝে খুব মনে হয় - থেমে যাওয়ার সময় হয়েছে কি?

সময় সংকোচিত হতে হতে কোন একটা সময়ে তো সময় থেমেই যাবে! 

পৃথিবীর না হোক, আমার; তাই না? সময় হয়ে গিয়েছে কি? 


#কবিতা 


১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ 


সময়ের অনুভব 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 







মুখোশ পশু

আয়নার প্রতিচ্ছবিতে মুখোশ, মুখোশে ঢাকা মন। 

সংসারের মুখোশগুলো বড্ড গোলমেলে, কিছু চেনা চেনা 

বেশিরভাগ চেনাগুলোই আদতে অচেনা। ভালোমানুষ আকৃতির 

এক একজন সব দানব দানব চেহারা। আমার ভয় লাগে। 


ভাতের পাতে বিষ দেয়া হয় শুনেছি - কথার বিষ। 

পানির গ্লাসে কথার ছোবল, চুমুকেই শরীর নীল।  

আমি আজকাল কারো কথাই পান করি না, খেতে বসলে 

কান বন্ধ করে রাখি, মুখোশ দেখলে চোখ ঢাকি। 


আমার মুখোশে বড্ড এলার্জি, সারা গা ফুলে যায় 

চুলকোতে চুলকোতে তাই দিনের বেলায়ও ঘর অন্ধকার 

করে রাখি। তবুও আয়নায় যখনই তাকাই তখনই

বীভৎস সব মুখোশ দেখি, আর মন হয়ে যায় রাত্রি।


আচ্ছা! সংসারও কি একটা মুখোশ? ঐ যে বাবা-মা!

ঐ দেখ স্বামী-স্ত্রী, ঐ যে তাঁদের কতগুলো সন্তান! 

এরা কি সবাই মুখে মুখোশ এঁটে? স্বার্থের মুখোশ!

তা না হলে সারাক্ষণ কেন লড়ে? এক অপরে! 


আমার মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে করে সবগুলো মুখোশ খুলে ফেলতে!

তারপর একঝাঁক মানুষের ভিড়ে একঝাঁক পশুর লড়াই দেখব। 

একঝাঁক পশুর মধ্যে একটি দুটি মানুষ ছুঁড়ে দেব; দেখব পশুগুলো 

মানুষ'কে কি করে! ধ্যাত! আমাকে দেখ, তাহলেই হবে।


০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১  


#কবিতা 

 

মুখোশ পশু 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 






 


  

 

মাটির ডাক

আজকাল রাতগুলোকে বড্ড অন্যরকম মনে হয়

আজকাল রাত এলেই মনে অন্যরকম একটা ভয়

আজকাল শরীরটা ঠিক যেন শরীরের বশ নয়

আজকাল ধমনী আর শিরায় রক্তের ছোটাছুটিতে বড্ড উচ্চচাপ

আজকাল মনে বড্ড ভাবনার উদয়

কি জানি! কখন যে কি হয়!


এক একটা বয়সের এক এক রকম অনুভব 

অনুভব মনে, অনুভব শরীরে

শরীর তো একটা যন্ত্রই, ওতেও আছে ক্ষয়,

এই যে বুকের ভেতর একাধারে ধুকপুক ধুকপুক রক্ত সঞ্চালন!

ওটুকু ছোট্ট একটা মাংসপিণ্ড, তার বুঝি ক্লান্তি আসে না?

ঐ যে এত বড় শরীরে ছোট্ট একটা মগজ! কত কত তার কাজ!

তার বুঝি শ্রান্তি আসে না! 

এই যে ছোট্ট যকৃৎ, যা খাচ্ছি তাই হজমে সহায়তা করে যাচ্ছে 

ওর ক্লান্তি লাগে না?

এই যে লিভারটা! ক্ষতিকর জিনিষগুলো শোষণ করে যাচ্ছে!

তারও তো ক্লান্তি লাগতে পারে! 

এই যে কিডনি! ক্লান্তিহীন ক্রমাগত শরীর থেকে 

অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য বের করে দিচ্ছে! তার কি ক্লান্তি নেই?

শরীরের ভেতরের কত কত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ প্রতিনিয়ত আমাদের 

নানাবিধ কাজ করেই যাচ্ছে, এর মধ্যে থেকেই যদি একটি দুটি অঙ্গ

একটি দুটি বার একটু দম নেয়, তাঁদের একটু আরাম করতে ইচ্ছে করে!

তবেই তো কাজ হয়ে গিয়েছে! এম্ব্যুল্যান্স, ডাক্তার, হসপিটাল 

সে এক এলাহি কাণ্ড, তাই না? 


এগুলো আজকাল কেন জানি বড্ড ভাবনায় আসে।

এই যে সাথের বন্ধু বান্ধবগুলো হুট করে হসপিটাল যেতে যেতে 

চলে যায় কোন এক অচিন দূরে! আর কি ফিরে আসে? 

জানো! মাঝে মাঝে রাতে ঘুমুতে যাওয়ার আগে যখন দেখি

রক্তচাপের কাঁটাটা হু হু করে বিপদ সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে!

তখন, ঠিক তখনই মনে হয় - আচ্ছা! কাল ভোরটা দেখতে পারব তো!

অথচ দেখো! দশ বছর আগে এসব চিন্তা মাথায় আসতো! 

আমার তো আসতো না, তোমাদের?


এটা কি বয়সের দোষ? নাকি মাটির ডাক? 

মাটি ডাকে আমাদের সবাইকেই  

তার সময়ে কিংবা আমাদের সময় হলে

আপন করে নিতে মাটির ঘরে;


কেউ বুঝতে পারে

কেউ পারে না। 


      

০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১  


#কবিতা 


মাটির ডাক

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 

    




সংসারটা কার?

ঐ যে ছোট্ট শিশুর জন্ম হলো!

আমার মেয়ে

কি সুন্দর ফুটফুটে চাঁদের মতন

রেখেছি অনেক আদরে, করছি যতন; 


ঐ যে! যে মেয়েটি'কে জন্ম দিলো!

আমার স্ত্রী

সংসারের জন্য ভালোবাসা তার ষোলো আনি  

অথচ শাশুড়ির সাথে মুখরা রমণী;


ঐ যে! যে মেয়েটি আমায় জন্ম দিলো!

আমার মা

আমার জন্য পৃথিবী, ভালোবাসা আঠারো আনি  

অথচ আমার বৌ এর সাথে ঝগড়াটে রমণী;


ঐ যে! যে মেয়েটি আমায় কোল থেকে নামায় নি! 

আমার দাদী

মা আর দাদী দুজনারই আমাকে নিয়ে টানাটানি 

অথচ একজন আরেকজনের সাথে ক্রমাগত কথার হানাহানি; 


আমার এই আদরের মেয়েটা একদিন বড় হবে

কারো ঘরের ঘরণী হবে, তারও একটি ফুটফুটে মেয়ে হবে

তারও সংসার হবে, সংসারে শাশুড়ি রবে, বৌ শাশুড়ি ঝগড়া হবে

একদিন সে দাদী হবে, বৃদ্ধ হবে; সেদিনও বৌ শাশুড়ি ঝগড়া হবে;


এই যে যুগে যুগে বৌ শাশুড়ি ঝগড়া! পুরুষের আপন দু পক্ষ  

অথচ এতে পুরুষের কোন হাত থাকে না, থাকতে হয় না বক্তব্য 

তবুও দিনশেষে বলি হয় পুরুষ, মায়ের কাছ থেকে খেতাব স্ত্রৈণ 

স্ত্রীর কাছে ওগো তুমি কি? ছি! কন্যার কাছে, বাবা তুমি এমন কেন?


মজার ব্যাপার কি জানো? এই তিনকে ঘিরেই আবর্তিত পুরুষের সংসার

কিন্তু একজন'কে খুশি করতে গেলেই আরেকজনের মুখ ভার

তুচ্ছ সব কারণে বৌ শাশুড়ির হাঁড়িকুঁড়ি ঝনঝন 

মা এই করলো, বৌ ঐ করলো শুনে শুনে পুরুষের মাথা বনবন; 


বৌ প্রথম ঘরে আসার পর কিছুদিন ভালোই কাটে শাশুড়ি বৌ এর সংসার 

সময়ের স্রোতে বৌ শাশুড়ি দুজনার মনেই প্রশ্ন, সংসারটা জানি কার?

বৌ বলে আমার স্বামীর, মা বলে তার স্বামীর উপরন্তু পুত্রটাও তার 

সংসারের ফাটাবাঁশে পুরুষ, আসলেই তো সে কার? 


যুগের অগ্রযাত্রায় আজকাল আর যৌথ পরিবার কই?

বৌ শাশুড়ির ক্রমাগত ঝগড়ায় সংসার বিভক্ত হয় ঐ 

কার দোষ কার অন্যায় কে করতে পারে নিরূপণ?

বাবা ছেলে নির্বাক পুরুষ, দেখে দুপক্ষের সংসারের বিভাজন; 


তুচ্ছ তুচ্ছ কারণে মনোমালিন্য, সলতে আর বারুদ পাশাপাশি রয়   

শাশুড়িও নাকি একদিন বৌ ছিলো, বৌও সময়ে শাশুড়ি হয়  

যুগে যুগে শাশুড়ি বৌ দুজনাই মনকলা খায় মন প্রাণ পেতে 

অসহায় পুরুষের মন কাঁদে মা, কন্যা ও স্ত্রী সকলেরই সঙ্গ পেতে।


 

০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ 


#কবিতা 


সংসারটা কার? 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





দারিদ্র

দারিদ্র দেখেছ?

উঁহু! তোমরা দেখ নি; 


ঐ যে ওদের যদি জিজ্ঞাসা কর!আজ কি দিয়ে ভাত খাবে?

কি উত্তর দেবে জানো?

কেন হাত দিয়ে?


আচ্ছা! তোমরা ফ্যান খেয়ে থেকেছ? শুধুই ফ্যান

কিংবা শুধু ভাত? নুন কচলে?


একটা আধ ছেঁড়া লুঙ্গি দিনের পর দিন পড়েছ কখনো?

খুব মাঝে মাঝে পুকুরে ধুয়ে?

পরনেই রোদে শুঁকিয়ে?


শীতের রাতে খোলা আকাশের নীচে থেকেছ কখনো?

চট জড়িয়ে, 

কিংবা কুড়ানো আবর্জনায় আগুন দিয়ে?


তবে আর দারিদ্রের দেখেছ কি?

তোমরা দারিদ্র দেখ পত্রিকার কলামে 

আজকাল দারিদ্র দেখ ফেসবুক ওয়ালে 

দারিদ্র দেখ কবির কবিতায়, ঝলসানো রুটি ভেবে, 

ওরা চাঁদ'কে চাঁদই ভাবে, 

ক্ষুধা পেটে মনে ভাবের উদয় না, 

অভুক্ত পেট খাদ্য চায়, কবিতা না। 


০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ 


দারিদ্র 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত।