শনিবার, ৩১ জুলাই, ২০২১

ফাটল

দেয়ালে ছোট্ট একটা চিঁড়ের মত ফাটল
কালে কালে ধ্বসে পরে দেয়াল, 
পাহাড়ে চিঁড়ের মত ফাটল
একটা সময় পরে পাহাড়-ধ্বস, 
নদীর গতিপথে চিঁড়ের মত ফাটল
নদীর গতিপথের পরিবর্তন,  
জীবনটার দিকে তাকাও!
জীবনটাও এমন;

সম্পর্কে চিড় ধরলেই চিড় ধরে অনুভূতিতে 
চিড় ধরা অনুভূতিতে বাসা বাঁধে রাগ, অভিমান 
সুখের অনুভূতিতে ফাটল ধরলেই দুঃখের সূত্রপাত
সম্পর্কগুলোতে ছোট্ট ছোট্ট ভুল বোঝাবুঝির চিড় 
সম্পর্কে ফাটল, বেড়ে বেড়ে সম্পর্কের ভাঙন 
ঘটছে, চারিদিকে অহরহই ঘটছে 
অথচ সময়ে চিড়টা মেরামত করে নিলেই 
ভাঙন রোধ করা যেত;

বেশীরভাগ মানুষ চিড় ধরলেই বুঝতে পারে
কেউ আমলে নেয় 
কেউ দেখি না কি হয়! এর অপেক্ষায় 
যারা আমলে নেয় তারা ফাটল মেরামত করার চেষ্টা করে 
প্রথম দিকে চেষ্টা করলে খুব সহজেই ফাটল মেরামত করা যায়  
সে দেয়ালেরই হোক কিংবা পাহাড়ের অথবা নদীর 
কিংবা অনুভূতির অথবা সম্পর্কের 
খুব হাতেগোনা অল্প কিছু চেষ্টা হয়তো বৃথা যায়
তবে মনে একটা শান্তি তো পাওয়া যায়!
চেষ্টা করেছিলাম সাধ্যমত;
দেয়ালে কিংবা পাহাড়ের ধ্বসে জীবনে খুব একটা পরিবর্তন না এলেও
সম্পর্কের ধ্বসে জীবন ওলোট পালট হয়ে যায়
জীবনভর কাঁদায়; 

কোন ফাটলই উপেক্ষার নয়,  
চিড় দেখলেই সাবধান হয়ে যেতে হয় 
সম্পর্কের ফাটল অনুভূতিতে কান্নানদী হয়ে যায়। 
       

৩১ জুলাই, ২০২১

#কবিতা 

ফাটল
 - যাযাবর জীবন 

ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



  

মন বিলাস

আকাশে মেঘ জমলেই মন শ্রাবণ  

আকাশ ঝরলেই মন বৃষ্টি-ভেজা

এমনি কোন এক ঝুম বৃষ্টির দিনে 

আমি কাকভেজা হয়ে অযথাই রাস্তা হাঁটছিলাম 

কিছু লোকে তাকিয়ে ছিলো 

কিছু লোকে হয়তো কথা চেলেছিলো - 'পাগলে কি না করে!

অথচ আমার মনে ছিলো বৃষ্টি বিলাস;


সবাই বৃষ্টি বিলাস বুঝে না

ঝুম বৃষ্টিতে রাস্তায় নামে আমার মতই গুটিকয়েক পাগলের দল 

এরা বৃষ্টির গন্ধ শোঁকে, এরা বৃষ্টি গায়ে মাখে  

কিছু কিছু মানুষ কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুম দেয়

কিছু কিছু মানুষ চায়ের কাপ হাতে প্রকৃতি দেখে

আর কিছু কিছু মানুষ বৃষ্টি বিলাস মনে থাকলেও বৃষ্টিতে নামার সাহস পায় না

বৃষ্টি আসলে ওদের জন্য শুধুই মন বিলাস,

সবাই কি আর পাগল হয়!

সবাই তো আর আমার মত নয়; 


কোন এক ঝুম বৃষ্টির দিনে যখন পাগলের মত পথ হাঁটছিলাম

পাশ দিয়ে হুস করে এক গাড়ি চলে গেলো

আমাকে রাস্তার কাঁদা-পানিতে ভিজিয়ে দিয়ে,  

একটু থমকে গিয়েছিলাম

তারপর আবার পথ হাঁটা দিলাম, 

গাড়িটা বেশ কিছুদূর গিয়ে থেমে গেলো

আমি হাঁটতে হাঁটতে গাড়িটা পার হতেই গাড়ির কালো কাঁচ নেমে গেলো

একটা জলপরী যেন জানালায় উঁকি দিলো

ছোট করে বললো, সরি

বৃষ্টি বিলাসে ভিজতে ভিজতে একদম মন ভিজিয়ে দিলো, মন বিলাসে 

আমি ছোট্ট একটু হেসে আবার পথ হাঁটা শুরু করলাম বৃষ্টি বিলাসে

সেই থেকে শুরু,

কোন কোন প্রেমের শুরুটা বড্ড অদ্ভুত ভাবে হয়, তাই না? 


তারপর মনে প্রেম আসতেই মন বিলাস

মনে অনেকগুলো অনুভূতির খেলা 

প্রেমে পড়লে অনুভূতিগুলোর তীব্রতা বোঝা যায় 

যখন তখন ঋতু বদলে মন বদলায় 

মৌসুমি বায়ু বদলে মন দোলায়   

দোলা লাগে অনুভূতি'তে,  

কিছু অনুভূতি সুখের

কিছু অভিমানের

কিছু মিলনের 

কিছু বিরহের 

দুঃখের অনুভূতি শুরু হয় বিচ্ছেদে 

অনুভূতিগুলোর রঙ চেনা যায় আলাদা করে 

মানুষ প্রেমে পড়লে

সত্যি কি?

আমার ক্ষেত্রে হয়েছিলো তো! 

তোমাদের হয় না?

আজকাল অবশ্য আর অনুভূতিগুলো মনে তেমন একটা দাগ ফেলে না

কোন কোন প্রেমের সমাপ্তি খুব হঠাৎই হয়, কারণ ছাড়াই

গ্লাসটা টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়ার আগ মুহূর্তেও কেও জানতো না,  তাই না? 


আমি এখনো বৃষ্টি নামলেই ভিজি, সেই আগের মতই  

ভিজি বৃষ্টিবিলাসে; 

ঝুম বৃষ্টি কান্না ধুয়ে দিতে পারে খুব ভালো করে

আচ্ছা! স্মৃতি ধুয়ে দিতে পারে কি?

আজ দুদিন ধরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে

আমি এখনো আগের মতই রাস্তা হাঁটি, বৃষ্টি বিলাসে 

মাঝে মাঝে খুব হঠাৎ হঠাৎ তোর কথা মনে পড়ে

আবার যদি কখনও এমনি করেই দেখা হয়ে যায় আমাদের!    

এবার চিনতে পারবি?

মাঝখানে অনেকগুলো বসন্ত কিন্তু পার হয়ে গেছে

বয়সের ছাপ এখন চোখে মুখে?

তোরও নিশ্চয়ই বয়স হয়েছে!

তাতে কি? 

বৃষ্টি বিলাস এখনো সকল মন বিলাসীদের জন্য

তুই কি এখনো ভাসিস কল্প বিলাসে?

নাকি বড্ড বেশি কঠিন হয়ে গেছিস বাস্তব'কে জড়িয়ে ধরে? 

ঐ দেখ ঝুম বৃষ্টি নেমেছে

এখন অনেক রাত

ভিজবি আমার সাথে? 

নাহ থাক, তুই ঘুমা কাঁথা-মুড়ি ঘুমে। 




৩০ জুলাই, ২০২১


#কবিতা 


মন বিলাস 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 






লেখায় লেখক

লেখকগুলো খুব খারাপ
এরা হুটহাট মানুষের মনে উঁকি দিয়ে দেখে ফেলে 
কিভাবে যেন বুঝে ফেলে অন্যের মনের কথাগুলো 
তারপর কিছু সত্যির সাথে মিথ্যে মিশিয়ে 
কিছু অনুভূতি কল্পনায় বানিয়ে  
এটা ওটা সেটা লিখে ফেলে কাগজে কলমে; 

লেখকগুলো ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনাবলি দেখে চামড়ার চোখে
বাকিটা কল্পনা করে নেয় কল্প-চোখে
দুটো চোখের দেখা মিলিয়ে আঁকাআঁকি এক দেয়ালে
আর কাগজে দাগ কেটে যায় মনের খেয়ালে, 
পাঠক কাগজের লেখাগুলো পড়ে চামড়ার চোখে 
লেখকের জীবন ভেবে নেয় মনের খেয়ালে; 

কত কত ঘটনাই তো ক্রমাগত আঁকা হয় কাগজে কলমে
সব কি আর ঘটে লেখকের জীবনে?  
শাশুড়ি বৌ এর চিরাচরিত অশান্তি যখনই কাগজে!
পাঠকের মনে করুণা আহারে কি অশান্তিই না লেখকের মনের ভাঁজে! 
চারিদিকের পরকীয়া ভাইরাস যখন কলমে আঁকে
লেখক বেচারার জীবনটাই বরবাদ পাঠকের চোখে 
কলমের আঁচরে যখনই অভাব অনটন ফুটে ওঠে
লেখক অভাবে আছে ভেবে ভক্তকুল তার থেকে দূরে ছোটে;

একদিন ড্রাগস সেবনকারীদের নিয়ে একটা ফিচার লিখেছিলাম 
অনেকে সন্দেহ পোষণ করেছিলো আমি ড্রাগ নেই কি না!  
একদিন বৃদ্ধাশ্রমের এক বৃদ্ধের কান্নার রোল কবিতায় আঁকতেই 
প্রশ্নের তীর আমার দিকে, আমি এতটাই অমানুষ যে বাবাকে পাঠিয়েছি বৃদ্ধাশ্রমে! 
একদিন কোন এক লেখায় বৃহন্নলাদের জীবনযাপন নিয়ে কিছু কথা লিখেছিলাম 
কেউ কেউ প্রশ্ন তুললো, ওদের দলের না হলে এগুলো কিভাবে লিখলাম? 
একদিন এক কবিতায় এক নিশিকন্যার করুণ কাহিনী এঁকেছিলাম
পাঠককুলের ছিঃ ছিঃ ধ্বনিতে সেদিন চরিত্রহীনের খেতাব গায়ে মেখেছিলাম; 

লেখকগুলোকে একদম বিশ্বাস করতে নেই 
এরা হাসতে হাসতে কান্না লেখে 
এরা কাঁদতে কাঁদতে হাসি আঁকে। 


৩০ জুলাই, ২০২১

#কবিতা 

লেখায় লেখক 
 - যাযাবর জীবন 

 

       

কর্তব্য

বাবা-মায়ের অনেকগুলো ছেলেমেয়ে, বাবা-মা সব ছেলেমেয়ের জন্যই করে 

কারো জন্য একটু বেশি কারো জন্য একটু কম, কাউকে বেশি দেন কাউকে কম  

বাবা-মায়ের কম আর বেশিটা শুধু সন্তানরাই বোঝে, বাবা-মা কি কখনো বোঝে?

বুঝুক আর নাই বুঝুক তারা তাদের দায়িত্ব পালন করে যান, কর্তব্য মনে করে;


সব সন্তান কিন্তু বাবা-মায়ের জন্য করে না, সন্তান হবার দায়িত্ব কি সেটা বুঝেও বোঝে না 

তাদেরও সংসার আছে, বৌ বাচ্চা আছে; কে আর অশান্তি বয়ে নিয়ে যেতে চায় ঘরে 

তবে সব সন্তানের মধ্যে কেউ না কেউ কিন্তু বাবা-মায়ের জন্য ঠিকই করে, শেষদিন পর্যন্ত করে   

বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সেই একজন, যাকে বাবা-মা দিয়েছিলো সবচেয়ে কম করে; 


বাকি সন্তানগুলো কিন্তু একবারে ছেড়ে দেয় না বাবা-মাকে! ওরা ভাই এর বাসায় আসে 

সময় সময় বাবা-মায়ের খবর নেয়, হাতে করে এটা ওটা সেটা নিয়ে আসে 

নিয়ে তো আসে! তবে যে ভাই এর বাসায় এসেছে তার পরিবারের জন্য নয় কিন্তু! 

বাবা-মায়ের জন্য, ঠোঙ্গায় করে; বাবা-মা তাতেই খুশিতে বাগবাকুম করে;


আর যে সন্তানটা করেই যাচ্ছে! তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে কখনো মুখে বলে কখনো খোঁটায় 

এই যে আমার এই সন্তান আজ এটা এনেছে, কাল অন্যের'টা দেখিয়ে বলে সেটা এনেছে 

যে করে, সে দেখে; দীর্ঘশ্বাস মনের ভেতর চেপে রেখে বাবা-মায়ের সামনে মুচকি হাসে 

বাবা-মা'কে হাসিমুখ দেখাতে দেখাতে সে তার কাজ করেই যায়, চুপিসারে; 


কোন পালা পার্বণে সব ভাই বোন একসাথে জড়ো হয়, বাবা-মায়ের ঘরে 

সমালোচনার ঝড় ওঠে এটা করা হয় নি, ওটা করা হয় নি; কখনো বা কৈফিয়ত দাবি 

বাবা-মা কখনো চুপ থাকে, কখনো বা ওদের সাথে তাল মেলান; তখনই দুঃখ লাগে  

যে করছে, সে চুপ করে শুনে যায়, কর্তব্য করতে করতে; বাকিরা শুধুই সমালোচনা করে। 


 

২৯ জুলাই, ২০২১


#কবিতা 


কর্তব্য 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





স্মৃতির চুমু

টিনের চালে নূপুরের নিক্বণ 

ঝুমঝুম তবলায় বৃষ্টি ধুম, 

চায়ের কাপ হাতে বৃষ্টির গান শুনছি

ড্রয়ার থেকে পুরনো কবিতার খাতাটা মেলে ধরতেই  

স্মৃতির পেয়ালায় টপটপ কিছু কান্নার ফোঁটা 

কত ব্যর্থ প্রেমই না লিখেছিলাম কৈশোর আর যৌবনে!

কোথায় আজ তারা? 

 - স্মৃতির দেয়ালে; 


কৈশোরের ছেলেমানুষি কিছু প্রেম ছিলো 

যৌবনে বুঝেছিলাম সেগুলো ইনফ্যাচুয়েশন,

যৌবনেও নরম কঠিন কিছু প্রেম এসেছিলো 

জীবনের একটা পর্যায়ে বুঝেছিলাম সেগুলোও ইনফ্যাচুয়েশন,

কবিতার পুরনো খাতার পাতায় পাতায় মোহগুলোকে এঁকে গিয়েছি 

আর ঋতু বদলের মত মন বদলেছি 

ছোটখাটো ভুল বোঝাবুঝিতে কখনো প্রেমিকা বদলেছি আমি 

কখনো অভিমানী প্রেমিকার দ্বারা আমি নিজেই বদল হয়েছি  

কি এসে যায়! 

ইনফ্যাচুয়েশন জীবনের পাতায় পাতায় 

আর পুরনো খাতাটা ভরে উঠছিলো প্রেমের কবিতায়; 

 

ভাগ্যিস খাতাটা রাগ করে ফেলে দেই নি!

কিংবা অভিমানে পুড়িয়ে ফেলি নি,

খাতা পুড়িয়ে ফেললেই কি স্মৃতি পোড়ানো যায়?

ওগুলো তো সময় সময় টুপটাপ কান্না নামায় স্মৃতির পেয়ালায়

এইসব স্যাঁতস্যাঁতে ভেজা ভেজা বৃষ্টির দিনে

চায়ের কাপ হাতে নিয়ে 

ঠোঁটে চা চুমুকে স্মৃতি চুমু খেলেই মন স্যাঁতস্যাঁতে। 



২৭ জুলাই, ২০২১


#কবিতা 


স্মৃতির চুমু

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 










লেখক স্বরূপ

এই যে হাসতে হাসতে লেখার মাধ্যমে মানুষ'কে কাঁদানো! 

এই যে প্রচণ্ড মন খারাপ নিয়েও লেখার খোঁচায় মানুষ'কে হাসানো!

এ বোধহয় লেখকদের পক্ষেই সম্ভব, তাই না?

তবে কি লেখকগুলো বড় অভিনয় শিল্পী? 

নাকি হিপোক্রেট?

নাকি এরা মুখে মুখোশ এঁটে থাকা কোন অদ্ভুতুড়ে প্রাণী?


এরা কি সুন্দর করেই না বিভিন্ন খাবারের বর্ণনা দেয়! 

 - অভুক্ত পেটে

এরা দুর্ভিক্ষ আঁকে, ক্ষুধার স্বরূপ এঁকে মানুষ'কে কাঁদিয়ে দেয় 

 - ভরা পেটে 

এরা ভালোবাসার আবেগে খাতার পর খাতা ভরিয়ে ফেলে 

 - আবেগহীন কাঠ মানব হয়ে 

এরা যাবতীয় খুঁটিনাটি কঠিন বাস্তবতাগুলোকে তুলে আনে

 - বুকে আবেগের পাহাড় বয়ে 

এরা সংসারের যাবতীয় খুঁটিনাটি তুলে ধরে  

 - সংসার না করে

এরা প্রেমের সৌন্দর্য আঁকে  

 - প্রেমে ধোঁকা খেয়ে 

এরা ভালোবাসার বাসর লেখে 

 - নিজেদের ভালোবাসার বিচ্ছেদে 

এরা দাম্পত্যের কত কত রূপই না আঁকে!

 - নিজের দাম্পত্য বিচ্ছেদ বয়ে   

এরা মানুষকে পুরো পৃথিবীটা ঘুরিয়ে আনে 

 - ঘরকুনো ঘরে বসে  

এরা মানুষের মনে স্বপ্ন এঁকে দেয়  

 - স্বপ্নহীন হয়ে 

এরা মানুষকে হাসায়, কাঁদায়, ভালোবাসায় ডোবায় 

 - মুখে নির্লিপ্ততার মুখোশ এঁটে;  


এদের মনে যা আসে তাই নিয়েই গল্প বানায়, ইচ্ছে হলে   

এদের ইচ্ছে আঁচরে কবিতা হয় ছন্দ মিলে কিংবা না মিলে, 

এদের কলমের লেখার সাথে নিজেদের জীবনের কোন মিলই খুঁজে পাওয়া যায় না 

কখনো বা এরা কলমে তুলে আনে নিজের জীবনের হাসি আনন্দ, দুঃখ বেদনা, হতাশা আর যন্ত্রণা;   

এরা কলমে এক মনে আরেক, এদের থেকে দূরে থাকাই শ্রেয় 

এদের লেখা পড়ে আবেগ-তাড়িত হয়ে প্রেমে পড়লে বাস্তবতা বুঝে নিও,   

প্রেমে পড়া পর্যন্ত তবুও ঠিক আছে, মন তো ভালোবাসারই বাস 

তারপর এগোতে গেলেই কিন্তু জীবনের ভয়াবহ সর্বনাশ; 


যে মানুষটা কলমে আঁকছে আর যে মানুষটাকে বাস্তবে দেখছে 

দু জন তো আসলে এক না 

এদের সামনাসামনি মেলাতে গেলেই মনে ধাক্কা 

একজনের সাথে আরেকজনের কোন কিছুতেই মেলে না।


২৩ জুলাই, ২০২১


#কবিটা 


লেখক স্বরূপ 

 - যাযাবর জীবন 

  


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





ঈদ মানেই ছেলেদের কষ্টের জীবন

প্রতি বছর ঈদ আসে, বয়ে নিয়ে আসে সবার জন্য আনন্দ 

অথচ দেখ! আমরা ছেলেরা কিন্তু একটা ভয়ানক কষ্টের ঈদ কাটাই

আমরা ছেলেরা প্রতি বছর ঈদের মধ্যে কষ্ট করতে করতে 

একটা ভয়াবহ কষ্টের জীবন কাটাই;


ছেলেরা বলতে কিন্তু সব বয়সের ছেলেরাই

এই যেমন ধর! যখন ছোট ছিলাম! কিছু বুঝতাম না

বাবা মায়ের কাছে নানা রকম বায়না ধরতাম

বন্ধুবান্ধবরা কত সুন্দর সুন্দর বাহারি ঈদের পোশাক কিনে ফেলেছে?

অথচ আমার তখনো কেনা হয় নি, মায়ের কাছে ঘ্যানঘ্যান প্যানপ্যান 

আমার বোনটা কিন্তু এদিক দিয়ে একদম ক্ষেত

কোন বায়নাই নেই যেন তার,

মা সারাদিন রান্নাবান্না করলো, সেটা তার কাজ

আমার ইচ্ছে না থাকলেও সময় মত খেতে হলো, 

সেই বাল্যকাল থেকেই কি কষ্টেরই না জীবন শুরু হলো! 


তারপর কৈশোরে একটু লেজ গজালো

বায়না আরেকটু বাড়লো, এটা দাও ওটা দাও

ঈদের দিন সেই ভোর বেলা থেকে মায়ের অত্যাচার

ঘুম থেকে উঠিয়ে মসজিদে পাঠানো 

তারপর হাবিজাবি কি কি সব রান্না করা!  

আর টেস্ট করার দায়িত্ব! সে তো আমারই 

কেন বাবা! বাসায় তো বোনটাও আছে, সে একটু কাজ করতে পারে না? 

তা না, সে আছে মায়ের সাথে রান্নাঘরে, একদম বাজে কাজে

মা'কে রান্নায় এটা এগিয়ে দিচ্ছে তো ওটা ধুয়ে দিচ্ছে

আর এদের রান্নাঘরের সকল এক্সপেরিমেন্ট, আমার ওপরে!

কি কষ্টেরই না একটা জীবন!


তারপর যৌবন, আমার ততদিনে পাখা গজিয়ে গেছে

বন্ধুবান্ধবের সাথে সারারাত মার্কেটে, চাঁদরাতে 

সকালে বাসায় ফিরতেই মায়ের অত্যাচার শুরু

গোসল কর, খেয়ে উদ্ধার কর, নামাজে যা; এটা, ওটা আরও কত কি? 

আরে বাবা! সারারাত মার্কেটে কাটিয়েছি একটু মায়াও কি হয় না!

ছেলেটাকে একটু ঘুমুতে দাও! তা না;

আর ততদিনে ঘরে একটা বৌ এলো তো হয়েই গেলো! 

ডাবল অত্যাচার সইতে হয় ছেলেদেরই

একদিকে মায়ের রান্নার টেস্টার তো ছিলামই  

এখন বৌ শুরু করলো নতুন নতুন রেসিপির অত্যাচার

একটা পেটে কতটুকু ধরে? এরা বোঝে না?

কি এমন ঘোড়ার ডিমের কাজ করে উল্টে ফেলে?

কাজের মধ্যে তো সেই রান্নাঘরে খুটখাট, আর পদে পদের রান্না,  

আর ছেলেদের কষ্টের জীবন? সে কথা আর বলো না;


রোজার ঈদ তাও কোনভাবে কষ্টেসৃষ্টে পার করা যায়, 

কোরবানি ঈদ এলে?

সেই ভোর বেলা ওঠো, নামাজে যাও তারপর হুজুরের পেছন পেছন দৌড়াও

কোরবানি করার পর একটু বিশ্রাম, তারপর একটু শান্তির ঘুম

আর ঐদিকে? 

মা কিংবা বৌ, এদের তো আর কোন কাজ নেই

কাল সারারাত হাবিজাবি করে রান্নাঘরে সময় কাটিয়েছে

একজন আজকের মাংস রান্নার মশলার তদারকি

একজন সকালের নাস্তার আর কসাইদের খাবার 

এগুলো কোন কাজ হলো?

তারপর কোরবানির পর শুরু হলো কসাইগুলোর ওপর তাদের অত্যাচার 

মাংস এভাবে কাটা যাবে না, ওভাবে কাটা যাবে না, কসাইগুলো অতিষ্ঠ

কষাই তদারকি কোন কাজ হলো! ওটা তো একটা বাচ্চাও করতে পারে!

তারপর আশেপাশে বাড়িগুলোতে কে কোরবানি করে নি তার খবর যেন ওদের নখদর্পণে 

কাজ না থাকলে যা হয়! মানুষের হাঁড়ির খবর নেবার মত ফালতু কাজ করতে পারে ওরাই   

তারপর মাংসগুলো ভাগ কর, যারা কোরবানি দেয় নি তাদের বাড়ি বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা কর

এগুলো কোনও কাজ? তারপর তো আছে শাশুড়ি বৌ এ মিলে চুলোয় রান্না বসানো

যেটা না করলে ওদের পেটের ভাত হজম হয় না,

আমি বাবা এসব আজাইরা কাজে নেই, কোরবানি হয়ে যাওয়ার পর একটা ঘুম দিয়েছি

তোমরাই বলো! ঘুমের থেকে শান্তির আর কিছু আছে?

সে শান্তিটাও আর দিলো কই? চোখটা লাগতে না লাগতে চেঁচিয়ে বাড়ি মাত 

কিংবা ধাক্কাধাক্কি করে ঘুম ভাঙ্গানো, দুপুর তিনটা বেজে গেছে; খেয়ে উদ্ধার করো!

আরে বাবা! অত্যাচারের একটা লিমিট থাকা দরকার,

কাল সারারাত বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে সকালে নামাজ পড়ে 

কোরবানি দিয়ে একটু বিছানায় গা টা লাগিয়েছি, এদের সেটাও সহ্য হচ্ছে না!

এখন গুচ্ছের খাবার খাওয়ার জন্য উঠতে হবে,

আমিও উল্টো চেঁচিয়ে উঠি, কি এমন বিশাল কাজ করে ফেলেছ? 

একটু রান্নাই না হয় করেছ, সে তো প্রতিদিনই কর; তাই বলে ঘুম ভাঙ্গিয়ে খাওয়াতে হবে?

ছেলেদের কষ্টের জীবন? সে মেয়েরা কখনোই বুঝবে না,

না বাল্যকালে, কৈশোরে মা বুঝেছিলো 

না যৌবনে আর প্রৌঢ়ত্বে বৌ বুঝে

না মেয়েরা কিংবা ছেলের বৌরা বুঝবে বৃদ্ধকালে;

পুরুষের জীবন, কষ্টে কষ্টময়! 


বিশেষ করে প্রতিটা ঈদে

অকাজের কাজীগুলো সারাদিন ধরে গুচ্ছের খাবার রাঁধবে, 

আর শান্তির ঘুম থেকে অশান্তি করে ঠেলে তুলে আমাদের দিয়ে টেস্ট করাবে,   

অত্যাচারের একটা সীমা থাকা উচিৎ;

ছেলেদের কষ্টের জীবন? সে কথা আর বলো না।  

  

২১ জুলাই, ২০২১


#কবিতা


ঈদ মানেই ছেলেদের কষ্টের জীবন

 - যাযাবর জীবন 


লেখকগুলো কেন লিখে?

ঐ দেখ লোকটা লিখছে, 

 - কি লিখছে? 

হবে কিছু একটা! 

গল্প কিংবা কবিতা!

ওগুলো আজকাল কেউ লিখে নাকি? 

 - লিখে তো!

না লিখলে মানুষ পড়বে কি? 

আরে মানুষের জীবনের বানানো গল্প লিখে হবে টা কি?

আর কবিতা? ওগুলো তো পাগলে লিখে, 

ওতে পেটে ভাত জোটে?


ঠিকই বলেছ

ঐ যে মানুষটা গল্প লিখছে!

একটা সংসারের গল্প! অথচ এই তো সেদিন তার সংসারটা ভেঙে গেলো;


ঐ যে লোকটা উচ্চবিত্তের বখে যাওয়া সন্তানের কাহিনী লিখছে!

উচ্চবিত্ত সম্পর্কে তার ধারণাই নেই কোনও;


ঐ যে মানুষটা মধ্যবিত্তের যত চাওয়া পাওয়া আর হতাশার কথা লিখছে!

মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হওয়া লেখকটা তার জীবনের হতাশা ঢালছে লেখায়;


ঐ যে ঐ লোকটা নিম্নবিত্তের দৈনন্দিন আর্থিক টানাপোড়নের কথা আঁকছে! 

চাকরি হারিয়ে নিম্নবিত্তের থেকেও নীচের অবস্থানে তার দিন কাটছে এখন; 


আর ঐ যে লোকটা প্রায়শই প্রেমের কবিতা লিখে!  

তার জীবনে প্রেম আসেই নি কখনো;


আর ঐ মানুষটা! পাতার পর পাতা ভরে সুন্দর সুন্দর প্রেমের চিঠি লিখে যে! 

সে চিরকালই বন্ধুবান্ধবদের প্রেমের চিঠি আদানপ্রদানে ডাকপিয়নের কাজ করতো; 


ঐ যে মানুষটা ড্রাগস এর বিরুদ্ধে খবরের কাগজ ভরে ক্রমাগত লিখে যাচ্ছে!

তার কিন্তু রাত গভীর হতে না হতেই এক ডোজ ড্রাগের জন্য দম বের হয়ে যায়;


ঐ যে মানুষটা ফেসবুক ভরে ভরে সন্তানের সাথে ছবিতে ছবিতে সয়লাব করে ফেলে!

বাসায় কিন্তু সন্তানের সাথে ধমক ছাড়া কথা বলতেই পারে না; 


ঐ যে মানুষটা ভার্চুয়াল দেয়াল জুড়ে ছবিতে ভরে ভরে স্ত্রীর সাথে ভালোবাসার গল্প আঁকে!

রাতে কিন্তু তারা দুজন দু ঘরে কাটায়, দুজন একসাথে হলেই গালাগাল অকথ্য ভাষায়;  


ঐ যে মানুষটা প্রতিদিন পরকীয়া ভাইরাস নিয়ে কলমে ফ্যানা তুলে ফেলছে!

তার স্ত্রী আরেকজনের হাত ধরে বের হয়ে গেছে সংসার ছেড়ে;  

 

আর ঐ যে মানুষটা?  

দিনের পর দিন পরম মমতায় বাবা'কে নিয়ে কত কত গল্পই না লিখে যায়!

খাতা ভরে ভরে মায়ের জন্য ইনিয়ে বিনিয়ে ভালোবাসা আঁকে কলমের ডগায়!

আর বাবা দিবস, মা দিবসে ওনাদের জন্য ভালোবাসায় ভার্চুয়ালে ছবির মহরৎ!   

তোমরা জানো কি? ওর বাবা-মা দুজনারই বাস কোন এক বৃদ্ধাশ্রমে!  


এই যে লেখকগুলো! খাতায় কলমে আঁক কেটে যায়! 

যার যেটা নেই সে সেটা নিয়েই কি গল্প লিখে? 

নাকি যার যেটা বেশি আছে সেটাই কবিতায় ঢালে? 

এগুলো কি গল্প? নাকি কবিতা? 

আচ্ছা হিপোক্রেসি নয় তো! 

আজকাল অবশ্য সময় বদলের সাথে সাথে 

পুরনো সব সংজ্ঞাই বদলে গেছে,

 - তা বদলাবে না? আরে মানুষগুলোই যে বদলে গেছে!  

  

সবাই কি বদলায়?  

ঐ যে, ঐ মানুষটাকে দেখ ! 

কবিতার খাতায় কি সুন্দর করেই না ক্ষুধার স্বরূপ আঁকছে!

আমি জানি আজ সারাদিন তার পেটে একটি দানাও পড়ে নি, 

শুধু পানি খেয়ে দিনের পর দিন কাটানো যায়? 


আমি আজো বুঝে উঠতে পারি নি,

 - লেখকগুলো কেন লিখে?


 

২০ জুলাই, ২০২১


#কবিতা 



লেখকগুলো কেন লিখে?

 - যাযাবর জীবন 



ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা। 





Showcase

আমরা নিজেদের Showcase করতে বড্ড ভালোবাসি

আমরা মানে আমি, তুমি, সে, আমরা সকলে 

আমরা সকল মানুষগুলা,

আচ্ছা! পশুরা কি নিজেদের এভাবে Showcase করে?


আর আজকাল ভার্চুয়াল হয়ে যাওয়ার পর থেকে তো কথাই নেই

কিভাবে সেঁজেগুজে নিজেকে উপস্থাপন করবে তার এক অসম প্রতিযোগিতা চলে 

চলে না? 

তবে কি আমি ভুল দেখেছি?

কি জানি বাবা! দেখতেও পারি

বয়স হয়েছে, আজকাল চোখে কিছুটা কম দেখি

বয়স হলে তো বোধবুদ্ধিও লোপ পেতে থাকে 

কোন একসময় বুদ্ধি লোপ পেতে পেতে বাক্যহারা হয়ে যাব

তখনো হয়তো দেখবো মানুষগুলো'কে 

আর মানুষগুলোর নিজেকে নানা কায়দায় ভার্চুয়ালে উপস্থাপন করাকে; 


এই যে কিশোর আর যুবক বালকগুলো!

চুলের বাহারি রঙ, মেসি নেইমার কাট কিংবা বাবরির ঢং 

কখনো কোজাক হয়, কখনো বাউল

যেমন ধর ভাত'কে মানুষ আজকাল কত পদই না বানায়! 

কাঁচামাল কিন্তু চাউল

তারপর কি কি সব অসম্ভব বেসম্ভব এক একটা অদ্ভুতুড়ে ভিডিও বানিয়ে

নিজেকে জাহির ভার্চুয়াল ফ্রেমে

যেন ওটাই জীবন;

কিশোরী ও যুবতীরাও কি কম যায়?

কথাবার্তায়, ভাবভঙ্গিতে, আচার আচরণে আর পোশাকআশাকে

ছেলেদের সাথে সমানে সমান পাল্লা দিয়ে 

দেবেই বা না কেন?  সাম্যের যুগ 

ওরা যা পারে, এদের পারতে দোষ কোথায়?

তারপর টক্কর ভার্চুয়ালে 

নিজেকে জাহিরে, এটাও জীবন; 


কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতীদের কথা না হয় বাদই দিলাম

ওদের যৌবন, 

আর আজকাল যৌবন যার, ভার্চুয়াল যুদ্ধে যাবার মোক্ষম সময় তার 

চলুক এদের টক্কর ভার্চুয়াল দেয়াল জুড়ে, 

কিন্তু ঐ আধবয়সী লোকগুলোকে দেখ তো! 

আর আধবয়সী নারীগুলোকে! 

এরা কেন প্রতিযোগিতায় নিজেকে Showcase এ ?

পুরুষগুলোর চুলে কলপ দিয়ে যুবক সাজার কি অদম্য প্রয়াস!

মহিলাগুলোর রংবেরং এর চুল রাঙাতে পার্লারে বাস  

তারপর এক একজন বয়স বছর দশেক কমিয়ে দিয়ে ভার্চুয়ালে Showcase

আরে করবেই বা না কেন? সবাই কি আমার মত gone case? 

তারপর এইসব ভার্চুয়াল প্রৌঢ় যুবক যুবতীদের মনে নতুন প্রেমের বাতাস

পার্লার-ঘষা তরতাজা সুন্দরী দেখলে কোন পুরুষটার মতিভ্রম না হয়?

ফটোশপ-ঘষা প্যাক্সওয়ালা যুবক দেখে কোন রমণীর বুকে দামামা না বাজে?

যাও! তুমি বড্ড বাজে,

নিজে করতে না পারলে উঠোনের উঁচুনিচু খুঁজতে থাকো

আরে বাবা! তানা না মেরে মিছিলে সামিল হও

তারপর ভার্চুয়ালে চলে এসো,

এখানে সবাই নিজেকে Showcase করে 

নারী কিংবা নর হরেদরে,

তোমার করতে দোষ কোথায়? 


এসো নিজেকে পার্লারে ঘষো

কিংবা ঘষো ফটোশপে 

একটু তো মানুষ হও! 

মানুষ হয়ে নিজেকে Showcase করবে, তা না 

বোকার মত দূর থেকে দেখে দেখে কাগজে কলম ঘষে যাচ্ছ;   


কত রকম বোকা মানুষই না আছে পৃথিবীতে! 

কেউ Showcase করে, কেউ দেখে 

কেউ তানা মারে

কেউ লেখে। 


 

১৮ জুলাই, ২০২১


#কবিতা 


Showcase

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





কানকথায় সম্পর্ক নাশ

সততার কোনও অভাব ছিলো না একজনের মনে 

সন্দেহেরও অভাব ছিলো না আরেকজনের মনে  

সন্দেহ সম্পর্কে ভাঙনের তবলা বাজায়, 

কথায় কথায় সন্দেহ জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে 

দূরত্ব বেড়ে যেতে যেতে মানুষ সরে যেতে থাকে দূরে 

তারপর ধীরে ধীরে মনের দূরত্ব 

মনে দূরত্ব সৃষ্টি হলে কাছে থেকেই কি আর সম্পর্ক হয়?

ওটা পাশাপাশি থাকার নাম

সম্পর্ক বিশ্বাসের দাম; 


চেষ্টার অভাব থাকে না কোন একটা সময় 

একে অপরের প্রতিটা কাজে সহায়তা করার 

অথচ যখনই সম্পর্কে অর্থের লেনদেন তখনই সন্দেহের ছোট্ট একটা ঢিল

অবিশ্বাসের নুড়ি ধীরে ধীরে মনে পাথর 

সম্পর্কের নদীতে পাথর কি আর ভেসে থাকতে পারে?

বিশ্বস্ততার জালে অবিশ্বাসের মাছ লাফালাফি করলেই জাল ছিদ্র হয়ে পড়ে

হু হু করে সন্দেহ ঢুকতে ঢুকতে একসময় জাল ছিঁড়ে যায় 

অবিশ্বাসের ছায়াপথে সম্পর্ক হারায়

তারপর মনে এক চাঁদ দূরত্ব 

অবিশ্বাসের নৌকায় দূরত্বের সাগর পাড়ি দিতে পেরেছিলো কে, কবে? 

সম্পর্কে বিশ্বাস না থাকলে জোড় করে সম্পর্ক টিকিয়ে রেখেই বা কি হবে? 


এই যে সন্দেহ!

এই যে অবিশ্বাস!

প্রতিদিন দূরত্ব তৈরি করছে প্রিয় মানুষগুলোর মাঝে

কখনো আত্মীয় স্বজন, কখনো বন্ধু বান্ধব 

কখনো প্রেমিক প্রেমিকা, কখনো বা স্বামী স্ত্রী

অথচ বিশ্বাসে নির্ভরতা

বিশ্বাসে সম্পর্কের গাঁট; 


হয়তো কখনো কখনো অবিশ্বাসের ঘটনাগুলো ঘটে!  

তবে শোনা কথার বেশিরভাগ রটনাও বটে 

আমরা কান কথায় চিলের পেছনে দৌড়োতে দৌড়োতে সম্পর্কই হারিয়ে ফেলি 

অথচ কান কিন্তু ঠিক কানের জায়গাতেই আছে 

শুধু শোনা কথাগুলো পচে গলে মনে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, 

কানকথায় মনে সন্দেহের বীজ, বিশ্বাসে ফাটল 

আর সম্পর্কে ভাঙনের কোলাহল,  

আমরা মনের চিকিৎসা না করেই কানকথায় কান কেটে ফেলে দেই নির্দ্বিধায়  

আর সম্পর্কের বসবাস সম্পর্কহীনতায়।


    

১৭ জুলাই, ২০২১


#কবিতা 


কানকথায় সম্পর্ক নাশ 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা। 




     

বৃষ্টি ভেজা অনুভব

ঝুমঝুমান্তি বৃষ্টি দেখেছ? 

তাল হীন লয় হীন ঝেঁপে নামা বৃষ্টি? 


ছাদের ওপর আমার একটা চিনের চালাঘর আছে

যেদিন অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামে!

যেদিন মন কান্না হয়!

যেদিন তার কথা খুব মনে হয়!

সেদিন আমি চালাঘরে চলে যাই

মাথার ভেতর তাল হীন লয় হীন ক্রমাগত বৃষ্টি বাজতে থাকে 

আমি চোখ বুঝে বৃষ্টির মধ্যে হাত বাড়াই

অনুভবে তার হাতের ছোঁয়া পাই

হাতে হাত পড়তেই আমি খোলা ছাদে

দুজন ভিজতে থাকি বৃষ্টি বিলাসে; 


তোর হাতটা আমার হাত থেকে সরে যেতেই আমি চোখ খুলি 

জলের নূপুর পায়ে নাচছিস তুই পুরোটা ছাদ জুড়ে

আর বৃষ্টি মাখছিস সারাটা গা জুড়ে, নৃত্যের তালে তালে  

যতটা বৃষ্টি তুই ছুঁয়ে ছুঁয়ে নিচ্ছিস, তার থেকে বেশী আমায় ভেজাচ্ছিস 

ভালোবাসার বৃষ্টি অনুভবে 

আচ্ছা! বৃষ্টি কি তবে নারী! 

যখনই সে নামে! কেন ভালোবাসায় ভিজি আমি?

বৃষ্টি কিংবা তো'তে?

 

কোথায় যেন ঝুমঝুম ঝুমঝুম নূপুর বাজছে

কোথায় যেন প্রচণ্ড বেগে তাল লয় হীন বৃষ্টি নেমেছে 

বৃষ্টির শব্দ কানে যেতেই আমি অনুভবে তোর হাত ধরে ছাদে  

ভিজছি, ঝুমঝুমান্তি বৃষ্টি ও তো'তে;


তুই নেই তাতে কি হয়েছে?

ভেজা অনুভবটা তো সেই একই রয়ে গেছে

বৃষ্টি ভেজা অনুভব,  

ভালোবাসা ও ক্ষরণের।  


১৬ জুলাই, ২০২১


#কবিতা 


বৃষ্টি ভেজা অনুভব

 - যাযাবর জীবন 


বেঁচে থাকা সম্পর্ক

সম্পর্ক কোথায়?  

 - অর্থে;  


সম্পর্কগুলো ভালোই চলে যতক্ষণ পর্যন্ত স্বার্থ আঘাত না করে

সম্পর্কের মাঝে অর্থ চলে এলেই অনর্থ 

কেউ কেউ আবার অর্থের মূল্যে বিশ্বাস মাপতে যায় 

আদতে বিশ্বাস কি আর মাপা যায়!

সম্পর্ক তো শেষ হয়ে গেছে পাল্লা হাতে তুলে নিতেই 

বিশ্বাস হারিয়ে সম্পর্কে অর্থটুকুই পড়ে থাকে কিংবা অনর্থ,  

কেউ সম্পর্কের মূল্যায়ন বোঝে, কেউ অর্থের 

বিশ্বাস টিশ্বাস ওসব ভেক টার্ম 

মানুষ অর্থের অর্থ খুঁজে, টাকার মূল্যমানে; 


তাহলে ঐ যে বাবা মা সন্তান! ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী? 

 - ওগুলো সম্পর্ক নয়? 

 - ওগুলো কিভাবে অনর্থ হয়? 


আরে! ওগুলোও সম্পর্ক, যতক্ষণ তোমার দেবার ক্ষমতা আছে,  

ক্রমাগত দিতে দিতে একদিন একটু বেঁকে বস তো!

একবার বিনিময় চেয়েই দেখ তো! 

ঐ যে আদর আপ্যায়ন! ঐ যে তোমার মূল্যায়ন! 

কিংবা বড় গলায় যে সব সম্পর্কের কথা বলছ! 

 - দেখ তো কোথায় গিয়ে ঠেকে? 


সাহস আছে যাচাই করার? 

 -আমার নেই

 -আমি সম্পর্কগুলোর পরতে পরতে ঘুরে এসেছি

  সম্পর্কের শিরায় উপশিরায়, নিলয় আর অলিন্দের অলিগলিতে

ওখানে অর্থের মাপকাঠিতে সম্পর্কের পারদের ওঠানামা 

সম্পর্কের মূল্যায়ন দেবার ক্ষমতায়;   


এখন আর সম্পর্ক যাচতেই চাই না! 

- থাকুক না যেটুকু আছে, যেভাবে যেমন 

- না হয় দিয়েই গেলাম! যতদিন আছি কর্মক্ষম, 

অর্থই তো! নিজের কাছে রেখেই করব'টা কি? 

আর নিয়েই বা যাব'টা কোথায়?  

 - চূড়ান্ত গন্তব্য তো সেই সাড়ে তিন হাত মাটি; 


তারপর চোখ বুজলেই তো বারোভূতের হরিলুটের নৃত্য  

- ঐ যে ওদের, যাদের সাথে ছিলো যৎসামান্য বেঁচে থাকা সম্পর্ক।  


    

১৬ জুলাই, ২০২১


#কবিতা


বেঁচে থাকা সম্পর্ক 

 - যাযাবর জীবন 



বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই, ২০২১

বার্তা

দু শ্রেণীর মানুষ যাই বলুক না কেন!

তাই হয়ে যায় বার্তা 

প্রথম শ্রেণী - যার বেশুমার টাকা আছে 

দ্বিতীয় শ্রেণী - যার বেশুমার ক্ষমতা আছে;  


আমি টাকা'কে ক্ষমতার ওপরে রেখেছি

টাকায় খুব সহজেই ক্ষমতা কেনা যায়

ক্ষমতায় টাকা কেনাটা কিছুটা সময় সাপেক্ষ 

তবে দুটো শ্রেণীই একে ওপরের পরিপূরক 

কিংবা বলতে পারি সহোদর;


আর একটা শ্রেণী আছে কিন্তু!

আম জনতা

এরা দর্শক 

ওনারা বার্তা দেন এরা মাথা দোলায় 

 - হ্যাঁ হুজুর

 - জী হুজুর

 - জী আজ্ঞে,

এরা না থাকলে ওনারা কার উদ্দেশ্যে বার্তা দিতেন?  

 

১৬ জুলাই, ২০২১


#কবিতা 


বার্তা 

 - যাযাবর জীবন 


রুহ

এই যে প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিল! 

থামবে না? 

নাকি আমাকেও সামিল করে নেবে মিছিলে?

মৃত্যু'কে কে আটকাতে পেরেছিলো কবে?  


আমি এক একসময় ভাবি,

এই যে কাতারে কাতারে মৃত্যু! 

মৃত বলে কাকে? 

শরীর থেকে রুহ টা বের হয়ে গেলে? 


আচ্ছা! রুহ কি? 

শুধু এটুকু বুঝি 

রুহ হচ্ছে জীবন আর মরণের মাঝখানে শরীরের মধ্যে বাস করা কোন একটা কিছু,   

সেই কোন একটা কিছু যে কি! সেটা আর জানি না; 

 

আচ্ছা! রুহটা দেখতে কেমন?

রঙ আছে? ওজন? 

কেমন করে একটা দেহে ঢুকে ? 

কেমন করেই বা দেহ থেকে বের হয়ে যায়?


আচ্ছা! রুহটা কে কি কোন ভাবেই দেহে আটকে রাখা যায় না?

তবে তো আর মৃত্যুতে কাঁদতে হতো না, 

কোন কিছু দিয়েই কি একে আটকানো যাবে না?

যদি বুলেট প্রুফ নিচ্ছিদ্র একটা দেয়ালের ভেতর মানুষকে রেখে দেয়া হয়?

তবুও কি শরীর থেকে রুহ বের হয়ে যাবে? 

তবুও কি মানুষ শব হবে? 


রুহ মানুষের বোধ বুদ্ধির বাইরে মহান আল্লাহ্‌ তায়ালার এক বিশেষ আদেশ  

যা ওনার আদেশে শরীরে ঢুকে, মানুষ জীবন পায়  

আবার আল্লাহ্‌ তায়ালার আদেশেই শরীর থেকে বের হয়ে যায়,   

আর রুহটা দেহ ছেড়ে চলে গেলেই মানুষটা হয়ে যায় শব;


রুহ টা দেহ ছাড়বেই 

আমার তোমার ওর তার প্রত্যেকেরই,

সময়টা জানা নেই কারো 

হতে পারে এখনই কিংবা একটু পর 

একটা সেকেন্ড বেশি থাকার উপায় নেই 

শব মাটিতে যাবে, নিকট আত্মীয়রা কাঁদবে সব।  



১৫ জুলাই, ২০২১


#কবিতা 


রুহ 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 

 




মহামারীর স্বরবর্ণ

অস্থির এক সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি আমরা 
আজ ছোট ছোট ইচ্ছেগুলোও যেন অলীক স্বপ্ন       
ইচ্ছেপুরণের সামর্থ্য কেড়ে নিয়েছে মহামারী   
ঈদুল আযহা কড়া নাড়ছে দুয়ারে     
উচ্চবিত্তদের গরু খাসি কেনার ধুম   
ঊর্ধ্বগামী মৃত্যুর হার প্রতিদিন মহামারীতে    
ঋণের বোঝায় জর্জর মধ্যবিত্ত   
এক একটি দিন ওদের কাছে যেন মাসের সমান   
ঐ ধেয়ে আসছে মৃত্যু চারিদিক থেকে  
ওপারে পাড়ি জমাচ্ছে কাতারে কাতারে স্বজন      
ঔষধ কি আর সবসময় বাঁচাতে পারে জীবন?

১৫ জুলাই, ২০২১

#কবিতা 

মহামারীর স্বরবর্ণ 
 - যাযাবর জীবন 

ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




   


শ্রেণিভেদ

কেউ সোনার চামচ মুখে করে জন্মায় 

রূপোর খাটে তুলোর বিছানায় ঘুমায়, 

কেউ মাটির ঘরে জন্মে ঝিনুক খোলে দুধ খায়

মেঝেতে পাটি পেতে ঘুম যায়,   

কারো জন্ম খুব সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরে 

মধ্যবিত্তের টানাপোড়ন দেখে জীবনের স্তরে স্তরে,     

জন্মটা মানুষের হাতে নয়; 


সোনার চামচ ওয়ালারা বাবার ব্যবসার হাল ধরে 

কোটিতে উপার্জন করে, খরচও কোটিতে, 

এদের ইচ্ছে হলেই ভ্যাকেশন, ইউরোপ আমেরিকা ডেসটিনেশন 

বিয়ে শাদী কিংবা যে কোন অনুষ্ঠান মানেই পাঁচ তারকা হোটেল

বাড়ি বলতে সুইমিংপুল ওয়ালা প্যালেস, গাড়ি বলতে কমপক্ষে মার্সিডিজ

অসুখ বিসুখে প্রাথমিক চিকিৎসায় দেশে এপোলো কিংবা ইউনাইটেড

তারপর এয়ার এম্বুল্যান্সে নিদেনপক্ষে সিঙ্গাপুর;  


নিম্নবিত্তরা বুঝ হওয়ার পর থেকেই গায়ে খাটে

সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রমের কামাই দৈনিক শত'তেই থাকে

ওর বেশি খরচ করবে কিভাবে?   

এদের ছুটি কোথায়? একদিন ছুটি মানেই এক রোজ মজুরীর ঘাটা 

বিয়ে শাদী কিংবা অনুষ্ঠান বলতে, দু-চারজন বন্ধুবান্ধব মিলে একবেলা পোলাও-মাংস!  

বাড়ি বলতে আজ এই বস্তি কাল ঐ বস্তি, যেখানে দিনমজুরির সুবিধা  

অসুখ বিসুখে ঝাড়ফুঁক, কবিরাজি, আর নয়তো সরকারি হসপিটাল;   


মধ্যবিত্তের না বাবার ব্যবসা আছে? না গতর খাটতে পারে

ওদের মধ্যবিত্ত জীবনের একটা বড় অংশ চাকুরীর খোঁজে

বেতন হাজারে, খুব ভালো চাকরিতে না হয় লাখে; খরচটা সীমিত রাখতে হয় তাতে  

ছুটি বলতে বাচ্চাদের স্কুল ছুটি, দেশের মধ্যে পাহাড় কিংবা সমুদ্র দর্শন 

বিয়ে শাদী বলতে আত্মীয় স্বজন মিলে কোন কমিউনিটি হলে একটু ধুমধাম

ভাড়া বাড়িতেই জীবন পার, কেউ কেউ ফ্ল্যাটলোনের কিস্তি টানে সারাজীবন

আর অসুখ বিসুখ হলে সরকারি হসপিটাল, নয়তো প্রাইভেট ক্লিনিক; 


সোনার চামচ ওয়ালাদের স্বপ্নে স্বপ্নে বাস  

নিম্নবিত্তের স্বপ্ন পেট পুরে দুটো ভাত  

স্বপ্ন দেখতে হয় না মধ্যবিত্তের,

শ্রেণিতে শ্রেণিতে মানুষের জীবন যাত্রায় কতই না পার্থক্য!  

পার্থক্য শিক্ষা দীক্ষায়, পার্থক্য মানসিকতায়  

পার্থক্য চালচলনে, পার্থক্য কথা বার্তায়; 


অথচ কোন পার্থক্য ছিলো না কারোরই জন্মে

 - সবার জন্মই মায়ের পেট থেকে

কোন পার্থক্য নেই কারো ক্ষুধার মাঝে

 - ক্ষুধা সবার পেটেই লাগে 

শ্রেণিভেদে পার্থক্য হবে না মৃত্যু'তে 

 - সব শবেরই মাটি হবে; 


আমি ধনী

আমি গরীব 

আমি মধ্যবিত্ত 

শ্রেণিভেদের ছাপ নিয়ে ঘুরছে মানুষ,

ঐ পশুগুলোর মধ্যে লক্ষ্য করে দেখ তো! 

পাখি গুলোর মধ্য!

মাছেদের মধ্যে! 

পোকা মাকড়, কীট পতঙ্গের মধ্যে! 

ওদের শ্রেণিভেদ নেই, নেই নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ

নেই হানাহানি, খুনোখুনি

তবুও ওরা পশু কিংবা পাখি

আর আমরা মানুষ, আমাদের আছে মনুষ্যত্ব 

মনুষ্যত্ব! আরে বাবা ওটা শুধু শ্রেণিতে শ্রেণিতে বিভক্ত। 


একদিন আমার খুব স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে করে 

সব শ্রেণির মানুষের জন্ম হবে সোনার চামচ মুখে নিয়ে 

সব শ্রেণির মানুষ খেতে বসবে এক কাতারে 

সব শ্রেণির মানুষের বাসাগুলো হবে এক আঁকারে 

সবার শিক্ষা এক স্কুলে, সবার চিকিৎসা এক হসপিটালে

সবার কবর এক সারিতে,

সেদিন নিশ্চয়ই আর শ্রেণিভেদ থাকবে না! 


আমি মাঝে মাঝে কি সব অলীক স্বপ্নই যে দেখি না! 


১৩ জুলাই, ২০২১


#কবিতা



শ্রেণিভেদ 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





ইচ্ছেদাগ

মাঝে মাঝেই ইচ্ছে হলে খাতায় আঁক কাটি

কিছু একটা হয়তো লিখি

নির্দিষ্ট কোন লেখা নয়

এই হাবিজাবি কিছু মনের কথা;


একটা সময় কাগজ কলমের যুগ ছিলো

তখন কাগজে দাগাদাগি করতাম কালো ফাউন্টেন কালির কলমে

হাতের লেখা খুবই খারাপ ছিলো 

হিবিজিবি দাগগুলোকে মনে হতো যেন কালি পায়ে আরশোলা হেঁটে গিয়েছে  

তারপর একটা সময় নিউজপ্রিন্ট এলো, সাথে বল পেন 

তখনো বেশ দাগাদাগি করতাম কালো নীল আর লাল কালির বল পেনে

হাতের লেখার আর উন্নতি হয় নি এতদিন লেখালেখিতেও 

যখন ছোট ছোট করে লিখতাম তখন মনে হতো পিঁপড়া হেঁটে গিয়েছে

একটু বড় অক্ষরে লিখতেই আবার আরশোলার ফিরে আসা 

তারপর কালের বিবর্তনে কম্পিউটার চলে এলো 

এবার আমি হাতের লেখা নিয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য 

যা ইচ্ছে তাই টাইপ করে গেলেও হাতের লেখা খারাপ বলার কেউ নেই

আস্তে আস্তে ফন্টগুলোরও বেশ উন্নতি হলো

আজকাল প্যাঁচানো অক্ষরেও কত কিছু টাইপ করা যায়! 

   

কাগজ কলমের যুগে অল্প দু চারজন বন্ধু বান্ধব লেখাগুলো পড়তো 

কেউ কেউ পড়তে পড়তে বকা দিতো লেখা বুঝতে না পেরে

ওদের আবার রিডিং পড়ে দিতে হতো

আমার লেখা কে আর উদ্ধার করতে পারে! আমি ছাড়া?

ওরা কখনো বলতো এটা কবিতা হয়েছে, ওটা গল্প হয়েছে 

আর কখনো বলতো কি সব হাবিজাবি যে লিখিস! 

গল্প না কবিতা কিছুই বুঝি না,

আসলে আমি নিজেও বুঝতাম না

লিখতে গিয়ে কখনো চিন্তাই করি নি গল্প লিখছি না কবিতা!

আমি তো কাগজে আঁক কেটে যেতাম মনের কিছু অনুভূতিগুলো

কাউকে পড়ানোর জন্য নয় কিন্তু! 

ওগুলো মনের খেয়ালে; 


আজকাল কম্পিউটার আসার পর কত কিছুরই না উন্নতি হয়েছে! 

ইদানীং আর কম্পিউটারে ওয়ার্ড ফাইলেও কিছু টাইপ করার দরকার হয় না

এখন সরাসরি লিখা যায় ভার্চুয়াল দেয়ালে,

আমি এখনো দাগ কাটি মনের খেয়ালে

কখনো ল্যাপটপ খুলে ওয়ার্ড ফাইলে, কখনো ভার্চুয়ালে

কোন গল্প কিংবা কবিতা নয় কিন্তু!

ঐ যে মনে যা আসে তাই! সেই কাগজ কলম যুগের মনের খেয়ালে

আজকাল ভার্চুয়ালে অনেক বন্ধুবান্ধব হয়েছে

তারা মাঝে মাঝে আমার আঁকগুলো দেখে 

কেউ কেউ আবার উৎসাহ নিয়ে পড়েও

হয়তো বা দেখতে পাগলে কি বলে আর না বলে! 

ওরা এখনো মাঝে মাঝে বলে এটা গল্প হয়েছে কিংবা এটা কবিতা 

আর বেশীরভাগ সময় বলে এগুলো পাগলের কথা; 


সে বলুক গিয়ে, 

আঁকগুলোকে আমি ইচ্ছেদাগ বলি

আর মনের মনোভাবগুলোকে ক্রমাগত দাগিয়ে চলি,

আমার কোন ইচ্ছেই নেই গল্প কিংবা কবিতা লিখার

থাকুক না কিছু ইচ্ছেদাগ কাগজ কিংবা ভার্চুয়াল পাতায়! 




১২ জুলাই, ২০২১


#কবিতা 



ইচ্ছেদাগ 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



অনুভূতিহীন অনুভব

পেয়াজ দেখেছ তোমরা,  

পেয়াজের খোসা ছাড়াতেও নিশ্চয়ই দেখেছ! 

একটি একটি করে খোসা ছাড়াতেই ভেতরে একটি একটি আলাদা রঙ

খোসাগুলো খুব কাছাকাছি রঙের হলেও খুব ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখবে 

একটির রঙ আরেকটি থেকে কিছুটা ভিন্ন

ঠিক যেন আমাদের দুঃখগুলোর মতন; 


দুঃখগুলো খুব কাছাকাছি হলেও একটি কিন্তু আরেকটি থেকে আলাদা 

যেমন ধর! বাবা হারানোটা দুঃখের, প্রচণ্ড দুঃখ বোধ কিন্তু মা হারানোতেও

তবুও অনুভব আর অনুভূতিতে দুটো দুঃখের পার্থক্য তো কিছু আছেই!

বাবা হারানো মানে মাথার ওপর থেকে যেন ছাদ সরে যাওয়া

মা হারানো মানে মাথার ওপর থেকে যেন মমতার আঁচলটা সরে যাওয়া 

এ পার্থক্য করতে পারে শুধুমাত্র বাবা মা হারানো সন্তান,  

আর বাকিদের কাছে দুটোই মৃত্যু সংবাদ;


পেয়াজের এক একটি খোসায় আলাদা আলাদা ভালোবাসার বাস 

বাবা মায়ের জন্য ভালোবাসা আর সন্তানের জন্য ভালোবাসা কাছাকাছি রঙের খোসা হলেও 

দুটোকে আলাদা করে দেয় নিম্নমুখী ভালোবাসা, 

প্রেমিকার জন্য আর স্ত্রীর জন্য ভালোবাসার খোসা দুটো কতই না ভিন্ন! স্বাদে ও রঙে 

চিৎকার করেও কান্না হয়! আবার নীরবেও কাঁদে কেউ কেউ

মানুষ শুধুমাত্র চোখের জল দেখে, যেমন দেখে পেয়াজের খোসা

বেদনা ও কান্নার গভীরতা আলাদা করতে পারে শুধুমাত্র যারা একইরকম 

দুঃখবোধের ভেতর দিয়ে গিয়েছে, 

কোন কোন ক্ষেত্রে সেটাও পারা যায় না, 

পানিতে ডুবে থাকলে চোখের জল কোথায় খুঁজে পাবে?


আমরা একের পর এক পেয়াজের খোসা ছাড়ানো দেখি

একের পর এক অনুভূতির খোসা ছাড়ানোর মত, 

সবগুলো খোসা একবারে ছাড়িয়ে একটা পাত্রে রাখলে ওটাকে তোমরা কেবলমাত্র খোসা বলো

কেউ কি আর খোসার রঙ আলাদা করে বলে? 

আমাদের হৃদয়ের পরতে পরতে জড়িয়ে থাকা অনুভবগুলোকে একসাথে তোমরা অনুভূতি বলো

অনুভূতির ধরণগুলো কখনো চিন্তায় এসেছে কি?

একদিন অনুভবগুলোর খোসা খুলতে খুলতে আমরা ঠিক অনুভূতিহীন হয়ে যাব। 



১১ জুলাই, ২০২১


অনুভূতিহীন অনুভব 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



কিছু হচ্ছে নাকি আমাদের চারিদিকে?

আজকাল জীবন ঘনিষ্ঠ লেখাগুলো মানুষ কেন যেন পড়তে চায় না

হয়তো জীবনের মধ্য দিয়েই জীবন অতিবাহিত হয় বলে! 

কিংবা হয়তো এ ঘটনাগুলো চারিদিকে প্রতিদিনই দেখে বলে! 

আর নয়তো ঘটনাগুলো প্রতিদিন দেখতে দেখতে ওটাই স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে বলে; 

 

বাসায় অসুস্থ একজন'কে সারাক্ষণ সেবা করতে করতে সেই অসুখটা যেন নিজেরই অংশ হয়ে যায় 

খুব খারাপ কোন অসুখ হলেও তাতে কি কিছু এসে যায়? 

মৃত্যু প্রতিদিন দেখতে থাকলে তখন কি আর প্রথম মৃত্যু দেখার মত তীব্র দুঃখবোধ থাকে?  

ঠিক তেমনি প্রতিদিনের জীবনকে কেউ কাগজে তুলে আনলে সেটা মনে আর দাগ কাটে না;


তারচেয়ে যখন প্রেম লিখি! তখন সবাই হামলে পড়ে

কারো কারো মনে প্রশ্ন জাগে, আরে! আরে! লেখক সাহেব কি প্রেমে পড়েছেন? 

কেউ কেউ হয়তো আরেকটু উৎসাহী হয়ে জনে জনে জিজ্ঞেস করতে থাকেন   

 - এই! ওর নতুন প্রেমিকটি কে রে? 


মাঝে মধ্যে বৃষ্টি আঁকলে সবাই নেমে যায় বৃষ্টি বিলাসে 

যেন তখনই ঝুম বৃষ্টি নেমেছে চারিদিক ভিজিয়ে,  

কখনো জ্যোৎস্না আঁকলে কেউ কেউ নেমে যায় হিমু হয়ে জ্যোৎস্না বিহারে

তখন দিন কিংবা রাত! মাথা ঘামায় না সেটা নিয়ে;    


এই যে আজকাল চারিদিকে এত এত অসংগতি দেখি! 

মাঝে মধ্যে ওগুলো থেকে মাত্র একটি দুটিই তো আঁকি 

কেউ কেউ দেখে, বেশিরভাগ পাশের বাড়ির ঘটনা পড়ে বিরক্তিতে মুখ ঘুরিয়ে চলে যায়

আর কেউ কেউ আবার অবিশ্বাসে মুখ বাঁকায়, - এও কি হতে পারে? 


মৃত্যুর কথা লিখলেই কেন জানি সবাই বড্ড বিরক্ত হয় 

যেন মৃত্যু একটা অচ্ছুৎ কিছু, ওটা লেখবারই নয়, 

মৃত্যু যে আসবেই সেটা তো সবারই জানা

তবুও কেন মনে করিয়ে দিচ্ছি, এই নিয়ে তানা; 


হাসি লিখতে গেলে বলে কান্না লিখ

কান্না আঁকতে গেলে বলে বৃষ্টি আঁক 

বৃষ্টি আঁকতে গেলে বলে ঝর্ণা দেখ

ঝর্ণা দেখতে গেলে বলে নদীতে ভাসো 

নদীতে সাঁতার দিতেই বলে সাগরে চলো 

আমি মানুষের কথা শুনতে শুনতে এখান থেকে সেখান হয়ে 

ওখানে দিয়ে উড়ে ঘুরে একদম আকাশেই উঠে যাই,  

তারপর রোদে পুড়তে পুড়তে একসময় কালো হতে হতে 

একদম রাত্রি হয়ে ঘন অন্ধকার হয়ে যাই;


এবার তো আর তোমরা আমায় দেখছো না

অন্তত আমার চোখে অমাবস্যাগুলো তো দেখ!


ঐ যে আগুনে পুড়ে যাওয়া সারি সারি দেহ

ঐ যে ধ্বসে পড়া বিল্ডিং এর নীচে চাপা পড়া লাশগুলো 

ঐ যে গার্মেন্টস কিংবা ইন্ডাস্ট্রির কর্মীদের পরিবারের কান্না  

ঐ যে ছাল বাকলা উঠে যাওয়া রাস্তায় শিশু নিয়ে উল্টে পড়া মা 

ঐ যে বালি দিয়ে বানানো ধ্বসে পড়া রড বিহীন বিল্ডিংগুলো 

ঐ যে রডের বদলে বাঁশ দিয়ে ঢালাই দেয়া রাস্তা ও ব্রিজ 

ঐ যে বৃদ্ধ বাবা মায়ের বৃদ্ধাশ্রমে কান্না 

ঐ যে সম্পত্তি নিয়ে ভাই বোনের লড়াইয়ে খুনোখুনি 

ঐ যে স্বামী স্ত্রীর পরকীয়ায় ভুক্তভোগী সন্তানগুলোর অসহায় চেহারা 

ঐ যে লক ডাউনে আর অসহায় মানুষগুলোর ক্ষুধার হাহাকার 

ঐ যে মহামারীতে অপ্রতুল চিকিৎসা ব্যবস্থা আর মৃত্যুর মিছিল  

ঐ যে কাড়ি কাড়ি টাকায় বানানো মহামারী হসপিটালটা হুট করে উধাও, 

ঐ যে ড্রাগ এর নেশা! ক্ষমতার নেশা! খুন, মারামারি আর গুম 

এগুলো আমাদের ভাবায় কি? নাকি সবাই নাক ডেকে আমার মত ঘুম? 

ঐ যে বছরের পর বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ! 

কেউ আছে দেখার? নাকি আমার মতই সবার মন বন্ধ? 


আমি এগুলো কিছু নিয়েই লিখছি না

আমি এগুলো কিছুই দেখছি না 

তোমরা আমার মত ভার্চুয়ালে সময় কাটাও 

টেলিভিশন দেখ, সিনেমা দেখ;


ভালোই তো জীবনটা কেটে যাচ্ছে আমাদের 

চোখ বুঁজে থেকে 

চারিদিক দেখে কিংবা দেখেও না দেখে,  

কই? কিছু হচ্ছে নাকি আমাদের চারিদিকে? 



১০ জুলাই, ২০২১


#কবিতা 


কিছু হচ্ছে নাকি আমাদের চারিদিকে?

 - যাযাবর জীবন 



সম্পর্ক হারিয়ে ফেলে

কি আছে শরীরে? তাল তাল মাংস 

তবুও শরীরে শরীরে কত তফাৎ  

রিপুর ডাকে শরীর বদলে 

সম্পর্কে ভাঙনের কাল হাত;


ভালোবেসেই তো একসময় কাছে এসেছিলাম 

মনে মন রেখে ঐ শরীরটাকেই ভালোবেসেছিলাম 

শরীরটাতেই মন ছিলো আর ভালোবাসার নির্যাস 

নয়া শরীরের ঘ্রাণে করি পুরনো সম্পর্কের সর্বনাশ;  


আজকাল পুরনো শরীরটা যেন বড্ড একঘেয়ে লাগে  

এখনকার শরীরগুলো বেশ চকচকে, নতুন আনকোরা 

রিপুগুলো মনে সুড়সুড়ি দিলেই, হাতছানি ডাক পাপের 

খামখাই রিপুর দোষ! আসলে মন কলুষতায় মোরা; 


এই যে নতুন শরীরে শরীর, শরীরের প্রতি টান!  

আমার কাছে ভালোই লাগে, ভালোবাসা দিয়েছি নাম 

কাল ওখানে ছিলো অনুভব! আর অনুভূতির বাস!  

নতুন শরীরে মজে মজে আজ, সম্পর্কের সর্বনাশ; 


শরীর পুরনো হলে মন ফুরিয়ে যায়, প্রেমের হয় শেষ

ওটা পুরনো কাসুন্দি, ওখানে ভালোবাসার নেই রেশ

নতুন শরীরে নতুন প্রেম খোঁজা, হায়রে প্রেমের নাম!

শরীরের দামে শরীর কেনা, কোথায় সম্পর্কের দাম?  


একটা সময় পুরুষের ইচ্ছায়, নারীর বদল হতো 

আজকাল দেখি পুরুষ বদল, নারীর ইচ্ছে মতো  

সময়ের বদলে যুগ বদলেছে, এখন বদল হরেদরে 

শরীর বদলে মনের দাম নেই, নারী কিংবা নরে;


এই যে আমরা শরীর শরীর করি! শরীরের প্রতি টান! 

মাংসের ভেতরে মনও আছে, তাই তো রে জানতাম    

মিনিট তিরিশেক ঘষাঘষিতে, তিরিশ সেকেন্ডের স্খলন

তারপর বাকি সাড়ে তেইশ ঘণ্টার পুরোটাই তো রে মন; 


একদিন আমিও পুরনো হবো, পুরনো হবে শরীর 

সেদিন ইতিউতি মন খুঁজব, শরীর খুঁজব না নারীর 

শরীর কেবল কাম নয়, কাছে থাকার অনুভব 

সম্পর্ক শুধু শরীর নয়, ওখানে ভালোবাসাটাই সব; 


ঘরে ঘরে আজ ভাঙনের শব্দ, শরীর খুঁজতে গিয়ে

দাম্পত্যে যত কলহের কোলাহল, শরীর শরীর নিয়ে 

শরীরটা একদিন মাংসের দলা হবে, কাম মরে গেলে 

সেদিন আমরা সর্বনাশ বুঝব, সম্পর্ক হারিয়ে ফেলে। 



০৮ জুলাই, ২০২১


#কবিতা 


সম্পর্ক হারিয়ে ফেলে

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগ্রহীত। 





শব্দের শব

শব্দে শব্দে শব্দের খেলা, শব্দে শব্দকোষ

শব্দে শব্দ না মিললে, সব শব্দের দোষ 

কথায় শব্দের উঁকি, কথাতে কথার‍ ফাঁকি 

কথায় কথায় চারিদিকে কথার কথোকতা দেখি! 


শব্দ দিয়ে কান্না, শব্দ দিয়ে জীবন শুরু 

শব্দে শব্দে কথা, কথায় ভাবের শুরু  

ভাবের আদান প্রদানে সম্পর্কের আলাপন 

সম্পর্কে সম্পর্ক গড়লেই মন উচাটন 


ভাব থেকে বন্ধুত্ব, ভাব থেকে ভালোবাসা

শব্দে শব্দে কথা,  ভালোবাসায় কাছে আসা 

ভাবে ভাবের আদান প্রদান, সম্পর্কের সূত্রপাত 

কথায় বোঝাপড়া হলে, দাম্পত্যের সূত্রপাত; 


শব্দে শব্দে কথা, কথার পিঠে কথা, কথার কলহ

কথার কলহে কথা কাটাকাটি আর মন বিরহ 

মন বিরহে কথাদের চুপ, আর নৈঃশব্দ্যের শব্দ 

চুপে অভিমান চুপে কান্না আর মনে মন জব্দ 

  

কথাতে কলহ মেটে, কথায় বিরহের অবসান 

কথাতেই কলহ তুঙ্গে, কথাতেই রাগ অভিমান  

রাগ থেকে ঘৃণা, কলহে কলহে কত সম্পর্কচ্ছেদ!   

কথা দিয়ে শুরু, কথায় শেষ আর কথাতেই বিচ্ছেদ; 


আমি শব্দ খুঁড়ে খুঁড়ে মনের শব্দ বের করি 

আর শব্দের শব্দ খুঁড়ে খুঁড়ে শব্দে শব্দ জুড়ি 

শব্দে শব্দে কথা গেঁথে আঁকি শব্দের কবিতা 

শব্দ খুঁজে না পেলেই কবিতার নৈঃশব্দ্যতা; 

  

শব্দের পিঠে শব্দের ঢেউয়ে সুরের ঐকতান 

শব্দে শব্দেই সুর দিয়ে বাধা হয় যত গান

শব্দের কারিগরই শব্দের শব্দ নিয়ে খেলে 

কবিতারা থেমে যায় শব্দরা থেমে গেলে; 


শব্দ দিয়ে শুরু, শব্দে শব্দে শব্দের শব্দচ্ছেদ

শব্দের অভিমানে শব্দ অভিধানে, শব্দের বিচ্ছেদ  

যেদিন চুপ হয়ে যাব, শব্দে লেখা হবে ওটা শব  

তোমরা নৈঃশব্দ্যের কবিতায় পড়বে শব্দের শব। 


০৭ জুলাই, ২০২১


#কবিতা 


শব্দের শব

 - যাযাবর জীবন 


আলোকিত আঁধার

টিনের চালে একটা ঢিল পড়েছিল,     

শব্দ শুনেছিলো সবাই 

মনোযোগ কি দিয়েছিলো কেউ?

বাতাসে ভাসছিলো কিছু শব্দের ঢেউ, 

কয়েকটি কাক উড়ে গেলো ডানা ঝটপট করে 

আমি কাক দেখছিলাম

সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম ভাঙা চাল সংস্কারে 

টিনের ফুটো বেয়ে চুইয়ে আসা সূর্য দেখা হয় নি কারো 

নেয়া হয় নি রোদের ঘ্রাণ,  

- ভেঙে যাওয়ার শব্দটা শুনলো না কেউ 

- মন ভাঙ্গার শব্দ শোনে না কেউ;  


ঝপাৎ করে একটা মাছরাঙা ডুব দিলো জলে 

জলের দিকে তাকিয়েছিলো কেউ?                

মাছেরা বুঝলোই না জলের ঢেউ!    

কোথাও কি জল ভেঙেছিলো? 

মাছরাঙার ঠোঁটে কি মাছ উঠেছিলো?

আমি সৌন্দর্য দেখি পাখির ডানায়   

ঠোঁটের মাছটা পেটে চলে গেলেই  

মাছের জীবন অন্ধকার,

- আমার নিজেরই ডুবে যাওয়াটা দেখলো না কেউ 

- ডুবে যাওয়ার অনুভূতি, বোঝে কি কেউ?   

  

বিষণ্ণ এক বিকেলে স্মৃতিগুলোকে খুঁড়ছিলাম,  

ঠিক তখনই মনের গভীরে ডুব দিলো কেউ

আর মনে ভাংছিলো কিছু অনুভূতির ঢেউ, 

আমি তাকিয়ে ছিলাম আকাশের দিকে

ওখানে নীলচে একটা আভা  

সূর্যের দিকে কেউ তাকিয়ে থাকে না 

আমরা ভুল করে অন্ধকার খুঁজি জ্যোৎস্নায়

অথচ সূর্য কখনো জ্যোৎস্না দেখেই নি!   

 - হারিয়ে যাওয়া মানুষটা খুঁজে কি কেউ?   

 - হারিয়ে যাওয়ার অনুভবটা, বোঝে কি কেউ?    


সৌন্দর্য সবাই দেখতে পায় না     

সৌন্দর্য সবাই বোঝে না

সৌন্দর্য খোঁজেই বা ক'জনা? 

কেউ অন্ধকারে রাত দেখে   

কেউ দেখে অন্ধকারের সৌন্দর্য  

আর কেউ চাঁদের পেছনে খুঁজে বেড়ায় অন্ধকার, 

আমি আলো খুঁজছি স্মৃতি হাতরে

আর খুঁজছি আলোকিত আঁধার। 


 

০৬ জুলাই, ২০২১


#কবিতা 


আলোকিত আঁধার

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





ভার্চুয়াল ভান

আমরা কি আজকাল খুব বেশি ভান করি?

ভার্চুয়ালে এসে 'মুই কি হনু রে!' একটু তো ভান ধরি 

তুমি ধর কি?

আমি তো ধরিই; 


এই যে নিজেকে জাহির করার একটা মনোভাব!

বাসায়ও কি এমনটাই করি? 

কই, আমার তো মনে পড়ে না বাসায় এ ধরণের কিছু করার কথা! 

কিংবা এ ধরণের কিছু করতাম স্কুলে, কলেজে আর ইউনিভার্সিটিতে 

সে সময় অবশ্য একজন দুজন একটু অন্যরকম থাকতো আমাদের মাঝে, 


কেউ হয়তো খুব ভালো খেলতো 

 - আমরা তাকে পেলে ডাকতাম কিংবা ম্যারাডোনা 


কেউ হয়তো বিজ্ঞান প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাসে এটা ওটা সেটা করতো 

 - আমরা তাকে ডাকতাম আইনস্টাইনের চ্যালা, কিংবা নিউটনের শালা 


কেউ হয়তো কথায় কথায় গান গাইতো, মুখে মুখে সুর তুলতো

 - আমরা ডাকতাম জারি গানের গাতক 

 - তবে কোথাও বেড়াতে গেলেই গানের ফরমাইস, সেটায় ভুল হতো না 


কেউ হয়তো ভালো ছবি আঁকতো

 - আমারা ঠ্যাস মারতাম, পিকাসো আর নয়তো ভ্যান গগ 


কেউ হয়তো ভালো চিঠি লিখতো,

 - গোপনে তার কাছে আমাদের ধর্না, যারা প্রেম করতো

 - আর লিখিয়ে নিতাম আমাদের প্রেমপত্র  


কেউ হয়তো একটু পাগলাটে, উস্কোখুস্কো চুলে হাত বুলাতে বুলাতে কবিতা আউড়াতো 

 - আমরা ঠ্যাস মারতাম রবি বাবু কিংবা নজরুলের চ্যালা 


আসলে এদের প্রত্যেককেই আমরা অন্য চোখে দেখতাম 

যতই ঠ্যাস মারামারি করি এদের আসলে বড্ড ভালোবাসতাম; 


আজকাল ভার্চুয়ালে দেখি একের ভেতর শতেক

নিজেকে জাহির করার এক অভাবনীয় প্রতিযোগিতা, 

আমিই কবিতা লিখছি, আমিই আবৃতিকার 

আমিই  ছবি আঁকছি, আবার আমিই ফটোগ্রাফার  

আমিই গান লিখছি, আমিই সুর দিচ্ছি, আবার আমিই গাইছি গান

আমারই মধ্যে হঠাৎ করেই এত প্রতিভার বিকশিত হলো কিভাবে?

আরে! ওটা আমারর ব্যক্তিগত জীবনে না তো! 

আমি ওখানে সেই আগের ব্যক্তিটিই আছি 

কেবল বদলে গেছি ভার্চুয়ালে 

আর আমার প্রতিভাচ্ছটা ভার্চুয়ালের পুরোটা দেয়াল জুড়ে জুড়ে;


এই ধর এখন 'আমি কি হনু রে' ভান ধরে কিছু শব্দ বুনছি,  

আর মনে মনে মনকলা খেয়ে ফুলে ঢোল হচ্ছি!

আহা! কি সুন্দর একটা কবিতাই না লিখে ফেললাম! 

আর নিজের প্রতিভায় নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম, 

নিজেকে জাহির করছি ভার্চুয়ালে, ভান ধরে 'মুই কি হনু রে'

আসলে উগরে দিলাম কবিতা নামের কিছু দূষিত শব্দস্রাব;


কেউ পড়লো কি পড়লো না 

কেউ বুঝলো কি বুঝলো না

তাতে আমার কি যায় আসে! 

কিছু শব্দ না হয় ছিটিয়েই দিলাম ভার্চুয়াল দেয়ালে

মনের খেয়ালে,   

এগুলো কেবলমাত্র নিজেকে জাহির করার ভান, কবিতা নয়; 

  

এগুলো হয়তো অনেকের জন্য শব্দজট, অনেকের জন্য শব্দস্রাব

সাদা কাগজে কালি পায়ে পিঁপড়া হেঁটে গেলে কিছু এলোমেলো দাগ তো পড়েই  

কেউ কেউ ভুল করে ওটাকেই তুলির আঁচর মনে করে

আদতে ওটা শিল্প নয়,  

কাগজের পাতা ভরে শব্দে শব্দ সেলাই করলে কি আর কবিতা হয়?

কিছুটা তো কবিতা লেখা জানতে হয়, কবিতা বুঝতে হয়   

কাব্য সবার জন্য নয়, কবিতা তো একদমই আমার জন্য নয়।  


০৪ জুলাই, ২০২১


#কবিতা 


ভার্চুয়াল ভান

 - যাযাবর জীবন 


অর্থ দানব

টাকা নামক এক ভয়াবহ দানব সম্পর্ক গড়ে তুলেছে মানুষের সাথে 

এক আজব সম্পর্ক গড়ে তুলেছে সম্পর্কগুলোর সাথে 

অনুভবের সাথে, অনুভূতির সাথে 

মানুষ ধীরে ধীরে পরাস্ত হচ্ছে টাকার কাছে; 


সবাই টাকাকে চেনে অর্থ নামে 

আদতে অর্থ সমস্ত সম্পর্কে অনর্থই আনে 

বন্ধুত্বের সম্পর্কে অর্থ ঢুকে গেলেই বিচ্ছেদ 

আত্মীয়তার সম্পর্কে মুখ দেখাদেখি বন্ধ   

রক্তের সম্পর্কে তো একদম রক্তারক্তি 

অর্থ অর্থই যেন এক মহা অনর্থ; 


অথচ এই অর্থ ছাড়া আজকাল জীবনটাই অচল 

খেতে অর্থ লাগে, লাগে মাথার ওপর ছাদে

অর্থ প্রয়োজন লজ্জা ঢাকতে

অর্থের প্রয়োজন শিক্ষা দীক্ষায় 

অর্থ ছাড়া অচল দৈনন্দিন জীবন যাপন,

ওটা যতই অনর্থ ঘটাক না কেন  

তবুও ওটাই আজকের জীবনের প্রয়োজন;  


অর্থ যেমন সম্পর্ক ভাঙে 

ঠিক তেমনি আজকাল নাকি অর্থ দিয়ে সম্পর্ক কেনাও যায়

আসলে কি কেনা যায়? 

ঐ যে অর্থবানরা ড্রাইভার কেনে, খানসামা, চাপরাশি, বডি-গার্ড!  

আরে! ওগুলো তো শুধুই চাকরি 

কেন তুমি চাকরি করছ না? আমি করছি না? 

চাকরি ছাড়া অর্থ আসবে কোত্থেকে? খাব কি? পরিবারকে খাওয়াব কি?

ওহ! তাহলে সম্পর্ক কেনা যায় না? 

হ্যাঁ, তাও যায় মনে হয়,

ভালোবাসা কেনা যায়? 

তা সঠিক বলতে পারব না 

তবে আজকাল শুনি অনেক অর্থবানরা নাকি কাড়ি কাড়ি টাকার বিনিময়ে রক্ষিতা রাখে, 

ওটাও একটা সম্পর্ক না? রক্ষিতারা ভালোবাসে না? আদর সোহাগ করে না?

হ্যাঁ, করে তো! 

যতদিন যৌবন, যতদিন টাকার ঝনঝনানি ততদিন করে

তারপর? 

তারপর নতুন কার ঘরে! 

কিন্তু ঐ যে সম্পর্ক কিনেছিলো না?

আরে সম্পর্ক কেনাই হয় বিক্রির জন্য

ওটাও এক প্রকার ব্যবসা 

ও টাকার খেলা, তোমরা বুঝবে না; 


টাকায় কি বাবা কেনা যায়? মা?

ভাই বোন? 

স্বামী স্ত্রী, সন্তান? 

উঁহু! ওগুলো টাকায় কেনা যায় না

তবে টাকাই ওগুলো হারায়,

ঐ যে বলেছিলাম না! অর্থই অনর্থের মূল  

অর্থ সম্পর্কগুলোকে নষ্ট করে দেয়, খুব সহসায়

অর্থের ঝনঝনানিতে, স্বার্থের টোকায়;


একদিন অর্থ নামক দানবটা সম্পর্কের সাথে খেলতে খেলতে 

বেশিরভাগ মানুষের মনুষ্যত্বটাই কিনে নেবে 

তারপর মানুষ বিভক্ত হয়ে যাবে দুটো দলে, 

 - মানব আর দানব। 


  

০৩ জুলাই, ২০২১


#কবিতা 



অর্থ দানব  

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা। 






   


কাক কোকিল কাঠঠোকরায় করে কা কা কা

                                                    ক

                                                  কাক

                                               কা কা কা 

                                             কাকের কা কা

                                           কাক করছে কা কা

                                         কাকের কণ্ঠে কা কা কা 

                                      কোকিলের কণ্ঠ কুহু কুহু কুহু 

                                  কোকিল কাকের কণ্ঠে কুহু করে কভু?

                               কোথাকার কোন কাক কৃষকের কাঁঠাল কাঠে

                            কাঠঠোকরার কারুকাজেতে কেদারাতে কাঠ কাটে 

                        কোকিলের কিচ্ছা কাহিনী কহিয়া কৃষ্ণকায় কাকে কাঁদে

                    কোকিলও কৌশলে কাকের কত কাণ্ডই কয় কাঠঠোকরার কানে 

                 কাকা কাকীর কাকের কা কা কানে, কোকিলের কণ্ঠটা কানে কুহুতানে 

              কাকা কাকীর কাঁধে কেদারায় কাত, কোকিলের কুহু কুহু, কা কা করে কাক 

         কাকা কৌতূহলে কা কা কাকের কণ্ঠে, কাকী কৌতুক করে কুহু কুহু কোকিল কণ্ঠে

     কাকা কাকীর কারবারে কাক কোকিলে কষ্টে কান্না করে, কাঠঠোকরা কাটে কাঁঠাল কাঠেরে 

  কাকার কঠিন কণ্ঠ কাকের কানে কষ্টের কারণ, কোকিলও কাকীর কর্কশ কণ্ঠে কুণ্ঠাবোধ করেন 

কাকা কাকীর কণ্ঠস্বরে কাঠঠোকরা কাটে কাঠ, কাঁঠাল কাঠের কেদারা করতে কোকিলরে কহেন কাক। 



০৩ জুলাই, ২০২১


#কবিতা_টটোগ্রাম 


# ক_এর_টটোগ্রাম


 

কাক কোকিল কাঠঠোকরায় করে কা কা কা 

 - যাযাবর জীবন 


ক মানেই কবিতা নয়

ক 

কাব্য

কিভাবে

ক এ কাক 

ক হতে কথা  

ক'তে কবিতা হয় 

ক মানেই কাব্য নয় 

কাব্য মানেই কবিতা নয় 

কাব্য মেঘ আর বৃষ্টিতেও হয়

কদিন আকাশে বড্ড মেঘ করেছে 

কদিন অঝোর ধারায় আকাশ ঝরছে  

কদিন ঝেঁপে নেমেছে কুকুর বেড়াল বৃষ্টি 

কদিন ধরে একাধারে কাকভেজা ঘরে ফিরছি 

কতদিনই বা ভালো লাগে এভাবে ভিজতে বৃষ্টিতে  

কতদিন সূর্যের মুখ দেখি নি? দেখিনি আকাশে নীল 

কোন একদিন ঘুম ভেঙে দেখব সূর্য উঠেছে পূবাকাশে 

কোন একদিন পাখির কিচিমিচিতে ভোরে ঘুম ভেঙে যাবে 

কতদিন ধরেই না ক্রমাগত বৃষ্টিতে মনেতে মন খারাপের মেঘ  

কোন একদিন কবিতার খাতায় একটা ঝুমঝুম বৃষ্টির কবিতা লিখব। 


০৩ জুলাই, ২০২১


#কবিতা 


ক মানেই কবিতা নয় 

 - যাযাবর জীবন   

দু মুখো

দু মুখো সাপের নাম তো সবাই শুনেছ

কেউ কেউ হয়তো দেখেছও 

দু মুখো মানুষ দেখেছ?


দু মুখো সাপের বিষের তাও তো ভেনম আছে

দু মুখো মানুষের কথার বিষের কোন প্রতিষেধক আছে কি?

আমি খুঁজছি; 


আজকাল মানুষের মধ্যে দু মুখো মানুষ প্রায়শই দেখি

এরা মনে এক মুখে আরেক

একটা বলে আরেকটা বোঝায় 

একটা ভাবে আরেকটা করে

একরকম চিন্তা করে আরেকরকম দেখায়

অন্তরে বিষের চাষ মুখে মধুর চাক 

এরা হাসিমুখে ক্ষতবিক্ষত করে কথার খোঁচায়, 

তোমরা এদের দেখেছ   

এদের বসবাস আমাদেরই আশেপাশে 

আমাদের নিজেদেরই মধ্যে 

কে জানে! হয়তো আমাদেরই ঘরে! 


আমি আজকাল প্রায়শই আয়নায় তাকিয়ে থাকি 

নিজেকে খুব ভালো করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখি

শরীরের কোথাও দ্বিতীয় মুখটা উঁকি দেয় নি তো!

আমারই শরীরের কোথাও! 


তোমরাও মাঝে মধ্যে একটু আয়না দেখো। 



০৩ জুলাই, ২০২১


#কবিতা 


দু মুখো

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিট করা। 





 

অপূর্ণ ইচ্ছে

আজকাল আশেপাশে বড্ড এলোমেলো দেখি 

এলোমেলো মানুষ, এলোমেলো জীবনযাত্রা, 

এলোমেলো আবহাওয়া, জলবায়ু

এলোমেলো রাস্তাঘাট, গাড়ি, ট্রাফিক সিগন্যাল

এলোমেলো ভেজাল খাদ্যসামগ্রী  

এলোমেলো দিন এলোমেলো রাত

এলোমেলো ঘুম, এলোমেলো কাজ  

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এলোমেলো আমি; 

  

সবসময় সবকিছু কি আর একদম পারফেক্ট হয়?

পারফেক্ট বলে যদি আদৌ বা কিছু থেকে থাকে,  

কিছু না কিছু খুঁত তো সবকিছুর মধ্যেই থাকে

সবচেয়ে বেশি খুঁত থাকে মনেহয় মানুষেতে

আর আয়নায় দেখা ঐ মানুষটা!

ওটা তো আপাদমস্তক খুঁতে ভরা

প্রচণ্ড এলোমেলো; 


নিখুঁত সুন্দর বলে কিছু আছে কি? 

সৌন্দর্যেরও কিছু না কিছু খুঁত তো থেকেই যায়

সুন্দরের ভেতর কিছু অসুন্দর চুপ করে ঘাপটি মেরে থাকে

খুব হঠাৎ হঠাৎ সামনে এসে এলোমেলো করে দেয় সবকিছু,

আয়নার ভেতরে আলোর প্রতিসরণ দেখি  

প্রতিসরণে একটা মানুষের অবয়ব 

অবয়বের ভেতরে খুব ভালো করে উঁকি দিতেই আলো ভেদ করে কালো

মনের অন্ধকার দেখেছ কখনো?

আয়না দেখ

প্রত্যেকের যার যার একটা নিজস্ব আয়না থাকে 

ওটা কখনো মিথ্যে বলে না; 


মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে এলোমেলো হতে হতে পুরোই এলোমেলো হয়ে যাই

হয়তো রাস্তায় ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকব!

এলোমেলো গাড়িগুলোকে আরও এলোমেলো করে দেব,

কখনো ইচ্ছে করে খুঁতগুলো মেখে মেখে পশু হয়ে যাই

তারপর হয়তো বনে চলে যাব! 

পশুদের কাছ থেকেও না হয় কিছু খুঁত মাখব!  

মাঝে মধ্যে ইচ্ছে করে কালো হতে হতে অন্ধকার হয়ে যাই

অপরাধ জগতের ভয়ঙ্কর কোন অপরাধী হয়ে যাব! 

তারপর ভালোমানুষি লেবাসধারীদের সাথে কিছু না হয় অপরাধ করব;


আমার আসলে কোন কিছুই হওয়া হয় না

মানুষের সব ইচ্ছা আসলে পূরণ হয় না 

মানুষের সব ইচ্ছে আদতে পূরণ হতে নেই

থাকুক না কিছু অপূর্ণতা! 

আমার মানুষ হওয়ার ইচ্ছাটা কি পূর্ণ হবে কখনো? 



০৩ জুলাই, ২০২১


#কবিতা 


অপূর্ণ ইচ্ছে 

 - যাযাবর জীবন  

  

পশু

কখনও কখনও মনে হয়

পশু হয়ে জন্মালে কি ভালোই না হতো!


মানুষগুলো খায় দায় আনন্দ করে 

হাসে, কাঁদে, ঝগড়া করে

বাড়ি, গাড়ি, অর্থ, সম্পত্তি, প্রতিপত্তি, খ্যাতি

মানুষের কত কিছুই না থাকে!  

মানুষগুলোর থেকে সুখী আর কে আছে?

আমি আয়নার দিকে তাকাই, 

 - মানুষের অবয়বে পশুর চেহারা ভেসে ওঠে

 - আয়নায় হিংস্রতা, কুটিলতা, লোভ, লিপ্সা ফুটে ওঠে; 


আচ্ছা! মানুষের অবয়বে কি আছে? 

দুটি হাত, দুটি পা, দুটি চোখ, একটি জিহ্বা! 

বুক চিরলে একটি হৃদপিণ্ড! 

মাথা ভাঙলে হলুদ মস্তিষ্ক! 

সে তো যে কোন পশুরই আছে,

আর জিহ্বা? 

পশু আর মানুষের ওখানেই মনে হয় কিছু পার্থক্য আছে,  

জিহ্বা দিয়ে মানুষ কথা বলে, পশুও বলে তাদের ভাষায়

ক্রমাগত বিষ উগরায়

ওটা দিয়েই মানুষ গীবত করে 

ষড়যন্ত্র করে - কে কিভাবে কার কতটা ক্ষতি করবে, 

আর দেখ! পশু জিহ্বা দিয়ে শুধুই কিছু শব্দ করে, ভাব বিনিময়ে

তাহলে মানুষ আর পশুর পার্থক্য কি জিহ্বায়?

আমি আয়নায় হা করে জিহ্বা বের করে দেখি

হা করতেই গীবতের দুর্গন্ধ বের হতে থাকে 

ভয়ে মুখ বন্ধ করে ফেলি

আর চেয়ে চেয়ে আয়নায় মানুষের অবয়ব দেখি; 


আজকাল কথা বলা কমিয়ে দিয়েছি

একদম বন্ধ করে দিতে পারলে বোধহয় ভালো হতো 

অন্তত মানুষের অবয়বে পশু তো হতাম! 

আচ্ছা! ইশারায় ভাবের আদান প্রদান করলে কি কথার দুর্গন্ধ থেকে বাঁচা যেত! 

 - নাকি ভাবের আদান প্রদানেই মানুষ গীবতের দুর্গন্ধ ছড়াতো? 

মাঝে মাঝে খুব জানতে ইচ্ছে করে 


চারিদিক দেখেশুনে আজকাল বড্ড পশু হতে ইচ্ছে করে  

 - মানুষের অবয়বে

মুক, বধির, নীরব পশু।  



০২ জুলাই, ২০২১


#কবিতা 


পশু

 - যাযাবর জীবন