বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই, ২০২১

শ্রেণিভেদ

কেউ সোনার চামচ মুখে করে জন্মায় 

রূপোর খাটে তুলোর বিছানায় ঘুমায়, 

কেউ মাটির ঘরে জন্মে ঝিনুক খোলে দুধ খায়

মেঝেতে পাটি পেতে ঘুম যায়,   

কারো জন্ম খুব সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরে 

মধ্যবিত্তের টানাপোড়ন দেখে জীবনের স্তরে স্তরে,     

জন্মটা মানুষের হাতে নয়; 


সোনার চামচ ওয়ালারা বাবার ব্যবসার হাল ধরে 

কোটিতে উপার্জন করে, খরচও কোটিতে, 

এদের ইচ্ছে হলেই ভ্যাকেশন, ইউরোপ আমেরিকা ডেসটিনেশন 

বিয়ে শাদী কিংবা যে কোন অনুষ্ঠান মানেই পাঁচ তারকা হোটেল

বাড়ি বলতে সুইমিংপুল ওয়ালা প্যালেস, গাড়ি বলতে কমপক্ষে মার্সিডিজ

অসুখ বিসুখে প্রাথমিক চিকিৎসায় দেশে এপোলো কিংবা ইউনাইটেড

তারপর এয়ার এম্বুল্যান্সে নিদেনপক্ষে সিঙ্গাপুর;  


নিম্নবিত্তরা বুঝ হওয়ার পর থেকেই গায়ে খাটে

সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রমের কামাই দৈনিক শত'তেই থাকে

ওর বেশি খরচ করবে কিভাবে?   

এদের ছুটি কোথায়? একদিন ছুটি মানেই এক রোজ মজুরীর ঘাটা 

বিয়ে শাদী কিংবা অনুষ্ঠান বলতে, দু-চারজন বন্ধুবান্ধব মিলে একবেলা পোলাও-মাংস!  

বাড়ি বলতে আজ এই বস্তি কাল ঐ বস্তি, যেখানে দিনমজুরির সুবিধা  

অসুখ বিসুখে ঝাড়ফুঁক, কবিরাজি, আর নয়তো সরকারি হসপিটাল;   


মধ্যবিত্তের না বাবার ব্যবসা আছে? না গতর খাটতে পারে

ওদের মধ্যবিত্ত জীবনের একটা বড় অংশ চাকুরীর খোঁজে

বেতন হাজারে, খুব ভালো চাকরিতে না হয় লাখে; খরচটা সীমিত রাখতে হয় তাতে  

ছুটি বলতে বাচ্চাদের স্কুল ছুটি, দেশের মধ্যে পাহাড় কিংবা সমুদ্র দর্শন 

বিয়ে শাদী বলতে আত্মীয় স্বজন মিলে কোন কমিউনিটি হলে একটু ধুমধাম

ভাড়া বাড়িতেই জীবন পার, কেউ কেউ ফ্ল্যাটলোনের কিস্তি টানে সারাজীবন

আর অসুখ বিসুখ হলে সরকারি হসপিটাল, নয়তো প্রাইভেট ক্লিনিক; 


সোনার চামচ ওয়ালাদের স্বপ্নে স্বপ্নে বাস  

নিম্নবিত্তের স্বপ্ন পেট পুরে দুটো ভাত  

স্বপ্ন দেখতে হয় না মধ্যবিত্তের,

শ্রেণিতে শ্রেণিতে মানুষের জীবন যাত্রায় কতই না পার্থক্য!  

পার্থক্য শিক্ষা দীক্ষায়, পার্থক্য মানসিকতায়  

পার্থক্য চালচলনে, পার্থক্য কথা বার্তায়; 


অথচ কোন পার্থক্য ছিলো না কারোরই জন্মে

 - সবার জন্মই মায়ের পেট থেকে

কোন পার্থক্য নেই কারো ক্ষুধার মাঝে

 - ক্ষুধা সবার পেটেই লাগে 

শ্রেণিভেদে পার্থক্য হবে না মৃত্যু'তে 

 - সব শবেরই মাটি হবে; 


আমি ধনী

আমি গরীব 

আমি মধ্যবিত্ত 

শ্রেণিভেদের ছাপ নিয়ে ঘুরছে মানুষ,

ঐ পশুগুলোর মধ্যে লক্ষ্য করে দেখ তো! 

পাখি গুলোর মধ্য!

মাছেদের মধ্যে! 

পোকা মাকড়, কীট পতঙ্গের মধ্যে! 

ওদের শ্রেণিভেদ নেই, নেই নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ

নেই হানাহানি, খুনোখুনি

তবুও ওরা পশু কিংবা পাখি

আর আমরা মানুষ, আমাদের আছে মনুষ্যত্ব 

মনুষ্যত্ব! আরে বাবা ওটা শুধু শ্রেণিতে শ্রেণিতে বিভক্ত। 


একদিন আমার খুব স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে করে 

সব শ্রেণির মানুষের জন্ম হবে সোনার চামচ মুখে নিয়ে 

সব শ্রেণির মানুষ খেতে বসবে এক কাতারে 

সব শ্রেণির মানুষের বাসাগুলো হবে এক আঁকারে 

সবার শিক্ষা এক স্কুলে, সবার চিকিৎসা এক হসপিটালে

সবার কবর এক সারিতে,

সেদিন নিশ্চয়ই আর শ্রেণিভেদ থাকবে না! 


আমি মাঝে মাঝে কি সব অলীক স্বপ্নই যে দেখি না! 


১৩ জুলাই, ২০২১


#কবিতা



শ্রেণিভেদ 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন