শনিবার, ৩১ জুলাই, ২০২১

ঈদ মানেই ছেলেদের কষ্টের জীবন

প্রতি বছর ঈদ আসে, বয়ে নিয়ে আসে সবার জন্য আনন্দ 

অথচ দেখ! আমরা ছেলেরা কিন্তু একটা ভয়ানক কষ্টের ঈদ কাটাই

আমরা ছেলেরা প্রতি বছর ঈদের মধ্যে কষ্ট করতে করতে 

একটা ভয়াবহ কষ্টের জীবন কাটাই;


ছেলেরা বলতে কিন্তু সব বয়সের ছেলেরাই

এই যেমন ধর! যখন ছোট ছিলাম! কিছু বুঝতাম না

বাবা মায়ের কাছে নানা রকম বায়না ধরতাম

বন্ধুবান্ধবরা কত সুন্দর সুন্দর বাহারি ঈদের পোশাক কিনে ফেলেছে?

অথচ আমার তখনো কেনা হয় নি, মায়ের কাছে ঘ্যানঘ্যান প্যানপ্যান 

আমার বোনটা কিন্তু এদিক দিয়ে একদম ক্ষেত

কোন বায়নাই নেই যেন তার,

মা সারাদিন রান্নাবান্না করলো, সেটা তার কাজ

আমার ইচ্ছে না থাকলেও সময় মত খেতে হলো, 

সেই বাল্যকাল থেকেই কি কষ্টেরই না জীবন শুরু হলো! 


তারপর কৈশোরে একটু লেজ গজালো

বায়না আরেকটু বাড়লো, এটা দাও ওটা দাও

ঈদের দিন সেই ভোর বেলা থেকে মায়ের অত্যাচার

ঘুম থেকে উঠিয়ে মসজিদে পাঠানো 

তারপর হাবিজাবি কি কি সব রান্না করা!  

আর টেস্ট করার দায়িত্ব! সে তো আমারই 

কেন বাবা! বাসায় তো বোনটাও আছে, সে একটু কাজ করতে পারে না? 

তা না, সে আছে মায়ের সাথে রান্নাঘরে, একদম বাজে কাজে

মা'কে রান্নায় এটা এগিয়ে দিচ্ছে তো ওটা ধুয়ে দিচ্ছে

আর এদের রান্নাঘরের সকল এক্সপেরিমেন্ট, আমার ওপরে!

কি কষ্টেরই না একটা জীবন!


তারপর যৌবন, আমার ততদিনে পাখা গজিয়ে গেছে

বন্ধুবান্ধবের সাথে সারারাত মার্কেটে, চাঁদরাতে 

সকালে বাসায় ফিরতেই মায়ের অত্যাচার শুরু

গোসল কর, খেয়ে উদ্ধার কর, নামাজে যা; এটা, ওটা আরও কত কি? 

আরে বাবা! সারারাত মার্কেটে কাটিয়েছি একটু মায়াও কি হয় না!

ছেলেটাকে একটু ঘুমুতে দাও! তা না;

আর ততদিনে ঘরে একটা বৌ এলো তো হয়েই গেলো! 

ডাবল অত্যাচার সইতে হয় ছেলেদেরই

একদিকে মায়ের রান্নার টেস্টার তো ছিলামই  

এখন বৌ শুরু করলো নতুন নতুন রেসিপির অত্যাচার

একটা পেটে কতটুকু ধরে? এরা বোঝে না?

কি এমন ঘোড়ার ডিমের কাজ করে উল্টে ফেলে?

কাজের মধ্যে তো সেই রান্নাঘরে খুটখাট, আর পদে পদের রান্না,  

আর ছেলেদের কষ্টের জীবন? সে কথা আর বলো না;


রোজার ঈদ তাও কোনভাবে কষ্টেসৃষ্টে পার করা যায়, 

কোরবানি ঈদ এলে?

সেই ভোর বেলা ওঠো, নামাজে যাও তারপর হুজুরের পেছন পেছন দৌড়াও

কোরবানি করার পর একটু বিশ্রাম, তারপর একটু শান্তির ঘুম

আর ঐদিকে? 

মা কিংবা বৌ, এদের তো আর কোন কাজ নেই

কাল সারারাত হাবিজাবি করে রান্নাঘরে সময় কাটিয়েছে

একজন আজকের মাংস রান্নার মশলার তদারকি

একজন সকালের নাস্তার আর কসাইদের খাবার 

এগুলো কোন কাজ হলো?

তারপর কোরবানির পর শুরু হলো কসাইগুলোর ওপর তাদের অত্যাচার 

মাংস এভাবে কাটা যাবে না, ওভাবে কাটা যাবে না, কসাইগুলো অতিষ্ঠ

কষাই তদারকি কোন কাজ হলো! ওটা তো একটা বাচ্চাও করতে পারে!

তারপর আশেপাশে বাড়িগুলোতে কে কোরবানি করে নি তার খবর যেন ওদের নখদর্পণে 

কাজ না থাকলে যা হয়! মানুষের হাঁড়ির খবর নেবার মত ফালতু কাজ করতে পারে ওরাই   

তারপর মাংসগুলো ভাগ কর, যারা কোরবানি দেয় নি তাদের বাড়ি বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা কর

এগুলো কোনও কাজ? তারপর তো আছে শাশুড়ি বৌ এ মিলে চুলোয় রান্না বসানো

যেটা না করলে ওদের পেটের ভাত হজম হয় না,

আমি বাবা এসব আজাইরা কাজে নেই, কোরবানি হয়ে যাওয়ার পর একটা ঘুম দিয়েছি

তোমরাই বলো! ঘুমের থেকে শান্তির আর কিছু আছে?

সে শান্তিটাও আর দিলো কই? চোখটা লাগতে না লাগতে চেঁচিয়ে বাড়ি মাত 

কিংবা ধাক্কাধাক্কি করে ঘুম ভাঙ্গানো, দুপুর তিনটা বেজে গেছে; খেয়ে উদ্ধার করো!

আরে বাবা! অত্যাচারের একটা লিমিট থাকা দরকার,

কাল সারারাত বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে সকালে নামাজ পড়ে 

কোরবানি দিয়ে একটু বিছানায় গা টা লাগিয়েছি, এদের সেটাও সহ্য হচ্ছে না!

এখন গুচ্ছের খাবার খাওয়ার জন্য উঠতে হবে,

আমিও উল্টো চেঁচিয়ে উঠি, কি এমন বিশাল কাজ করে ফেলেছ? 

একটু রান্নাই না হয় করেছ, সে তো প্রতিদিনই কর; তাই বলে ঘুম ভাঙ্গিয়ে খাওয়াতে হবে?

ছেলেদের কষ্টের জীবন? সে মেয়েরা কখনোই বুঝবে না,

না বাল্যকালে, কৈশোরে মা বুঝেছিলো 

না যৌবনে আর প্রৌঢ়ত্বে বৌ বুঝে

না মেয়েরা কিংবা ছেলের বৌরা বুঝবে বৃদ্ধকালে;

পুরুষের জীবন, কষ্টে কষ্টময়! 


বিশেষ করে প্রতিটা ঈদে

অকাজের কাজীগুলো সারাদিন ধরে গুচ্ছের খাবার রাঁধবে, 

আর শান্তির ঘুম থেকে অশান্তি করে ঠেলে তুলে আমাদের দিয়ে টেস্ট করাবে,   

অত্যাচারের একটা সীমা থাকা উচিৎ;

ছেলেদের কষ্টের জীবন? সে কথা আর বলো না।  

  

২১ জুলাই, ২০২১


#কবিতা


ঈদ মানেই ছেলেদের কষ্টের জীবন

 - যাযাবর জীবন 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন