সোমবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২১

দাম্পত্যের স্পর্শানুভূতি

স্পর্শ অনুভব, স্পর্শে অনুভূতি 

কিছু অনুভব ভালো লাগার

কিছু অনুভব ভালোবাসার 

কিছু অনুভূতি ভালোবাসার

কিছু অনুভূতি ঘৃণার,

স্পর্শে অনুভব বোঝা যায়

স্পর্শে চেনা যায় অনুভূতি 

মনে যদি ভালোবাসা থাকে কিংবা ঘৃণা; 


পরস্পর বিরোধী বিপরীতমুখী এই দুটি তীব্র অনুভূতি সবচেয়ে বেশি বোঝে কে জানো? 

দাম্পত্য;


দাম্পত্যে ভালোবাসা থাকলে, তীব্র ভালোবাসা

এরা জড়িয়ে রয় জীবনের শেষ পর্যন্ত 

স্পর্শে, অনুভবে, অনুভূতিতে

ভালোবাসার অনুভূতিতে;


আবার কখনো দাম্পত্যে অবিশ্বাস থেকে ঘৃণা, তীব্র ঘৃণা 

এদের ছাড়াছাড়ি হতে সময় লাগে না  

ঘৃণানুভূতি পরস্পর স্পর্শে, অনুভবে আর অনুভূতিতে

তীব্র ঘৃণার এক বিবমিষা অনুভূতি; 


কিছু অসহনীয় দাম্পত্য ঘৃণা নিয়েও বয়ে যেতে হয় 

কিছু লোকলজ্জা আর লোকভয়ে, কিছু সামাজিক চাপে  

কিছু সন্তানদের দিকে চেয়ে আর কিছু অসহায়ত্বে  

এদের থেকে দুঃখী আর কেও নয়; 


সুখী দাম্পত্যে রাতভর পরস্পর জড়িয়ে থাকে স্বামী স্ত্রী  

শরীরে শরীরে স্পর্শের মাধুর্য ভালোবাসা ছড়ায়,    

অন্যদিকে রাতের পর রাত বালিশ ভেঁজে অসুখী দাম্পত্যের কান্নায়  

দাম্পত্য এদের ক্ষেত্রে শুধুই একটি নাম, দুজন আলাদা বিছানায়।  


৩০ নভেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


দাম্পত্যের স্পর্শানুভূতি 

 - যাযাবর জীবন 




রবিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২১

একটা মেয়ে

একটা মেয়ে সারাদিন 

সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত 

সন্ধ্যা থেকে ভোর 

কোন একদিন আমি হয়েছিলাম তোর;


একটা মেয়ে অবোধ্য

মাঝে মাঝে কুয়াশা 

মাঝে মাঝে ধোঁয়াশা 

বুঝতে গিয়েও বুঝতে না পারার হতাশা; 


একটা মেয়ে ঘুম ভাঙা সকাল

ভোরের সূর্য

শরীরে নরম রোদ মেখে রয়, 

দুপুরের বিষণ্ণতা

বিকেলের মন খারাপ

চায়ের কাপে লেগে রয়, 

সন্ধ্যার গোধূলি 

দিগন্তের কুয়াশা 

রাতের সাথে কথা কয়, 

একটা মেয়ে দিনে সূর্য 

রাতে চাঁদ 

অমাবস্যায় তারা হয়ে রয়;   


একটা মেয়ে আমার ঘরে 

সকালে ঘুম ভাঙায় আদরে 

দুপুরে অভিমানে রাগ করে 

বিকেলে অভিমানে বিষণ্ণ রয়, 

সন্ধ্যায় প্রতীক্ষার প্রহর গুনে

রাতে ঘরে ফিরলেই জ্যোৎস্না হয় 

তারপর রাতভর জড়িয়ে রয় 

কেউ কেউ ভালোবাসা কয়; 


মেয়েটা জানে না   

সে আছে বলেই কুয়াশা কেটে ভোর হয়  

সূর্য উঠে হয় সকাল 

তার অভিমানে আকাশে মেঘ জমে 

কেঁদে ফেললেই বৃষ্টি নামে  

তার হাসিতে আকাশে জ্যোৎস্না হাসে 

মন খারাপে অমাবস্যা 

সে আছে বলেই চার দেয়াল আমার ঘর; 


মেয়েটা জানে না সেই আমার লেখার কলম

আর তার সাথে কাটানো দিনগুলো লেখার খাতা 

মেয়েটাকে কখনো বুঝতেই পারে নি  

সেই আমার কবিতা। 

 

২৫ নভেম্বর, ২০২১


#কবিতা


একটা মেয়ে

 - যাযাবর জীবন 




(ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত।) 






দ্বৈত জীবনের কথা

কখনো শুনেছ কারো দুটো জন্মদিন থাকে? 

আমার আছে,

আরে নাহ!  

আমি দুবার জন্ম নেই নি, 

একটা আসল আরেকটা সার্টিফিকেটের 

এখন সার্টিফিকেটে কেন অন্য একটা তারিখ হতে হয়

সেটা জানা নেই আমার

এটাই সত্য;


কখনো শুনেছ কারো দুটো বিবাহ বার্ষিকী থাকে? 

আরে নাহ! দুটো বিয়ে করে না কিন্তু

কিছু মানুষ দুটো, তিনটে, চারটে বিয়ে করে

তাদের দু, তিন বা চারটে বার্ষিকী থাকতে পারে, 

আমার কিন্তু একটিই বিয়ে 

তবুও আমরা দুটি বিবাহ বার্ষিকী পালন করি বছরে

একটি আসল, খুব অল্প লোকে জানে

আরেকটি লোক দেখানো 

এটাও সত্য; 


কখনো শুনেছ একটা মানুষের দুটো চেহারা থাকে?

আমার আছে

একটা খুব ভালো মানুষী চেহারা, তোমরা সবাই যাকে চেন

আরেকটা খুব কুৎসিত, অন্ধকার, কালো 

ওকে তোমরা কখনো দেখ নি

আমি ঐ চেহারাটা কাউকে দেখতেও দেই নি

ওটা শুধু আমি দেখি,

খুব মাঝে মাঝে তাকে আয়নায় ভেতরে দেখি

মাঝে মাঝে ঘন কালো অন্ধকারে চোখ বন্ধ করে দেখি 

মাঝে মাঝে আমার ভালোমানুষি চেহারার ভেতর থেকে ওকে বের করে আনি 

ওর সাথে কথা বলি, ওর রিপুগুলোকে আয়নায় দেখে আঁতকে উঠি 

তারপর ভয়ে বাতি জ্বালিয়ে থরথর কাঁপতে থাকি,

একটা শরীরের ভেতরে দুইজন মানুষের দ্বৈত এক জীবন পার করছি, 

এটাও সত্য।   


২৫ নভেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


দ্বৈত জীবনের কথা 

 - যাযাবর জীবন 


ছোটবেলা বড়বেলা

ছোটবেলায় দিনগুলোকে অনেক বড় মনে হতো,  

হবে নাই বা কেন?  

সেই কাক ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হতো তারপর স্কুল 

দুপুরে বাসায় ফিরে খাওয়া দাওয়া করে পড়তে বসা 

বিকেলে খেলার মাঠে দৌড়ানো তারপর আবার সন্ধ্যায় বাসায় এসে পড়ার টেবিলে 

রাত দশটা বাজতে না বাজতেই দুচোখ ঘুমে ঢলে পড়তো, 

রাত দশটা থেকে সকাল পাঁচ বা ছয়টা, ছোট চোখে বিশাল ঘুমের ব্যাপ্তি 

বিশাল দিনের ব্যাপ্তি সকাল ছয়টা থেকে রাত দশটা 

ছোট বেলায় আমরা এক একটা দিন কাটাতাম বিশাল, কাটাতাম বিশাল এক একটা রাত

কি আনন্দেই না কেটে যেত খেলাধুলো আর লেখাপড়ায় মাসের পর মাস;


আর এখন! 

কোন দিক দিয়ে সকাল হয়! সকাল হতে না হতেই দুপুর! 

দুপুর হতে না হতেই সূর্য ঢলে পড়ে 

সন্ধ্যা লাগতে না লাগতেই চোখের নিমিষে রাত্র দশটা এগারোটা বারোটা বেজে যায় 

ঘুমোতে যেতে যেতে একটা দুইটা তিনটা 

চোখ ডলতে ডলতে কোনমতে সকাল আটটা বা নয়টায় ঘুম থেকে ওঠা 

ঘুম ঢুলুঢুলু চোখে অফিসে, আর অফিসে ঢোকামাত্র কি যে হয়ে যায়!

কোথা দিয়ে যে দিন যায়! চোখের নিমিষে সন্ধ্যা, ট্রাফিক ঠেলে বাসায় আসতে আসতে রাত

ঘুমাতে যেতে যেতে রাত একটা দুইটা তিনটা

বড়বেলার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে দিনগুলো বড্ড বেশি ছোট হয়ে গিয়েছে

খুব ছোট হয়ে গিয়েছে রাত

রুটিনে বাঁধা জীবন, কেটে যাচ্ছে মাসের পর মাস; 


সময় কিন্তু সময়ের জায়গাতেই আছে শুধু বদলে গেছি আমরা 

ছোট থেকে বড় হতে হতে বদলে গেছে আমদের সময়গুলো  

কোন একদিন যখন ছোট ছিলাম দিনগুলো বড় ছিলো বড় ছিলো রাত, 

আজ বড় হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে দিনগুলো ছোট হয়ে গেলো আর আর ছোট হয়ে গেল রাত;


আজকাল মাঝে মাঝে মনে হয় সেই ছোটবেলায় ফিরে যেতে পারলে কি ভালোই না হত!

মায়ের কোলে, বাবার পিঠে 

খাওয়া পড়ার চিন্তা নাই, সংসার চালানোর ধান্ধা নাই; শুধু লেখাপড়া আর খেলাধুলা

আজকাল বড্ড বেশি ক্লান্ত লাগে

মাথাটা বড্ড বেশি ভার ভার লাগে

সংসারটা চালাতে হবে, সংসারের মানুষগুলোর মুখের আহার, দৈনন্দিন আনুষঙ্গিক খরচাদি 

আহ! মাথায় সবসময়ই একটা চিন্তার ভার 

চিন্তায় চিন্তায় কোথা দিয়ে দিন যায়! কোথা দিয়ে রাত!

দিন ছোট হতে হতে ছোট হয়ে গিয়েছে রাত;      


এভাবে দিনগুলো ছোট হতে হতে একসময় দিন ফুরোবে নিমিষে  

একসময় রাত ছোট হতে হতে রাত রয়ে যাবে ঘুমঘোরে   

একদিন নিমিষে চারিদিকে অন্ধকার নেমে এসে চোখের নিমিষে আমি কবরে।


২৪ নভেম্বর, ২০২১


#কবিতা 



ছোটবেলা বড়বেলা

 - যাযাবর জীবন 


ভাতের মর্ম

এক সানকি ভাত

একটু লবণ ছিটা 

জুঁই ফুলের মত সানকিতে ফুটে থাকা ভাত 

গরম কিংবা পান্তা 

ভাতের মর্ম বোঝে ক্ষুধা ; 


তোমরা ভাত খাও

খেতে গিয়ে ছিটাও

খেতে খেতে ছিটাও

নষ্ট কর, ফেলে দাও

কেন? 

ভাতের অভাব বোঝ নি কখনো; 


ক্ষুধা পেটে একবার খেয়েই দেখ না! 

সত্যিকারের ক্ষুধা পেটে 

যে পেটে ভাত পড়ে নি দিনের পর দিন, অভাবে 

তখন, ঠিক তখনই প্লেট থেকে ভাত খাবে দানা দানা কুড়িয়ে; 


ভাতের মর্ম জানে ক্ষুধা 

অস্তিত্ব নাড়িয়ে দেয়া ক্ষুধা,

স্বপ্নে জুঁই ফুলের মত ফুটে থাকে ভাত

গরম বা পান্তা 

একটু লবণ ছিটা 

ব্যাস।




২৩ নভেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


ভাতের মর্ম 

 - যাযাবর জীবন 


(ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত।) 

 





শব্দরা থেমে গেলে

মাঝে মধ্যে একটা দুটো শব্দ আসে মাথায়

মাঝে মধ্যে একটা দুটো লাইন 

মাঝে মধ্যে একটা দুটো শব্দ চলে আসে কলমের ডগায় 

মাঝে মধ্যে একটা দুটো লাইন

তারপর হাত স্তব্ধ  

কলম স্তব্ধ  

মাথা শূন্য

আমি কখনো কলম কামড়াই, কখনো হাত

কখনো মাথা ঠুকি দেয়ালে

অসহায় দৃষ্টিতে কলমের দিকে তাকিয়ে থাকি মন স্তব্ধ হলে;


মন স্তব্ধ হলে শব্দরা থেমে যায় চেতনায় 

শব্দরা থেমে গেলে স্তব্ধ হয় কলম 

কলম থেমে যাওয়ার বেদনা বোঝে হাত

হাত থেমে যাওয়ার বেদনা জানে খাতা 

কবিতা কাঁদে স্তব্ধ মনের কান্নায়, 

অনেকদিন হয়ে গেছে কলম আঁকে নি শব্দের আঁকিবুঁকি।


২১ নভেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


শব্দরা থেমে গেলে 

 - যাযাবর জীবন 



মানুষ হওয়ার জন্য

মাঝে মধ্যে প্রতিচ্ছবি দেখি আয়নায় 

চমকে উঠি

ওটা আমি নই, আমি নই 

অন্য কেউ; 


দিনের প্রতিচ্ছবিতে ওটা আমি নই আমি নই, অন্য কেউ

রাতের প্রতিচ্ছবিতে ওটা আমি নই আমি নই, অন্য কেউ

আলোতে ওটা আমি নই আমি নই, অন্য কেউ

অন্ধকারে ওটা আমি নই আমি নই, অন্য কেউ; 


সাদা আমির সাথে কালো আমির পার্থক্য বিশাল 

পার্থক্য দিনের আমির সাথে রাতের আমির 

আয়না আমাকে দেখায়, আর প্রতিচ্ছবি 

আমি চমকে উঠি

আঁতকে উঠি

যখনই আয়নায় নিজেকে দেখি 

ওটা আমি নই, আমি নই 

অন্য কেউ; 


রাত আর দিনের পার্থক্য বিশাল

বিশাল পার্থক্য আলো আর অন্ধকারের

যোজন যোজন পার্থক্য মানুষ আর পশুতে,

মাঝে মাঝে আমি কেমন যেন বড্ড পশু বনে যাই

ভেতর থেকে পশুর গর্জন শুনলেই দৌড়ে আয়নার সামনে যাই

রিপুতে মোড়া পশু দেখলেই ঘৃণার চাবুক পড়ে বিবেকে

আয়না মানব শুধরে নিতে চায় নিজেকে  

মনুষ্যত্ব হয়তো এখনো বেঁচে আছে কোথাও,  

মাঝে মধ্যে আয়নায় তাকাতে হয় 

মাঝে মধ্যে নিজেকে নিজে যাচতে হয় 

মানুষ হওয়ার জন্য।


২১ নভেম্বর, ২০২১


#কবিতা 


মানুষ হওয়ার জন্য

 - যাযাবর জীবন 


স্বপ্নে স্বপ্নে তুই

বিছানায় শরীর এলিয়ে দিতেই কোমল একটা আলো এসে পড়লো গায়ে

জানালা দিয়ে রাতের দিকে তাকাতেই দেখি আকাশে চাঁদ 

নারকেল পাতায় পিছলে কাঁচের শার্শি গলে লুটোপুটি খেলছে গায়ে

আমি ঠোঁট বাড়িয়ে দিলাম চাঁদের দিকে

জ্যোৎস্না আমার মুখ চুমতেই কোথা থেকে জানি হিংসুটে মেঘ এসে আড়াল দিলো আকাশে

জানালা'টা পুরোপুরি খুলে দিতেই হালকা হিম বাতাস জড়িয়ে ধরলো আমায় আদর করে

সরসর ভৌতিক শব্দে নারকেল পাতা দুলছে রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে দিয়ে

আমি অন্ধকার'কে চোখ জড়িয়ে ধরতে বললাম,  

চোখে ঘুম বাসা বাঁধলে তবেই না তুই আসবি স্বপ্নে স্বপ্নে।


#কবিতা 


১৮ নভেম্বর, ২০২১


স্বপ্নে স্বপ্নে তুই 

 - যাযাবর জীবন  


এক পলকের দেখা

এক পলকের দেখা 

পলকে পলক ফেলা 

ভালো লাগলো? আবার তাকালো 

তারপর আবার, তারপর আবার  

চোখাচোখি হতেই থাকলো;  


এবার চোখ ইশারা

বুকে সাহস সঞ্চয় 

কাছে আসা, পাশে বসা

আঙুলে আঙুল থেকে হাতে হাত

ঘন নিঃশ্বাস,  

ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াতেই ভালোবাসা 

স্পর্শ থেকে স্পর্শানুভূতি 

হৃদয়ে হৃদয়ানুভূতি 

সময়ের সাথে সাথে বোঝাপড়া

তারপর মিলন কিংবা ক্ষরণ,

পলকে পলক ফেলাটাই কাল হয়েছিলো;


কারো জীবন কাটে অবহেলায় 

কারো ভালোবাসায় 

কারো বোঝাপড়ায়

কারো মানিয়ে চলায় 

কারো বিচ্ছেদে আর কান্নায়,

এক পলকের সেই দেখাটাই কাল হয়েছিলো জীবনে। 


#কবিতা 


১৮ নভেম্বর, ২০২১


এক পলকের দেখা

 - যাযাবর জীবন