ছোটবেলায় দিনগুলোকে অনেক বড় মনে হতো,
হবে নাই বা কেন?
সেই কাক ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হতো তারপর স্কুল
দুপুরে বাসায় ফিরে খাওয়া দাওয়া করে পড়তে বসা
বিকেলে খেলার মাঠে দৌড়ানো তারপর আবার সন্ধ্যায় বাসায় এসে পড়ার টেবিলে
রাত দশটা বাজতে না বাজতেই দুচোখ ঘুমে ঢলে পড়তো,
রাত দশটা থেকে সকাল পাঁচ বা ছয়টা, ছোট চোখে বিশাল ঘুমের ব্যাপ্তি
বিশাল দিনের ব্যাপ্তি সকাল ছয়টা থেকে রাত দশটা
ছোট বেলায় আমরা এক একটা দিন কাটাতাম বিশাল, কাটাতাম বিশাল এক একটা রাত
কি আনন্দেই না কেটে যেত খেলাধুলো আর লেখাপড়ায় মাসের পর মাস;
আর এখন!
কোন দিক দিয়ে সকাল হয়! সকাল হতে না হতেই দুপুর!
দুপুর হতে না হতেই সূর্য ঢলে পড়ে
সন্ধ্যা লাগতে না লাগতেই চোখের নিমিষে রাত্র দশটা এগারোটা বারোটা বেজে যায়
ঘুমোতে যেতে যেতে একটা দুইটা তিনটা
চোখ ডলতে ডলতে কোনমতে সকাল আটটা বা নয়টায় ঘুম থেকে ওঠা
ঘুম ঢুলুঢুলু চোখে অফিসে, আর অফিসে ঢোকামাত্র কি যে হয়ে যায়!
কোথা দিয়ে যে দিন যায়! চোখের নিমিষে সন্ধ্যা, ট্রাফিক ঠেলে বাসায় আসতে আসতে রাত
ঘুমাতে যেতে যেতে রাত একটা দুইটা তিনটা
বড়বেলার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে দিনগুলো বড্ড বেশি ছোট হয়ে গিয়েছে
খুব ছোট হয়ে গিয়েছে রাত
রুটিনে বাঁধা জীবন, কেটে যাচ্ছে মাসের পর মাস;
সময় কিন্তু সময়ের জায়গাতেই আছে শুধু বদলে গেছি আমরা
ছোট থেকে বড় হতে হতে বদলে গেছে আমদের সময়গুলো
কোন একদিন যখন ছোট ছিলাম দিনগুলো বড় ছিলো বড় ছিলো রাত,
আজ বড় হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে দিনগুলো ছোট হয়ে গেলো আর আর ছোট হয়ে গেল রাত;
আজকাল মাঝে মাঝে মনে হয় সেই ছোটবেলায় ফিরে যেতে পারলে কি ভালোই না হত!
মায়ের কোলে, বাবার পিঠে
খাওয়া পড়ার চিন্তা নাই, সংসার চালানোর ধান্ধা নাই; শুধু লেখাপড়া আর খেলাধুলা
আজকাল বড্ড বেশি ক্লান্ত লাগে
মাথাটা বড্ড বেশি ভার ভার লাগে
সংসারটা চালাতে হবে, সংসারের মানুষগুলোর মুখের আহার, দৈনন্দিন আনুষঙ্গিক খরচাদি
আহ! মাথায় সবসময়ই একটা চিন্তার ভার
চিন্তায় চিন্তায় কোথা দিয়ে দিন যায়! কোথা দিয়ে রাত!
দিন ছোট হতে হতে ছোট হয়ে গিয়েছে রাত;
এভাবে দিনগুলো ছোট হতে হতে একসময় দিন ফুরোবে নিমিষে
একসময় রাত ছোট হতে হতে রাত রয়ে যাবে ঘুমঘোরে
একদিন নিমিষে চারিদিকে অন্ধকার নেমে এসে চোখের নিমিষে আমি কবরে।
২৪ নভেম্বর, ২০২১
#কবিতা
ছোটবেলা বড়বেলা
- যাযাবর জীবন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন