বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৪

ভবিষ্যৎ


ভবিষ্যৎ
- যাযাবর জীবন

আমি এখানে
রোদে পুড়ে
ঘামে ভিজে
দিন কাটে দিনের শেষে
অস্থির লাগে মনের ঘরে;

তুই ওখানে অনেক দূরে
এসি ঘরে
ঠান্ডা হয়ে
রাত কাটাস রাতের পরে
ঘুম কি আসে চোখের পরে?

এখন আমাদের মাঝে
দূরত্ব মাইলের
দূরত্ব সময়ের
দূরত্ব অনুভবের
দূরত্ব মানসিকতার;
তবুও হৃদয়ের কোথাও কি সুতোর টান বুঝিস না?
ভালোবাসাবাসির সে দিনগুলোতে দূরত্ব কিন্তু ছিল না।

যতই সরে গিয়েছি আমরা পরস্পর থেকে দূরে
ততই সরে গিয়েছে ভবিষ্যৎ আমাদের থেকে দূরে;

এখন আর তাল মিল লয় খুঁজে কি হবে?
বীণার ছেঁড়া তারে সুর লাগে না।

সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৪


তবুও বাবু
- যাযাবর জীবন

ভালোবাসি কথাটি মুখে বলা হয় নি
মনে বললেই তো হলো;
হলো কি?
যদি ভুল বোঝা হয়
যদি একদম নাই বোঝা হয়
দ্বিধার দেয়াল পাড়ি দেওয়া হয়নি
তবু;
মুখে বলি নি
ভালোবাসি,
তোকে ভালোবাসি
বাবু।

হয়তো বুঝেছিস
নয়তো নয়,
তবু
ফিরে দেখিস নি,
বাবু।

রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৪

মরা নদী বুড়িগঙ্গা

মরা নদী বুড়িগঙ্গা
- যাযাবর জীবন

তুমি বড্ড নতুন
কিংবা আমি অথবা আমাদের সন্তান;
তোমার পিতামহ কিংবা ওনার পিতামহ
কিংবা তারও পিতামহকেই কি প্রাচীন বলা যাবে?
হয়তো;
তার চেয়েও তো প্রাচীন আমাদের সভ্যতা,
আরে তাইতো!
কিন্তু তার চেয়েও প্রাচীন যে আরো কিছু আছে
ভেবেছ কি?
সেটা কি?
ঐ যে অতি প্রাচীন সময়ের উদ্ভিন্ন যৌবনা নদীটি
নাম যার বুড়িগঙ্গা;
ও হো তাই তো?
সভ্যতা গড়ে ওঠে নদী পাড়ে
এ আর এমন নতুন কি কথা?
খুব পুরনো?
আরে হ্যাঁ তাই তো! এটা তো জানা কথা।
তবে এ তো আমার প্রপিতামহ, তার প্রপিতামহ
তারও প্রপিতামহ থেকেও প্রাচীন আপন কেহ,
হ্যাঁ রে ঠিক বলেছিস,
তাই তো, তাই তো!
তার অস্তিত্বের অনুভব কি মনে আসে?
যেমনি করে সন্তান তার বাবা মা'কে
কিংবা দাদা দাদি, নানা নানী আর পূর্ব পুরুষদের ভালোবাসে,
না তো;
কেন নয় রে মূর্খ?
বুড়িগঙ্গাও তো তাঁদের থেকেও প্রাচীন আপন আমাদের
সভ্যতা উঠেছিল যাকে ঘিরে,
আরে, তাই তো!

আপনার অতি আপন সেই প্রাচীন জন
আজ কেন মরা নদী?
কালো হয়ে শ্বাস নেয় ধুঁকে ধুঁকে
তোমাদেরই বর্জ্য দেহে বয়ে।

তার যে এখন মরার দিন ঘনিয়েছে
তোমাদের সভ্যতা কি বেঁচে আছে?

ভালো করে ভেবে দেখ অনুভবের চোখ দিয়ে।



মেঘ বিলাস
- যাযাবর জীবন

ছায়া নেই?
আচ্ছা না হয় কিছু অশ্বত্থ গাছ পাঠিয়ে দেব সূর্যের দেশে
পানি নেই?
সেটাও না হয় কিছু তুলে দেব সাগর সেঁচে।

পাখির ঠোঁটে জলের তৃষ্ণা আকণ্ঠ
দুপুরে নামে অন্ধকার
কাঠফাটা নিম গাছটায় মরে আছে কিছু কাক
কাকচক্ষু পুকুরটা লুকিয়েছে কোথায়?
ছটফটে রাতটাকে আলুপোড়া দেই সূর্যের উনুনে
ঘুম কোথায়?
বেড়াল জিহ্বায় খরচোখেতে লবন চাটে লু-বাতাস;
মাটির মানচিত্র কাঁদে
পানির হাহাকার;
না হয় কিছু মেঘ পাঠিয়ে দেব তোর কাছে
বাষ্পের লিফটে ভরে
এবার তো সিক্ত কর আমায়, হে আকাশ।


শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৪

বিশুদ্ধ ভুল


বিশুদ্ধ ভুল
- যাযাবর জীবন

জীবনে যখনই শূন্যতা খুঁজেছি
তোর বাড়ানো হাতটাকেই খুঁজে পেয়েছি
জীবনে যখনই পূর্ণতা চেয়েছি
শূন্যতা হয়েছে আগ্রাসী;
আসলে ভুল হয়েছে আমারই
ভুল করে ভুল জায়গায়
ভুল সময়ে ভুল হাতটাকে ধরেছি
তাইতো শূন্যতায় পূর্ণ হয়েছি।

বিশুদ্ধ একটা ভুল করেছি
তোকে বড্ড ভালোবেসেছি।



বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৪

জীবনের সিঁড়ি

জীবনের সিঁড়ি
- যাযাবর জীবন

সিঁড়িটা কখনো ভালো করে লক্ষ্য করেছিস?
ঐ যে ওখানে অনেক ওপরে উঠে গেছে
শেষ সীমাটা যেন দৃষ্টি সীমা ছাড়িয়ে
আরো অনেক অনেক দূরে;
ওখানে উঠতে হয় কিন্তু খুব ধীরে ধীরে
ধাপে ধাপে পা ফেলে
এক পা দুপা করে এগিয়ে
ধাপের পর ধাপ পার হয়ে;
বড্ড কষ্ট ওপরে ওঠা
জীবনের ঊর্ধ্বগতি
উন্নতি
কিংবা ওপরে ওঠার পথ।

নামার সিঁড়িটাও তাকিয়ে দেখ ভালো করে
নেমে চলেছে যেন কোন পাতালে
নামাটা খুব সোজা
তরতর সিঁড়ি বেয়ে
কিংবা ধাপগুলো পার হওয়া
লাফিয়ে লাফিয়ে;
সময় লাগে না নেমে যেতে
নিম্নমুখী পথ বেয়ে
জীবনের
অবনতির
কিংবা পতনে।

ওপরে ওঠার স্বপ্নের সিঁড়িতে সবাই পা রাখে
কেও ধাপ ভেঙ্গে উঠে আসে অল্প কিছুদূর
কেও মুখ থুবরে পরে কিছুদূর এসে
কেও বা চলে আসে অনেকটা পথ
সিঁড়ির ধাপগুলো পার হয়ে;
কেও ধীরে ধীরে
ধাপে ধাপে পা ফেলে
কেও খুব তাড়াহুড়ায়
লিফটে চড়ে
বাকি সবাইকে রেসের দৌড়ে পেছন ফেলে।

নিচে নামার সিঁড়িতেও পা রাখতে হয় সবাইকেই
জীবনের কোন না কোন সময়ে এসে
উত্থানের সাথে পতন, এ যে নিয়তিতেই লেখা আছে;
এক পা, দু পা করে এগিয়েছিল যে ধাপে ধাপে
সাধারণত সে নামে ধীর গতিতে
তার ওপরে থাকার নির্দিষ্ট সময়সীমা পার হয়ে গেলে;
খুব তাড়াহুড়োতে যে ওপরে উঠেছিল লিফটে করে
নামার সিঁড়ি পায় না পায়ের তলে
একবারে আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে ধপাস
সকল মানুষের জন্য শিক্ষা, নিয়তির পরিহাস।



মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৪

লাল অথবা নীল

লাল অথবা নীল
- যাযাবর জীবন

লাল রঙটা সবসময়ই খুব প্রিয় ছিল তোর
কৃষ্ণচূড়া, শিমুল কিংবা পলাশ
অথবা টকটকে লাল গোলাপ
আর নয় তো লাল ঠোঁটের সবুজ টিয়ে;
ফুলগুলো তুই রেখে দিয়েছিস সাজিয়ে
টিয়াটাও তোর ঘরে
হয়তো আরো সবুজ সতেজ হয়ে
শুধু লালটুকু দিয়েছিলি আমায়
চুলচেরা ভাগ করে।

আমি এখন রঙ দেখি না
ফুলে সুগন্ধি হয় বলে শুনেছি
বর্ষায় নাকি সবুজে সাজে প্রকৃতি
তোর কাছ থেকে লাল রঙ পেয়েছি
প্রেমের ভাগাভাগি;
বেদনার রঙ নাকি নীল
হিসেব মেলাতে পারে না
এক জীবন্ত ফসিল।



সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৪

পার্থক্য

পার্থক্য
- যাযাবর জীবন

পার্থক্য দেখার, বাহ্যিক গড়নে
পার্থক্য বাহ্যিক, দু রকম দুজনে
পার্থক্য লিঙ্গে, নারী ও পুরুষে
পার্থক্য মানুষে, সাদা ও কালোতে
পার্থক্য অনুভবে, প্রেম ও বিরহে
পার্থক্য চোখের, খালি আর ঢাকা রঙ্গিন কাঁচে
পার্থক্য দৃষ্টির, সু আর কু তে
পার্থক্য দৃষ্টিভঙ্গির, কে কেমন চোখে দেখে
পার্থক্য আমাদের, তো'তে আর আমা'তে।

পাত্র আমার হাতে নেই
নেই পানীয়
আছে অন্য কারো হাতে
তৃষ্ণায় জল ঢালে কে?
ভালোবাসা ছেড়ে গেছে
শুধু অনুভব ঘিরে আছে
ভালোবাসার মানুষটিও আজ অনেক দূরে
তবু হৃদয় পোড়ায় কে?

আছে আকণ্ঠ তৃষ্ণা
পানের কিংবা ভালোবাসার
তোর
আমার
কিংবা দুজনারই
পার্থক্য যেখানেই থাকুক না কেন।


রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৪

কালো হব


কালো হব
- যাযাবর জীবন

লেজে পা দিতে কে চায় বল?
সাপের কিংবা তোর;
আমিও হয়তো পাগল
না হলে কান চুলকেছিলাম কেন তোর লেজে
গোখরো ফণাতেও কি এত বিষ আছে?
আবেগ তো প্রেমেতেই থাকে তুঙ্গে
ঝরুক না কিছু বিষ তার থেকে
কামড়ে কিংবা ছোবলে
তোর কিংবা সাপের;
নীল তো এমনিতেই হয়ে আছি
এবার না হয় কালো হব।

এবার বড্ড গরম পড়েছে রে
দেখিস না আগুনে পুড়ছে তোর কামুক প্রেমিক?
কেওরে হুড়কো তুলে পেতে দে তোর গরম আঁচল
ঠান্ডা হয়ে নে শীতল পাটিতে শুয়ে
কিংবা সাড়া দিয়ে প্রেমিকের কাম আহ্বানে
পুড়লোই না হয় গরম, আরেকটু ঘামে;
কাম ঝরে গেলে
শীতল পাটিতে ক্লান্ত জড়াজড়ি ঘুমিয়ে পড়ার আগে,
খুব ভালো করে একবার প্রেমিক দেখে নিস
তার পর না হয় আরেকবার বিষ ঢেলে দিস;
নীল তো এমনিতেই হয়ে আছি
এবার না হয় কালো হব।



শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৪

দিনরাত্রির প্রহর


দিনরাত্রির প্রহর
- যাযাবর জীবন

সময় মধ্যরাত
সবাই ঘুমিয়ে
জেগে আছি তুই, আমি আর রাত্রি
আর জেগে আছে গা ছমছম অন্ধকার
একটানা ঝিঁঝিঁ ডাক
খুব মাঝে মাঝে
দূর থেকে ভৌতিক শব্দে ডেকে ওঠে মদনটাক
আজকালকার যুগে কে আর চেনে সে ডাক?

অনেক দূর থেকে ভেসে আসে
লোহার পাতে ঘরর ঘরর
ঘষটে গড়ানো মালগাড়ীটার ক্লান্ত চলা
মাঝে মাঝে রাত্রির শেষ প্রহরে শুনি
কু ঝিকঝিক হুইসিলে
অস্থির রেলগাড়িটার দৌড়ে চলা;
যেন মনে করিয়ে দিতে, চলাই জীবন
তুই হীনা কেমন থমকে আছে দেহযন্ত্রখানা।

বুকের খাঁচায় কান পেতে শুনেছিস কি কখনো
অপেক্ষার দীর্ঘশ্বাস?
না হয় আরেকটু গভীরে কান পাত,
একটু শুনে যা প্রায় থেমে আসা হৃদপিণ্ডের
ধিমা ধুকপুক আওয়াজ;
তোকে ছাড়া বড্ড বেয়াড়া হয়ে গেছে হৃদযন্ত্রটা।

আসলে মধ্যরাত বড় খারাপ সময়
এ সময় কারো জেগে থাকতে নয়
তোর
আমার
কিংবা মন খারাপের রাতের;
শেয়ালের ডাকে ভর দিয়ে গড়িয়ে চলুক রাতের প্রহর
চল ঘুমিয়ে পরি তুই আমি আর রাত।

নতুন সকালে নতুন করে
না হয় আবার আমরা দুজনার হব
তুই আর আমি মিলে
আর না হয় আবার নতুন দিনে নতুন করে ভাসব
নতুন অপেক্ষা আর নতুন প্রতীক্ষার প্রহরে
দিনগুলো না হয় আবার শেষ হবে নতুন রাতের আঁধারে;
দু জন দুজনকে মনে করে
পড়ে থেকে দু ভুবনে;
এভাবেই তো কেটে যাচ্ছে আমাদের
আশা আর নিরাশার দিনরাত্রি।



ভালোবাসার কথা


ভালোবাসার কথা
- যাযাবর জীবন

কতদিন হয়ে গেছে
দেখা হয়নি তোর সাথে
কাব্যের কথা হয়নি কবিতার সাথে
মুখোমুখি বসে, হাত হাত রেখে
আগের মত ঠোঁট ছুঁয়ে ভালোবেসে।

কতদিন হয়ে গেছে
বৈঠা বাওয়া হয়নি শুকনো নদীতে
নৌকা ভাসে নি পলি জমে গেছে
হয়নি পাল তোলা লিলুয়া বাতাসে;
দেখা হয় নি কতদিন উঁকি দিয়ে মনের ঘরে
হয়তো এতদিনে মন নদীটাই মরে গেছে
তোর বিহনে;
তবু তোর কথা এখনো কেন মনে পড়ে
কি জানি হয়তো, যতদিন শ্বাস ততদিন মনেতে আশ রবে
তোরে একবার দেখার তরে।

নাই বা হলো কবিতার সাথে কাব্যের মিলন
প্রেম তো হয়েছিল দুজনে মিলে;
কখনো জ্যোৎস্নার আঁধারে
কখনো ঝুম বৃষ্টির স্নানে
কখনো রোদে পুড়ে ঘামে ভিজে
প্রেমেতে লুটোপুটি দেহের ভাজে ভাজে
ভালোবেসে আর ভালোবেসে;
তাইতো এখনো কান্না পোড়ে
তাইতো এখনো ধোঁয়া উড়ে
মনের ঘরে
তাইতো এখনো কবিতা কথা বলে
কাব্যের কলমে।

মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৪

বাস্তবতা



বাস্তবতা
- যাযাবর জীবন

স্বপ্নে স্বপ্নে দেখি তোরে
ঘুম চোখে চেয়ে
ঘুম চোখে হেঁটে চলি প্রান্তর বেয়ে;

অনুভবে ধরি তোরে
বুকে জড়িয়ে
স্পর্শে পাই তোকে, তুই হৃদয়ে;

চোখ খুলে সূর্যটা বড় চোখে লাগে
বাস্তব বড় কঠিন জীবনের ভাজে।

না হলো দেখা জ্যোৎস্না
না কিরণ
না তোকে
দু চোখ চেয়ে;

না হলো ধরা চাঁদ
না সূর্য
না তোকে
হাত বাড়িয়ে;

রেলের সমান্তরাল পাত ধরে তুই হেঁটে যাস
আমি জ্যোৎস্না ধরি তিমির আঁধারে
জীবন হারিয়ে দেয় স্বপ্নকে, জীবন থেকে।


সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৪

সুখের অসুখ


সুখের অসুখ
- যাযাবর জীবন

সুখ কি?
অজানা কোন অসুখ?
কি জানি? কে জানে?

কখনো মনে হয় সুখ যেন
কু ঝিঁক ঝিঁক শব্দে
রেলের চাকায় ঐ সুদূরে মিলিয়ে যাওয়া
কিংবা
কখনো ধু ধু বালিয়াড়ি ধরে
অজানা গন্তব্যে হারিয়ে যাওয়া ।

কখনো সুখ যেন মনে হয়
প্রখর সূর্যে দূর আকাশে
রংধনুর রঙের খেলা
কিংবা
কখনো মধ্য দুপুরে
আকাশ জুড়ে তারাদের মেলা।

আবার কখনো মনে হয় সুখ হলো
অমাবস্যার রাতে
পূর্ণিমার চাঁদের আলোক জ্বলা
কিংবা
দিনের বেলায় সবুজ ঘাসে বিছিয়ে থাকা
সারি সারি জোনাক মালা।

কখনো সুখ যেন
ঘন মেঘের আড়ালে
এক ফালি সূর্যের হাসি
খুব মাঝে মাঝে ঝুম বৃষ্টিতে একলা ভিজতে ভিজতে
মনে মনে তোকে বলা "বড্ড ভালোবাসি"।

কখনো মনে হয় সুখ যেন
দুঃখের ডানায় উড়িয়ে দেওয়া
কালো রঙ এর ঘাসফড়িঙ
কখনো যেন শূন্য মুঠোতে চেপে ধরা
স্বপ্নে পাওয়া অলৌকিক এক সোনার হরিণ।

সুখ তবে কি?
অজানা এক মনের অসুখ
নাকি অচেনা কোন ভাইরাস
কিংবা কোন এক দূরদেশে বসবাসরত তুই
নাকি শুভঙ্করের বিরাট ফাঁকি।

সুখের বাস কোথায়?
সূর্যের আলোক ঘরে
নাকি অমাবস্যার ঘন অন্ধকারে।

সুখ কি?
জানি না,
বড্ড জানতে ইচ্ছে করে।

আমাকেই মনে হয় সুখের অসুখে ধরেছে।


রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৪

একসাথে



একসাথে
- যাযাবর জীবন

প্রেম প্রেমের জায়গায় থাক
বয়স বয়সের জায়গায়
জীবন জীবনের জায়গায়
মরণের কথা না হয়
নাই ভাবলাম;
তুই আর আমি
আমি আর তুই
আকাশ আর নীল
নদী আর ঢেউ
তবুও তো প্রেম করলাম।

দুজনে ভালোবেসে
কত যুগ একসাথে
পার করে দিলাম
মনে পড়ে কি?
আমি ভুলে গেছি
এইটুকু জানি
তুই ছাড়া আমি
আমি ছাড়া তুই
নাহ, ভাবতে পারি না রে
তার থেকে চল
যতদিন আছি
এক সাথে রই;
মিলে মিশে
মিলে মিশে
তারপর দুজনে মিলে
একসাথে মাটিতে মাটি হই।



কেমন আছিস কোথায় আছিস


কেমন আছিস কোথায় আছিস?
- যাযাবর জীবন


কতদিন দেখা হয়নি তোর সাথে
কেমন আছিস তুই?
ইচ্ছে করে জানতে আমার
একলা যখন রই।

কেমন আছি তুই রে এখন
কেমন আছিস তুই
কোথায় থাকিস তুই রে এখন
কোথায় থাকিস তুই?

সেদিনের কথা আজো মনে পড়ে
গিয়েছিলি আমার ছাঁদে
পুরো ছাঁদ হেঁটে গা পুড়িয়েছিলি
তপ্ত দুপুর রোদে;
চড়া রোদে তোর গা পুড়েছিল
মন পুড়ে ছাই আমার
তপ্ত ছাদে তোর পা পুড়েছিল
ফোস্কা পড়েছিল আমার;
চৈত্র মাসের দুপুর ছিল
মেঘ ছিল না তত
আগুনের হল্কা সেদিনও ছিল
ঠিক আজকের মত।

চৈত্র মাসের দুপুর বেলায়
মন কেমন করে
কোথায় আছিস তুই
বড় জানতে ইচ্ছে করে।

কেমন আছি, কোথায় আছি
কখনোই জানতে চাসনি তুই,
আমার যে বড্ড জানতে ইচ্ছে করে
কেমন আছিস তুই?


শুক্রবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৪

বৈশাখের প্রত্যাশা

বৈশাখের প্রত্যাশা
- যাযাবর জীবন

মধ্য দুপুরের অস্থির গরম
রোদে পোড়ে তোর মুখখানি
ভেতরে পোড়ে আমার
সূর্যের সাথে আড়ি।

অস্থির তুই
ঘামে ভেজা
অস্থির আমি ছাতা হাতে
মেঘের সাথে আড়ি।

তপ্ত দুপুর
তপ্ত মাটি
তপ্ত তুই
তপ্ত আমি
তপ্ত প্রকৃতি;
কাকগুলো বসে আছে ঝিম মেরে
কৃষ্ণচূড়া বৌ সেজে লাল মেখে
আমি তোকে দেখি অস্থির গরমে
চাতক চোখে চাই আকাশ পানে;
অপেক্ষায় তুই
অপেক্ষায় আমি
অপেক্ষায় সবাই মিলে
একটি বৈশাখী ঝড়ের আগমনের।


বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৪

আপন নিবাস


আপন নিবাস
- যাযাবর জীবন

"আপন নিবাস" - 'আপন ঘরে' 'আপনজনদের' নিয়ে 'আপন বসবাস'।
কোন এক আপন সময়ে আপন চাকচিক্যে আপন মানুষগুলো নিয়ে
আপনদের আপন বাসস্থান ছিল স্বপ্নের সুন্দর সময়ে - 'আপন নিবাস' ঘিরে;
এখানে বসবাস করত সব আপন লোকজন, বাবা মা স্ত্রী সন্তান ভাই বোন
সবাই মিলে একই পরিবারের ছিল পরিজন - একান্নবর্তী ছিল যার নাম, সবাই ছিল সবার প্রিয়জন;
আত্মায় আত্মায় পরস্পরের আত্মীয়, ছিল তারা পরস্পরের আত্মার আপন।

বড্ড মধুর ছিল সে দিনগুলো, মধুর সে সময়
সুখ সুখ আর সুখ, ছিল বড্ড সুখের সময়।
'স্বার্থ' নামক এক কাল ভাইরাস আঘাত হেনেছিল খুব হঠাৎ করেই
কোন এক গ্রহণের কালে, পরিবার পরিজনে;
মহামারী দেখা দিয়েছিল সেদিন থেকে আত্মীয় স্বজনে;
ছোপ ছোপ লোভের কালো রঙের দাগে ভরে উঠেছিল আপন নিবাসের দেয়ালগুলো
আদতে স্বার্থের কালো চকে আপন মানুষগুলোর মনের দেয়ালে বিভাজনের দাগ ফেলেছিল
লোভ আর স্বার্থের নখদন্ত ক্রমাহ্নয়ে চৌগুণ চক্রবৃদ্ধি হারে আপনদের ঘিরে বেড়ে চলেছিল;
কেও কারো চেয়ে কম কিসে?
স্বার্থের ভাইরাস আত্মাকে পিষে
মনের ভেতর লোভের কালো দাগ ঘষে
ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে রক্তে রক্তে মিশে;
সেদিন থেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছিল সব আপনার জন
'আপন নিবাস' হতে;
সূর্যালোকিত আপন নিবাসের আকাশে নেমে আসা স্বার্থের কালবৈশাখী ঝড়
আপন সম্পর্কগুলো ভেঙ্গেচুরে খানখান করে
তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে সেদিন থেকে।

কত মধুরই না ছিল একসময় সম্পর্কগুলো
'আপন নিবাস' - আপনার ঠিকানা ঘিরে সব পরিবার পরিজন
বাবা, মা, ভাই, বোন আর আত্মীয় স্বজন;
স্বার্থ ভাইরাসের কবলে ক্রমাগত ভাঙছে সংসার
টুকরো আর টুকরোতে বিভাজ্য হয়ে আজ খণ্ড বিখন্ডিত পরিবার।

এখন আর 'আপন নিবাস' আপন নেই
আসলে আপন নিবাসের আপনজনরাই সেই আগের মত আপন নেই
তবুও কিছু মানুষ এখনো স্বপ্ন দেখে
আপন নিবাস এখনো দাঁড়িয়ে আছে তার স্ব-স্থানে, তাঁদের মনের ঘরে
সেই আগের মত, আপনদের ঘিরে।

দিবাস্বপ্ন তো মানুষই দেখে
'আপনদের ঘিরে'
'আপন ঘরে'
কিংবা "আপন ঘরের"।


বুধবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৪

সমর্পণ


সমর্পণ
- যাযাবর জীবন

কবেই বা বারণ শুনেছিলি?
সেই প্রথম দেখার দিন থেকে
আজ বুঝলি তো, কানে ছিলি খাটা;
কবেই বা সোজা পথে চলেছিলি?
পরিচয়ের পর থেকে
আজ দেখলি তো, পথটাই ছিল বাঁকা।

চুমু খেতে বারণ করেছিলাম বারে বারে
সেই প্রথম দেখার দিন থেকে
আজ অনুভব হলো তো, সর্প দংশন?
বলেছিলাম তোকে নিষ্কাম চুমু বলে কিছু নেই
দম্ভোক্তি তোর মনে আছে?
কামেই নাকি তোর ভালোবাসার সমর্পণ।

আমিও সত্যিই চেয়েছিলাম তোকে-
কামেতে নয়, প্রেমেতে।


সোমবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৪

পরাজিত


পরাজিত

- যাযাবর জীবন

এগিয়ে যায় সময়
সময়ের সাথে জীবন
পাল্টায় সম্পর্ক
সম্পর্কের ধরণ;
মানুষ মেনে নেয় পরিবর্তন
এগিয়ে যায় সময়ের সাথে।
অল্প কিছু মানুষ থেমে থাকে
বন্দী হয়ে
সময়ের কিংবা স্মৃতির কারাগারে
নষ্ট সম্পর্কের দরজায় কড়া নাড়ে
জীবনের কাছে হেরে গিয়ে
বারে বারে;
হয়তো ফিরে পেতে হারানো সময়
কিংবা পুরনো সম্পর্ক;
ঘোরে পাওয়া মানুষ কি একে বলে?
নাকি পরাজিত।

রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৪

স্পর্শের মুহূর্ত



স্পর্শের মুহূর্ত
- যাযাবর জীবন

আঙুল ছোঁয়ালেই স্পর্শে তুই
স্পর্শে শিহরণ
এটাও নাকি ভালোবাসারই একটা ধরণ
প্রণয়, ভালোবাসা কিংবা প্রেমের প্রকরণ
অধর ওষ্ঠে মিলে থাকে দেহতে দেহ স্পর্শে
প্রেমের স্পর্শে ভালোবাসা হাসে
সকাল দুপুর কিংবা রাতে;
মুহূর্তের ছোঁয়ায় মুহূর্তের ভালোবাসা
ভালোবাসার মুহূর্তে অন্য কিছু আশা
আশাতে নিরাশা কিছু টুকরো ভুল
মুহূর্তে ভুল মুহূর্তে বিচ্ছেদ
স্পর্শের ভালোবাসা মুহূর্তে কাঁদে
সকালের প্রেম বিচ্ছেদ রাতে।

কি মধুর দিনগুলোই না ছিল আমাদের
নানা রঙের মুহূর্তের
নানা রকম স্পর্শের
ইদানীং আর স্পর্শে পাই না তোকে।


মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০১৪

সমস্যা


সমস্যা
- যাযাবর জীবন

জীবনটাকে যদি গাছ ধরি
সমস্যাগুলো স্বর্ণলতা
ঝুলে থাকে ডালে ডালে;

জীবন যখন বৈশাখী ঝড়
সমস্যাগুলো সহস্রধারায় নেমে আসে
বৃষ্টি হয়ে টিনের চালে;

জীবন যদি হয় বহমান নদী
সমস্যাগুলো কচুরিপানা
একসাথে মিলেমিশে ভাসে;

আদতে কঠোর বাস্তব জীবনে
সমস্যাগুলো প্রেমিকার আবেশে গলা ধরে
আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকে।

জীবনটা চাঁদ হলে খারাপ হতো না
পূর্ণিমায় টুকি দিয়ে অমাবস্যায় মুখ লুকাতাম।

চৈত্রের অস্থিরতা


চৈত্রের অস্থিরতা
- যাযাবর জীবন

শীত পুড়ছে ধুলো উড়ছে ফাগুন শেষে
গরম উড়ছে লু হাওয়ায় চৈত্র রাতে
অন্ধকারের আস্তর পড়ে আছে চাঁদের ওপর
অমাবস্যার রাতে জ্যোৎস্না খোলেনি চাদর
আগুন লেগেছে বসন্তের গায়ে
অপেক্ষার প্রহর গোনে বৈশাখী ঝড়;
কষ্ট ছাড়া যদি অশ্রু ঝরাতে পারিস
কিংবা মিঠেপানির কান্না
অথবা অমাবস্যায় জ্যোৎস্না
আরো না হয় সহজ করে দিলাম তোকে-
চুপি চুপি কানে কানে ভালোবাসার কথা বলে যাস
আমার সাথে কাঁটার বিছানায় শুয়ে;
আর না হয় -
দূরত্বতেই বাঁধা হলো ভালোবাসার ঘর।

চৈত্রের অস্থির গরমে, একটি অস্থির প্রশ্ন
এলোমেলো করে তোলে, মন অস্থির করে;
খুব প্রায়ঃশই জিজ্ঞাসা করি নিজেরে নিজে
ভালোবেসেছিলাম যাকে একদা ভুলে
সে কি মানুষ না মৌন-বৃক্ষ ?
ভাবতে হবে, নতুন করে।