বৃহস্পতিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৯

প্রেমকাহন



প্রেমকাহন
- যাযাবর জীবন


প্রেমের শুরুটা স্নিগ্ধ
সকালের মিষ্টি রোদে অবগাহন
ঠোঁটে ঠোঁটে পাকা কমলার কোয়া
দাঁতে মাখন

ভাদ্রে প্রেমে পাক
কমলার কোয়া থেকে পাহাড় চুড়া
পাহাড় থেকে নদী বেয়ে আখক্ষেতে পানি
আবিষ্কারের নেশায় প্রেমিকা ও প্রেমী

নিরামিষ প্রেম বলে কিছু আছে নাকি?
প্রেমিক প্রেমিকা কবেই বা ছিল নিরামিষাশী?
প্রেমে জিহ্বে জিহ্বে মাংস চাটার প্রতিযোগিতায় কে নামে নি?
কামে ঘাম
জিহ্বে লবণ
ভেজা শরীর যখন তখন

ব্যর্থ প্রেম কাগজে কলমে কবিতা আঁকে
ভালোবাসার জয় কিংবা ক্ষয়
প্রেমিক প্রেমিকার রানের ফাঁকে ...............






খুব মনে হয়




খুব মনে হয়
- যাযাবর জীবন


যখন তোকে দেখতে ইচ্ছে হয়
যখন তোর কথা খুব মনে হয়,
ইচ্ছে করে
খুব ইচ্ছে করে
ভাঙতে সময়;

আমার যদি একটি ডানা থাকতো!
সময় ভেঙে অতীতে উড়ে যাওয়ার,
হাজার বার
লক্ষ বার বলতাম,
আবার শুরু করি চল
ভালোবাসি, ভালোবাসি বল;

অণু অণু পল পল আমাদের কাটানো সময়
খুব মনে হয়
আর খুব মনে হয়;

স্মৃতিগুলো কেন এমন হয়?




জগাখিচুড়ি



জগাখিচুড়ি
- যাযাবর জীবন


কিছু কথা তুই বলেছিলি
কিছু বুঝে নিয়েছিলাম আমি
তারপর প্রেমের জগাখিচুড়ি

আজকাল তুই একদম চুপ
আমি নৈঃশব্দ্যের গান শুনি
রাতের আকাশে চাঁদ একদম একা

আচ্ছা! তুই কি আগের মত জ্যোৎস্না দেখিস?
চাঁদে ভিজিস ছাদে?
এখনো ঠোঁট উল্টাস অভিমানে?
তোর বারান্দার হাস্নাহেনা গাছে ফুল ফুটেছে?
জোনাক ওড়ে ছাদের কামিনী ডালে?
ভোরের বেলায় শিউলি কুড়াস? মালা গাঁথবি বলে;

জানিস, আমার চোখ নির্ঘুম রাত্রি
চোখে স্বপ্ন আসে না অনেক দিন হলো
চাঁদ দেখলেই ঘরে ঢুকে যাই
জ্যোৎস্না হলে কেমন অস্থির লাগে
ফাঁকা বিছানায় হাত চলে যায় অজান্তে আনমনে,
যখন খুব বেশী অস্থির লাগে তখন তোকে দেখি স্মৃতি খুলে খুলে;

যখন তুই ছিলি
প্রতিদিন তোকে দেখতাম সময় সুযোগ করে,
এখন তুই নেই
তবুও প্রতিমুহূর্তে তোকে দেখি স্মৃতি ভেঙে ভেঙে;

আচ্ছা! তুই কি এখনো আগের মতই আছিস
নাকি আরও বেশী সুন্দর হয়েছিস?
দেখিস, একদিন ঠিক তোর কাছে পৌঁছে যাব তারা গুনে গুনে।



জায়া ও পতি



জায়া ও পতি
- যাযাবর জীবন


পাশাপাশি দুটি শরীর পড়ে আছে বিছানায়,
দুটি নরনারী
সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী ,
রাত গভীর হতেই হাতে হাত
স্পর্শে শরীর,
প্রেম থাকুক কিংবা নাই থাকুক কাম তো থাকবেই
শরীর বলে কথা!
হাজার হোক প্রাণী তো!
মানব আর মানবী;

বিছানায় রমণরত দুটি শরীর
জড়াজড়ি দম্পতি,
ওপরে চড়ে আছে স্বামী
নীচে চোখ চেয়ে দেখে চর্বির দলা
মন কল্পনায় কোন এক সুন্দরী
ঝাপাঝাপি,
হিপোক্রেসি,
উঁহু! সুখী দম্পতি,
স্ত্রী ওপরে চেয়ে দেখে ভুঁড়িওয়ালা
মানস চোখে ব্যায়াম-পুষ্ট অন্য কোন পুরুষ
জড়াজড়ি,
হিপোক্রেসি,
উঁহু! আদর্শ জায়া ও পতি;

বিছানা জুড়ে ঘুণপোকা
ঘুণপোকা কুড়ছে সম্পর্ক
জায়া ও পতি, দুজনাই পরকীয়া ভাইরাসে আক্রান্ত,
ঘরে ঘরে
ঘরে ঘরে,
ধ্যাত! এ আর নতুন কি?

ভালোবাসার ব্যাকটেরিয়া যখন দাম্পত্যে জমাট,
সেখানে ভাইরাস কোথায়?
আর নয়তো?
বিছানায় ঘুণপোকা

যেই না দাম্পত্যে পরকীয়া ভাইরাস ঢুকে পড়লো
তো সংসার ছারখার
বিবমিষা রমণ শেষে অন্ধকার বিছানা
জায়া ও পতি, একা একা;

দাম্পত্য বড় অদ্ভুত
অদ্ভুত আমাদের মন
অদ্ভুত সম্পর্কগুলো,
তাই না?





দূর থেকে চাঁদনি


দূর থেকে চাঁদনি
- যাযাবর জীবন


দূরে আছিস দূর থাক, এই বেশ ভালো
দূর থেকে চাঁদনি, মোহময়ী আলো
দিন হলে চাঁদ কই? সূর্যের তাপ
বিকেলটা ভালোবাসার, রাত্রি উদাস

লাল লাল নীল নীল
ভালোবাসার রঙ
প্রেমে মন রাত্রি
তোতে তোতে মন।



দ্বৈত অনুভূতি



দ্বৈত অনুভূতি
- যাযাবর জীবন


আকাশ দেখেছিস?
নীল আকাশ,
সাদা সাদা মেঘ ছড়ানো;
সাগর দেখেছিস?
নীল সাগর, দ্বৈত নীলে রাঙানো;

তুই আকাশে ভালোবাসা খুঁজিস
আমি খুঁজি নীল
তুই সাগরে তীর খুঁজিস
আমি দেখি নীল,
ওটা দৃষ্টিভ্রম নয় রে দৃষ্টিভঙ্গি
আমি তোতে মানুষ দেখি
তুই আমাতে খুঁজিস সঙ্গী;

ভালোবাসিস?
অনেক বুঝি?
তবে কাঁদিস কেন?
কেনই থাকিস দূরে?

তুই আকাশে চেয়ে থাকিস,
তুই সাগর দেখিস,
আমি পাখি নই, যাব তোর কাছে উড়ে
নই মাছ, ভাসব সাগর তীরে,
ভালোবাসিস?
তবে কাছে আয়
থাকিস কেন দূরে?

আমরা দ্বৈত জীবনে বাস করি দ্বৈত ভালোবাসায়
দ্বৈত মনের দ্বৈত অনুভূতি আমাদের দ্বৈত স্বত্বায়
তোর ভালোবাসা মন খুলে খুলে
আমার ভালোবাসা মনের কেওড় মেলে,
তোর খোলা মনে ঢোকা হয় না আমার
আমার খোলা দরজায় তোর
তুই রাত চেয়ে চেয়ে দিন
আমার নিদ্রাহীন চোখে ভোর,
কোথায় জানি ফারাক দুজনার চাহিদায়
মনে অনেক ক্ষোভ জমে থাকে তোর;

একদিন পুঞ্জিভূত ক্ষোভে ঘৃণা জ্বলবে
অপেক্ষার রাত হবে না ভোর
দ্বৈত ভালোবাসা আর দ্বৈত ঘৃণায়
দূরত্ব বাড়বে আমার সাথে তোর;

যেদিন তোর তীব্র ভালোবাসা তীব্র ঘৃণায় পরিণত হবে
সেদিন দূর থেকে বুঝতে পারবি,
"অনেক ভালোবেসেছিলাম তোকে"

সেদিন আবার দ্বৈত ভালোবাসা আর দ্বৈত ঘৃণায়
ভাসিস, ডুবিস না
কান্নায় থেকে থেকে।



আবেগানুভূতি



আবেগানুভূতি
- যাযাবর জীবন


কিছু হাসি হাসি কান্না কিছু কান্না কান্না হাসি
কিছু সুখ সুখ অনুভব আর কিছু দুঃখ দুঃখ অনুভূতি
কিছু সত্য সত্য মিথ্যা আর কিছু মিথ্যা মিথ্যা সত্য
অনুভবের মিশ্রণ, অনুভবের অনুভূতি
মানুষের মাঝে অনুভব, মানুষেরই অনুভূতি;

কেও কেও তোমরা আবেগপ্রবণ যখনই আকাশে মেঘের আগমন
কারো কারো আবার কাব্যে মাতম বৃষ্টি যখন ঝুমা ঝুমঝুম

আমার কাছে মেঘ মানেই মনখারাপ
আর বৃষ্টি মানে কান্নার ধুম;

কেও কেও তোমরা কবিতা লিখ আকাশে যখন জ্যোৎস্না হাসে
কারো কারো মনে ভাবের উদয় চাঁদ উঠলেই ভালোবাসে

আমার কাছে চাঁদনি মানেই মনখারাপ
আমার ঘরে চাঁদ উঠলেই রাত্রি আসে;

আমি মানুষের হাসিই বুঝি না
কান্না পড়ব কি?

অনুভূতি আমার কাছে রাত রাত অনুভব
যখন মানুষের মুখে অনর্থক হাসি দেখি,
শুধু বারবার মনে হয়,
আরে, আরে! অকারণ হাসছে কেন?
এর উদ্দেশ্যটা কি?

মানুষের মাঝে মিশ্র অনুভব মানুষেরই মিশ্র অনুভূতি
আমার পাথর চোখ, পাথর মন
কোথায় আবেগ? কোথায় অনুভূতি?




চোখ কথা বলে



চোখ কথা বলে
- যাযাবর জীবন


চোখ বলে
চোখ কথা বলে

তার চোখ জুড়ে মায়া
আমার লবণ সহ্য হয় না ;

কেও কেও দুর্বোধ্য ভাষায় কান্না আঁকে
ভালোবাসা কাঁদায় কাওকে মধ্য রাতে

অনেক দিন হাসে নি সে
শুধুই কেঁদেছে না বুঝে ভালোবেসে

লবণে অরুচি আমার
আমি তার চোখ দেখি না

আজ কান্না মুছবো না আমি তার
আমারও অভিমান আছে,
কেন বোঝে নি সে ভালোবাসা আমার?

একদিন, কোন একদিন
ভালোবাসা বুঝবে সে
আমি থাকি আর না থাকি
আকাশ পাতাল আমায় খুঁজবে সে

তারপর?

আমায় খুঁজে না পেলে মন লবণ নদী
আর চোখ কান্না সাগর,
তার ও আমার;

আর খুঁজে পেলে?

আমি রাত হব সে জ্যোৎস্না
আমি ঘুম হব সে স্বপ্ন
যেদিন সে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পরবে আমার বুকে
কান্না মুছে যাবে তার চোখ থেকে;

আমি প্রহর গুনছি,
হয় আমি রাত্রি হব
আর নয়তো হবে তার ভোর।











কবিতা হ




কবিতা হ
- যাযাবর জীবন


কাগজে কলম হিবিজিবি আঁক দিতেই
এক একজন এক এক ভাবে চেয়ে থাকে,
কাগজের দিকে;

গল্প-পোকা নতুন কোন গল্পের খোঁজে
ছবি-বোদ্ধার চোখে দুর্বোধ্য কোন ছবির বিমূর্ত মুগ্ধতা ফুটে ওঠে
কবিতা প্রেমী মেতে ওঠে অবোধ্য আঁকের নতুন এক কাব্যরসে;

কেও কেও আবার ভুরু কুঁচকে চেয়ে থাকে
কেও কেও বক্র হাসি হাসে
শ্লেষ্মার কটূক্তি শোনা যায় কারো কারো মুখে
কোথা থেকে জানি ঈর্ষাপোকা পোড়া গন্ধ ভেসে আসে;

আমি আঁকতে জানি না
লিখতে জানি না,
কখনো দাগ কাটে নি কেও আমার অনুভূতিতে;
তবুও মাঝে মাঝে কাটাকুটি খেলাতে যখনই কাগজে কলম ঘুরাই
তখনই খাতায় তোর জিজ্ঞাসার উঁকি,

আমাকে নিয়ে কবিতা লিখছ নাকি?

আমি সূর্য ভেঙে যাই খাদ্যাহ্নেষণে
প্রেমের খোঁজে তুই আমায় ভেঙে ভেঙে
আমি রাত ভেঙে যাই অমাবস্যা হাতে
তুই ভালোবাসা খুঁজিস মরা জ্যোৎস্নাতে;

অনেক ভালোবাসিস বুঝি?

তবে কবিতা হ
আমার কলমে।





জীবনের নানা অধ্যায়



জীবনের নানা অধ্যায়
- যাযাবর জীবন


এক একটা সময়ের এক এক অনুভব
জীবনের অধ্যায়গুলো কখনো সরব কখনো নীরব;

একটা সময় জীবন মানেই বাবা-মা
একটা সময় বন্ধু-বান্ধব
একটা সময় যৌবনের আগমন
একটা সময় বিপরীত লিঙ্গে আকর্ষণ
একটা সময় শুধুই যৌবনের
নিয়ন্ত্রণহীন বল্গাহরিণের
একটা সময় ভালোবাসার
একটা সময় চোখ স্বপ্ন
একটা সময় তাকে ছাড়া সব ফাঁকা
একটা সময় কঠিন জীবন
জীবন মানেই টাকা টাকা
একটা সময় থিতু হওয়ার
একটা সময় ঘর সংসার
একটা সময় সবাই আপন
স্বার্থ এলেই খুব দুশমন
একটা সময় সবাই পর
যেতেই হয় রে মাটির ঘর;

আমি জীবন দেখেছি,
পাহাড় থেকে মরুভূমি হয়ে সাগর
ঝর্না থেকে গড়িয়ে লোনা জল
দিনের নিচে চাপা পড়া রাত
সাদার সাথে অমাবস্যা মেলানো কালো
সুখ সুখ চেহারায় বুকচেরা কান্না
আরও কত কি?

তোমরা যাকে জীবন বলো
আমি বলি স্বপ্ন
এক সময় ঘুম থেকে জেগে দেখব
শুয়ে আছি সাড়ে তিন হাত ঘরে;

তারপর?
আবার একটা নতুন জীবন শুরু হবে?

আচ্ছা! কি দেখব ওখানে?
কেও থাকবে কি পাশে?
সেখানে অন্ধকার থাকবে নাকি আলো?
বাবা, মা, ভাই, বোন?
স্ত্রী সন্তান পরিজন?

এই যে এত এত ভালোবাসা
এত এত অনুভব,
কাকে বলব সেখানে?

কত কত প্রশ্নই না ক্রমাগত মাথায় ঘোরে,
কি আছে আর কি নেই সেখানে?
খুব জানতে ইচ্ছে করে;

অনেকগুলো সময় পারি দিয়ে এসেছি
এবার যেতে হবে মাটির ঘর।






হিংসার রাত




হিংসার রাত
- যাযাবর জীবন


কুয়াশায় ভিজছে অন্ধকার রাত
তুই পা রাখতেই আলোকিত ছাদ;

তুই চাঁদে ভিজছিস ছাদে
আমি ভিজে যাচ্ছি হিংসায়;

কুয়াশা ছুঁয়ে যাচ্ছে তোকে
ছুঁয়ে দিচ্ছে রাত
ছুঁয়ে দিচ্ছে চাঁদনি
ছুঁয়ে যাচ্ছে চাঁদ
হিংসে তোকে কুয়াশা
হিংসে তোকে চাঁদ
হিংসে তোকে চাঁদনি
হিংসে তোকে ছাদ;

ওম ওম ভালোবাসায়
সবাই ছুঁয়ে আছে তোকে
ফাটা ফাটা ঠোঁট আমার শীতার্ত রাতে
আর মন পুড়ছে হিংসায়।











বুধবার, ৯ জানুয়ারী, ২০১৯

এক নিশিকন্যার সাথে স্বপ্ন আলাপন



এক নিশিকন্যার সাথে স্বপ্ন আলাপন
- যাযাবর জীবন


সে রাতটা ছিল অন্যরকম
এক নিশিকন্যার সাথে স্বপ্ন আলাপন

শীতের রাত
অফিসে বেশ খানিকটা রাত হয়ে গিয়েছিল কাজে
রাস্তাটা ঢেকেছিল ঘন কুয়াশার সাজে

অনেকক্ষণ অপেক্ষার পরও কোন রিক্সা না পেয়ে
অগত্য পথ হাঁটা,
বেশ খানিকটা এগোনোর পর গলিপথ থেকে শীর্ণ এক যুবতী
বেরিয়ে এসে পা মেলালও পথের সাথে
স্যার কি একা?

একটু চমকে তাকালাম
বুঝে গেলাম নিশিকন্যা,

বেশ মজাই পেলাম
উত্তর দিলাম
হ্যাঁ, গো মা;

সম্ভাষণে একটু চমকে গেল বোধহয়
মুহূর্তে সামলে নিলো
স্যার যে কি বলেন!
আজ কোন রোজগার হয় নি,
আমার ঘর আছে
কিছু সময় কিনতে চাইলে চলেন;

বড্ড রাগ হলো
এবার ভালো করে তাকালাম
জীর্ণ শীর্ণ কাপড়
কৈশোর পার হয়ে মাত্র যৌবনে পা দিয়েছে হয়তো
এ বয়সেই?
কি জানি!
পরিস্থিতি? পেটের দায় নয়তো!

পকেট হাতড়ে দেখলাম মাত্র একশ টাকা দুটি আর কিছু খুচরা নোট
দুশো টাকা বাড়িয়ে দিয়ে বললাম
এটা রাখ, আমার কাছে আর নাই
থমকে দাঁড়িয়ে বলল,
ভিক্ষা করি না স্যার
শরীর বেচি, ভাত খাই;

এবার থমকানোর পালা আমার
আসলে চমকালাম,
মনে মনে বললাম
বাহ! বেশ তো!
আমার কাজের বিনিময়ে খাদ্য
নিশিকন্যার কামের,
সে শরীর বেঁচে
আমি শ্রম,
ধ্যাত!
কি সব উল্টোপাল্টা ভাবছি!
মনের ভ্রম;

আমি চুপ করে আমার পথে হাঁটা ধরলাম
লক্ষ্য করলাম সেও আসছে পেছন পেছন
এবার দাঁড়িয়ে পড়ে বললাম
টাকা নাও, পিছু ছাড়
সে হেসে দিয়ে বলল
ভয় পাবেন না স্যার
এ রাস্তাটা বড্ড ফাঁকা
আমি ঐ সামনের মোড়টা পর্যন্ত যাব
আপনার সাথে
একটু ভয় ভয় লাগে এ রাস্তায় একা;

হাঁটতে হাঁটতে জিজ্ঞাসা করলাম
বাড়িতে কে আছে তোমার?
উত্তর দিলো
ভাঙা চৌকি, মাটির উনুন
দুটো হাড়ি, একটা প্লেট
একটা গ্লাস
আর পেটে রাজ্যের ক্ষুধা;

বাবা-মা, ভাই-বোন?
হেসে উত্তর দিল
তারা তো কবেই দিয়েছে আমায় বিসর্জন!

বড্ড মন খারাপ হলো
বড় রাস্তার মোড়ে চলে এসেছি
রিক্সা পেয়ে উঠে বসলাম
আবার টাকা সাধলাম, নিলো না;
পেছন থেকে বললো
সাবধানে যাবেন স্যার
ভালো থাকবেন;

এগিয়ে চলছে রিক্সার চাকা
কুয়াশার রাত
রাস্তাঘাট বড্ড ফাঁকা;

অনেক রাতে বাড়ি ফিরলাম
খাওয়া দাওয়া করে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুম;

.....................

হঠাত দেখলাম
চাঁদের রাত
বিশাল ফাঁকা মাঠে একটা বেঞ্চ
আমি বেঞ্চে বসা
সামনে মাটিতে বসা, নিশিকন্যা ;

স্বপ্নে স্বপ্নে দুজনার কথোপকথন -

নিশিকন্যা! তুমি স্বপ্ন দেখ?

বাবু! লাল পানির নেশায় রঙিন স্বপ্ন দেখা তোমাদের অধিকার
আমি শুধু দেখি প্রতিদিন নতুন নতুন খরিদ্দার;

প্রেম হয় নি কখনো কারো সাথে?

না গো বাবু,
প্রেম তো মনের
প্রেম শুধু তোমাদের,
নিশিকন্যারা শরীরের
আমাদের কিছু হলে পেটে ক্ষুধা হয়, অনাকাঙ্ক্ষিত বাচ্চা হয়
আর খুব বেশী কিছু হলে, এইডস হয়;

কখনো ভালোবাসো নি কাওকে?

বেসেছি তো বাবু!
শরীর'কে
পেটকে
ক্ষুধাকে,
তোমরা আমাদের ভালোবেসে যাও আঁচড়ে আঁচড়ে, কামড়ে কামড়ে
আমরা শুধু পেট ভরাই, ক্ষুধা ভালোবেসে;

ধ্যাত! আমি সব ভালো ভালো কথা জিজ্ঞাসা করছি
আর তোমার সব উল্টোপাল্টা উত্তর
ভালো করে কথা বলতেও পার না?
যাও তোমার সাথে আর কথাই বলব না;

নিশিকন্যা হেসে উত্তর দেয়
প্রেম?
ভালোবাসা?
না গো বাবু, না!
ওসব আমাদের থাকে না
ওসব আমাদের থাকতে হয় না,

আমার কি আছে জানো?

আমার আছে একটি পেট, আর একরাশ ক্ষুধা
পুরুষের লালসা দেখার দুটি চোখ
তাদের শীৎকার আর অশ্রাব্য গালি শোনার দুটি কান
বোবা তিনটি মুখ
আর দুটি স্তন

এইটুকু নিয়েই নিশিকন্যাদের জীবন;

আচ্ছা বাবু, আমি গেলাম, তুমি ঘুমাও
বলে সে বিদায় নিলো;

তারপর আমিও ঘুমিয়ে গেলাম রাতের কোলে,
স্বপ্নগুলো বড্ড অদ্ভুত, তাই না!













চরম বোকা


চরম বোকা
- যাযাবর জীবন


বুদ্ধিমান মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকে
বোকারা টাকার পেছনে ছুটে

আমি চরম বোকা হয়ে রইলাম
কিছু ছেড়া কাগজ হাতে!



সোমবার, ৭ জানুয়ারী, ২০১৯

সাদাকালো গল্প




সাদাকালো গল্প
- যাযাবর জীবন


প্রতিটা জীবনেরই কিছু গল্প আছে
প্রতিটা জীবনই গদ্যময়,
জীবনের গল্পগুলো মোটামুটি একই রকমের
কিছু সাদাকালো আর কিছু রংধনু মেশানো;

একটা পুরো জীবন সাদা হতে পারে না
পারে না পুরোপুরি অন্ধকার হতে;

ওখানে কখনো নীল খেলা করে কখনো মেঘ ওড়ে ঘুরে
কখনো কাঠফাটা রোদ তো কখনো ঝুমঝুমান্তি বৃষ্টি
কখনো বা রোদবৃষ্টির লুকোচুরি খেলায় রংধনু রঙে একাকার

জীবন কখনো লাল ভোর, কখনো মেঘলা দুপুর আর কখনো বিষণ্ণ বিকেল
কখনো কর্মব্যস্ত দিন তো কখনো মন-উদাস জ্যোৎস্নার রাত
কখনো চাঁদ, কখনো অমাবস্যা, কখনো বা মনখারাপের অন্ধকার

কেও কেও জীবনের গল্প বলে হালকা হয়
কেও কেও নীল গল্পগুলো চেপে রাখে নিজের মাঝে
কারো কারো জীবন খটমটে প্রবন্ধ তো কারো গদ্যময়
কারো কারো জীবন গানে গানে আর কারো জীবনে কবিতা কথা কয়

আমি তোর জীবনের সবগুলো গল্প জানি
থাকুক না আমার নীল গল্পগুলো কালো অমাবস্যায়!

তুই দিন তো
আমি আঁধার

তুই প্রতিদিন নতুন সূর্যের গল্প শোনাবি
আমি কবিতায় এঁকে যাব অন্ধকার

অন্ধকার পড়ার ক্ষমতা আছে ক'জনার?








স্বপ্ন রাত



স্বপ্ন রাত
- যাযাবর জীবন


তুই, আমি আর একটা রাত
মুখোমুখি বসে ছিলাম আমরা আর ছিল হাতে হাত

মনটা ছিল তরল
চোখ একটু ঘোলাটে বাষ্প বাষ্প
ঠোঁট আগানো ছিলো ঠোঁটে,

ঠোঁটে ঠোঁট রাখতেই চোখ বন্ধ হয়েছিল দুজনার;

চোখে চোখ রেখেছিলি কি?
কি জানি!
না তুই কিছু দেখছিলি
না আমি
শুধু শরীরে শরীর মিলেমিশে একাকার;

সে রাতটা ছিল নিঃসঙ্গ একা আর চারিদিক বড্ড আঁধার আঁধার,
তুই ছিলি চাঁদ
মন ছিল চাঁদনি
আর দুজনার ভালোবাসার হাহাকার;

কিছু কিছু রাত স্বপ্ন স্বপ্ন
কিছু কিছু রাত কল্পনা
অল্প কিছু রাত ভালোবাসা
কিছু কিছু রাতে তুই আমার
একটি দুটি রাতে আমি তোর
আর বছরের বাকি রাতগুলো অনুভবে একাকার;

থাকুক না একটি দুটি রাত স্বপ্ন হয়ে!
শুধু তোর আর আমার।









কিছু কিছু রাত



কিছু কিছু রাত
- যাযাবর জীবন


কিছু কিছু রাত অন্য রকম
কিছু কিছু রাত চাঁদের মতন
কিছু কিছু রাত শুধুই তোর
কিছু কিছু রাত শুধুই আমার
আর কিছু কিছু রাত আমাদের দুজনার;

তোর একার রাতগুলো স্মৃতি পড়ার
আমার একার রাতগুলোর মন খারাপ
দুজনার রাতগুলো ভালোবাসার;

একদিন এখানে কোন এক রাতে
দোল খেয়েছিলাম ঝুল বারান্দায়
তুই আমি দুজনে
হাতে হাত রেখে,
আজ ওখানে দোলনাটা ঝুলছে একা
দোলনাটার কি মন খারাপ?
নাকি শূন্যতা শুধুই তোর একার?

আমার পাথর মন
কান্নার শ্যাওলা জমে না অনুভূতির কোথাও;

সেই রাতটার কথা মনে আছে?
কিছু সুখ সুখ অনুভব
কিছু দু:খ দু:খ অনুভূতি
কিছু কষ্ট কষ্ট সুখ
আর মূহুর্তে উড়ে যাওয়া সময়;

সময়কে ধরে রাখতে পেরেছে কে, কবে?
জীবন শুধুই স্মৃতির বলয়;

একদিন
কোন একদিন
থাকব না আমি
রয়ে যাবে কিছু স্মৃতি
আর তোর কান্না কান্না অনুভূতি;

কাঁদিস না কিন্তু সে রাতে
যখনই ছুঁয়ে যাবে তোকে
আমার স্মৃতির অনুভব
আর আমি মাটির ঘরে শব।


অল্প



অল্প
- যাযাবর জীবন


একদিন অনেক রাতে
তুই আর আমি,
হাতে হাত ছিল
চোখে চোখ
মনে মন রাখতে গিয়েই চোখ লবণ,
কিছু না বলা কথা ছিল
কিছু অনুভব
অনেকটা ভালোবাসা
আর বেশ খানিকটা নিস্তব্ধ রাতের প্রহর;

সুখ আর কতক্ষণের বল?
তারপর বিচ্ছিন্নতা
আর বাকি রাত দু:খ দু:খ অনুভব;

তুই, আমি
দিন, রাত
আর চাঁদ, সূর্য মিলেই
আমাদের ভালোবাসার গল্প,
কখনো দু:খ কখনো বেদনা
কখনো হাসি কখনো কান্না
অনেক অনেক ভালোবাসা,
আর সুখের সময়গুলো বড্ড অল্প।



উপহার



উপহার
- যাযাবর জীবন


কতজন কত দামী দামী উপহারই না দিয়েছে আমায়
বিভিন্ন পালা পর্বণে
আমার ঘরের আলমিরায় সাজানো আছে থরে থরে
কখনো সখনো একটি দুটির দিকে চোখ যায়
কখনো একটি দুটির দিকে মন;

ওখানে তোর দেয়া কোন উপহার সাজানো নেই,
কাঁচের আলমিরাতে;
কেন জানিস?
তোর দেয়া সব উপহারগুলো সাজানো আছে মনের ঘরে
থরে থরে;

আর তোর দেয়া সবচেয়ে দামী উপহারটা রেখে দিয়েছি
বুকের মধ্যেখানে, একান্ত নিজের করে;
জানিস সেটা কি?
তুই নিজে;

তুই নিজেই বুঝিসনি কখন নিজের অজান্তে
তোকেই দিয়ে দিয়েছিস আমায়!

আমি চুপে চুপে বের করে দেখি তোকে
মনঘর খুলে খুলে,
মন খারাপের প্রহরে প্রহরে;
তারপর আবার ঢেকে রেখে দেই তোকে
মনঘরে
খুব যতনে।




সৌন্দর্য কোথায়?



সৌন্দর্য কোথায়?
- যাযাবর জীবন


সৌন্দর্য কি রূপে?
আরে নাহ!
যে দেখে তার চোখে;

আমার চোখে অপরূপ অমাবস্যা
তোর চোখে জ্যোৎস্না
চাঁদ হাসে বিভিন্ন রূপে
অমাবস্যা আর চাঁদনির রাতে;

আমি অমাবস্যায় মজেছি তোতে
তুই ভরা চাঁদে আমাতে
ছোঁয়াছুঁয়ি হয়নি আমাদের
ভালোবাসার রাতে;

আয় ভালোবাসাবাসি করি একবার
ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়ে
চাঁদহীন চাঁদনি রাতে।




তোতে, তোতে



তোতে, তোতে
- যাযাবর জীবন


যখন স্পর্শে তুই, ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকা
ছুঁয়ে ভালোবাসা
যখন অনেক দূরে, মনে মন রাখা
মনে ভালোবাসা

আমার ভোর শুরু হয় তোতে
আকাশে সূর্য ওঠে সকালে, আমি রোদ তাপাই তোতে
দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামে, আমি ভাত ঘুমে তোর সনে
সন্ধ্যা গড়ালেই আকাশে চাঁদ, তুই চাঁদনি আমার
তারপর ভালোবাসাবাসির সারা রাত
স্পর্শে ছুঁয়ে ছুঁয়ে
দূর থেকে মনে মনে
তারপর সারারাত স্বপ্নঘুমে তুই বুকে,

আর ভালোবাসাবাসির অষ্টপ্রহর তোতে, তোতে।









রাতটুকুই আমার



রাতটুকুই আমার
- যাযাবর জীবন


কিছু থাকে না রাতে, ছুঁয়ে থাকে অন্ধকার
থাকে না কিছু হাতে, মুঠো মুঠো আঁধার
কিছু থাকে না চোখে, নির্ঘুম স্বপ্নহীন রাত
থাকে না কিছু মনে, শরীরে মন কোথায়?

মন তো সেই কবেই দিয়ে দিয়েছি তোকে
অনিদ্রা কেড়ে নিয়েছে চোখ
হাতে শূন্যতার হাহাকার,

রাতটুকুই কেবল আমার।




কান্নার রঙ



কান্নার রঙ
- যাযাবর জীবন


কত কত রঙ তোর
কত রঙের মন
মন আর নারীতে
কত কত বিভাজন,
চিনতে পারি নি নারী
চিনি নি তোর মন
রংধনুর রঙে দেখি
তোর নানা রঙ;

সাদা দেখি কালো দেখি
জ্যোৎস্না মন
মনের রঙ কি হে নারী
রংধনুর রঙ,
কত কত মন রঙে
কত রঙের ঢং
ভালোবাসার রঙ নাকি
অশ্রুর রঙ;

জলের রঙ কি রে নারী?
অশ্রুর রঙ?
ভালোবাসা কান্না
ভালোবাসা ক্ষরণ,
নারীর মন কেমন?
ষড়ঋতু যেমন
প্রেম মানেই ছলনা
কান্নার রঙ।







জল ধোয়া জল


জল ধোয়া জল
- যাযাবর জীবন


যতবার উড়াল ডানা
ততবার মন অজানা
আকাশে সাদাকালো মেঘ
তুই কোথায়?

যতবার ভেসেছি জলে
ততবার ভিজেছি তোতে
জল ধুয়ে নেয় ভেজা চোখ
তুই কোথায়?

যতবার ভালোবাসা মন
ততবার রাতজাগা শিহরণ
চোখ জড়িয়েছে নির্ঘুম রাত
তুই কোথায়?

যতবার ভেবেছি তোকে
হারিয়েছি নিজেতে নিজে
কোথায় রে তুই? তুই কোথায়?
একবার তো আয়! ভালোবাসায়।



মনের ভেতর নদী



মনের ভেতর নদী
- যাযাবর জীবন


মনের ভেতর নদী
মনের ঠাঁই অতল
আমি বয়ে যাই, ডুবে যাই
মনে ভালোবাসার চলাচল

চোখের ভেতর জল
চোখ বায় জল
আমি ভেসে যাই, ডুবে যাই
আর নোনা জল চলাচল

মনের ভেতর তুই, জলের ভেতর জল
চল চোখ, সাগর চল
আমি বয়ে যাই আর ডুবে যাই তোতে
বল, একটিবার ভালোবাসি বল।





স্বপ্ন ভেঙে অন্ধকার



স্বপ্ন ভেঙে অন্ধকার
- যাযাবর জীবন


চোখ ছুঁয়ে ছুঁয়ে কান্না
গাল ছুঁয়ে ছুঁয়ে আদর
মন ছুঁয়ে দিয়ে ভালোবাসা
ঘুমহীন স্বপ্ন বাসর,
অনেক তারায় রাত জোনাকি
অনেক জ্যোৎস্নায় সেজেছে চাঁদ
অনেক প্রেমেও বাসর সাজে নি
ভালোবাসায় কোথাও তো ছিল ফাঁক,

চোখ ভেঙে ভেঙে নির্ঘুম রাত
স্বপ্ন ভেঙে অন্ধকার
যতবারই আমার মন ভেঙেছিস
ততবারই তুই আমার।





আনাড়ি



আনাড়ি
- যাযাবর জীবন


তোর সামনে একজন
তুই ছুঁয়ে থাকিস তাকে,
ভালোবাসিস অন্য কাওকে
কান্না অন্য আরেকজনের জন্য,
আমি তোকে বুঝি না নারী;
মন পড়ায় আমি বড্ড আনাড়ি।

আমার সামনে তুই
ছুঁয়ে থাকি তোকে
মন পোড়ে তোর জন্য,
একে কি ভালোবাসা বলে?
মন বুঝতে আমি তোকেই বুঝি রে নারী!
ভালোবাসায় আমি বড্ড আনাড়ি।



একাকীত্ব



একাকীত্ব
- যাযাবর জীবন


একাকীত্বের সমস্যা কি জানিস?

একাকীত্ব তোকে বিবেকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে
বিবেক তোকে অতীত মনে করিয়ে দেবে
সাদা সুখের অতীত নয় কিন্তু!
ভয়ঙ্কর দুঃসহ কালো অতীতগুলো,
তারপর বিবেক তোর ভেতরের প্রত্যেকটা অন্ধকারের গল্প বলে তোকে কামড়াবে, খামচাবে
আর অসহায় তুই রক্তাক্ত হতে থাকবি নিজেতে নিজে;

আমার বড্ড ভয় হয় একা হতে
দিনে কিংবা রাতে
অমাবস্যা কিংবা পূর্ণিমাতে,
অথচ দেখ!
আমাকেই সামলাতে হয় একাকীত্ব
বড্ড একা হয়ে একলা হাতে;

আর চুপচাপ একাকীত্বের প্রতি মুহূর্তে রক্তাক্ত আমি,
নিজেতে নিজে।





হাস্নাহেনার গন্ধ





হাস্নাহেনার গন্ধ
- যাযাবর জীবন


একদিন সাদা শাড়ি পরেছিলি
স্বচ্ছ সাদা
আমরা আকাশ ভ্রমণে গিয়েছিলাম
স্বপ্ন ভেলায়;

মেঘের গাড়িটা আমাদের নিয়ে গিয়েছিল ঐ দূরে
মেঘের ওপারে,
সারাদিন সূর্য ভ্রমণ শেষে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই
এত্ত বড় একটা চাঁদ আলো করে ছিল আমাদের
আর ঝুম জ্যোৎস্না বৃষ্টি ভিজিয়ে দিল তোকে
ভেজা শাড়িতে তুই বড্ড লজ্জা পেয়েছিলি সেদিন,
তোর লজ্জায় মেঘ গাড়ি আমাদের নামিয়ে আনলো মেঘের দেশে;

ও কি!
এখানে তো বৃষ্টি বিলাস
ভিজে চুপচুপ তুই
ভিজে চুপচুপ আমি
আর লজ্জায় আনত তোর চোখ,
আমি চোখ চুমে তোকে জড়িয়ে ধরতেই তুই এলিয়ে গেলি আমার বুকে
কোথা থেকে যেন হাস্নাহেনার ঘ্রাণ ভেসে আসছে শাড়ির প্যাঁচ খোলার সাথে সাথে
তারপর ডুব সাঁতার প্রেম বিলাসে;

হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে যেতেই স্বপ্ন মিলিয়ে গেলো অন্ধকারে
কোথায় সাদা শাড়ি? চোখজুড়ে কালো রাত,
শুধু হাস্নাহেনার গন্ধ জড়িয়ে আছে সারা মন জুড়ে;

পাশের বাড়ির টবে ঝাঁপিয়ে হাস্নাহেনা ফুটেছে।





কেও কথা রাখে না



কেও কথা রাখে না
- যাযাবর জীবন


সূর্য সবসময়ই দিনের
আমি রাত
তোর আর আমার মাঝে ভীষণ ফারাক

তবুও কাছে এসেছিলি
ভালো কি বেসেছিলি?
আকাশের সাথে সাগরের মিতালি শুধুই নীলে
সাগর কবে আকাশ ছুঁতে পেরেছিল রে?
তোর ঠোঁট ছুঁয়ে ছুঁয়েও আমি কি ছুঁতে পেরেছি তোকে?
বিচ্ছেদ কি বলে?

সেদিন আমি কি বলেছিলাম মনে আছে?
যেদিন শুয়েছিলি বুকের ওপর আলুথালু চুল মেলে;
বলেছিলাম,
একদিন খুব তাড়াতাড়ি
তুই হারিয়ে যাবি সূর্যের ওপারে;
যদি কখনো আমার কথা মনে হয়,
যদি সময় পাস,
একটি দুটি চিঠি লিখিস
জ্যোৎস্নার অবসরে;

ভ্রুকুটি হেনে বলেছিলি, হারাবি না;

সেও তো অনেক বছর পার হয়ে গেছে
তুই এখন কোথায় রে?

কেও কথা রাখে না
সে আমার খুব ভালো করেই জানা,
সেদিনের তোর ভ্রুকুটি ছিল আবেগের কথা
আবেগ দিয়ে জীবন চলে না;

তুই চাঁদনি
আমি অন্ধকার রাত
তোর আর আমার মাঝে বিস্তর ফারাক

এখনো কোন কোন চাঁদনি রাতে
মাঝে মাঝে মন শ্যাওলা হলে
খুব জানতে ইচ্ছে করে
কোথায় আছিস
কেমন আছিস রে!





কাঁচের হৃদয়



কাঁচের হৃদয়
- যাযাবর জীবন


কাঁচ দিয়ে তৈরি নয় হৃদয়
তবুও ভাঙে যখন তখন,
ভাঙনের শব্দ নেই কোন
শুধুই ক্ষরণ;

ব্যথা দেয় খুব আপনজনেরা
জেনে ও না জেনে
বুঝে কিংবা না বুঝে
কখনো ইচ্ছাকৃত কখনো ভুল করে,
আমার ঠোঁট হাসতে থাকে, ব্যথা গিলে;

কোথায় যেন কে কাঁদছে,
ডুকরে,
বুকের খুব গভীরে;
শুনতে পাচ্ছ?

যে ভালোবাসে সেই অনুভূতির সাথে খেলে;

আপনজনেরা?
প্রতিনিয়ত অনুভূতির সাথে খেলা তো ওদের অধিকার!
আমার ঠোঁট হাসে, হো হো করে;

হৃদয়?
আরে, ও তো মাংসের দলা
ভেঙে গেলে তবেই না কান্না!

কি?
ভাঙনের শব্দ পাও নি?
বুকে কান পাততে পারে কজনা?









বার্তা চিঠি





বার্তা চিঠি
- যাযাবর জীবন


একদিন অনেকগুলো গল্প হয়েছিল
একরাতে অনেক কবিতা
চায়ের কাপে অনেক চুমু
ঠোঁট ঠোঁটে অনেক ভালোবাসা,
তারপর অনেকগুলো দিন কাটলো
অনেকগুলো রাত
কথা ছিল অনেক জ্যোৎস্নায়
হাতে রাখবি হাত;

সে কত দিন আগেকার কথা!
মনে আছে?
আচ্ছা! সময়ের ডানা আছে রে?
কত কত জ্যোৎস্না পার হয়ে গেছে!
চোখের নিমিষে,
এখন আর হিসেব কষি না;

একসময় মাঝে মধ্যে চিঠি লিখতি
নীল রঙের খামে
ইনিয়ে বিনিয়ে তোর নতুন জীবনের কথা নতুন গানে,
তারপর যুগের বদলে চিঠি ছোট হতে হতে
মোবাইলে এস এম এস
তারপর?
কত দিন হয়ে গেলো!
মোবাইলটাও নিস্তব্ধ হয়ে গেছে;

আমি কয়েকবার চেষ্টা করেছিলাম
তোকে ফোন করতে
অসহায় রাতগুলোতে,
ওপাশ থেকে উত্তর এসেছিল
- এ নাম্বারটি আর ব্যবহৃত হচ্ছে না,

কেমন আছিস রে?
মাঝে মাঝে খুব জানতে ইচ্ছে করে;

শরীর কেমন রে তোর?
মন?
চিঠি পাইনা অনেকদিন
মন উচাটন;

জ্যোৎস্নার ডানায় উড়ছে চাঁদ
নিদ্রা কোথায়?
পুরছে রাত;

মন কেমন রে তোর?
শরীর?
চিঠি পাইনা অনেকদিন
মন স্থবির;

আমি কিন্তু বাসার ঠিকানা বদলাই নি রে,
যদি কখনো ডাকপিয়ন নীল খামের চিঠি হাতে ফিরে যায়!
মোবাইল নাম্বারটাও আগেরটাই রেখে দিয়েছি
এস এম এস এর একটি ছোট্ট বার্তার অপেক্ষায়।