মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ, ২০২২

ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্ন

ঐ যে বৃদ্ধ আর বৃদ্ধা'কে দেখছ অসহায়! 

হাতে হাত রেখে বসে আছে বিকেল বারান্দায়; 


একসময় ওদেরও যৌবন ছিলো, চোখে ছিলো পৃথিবী ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্ন 

সংসার শুরু করেছিলো, ক্রমে ঘরে সন্তান এলো, বাবা-মায়ের চোখের রত্ন  

বেঁচে থাকা মানেই পেট, সংসার মানেই অনেকগুলো মুখের আহার 

তারপর জীবন যুদ্ধ, আর ওখানে একের পর এক চাহিদার পাহাড় 

একজনের আয়ে চাহিদা মেটে না, আরেকজন কাজে বাড়ায় হাত 

তখনো ওদের চোখে কিছু স্বপ্ন থাকে, পৃথিবী ঘুরে বেড়ানো একসাথ; 


একটা সময় ক্রমাগত চাহিদার চাপে, স্বপ্ন ছোট হতে লাগলো

একসময় পৃথিবীর স্বপ্ন স্থগিত রেখে চোখে দেশ বেড়ানো আঁকলো 

একসময় কিছু টাকার সঞ্চয়, ছেলেটাকে ভালো কলেজে ভর্তি করার ভয় 

বেড়ানো পড়ে হবে, আপাতত ছেলেকে ভর্তি করে বাবা-মায়ের চোখে জয় 

সন্তানের ভবিষ্যতই সকল বাবা-মায়ের কাছেই সবচেয়ে বড় চাওয়া 

বেড়ানোর স্বপ্নগুলো? থাক না! হবে কোন একদিন কোথাও যাওয়া; 


একটা সময় জীবনে প্রৌঢ়ত্ব এলো, তখনো কিন্তু চোখে বেড়ানোর স্বপ্ন ছিলো 

হাতে কিছু টাকাও জমেছিলো, তারপর কোথা দিয়ে কি যে হয়ে গেলো! 

হঠাৎ করেই কোন একদিন বুকে ব্যথা, এম্বুল্যান্সের প্যাঁ পোঁ শব্দ 

জমানো টাকাগুলো দিয়ে অপারেশন, না হলে জীবনটাই হতো স্তব্ধ! 

তারও অনেকদিন পর আবার কিছু সঞ্চয়, ছেলেমেয়েরা কিছু দেয় হাতে

বেড়ানোর স্বপ্ন? বার্ধক্য উপহাস করে বুড়োবুড়ির দিকে চেয়ে থাকে; 


আমাদের সংসারটা শুরু হয়েছিলো অন্যদের থেকে কিছু আগে, সেই কৈশোরে 

কৈশোরে, যৌবন থেকেও চোখে স্বপ্ন অনেক অনেক বেশি থাকে, চোখ ভরে 

তারপর যথারীতি সংসার, একের পর এক সন্তান আর তাদের চাহিদার পাহাড় 

দুজনার দম হাঁসফাঁস চাহিদার বিশাল হাঁ করা মুখে জোগাতে টাকা নামক খাবার

আজ প্রৌঢ়ত্বে এসে কোন এক জ্যোৎস্না রাতে ছাদের ওপর আমরা দুজন 

এখনো স্বপ্ন দেখি, একদিন বেড়িয়ে যাব, পৃথিবী না হোক শুধুই দেশ ভ্রমণ; 


কারও স্বপ্ন বাস্তব হয় কারোর'টা স্বপ্নই থেকে যায় 

নাই বা সত্যি হলো তবুও চোখে কিছু স্বপ্ন রয়ে যায়। 



৩০ মার্চ, ২০২২


#কবিতা 


 ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্ন 

 - যাযাবর জীবন 



   

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন