রবিবার, ৩০ মে, ২০২১

বদলে যাওয়া জীবনধারা

মুহূর্তের ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা

একটি পরিবারের জীবনে নেমে আসা স্থায়ী দুর্যোগ 

সে যে কোন কিছুই হতে পারে!

হতে পারে একটি অসুস্থতা

হতে পারে একটি মৃত্যু

অথচ মুহূর্তে ঘটে যাওয়ার আগের মুহূর্তে কেউ ভেবেছিলো কি?


একজনের হঠাৎ একটু অসুস্থতা একটি পুরো পরিবারে দুশ্চিন্তা 

অসুস্থতা বলতে আমি জ্বর ঠাণ্ডা কাশির কথা বলছিল না নিশ্চয়ই

আমি জীবন বদলে দেওয়া অসুস্থতার কথা বলছি;

এই ধরো কোন একদিন হাসতে হাসতেই বুকে ব্যথা

মুহূর্তে তুমি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে 

তারপর দৌড়াদৌড়ি হসপিটালে 

বাসায় ফিরলে রিং পরে কিংবা বুকটাকে চিঁড়ে 

ঐ যে তোমার হৃদয়টা! ওখানে বেশ কিছু কাটাচ্ছেরা করা হয়েছে

তুমি কিন্তু আর সেই আগের তুমি নেই

তোমার সাথে সাথে বদলে যায় পুরো পরিবারটিই

সেই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবটা কিন্তু আর নেই, সারাক্ষণ তটস্থ হয়ে থাকে ওরা 

তাদের কোন আচরণ তোমাকে ব্যথিত করবে না তো! 


কিংবা ধরো পরিবারের সাথে খাবার টেবিলে হঠাৎই একদিন অচেতন লুটিয়ে পড়লে

বুঝতে না পেরে ধরাধরি করে তোমাকে নিয়ে ওরা হসপিটালে 

তোমার জ্ঞান ফিরলো, অথচ চেয়ে আছ বোবা হয়ে 

জিহ্বা আড়ষ্ট হয়ে গেছে কিংবা তোমার শরীরে কোন অংশ বেঁকে গিয়েছে

ডাক্তাররা বললো মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে, চেনা ভাষায় ব্রেন স্ট্রোক

অথচ খাবার টেবিলে সন্তানের সাথে খুনসুটি করার সময় ভেবেছিলে?

কিংবা তোমার পরিবারের বাকি লোকেরা কল্পনা করেছিলো?

তারা হসপিটাল থেকে বাড়ি ফিরলো বাবা কিংবা স্বামী নামে এক জড় পদার্থ নিয়ে

তারপর তো তাদের পুরো জীবনটাই বদলে গেলো!

তাই না? 


একদিন তোমার স্ত্রী আদরে গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে 

গায়ে ছোট্ট একটা মাংসের কিংবা চর্বির দলার অস্তিত্বের কথা বললো

শরীরের চর্বি চামড়া ভেদ করে উঠে এসেছে বলে তুমি হেসেই উড়িয়ে দিলে, 

সে কিন্তু ক্রমাগত ঘ্যানঘ্যান করে তোমাকে নিয়ে গেলো ডাক্তারের কাছে 

ডাক্তার মামুলি কিছু টেস্ট করালো, তারপর তার ভুরু কুঁচকে গেলো

আরও কিছু টেস্ট, তারপর আরও কিছু; করতে করতে বায়োপসি 

ক্যান্সার একটা মরণঘাতি ব্যাধি 

অথচ এই যে শরীরে ছোট্ট একটু মাংস বাড়া দিয়ে সূচনা, 

তারপর ঐ পরিবারটার ওপর দিয়ে কি যায় কেউ ভাবতে পার?


কিংবা ধরো মামুলি পেটে ব্যথা থেকে শুরু, পায়ে একটু পানি আসা

প্রথম প্রথম পাত্তাই দিলে না, তারপর ব্যথার প্রচণ্ডতায় ডাক্তার হসপিটাল

এই টেস্ট, ঐ টেস্ট; ফল বের হলো খারাপ হতে শুরু করেছে তোমার কিডনি 

তারপর তো হু হু করে শরীর খারাপের কাঁটা নেমে যেতে যেতে ডায়ালাসিস শুরু 

তারপর বদলে গেলো তোমার জীবন, বদলালো পুরো পরিবারের জীবন যাপন;


এগুলো তো হচ্ছেই হরেদরে

এছাড়াও বিভিন্ন নিওরো সমস্যা তো আজকাল খুব হঠাৎ করেই, ঘরে ঘরে 

যাদের ঘরে বিশেষ সন্তান আছে তাদের কথা একবার ভাবো তো!

কিংবা যাদের ঘরে কারো এপিলেপ্সি রোগী আছে!  

ঐ বাবা মায়েদের জীবন যাত্রা! 

ঐ পরিবারের জীবন যাত্রা? 

যাদের বাড়িতে নেই তারা কখনো কল্পনাই করতে পারবে না; 


এগুলো তো বললাম অসুস্থতা নিয়ে সব পরিবারগুলোর জীবন যাত্রার পরিবর্তনের কথা 

ওসব পরিবারের আর্থিক সমস্যার কথা তোমরা কল্পনাতেও আনতে পারবে না

হাসিখুশি সচ্ছল একটি পরিবারের কপর্দকহীন হতে সময় লাগে না 

খুব হঠাৎ করেই মুহূর্তে ঘটে যাওয়া একটা দুটো ছোট্ট ঘটনা 

সেটা আদতে আর ছোট্ট থাকে না, বদলে দেয় পুরো জীবন ধারা

বদলে দেয় একটা পরিবারকে বিপর্যস্ত মানসিক ভাবে 

আর্থিক ভাবে পঙ্গু করে;


মৃত্যু অমোঘ, পরিবারের বাকি সবাই জানে, সবাই বুঝছে  

অথচ ওটাকে ঠেকানোর জন্য, পেছানোর জন্য 

পরিবারের সবাই মিলে কি যুদ্ধই না করছে! 

সময় দিয়ে, সেবা দিয়ে, অর্থ দিয়ে যে যেভাবে পারছে 

চেষ্টার ত্রুটি নেই পরিবারের কারো 

তারপরও কি মৃত্যু ঠেকাতে পারছে?

তবুও লড়ছে, আপনজনের জন্য লড়ছে 

বদলে যাওয়া জীবনধারায় নিজেকে বদলে নিয়ে লড়ছে, 

মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত।  

 


৩০ মে, ২০২১ 


#কবিতা 


বদলে যাওয়া জীবনধারা 

 - যাযাবর জীবন  

  

  

ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





শনিবার, ২৯ মে, ২০২১

ফেসবুক ডুব

আজকাল আমাদের জীবনের বড় একটা অংশ জুড়ে 'ফেসবুক' 

আমরা ফেসবুকে হাসি, ফেসবুকে কাঁদি;  

আচ্ছা! ফেসবুক অর্থ কি?

চেহারার বই? 

ওখানে এক একজনার যে চেহারার ছবি সাটা আছে সেটা কি আসল চেহারা?

আমার সন্দেহ আছে;


এখানে ছেলেগুলো সুন্দর সুন্দর মেয়েদের চেহারা খুঁজে 

মেয়েগুলো হ্যান্ডসাম চেহারার প্রোফাইলের খোঁজে 

এখানে বলতে ঐ যে নেটের এপারে বসে 

নেটের ওপারে থাকা বিপরীত লিঙ্গের সাথীর খোঁজে;


নেটের ওপার থেকে সুন্দর একটা মেয়ে 

কিংবা হ্যান্ডসাম একটা ছেলে নেটে ভেসে আসে

ওমনি এপার থেকে একটা বন্ধু রিকোয়েস্ট ইথারে ইথারে

তারপর আশায় বুক বাঁধে, আসলে কি বাঁধে?

নাকি টোপ ফেলে? শত শত ছেলে কিংবা মেয়ে

ক্রমাগত বন্ধু হওয়ার রিকোয়েস্ট দিয়েই যাছে ঐ ইথারে ইথারে

বন্ধুত্বের রিকোয়েস্ট পাঠানোতে তো আর পয়সা লাগে না!

তাহলে সমস্যা কোথায় পাঠাতে গণ হারে? 


এপাশে মাঝে মধ্যেই নোটিফিকেশন জ্বলে ওঠে

কেউ একজন বন্ধুত্বের রিকোয়েস্টে সাড়া দিয়েছে

ওমনি হুমড়ি খেয়ে তার প্রোফাইলে

প্রথমেই ছবিগুলো একটা একটা করে 

সুন্দরী হলো অথবা হ্যান্ডসাম তা হলে তো কথাই নেই

এবার টুস করে একটা হাই কিংবা হ্যালো ম্যাসেঞ্জারে

রিপ্লাই পেলো তো পোয়াবারো, আর পায় কে?

শুরু হলো ফেসবুক বন্ধুত্ব

অচেনা প্রোফাইলের ক্ষেত্র সাধারণত এভাবেই তো হয় তাই না? 

আর আগে থেকে পরিচিত বন্ধু বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন 

তারা তো আছেই, সেগুলো নিয়ে নাই কনফিউশন; 


কনফিউশনের কথা বললাম এজন্য যে!

ঐ যে এক দুইশ করে এক দুই হাজার হয়ে হয়ে 

বন্ধু লিস্ট আজ পাঁচ হাজার ছুঁয়েছে! 

কজন'কে ব্যক্তিগত ভাবে চেনো? 

ঐ যে মেয়েটার সুন্দর একটা চেহারা দেখে ছেলেটা বন্ধু বানিয়েছে!

ঐ যে হ্যান্ডসাম যুবক দেখে মেয়েটা বন্ধু পাতিয়েছে!

দেখা হয়েছে কখনো? 


ছবির সুন্দরী কি আসলেও সুন্দরী? 

কিংবা হ্যান্ডসাম ছেলেটা কি আসলেও হ্যান্ডসাম? 

মনে কর ম্যাসেঞ্জার চ্যাটে বন্ধু হয়ে হয়ে একদিন দেখা করতেই গেলে 

আঠারো বিশ কিংবা উনিশ বিশ হলে সমস্যা নেই, ওটাতে চলে 

কিন্তু ধরো গিয়ে দেখলে দশ আর বিশ, কিংবা যদি দেখ দুই আর বিশ?

যাহ! তাই আবার হয় নাকি? ধ্যুর! তোমার কথাগুলো তেতো বিষ, 

আরে হয় হয়, অনেকই তো হচ্ছে চারিদিকে 

বালক ভাবল ওটা বুঝি বালিকা, গিয়ে দেখলে খালাম্মা

ছবিটা ওনারই, শুধু যখন উনি কিশোরী ছিলেন কিংবা যুবতী 

আজ ঢলা যৌবনের খালাম্মা দেখে চমকে উঠবে কি?

চমকিও না, এমন হচ্ছে হরেদরে হচ্ছে

ওটা ফেসবুকের ফেস এটা বাস্তবের,  

কিংবা বালিকা ভাবল ওটা বুঝি সুদর্শন বালক, গিয়ে দেখলো চাচা 

ছবিটা ওনারই, শুধু যখন উনি কিশোর ছিলেন ছিলেন কিংবা যুবক  

আজ ভুঁড়িওয়ালা টাক মাথা চাচা দেখে চমকে উঠবে কি?

চমকিও না, এমন হচ্ছে হরেদরে হচ্ছে

ওটা ফেসবুকের ফেস এটা বাস্তবের,

খুব রাগ হচ্ছে বুঝি? এবার গালাগাল আর ফেসবুকের চৌদ্দগুস্টি 

গলা ফাটিয়ে চেঁচাচ্ছ তুমি, ওটা ফেসবুক না ফেইকবুক?

আসলে বাস্তবে চোখের সামনে যা দেখছ! ওটাই সত্যি; 


এটা তো তবুও ভালো

অন্তত জেন্ডারে মিল আছে

ঐ যে ওপাশের সবুজ বাতিটা জ্বলতে দেখছ?

ঐ যে মেয়েটার ছবিটার পাশের সবুজ বাতি!

তুমি কি কনফার্ম জানো? ওটা মেয়ে নাকি? 

ঐ যে ছেলেটার প্রোফাইলের পাশে সবুজ বাতি জ্বলা দেখে কল দিলে!

ছেলেটা ধরলো? না কেটে দিলো? 

আচ্ছা! ভয়েস সিন্থেসাইজারের নাম শুনেছ?

ছেলের গলা বদলে দেয় মেয়েতে, মেয়ের গলা ছেলেতে

তারপর আরও কত কি?

কি বিরক্ত হয়ে গেলে এখনই?

শুরুই ত করি নি ফেসবুক কাহিনী! 


ফেসবুকের প্রেম, ভালোবাসা, ছলনা, প্রতারণা

ব্ল্যাক মেইল, আত্মহনন আরও কত কি! 

এক একটা কাহিনী শুরু করলে শেষ হবে নাকি? 

তারচেয়ে বরং থাক না!

চলো আমরা ফেসবুকিং করি 

ফেইক প্রোফাইল না রিয়াল তা ভেবে কেন সময় নষ্ট করি?


তুমি কতটুকু সত্যি ইনফরমেশন দিয়েছ ফেসবুকে?

তোমার প্রোফাইল তৈরিতে? 

ফেসবুককে ফেইক বলার আগে আয়নায় একবার নিজেকে দেখ

ফেইক ইনফরমেশন দিয়েছ ওখানে? তবে নিশ্চিন্তে গা ভাসাও ফেসবুকে

ওপাশে কেউ তো বসে আছে তোমাতে ডুবে যেতে,

চলো ভাসি কিংবা ডুবি ফেসবুকে। 



২৯ মে, ২০২১


#কবিতা 


ফেসবুক ডুব 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 






    

 

শুক্রবার, ২৮ মে, ২০২১

সম্পর্কের নদী

সম্পর্ক একটা নদীর নাম, 

অনুভূতির জলে টইটুম্বুর; 

 

ওখানে ক্রমাগত ঢিল পড়তেই থাকে 

সুখ, দু;খ, হাসি, কান্না, আনন্দ, বেদনা

আর স্বার্থের ঢিল  

প্রতিটা ঢিলেই নদীতে ঢেউ ভাঙে 

সম্পর্ক নদীতে জোয়ার আসে, ভাটাও আসে

প্রত্যেকটা সম্পর্কে;


আমি দুকুল ছাপানো নদী দেখেছি 

সুখে ও দুঃখে,

হাসি ও কান্নায়

আনন্দ ও বেদনায়,    

দেখেছি মরা নদী 

স্বার্থের পারদ নেমে যেতে;


স্বার্থ? 

সে একটা আজব ঢিল

সব অনুভূতিতেই থাকে 

থাকে সব সম্পর্ক নদীতে; 


স্বার্থ থাকে সুখানুভূতিতে

থাকে দুঃখের অনুভূতিতে 

থাকে হাসি আর কান্নায় 

থাকে আনন্দে, থাকে বেদনায়

থাকে প্রেমে, থাকে ঘৃণায় 

অনুভূতিগুলোর পরতে পরতে সেটে,    

স্বার্থ সব থেকে প্রকট হয় রক্তের সম্পর্কে এসে;  

ওখানে স্বার্থের ঢিল পড়লে 

অনুভূতির প্রবল ঢেউ ওঠে সম্পর্ক নদীতে,

প্রচণ্ড এক ঝড়ে পাড় ভাঙে 

ভাঙে সম্পর্ক!


আরে! সম্পর্ক কি আর আদতে ভাঙে? 

ওটা তো নদী! ভাঙবে কিভাবে? 

শুধু সম্পর্কের ভাঙনে সম্পর্ক নদীটা শুকিয়ে পরিণত হয় মরা গাঙে, 

আর সম্পর্ক নামটা অনুভূতির কোথাও এক জায়গায় রয়েই যায়, সম্পর্ক নামে; 


স্বার্থের পারদের কাঁটা যখন ওপরে তখন ভালোবাসা নামে

আর স্বার্থের কাঁটা নেমে গেলে অনুভূতিতে রয়ে যায় ঘৃণা নামে

সম্পর্কের নদীতে ক্রমাগত জোয়ার আর ভাটা

স্বার্থের টানে। 


২৭ মে, ২০২১


#কবিতা



সম্পর্কের নদী

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





 


প্রেমের ওকাল সেকাল আর আজকাল

ছেলে মেয়ে কাছাকাছি হলেই বসন্ত মন 

বিপরীত লিঙ্গের দুজন একসাথে হলেই বিশেষ ফেরোমন নির্গমন

এটা প্রকৃতিরই খেয়াল, সকল জীব জগতে; 


একটা বাচ্চা ছেলে আর একটা বাচ্চা মেয়ে খেলছে

খুব ভালো করে লক্ষ্য করে দেখ!

ওদের কেমিস্ট্রিটা দেখেছ? খুব স্বতঃস্ফূর্ত;  

কৈশোরের প্রারম্ভেই ওরা বুঝে যায়, দুজন দুজন থেকে আলাদা 

তবুও কোথায় যেন দুজনার একটা আলাদা টান!  

শুধুই কি খেলার আকর্ষণ? 

উঁহু! ওটা জীব বৈশিষ্ট্য;


কৈশোর থেকেই হরমোন নিঃসরণ শুরু 

ছেলে আর মেয়েতে দৃশ্যমান শারীরিক বৈশিষ্ট্য

পরস্পরের প্রতি অন্যরকম একটা টান, 

যেন ডালে ডালে কচি পাতা আর মনে ডাক দিচ্ছে বসন্ত 

একটু মন কেমন কেমন তো করবেই

কেউ কেউ বলে সাময়িক আকর্ষণ 

আসলে প্রেমের সূচনা লগ্ন 

তবে খুব গভীর কিছু নয়

বাতাসের সাথে সাথে খুব সহজেই প্রেমের গতিপথ বদলায়

ঐ যে! খুব সহজ একটা কথা! ইনফেচুয়েশন; 

ঐ বয়সের বেশীরভাগ প্রেম কি খুব সহজেই ঝরে যায় 

উঁহু! অল্প কিছু প্রেম হয়, সারাজীবন মনে দাগ রয়ে যায়; 


যৌবন সাধারণত শরীর নির্ভর  

তবে যুগ নির্ভরও বটে, 

কোন একটা সময় প্রেম ছিলো স্পর্শের বাইরে, দূর দূর থেকে

চিঠি যুগের প্রেমের কথা আজকাল ইতিহাস হয়ে গেছে; 

তারপর একটা সময় প্রেম ছিলো টেলিফোনের ক্রাডলে 

নিজের বাড়িতে ল্যান্ডলাইন না থাকলে মহল্লার এ বাড়ি ও বাড়ি

তবে সেটাও সীমিত আকারে

ঐ প্রেমগুলোতে শরীর ছিলো কোথায়?

বরং মনের ঘনত্ব ছিলো অনেক বেশি কিংবা প্রেমের 

এখনো কেউ কেউ হয়তো সেই দিনগুলোর কথা মনে করে

সেই দিনগুলোর কথা মনে হলে হয়তো আজো কারো কারো মন পোড়ে, 

ঐ যে বললাম! প্রেমেতে মনের ঘনত্ব! 

সেটা কোন একটা সময়ের প্রেমে ওটা আসলেও ছিলো; 

 

তখনকার কিছু প্রেম পরিণয়ে সমাপ্তি 

পরবর্তীতে বেশীরভাগ সুখের সংসার 

আর অল্প কিছুর পরিণাম বিচ্ছেদের হাহাকার,  

যে প্রেমগুলো পরিণয়ে জাইগোট হয় নি!

সেগুলো একটা সময় পর্যন্ত বাসা বেঁধে থাকে প্রেমিক প্রেমিকার মনে

প্রথম প্রথম হয়তো খুব কষ্ট হয়েছে

কেউ কেউ বোকার মত জীবন দিয়ে ফেলার মত আচরণও করেছে

তবে পরবর্তীতে পরিবারের চাপে কিংবা অন্য কোন কারণে 

নিজেকে বেঁধে নিয়েছে বিবাহ নামক এক অমোঘ বন্ধনে

নতুন মানুষ'কে মনে বসাতে হয়তো কষ্ট হয়েছে, কিছু সময় লেগেছে

তবে সংসার নামক বন্ধন সময়ে এক করে ফেলেছে দুজনকে

তারপর তো বাচ্চাকাচ্চা আর সংসারের হ্যাপা 

স্বামীর কাছে প্রেম বলতে স্ত্রী আর স্ত্রীর কাছে স্বামী, সাধারণ ভাবে

ছোঁকছোঁক আলুর দোষ, পরকীয়া ওগুলো'কে না হয় ভাইরাস বলি!

কিংবা ঐ যে! ইনফেচুয়েশন! 

তবে ভাইরাস মাঝে মাঝে কিন্তু মহামারি, দাম্পত্যকেই ধ্বংস করে দেয়; 

সময়ের টিকটিক ঘড়ি একসময় প্রৌঢ়ত্বে কিংবা বার্ধক্যে 

পুরনো সেই প্রেম? 

সময়ে সব কিছুই খুব ফিকে হয়ে আসে

হ্যাঁ! হয়তো আজো মনে পড়ে

খুব একান্ত একলা সময়ের দীর্ঘশ্বাস ছাড়া বৈ তো নয়;  

   

আজকালকার যৌবন! 

পুরোটাই যেন শরীর নির্ভর  

চিঠি-যুগ আর ক্রাডল ফোনের যুগ পার হয়ে হয়ে এখন ডিজিটাল যুগ

আজকালকার প্রেমকে কি বলব?

ডিজিটাল? ভার্চুয়াল? নাকি শরীর নির্ভর?

একদিন ভার্চুয়ালে পরিচয়, একদিন মোবাইল ফোনে

একদিন কফি শপে, চোখাচোখি থেকে ঠোঁটেঠোঁটে

তারপর বিছানা, 

প্রেমের সংজ্ঞা জিজ্ঞাসা কর!

উত্তর পাবে শরীর তো প্রেমেরই অংশ;


প্রেমিকের প্রেমিকা বদল কিংবা প্রেমিকার প্রেমিক

সেও মুহূর্তের ভগ্নাংশ 

ঐ চুমু খেতে খেতেই! 

কিংবা কাপের কফি শেষ হওয়ার আগেই হুট করে;  

ভালো করে জিজ্ঞেস করে দেখ! ওরা বলতেই পারবে না 

প্রেমের আগে শরীর না পরে;

হয়তো এটাই প্রেমের ডিজিটালাইজেশন! 


তারপর কি হবে? 

সময় বলে দেবে। 


২৬ মে, ২০২১


#কবিতা 


প্রেমের ওকাল সেকাল আর আজকাল 

 - যাযাবর জীবন  


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



 





মায়ের ছেলে আর স্ত্রীর স্বামী

ছেলেগুলো বড্ড অদ্ভুত এক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে সংসার করে, 

এখানে ছেলেগুলো বলতে আমি মায়ের ছেলে'কে বুঝাচ্ছি

এখানে ছেলেগুলো বলতে আমি স্ত্রীর স্বামী'কে বুঝাচ্ছি;  


শাশুড়ি-বৌ এর সম্পর্ক বোধহয় প্রায় প্রতিঘরেই একই রকম

ওপর দিয়ে দিয়ে গলায় ভাব গলায়  

আসলে তালে থাকে কখন কে বাঁশ দিবে কার তলায়

বড্ড খারাপ ভাবে বললাম বোধহয়, তাই না? 

সত্যিগুলো একটু খারাপই হয়, খানি তিতা 

সবার সামনে কিন্তু শাশুড়ি-বৌ পরস্পর খুব মিতা,  

আরে! হাঁড়িকুঁড়ি একসাথে হলে শব্দ তো একটু পাবে  

তাই বলে কি সারাক্ষণ ঝনঝন বাজতেই হবে? 

ও হে! বাইরে থেকে তোমরা শব্দ শুনতে পাবে না 

পাবে কে? 

মায়ের ছেলে আর স্ত্রীর স্বামী 

যেখানেই একঘরে শাশুড়ি বৌ, ভুল বললাম কি আমি? 


তোমরা পাটা দেখেছ, দেখেছ পুতো

মশলাও দেখেছ, পাটা-পুতোয় পিষছে যতো

ওটা একটা উপমা ধরে নাও

শাশুড়ি পাটা হলে বৌ পুতো 

দুজনাই তক্কে তক্কে রয় আর সারাক্ষণ খুঁজছে ছুতো 

মশলা কে জানো?

মায়ের ছেলে আর স্ত্রীর স্বামী 

যেখানেই একঘরে শাশুড়ি বৌ, ভুল বললাম কি আমি? 


তাও ভালো আজকাল প্রায় বিদায় নিয়েছে একান্নবর্তী পরিবার

দু একটা যদি খুঁজে পাও ওখানে তো সং দের কারবার 

শাশুড়ি ননদ একদিকে আরেকদিকে জা রা

একদল ঢোলে বাড়ি দেয় তো আরেকদলের হাতে কানাড়া 

জা'য়ে জা'য়ে যুদ্ধ সেও তো কম না!

জায়ে জায়ে থেকে ভাইয়ে ভাইয়ে 

লবণ ছিটায় শাশুড়ি ননদে 

যাতায় ছাতু পিষে শাশুড়ি ননদ আর জায়ে জায়ে 

যব কোথায় জানো? 

ঐ যে! মায়ের ছেলে, বোনের ভাই আর স্ত্রীর স্বামী   

যেখানেই একঘরে শাশুড়ি-ননদ আর বৌ, ভুল বললাম কি আমি?


সংসার বড্ড এক আজব রঙ্গশালা 

ছেলেগুলো অসহায় চুপ করে কানে তালা 

শাশুড়ি বৌ এর তাণ্ডব ঘরে ঘরে, প্রতিঘরে

কোন ছেলেই মা'য়ের কথার প্রতিবাদ করে? 

কোন স্বামীরই বা সাধ্য আছে, স্ত্রীর কথা ফেলে? 

মায়ের ছেলে আর স্ত্রীর স্বামী, পিষ্ট যাতার কলে। 



২৫ মে, ২০২১ 


#কবিতা 


মায়ের ছেলে আর স্ত্রীর স্বামী

 - যাযাবর জীবন 

 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





 


ভ্রমণের নেশায়

যারা নেশা করে তাদের রক্তের ভেতর নেশার বীজ ঢুকে যায়, 

এক একজনের এক এক নেশা 

আমি সেই ছোটবেলা থেকেই বুঁদ হয়ে আছি ভ্রমণের নেশায়;


দেশের আনাচ কানাচ থেকে শুরু, 

একটা সময় দাপিয়ে বেড়িয়েছি বন থেকে বনে 

এ সাগর, ও সাগর, সে সাগর পাড়ি দিতে দিতে পাড়ি দেয়া হয়ে গেছে সাত সমুদ্দুর, 

টিলা বাইতে বাইতে পাহাড়, বাইতে বাইতে চষে বেড়িয়েছি হিমালয়র পাদদেশ জুরে 

নাহ! কাঞ্জনজঙ্গা কিংবা এভারেস্টে ওঠা হয়ে ওঠে নি আর

বয়স শুধু একটা সংখ্যা নয়, ওখানে শারীরিক সামর্থ্যও সূচক বটে 

একটা সময় থিতু করে দেয় মানুষ'কে; 


দেশ দেখতে দেখতে বিদেশ

এক দেশ থেকে অন্য দেশ

কতই না বৈচিত্র্য মানচিত্রে! 

বৈচিত্র্য বিভিন্ন জায়গার মাটিতে, বিভিন্ন রঙ এর পানিতে 

বৈচিত্র্য পাহাড়ের ঢালে ঢালে, বনের গাছে গাছে 

বৈচিত্র্য সবুজ পাতায় পাতায়, মেঘ, বৃষ্টি আর কুয়াশায় 

ওটা ভ্রমণের নেশা 

যার আছে সেই জানে; 


এ নেশা কিন্তু অন্য বাকি সব নেশা থেকে ভয়ংকর

কোন রিহেবিলিটেশন সেন্টার তৈরিই হয় নি এ নেশার চিকিৎসায়! 

নেশা ভালো হয় কিভাবে?

নেশার একটাই মাত্র ঔষধ - ভ্রমণ, 

রক্তে যখন ভ্রমণ ডাকে তখন পৃথিবী একদিকে আমি অন্যদিকে

সময় লাগে না বের হতে ঘর থেকে 

কখনো ব্যাগ গুছিয়ে, কখনো বা একবস্রে 

হ্যাঁ! টাকা! সে তো লাগেই

চিকিৎসায় টাকা লাগবে না?

পরিবার পরিজন আর বন্ধুবান্ধব বলে অপচয়

আমি বলি চিকিৎসা ব্যয়,

আমার জীবনের যা কিছু সঞ্চয়, পুরোটাই নেশা চিকিৎসায় অপচয়!  

ভ্রমণ নেশার চিকিৎসায়; 


অনেকগুলো দেশ ঘোরা হয়ে গেছে 

অনেকগুলো মহাদেশ 

অনেক সমুদ্দুর

অনেক পাহাড়

অনেক মাটি,

এই যে মাটির কথা বলছি! 

থাকার জন্য আমার সবচেয় পছন্দ কিন্তু মাটির ঘর

টিনের চৌচালা, সামনে ছোট্ট একটুকরো ঝুল বারান্দা

কিছু ঝুলানো ফুলের টব, 

বেলি আর জুঁই এর গন্ধে ম ম করা বিকেল

হাতে চায়ের কাপ, আর বাইরে ঝুম বৃষ্টি, 

আজকাল আর টাকায়ও কোথায় মেলে মাটির ঘর! 

ওগুলো সব ভেঙে তোমরা ওখানে তুলছ ইট কাঠের দালান;    


মাটির ঘরের কথা মনে হতেই আমার মনে পড়লো 

একটা জায়গা রয়ে গেছে আমার বাকি; 

একদিন, কোন একদিন ঠিক বেরিয়ে যাব ওখানে ভ্রমণে

এবার আর কাউকে সঙ্গে নেব না 

বরং একা যাব পেছনের সব সম্পর্কগুলো ভেঙে    

সব আনন্দ, সব বেদনা, সব দুঃখ আর হতাশা

সব পাওয়া আর না পাওয়া 

সব, সবকিছু পিছু ফেলে 

আমি একাই একদিন ঠিক বেড়িয়ে যাব ওখানে ভ্রমণে, 

যেতে যেতে ঢুকে যেতে থাকব মাটি খুঁড়ে মাটির গভীরে 

একটা ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘরে, 

ওখানে টিনের চাল থাকবে না 

থাকবে কিছু টুকরো টুকরো বাঁশের মাচা 

তার উপর কিছু বাঁশের চাটাই 

তার উপর ঝুরঝুরে মাটির প্রলেপ ফেলা ছাদ,  

ওটা তোমাদের ভাষায় একপেশে যাত্রা কিংবা একপথে

আমি একবার গেলে ফিরে আসব না আর ওখান থেকে;


প্রতিবারই যখন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরি, ফিরে এসে কিছু লিখে রাখি

সেই জায়গাটা সম্পর্কে, সেই ভ্রমণ সম্পর্কে 

তবে এই যাত্রাটার কথা লিখা হবে না কোথাও 

এই ভ্রমণের খুঁটিনাটি জানাতে পারবো না তোমাদের,

ঐ মাটির ঘরটা থেকে কেউ ফেরত আসে না

ছোট্ট একটা মাটির ঘর, মাত্র সাড়ে তিন হাত

অথচ সামনে কি বিশাল এক ভ্রমণ! নতুন এক জীবনে.........

 

যাত্রার শুরুটা ছোট্ট ঐ ঘর থেকে, শেষটা জানা নেই

বারযাখ জীবন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান সীমিত। 


১৪ মে, ২০২১


#কবিতা 

   

ভ্রমণের নেশায় 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



   

দিবসের দিবসে দিবস

আমার একটা মা আছেন

এখনো বেঁচে আছেন 

আলহামদুলিল্লাহ্‌;


আজ সারাদিন যাবত ফেসবুক ওয়ালে ওয়ালে মায়ের ছবি

ওগুলো মায়ের সাথে সেলফি

ওগুলো মায়ের কেক কাটার ছবি,

 - আমি মায়ের সাথে একটা সেলফিও তুলি নি

 - মা দিবসে মায়ের সাথে কোন কেক কাটি নি 

 - আমার একটুও দুঃখ হয় না, মা দিবসে মায়ের সাথে সেলফি তুলি নি বলে 

   মায়ের সাথে তো আমার প্রতিদিনই খুনসুটি,  

   আরে! আমার জলজ্যান্ত পুরোটা মা'ই আছেন আমার সাথে, আমার সেলফির প্রয়োজনটা কোথায়? 

   আর বছরে একদিন ভার্চুয়ালে সেটা দেখানো!

   ধ্যাত! বাকি তিনশত চৌষট্টি দিন কোথাও কি আছেন উনি তোমার ভার্চুয়াল খাতায়? 

   আচ্ছা! তোমরা মায়ের মূল্য কি সেলফিতে নির্ধারণ কর? 

 

আজ একদিনে সারাদিন যাবত মা'কে নিয়ে রচিত গল্প, কবিতা

 - লক্ষাধিক - বাংলা ভাষাভাষীদের মাঝে

 - কোটির অধিক - পৃথিবীর সকল ভাষাভাষীদের মাঝে,  

আমি স্ক্রল করে করে দেখছিলাম

কিছু কিছু পড়ছিলাম

আর খুব আশ্চর্য হচ্ছিলাম - মায়েদের নিয়ে সব গল্পগুলোতে,

আমার মনে একটাই প্রশ্ন উঠেছে, 

 - এই যে কোটি কোটি গল্পগুলো! সবই কি একদিনে তৈরি হয়েছে?

আচ্ছা! একবার ভেবে দেখি তো!

 - বছরের বাকি অন্তত অর্ধেক দিনগুলোতে যদি এই সন্তানগুলোই 

   মা'কে এভাবে মনে করে গল্প আর কবিতা লিখে যেতো, সেলফি তুলে পোস্ট করতে থাকতো! 

   তবে তো ফেসবুকটা পুরোটাই মা'বুক হয়ে যেত! 

যাহ! তাই আবার হয় নাকি? ওগুলো অল্পবুদ্ধি মানুষের অনুর্বর মস্তিষ্কের কল্পনা; 


আমি শুধু মা'কে নিয়ে তোমাদের হাজার ভালো ভালো কথা ফেসবুকে পড়েছি!

 - আর অনুর্বর মস্তিষ্কে জোড় দিয়ে বের করে আনার চেষ্টা করেছি 

   আচ্ছা! আমার মায়ের সাথে এই কাজটা কি আমি করেছি?


আমি শুধু মা'কে নিয়ে তোমাদের হাজার না করতে পারার অনুভূতিগুলোর কথা পড়েছি!

 - আর অনুর্বর মস্তিষ্কে জোড় দিয়ে বের করে আনার চেষ্টা করেছি 

   আচ্ছা! আমার মায়ের সাথে এই কাজটা ভুলক্রমে কোন সময় করে ফেলি নি তো! 


তোমাদের মা'দিবসে সারাদিন ঐটুকুই ছিলো আমার কর্মকাণ্ড 

আর আমার কাছে? তিনশত পঁয়ষট্টি দিনই তো আমারই মা  

দিবস সহ কিংবা দিবস ছাড়া;


তোমাদের গল্পের ঐ মা'হীন অনুভূতিগুলো আমি এখনো পুরোপুরি বুঝতে পারি না 

 - হয়তো, আমার মা আমার কাছেই আছেন বলেই! 

   তোমাদের জন্য হয়তো এটা খুবই কষ্টকর অনুভূতি, সেটা আমি বুঝি 

   তবে আমার কিন্তু বাবা নেই, বাবা'হীন এই অনুভূতিটা কিন্তু কোন নির্দিষ্ট দিনে আমার মাথায় আসে না

   বাবা'হীন এই অনুভূতিটা আমার তিনশত পঁয়ষট্টি দিনের, অসহায় এক বোবা অনুভূতি

   একলা হলেই আমাকে খুঁড়ে, কিংবা আমার সন্তানদের প্রতি বাবার দায়িত্ব পালনের প্রতিক্ষণে; 

 

তোমাদের লিখা মায়ের প্রতি দায়িত্ব হীনতার গল্পগুলো আমায় একদমই টানে না 

 - মা তো আমার! পুরোটাই আমার  

   আমি মন থেকে আমার সাধ্যের পুরোটুকু দিয়েই মায়ের প্রতি দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি 

   এখানে দায়িত্ব হীনতার কথা আসবেই বা কেন?

   মা কি অন্য কারো? 


তোমাদের গল্পের ঐ বৃদ্ধাশ্রমগুলো আমাকে বড্ড টানে - গল্পগুলো বড্ড করুণ বলে, 

 - আমার মা আমার কাছেই আছেন 

 - আমার মা বৃদ্ধাশ্রমে! আমার জীবিতাবস্থায় ওটা কল্পনাতেও আসে না; 


আমার কাছে আসলে কোন দিবসেরই কোন আলাদা বৈশিষ্ট্য নেই, 

না মা দিবসের

না বাবা দিবসের

না ভাই দিবসের

না বোন দিবসের

না ছেলে দিবসের 

না মেয়ে দিবসের


এরা প্রত্যেকেই আমার আপন 

প্রত্যেকেই জড়িয়ে আছে জীবন ঘিরে 

বছরের তিনশত পঁয়ষট্টি দিন আমার পুরোটা স্বত্বা জুরে;


দিবসের দিবসে দিবসগুলো

ভালোবাসাকে কেমন যেন সীমিত করে দেয়, 'মাত্র একদিনে'; 

ওটা আমার স্বল্প-বুদ্ধি অনুর্বর মস্তিষ্কের চিন্তা চেতনা 

ওটা নিয়ে তোমরা ভেবো না। 






০৯ মে, ২০২১


#কবিতা 


দিবসের দিবসে দিবস 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



  



 

 

ডাকছে ঘর

মাটির ঘরটা বড্ড গরম

নিচ্ছিদ্র, ভ্যাপসা, দমবন্ধ

আলো নেই কোথাও, ঘুটঘুটে অন্ধকার 

আমি ওখানেই শুয়ে আছি, মাটিচাপা 

ওখানেই একদিন শুয়ে থাকবে তুমি 

একদিন সে, ও আর তারা ওরা সকলে;


পিঠের নীচে পাথর কণা কি? 

প্রচণ্ড ব্যথা, যন্ত্রণা 

যন্ত্রণা বুঝছ না? 

পিঠের নীচে একটা নুড়ি রেখে শুয়ে দেখ তো! 

বেশিক্ষণ না মাত্র দু মিনিট, তাহলেই বুঝবে, 

আমি শুয়ে আছি যুগ যুগ হয়ে গেছে

আরও কত লক্ষ কোটি যুগ শুয়ে থাকতে হবে!

এভাবেই, এই ঘুটঘুটে অন্ধকারে

দমবন্ধ গরমে  

নুড়ি পাথর পিঠে সয়ে 

তারপরই তো আসবে সেই দিন 

শেষ বিচার; 


প্রতিক্ষণ চিৎকার করে কেঁদে উঠি!

একটু আলোর জন্য

একটু বাতাসের জন্য

একটু যন্ত্রণা লাঘবের জন্য,

কেউ কি শোনার আছে?

এটা মাটির ঘর

এটা কবর, 

এখানে কথা বলে শুধুমাত্র আমল নামা

কবর ধনী চেনে না

গরীব চেনে না

অর্থ বিত্ত খ্যাতি কিছুই বুঝে না 

সে শুধু চেনে আমলনামা  

সে শুধু বুঝে আমলনামা

পৃথিবীতে থাকতে যতটুকু নিয়ে এসেছিলাম 

ভালো কাজের সঞ্চয়

সেটুকুই এখানে কথা কয়;


আর বাকি সব অর্থ বিত্ত সম্পদের পাহাড় 

লোভ লালসা, আর পাপের সাগরগুলো 

এখানে টিটকারি মারে প্রতিটা পাপের বাঁকগুলো 

এখানে উপহাস করে পাপগুলো, আমারই করা সব পাপ; 

বিনিময়! শুধুই যন্ত্রণা, কবর আজাব  

এখানে আসার আগে কেউ বোঝে না;


ওহে মানব!

সময় থাকতে আমলনামায় কিছু ভালো কাজ লিখিয়ে নিও; 

কবে লিখাবে?

 - তা তো তোমরাই ভালো জানো;

কার কতটুকু সময় বাকি?

 - সেটা কে বলতে পারে? 

   চোখ বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত কিংবা দম বন্ধ হওয়ার! 

   এখন তখন বিকেল সন্ধ্যে রাত 

   আজ কাল কিংবা পরশু, যে কোন সময়ই তো হতে পারে! 


টিক টিক টিক টিক করছে ঘড়ির কাঁটা

মাটির ঘর ডাকছে 

হাতছানি ডাকছে কবর; 


প্রস্তুতি নিয়েছ তো? 



৯ মে, ২০২১


#কবিতা 


ডাকছে ঘর  

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





বোধহীন অনুভূতি

মনের মধ্যে কিছু অনুভূতি খেলা করে,

প্রত্যেকের মনেই; 

 

অনুভূতিগুলো এক এক রকম হয়

সকাল, দুপুর, বিকেল বা রাতের অনুভূতিগুলো 

ওগুলো প্রহরে প্রহরে রঙ বদলায়,  

প্রহরে প্রহরে যে মন বদলায়! 


অনুভূতিগুলো লিখে রাখতে পারলেই কবিতা 

তা না হলে অনুভূতিগুলো অনুভূতির ভিড়ে হারায়

একদম একই রঙের, সেই একই মনের একই অনুভূতি 

দুটো আলাদা আলাদা প্রহরে, কোথায় আর পাওয়া যায়? 


আমি কাগজে অনুভূতি আকার কথা বলছি 

আমি মনের আবেগগুলোর কথা বলছি 

আমি কবিতার কথা বলছি 

অনুভূতিগুলোও তো কবিতাই, তাই না? 


কেউ বোঝে 

কেউ লিখে 

কেউ বা অনুভূতিতে হারায়, অনুভূতির ভিড়ে

অনুভূতিগুলোর ঢেউ একের পর এক আছড়ে পড়ে, মন যমুনায়; 


আজকের অনুভূতিগুলোর কথা লিখা হয়েছে কি? 

আমি রঙের বদলেগুলো দেখছি, আজকের অনুভূতির;


সকালের উজ্জ্বল সাদা রঙের অনুভূতিগুলো

বেলা উঠতেই আকাশে গিয়ে নীল হয়ে গিয়েছিলো  

দুপুরের গরমে অস্থির হয়ে শ্যাওলা পুকুরে সাঁতার কেটে 

অনুভূতির সারা গায়ে সবুজ মেখে 

বিকেলের বিষণ্ণ রোদের ধুসর হয়ে

সন্ধ্যের লালাভ সূর্যাস্তে লাল হতে হতে 

রাতে একদম মিশমিশে ঘন কালো হয়ে গিয়েছে, 

সারাদিন আজ অনুভূতিগুলো আঁকতে পারি নি; 

অন্ধকারে অনুভূতি আঁকব কি দিয়ে?


সাদা খাতায় কলমের দাগ পড়ার আগেই 

মুহূর্তের অনুভূতিগুলো  মুহূর্তেই বদলে যায়

আমি কালো কলম হাতে অনুভূতিহীন আঁচর কাটি 

বোধহীন কবিতার খাতায়। 



০৭ মে, ২০২১


#কবিতা 


বোধহীন অনুভূতি 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





গোপন কিছু দুঃখবোধ

কিছু কিছু দুঃখবোধ আছে, কাউকে বলা যায় না

কিছু কিছু দুঃখ খুব গোপন

সেগুলোর মাঝে কিছু লজ্জার; 


এই যে ধর আজকাল যা হচ্ছে!

বুড়া বাবা মায়ের সাথে সন্তানের বিচ্ছেদ

কাতারে কাতারে বৃদ্ধাশ্রম

এগুলো আজকাল যেন অনেকটাই গা সওয়া হয়ে গেছে

ঘটনাগুলো পর্যায়ক্রমে ঘটতে ঘটতে

অথচ ঘটার কথা ছিলো না কিন্তু!

দশ বা বিশ বছর আগে কি বৃদ্ধাশ্রমের কথা ভাবতে পেরেছিলাম আমরা?  

তবে আজ কেন আমাদের মনে এটা একটা ছাপ ফেলে দিয়েছে 

সন্তান! করতেই পারে,

আজকাল এটা কি খুব স্বাভাবিক হয়ে গেছে? 

বাবা হয়ে আমি ভীত হয়ে আছি

চিন্তায় আছি আমার বুড়িটাকেও নিয়ে

যে কোন সময় আমি শব হলে, তার কি হবে? 

তবুও এটা যেন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে? আজকের দিনে; 

কিন্তু ধর যদি উল্টোটা হয়?

যদি সন্তানকে ঘর ছাড়া হতে হয়?

সন্তান তার দুঃখবোধ কোথায় বলবে কাকে?

লজ্জায় কার কাছে, কোথায় লুকোবে? 

এগুলো খুব গোপন, সন্তানরা বলে না কাউকে

তোমরাও জান না খুব গোপন সে দুঃখগুলোর কথা; 


এই যে যেমন আজকের করোনা নামের এক মহামারী! 

বাবা মায়ের হলে সন্তানের ছুটাছুটি

কিংবা সন্তানের হলে বাবা-মায়ের 

কারো কি ভাইরাস ভয় করার কথা?

নাকি ভয় করবে এরা করোনা? 

এটাই স্বাভাবিক, তাই না?

কিন্তু ধর যদি উল্টোটা হয়!

বাবা-মা পড়ে আছে বিছানায়, সন্তান তল্পিতল্পা সহ শ্বশুর বাড়িতে

ঐ বাবা-মায়ের দুঃখবোধগুলো? ওগুলো বলে বোঝাবার?

তোমরা বোঝ না? 


কিংবা ধর উল্টোটা যদি দেখতে হয়? 

সন্তান বিছানায়, বাবা-মা ভয়ে ঘর ছাড়া

হয় কোন সন্তানের বাসায় কিংবা অন্য কোথাও, 

বুড়োবুড়িকে যদি ধরে ফেলে ভাইরাস? 

সন্তান ঠিক বোঝে না, এটা দুঃখবোধ না লজ্জাবোধ?

এগুলো খুব গোপন, কাউকে বলা যায় না;


করোনায় মৃত্যুতে বাবা-মা সন্তানকে শেষ দেখাটাও দেখেনি

সন্তান দেখেনি বাবা-মায়ের শবের চেহারা

সেটাও তো আমরা দেখেছি! তাই না? 

এগুলো দুঃখের দুঃখবোধ নাকি লজ্জাবোধ?

খুব গোপন সেই দুঃখগুলো, আসলে বোঝে না;  


করোনা তো মহামারী 

ভয় পেতেই পারে বাবা-মা

ভয় পেত পারে সন্তান

মৃত্যুভয়! কার না আছে? 

আচ্ছা! তোমরা ঐ সন্তান'কে দেখেছ কখনো?

দূরে সরিয়ে দেয় বাবা মায়ের শ্বেতী, কুষ্ঠ কিংবা অন্য কোন রোগ হলে!  

কিংবা ঐ বাবা-মা'কে দেখেছ? 

একই রোগে সন্তানকে ঘৃণায় দূরে ঠেলে? 

এগুলো তো ছোঁয়াচেও নয়, নয় ভাইরাস

তাহলে ভাইরাস কোনটা?

ভুক্তভোগী সন্তান কিংবা বাবা-মা কেউ বোঝে না

দুঃখ কি ভাইরাস চেনে? 

নাকি শুধু দুঃখই পেয়ে যায় আপন জনের কাছ থেকে?

আসলেও কি ভাইরাসের অস্তিত্ব আছে? 

নাকি সেগুলো পুরোটাই আমাদের মনে? 

দুঃখগুলো কাউকে বলা যায় না

খুব গোপন ঐ দুঃখগুলোর কথা,  

যে দুঃখগুলো লজ্জার আবরণে ঢাকা। 



     

০৬ মে, ২০২১


#কবিতা 


গোপন কিছু দুঃখবোধ 

 - যাযাবর জীবন 



ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



চিঠির উত্তরে চিঠি

যুগ যুগ আগের লেখা একটা অনুভূতি

ছড়িয়ে দিয়েছিলাম নেটে 

খুব একটা মাথায় ছিলো না 

ইথারে উত্তর আসবে কোথাও থেকে

আমরা সে যুগে চিঠি লিখতাম কাগজে কলমে

ভালোবাসায় মুড়ে পাঠিয়ে দিতাম হলুদ খামে;

আজকাল আর কাগজ কলম কই?

হারিয়ে গিয়েছে হলুদ খাম দোকানগুলো থেকে

এখন কষ্ট করে খাম খুঁজতে হয় সরকারী ডাক বিভাগে

ভালোবাসার চিঠি? সে তো লেখা হয় ভার্চুয়ালে 

ইথারে ইথারে ভেসে প্রেমিকের ফেসবুক দেয়ালে

কিংবা ম্যাসেঞ্জারে;   



কাল প্রায় সারারাত পুরনো প্রেম মনে করে আমিও চিঠি লিখেছিলাম ভার্চুয়াল দেয়ালে 

ছড়িয়ে দিয়েছিলাম ইথারে খেয়ালে 

তারপর ভালোবাসার আবেশে জড়িয়ে স্বপ্ন ঘুম 

কে জানতো ভার্চুয়াল চিঠি ওদিকে কাউকে দিয়েছিলো চুম!

সকালে ঘুম থেকে উঠেই ভ্যাবাচ্যাকা

ভার্চুয়াল দেয়াল দেখে আমি সত্যিই বোকা 

আমার ভার্চুয়াল চিঠির উত্তর 

না হয় প্রায় তিন যুগ পর 

পেলাম তো উত্তর! 


তুই তাহলে স্বীকার করেই নিলি তুই ভালোবাসা বুঝেছিলি

স্বীকার করেই নিলি কখনো ভালো তো বেসেছিলি!

সেটুকুই না হয় থাকুক আমার প্রাপ্তি 

আর বাকি সব পাওয়া আর না পাওয়ার অবোধ্য অনুভূতি,

অপারগতা বলছিস কেন রে? 

সবাই তো আর সব কিছু পারে না 

সময়, পরিবেশ, পরিস্থিতি! আমি ঠিক বুঝি; 


নারীর ছলনা কবে বুঝেছিলো নর!

যখনই তোর তিলে ডুবতে চেয়েছিলাম তখনই মিথ্যা অভিনয় তোর

ওটা নাকি কাজলে বানানো

আমি বিশ্বাস করেছিলাম সরল মনে

আর নয়তো ঠিক কোন একদিন পড়ার ফাঁকে 

ঐ তিলে একবার হলেও দিতাম চুমে,

রাগ করতি? 

সে তো তখন প্রায়শই দেখতাম তোর ঠোঁটের ভাঁজে

চোখের লাজে 

মেঘের সাথে তোর কোঁকড়া চুল বেয়ে বেয়ে নেমে আসা 

রাগগুলোতে কি শুধুই রাগ ছিলো  

আমি তো তার ভেতরেই খুঁজে পেয়েছিলাম তোর ভালোবাসা, 

আরে! মন ভালোবাসা হলে সে কি আর লুকিয়ে রাখা যায়!

না তুই পেরেছিলি সেদিন?  

না আজ পারলাম আমি?  

তাই তো প্রায় তিন যুগ পরেও ইথারে ইথারে ভালোবাসার কানাকানি;


এখন ঢলা বিকেলর আমার এখানে 

তোর ওখানে নিশ্চয়ই সন্ধ্যা নেমেছে

ভৌগলিক অবস্থানে আজ যদিও আমরা দুজন দু মেরুর বাসিন্দা!

ভালোবাসার মেরুকরণ কিন্তু আমাদের তিন যুগ আগের, তাই না? 


জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি

কি সুন্দর ঘন নীল আকাশ 

আমার জানালার ঠিক পাশে ই সজনে গাছটায় কিছু সজনে ডাটা ঝুলছে

ভালোবাসার বাতাসে,

আমি সজনে ডালে তাকাতেই একটা কাক উড়ে গেলো কা কা রবে 

যেন বলতে চাইছে, তাকাস না এদিকে আবার তোর ভালোবাসা হয়ে যাবে! 


আরে ভালোবাসা তো সেই সেদিনই হয়ে গিয়েছিলো

সেই তিন যুগ আগে। 


তুই একটু জানালা খুলে তাকা তো! 

সন্ধ্যা কি নেমেছে তোর আকাশে?


মন বাড়িয়ে দেখ

তোর সকালের চিঠির উত্তর ভাসছে সন্ধ্যার বাতাসে; 


ভালোবাসা থাকে ভালোবাসার অপেক্ষায় 

চিঠির অপেক্ষায় না হয় রইলো চিটি!    


০৫ মে, ২০২১


#কবিতা  

   

চিঠির উত্তরে চিঠি 

 - যাযাবর জীবন 



ছবিঃ মোবাইল ক্লিক। 





পুরনো সেইসব নীল চিঠি

সেদিনের সেই বিকেলের কথা মনে আছে?

আমাদের প্রথম দেখা! 

তোকে দেখতেই মন গেয়ে উঠেছিলো - ভালোবাসি

সেই সেদিন থেকেই শুরু, 

তারপর তুই, আমি আর আমাদের নীল চিঠি;


সবাই ভালোবাসা বোঝে না, তুই বুঝেও অবুঝ ছিলি

সবাই ভালোবাসার কথা বোঝাতে পারে না, আমার ব্যর্থতা

তবুও কিছুই কি বুঝিস নি?

তবে কেন আড়ে আড়ে ঐ চোখ ঠারা?  

ঠোঁটের কোণে হাসির ছোঁয়া 

গালের টোলে লালের আভা 

চোখের কোণে দুষ্টু হাসি,

এগুলোর যে কোন একটাতেই তো তোকে ভালোবাসি! 


স্যার এর বাড়ি পড়তে যাওয়ার কথা মনে আছে? 

এক টেবিলের ওপাশে তুই, এপাশে আমি

স্যার অংক বোঝাতো আমি বুঝতাম তোকে 

স্যারের চোখ ফাঁকি দিয়ে আমি ছুঁয়ে দিতাম তোর আঙুল  

একটু শিউরে উঠতি কি? 

আমার কিন্তু চোখ এড়ায় নি,  

তারপর খাতা রেখে টেবিলের ওপর তোর আঙুলের আঁকিবুঁকি 

আর ঠোঁটে মৃদু হাসি 

আমি নীরব চিৎকারে বলতাম, ভালোবাসি ভালোবাসি; 


একদিন দেখলাম উদাস হেঁটে যাচ্ছিস রাস্তা ধরে

একফোঁটা ঘাম তোর নাকের ওপর  

ঘাম না মুক্তোদানা? 

আমি চেয়ে আছি 

আর মনে মনে বলছি, ভালোবাসি ভালোবাসি; 


ঠোঁটে তিল বড্ড পছন্দের ছিলো তোর

নিজের ছিলো না বলে বড্ড আক্ষেপ 

মাঝে মাঝে কালো কাজলে খুব যত্নে একটা তিল এঁকে নিতি ঠোঁটের কোণে  

ওটা তিল না রে! ছিলো ঠোঁটের মাঝে লেগে থাকা আদর 

আমি দুষ্টুমিতে চুমুর ইশারা করতেই ধমকে উঠে বলতি, বাঁদর;

আর তোর ঐ দীঘল কালো চুলের ঢেউ! 

ওখানে তো হারিয়ে যেতে পারতো যে কেউ

তোকে যখনই প্রেমের ইশারা! তখনই তোর খিলখিল হাসি

আর আমি নীরব চিৎকারে বারবার বলি ভালোবাসি ভালোবাসি; 


এই যে তোকে দুদিন না দেখলেই মন কেমন কেমন!

আর হঠাৎ হঠাৎ মনে কালবৈশাখী ঝড় 

কখনো এমন হয়েছে তোর? 

তারপর সেই যে হলুদ খামে গোটা গোটা হরফে নীল রঙের কবিতা চিঠি!

চট করে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিতি 

তারপর রাত জেগে খুব মনোযোগে পড়তি চুপিচুপি  

উত্তর দিতি?

উঁহু! একটারও পাই নি 

কেন? আজো জানা হলো না, 

হয়তো কবিতার কবিতা ভালো লাগে না

কিংবা অন্য কিছু;  


যুগ যুগ আগের সেই অনুভূতি 

কার কতটুকু রয়ে গেছে বাকি?

ঐ যে নীল খামের কবিতাগুলো! 

ওগুলো কি শুধুই চিঠি? নাকি ভালোবাসার আঁকিবুঁকি? 

চিঠির উত্তর দিতে হয় চিঠি পেলে 

প্রেমের চিঠির উত্তর না দিলে কি চলে?  

ভালোবাসার উত্তর দিতে হয় ভালোবাসার বলে, 

কে উত্তর দেবে? 


এই যে যুগ যুগ ধরে চিঠিগুলো খুব যত্নে আগলে রেখেছিস!

মাঝে মাঝে খুলে পড়িস ওগুলো?

আচ্ছা! চিঠিগুলোর নীল রঙ কি একটু ফিকে হয়ে এসেছে?

নাকি সময়ে আরেকটু গাঢ় হয়েছে!

চিঠিগুলোর ভাঁজ খুললে ভালোবাসার সেই গন্ধটা কি এখনো ধ্বক করে নাকে লাগে?

যুঁইগন্ধা ভালোবাসা বলতি তুই যাকে?

নাকি সময়ের বিবর্তনে গন্ধটাও ফিকে হয়ে গেছে? 

কত প্রশ্নই না মনে জাগে?

কে উত্তর দেবে? 


আজকাল প্রায়শই নীল আকাশের নীচে বসে থাকি নীল হয়ে

আজকাল প্রায়শই সমুদ্রের নীলে ভিজি নীলে মিশে    

হয়তো কোন এক সবুজ দুপুরে   

হয়তো কোন এক শ্যাওলা পুকুরের ধারে

কোন একদিন তুই ঠিক আসবি নীল শাড়ি পড়ে

আমার সকল নীল চিঠিগুলো হাত ভরে জড়ো করে 

হয়তো সেই সেদিনের মত তোর ঠোঁটে থাকবে রহস্যময় হাসি

তারপর চিঠিগুলো সব আমার মাথার ওপর উড়িয়ে দিয়ে বলবি  

হ্যাঁ! ভালোবাসি, ভালোবাসি;


এক, দুই অথবা তিন যুগ!

অনেক কি বেশি সময়? 


ভালোবাসায় সময় হিসেব করতে হয় না। 




০৪ মে, ২০২১


#কবিতা 


পুরনো সেইসব নীল চিঠি 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত (এডিটেড)। 





ভার্চুয়াল পর্দা

আজকাল আমরা বেশীরভাগ সময় ভার্চুয়ালেই থাকি 

ভার্চুয়ালে একজন আরেকজনের সাথে নানান সম্পর্ক ফেঁদে, ভার্চুয়াল বন্ধনে;  

ভার্চুয়ালের সম্পর্কগুলো একটা সময় আর ভার্চুয়ালে সীমাবদ্ধ থাকে না 

ওগুলো ভার্চুয়াল ছেড়ে চলে আসতে চায় বাস্তব জীবনে, 

সে, যে কোন ভার্চুয়াল সম্পর্কই হোক না কেন? 


ভার্চুয়ালে তো ভাই বোন পাতিয়ে ফেললাম!  

ওটা আই ওয়াশ, 

সময় কিংবা অনুভূতি বদলে গেলে মনে অন্য ডাক; 

 

কিংবা ধর ভারচুয়ালে সম্পর্কের সীমা বেধে দিলাম শুধুমাত্র বন্ধুত্বের মাঝে! 

ওটাও আই ওয়াশ,  

সময়ের সাথে সাথে অনুভূতি বদলায়

পাল্টায় অনুভবগুলো

হাজার হোক!  নর আর নারী তো!


ওদিকের ম্যাসেঞ্জারের সবুজ বাতিটা জ্বলছে কি!  

কিছুক্ষণ পর পর দেখি

সারারাত নির্ঘুম চেয়ে থাকি

প্রতীক্ষার প্রহর কাটে অপেক্ষায় 

ম্যাসেঞ্জারের বাতিটা সবুজ হওয়ার,

এটা প্রেম নয়, তো কি? 


মনকে আটকাতে পেরেছিলো কে কবে? 

যখনই মন পাগলা ঘোড়া!  

তখন সম্পর্কই খেয়ে নেয় সম্পর্কের বেড়া 

ভারচুয়াল বেড়া,  

তারপর সম্পর্কের নব নামকরণ 

অথবা সম্পর্কচ্ছেদন; 


মনটাকে বশে রাখতে পেরেছিলো কে কবে? 

আমরা আজকাল ভারচুয়ালে হাসি 

ভারচুয়ালে কাঁদি 

ভারচুয়ালে সম্পর্ক গড়ি আর ভাঙি 

তারপর ভারচুয়াল ক্ষরণ 

দুঃখের ভার্চুয়াল স্ট্যাটাস দিতে দিতে হাজার হাজার ভার্চুয়াল লেখক  

প্রেম আর দহনের কবিতা লিখতে লিখতে লক্ষ লক্ষ ভারচুয়াল কবি!


কত ভার্চুয়াল বন্ধু আর বান্ধবী'কে

কত ভার্চুয়াল ভাই আর বোন'কে 

একসাথে সংসার পাত'তে দেখেছি!  

ভার্চুয়ালে না কিন্তু!

ভার্চুয়াল থেকে বেরিয়ে, বাস্তব জীবনে;

ভাঙন দেখেছি কত কত সংসারে! 

শুরুটা ছিলো ভার্চুয়ালে

প্রেমের সম্পর্ক কিংবা পরকীয়ার 

ভাঙন বাস্তব জীবনে;    

 

ভারচুয়াল হাসায়

ভারচুয়াল কাদায়

ভারচুয়াল ভাসায়

সংসার ও জীবন'কে;

আমরা জানি, বুঝি তবুও পড়ে থাকি ভার্চুয়ালে

ক্রমাগত অভিনয় করে যাই মুখে মুখোশ এঁটে, আয়না পেছনে রেখে

আর কাঁচা পাকা যত অভিনয়, ভার্চুয়াল পর্দায়।


০৩ মে, ২০২১


#কবিতা 


ভার্চুয়াল পর্দা

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




রিপুর ধ্বংস

এই যে পুরুষ! 

ঘরে বৌ রেখে এই যে নিত্য নতুন নারীতে গমণ! 

কোন বিশেষ কারণ?

 - আরে বোকা! ওদের দিকে চেয়ে দেখ তো একবার!

   এক একজন এক একরূপের বাহার

   এক এক শরীরের এক একরকম ভাঁজ 

   এক একজন বিছানায় এক একরকম পারদর্শী 

এদের সাথে ঘরের স্ত্রী? 

কিসের সাথে কিসের যে তুলনা দাও না! 

তুমি কিছু বোঝ না! 


যৌবন তো দুদিনের? তারপর ঐ শরীরগুলোই তো আবার পুরনো! 

 - তখন আবার নতুন কয়েকজন খুঁজে নেব!


তারপর?

 - তারপর আবার নতুন কয়েকজন?


তোমার যৌবন শেষ হয়ে গেলে? 

 - ঘরে বৌ আছে না? সেবাদাসী হয়ে! 


তাহলে বিয়ে করেছিলে কেন?

 - আপাতত বংশ রক্ষার জন্য 

 - আর শেষ বয়সে সেবার নেবার জন্য!


বাহ! কি সুন্দর বিচার! বড় সুন্দর তোমাদের কার্যক্রম। 



  

এই যে নারী!  

ঘরে স্বামী আছে তো! তারপরও নিত্য নতুন পুরুষে গমণ! 

কোন বিশেষ কারণ?

 - আরে বোকা! ওদের দিকে চেয়ে দেখ তো একবার!

   এক একজন টাকার কুমীর 

   এক এক শরীরের এক এক রূপ  

   বিছানায় এক একজনের এক একরকম কার্যক্রম  

এদের সাথে নুন আনতে পান্তা ফুরনো ঐ একঘেয়ে স্বামী? 

কিসের সাথে কিসের যে তুলনা দাও না! 

তুমি কিছু বোঝ না! 


রূপ তো দুদিনের? তারপর তো তোমাকেই বদলে নেবে! ওরা কি এক নারীতে সন্তুষ্ট থাকে?  

 - আরে আমিই বা এক পুরুষে কতক্ষণ? আমিও খুঁজে নেব নতুন কয়েকজন! 


তারপর?

 - তারপর আবার নতুন কয়েকজন?


যৌবন ঢলে গেলে? 

 - আরে ঢলা যৌবনেরও অন্য কদর আছে! সে তুমি বুঝবে না; 


তাহলে বিয়ে করেছিলে কেন?

 - আপাতত একটা ঠিকানা 

 - আর শেষ বয়সে কাউকে তো লাগবে পাশে! 


বাহ! কি সুন্দর বিচার! বড় সুন্দর তোমাদের কার্যক্রম। 


এই যে জীবনের দুটো দিক! এটা এ সমাজেরই

আমাদের কিংবা আমাদের আশেপাশের মানুষগুলোর 

পরিবর্তন হচ্ছে মূল্যবোধ, পরিবর্তন জীবন বোধ আর পরিবর্তিত জীবন;

হতে পারে আমার তোমার কিংবা আমাদেরই খুব কাছের মানুষের

আমরা আয়নার চকচকে পাশটাই দেখি, ওপাশের অন্ধকারে আমাদের কি যায় আসে? 


চারিদিকে সংসার ভাঙনের শব্দ

আমরা কেবলই ভাঙি কিংবা ভাঙন দেখি

পেছনের কারণগুলো ভাবি কি?


রিপু জীবন ধ্বংসকারী। 



০৩ মে, ২০২১


#কবিতা 


রিপুর ধ্বংস 

 - যাযাবর জীবন 






ভার্চুয়াল ইমো

মানুষ বোধহয় খুব একটা অদ্ভুত প্রাণী 

আমরা কখনো হাসার জায়গায় কেঁদে বুক ভাসাই 

আবার কাঁদার জায়গায় হো হো অট্টহাসি 

হ্যাঁ, আমি ভার্চুয়াল এর কথা বলছি;


এটা একটা আজব জগত

কারো সাথে কারো দেখা নেই অথচ মুখে কলিজা কেটে দিয়ে দেই

চেনা নেই পরিচয় নেই অথচ গায়ে পড়ে ঝগড়া লাগিয়ে দেই 

সভ্যতা ভব্যতার ধার না ধেড়ে গালির তুবড়ি ছুটিয়ে দেই

আবার অজানা অচেনা কোন অসুস্থ মানুষের আহ্বানে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই;  


এটা ফেসবুক, ফেসটা তো থাকতেই হয় 

আর যদি তা কোনভাবে সুন্দরীর হয়!

তবে তো কথাই নেই, 

আমরা সুন্দর ছবিটা দেখে প্রেমে পড়ি 

ঐ সুন্দরীর দিকে চেয়ে চেয়ে কাব্য গড়ি

আচ্ছা! মনে একবারও কি চিন্তায় আসে না! এই যে ছবিটা দেখছি

আর প্রোফাইলের ইনফরমেশনগুলো! ছবির সাথে যায় ওগুলো? 

বয়স তো দেয়া চল্লিশের কোঠায়, ছবিতে বিশ হয়েছে কোথায়? 

একবারও ভাবি? ওটা আসলে কার ছবি?

অথচ কবিতা লিখতে লিখতে আমি হয়ে যাই ফেসবুক কবি

বিচিত্র সেলুকাস জীবন! তাই না?


ঐ যে ফেসবুক ওয়ালে সুন্দরী একটা টোকা দিলো!  

ঘোড়দৌড়ে ছুটে যাই হারে রে রে রবে

একটা ভালোবাসার ইমো তো দিতেই হবে

কমেন্টে দু লাইন কবিতা! ওটাও পাবে 

নিজের না এলে গুগুল আছে না! 

সার্চ বোতামটা দিয়েছে কেন? ফেসবুক কবি ভাবে;


ওমা! এত্তবড় একটা গল্প লিখেছে সুন্দরী! 

লিখাটা তো বেশ বড়! 

ধ্যাত! কি আর হবে? প্রেমের প্যানপ্যানানি!

কে আর অত ভেতরে যায়!

ওটা অবশ্যই খুব প্রেমের কোন গল্প হবে!

সুন্দরী লিখেছে যখন, তা ছাড়া আর কি?  

আহা উঁহু রব; আর সাধু! সাধু! কমেন্টের বন্যা বয় 

ভালোবাসার ইমোজি বন্যায় সুন্দরীর দেয়ালটা ভরে রয়

অথচ যদি মন দিয়ে একবার পড়তো! 

কি বলতে চেয়েছে এত বড় একটা গল্প ফেঁদে!

হাসির কথা বলেছে নাকি দুঃখ গেয়েছে কেঁদে কেঁদে?  

হয়তো ওখানে লিখা হয়েছে কোন এক দুঃখিনীর কথা 

হয়তো লিখা হয়েছে গল্পের ছলে কোন সাহায্যের আবেদন

কিংবা অসুখের কথা! মৃত্যু যন্ত্রণার কোন গল্প! 

কিংবা অন্য কোন খারাপ খবর; হতে পারে না?

 

তুমি পড়েছ? আমি পড়েছি?

অথচ ওখানে ভালোবাসার ইমোর বন্যা ঝেড়েছি 

একটাবার ফেসবুক দেয়ালগুলো ঘেঁটে দেখ তো! 

মৃত্যু সংবাদে মানুষের হাসির ইমো কিভাবে হয়?

ভাবো তো! ভালোবাসার ইমো ওখানে কেন রয়? 

তাহলে তুমি দিয়েছ কেন?

উত্তর নেই কোন; 


ঐ যে এক ফেসবুক বন্ধু একটা মেয়ের ছবি পোষ্ট করেছে

ওমা! মেয়েটা কি অদ্ভুত সুন্দরী! 

আহা, ছবি দেখেই তো প্রেমেতে মরি, 

অনেক কিছু লিখেছে দেখছি মেয়েটা সম্পর্কে! 

আরে! মেয়েটার ফেসবুক ট্যাগও দেখি আছে!

কে আর বন্ধুর অত বড় লিখা পড়তে যায় বলো! 

তারচেয় দৌড়ে সুন্দরীর প্রোফাইলে চলো;   

আগে এখানে একটা ভালোবাসার ইমোজি দিয়ে নেই 

তারপর দৌড়ে ছুটে যাই মেয়েটার দেয়ালে 

লক করা দেয়াল! তাতে কি হয়েছে? 

বন্ধু হওয়ার রিকোয়েস্টটা তো দিয়ে আসি আগে!

রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করবে তো? অপেক্ষার ঘড়ি  

কি সুন্দরী! আহা মরি মরি! 

    

সেদিন একবার যদি পড়তাম বন্ধুর লিখাটা!  

জানতে পারতাম ঐ সুন্দরী তার ভাতিজি কিংবা ভাগিনী

অকালে চলে গিয়েছে পৃথিবীর মায়া ছেঁড়ে, লিখেছিল তার করুণ কাহিনী  

অথচ আমি কিছুই পড়ি নি  

অপেক্ষায় আছি কবে রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করবে মৃত সুন্দরী; 


সেলুকাস এক বিচিত্র ভার্চুয়াল হয়ে গেছে আমাদের জীবন 

সাথে সাথে হয়তো অনেকটাই ভার্চুয়াল হয়ে উঠেছে আমাদের মন    

আমরা আজকাল ভার্চুয়াল মন নিয়ে ভার্চুয়াল দেয়ালে দেয়ালে ঘুরি 

কিসের জানি এক অর্বাচীন অপেক্ষায়। 


 

২৬ এপ্রিল, ২০২১


#কবিতা 


ভার্চুয়াল ইমো 

  - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





জীবনের হিসেব

ও মানুষ! জীবনটার দিকে একবার তাকাও

গড় আয়ু কত তোমার?

ধরে নেই ষাট বছর

নাকি আরও বেশিদিন বাঁচতে চাও? 


এবার ষাট বছরে কি করলাম একটু দেখি! 

দিনে আট ঘণ্টা হিসেবে বিশ বছর কিন্তু ঘুমিয়েছি

জীবন শুরুতে প্রথম পাঁচটি বছর কর্মহীন কোলে কোলে 

পাঁচ থেকে পঁচিশ দৈনিক আট ঘণ্টা ধরি ছাত্রজীবনে  

ছাব্বিশ থেকে ষাট, এই পঁয়ত্রিশটি বছর জীবন সংগ্রামে  

অন্তত সরকারী হিসেবে হলেও তো আট ঘণ্টা কাজ 

সপ্তাহে পাঁচ দিনই ধরি! আরও গেলো বছর সাড়ে আট 

আজকাল রাস্তার যা অবস্থা! বের হলেই ট্রাফিকে বসে থাকা 

ঘণ্টা দুই তো নষ্ট হয়েই যায়! কম করে বললাম, তাই না?   

জীবন থেকে চলে গেলো আরও বছর পাঁচ 

দৈনন্দিন খাওয়া বাথরুম স্নান, অন্তত ঘণ্টা দুই 

জীবনের হিসেব থেকে আরও পাঁচটি বছর 

সংসারে সময় দেবে না? বাবা-মা, স্ত্রী সন্তান, আত্মীয় স্বজন 

দৈনিক ঘণ্টা দুই তো চলেই যায়, আরও পাঁচ বছর 

বছরে কয়দিন ছুটি কাটিয়েছ! ঘুরে বেরিয়েছ! হিসেব রাখ?

কমপক্ষে বছরে তো পনেরো দিন করে, অন্তত পঞ্চাশ বছর ধরে

বছর দুই চলে গেছে ছুটিতেই 

নিজের জন্য একটু সময় দেবে না? প্রতিদিন না হয় আধা ঘণ্টা ধরে

চোখ বন্ধ করে, একটু নিজেকে যাচা, নিজেকে দেখা! মনের আয়নায়

ধরলাম জীবনের শেষ চল্লিশে এসে, তাতেও তো জীবনের একটি বছর; 

এছাড়াও কি অলস সময় পাড় কর নি? কিছু না করে একদম অলস

পনর মিনিটই হিসেব করি! তবুও তো অর্ধেক বছর!

মিললো ষাট?  


ওহে মানব! জীবনের ষাট তো শেষ করে দিলে! 

এবার একবার পেছন ফিরে তাকাও তো! 

ওনাকে দৈনিক কতটুকু সময় মনে করেছ?

ঐ যে মহান আল্লাহ্‌ তায়ালা! যিনি তোমাকে পাঠিয়েছেন পৃথিবীতে,  

দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত হিসেবে আয়ুষ্কালে বছর দুই তো অবশ্যই দেওয়ার কথা ছিলো

দিয়েছে কি? ও তুমি নিজেই জানো, কতটুকু সময় দিয়েছ কাকে;  

কাউকে উত্তর দেওয়ার দরকার নেই, একটু নিজেকে নিজে যাচি! 

আর তো মাত্র অল্প কটি দিন! ওপারে গিয়ে উত্তর দেব কি? 


  

২৬ এপ্রিল, ২০২১


#কবিতা 



জীবনের হিসেব  

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





ওখানে যেতেই হবে

এই যে ছুটছি জীবনের পেছনে!

এই যে ছুট! টাকার পেছনে  

অর্জন কতটুকু?

সেই ঘাড়ে জোয়াল পড়ার পর থেকেই ছুটছি;


আসলে ছুটছি তো বোধ বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই 

ছোটার কথা শিখিয়েছে একদম বাল্যকালে বাবা-মা

শিক্ষকরা শিখিয়েছে ছোটাই জীবন, থেমে গেলে চলবে না

বইগুলোতেও শুধু ছোটার কথাই লিখা, পড়েছি; পড়েই ছুটছি

কিসের পেছনে?

 - উন্নতি;


উন্নতি কিসে?

 - প্রধানত টাকায়

টাকায় প্রতিষ্ঠা, টাকায় খ্যাতি, টাকায় জীবন গড়া, টাকায় উন্নতি;

ছুটছি আর ছুটছি, টাকার পেছনে ছুটছি;


তারপর? 

 - টাকা হলে সব হয়

যশ হয়, খ্যাতি হয় 

আর একবার খ্যাতি হয়েই গেলে! তুমি যা করবে তাতেই বাহবা বাহবা

এমনকি দু-কলম বমি করে দাও! লোকে বলবে সাহিত্য! আহা আহা

ক্যানভাসে তুলি নিয়ে বকলম আঁক দাও! লোকে বলবে শিল্প! আহা আহা

আরে বাবা সব হয়, টাকাতে সবই হয়; 

 

এই ছুটতে ছুটতে কিছু কি হারাচ্ছ নাতো?

পরিবারের জন্য একটু সময়? স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে কিছু একান্ত সময়গুলো!

কই! বছরে ছ-মাসে নিয়ে যাচ্ছি তো এখানে ওখানে?


ব্যাস! ওটুকুই?

- আরে! বাকি দিনগুলো তো টাকার পেছনে;


সম্পর্ক হারাচ্ছে, হারাচ্ছে বন্ধন

টাকার পেছনে ছুটতে ছুটতে একাকীত্বের জীবন 

আমার কিংবা স্ত্রীর, দুজনারই;

ফলশ্রুতি?

 - ঐ যে পরকীয়া ভাইরাস আজ আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে, দেখ না?

কদিন আগেও লোক জানাজানি হলে লজ্জা, সংসারে চরম অশান্তি, বিবাহ বিচ্ছেদ

আজকাল তাও যেন সয়ে গেছে, স্বামী স্ত্রী দুজন দুজনার পথে

আছে, তারা একই ছাদের নীচে, স্বামী-স্ত্রী রূপে, ভালোবাসাবাসিও হয় মাঝে মাঝে

তবে দুজনই দুজনার পরকীয়ার কথা জানে

সম্পর্কের বন্ধন কোথায় হারিয়েছে? নাকি এটা উন্নতির লক্ষণ

হয়তো! আমারই বোঝার ভুল; আজকাল হয়তো এগুলোই ফ্যাশন; 


সন্তানদের কি শেখাচ্ছি? 

টাকাই জীবন, টাকাই গতি, টাকা থাকলে তবেই জীবনে উন্নতি

ছুটতে থাকো রেসের ঘোড়ায়, পথে কেউ বাঁধা এলে সরিয়ে দেবে

ছলে বলে কৌশলে, কিংবা বল প্রয়োগে; তোমাকে আগে যেতেই হবে

যে কোন মূল্যে, আজকালকার বাবা-মাই শেখাচ্ছে

মানুষ হও! আরে সে তো আদিকালের বুলি, আজকাল আর কোথায় বলে? 

মানুষ হও মানেই প্রতিষ্ঠিত হও, প্রতিষ্ঠা মানেই টাকা, ও ছাড়া কি জীবন চলে? 


একটা সময় ধর্ম চর্চা হতো, সেই বাল্যকালেই হুজুরের কাছে আরবি শিক্ষা 

ইহকালের কর্মে পরকালে শাস্তি, একত্ববাদ, আল্লাহ্‌তে বিশ্বাস 

এখনো শেখানো হয়, শহরে খুব অল্প কিছু পরিবারে আর বাকিটা মফস্বলে, গ্রামে গঞ্জে

আর শহুরে বাবুরা! তারা তো টাকার কাছে নিজের ধর্মই বিকিয়ে দিয়েছে

ধর্ম কি? বিকিয়ে দিয়েছে নিজেকেই; আজকাল ওরা নিজেদের ধর্মেরই কটাক্ষ করে

ঐ যারা ধর্ম মানে তাদের মোল্লা, মুন্সি, ধর্মব্যবসায়ী, মৌলবাদী কত নামেই না ডাকে! 

এরা সন্তানকে ধর্ম শেখাবে? 

আরে বাবা! টাকাই জীবন, টাকায় প্রতিষ্ঠা, এটাই সব শিক্ষার বড় শিক্ষা;

একবার সন্তানদের উল্টোটা শিখিয়েই দেখ না! কিংবা নিজেই একটু শেখো! 

বাঁচার জন্য টাকা

টাকার জন্য বাঁচা নয়

পরকালও একটা আছে, ওখানে যেতেই হয় 

যারা মানে তাদের জীবনটা কিন্তু একটু অন্যরকম হয়; 


ঐ যে লাশটা পড়ে আছে! ওটা কিন্তু আর বাবা নেই, লাশ হয়ে গেছে

ওটাকে নিয়ে ঠিক কি করতে হবে সন্তানরা কি জানে?

মসজিদ থেকে হুজুর ভাড়া করে আনে, তারপর লোক দিয়ে সৎকার, সেই টাকারই বিনিময়ে; 

পড়ে থাকা লাশটা সাথে কি নিয়ে গেলো? এই যে কাড়ি কাড়ি উপার্জন! 

ব্যাঙ্কে রাশি রাশি টাকার পাহাড়! জমি জমা সহায় সম্পত্তি বেশুমার! 

সাথে কি কি গেলো? 

রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সগিরা

ছেলেদের কখনো শেখায়ই নি! ওরা জানবে কিভাবে? 

আচ্ছা! তুমি তো নিজে জানতে, কয়দিন পড়েছ মনে করে?

সব তো ভুলে গিয়েছিলে টাকার চাপে; 

ঐ যে পরকালেও একটা জীবন আছে! তার কি হবে? ওখানে যে যেতেই হবে! 

ধ্যাত! ওগুলো আজকাল আর কে ভাবে?

আচ্ছা! তুমি ভাবো তো! 

সন্তানকে ধর্ম শিখিয়েছ তো!

তা না হলে কিন্তু তোমারও ঐ লাশটার মতই অবস্থা হবে; 


ইহকাল আর পরকাল

একটা মাত্র নিঃশ্বাসের ব্যবধান 

যারা বিশ্বাস করে, 

আর বাকিদের ঘোড়দৌড় কেবলই টাকার পেছনে। 


২৫ এপ্রিল, ২০২১


#কবিতা 


ওখানে যেতেই হবে 

 - যাযাবর জীবন   


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




   


বিজ্ঞাপনে নারী

আজকালকার বিজ্ঞাপনগুলো দেখেছ?

সে হোক না যে কোন পণ্য! 

বিজ্ঞাপনে খুলে খুলে দেখায় 

আমরা পণ্য কিনে হই ধন্য;


কি দেখায়?

একটু ভালো করে লক্ষ্য করেছ কি?

আসো আমি দেখাচ্ছি বিজ্ঞাপন কি;


মনে কর একটা শাড়ি 

বিজ্ঞাপনে তোমরা শাড়ি দেখছ?

নাকি দেখছ নারী! 

ভালো করে দেখ শাড়িটা ঠিকই শরীরে প্যাঁচানো 

অথচ তোমার চোখ কিন্তু নারীতে

খুব কৌশলে পড়া ছোট হাতা ব্লাউজে

শরীরের ভাঁজগুলো স্পষ্ট 

শাড়িটা শরীরের সাথে টানটান আড়ষ্ট

মডেলের চেহারাটা হতে হবে নজর কাড়া 

ফিগারটা হতে হবে চর্বি ছাড়া 

ঐ যে তোমরা কি জানি বলো না! শূন্য 

হোক সে শাড়ি কিংবা অন্য যে কোন বিজ্ঞাপনের জন্য

তোমরা শাড়ি দেখছ না নারী? 

উঁহু! তোমরা বিজ্ঞাপন দেখছ, পণ্য - নারী; 


মনে কর বিজ্ঞাপন ফলের রসের

টপ টপ রস গড়িয়ে পড়ছে ঠোঁট বেয়ে

যে সে ঠোঁট না কিন্তু! কামদেবীর আহ্বান তাতে

বিজ্ঞাপনটা দেখেই যেন পণ্য কিনতে ছুটে যাও টাকা হাতে,  

কি দেখছ? ফলের রস না ঠোঁট?

উঁহু! তোমরা বিজ্ঞাপন দেখছ, পণ্য - নারী; 


মনে কর যে কোন খাবার

সুস্বাদু, স্বাস্থ্যকর, পুষ্টিতে ভরা 

বিজ্ঞাপনে নামী দামী মডেল, রান্নায় খুব তাড়া 

স্বাদ কোথায়? পুষ্টি কোথায়?

কিভাবে বোঝা যায়!

আরে মডেল দেখ, শরীরের ভাঁজ দেখ 

চর্বি ছাড়া কোমরের বাঁক দেখ 

সামনে থেকে, পেছন থেকে 

ওপর থেকে, নীচে থেকে, পাশে থেকে 

ক্যামেরা ধরা আছে সকল এঙ্গেল থেকে 

কি দেখছ? খাবারের বিজ্ঞাপন? 

নাকি সুস্বাদু, স্বাস্থ্যকর, পুষ্টিতে ভরা শরীরের ভাঁজ?

উঁহু! তোমরা বিজ্ঞাপন দেখছ, পণ্য -নারী; 


বাজারে নতুন মডেলের টিভি এসেছে

টিভি ভেদ করে বের হয়ে আসে সুন্দরী লাস্যময়ী এক তরুণী,    

নতুন মডেলের ফ্রিজ! কোমর বেঁকিয়ে সামনে দাঁড়ানো গৃহিণী  

নতুন মডেলের এসি! ঠাণ্ডা হাওয়ায় আঁচল উড়িয়ে নারী  

গাড়ী? হাওয়ায় চুল উড়িয়ে নারী 

বাড়ী? আরে নারী ছাড়া ও বিজ্ঞাপন হয় নাকি? 

হোটেল, রিসোর্ট, প্লেনের টিকেট? উঁহু! নারী ছাড়া ওগুলো বড্ড বেমানান

কোথায় নেই নারী? 

আর তাদের পোশাক? 

এখনো তবুও আমাদের দেশের বিজ্ঞাপনগুলোতে, আছে কিছু রাখঢাক

নেটের কল্যাণে বাইরের বিজ্ঞাপন গুলো তো দেখেছ? দেখ নি?  

বুঝি না পণ্য দেখছি! নাকি শরীর দেখছি ,নাকি দেখছি নারী!   

বিজ্ঞাপনে নারী;  


তোমরা বিজ্ঞাপন দেখছ? 

নাকি পণ্য দেখছ? 

নাকি দেখছ নারী?

খুব ভালো করে ভেবে দেখ তো একবার! 


এই যে নারী প্রদর্শন! এটা নারী স্বাধীনতা নয়

পুরুষের কাতারে নারীর সম ক্ষমতায়নও নয় 

নারী তুমি মা, বোন, স্ত্রী, কন্যা; তুমি পণ্য নও

ও নারী! আয়নায় একবার চেয়ে দেখ 

ওরা কেমন করে দেখাচ্ছে তোমার শরীর খুলে খুলে!  

কেনই বা তুমি এভাবে পণ্যের বিজ্ঞাপনে, হায়া লাজ লজ্জা ভুলে?   

জাগো নারী, জাগো

প্রতিবাদ কর 

বিজ্ঞাপনের পণ্য হয়ো না

বরং বিজ্ঞাপন বানাও তোমাকে পণ্য না বানানোর প্রতিবাদে

তুমি নিজেই বিজ্ঞাপন বানাও, নারী ক্ষমতায়নে। 


 

২১ এপ্রিল, ২০২১


#কবিতা 


বিজ্ঞাপনে নারী 

 - যাযাবর জীবন 




  

 



 

পরশ্রীকাতরতা

মাঝে মাঝেই আয়নায় চোখ চলে যায়

আমি চমকে উঠি 

ওখানে ওটা কাকে দেখছি?


ঈর্ষা বিদ্বেষ পরশ্রীকাতরতায় ভরা একটা চেহারা

আমার নিজের কিন্তু কোন কিছুর অভাব নেই 

তবুও ওর আমার চেয়ে বেশী কেন? 

হিংসায় বুক ফেটে যায় আমার;


ঐ কাজটা সম্পর্কে আমি কিছু জানিই না 

সে করছে কেন? 

ঈর্ষায় গা রি রি করে;


আমি কখনো কিছু লিখিই নি 

সে বই বের করে ফেলেছে

আমার গলায় সুর নেইই 

সে কি সুন্দর গান গাইছে

আমার গলা দিয়ে স্বর বের হয় না 

সে কবিতা আবৃতি করছে

আমি রাজনীতি বুঝিই না 

সে বিশাল নেতা হয়ে গিয়েছে 

আমার যোগ্যতা থেকে অনেক ভালো একটা চাকরি করছি

ও অফিসের বস হয়ে গিয়েছে  

আমাকে কেউ চেনেই না 

তার নামডাক মুখে মুখে

ঈর্ষায় আমার শরীর পুড়ছে

ঐ তো! আয়নায় দেখছি

আগুনে আয়না জ্বলছে;


কি করি? কি করি?

দেখি না কিছু বদনাম লেপে দেয়া যায় নাকি?

না হয় কিছু চোগলখোরি 

পারি না তাও জোর করে পিছু টেনে ধরি 

ওদের এগোতে দেয়া যাবে না 

আমি নিজেতে নিজে মরি 

ভাই! মানুষ তো! রিপুর কাছে বন্দী

ওটুকু করে একটু তো শান্তি পাই মনে?

তাও করতে দেবে না?

যাও! তোমরা তো আমার থেকে খুব একটা ভালো না! 



২২ এপ্রিল, ২০২১


#কবিতা 


পরশ্রীকাতরতা 

 - যাযাবর জীবন 





 

 


 

খাদ্য ও খাদক

অনেক মিলে খেতে বসলে, খাবার টেবিলটা কখনো লক্ষ্য করেছে?

একজন খাবার টেনে নেয় সবার আগে 

একজন বসে থাকে হাত গুটিয়ে, কেউ খাবার বেড়ে দেবে

একজন চেয়ে থাকে কখন তার সামনে খাবারের বাটিটা আসবে

একজন কিন্তু থাকে! খাবার তুলে দিতে এর ওর তার পাতে

নিজের পাতে? সবশেষে;  


এক একজন থাকে টেবিল ভরা কোর্মা পোলাও ভাত মাংস থাকলেও 

ক্রমাগত ঘ্যানঘ্যান করতেই থাকে, আর কি আছে? অসন্তুষ্টি চোখে মুখে,  

এক একজন যা সামনে পাবে তাই খেয়ে উঠে যাবে মুখে টু শব্দটি না করে

এক একজন আছে মুখে কিছু বলবে না, কিন্তু পছন্দ না হলে খাবেও না 

এক একজন থাকে, যার সবটাতেই চলে, সন্তুষ্টি যার সব কিছুতেই;  



কেউ খেতে ভালোবাসে কেউ খাওয়াতে

কেউ খেয়ে মজা পায় কেউ খাইয়ে 

এক একজন আছে খাদ্য-রসিক

এক একজন খাদ্য-প্রেমিক

এক একজন থাকে শুধুই খাদক

কেউ খেয়ে পেট ভরায় কেউ পেট ভরতে খায় 

কেউ পেটুক কাওকে খাওয়াতে হয় জোর করে 

কেউ খায় গলা পর্যন্ত ঠেসে কেউ বা অনিচ্ছায় খেতে বসে    

মানুষের মাঝেই কতরকম মানুষই না থাকে! খাবার খেতে। 



২১ এপ্রিল, ২০২১


#কবিতা 


খাদ্য ও খাদক 

 - যাযাবর জীবন  





 

সম্পর্কের বৈপরীত্য

চরিত্রের বৈপরীত্য দেখেছ?

ব্যবহারের? 

সম্পর্কের? 

সংসারের? 

মানুষের? 


বৈপরীত্যগুলো খুব প্রকট

বিশেষ করে একান্নবর্তী পরিবারে

বাবা-মা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে

কার কার চরিত্রের বৈপরীত্যের কথা বলব?


চরিত্রের বৈপরীত্য কখন থেকে শুরু হয় জানো?

যখন স্বার্থ নখদন্ত বিকশিত করে ফেলে

যখন সম্পত্তির ভাগাভাগি সম্পর্ক ভাগ করে 

যখন বাবা-মায়ের ভাগাভাগি সন্তানদের মাঝে; 


শাশুড়ি বৌ এর কীর্তন শুনেছ!

সে তো ঘরে ঘরে, 

আমি সর্বংসহা শাশুড়ি দেখেছি এক ঘরে

সর্বংসহা বৌ দেখেছি ঠিক পাশের ঘরে, 

আমি অত্যাচারী ভাবী দেখেছি এই ঘরে

ননদদের অত্যাচার দেখেছি ঐ ঘরে, 

শাশুড়ি-বৌ আর ননদ-ভাবীর রামায়ণ ঘরে ঘরে

রামায়ণই মহাভারত হয়ে যায় দেবর ভাসুর যোগ হলে

ওরা তো যার যার সংসারে নীরব হয়েই রয়!

ভাইটা নরম হয়েছে তো ভাই বৌ এর সাথে যত ঘেউ ঘেউ কয়, 

বৈপরীত্য সম্পর্কে সম্পর্কে 

বৈপরীত্য একান্নবর্তী পরিবারগুলোর ঘরে ঘরে;


বাবা-স্বামী আর ছেলেরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দর্শক মাত্র

অথবা বার্গারের অসহায় চীজ 

কিংবা স্যান্ডউইচ এর মেয়নিজ,  

বাবা! উনিও তো ছিলেন একসময় স্বামী! 

শাশুড়ি বৌ এর কীর্তন! মনে মনে হেসে বলেন খুব ভালো জানি

কীর্তন শুরু হলেই জায়নামাজ বিছিয়ে রয় 

আর নয় তো কোথাও থেকে ঘুরে আসে যতক্ষণ ঝড় বয়

জানে থেমে যাবে যথা সময়,  

স্বামী! ও তো মা বোনের কাছে স্ত্রৈণ খেতাব পাওয়া প্রাণী

বৌ এর কাছে? মা বোনই তো তোমার সব, খুব জানি!  

ছেলে সন্তানগুলো! কুরুক্ষেত্র দেখতে দেখতে অভ্যস্ত

আর নয়তো চরম হতাশাগ্রস্ত হতে হতে নেশাগ্রস্ত,  

মেয়েগুলোই মায়ের পক্ষ নেয়

খুব বেশি কুলোতে পারে না দাদী ফুপুদের তোড়ে 

তবু প্রায়শই ওদের সাথে গলা চড়া করে চেঁচায় সমস্বরে, 

বৈপরীত্য সম্পর্কে সম্পর্কে

বৈপরীত্য একান্নবর্তী পরিবারগুলোর ঘরে ঘরে। 





২০ এপ্রিল, ২০২১


#কবিতা 


সম্পর্কের বৈপরীত্য

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 






 




 

এক দুই তিন চার পাঁচ

শব্দ

দিয়ে খেলতে

কার ভালো লাগে? 

আমার তো লাগে না 

তবুও কানের ভেতর শব্দ শুনি

সুর কোথাও লাগে না

গাইলেই গান হয়?

সূরের মূর্ছনা 

তালে     


কথা 

নিয়ে খেলতে

কার ভালো লাগে? 

আমার তো লাগে না 

আমি কাব্য আঁকি মনের খাতায়

কলম চেপে দাগ এঁকে

কবিতা হয় কি?

বুঝি না

অবোধ্য 


দিন  

বড্ড গরম 

কাঠফাটা রৌদ্দুর চারিধার  

পানি পিপাসায় ছাতি ফেটে যায়  

চাতক চোখ তাকিয়ে থাকে আকাশে  

মেঘের দেখা নেই কোথাও  

আসুক ঝুমঝুম বৃষ্টি  

আকাশপানে দৃষ্টি 

নামুক 


রাত  

মন কেমন  

চাঁদ উঠেছে কি?   

ঘর থেকে বেরিয়ে ছাদে 

চাঁদের বুড়ি চরকা টানে চাঁদে 

মনে ঝিরিঝিরি চাঁদনি নামে 

অন্ধকার দূর হয় 

মনের আকাশে  

জ্যোৎস্না  


একটা অক্ষর 

কাব্য লেখা যায়?

সংখ্যা চেন? ছন্দ মেলানো?   

এক  থেকে  শুরু  করে  পাঁচ  

আমি কবিতা পারি না

আমার হয় না 

ছন্দ মেলানো 

কবিতা।  

 


২০ এপ্রিল, ২০২১



#কবিতা 


এক দুই তিন চার পাঁচ 

 - যাযাবর জীবন 





 





চিঠি লিখার মন

অনেক অনেকদিন চিঠি লিখি না কাউকে

প্রেমের চিঠি কিংবা অন্য কোন;


একটা সময় ছিলো, প্রায়শই চিঠি লিখা হতো

বেশীরভাগ প্রেমের চিঠি, নানারকম সুগন্ধি চিঠি লেখার প্যাডে

গোটা গোটা অক্ষরে ফাউন্টেন কালি দিয়ে

চিঠির প্যাডগুলোও একটার চেয়ে একটা সুন্দর ছিলো

হালকা সবুজ, হালকা নীল, হালকা হলুদ আর নানা সব বাহারি রঙে

আমি যখনই নিউমার্কেট যেতাম! 

বেছে বেছে সুন্দর সুন্দর সব চিঠি লিখার প্যাড কিনে নিয়ে আসতাম

চিকন, মোটা বিভিন্ন নিব এর ফাউন্টেন পেন ছিলো বেশ কয়েকটা

ফাউন্টেন কলমে লিখার জন্য চায়নিজ কালি 

সেও কালো, নীল, সবুজ আর লাল রঙের

আর খাম! সে যে কত রঙ এর কত ডিজাইনের হতো! 

তা আর বলে শেষ করা যেত না

আমার সবই ছিলো শুধু চিঠি লিখার লোক ছিলো না কোন; 


তবুও, তবুও আমি প্রায় প্রতিদিনই চিঠি লিখতাম 

এক একদিন এক এক রঙের প্যাডে 

এক একদিন এক এক কলমে এক এক রঙের কালি ভরে

আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগতো হালকা সবুজ প্যাডে 

গাঢ় নীল রঙ এর কালিতে মোটা ফাউন্টেন নিব এর কলমে চিঠি লিখতে

প্রেমের এক একটি শব্দ, এক একটি কাহিনী হয়ে

কি সুন্দর! ফুলের মত ফুটে থাকতো অক্ষরগুলো! 

চিঠিগুলো ফুল লতাপাতা ডিজাইনে হালকা বেগুনি খামে চিঠিগুলো রাখতাম

তারপর ওগুলোতে দুই টাকার ডাকটিকিট লাগিয়ে মনের পোস্ট অফিসে ফেলে দিতাম,

আমার চিঠি পোস্ট করার কোন ঠিকানা ছিলো না

আমার চিঠি লিখার কোন মানুষ ছিলো না 

তবুও বড্ড ভালো লাগতো চিঠি লিখতে

অজানা এক একজন প্রেমিক মনে এঁকে নিয়ে

তাকে গভীর ভালোবেসে; 


বন্ধুবান্ধবরা দেখতাম এক একজন চিঠি লিখে 

বেশীরভাগ প্রেমিকাকে, আর অল্প কিছু বাবা-মায়ের কাছে

আমি কখনো বাবা-মাকেও চিঠি লিখি নি

প্রয়োজনই পরে নি!  

আমি কখনো কোন প্রেমিকাকে চিঠি লিখি নি

প্রেমিকাই জোটে নি!

তবুও আমার থেকে বেশী চিঠি সম্ভবত আর কেউ কখনো লিখে নি

প্রতিদিন অন্তত একটি করে

দেখা না হওয়া কোন এক প্রেমিকা'কে হৃদয়ে ধরে;


আজকাল আর সেইসব চিঠি লিখার প্যাড কোথায়?

কোথায়ই বা রংবেরং এর চিঠির খাম?

ফাউন্টেন পেন এর যুগ শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই

সেই চাইনিজ কালির দোয়াত হয়তো পাওয়া যাবে জাদুঘরে 

সবচেয়ে বড় কথা হলো, আজ আর সেই মনটাই নেই

প্রেমিক সেই মন কবেই মরে গেছে বাস্তবতার কঠোর জীবন সংগ্রামে!


তবুও এখনো যখন খুব একা হয়ে যাই

এখনো যখন অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামে

এখনো যখন উথালপাথাল জ্যোৎস্না ঝরে

এখনো যখন পুরনো সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে

ঠিক তখনই মন অন্ধকার, আর কাওকে চিঠি লিখতে ইচ্ছে করে

সেই পুরনো দিনের মত হালকা সবুজ চিঠি লিখার প্যাডে

মোটা নিবের ফাউন্টেন কলমে 

চাইনিজ দোয়াতের নীল কালি ভরে 

গোটা গোটা অক্ষরে হতে হতেও না হতে পারা সব প্রেমের কথা, 

মোবাইল স্ক্রিনটার দিকে চেয়ে ভাবছি

 - কাকে লিখব চিঠিটা? 


আজ কি পুরো শহর জুড়ে লোডশেডিং? 

চারিদিক এতে অন্ধকার কেন? 

নাকি অন্ধকার চিঠি লিখার মনে? 


১৯ এপ্রিল, ২০২১


#কবিতা 



চিঠি লিখার মন

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত, এডিটেড। 





দাম্পত্যের হরেক রকম

হুটহাট একটা মানুষ চলে আসে জীবনে

যার সাথে না ছিলো পরিচয় না আত্মীয়তা

অথচ কোথা থেকে যেন উড়ে এসে জুড়ে বসে পরস্পরের জীবনে

হ্যাঁ, আমি দাম্পত্যের কথা বলছি; 


একটা ছেলে আর একটা মেয়ে

আগে কখনো পরিচয় ছিলো না তাদের 

খুব হঠাৎ করেই একদিন দেখা 

চোখাচোখি কিছুদিন, তারপর চোখেচোখে কথা

তারপর আরেকটু এগিয়ে এসে পরিচয় 

পরিচয়ের সূত্র ধরে এগিয়ে প্রণয়

অবশেষে পরিণয়, 

এ তো গেলো প্রেমের কথোকথা

সুখের দাম্পত্য গাঁথা;


অন্যদিকে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে

পরিচয় হওয়ার কারণই ছিলো না তাদের কখনো  

তবুও আত্মীয় স্বজন এর মাধ্যমে দেখা 

আত্মীয় স্বজন এর মাঝে কথা 

তারপর দুপক্ষের বাবা-মার মতের মিল হলে 

নিজেদের মাঝে পরস্পর বোঝাপড়া

আসলে সম্মতি তো দেয়া হয়ে গিয়েছে আগেই

সেই কথা চালাচালির মাঝামাঝি সময়েই

তবুও ক্ষেত্র বিশেষে কিছু বোঝাপড়া 

আসলে বিয়ের আগে প্রেমের একটা মহড়া

মন কেমন কেমন করাটা তো প্রেমই, তাই না?

তারপর তো সেই বিয়ের পিঁড়ি 

আর মুরুব্বীদের মাধ্যমে জুড়ে দেয়া 

চিরাচরিত দাম্পত্য কথোকথা; 


এই যে রক্তের সম্পর্ক ছাড়াই একটা সম্পর্ক!

কি মনে হয়! 

হুট করে উড়ে এসে জুড়ে বসা? 

ধরলাম হুট করেই উড়ে এসে জুড়ে বসলো

তারপর যে অদ্ভুত এক মায়া!

অপার্থিব এক ভালোবাসা

দুজন দুজনার জন্য মন কাঁদা! 

এর কোন ব্যাখ্যা আছে?

রক্ত সম্পর্ক তো নেই, তাহলে দাম্পত্য সম্পর্ক কিসের ভিত্তিতে?

তবে কি এ বন্ধনটা অন্য ভুবনে গাঁথা? 

 

কত রকম দাম্পত্যই না আজকাল দেখা যায়!

অল্প কিছু দাম্পত্য তো বাসরের ফুল শুঁকোতে না শুঁকোতেই ঝরে যায়, 

আর কিছু দাম্পত্য প্রথম প্রথম অল্প কিছুদূর এগোয়

তারপর জীবন রেসে ক্লান্ত হতে হতে দুজন দুদিকে হারায়; 

 

অনেকগুলো দাম্পত্য জীবনে অনেকদূর এগিয়ে যায়

সন্তান, সংসার ভালোই চলতে থাকে  

তারপর কি কি সব আজব এক এক কারণে 

সম্পর্কটা খুব হুট করেই ছিঁড়ে যায়

পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়, সন্তানরা এক এক জায়গায়

আর দাম্পত্য! কখনো রাগে, কখনো অভিমানে, কখনো ইগোতে

কখনো বা পরকীয়া ভাইরাসে কুরে কুরে খায়

আর আশেপাশের বাকি সকল সম্পর্কগুলোকে কাঁদায়;


আর বেশীরভাগ দাম্পত্য হাতে হাতে, অনুভবে অনুভবে

পরস্পর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায়, জীবনের শেষদিন পর্যন্ত চলতেই থাকে

এদের জন্য মৃত্যু এক অমোঘ বিধান 

দাম্পত্যে পরস্পরকে আলাদা করতে।


 

১৯ এপ্রিল, ২০২১


#কবিতা 


দাম্পত্যের হরেক রকম 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 




   



 

নৈঃশব্দ্যতায় শব্দের হাহাকার

আজকাল রাতগুলো বড্ড সুনসান, একদম নিশ্চুপ

দূর থেকেও ভেসে আসে না পিচঢালা রাস্তায় কোন ট্রাকের টায়ার ঘষার শব্দ

অনেক অনেকক্ষণ পরে পরে একটা দুটো সাইরেনের শব্দ রাতের নিস্তব্ধতা চিঁড়ে দিচ্ছে

এম্বুলেন্স এর সাইরেন

আর নয়তো আজকাল ঢাকার রাস্তাগুলো প্রায় মৃত;


আমরা একটা খারাপ সময়ের মাঝে যাচ্ছি 

একটা খুব খারাপ সময় পাড়ি দিচ্ছি 

করোনা নামক এক ভয়াবহ মহামারী আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে আমাদের

পৌঁছে গেছে প্রতিটা ঘরের দরজায় 

ঢুকে পড়ছে প্রায় প্রতিটা ঘরে ঘরে

আমরা নিজেদের গুটিয়ে ফেলেছি

আমরা নিজেদের লুকিয়ে ফেলেছি নিজেদের কাছ থেকে 

নিজেদের প্রিয়জনদের কাছ থেকে 

আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশী থেকে

এমন কি নিজ ঘরে নিজ সন্তানদের কাছ থেকেও

ওদের বাঁচাতেই নিজের থেকে আলাদা করে দিয়েছি ওদের'কে 

হ্যাঁ!

আমি নিজেই বাঁচতে পারি নি করোনার ভয়াল থাবা থেকে 

আজ একঘরে বন্দী জীবন কাটাচ্ছি বাকি সবার মঙ্গলের জন্য;


জানো! আজকাল খুব একাকী লাগে

অন্যরকম একাকী এক জীবন

আগে তাও আশেপাশের শব্দ শোনা যেত

কেউ তো আছে চারিপাশে, অন্তত মনে হতো

ইদানীং ঘরে ঘরে মহামারীর ছোবল, ঘরে ঘরে মানুষ আক্রান্ত

তাই লক-ডাউনে বাধ্য ঘর-বন্দী জীবন, মন ভারাক্রান্ত;


রাতগুলো জেগে উঠলেই জেগে উঠে নিস্তব্ধতা 

রাতের প্রহরের সাথে সাথে কানে তালা লাগানো নৈঃশব্দ্যতা এক ভয়াবহ রূপ নেয় 

একটু শব্দের জন্য কান কতটা ব্যাকুল হতে পারে তা তোমরা বুঝবে না 

ঐ তোমরা যারা নৈঃশব্দ্যতার চিৎকার শোনো নি,

তারপর অসীম নৈঃশব্দ্যতা ভেঙে অনেক দূর থেকে কোন এক এম্বুলেন্সের সাইরেন বেজে ওঠে

কানের নিস্তব্ধতা ভাঙে; 


সাথে সাথেই ডুবে যাই মনের অস্থিরতায়, 

আহা! আবার কার জানি লাইফ সাপোর্টের দরকার হয়ে পড়েছে!

কে জানি অক্সিজেনের অভাবে হাঁসফাঁস করছে

আই সি ইউ'র বেড খালি পাবে তো! 

ভাবতে ভাবতে আরও একটি দুটি এম্বুলেন্সের প্যাঁ পোঁ সারারাত ধরে

আজ ক'জন চলে গেলো না ফেরার দেশে?


এমনই কোন এক নিস্তব্ধ রাতে একটা এম্বুলেন্স এসে থামবে আমার বাড়ির সামনে

কানে তালা লাগানো প্যাঁ পোঁ শব্দে 

ঘোলা হয়ে আসা প্রায় অবচেতন একজোড়া চোখ প্রিয়জনদের দৌড়াদৌড়ি দেখবে

এম্বুলেন্স ছুটে চলবে হসপিটাল থেকে হসপিটালে কোন এক আই সি ইউ বেড এর সন্ধানে,

সে রাতে কোন হসপিটালে কোন আই সি ইউ বেড ফাঁকা থাকবে তো!

নাকি ভোরের সূর্যের সাথে সাথে এম্বুলেন্সটা আবার আমার বাসাতেই ফিরে আসবে?  

সাদা চাদরে মোড়া একটা ঠাণ্ডা শরীর নিয়ে।  

    


১৮ এপ্রিল, ২০২১


#কবিতা 


নৈঃশব্দ্যতায় শব্দের হাহাকার

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 


 



শরীর

শরীরটা কি?

তাল তাল মাংসের দলা

কোথাও কম কোথাও বেশি 

তবুও সবকিছু এই শরীর কেন্দ্রিক ভালোবাসাবাসি; 


শুধু মানুষের?

উঁহু!

পশু পাখি সকলের

তাহলে ভালোবাসা কি শুধু রমণ?

উঁহু! 

সেও তো মাত্র কিছু মুহূর্তের মিলন 

পশু, পাখি, মানুষ সকলেরই

আর ঐ যে তারপর বছরের পর বছর জোড়া বেঁধে থাকা! 

রমণেই যদি ভালোবাসা শেষ হয়ে যেত!

তবে মন পোড়ে কেন?


আমি ঐ পাখিদের দেখে বলছি

জোড়ার একটি মারা গেলে আরেকটি মন খারাপে পাশে বসে থাকে, 

আমি পশুদের কথা বলছি

জোড়ার একটি মারা গেলে আরেকটি পাশে বসে কাঁদে, 

তোমরা দেখেছ কখনো?

আমি দেখেছি;


আমি মানুষের জোড়াও দেখেছি

কাঁদার জন্য মৃত্যুর দরকার হয় না মানুষের

ওরা সম্পর্কে কাঁদে, কাঁদে সম্পর্কহীনতায় 

ওরা ভালোবাসায় কাঁদে, কাঁদে ভালোবাসার অভাবে 

ওরা সম্পর্কে বাঁচে, সম্পর্ক যাচে 

একজনের অসুখে আরেকজন নির্ঘুম রাত কাটায়

একজনের কিছু হলে আরেকজন অসহায় 

ওরা সমষ্টিগত সমাজে বাস করে 

একজন মানুষের বিপদে একদল মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে 

তাহলে, ভালোবাসা শুধুমাত্র শরীর নির্ভর; বলব কিভাবে? 


শরীরের ভেতর একটা মন থাকে 

সে যে কোথায় থাকে! কে জানে?

কেউ বলে হৃদয়ে, কেউ বলে মস্তিষ্কে 

আমি বলি, ওটা পুরোটা শরীর জুড়েই থাকে 

অনুভবে বোঝা যায়

অনুভূতিতে বোঝা যায়

বোঝা যায় স্পর্শে;


স্পর্শ ছাড়াও ভালোবাসা বোঝা যায়

ঐ যে দূর থেকেও একজন আরেকজনের জন্য টান!

সেও তো ভালোবাসারই নাম

তাই না? 


এই যে এক একটা সম্পর্কের নাম দিয়ে যে মানুষের মাঝে মানুষের বাস!

বাবা-মা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে কত নামের সম্পর্ক গড়ে নিয়ে!

এরা সবাই রক্ত মাংসের মানুষ, এক একটা মাংসের দলা 

তবুও কি এক অদ্ভুত বন্ধনে জড়িয়ে থাকে পরস্পর জড়িয়ে গলা 

এখানে শরীর কোথায়? 

পুরোটাই তো মন 

একজনের কিছু হলে বাকিরা ঝাঁপিয়ে পড়ে যখন তখন;


ওহ! তুমি বোধহয় প্রেমের সম্পর্কের কথা বলছ,

তাই না?

আরে বোকা! প্রেম থেকেই তো শুরু

তারপর বন্ধন, স্বামী-স্ত্রী, সংসার; 

তবেই তো পরিবার; 


শরীর? 

ওটা তো মাটির দলা, শুধুমাত্র মনের বাহন

যতক্ষণ দেহে প্রাণ আছে ততক্ষণ; 


তারপর রূহুটা দেহ ছেড়ে গেলে 

যত তাড়াতাড়ি পারো মাটিতে ঢেকে দাও মাটি দিয়ে

মাটির দলা মিশে যায় মাটিতে। 





১৭ এপ্রিল, ২০২১


#কবিতা 


শরীর 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত।