শুক্রবার, ২৮ মে, ২০২১

ভার্চুয়াল ইমো

মানুষ বোধহয় খুব একটা অদ্ভুত প্রাণী 

আমরা কখনো হাসার জায়গায় কেঁদে বুক ভাসাই 

আবার কাঁদার জায়গায় হো হো অট্টহাসি 

হ্যাঁ, আমি ভার্চুয়াল এর কথা বলছি;


এটা একটা আজব জগত

কারো সাথে কারো দেখা নেই অথচ মুখে কলিজা কেটে দিয়ে দেই

চেনা নেই পরিচয় নেই অথচ গায়ে পড়ে ঝগড়া লাগিয়ে দেই 

সভ্যতা ভব্যতার ধার না ধেড়ে গালির তুবড়ি ছুটিয়ে দেই

আবার অজানা অচেনা কোন অসুস্থ মানুষের আহ্বানে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই;  


এটা ফেসবুক, ফেসটা তো থাকতেই হয় 

আর যদি তা কোনভাবে সুন্দরীর হয়!

তবে তো কথাই নেই, 

আমরা সুন্দর ছবিটা দেখে প্রেমে পড়ি 

ঐ সুন্দরীর দিকে চেয়ে চেয়ে কাব্য গড়ি

আচ্ছা! মনে একবারও কি চিন্তায় আসে না! এই যে ছবিটা দেখছি

আর প্রোফাইলের ইনফরমেশনগুলো! ছবির সাথে যায় ওগুলো? 

বয়স তো দেয়া চল্লিশের কোঠায়, ছবিতে বিশ হয়েছে কোথায়? 

একবারও ভাবি? ওটা আসলে কার ছবি?

অথচ কবিতা লিখতে লিখতে আমি হয়ে যাই ফেসবুক কবি

বিচিত্র সেলুকাস জীবন! তাই না?


ঐ যে ফেসবুক ওয়ালে সুন্দরী একটা টোকা দিলো!  

ঘোড়দৌড়ে ছুটে যাই হারে রে রে রবে

একটা ভালোবাসার ইমো তো দিতেই হবে

কমেন্টে দু লাইন কবিতা! ওটাও পাবে 

নিজের না এলে গুগুল আছে না! 

সার্চ বোতামটা দিয়েছে কেন? ফেসবুক কবি ভাবে;


ওমা! এত্তবড় একটা গল্প লিখেছে সুন্দরী! 

লিখাটা তো বেশ বড়! 

ধ্যাত! কি আর হবে? প্রেমের প্যানপ্যানানি!

কে আর অত ভেতরে যায়!

ওটা অবশ্যই খুব প্রেমের কোন গল্প হবে!

সুন্দরী লিখেছে যখন, তা ছাড়া আর কি?  

আহা উঁহু রব; আর সাধু! সাধু! কমেন্টের বন্যা বয় 

ভালোবাসার ইমোজি বন্যায় সুন্দরীর দেয়ালটা ভরে রয়

অথচ যদি মন দিয়ে একবার পড়তো! 

কি বলতে চেয়েছে এত বড় একটা গল্প ফেঁদে!

হাসির কথা বলেছে নাকি দুঃখ গেয়েছে কেঁদে কেঁদে?  

হয়তো ওখানে লিখা হয়েছে কোন এক দুঃখিনীর কথা 

হয়তো লিখা হয়েছে গল্পের ছলে কোন সাহায্যের আবেদন

কিংবা অসুখের কথা! মৃত্যু যন্ত্রণার কোন গল্প! 

কিংবা অন্য কোন খারাপ খবর; হতে পারে না?

 

তুমি পড়েছ? আমি পড়েছি?

অথচ ওখানে ভালোবাসার ইমোর বন্যা ঝেড়েছি 

একটাবার ফেসবুক দেয়ালগুলো ঘেঁটে দেখ তো! 

মৃত্যু সংবাদে মানুষের হাসির ইমো কিভাবে হয়?

ভাবো তো! ভালোবাসার ইমো ওখানে কেন রয়? 

তাহলে তুমি দিয়েছ কেন?

উত্তর নেই কোন; 


ঐ যে এক ফেসবুক বন্ধু একটা মেয়ের ছবি পোষ্ট করেছে

ওমা! মেয়েটা কি অদ্ভুত সুন্দরী! 

আহা, ছবি দেখেই তো প্রেমেতে মরি, 

অনেক কিছু লিখেছে দেখছি মেয়েটা সম্পর্কে! 

আরে! মেয়েটার ফেসবুক ট্যাগও দেখি আছে!

কে আর বন্ধুর অত বড় লিখা পড়তে যায় বলো! 

তারচেয় দৌড়ে সুন্দরীর প্রোফাইলে চলো;   

আগে এখানে একটা ভালোবাসার ইমোজি দিয়ে নেই 

তারপর দৌড়ে ছুটে যাই মেয়েটার দেয়ালে 

লক করা দেয়াল! তাতে কি হয়েছে? 

বন্ধু হওয়ার রিকোয়েস্টটা তো দিয়ে আসি আগে!

রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করবে তো? অপেক্ষার ঘড়ি  

কি সুন্দরী! আহা মরি মরি! 

    

সেদিন একবার যদি পড়তাম বন্ধুর লিখাটা!  

জানতে পারতাম ঐ সুন্দরী তার ভাতিজি কিংবা ভাগিনী

অকালে চলে গিয়েছে পৃথিবীর মায়া ছেঁড়ে, লিখেছিল তার করুণ কাহিনী  

অথচ আমি কিছুই পড়ি নি  

অপেক্ষায় আছি কবে রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করবে মৃত সুন্দরী; 


সেলুকাস এক বিচিত্র ভার্চুয়াল হয়ে গেছে আমাদের জীবন 

সাথে সাথে হয়তো অনেকটাই ভার্চুয়াল হয়ে উঠেছে আমাদের মন    

আমরা আজকাল ভার্চুয়াল মন নিয়ে ভার্চুয়াল দেয়ালে দেয়ালে ঘুরি 

কিসের জানি এক অর্বাচীন অপেক্ষায়। 


 

২৬ এপ্রিল, ২০২১


#কবিতা 


ভার্চুয়াল ইমো 

  - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন