শুক্রবার, ২৮ মে, ২০২১

ভ্রমণের নেশায়

যারা নেশা করে তাদের রক্তের ভেতর নেশার বীজ ঢুকে যায়, 

এক একজনের এক এক নেশা 

আমি সেই ছোটবেলা থেকেই বুঁদ হয়ে আছি ভ্রমণের নেশায়;


দেশের আনাচ কানাচ থেকে শুরু, 

একটা সময় দাপিয়ে বেড়িয়েছি বন থেকে বনে 

এ সাগর, ও সাগর, সে সাগর পাড়ি দিতে দিতে পাড়ি দেয়া হয়ে গেছে সাত সমুদ্দুর, 

টিলা বাইতে বাইতে পাহাড়, বাইতে বাইতে চষে বেড়িয়েছি হিমালয়র পাদদেশ জুরে 

নাহ! কাঞ্জনজঙ্গা কিংবা এভারেস্টে ওঠা হয়ে ওঠে নি আর

বয়স শুধু একটা সংখ্যা নয়, ওখানে শারীরিক সামর্থ্যও সূচক বটে 

একটা সময় থিতু করে দেয় মানুষ'কে; 


দেশ দেখতে দেখতে বিদেশ

এক দেশ থেকে অন্য দেশ

কতই না বৈচিত্র্য মানচিত্রে! 

বৈচিত্র্য বিভিন্ন জায়গার মাটিতে, বিভিন্ন রঙ এর পানিতে 

বৈচিত্র্য পাহাড়ের ঢালে ঢালে, বনের গাছে গাছে 

বৈচিত্র্য সবুজ পাতায় পাতায়, মেঘ, বৃষ্টি আর কুয়াশায় 

ওটা ভ্রমণের নেশা 

যার আছে সেই জানে; 


এ নেশা কিন্তু অন্য বাকি সব নেশা থেকে ভয়ংকর

কোন রিহেবিলিটেশন সেন্টার তৈরিই হয় নি এ নেশার চিকিৎসায়! 

নেশা ভালো হয় কিভাবে?

নেশার একটাই মাত্র ঔষধ - ভ্রমণ, 

রক্তে যখন ভ্রমণ ডাকে তখন পৃথিবী একদিকে আমি অন্যদিকে

সময় লাগে না বের হতে ঘর থেকে 

কখনো ব্যাগ গুছিয়ে, কখনো বা একবস্রে 

হ্যাঁ! টাকা! সে তো লাগেই

চিকিৎসায় টাকা লাগবে না?

পরিবার পরিজন আর বন্ধুবান্ধব বলে অপচয়

আমি বলি চিকিৎসা ব্যয়,

আমার জীবনের যা কিছু সঞ্চয়, পুরোটাই নেশা চিকিৎসায় অপচয়!  

ভ্রমণ নেশার চিকিৎসায়; 


অনেকগুলো দেশ ঘোরা হয়ে গেছে 

অনেকগুলো মহাদেশ 

অনেক সমুদ্দুর

অনেক পাহাড়

অনেক মাটি,

এই যে মাটির কথা বলছি! 

থাকার জন্য আমার সবচেয় পছন্দ কিন্তু মাটির ঘর

টিনের চৌচালা, সামনে ছোট্ট একটুকরো ঝুল বারান্দা

কিছু ঝুলানো ফুলের টব, 

বেলি আর জুঁই এর গন্ধে ম ম করা বিকেল

হাতে চায়ের কাপ, আর বাইরে ঝুম বৃষ্টি, 

আজকাল আর টাকায়ও কোথায় মেলে মাটির ঘর! 

ওগুলো সব ভেঙে তোমরা ওখানে তুলছ ইট কাঠের দালান;    


মাটির ঘরের কথা মনে হতেই আমার মনে পড়লো 

একটা জায়গা রয়ে গেছে আমার বাকি; 

একদিন, কোন একদিন ঠিক বেরিয়ে যাব ওখানে ভ্রমণে

এবার আর কাউকে সঙ্গে নেব না 

বরং একা যাব পেছনের সব সম্পর্কগুলো ভেঙে    

সব আনন্দ, সব বেদনা, সব দুঃখ আর হতাশা

সব পাওয়া আর না পাওয়া 

সব, সবকিছু পিছু ফেলে 

আমি একাই একদিন ঠিক বেড়িয়ে যাব ওখানে ভ্রমণে, 

যেতে যেতে ঢুকে যেতে থাকব মাটি খুঁড়ে মাটির গভীরে 

একটা ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘরে, 

ওখানে টিনের চাল থাকবে না 

থাকবে কিছু টুকরো টুকরো বাঁশের মাচা 

তার উপর কিছু বাঁশের চাটাই 

তার উপর ঝুরঝুরে মাটির প্রলেপ ফেলা ছাদ,  

ওটা তোমাদের ভাষায় একপেশে যাত্রা কিংবা একপথে

আমি একবার গেলে ফিরে আসব না আর ওখান থেকে;


প্রতিবারই যখন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরি, ফিরে এসে কিছু লিখে রাখি

সেই জায়গাটা সম্পর্কে, সেই ভ্রমণ সম্পর্কে 

তবে এই যাত্রাটার কথা লিখা হবে না কোথাও 

এই ভ্রমণের খুঁটিনাটি জানাতে পারবো না তোমাদের,

ঐ মাটির ঘরটা থেকে কেউ ফেরত আসে না

ছোট্ট একটা মাটির ঘর, মাত্র সাড়ে তিন হাত

অথচ সামনে কি বিশাল এক ভ্রমণ! নতুন এক জীবনে.........

 

যাত্রার শুরুটা ছোট্ট ঐ ঘর থেকে, শেষটা জানা নেই

বারযাখ জীবন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান সীমিত। 


১৪ মে, ২০২১


#কবিতা 

   

ভ্রমণের নেশায় 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 



   

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন