শনিবার, ২৯ মে, ২০২১

ফেসবুক ডুব

আজকাল আমাদের জীবনের বড় একটা অংশ জুড়ে 'ফেসবুক' 

আমরা ফেসবুকে হাসি, ফেসবুকে কাঁদি;  

আচ্ছা! ফেসবুক অর্থ কি?

চেহারার বই? 

ওখানে এক একজনার যে চেহারার ছবি সাটা আছে সেটা কি আসল চেহারা?

আমার সন্দেহ আছে;


এখানে ছেলেগুলো সুন্দর সুন্দর মেয়েদের চেহারা খুঁজে 

মেয়েগুলো হ্যান্ডসাম চেহারার প্রোফাইলের খোঁজে 

এখানে বলতে ঐ যে নেটের এপারে বসে 

নেটের ওপারে থাকা বিপরীত লিঙ্গের সাথীর খোঁজে;


নেটের ওপার থেকে সুন্দর একটা মেয়ে 

কিংবা হ্যান্ডসাম একটা ছেলে নেটে ভেসে আসে

ওমনি এপার থেকে একটা বন্ধু রিকোয়েস্ট ইথারে ইথারে

তারপর আশায় বুক বাঁধে, আসলে কি বাঁধে?

নাকি টোপ ফেলে? শত শত ছেলে কিংবা মেয়ে

ক্রমাগত বন্ধু হওয়ার রিকোয়েস্ট দিয়েই যাছে ঐ ইথারে ইথারে

বন্ধুত্বের রিকোয়েস্ট পাঠানোতে তো আর পয়সা লাগে না!

তাহলে সমস্যা কোথায় পাঠাতে গণ হারে? 


এপাশে মাঝে মধ্যেই নোটিফিকেশন জ্বলে ওঠে

কেউ একজন বন্ধুত্বের রিকোয়েস্টে সাড়া দিয়েছে

ওমনি হুমড়ি খেয়ে তার প্রোফাইলে

প্রথমেই ছবিগুলো একটা একটা করে 

সুন্দরী হলো অথবা হ্যান্ডসাম তা হলে তো কথাই নেই

এবার টুস করে একটা হাই কিংবা হ্যালো ম্যাসেঞ্জারে

রিপ্লাই পেলো তো পোয়াবারো, আর পায় কে?

শুরু হলো ফেসবুক বন্ধুত্ব

অচেনা প্রোফাইলের ক্ষেত্র সাধারণত এভাবেই তো হয় তাই না? 

আর আগে থেকে পরিচিত বন্ধু বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন 

তারা তো আছেই, সেগুলো নিয়ে নাই কনফিউশন; 


কনফিউশনের কথা বললাম এজন্য যে!

ঐ যে এক দুইশ করে এক দুই হাজার হয়ে হয়ে 

বন্ধু লিস্ট আজ পাঁচ হাজার ছুঁয়েছে! 

কজন'কে ব্যক্তিগত ভাবে চেনো? 

ঐ যে মেয়েটার সুন্দর একটা চেহারা দেখে ছেলেটা বন্ধু বানিয়েছে!

ঐ যে হ্যান্ডসাম যুবক দেখে মেয়েটা বন্ধু পাতিয়েছে!

দেখা হয়েছে কখনো? 


ছবির সুন্দরী কি আসলেও সুন্দরী? 

কিংবা হ্যান্ডসাম ছেলেটা কি আসলেও হ্যান্ডসাম? 

মনে কর ম্যাসেঞ্জার চ্যাটে বন্ধু হয়ে হয়ে একদিন দেখা করতেই গেলে 

আঠারো বিশ কিংবা উনিশ বিশ হলে সমস্যা নেই, ওটাতে চলে 

কিন্তু ধরো গিয়ে দেখলে দশ আর বিশ, কিংবা যদি দেখ দুই আর বিশ?

যাহ! তাই আবার হয় নাকি? ধ্যুর! তোমার কথাগুলো তেতো বিষ, 

আরে হয় হয়, অনেকই তো হচ্ছে চারিদিকে 

বালক ভাবল ওটা বুঝি বালিকা, গিয়ে দেখলে খালাম্মা

ছবিটা ওনারই, শুধু যখন উনি কিশোরী ছিলেন কিংবা যুবতী 

আজ ঢলা যৌবনের খালাম্মা দেখে চমকে উঠবে কি?

চমকিও না, এমন হচ্ছে হরেদরে হচ্ছে

ওটা ফেসবুকের ফেস এটা বাস্তবের,  

কিংবা বালিকা ভাবল ওটা বুঝি সুদর্শন বালক, গিয়ে দেখলো চাচা 

ছবিটা ওনারই, শুধু যখন উনি কিশোর ছিলেন ছিলেন কিংবা যুবক  

আজ ভুঁড়িওয়ালা টাক মাথা চাচা দেখে চমকে উঠবে কি?

চমকিও না, এমন হচ্ছে হরেদরে হচ্ছে

ওটা ফেসবুকের ফেস এটা বাস্তবের,

খুব রাগ হচ্ছে বুঝি? এবার গালাগাল আর ফেসবুকের চৌদ্দগুস্টি 

গলা ফাটিয়ে চেঁচাচ্ছ তুমি, ওটা ফেসবুক না ফেইকবুক?

আসলে বাস্তবে চোখের সামনে যা দেখছ! ওটাই সত্যি; 


এটা তো তবুও ভালো

অন্তত জেন্ডারে মিল আছে

ঐ যে ওপাশের সবুজ বাতিটা জ্বলতে দেখছ?

ঐ যে মেয়েটার ছবিটার পাশের সবুজ বাতি!

তুমি কি কনফার্ম জানো? ওটা মেয়ে নাকি? 

ঐ যে ছেলেটার প্রোফাইলের পাশে সবুজ বাতি জ্বলা দেখে কল দিলে!

ছেলেটা ধরলো? না কেটে দিলো? 

আচ্ছা! ভয়েস সিন্থেসাইজারের নাম শুনেছ?

ছেলের গলা বদলে দেয় মেয়েতে, মেয়ের গলা ছেলেতে

তারপর আরও কত কি?

কি বিরক্ত হয়ে গেলে এখনই?

শুরুই ত করি নি ফেসবুক কাহিনী! 


ফেসবুকের প্রেম, ভালোবাসা, ছলনা, প্রতারণা

ব্ল্যাক মেইল, আত্মহনন আরও কত কি! 

এক একটা কাহিনী শুরু করলে শেষ হবে নাকি? 

তারচেয়ে বরং থাক না!

চলো আমরা ফেসবুকিং করি 

ফেইক প্রোফাইল না রিয়াল তা ভেবে কেন সময় নষ্ট করি?


তুমি কতটুকু সত্যি ইনফরমেশন দিয়েছ ফেসবুকে?

তোমার প্রোফাইল তৈরিতে? 

ফেসবুককে ফেইক বলার আগে আয়নায় একবার নিজেকে দেখ

ফেইক ইনফরমেশন দিয়েছ ওখানে? তবে নিশ্চিন্তে গা ভাসাও ফেসবুকে

ওপাশে কেউ তো বসে আছে তোমাতে ডুবে যেতে,

চলো ভাসি কিংবা ডুবি ফেসবুকে। 



২৯ মে, ২০২১


#কবিতা 


ফেসবুক ডুব 

 - যাযাবর জীবন 


ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত। 






    

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন