মুহূর্তের ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা
একটি পরিবারের জীবনে নেমে আসা স্থায়ী দুর্যোগ
সে যে কোন কিছুই হতে পারে!
হতে পারে একটি অসুস্থতা
হতে পারে একটি মৃত্যু
অথচ মুহূর্তে ঘটে যাওয়ার আগের মুহূর্তে কেউ ভেবেছিলো কি?
একজনের হঠাৎ একটু অসুস্থতা একটি পুরো পরিবারে দুশ্চিন্তা
অসুস্থতা বলতে আমি জ্বর ঠাণ্ডা কাশির কথা বলছিল না নিশ্চয়ই
আমি জীবন বদলে দেওয়া অসুস্থতার কথা বলছি;
এই ধরো কোন একদিন হাসতে হাসতেই বুকে ব্যথা
মুহূর্তে তুমি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে
তারপর দৌড়াদৌড়ি হসপিটালে
বাসায় ফিরলে রিং পরে কিংবা বুকটাকে চিঁড়ে
ঐ যে তোমার হৃদয়টা! ওখানে বেশ কিছু কাটাচ্ছেরা করা হয়েছে
তুমি কিন্তু আর সেই আগের তুমি নেই
তোমার সাথে সাথে বদলে যায় পুরো পরিবারটিই
সেই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবটা কিন্তু আর নেই, সারাক্ষণ তটস্থ হয়ে থাকে ওরা
তাদের কোন আচরণ তোমাকে ব্যথিত করবে না তো!
কিংবা ধরো পরিবারের সাথে খাবার টেবিলে হঠাৎই একদিন অচেতন লুটিয়ে পড়লে
বুঝতে না পেরে ধরাধরি করে তোমাকে নিয়ে ওরা হসপিটালে
তোমার জ্ঞান ফিরলো, অথচ চেয়ে আছ বোবা হয়ে
জিহ্বা আড়ষ্ট হয়ে গেছে কিংবা তোমার শরীরে কোন অংশ বেঁকে গিয়েছে
ডাক্তাররা বললো মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে, চেনা ভাষায় ব্রেন স্ট্রোক
অথচ খাবার টেবিলে সন্তানের সাথে খুনসুটি করার সময় ভেবেছিলে?
কিংবা তোমার পরিবারের বাকি লোকেরা কল্পনা করেছিলো?
তারা হসপিটাল থেকে বাড়ি ফিরলো বাবা কিংবা স্বামী নামে এক জড় পদার্থ নিয়ে
তারপর তো তাদের পুরো জীবনটাই বদলে গেলো!
তাই না?
একদিন তোমার স্ত্রী আদরে গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে
গায়ে ছোট্ট একটা মাংসের কিংবা চর্বির দলার অস্তিত্বের কথা বললো
শরীরের চর্বি চামড়া ভেদ করে উঠে এসেছে বলে তুমি হেসেই উড়িয়ে দিলে,
সে কিন্তু ক্রমাগত ঘ্যানঘ্যান করে তোমাকে নিয়ে গেলো ডাক্তারের কাছে
ডাক্তার মামুলি কিছু টেস্ট করালো, তারপর তার ভুরু কুঁচকে গেলো
আরও কিছু টেস্ট, তারপর আরও কিছু; করতে করতে বায়োপসি
ক্যান্সার একটা মরণঘাতি ব্যাধি
অথচ এই যে শরীরে ছোট্ট একটু মাংস বাড়া দিয়ে সূচনা,
তারপর ঐ পরিবারটার ওপর দিয়ে কি যায় কেউ ভাবতে পার?
কিংবা ধরো মামুলি পেটে ব্যথা থেকে শুরু, পায়ে একটু পানি আসা
প্রথম প্রথম পাত্তাই দিলে না, তারপর ব্যথার প্রচণ্ডতায় ডাক্তার হসপিটাল
এই টেস্ট, ঐ টেস্ট; ফল বের হলো খারাপ হতে শুরু করেছে তোমার কিডনি
তারপর তো হু হু করে শরীর খারাপের কাঁটা নেমে যেতে যেতে ডায়ালাসিস শুরু
তারপর বদলে গেলো তোমার জীবন, বদলালো পুরো পরিবারের জীবন যাপন;
এগুলো তো হচ্ছেই হরেদরে
এছাড়াও বিভিন্ন নিওরো সমস্যা তো আজকাল খুব হঠাৎ করেই, ঘরে ঘরে
যাদের ঘরে বিশেষ সন্তান আছে তাদের কথা একবার ভাবো তো!
কিংবা যাদের ঘরে কারো এপিলেপ্সি রোগী আছে!
ঐ বাবা মায়েদের জীবন যাত্রা!
ঐ পরিবারের জীবন যাত্রা?
যাদের বাড়িতে নেই তারা কখনো কল্পনাই করতে পারবে না;
এগুলো তো বললাম অসুস্থতা নিয়ে সব পরিবারগুলোর জীবন যাত্রার পরিবর্তনের কথা
ওসব পরিবারের আর্থিক সমস্যার কথা তোমরা কল্পনাতেও আনতে পারবে না
হাসিখুশি সচ্ছল একটি পরিবারের কপর্দকহীন হতে সময় লাগে না
খুব হঠাৎ করেই মুহূর্তে ঘটে যাওয়া একটা দুটো ছোট্ট ঘটনা
সেটা আদতে আর ছোট্ট থাকে না, বদলে দেয় পুরো জীবন ধারা
বদলে দেয় একটা পরিবারকে বিপর্যস্ত মানসিক ভাবে
আর্থিক ভাবে পঙ্গু করে;
মৃত্যু অমোঘ, পরিবারের বাকি সবাই জানে, সবাই বুঝছে
অথচ ওটাকে ঠেকানোর জন্য, পেছানোর জন্য
পরিবারের সবাই মিলে কি যুদ্ধই না করছে!
সময় দিয়ে, সেবা দিয়ে, অর্থ দিয়ে যে যেভাবে পারছে
চেষ্টার ত্রুটি নেই পরিবারের কারো
তারপরও কি মৃত্যু ঠেকাতে পারছে?
তবুও লড়ছে, আপনজনের জন্য লড়ছে
বদলে যাওয়া জীবনধারায় নিজেকে বদলে নিয়ে লড়ছে,
মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত।
৩০ মে, ২০২১
#কবিতা
বদলে যাওয়া জীবনধারা
- যাযাবর জীবন
ছবিঃ নেট থেকে সংগৃহীত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন