একজন মানুষের ছোট খাট একটা ভুল
একটা পরিবার'কে তছনছ করে দিতে পারে,
তোমরা কেউ কেউ হয়তো দেখেছে, কেউ কেউ অনুভব করেছ
আচ্ছা! তোমরা কি কেউ এর মধ্যে দিয়ে গিয়েছ?
ঐ যে ঐ পরিবারটার দিকে তাকাও-
- ছেলেটা প্রেম করছিলো, তারপর একদিন কি যে হলো! কিছুদিন খুব মনমরা হয়ে থাকতো। তারপর কেউ কিছু বুঝার আগে হুট করে ফ্যানে ঝুলে পড়লো। একবার চিন্তাও করলো না বাবা-মায়ের ওপর দিয়ে কি যাবে। চিন্তা করে নি ভাই-বোনগুলোর কথা। তারপর থেকে পরিবারটার মুখে হাসি দেখি নি।
ঐ পরিবারটাকে দেখ-
- ছেলেটা বেশ পড়াশুনা করছিলো। ইন্টারমিডিয়েট পড়তে পড়তে বন্ধুবান্ধবের পাল্লায় পড়ে মজা করে একদিন কি একটা ড্রাগস টেস্ট করলো। তারপর থেকে টেস্ট করতেই থাকলো। টেস্ট করতে করতে একসময় এডিক্টেড হয়ে গেলো। তার আর ইন্টারমিডিয়েট পাশ করা হয় নি। বছরে কিছুদিন রিহ্যাব সেন্টারে থাকে, তারপর বাবা-মা ভালো হয়ে গেছে মনে করে বাসায় নিয়ে আসে। একসময় আবার ঢুকে যায় সেই অন্ধকার জগতে, আবার কিছুদিন রিহ্যাব সেন্টার আবার বাসা। এই করে প্রায় বছর পাঁচেক পার হয়ে গেলো। অথচ ড্রাগের নেশাটা খুব ক্যাজুয়ালি টেস্ট করতে করতে করে ফেলেছিলো। আজকাল মধ্যবিত্ত বাবা'র আর সাধ্যে কুলোয় না ওকে রিহ্যাব সেন্টারে দিয়ে আসতে। এই পরিবারটার মুখ থেকেও হাসি চলে গিয়েছে অনেক দিন হলো।
আর ঐ পরিবারটাকে দেখ -
- মেয়েটা বেশ ভালোই পড়ালেখা করছিলো। মেট্রিক দিতে দিতে প্রেমে পড়ে গেলো। তারপর বাসা থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে বেশ প্রেম চলতে লাগলো। কোন এক সময় শরীর কথা বলে উঠলো, উঠতি যৌবনে কয়জনই বা কাম সম্বরণ করতে পারে? প্রেমিকের বন্ধুর বাসা, হোটেল, গেস্ট হাউস করতে লাগলো। একসময় পেট জানান দিলো। বাবা-মা জানলো, জানলো ভাই বোন, আত্মীয় স্বজন, জানলো পাড়া পড়শিরা। প্রেমিক তখন আর তাকে চেনে না। আর এত জানাজানি মেয়েটা সহ্য করতে না পেরে একদিন একগাদা ঘুমের ঔষধ খেয়ে নিথর হয়ে গেলো। আর বাবা-মা! ওরা যেন বুঝতেই পারলো না ওদের কি লজ্জা পাওয়া উচিৎ না দুঃখ পাওয়া উচিৎ। ঐ পরিবারটাকেও আমি আর কখনো হাসতে দেখি নি।
ঐ যে বিশাল দোতলা বাড়িটি দেখছ!
- ও বাড়ির ছেলেটার বায়না ছিলো একটা হোন্ডা কিনে দেওয়ার। বাবা অনেক করে মানা করা সত্ত্বেও মা আর দাদীকে হাত করে বাবা'কে রাজী করিয়েছিল। বাবা হোন্ডাটা কিনে দেওয়ার সময় পই পই করে মানা করেছিলো - বাবা'রে জোরে চালাস না। হিরোইজম দেখাতে যাস না। যৌবন না শোনে মুরুব্বীদের কথা। বন্ধুদের সাথে রেসের পাল্লা দিতে গিয়েছিলো। বাসায় ফিরলো লাশ হয়ে। নিমিষে পরিবারটির খুশির বাতি নিভে গিয়েছিলো। এই পরিবারটির মুখেও আমি হাসি দেখি নি।
ঐ যে মহল্লার সবচেয়ে বয়োবৃদ্ধ মুরুব্বী!
- ওনাকে সবাই শ্রদ্ধা ভক্তি করে। অথচ একদিন ইউনিভার্সিটিতে পড়া ছেলেটা'কে খুঁজতে বাসায় পুলিশ এলো। ওদের কাছেই জানতে পারলো ছেলেটা নাকি পুলিশের মোস্ট ওয়ান্টেড লিস্টে আছে। ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ব্ল্যাক-মেইল, বোমাবাজি, ধর্ষণ, খুন এমন কোন অপরাধ নেই যেটাতে সে জড়িত নয়। অথচ মহল্লায় ভালো ছেলে বলতে তার উদাহরণ দেওয়া হতো। কবে কখন থেকে কিভাবে সন্ত্রাসী হয়ে গেলো বাবা মা কখনো বুঝতেই পারে নি। আজ মুরুব্বী মহল্লায় মাথা নিচু করে হাঁটেন। ওনার মুখ থেকে হাসি মুছে গিয়েছে চিরতরে।
আচ্ছা! এই যে আমাদের আমাদের সন্তানদের ছোটখাটো ভুলো গুলো
কিংবা আমাদেরই ভাই-বোনদের
অথবা হয়তো বা আমাদেরই!
মুহূর্তে করে ফেলা ভুল;
একটি ছোট্ট ভুল পুরো পরিবারটিকে কি অসহায় বানিয়ে ফেলে, বোধগম্য হয়?
এমন পরিবার দেখলে তোমরা তাদের লজ্জা দিও না,
লবণ ছিটাতে যেও না তাদের দুঃখে;
কে জানে!
এই, ঐ আর সেই, সেই পরিবারগুলোর মধ্যে তো কাল তোমার আমার পরিবারও সামিল হতে পারে।
১৫ অক্টোবর, ২০২১২
#গদ্য_কবিতা
ভুলের খেসারত
- যাযাবর জীবন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন